Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী বাজেট-উত্তর ওয়েবিনারে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি – মানুষ, অর্থনীতি এবং উদ্ভাবনের বিনিয়োগ নিয়ে ভাষণ দিয়েছেন

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী বাজেট-উত্তর ওয়েবিনারে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি – মানুষ, অর্থনীতি এবং উদ্ভাবনের বিনিয়োগ নিয়ে ভাষণ দিয়েছেন


নতুন দিল্লি ৫ মার্চ ২০২৫

 

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী ভিডিও কনফারেন্সিং-এর মাধ্যমে বাজেট-উত্তর ওয়েবিনারে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি – মানুষ, অর্থনীতি এবং উদ্ভাবনের বিনিয়োগ নিয়ে ভাষণ দিয়েছেন। সমাবেশে ভাষণে তিনি ওয়েবিনারের থিম ‘মানুষ, অর্থনীতি এবং উদ্ভাবনে বিনিয়োগ’ যা বিকশিত ভারতের পথচিত্রকে নির্দেশ করে তার গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেন যে, এবারের বাজেট এই থিমের বৃহৎ মাত্রায় প্রকাশ এবং এটি ভারতের ভবিষ্যতের নীল নকশা হিসেবে কাজ করবে। পরিকাঠামো, শিল্প, মানুষ, অর্থনীতি এবং উদ্ভাবনে সমান অগ্রাধিকারে বিনিয়োগের ওপর জোর দেন তিনি। দেশের অগ্রগতিতে ক্ষমতাবর্ধন এবং মেধার লালন পালনকে ভিত্তি হিসেবে বর্ণনা করে শ্রী মোদী সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান এবং উন্নয়নের পরবর্তী পর্যায়ে এই সকল ক্ষেত্রে আরও বেশি করে বিনিয়োগ করতে বলেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, দেশের অর্থনৈতিক সাফল্যের জন্য এটি জরুরি এবং প্রত্যেক সংস্থার সাফল্যের এটি ভিত্তি।
শ্রী মোদী বলেন, “মানুষে বিনিয়োগের দর্শন তিনটি স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে; শিক্ষা, দক্ষতা এবং স্বাস্থ্য পরিষেবা”। তিনি বলেন ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থা অনেক দশক পরে গুরুত্বপূর্ণ রূপান্তরের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। জাতীয় শিক্ষানীতি, আইআইটি-র সম্প্রসারণ, শিক্ষাব্যবস্থায় প্রযুক্তি এবং এআই-এর পূর্ণ সম্ভাবনার সদ্ব্যবহার-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রয়াসের ওপর জোর দেন তিনি। পাঠ্য পুস্তকের ডিজিটাইজেশন এবং ২২টি ভারতীয় ভাষায় পাঠ্য উপকরণের প্রাপ্তির উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই লক্ষ্যনির্দিষ্ট প্রয়াস ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থাকে একবিংশ শতাব্দীর বিশ্বের প্রয়োজন ও মানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করে তুলেছে”।

২০১৪ থেকে সরকার ৩ কোটির বেশি যুবাকে দক্ষতার প্রশিক্ষণ দিয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১ হাজার আইটিআই-এর উন্নতি করা হচ্ছে এবং ৫টি উৎকর্ষ কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। তিনি শিল্পের চাহিদা মাফিক যুবাদের প্রশিক্ষিত করে তোলার লক্ষ্যের ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের সাহায্যে চেষ্টা করা হচ্ছে, যাতে ভারতীয় যুবারা বিশ্ব মঞ্চে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে। এইসকল উদ্যোগে শিল্পজগত এবং শিক্ষা জগতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার উল্লেখ করে শ্রী মোদী শিল্পজগত এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে একে অপরের প্রয়োজনীয়তা বুঝে তা পূরণ করা এবং যুবাদের দ্রুত পরিবর্তনশীল জগতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার সুযোগ করে দেওয়ার আবেদন জানান। যুবাদের নতুন সুযোগ এবং হাতে কলমে দক্ষতার প্রশিক্ষণ দিতে পিএম ইনটার্নশিপ কর্মসূচির সূচনার কথা জানিয়ে তিনি এই উদ্যোগে প্রতিটি স্তরে আরও বেশি সংখ্যায় শিল্পমহলের অংশগ্রহণ সুনিশ্চিত করার গুরুত্বের ওপর জোর দেন।

মেডিকেল শিক্ষার বিষয়ে শ্রী মোদী বলেন, এবারের বাজেটে ১০ হাজার নতুন অতিরিক্ত আসনের সংস্থান রাখা হয়েছে এবং আগামী ৫ বছরে আরও ৭৫ হাজারটি আসন বাড়ানোর লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। সবকটি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে টেলি মেডিসিন সুবিধা পাওয়ার উল্লেখ করেন তিনি। তিনি বলেন, ডে কেয়ার্স ক্যান্সার সেন্টার স্থাপন এবং ডিজিটাল স্বাস্থ্য পরিষেবা পরিকাঠামো উন্নয়নে জোর দেওয়া হচ্ছে দূরতম প্রান্ত পর্যন্ত গুণমানসম্পন্ন স্বাস্থ্যপরিষেবা পৌঁছে দেওয়া নিশ্চিত করতে। তিনি বলেন যে, এইসকল উদ্যোগ মানুষের জীবনে রূপান্তরকারী প্রভাব ফেলবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই প্রয়াসে যুবাদের জন্য অসংখ্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। সকলকে এই উদ্যোগ রূপায়ণে দ্রুত কাজ করার আবেদন জানান, যাতে অধিক সংখ্যক মানুষের কাছে বাজেটের সুফল পৌঁছয়।
গত এক দশকের বেশি সময় ধরে অর্থনীতিতে বিনিয়োগ ভবিষ্যৎ দর্শন দিয়ে চালিত হওয়ার দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০৪৭-এর মধ্যে ভারতে শহুরে জনসংখ্যা মোটামুটি ৯০ কোটিতে পৌঁছবে বলে মনে করা হচ্ছে। যারজন্য প্রয়োজন পরিকল্পিত নগরায়ণ। তিনি বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধির পাশাপাশি সুশাসন, পরিকাঠামো এবং আর্থিক সুস্থায়িত্বের ওপর জোর দিয়ে ১ লক্ষ কোটি টাকার আরবান চ্যালেঞ্জ ফান্ড গঠনের কথা ঘোষণা করেন। প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, “ভারতীয় শহরগুলি পরিচিত হবে তার সুস্থায়ী নগর পরিবহন, ডিজিটাল সংহতি এবং পরিবেশ সহনশীল পরিকল্পনার জন্য”। তিনি বেসরকারি ক্ষেত্রকে বিশেষ করে রিয়েলএস্টেট এবং শিল্প মহলকে পরিকল্পিত নগরায়ণ এগিয়ে নিয়ে যেতে অগ্রাধিকার দেওয়ার আবেদন জানান। অমৃত ২.০ এবং জলজীবন মিশনের মতো উদ্যোগকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সমন্বিত প্রয়াসের ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।

অর্থনীতিতে বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা করার সময় পর্যটন ক্ষেত্রের সম্ভাবনার ওপর আলোকপাত করার প্রয়োজনীতার ওপর জোর দিয়ে শ্রী মোদী বলেন, পর্যটন ক্ষেত্রের ক্ষমতা আছে ভারতের জিডিপি-র ১০ শতাংশ অবদান রাখার এবং কোটি কোটি যুবার জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করার। তিনি বাজেটে ঘরোয়া তথা আন্তর্জাতিক পর্যটনের প্রসারে একাধিক পদক্ষেপের উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারা দেশে ৫০টি স্থানকে বেছে নেওয়া হয়েছে পর্যটনে জোর দিয়ে। তিনি আরও বলেন, এইসব স্থানে হোটেলের পরিকাঠামো বৃদ্ধি করলে পর্যটনের সুবিধা এবং স্থানীয় স্তরে কর্মসংস্থান বাড়বে। হোমস্টে-কে সাহায্য করতে মুদ্রা যোজনার আওতা বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়ে শ্রী মোদী বলেন, সারা বিশ্বের পর্যটকদের আকর্ষণ করতে ‘হিল ইন ইন্ডিয়া’ এবং ‘ল্যান্ড অফ দ্য বুদ্ধ’-এর মতো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ভারতকে পর্যটন এবং সুস্থতার হাব হিসেবে বিশ্বের কাছে পরিচয় ঘটাতে প্রয়াস নেওয়া হচ্ছে।
শুধু হোটেল এবং পরিবহন শিল্প নয়, অন্যান্য ক্ষেত্রেও পর্যটনের জন্য সুযোগ তৈরি হতে পারে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য ক্ষেত্রকে স্বাস্থ্য পর্যটনের প্রসারে লগ্নি করার আহ্বান জানান। যোগা এবং সুস্থতা পর্যটনের সম্ভাবনার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করার ওপর জোর দেন তিনি। শিক্ষা পর্যটনের বৃদ্ধিরও সুযোগ আছে জানিয়ে এবিষয়ে তিনি বিস্তারিত আলোচনা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন এবং এইসব উদ্যোগকে এগিয়ে নিয়ে যেতে একটি শক্তিশালী পথচিত্র তৈরি করার ডাক দেন।

শ্রী মোদী বলেন, “দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হয় উদ্ভাবনে লগ্নির দ্বারা”। তিনি বলেন, কৃত্রিম মেধার ক্ষমতা আছে ভারতীয় অর্থনীতিতে কয়েক লক্ষ কোটি টাকা যুক্ত করার। এই লক্ষ্যে দ্রুত অগ্রগতির প্রয়োজন আছে বলে তিনি মনে করেন। বাজেটে এআই চালিত শিক্ষা ও গবেষণার জন্য ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করার উল্লেখ করেন তিনি। ভারতে কৃত্রিম মেধার ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে ন্যাশনাল লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল স্থাপনের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি ক্ষেত্রকে এই বিষয়ে সারা বিশ্বের থেকে একধাপ এগিয়ে থাকার আবেদন জানান। তিনি বলেন, “বিশ্ব চাইছে একটি আস্থাভাজন, সুরক্ষিত এবং গণতান্ত্রিক দেশ যা কম খরচে কৃত্রিম মেধার সমাধান দিতে পারে”।
তিনি আরও বলেন, আজ এই ক্ষেত্রে যা লগ্নি হবে, ভবিষ্যতে তেমন অনেক গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ পাওয়া যাবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সারা বিশ্বে স্টার্টআপের সংখ্যায় ভারত তৃতীয় বৃহত্তম”। স্টার্টআপের প্রসারে এবারের বাজেটে একাধিক পদক্ষেপের কথা জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গবেষণা উদ্ভাবনে উন্নতি ঘটাতে ১ লক্ষ কোটি টাকার তহবিল গঠনে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ডিপ টেক ফান্ড অফ ফান্ডস’-এর মাধ্যমে নতুন নতুন ক্ষেত্রগুলিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি হবে। গবেষণা এবং মেধাবী যুবাদের সুযোগ দিতে আইআইটি এবং আইআইএসসি-তে ১০ হাজার ফেলোশিপ দেওয়ার কথা বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী উদ্ভাবনের বৃদ্ধিতে ন্যাশনাল জিও স্পেশিয়াল মিশন এবং ন্যাশনাল রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন। গবেষণা উদ্ভাবনে ভারতকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিতে সর্বস্তরে সমন্বিত প্রয়াসের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন তিনি।

ভারতের মূল্যবান পাণ্ডুলিপি ঐতিহ্যের সংরক্ষণে জ্ঞান ভারতম মিশনের উল্লেখ করে শ্রী মোদী ঘোষণা করেন যে, ১ কোটির বেশি পাণ্ডুলিপি ডিজিটাইজ করা হবে। তারপর গড়ে তোলা হবে ন্যাশনাল ডিজিটাল রিপোজিটারি। এখান থেকে বিশ্বের বিদ্বান এবং গবেষকরা ভারতের ঐতিহাসিক চিরাচরিত জ্ঞান এবং প্রজ্ঞা সম্পর্কে জানতে পারবেন। প্রধানমন্ত্রী ভারতীয় উদ্ভিদের জিন সংরক্ষণে ন্যাশনাল জিন ব্যাঙ্ক স্থাপন করার কথা বলেন, তিনি বলেন, এই উদ্যোগের লক্ষ্য ভবিষ্যতের জন্য জিনগত উৎস এবং খাদ্য নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা। এই প্রয়াসের প্রসারের আবেদন জানিয়ে তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ক্ষেত্রকে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহনের ডাক দেন।

২০২৫-এর ফেব্রুয়ারিতে ভারতের অর্থনীতি বিষয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা ভাণ্ডারের পর্যবেক্ষণের উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন, ২০১৫ থেকে ২০২৫-এর মধ্যে ভারতের বৃদ্ধির হার ৬৬% যা একে ৩.৮ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতিতে পরিণত করেছে। তিনি বলেন, অনেক বড় বড় অর্থনীতিকেও এই হার পেরিয়ে গেছে এবং সেইদিন খুব বেশি দূরে নয়, যখন ভারত ৫ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতি হয়ে উঠবে। অর্থনীতির প্রসার ঘটাতে সঠিক সময়ে সঠিক লগ্নির গুরুত্বের ওপর জোর দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী এই লক্ষ্যপূরণে বাজেট ঘোষণা রূপায়ণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার ওপর জোর দিয়ে সব পক্ষের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, একা একা কাজ করার প্রথা ভেঙে বর্তমানে সরকার বাজেটের আগে এবং পরে আলোচনা করে কর্মসূচিগুলি আরও ভালোভাবে রূপায়ণ করার জন্য। তাঁর আশা ওয়েবিনারে আলোচনা ফলপ্রসূ হবে এবং ১৪০ কোটি ভারতীয়ের প্রত্যাশা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।

 

SC/AP/CS