নতুন দিল্লি, ৯ই জানুয়ারী, ২০২১
নমস্কার,
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী আমার ভারতীয় ভাই ও বোনেরা,
নমস্কার!
আপনাদের সবাইকে ২০২১ ইংরাজী নববর্ষের জন্য অনেক অনেক শুভকামনা জানাই!
আজ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের সঙ্গে আমরা যতই ইন্টারনেটের মাধ্যমে যুক্ত হই না কেন, আমাদের মন সর্বদাই ভারতমাতার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে, পরস্পরের প্রতি আপনত্মের মাধ্যমে যুক্ত রয়েছে।
বন্ধুগণ,
সারা পৃথিবীতে ভারতমাতার গৌরব বৃদ্ধিকারী আপনাদের মতো সমস্ত বন্ধুদের প্রতিবছর প্রবাসী ভারতীয় সম্মান প্রদানের পরম্পরা তৈরি হয়েছে। ভারতরত্ন স্বর্গীয় অটল বিহারী বাজপেয়ী জি পথ প্রদর্শনের মাধ্যমে যে যাত্রা শুরু করেছিলেন, ইতিমধ্যেই এই সম্মানের মাধ্যমে ৬০টি বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী প্রায় ২৪০ জন মহান ভারতীয়কে সম্মানিত করা হয়েছে। এবারও এই সম্মান ঘোষণা করা হবে। এভাবে সারা পৃথিবীর হাজার হাজার বন্ধু “ভারতকে জানুন” ক্যুইজ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। এই সংখ্যা বলে যে শিকড় থেকে যতই দূরে যাই না কেন, প্রবাসী ভারতীয়দের নতুন প্রজন্মের দেশের প্রতি আকর্ষণ ততটাই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই ক্যুইজের ১৫জন বিজেতাও আজ এই ভার্চুয়াল সমারোহে আমাদের সঙ্গে উপস্থিত রয়েছেন।
আমি সমস্ত বিজেতাদের অভিনন্দন জানাই, শুভ কামনা জানাই। আর পাশাপাশি এই ক্যুইজ প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণের জন্য সকলকে অভিনন্দন জানাই। এই ক্যুইজ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী প্রত্যেকের প্রতি আমার অনুরোধ, আগামীবার যখন ক্যুইজ প্রতিযোগিতা হবে, তখন আপনাদের প্রচেষ্টায় আরো ১০জন নতুন প্রতিযোগী যেন এই প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করেন তা আপনারা সুনিশ্চিত করুন। এভাবে একটি নতুন শৃঙ্খল যেন তৈরি হয়, এই শৃঙ্খল যেন বাড়তে থাকে, বেশি মানুষকে যুক্ত করতে থাকে। অনেক বিদেশীরা ভারতে পড়াশুনার জন্য আসেন। পড়া শেষ করে তারা নিজ নিজ দেশে ফিরে যান। তাঁদেরকেও অনুরোধ জানান, যাতে তাঁরা যেমন কখনও ভারতে পড়াশুনা করে গেছেন, তেমনি ভারত সম্পর্কে আয়োজিত এই ক্যুইজ প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করেন, আর এই ক্যুইজ প্রতিযোগিতার দূত হয়ে ওঠেন। কারণ বিশ্বে ভারতের পরিচিতি গড়ে তুলতে, নতুন প্রজন্মের মনে ভারতকে জানার জিজ্ঞাসা জাগিয়ে তুলতে, এটি একটি প্রযুক্তি চালিত অত্যন্ত সরল উপায়। আর এজন্য আমার অনুরোধ, আপনারা সবাই এই বিষয়টিকে এগিয়ে নিয়ে যান।
বন্ধুগণ,
গত বছরটি আমাদের সকলের জন্যে অত্যন্ত সমস্যা সঙ্কুল বছর ছিল। কিন্তু এই সমস্যাগুলির মাঝে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকা আমাদের ভারতীয় বংশদ্ভূতরা যেভাবে কাজ করেছেন, নিজেদের কর্তব্য পালন করেছেন, তা ভারতের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়। এটাই তো আমাদের পরম্পরা, এটাই তো এই আমাদের মাতৃভূমির শিষ্টাচার।
এর ফলে সামাজিক এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বের ক্ষেত্রে সারা পৃথিবীতে ভারতীয় বংশদ্ভূত বন্ধুদের প্রতি অন্যদের ভরসা আরো মজবুত হয়ে উঠছে। আমাদের আজকের এই আয়োজনের মুখ্য অতিথি, সুরীনামের নতুন রাষ্ট্রপতি শ্রী চন্দ্রিকা প্রসাদ সন্তোখী জি, তিনি স্বয়ং এই সেবা পরায়ণতার এক অতূলনীয় উদাহরণ। আর আমি এটাও বলবো যে এই করোনা কালে বিদেশে বসবাসকারী আমাদের অনেক ভারতীয় ভাই – বোনেরাও প্রাণ হারিয়েছেন। তাঁদের পরিবার পরিজনের প্রতি আমি গভীর সমবেদনা জানাই। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন তাঁদেরকে অনেক শক্তি দেন। আর সুরীনামের রাষ্ট্রপতি জির বক্তব্যে তাঁর উষ্ণতাপূর্ণ শব্দাবলী এবং ভারতের প্রতি তাঁর ভালোবাসা আমাদের সকলের হৃদয় স্পর্শ করেছে। তাঁর প্রতিটি শব্দে ভারতের প্রতি যে ভালোবাসা তা আমাদের সকলের মনে প্রবাহিত হয়েছে, সকলকে প্রেরণা জুগিয়েছে।
তাঁর মতোই আমিও আশাবাদী যে আমরা শীঘ্রই পরস্পরের সঙ্গে মিলিত হবো, আর আমাদের ভারতে সুরীনামের রাষ্ট্রপতি জিকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানোর সুযোগ হবে। বিগত বছরগুলিতে প্রবাসী ভারতীয়রা প্রত্যেক ক্ষেত্রে তাঁদের পরিচয়কে আরোও মজবুত করেছেন।
বন্ধুগণ,
গত কয়েক মাসে আমার বিশ্বের অনেক দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়েছে। সেই রাষ্ট্রপ্রধানরা আমাকে বিশেষভাবে বলেছেন, যে তাঁদের দেশে প্রবাসী ভারতীয় চিকিৎসকরা, প্যারা মেডিকেল স্টাফ এবং সাধারণ ভারতীয় নাগরিকরা কিভাবে মানুষের সেবা করেছেন, সে সব দেশে আমাদের মন্দির, গুরুদ্বারগুলিতে যে লঙ্গরের মহান পরম্পরা রয়েছে, তা ছাড়া আরও অনেক ছোট খাঁটো সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় সংগঠন সেবা ভাব নিয়ে আর্তের সেবায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে এবং এই কঠিন পরিস্থিতিতে তাঁরা জাতি- ধর্ম- বর্ণ নির্বিশেষে প্রত্যেক নাগরিকের সেবা করেছেন। বিশ্বের প্রতিটি দেশ থেকে, রাষ্ট্রপ্রধানদের কাছ থেকে যখনই প্রবাসী ভারতীয়দের সম্পর্কে এই প্রশংসাসূচক কথা শুনি, তখন অনেক গর্ব হয়। আর আপনারা কল্পনা করতে পারেন, যখন ফোনে আপনাদের প্রশংসা শুনতাম, যখন বিশ্বের প্রত্যেক নেতা, অনেক সময় ধরে আপনাদের গুণগান করতেন, তখন সে সব কথা আমি আমার ঘনিষ্ট সঙ্গীদের বলতাম এবং প্রত্যেকের মন আনন্দে ভরে উঠতো, প্রত্যেকে গর্বিত হতেন। আপনাদের এই শিষ্টাচার বিশ্বের প্রত্যেক প্রান্তে ভারত সম্পর্কে উজ্জ্বল ভাবমূর্তি গড়ে তুলেছে। প্রত্যেক ভারতবাসী সেজন্য আপনাদের কথা ভেবে গর্ববোধ করেন।
আপনারা সবাই যেখানেই থাকুন না কেন, সেখান থেকে সমস্ত রকম ভাবে ভারতের কোভিড প্রতিরোধী লড়াইয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। মুক্ত হস্তে পিএম কেয়ার্স তহবিলে অর্থ প্রদান করেছেন। এই অর্থ ভারতে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো মজবুত করতে কাজে লাগছে।
সে জন্য আমি আপনাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। বন্ধুগণ, ভারতের মহান সন্ন্যাসী এবং দার্শনিক থিরুবল্লুবর, বিশ্বের প্রাচীনতম ভাষা, তামিলে যে কথা লিখে গেছেন, সে জন্য আমাদের প্রত্যেকের গর্ব হওয়া উচিত। তিনি লিখেছেন, কে এ – ডরীয়াক, কেট্টও ইড্ডত্তুম বড়নগুন্ড্রা।
নাডেনপ নাট্টিম তনই।
এর অর্থ হল বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ দেশ সেটাই যারা নিজেদের বিরোধীদের থেকে খারাপ জিনিসটা শেখে না, আর যখন কষ্ঠের মধ্যে থাকে, তখনও অপরের কল্যাণে পিছুপা হয় না।
বন্ধুগণ,
আপনারা সকলে এই মন্ত্র নিজের জীবনে প্রয়োগ করে দেখিয়েছেন। যুগ যুগ ধরে আমাদের ভারতের বৈশিষ্ট্য তো এটাই! শান্তির সময় হোক, কিংবা সঙ্কটের সময় আমরা ভারতীয়রা বুক চিতিয়ে সকল পরিস্থিতির মোকাবিলা করি। সেজন্য এই মহান ভূমির দিকে বিশ্ববাসী অন্য চোখে দেখে। যখন ভারত, ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু করে, তখন পৃথিবীর অনেক দেশে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামীরা প্রেরণার উৎস হয়ে ওঠেন। যখন ভারত, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে উঠে দাঁড়ায়, তখন বিশ্বও এই সঙ্কটের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষেত্রে নতুন সাহস পায়।
বন্ধুগণ,
ভারতে দুর্নীতি দূর করতে যত বেশি সম্ভব প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। বিভিন্ন ত্রুটির কারণে আগে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা ভুল হাতে পৌঁছে যেত, যা সরাসরি সুবিধাভোগীদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পৌঁছে যাচ্ছে। আপনারা হয়তো দেখেছেন, ভারত যে নতুন ব্যবস্থা বিকশিত করেছে, করোনার সঙ্কটকালে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এই ব্যবস্থার প্রশংসা করেছে।
আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে দরিদ্র থেকে দরিদ্রতম মানুষের ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য আজ ভারতে যে অভিযান চলছে, তা নিয়ে পৃথিবীর প্রত্যেক প্রান্তে প্রত্যেক স্তরে আলোচনা হচ্ছে।
ভাই ও বোনেরা,
আমরা দেখিয়েছি, যে পুনর্নবিকরণযোগ্য শক্তি উৎপাদনের ক্ষেত্রে উন্নয়ণশীল বিশ্বের কোনো দেশও অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে! আজ ভারতের উচ্চারিত এক সূর্য, এক বিশ্ব, এক গ্রিডের মন্ত্র গোটা বিশ্বের মন জয় করছে।
বন্ধুগণ,
ভারতের ইতিহাস সাক্ষী রয়েছে যে, ভারতের সামর্থ নিয়ে যখনই কেউ আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন, সেই সমস্ত আশঙ্কা বার বার ভূল প্রমাণিত হয়েছে। দেশ যখন পরাধীন ছিল, তখন বিদেশের বড় বড় বিদ্যান বলতেন যেন ভারত, স্বাধীন হতে পারে না, কারণ এদেশে প্রচুর বিভাজন রয়েছে। তাঁদের আশঙ্কা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। আর আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি।
বন্ধুগণ,
যখন ভারত স্বাধীনতা পেয়েছে, তখনও বলা হয়েছে, যে অধিকাংশ জনগণ এতো দরিদ্র এবং এতো কম লেখাপড়া জানে, তাই ভারত ভেঙ্গে যাবে, টুকরো টুকরো হয়ে যাবে, গণতন্ত্র এদেশে অসম্ভব। কিন্তু আজকের বাস্তব হল, ভারত ঐক্যবদ্ধ এবং বিশ্বের সর্বাধিক শক্তিশালী গণতন্ত্র, সর্বাধিক স্পন্দনশীল জীবন্ত দেশ এই ভারত।
ভাই ও বোনেরা,
স্বাধীনতার পরেও কয়েক দশক ধরে এই মনোভাব ব্যক্ত করা হয়েছে, যে ভারত, গরীব এবং অশিক্ষিত, সেজন্যে বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিনিয়োগের সম্ভাবনা কম। আজ ভারতের মহাকাশ অভিযানগুলি আমাদের প্রযুক্তিগত স্টার্টআপ ব্যবস্থা বিশ্বে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। কোভিড সঙ্কটপন্ন বছরেও অনেক “ইউনিকর্ণ” এবং কয়েকশো নতুন প্রযুক্তি নির্ভর স্টার্টআপ, ভারত থেকেই উঠে এসেছে।
বন্ধুগণ,
এই অতিমারীর সময়ে ভারত আরেকবার তার সামর্থ ও ক্ষমতা দেখিয়ে দিয়েছে। এতো বড় গণতান্ত্রিক দেশ, যেভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে উঠে দাঁড়িয়েছে, তার দৃষ্টান্ত বিশ্বে আর নেই। পিপিই কিট, মাস্ক, ভেন্টিলেটর, টেস্টিং কিট, এই সব কিছুই শুরুতে ভারত, বাইরে থেকে আমদানী করতে হয়েছে।
আজ এই করোনা সঙ্কটকালের মধ্যেই ভারত তার শক্তি বাড়িয়েছে এবং আজ এক্ষেত্রে আত্মনির্ভর হওয়ার পাশাপাশি অনেক পণ্য বিদেশে রপ্তানি করতে শুরু করেছে। করোনার ফলে মৃত্যুহার ভারতে সব চাইতে কম এবং দ্রুততম সুস্থতার হারে ভারত, বিশ্বের অগ্রণী দেশগুলির মধ্যে অন্যতম।
আজ ভারত একটি নয়, দুই দুটি “মেড ইন ইন্ডিয়া” করোনা টিকা উৎপাদনের মাধ্যমে মানবতার সুরক্ষার জন্য প্রস্তুত। বিশ্বের সর্ববৃহৎ ঔষধ উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে বিশ্বের প্রত্যেক অসুস্থ মানুষের কাছে প্রয়োজনীয় ঔষধ পৌঁছে দেওয়ার কাজ ভারত আগেও করেছে এবং আজও করছে। বিশ্ববাসী আজ শুধুই ভারতীয় টিকার জন্য অপেক্ষা করছে না, বিশ্বের সর্ব বৃহৎ টিকাকরণ অভিযান, ভারত কিভাবে পরিচালনা করে, সেদিকেও লক্ষ্য রাখছে।
বন্ধুগণ,
এই বিশ্বব্যাপী মহামারীর সময় ভারত যা শিখেছে, সেটাই এখন আত্মনির্ভর ভারত অভিযানের প্রেরণা হয়ে উঠেছে।
আমাদের শাস্ত্রে বলা হয়েছে- “শতহস্ত সমাহ সহস্রহস্ত সং কির”
অর্থাৎ শত শত হাতে অর্জন করো, হাজার হাজার হাতে বিতরণ করো। ভারতের আত্মনির্ভরতার পিছনে এই মনোভাবই কাজ করে। কোটি কোটি ভারতবাসীর পরিশ্রমে ভারতে যে সব পণ্য তৈরি হবে, যে সব সমাধান ভারতে তৈরি হবে, তার দ্বারা গোটা বিশ্ব লাভবান হবে।
বিশ্ববাসী কখনও এটা ভুলতে পারবে না, যে ওয়াই টু কে এর সময় ভারতের ভূমিকা কী ছিল? ভারত কিভাবে বিশ্বকে চিন্তামুক্ত করেছিল ! এই করোনার কঠিন সময়েও আমাদের ঔষধ নির্মাণ শিল্পের ভূমিকা এটা প্রমাণ করেছে, ভারত যে যে ক্ষেত্রে সামর্থবান হয়, তার দ্বারা গোটা বিশ্ব লাভবান হয়।
বন্ধুগণ,
আজ গোটা বিশ্ব যে ভারতের উপর এতটা আস্থা রাখে তার পেছনে আপনাদের মতো প্রত্যেক প্রবাসী ভারতবাসীর অনেক অবদান রয়েছে। আপনারা যেখানেই গেছেন, ভারতকে সঙ্গে নিয়ে গেছেন, ভারতীয়ত্বকে সঙ্গে নিয়ে গেছেন। আপনাদের ভারতীয়ত্ব এইভাবে বেঁচে থাকুক। এভাবেই আপনারা বিশ্ববাসীর সেবায় কাজ করে যান। আর আপনারা দেখবেন, খাদ্য হোক কিংবা ফ্যাশন, পারিবারিক মূল্যবোধ কিংবা বাণিজ্যিক মূল্যবোধ, প্রত্যেক ক্ষেত্রেই আপনারা ভারতীয়ত্বকে বিশ্বে প্রসারিত করেছেন।
আমি সব সময় মনে করি, ভারতীয় সংস্কৃতি সারা পৃথিবীতে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, রান্নার পদ্ধতি শেখানো বই, কিংবা বিভিন্ন ধর্মীয় আচার-বিধি থেকে অনেক বেশি করে আপনাদের জীবন-যাপন, আপনাদের আচরণ, আপনাদের ব্যবহারের কারণেই এসব কিছু সম্ভব হয়েছে। ভারত কখনও বিশ্ববাসীর উপর কোনো কিছু চাপিয়ে দেয় নি, চাপানোর চেষ্টাও করেনি, চাপানোর কথা ভাবেও নি। আপনারা সবাই বিশ্ববাসীর মনে ভারতের জন্য একটি জিজ্ঞাসা ও আগ্রহ সৃষ্টি করেছেন। সেটা হাসি – মজার মাধ্যমে শুরু হলেও পরবর্তী সময়ে তা আস্থার রূপ নিয়েছে।
আজ যখন ভারত, আত্মনির্ভর হয়ে ওঠার জন্য এগোচ্ছে, সেখানেও ব্র্যান্ড ইন্ডিয়ার পরিচয়কে শক্তিশালী করে তুলতে আপনাদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যখন আপনারা “মেড ইন ইন্ডিয়া” পণ্যগুলিকে বেশি করে ব্যবহার করবেন, তখন এগুলির প্রতি আপনাদের চারপাশের মানুষদেরও বিশ্বাস বাড়বে। আপনাদের সহকর্মী ও বন্ধুদের যখন আপনারা মেড ইন ইন্ডিয়া পণ্যগুলি ব্যবহার করতে দেখবেন, তখন কি আপনাদের মনে এজন্য গর্ব হবে না ?
চা থেকে শুরু করে বস্ত্রশিল্প এবং বিভিন্ন থেরাপি থেকে শুরু করে খাদি – সমস্ত ক্ষেত্রে ভারত যখন বিশ্বে আকর্ষণের কেন্দ্র হয়ে ওঠে, তখন আমার খুব আনন্দ হয়। এর ফলে আপনারা ভারতের রপ্তানির পরিমাণ তো বাড়াবেনই পাশাপাশি, ভারতের উন্নত বৈচিত্রকেও বিশ্বের কাছে পৌঁছে দেবেন।
সব থেকে বড় কথা হল, আত্মনির্ভর ভারত অভিযানের মাধ্যমে আপনারা বিশ্বের দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর মানুষের কাছে সুলভ এবং উৎকৃষ্ট সমাধান পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যম হয়ে উঠবেন।
বন্ধুগণ,
ভারতে বিনিয়োগ হোক, কিংবা বড় মাত্রায় আর্থিক সহযোগিতা, প্রতিটি ক্ষেত্রেই আপনাদের অবদান অতুলনীয়। আপনাদের বিশেষজ্ঞতা, আপনাদের বিনিয়োগ, আপনাদের নেটওয়ার্কস এবং আপনাদের অভিজ্ঞতা দ্বারা সমস্ত ভারতবাসী উপকৃত হচ্ছেন এবং সব সময় গর্ব করবেন।
আপনাদের মধ্যে অনেকেই জানেন, যে কয়েক সপ্তাহ আগেই প্রথমবার, আন্তর্জাতিক ভারতীয় বৈজ্ঞানিক শীর্ষ সম্মেলন বা বৈভবের আয়োজন করা হয়েছিল। এই সম্মেলনে ৭০টি দেশ থেকে ২৫,০০০এরও বেশি বৈজ্ঞানিক এবং বিশেষজ্ঞরা প্রায় ৭৫০ ঘন্টা ধরে আলোচনা করেছেন।
এর ফলে ৮০টি বিষয়ে প্রায় ১০০টি প্রতিবেদন তৈরি হয়েছে, যা অনেক ক্ষেত্রে প্রযুক্তি এবং ব্যবস্থার বিকাশে কাজে লাগবে। এই বার্তালাপ এখন থেকে এভাবে নিয়মিত জারি থাকবে। তাছাড়া, বিগত কয়েক মাসে ভারত শিক্ষা থেকে শুরু করে শিল্প, প্রত্যেক ক্ষেত্রে সার্থক পরিবর্তনের জন্য গঠনগত সংস্কার করেছে। এর ফলে আপনাদের বিনিয়োগের জন্য নতুন নতুন সুযোগ আরো বিস্তারিত হয়েছে। নির্মাণ শিল্পকে আরো উন্নত করার জন্য “প্রডাকশন লিঙ্কড সাবসিডাইস স্কিম” অত্যন্ত কম সময়ে অনেক জনপ্রিয় হয়েছে। আপনারাও এর মাধ্যমে সম্পূর্ণ লাভবান হতে পারেন।
বন্ধুগণ,
ভারত সরকার, প্রত্যেক সময় আপনাদের পাশে, আপনাদের জন্য দাঁড়াবে। সারা পৃথিবীতে করোনা লকডাউনের সময় বিদেশে আটকে পড়া ৪৫ লক্ষেরও বেশি ভারতবাসীকে ‘বন্দে ভারত মিশন’-এর মাধ্যমে উদ্ধার করা হয়েছে। বিদেশে বসবাসকারী ভারতীয়রা যাতে সঠিক সময়ে সঠিক সাহায্য পান, সেজন্য সমস্ত সম্ভাব্য প্রচেষ্টা করা হয়েছে। অতিমারীর ফলে বিদেশে ভারতীয়দের রোজগার যেন সুরক্ষিত থাকে, তা সুনিশ্চিত করতে কূটনৈতিক স্তরে সব ধরণের প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে।
উপসাগরীয় দেশগুলি সহ অনেক দেশ থেকে ফিরে আসা বন্ধুদের জন্য “স্কিল ওয়ার্কাস অ্যারাইভেল ডেটাবেস ফর এমপ্লয়মেন্ট সাপোর্ট” অর্থাৎ ‘স্বদেশ’ নামের নতুন উদ্যোগ চালু করা হয়েছে। এই ডেটাবেসের উদ্দেশ্য ‘বন্দে ভারত মিশন’-এর মাধ্যমে ফিরে আসা কর্মচারীদের দক্ষতা পরিমাপ করা। আর এগুলি তাঁদের ভারতীয় এবং বিদেশী কোম্পানীগুলির সঙ্গে যুক্ত করছে।
এভাবে সারা পৃথিবীতে প্রবাসী ভারতীয় এবং ভারতীয় বংশদ্ভূতদের সঙ্গে উন্নত যোগাযোগ স্থাপনের জন্য “রিস্তা” নামক একটি নতুন পোর্টাল চালু করা হয়েছে। এই পোর্টালের মাধ্যমে কঠিন সময়ে প্রবাসী ভারতীয় এবং ভারতীয় বংশদ্ভূতদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা এবং তাদের কাছে দ্রুত পৌঁছনো সহজ হবে। এই পোর্টালের মাধ্যমে সারা পৃথিবীতে আমাদের বন্ধুদের বিশেষজ্ঞতাকে ভারতের উন্নয়নে কাজে লাগানোর ক্ষেত্রেও সহায়ক হবে।
বন্ধুগণ,
এখান থেকে আমরা আমাদের স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষপূর্তির দিকে এগিয়ে চলেছি। পরবর্তী প্রবাসী ভারতীয় দিবস, স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষপূর্তি সমারোহের সঙ্গেও যুক্ত হবে।
মহাত্মা গান্ধী, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস এবং স্বামী বিবেকানন্দের মতো অসংখ্য মহান ব্যক্তিত্বের প্রেরণা নিয়ে সারা পৃথিবীতে প্রবাসী ভারতীয় এবং ভারতীয় বংশদ্ভূতরা সে সব দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন, প্রেরণা জুগিয়েছেন। এই সময়ে সেই বন্ধুদের, সেই বীর সেনানীদের স্মরণ করতে হবে, যারা ভারতের বাইরে থেকে ভারতের স্বাধীনতার জন্য কাজ করেছেন।
সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকা প্রবাসী ভারতীয় এবং ভারতীয় বংশদ্ভূতদের কাছে, এই সম্মেলনে উপস্থিত সকলের মাধ্যমে আমার অনুরোধ, আমরা একটি ডিজিটাল মঞ্চে একটি পোর্টাল তৈরি করবো, আর সেই পোর্টালে এমন প্রবাসী ভারতীয় এবং ভারতীয় বংশদ্ভূতদের ছবি সহ সমস্ত তথ্য নথিভুক্ত থাকবে। আর এই পোর্টালের মাধ্যমে যে প্রবাসী ভারতীয় কিংবা ভারতীয় বংশদ্ভূতরা, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন, তাঁদের সমস্ত তথ্য রেখে দেওয়া হবে। যেখানে ফটো থাকবে, সেখানে ফটো রাখতে হবে। আর সারা পৃথিবীতে কখন কে কোথায় এভাবে স্বাধীনতা সংগ্রামে অবদান রেখেছেন –তার বর্ণনা। প্রত্যেক ভারতবাসীর পরাক্রম, পৌরুষ, ত্যাগ, আত্মবলিদান, ভারতমাতার প্রতি তাঁর ভক্তির গুণগান, তাঁর জীবন গাঁথা বর্ণিত হবে। আর আমি এটাও চাইবো, এর পর যত ক্যুইজ প্রতিযোগিতা হবে, সেখানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে প্রবাসী ভারতীয় এবং ভারতীয় বংশদ্ভূতরা কী কী অবদান রেখেছেন, তা নিয়েও ক্যুইজে একটি অধ্যায় থাকবে। ৫০০, ৭০০ কিংবা ১০০০ – তেমন প্রশ্ন থাকবে, যেগুলি সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকা প্রবাসী ভারতীয় এবং ভারতীয় বংশদ্ভূতদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসুদের জানার ব্যবস্থা করে দেবে, একটি সুদৃশ্য জ্ঞানের সরোবর করে তুলবে।
এধরণের পদক্ষেপ আমাদের বন্ধনকে আরো শক্তিশালী করে তুলবে। আগামী প্রজন্মকে প্রেরণা জোগাবে। আপনারা সবাই এত বিপুল সংখ্যায় আজ ভার্চুয়ালী মিলিত হয়েছেন; করোনার ফলে নিজেরা আসতে পারেন নি, কিন্তু ভারতের প্রত্যেক নাগরিক সব সময় এটাই চান, আপনারা সব সময় সুস্থ থাকুন, আর আপনারা নিরাপদ থাকলে নিজের এবং দেশের নাম উজ্জ্বল করে যাবেন।
এই কামনা নিয়ে আরেকবার সুরীনামের রাষ্ট্রপতি জিকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। তিনি যেভাবে আমাদের সকলকে প্রেরণা জুগিয়েছেন, আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন, সেজন্য তিনি ধন্যবাদার্হ। প্রকৃত পক্ষে তিনি বিশ্বে ভারতের গৌরব বৃদ্ধিকারী মহাপুরুষদের মধ্যে অন্যতম। আমি তাঁকে বিশেষ ভাবে ধন্যবাদ জানাই। আপনাদের সকলকে শুভ কামনা জানাই।
অনেক অনেক ধন্যবাদ।
***
CG/BD/SFS
Speaking at the Pravasi Bharatiya Divas. Watch. https://t.co/FZ4l1KeGdF
— Narendra Modi (@narendramodi) January 9, 2021
The Indian diaspora has distinguished itself globally. During my conversations with world leaders, they have been appreciative of the Indian community in their respective nations, especially the doctors, nurses and paramedics. pic.twitter.com/1SgOj6LJvE
— Narendra Modi (@narendramodi) January 9, 2021
Be it our tech industry or the pharma industry, India has always been at the forefront of helping mitigate global challengees. pic.twitter.com/IGBBMz3UKY
— Narendra Modi (@narendramodi) January 9, 2021
If the world trusts India, one of the important reasons is the Indian diaspora. World over, people have seen our diaspora's accomplishments and through them, seen glimpses of India's glorious culture as well as ethos. pic.twitter.com/sC8pM3XLyH
— Narendra Modi (@narendramodi) January 9, 2021