Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর গুজরাটের বড়তাল-এ শ্রী স্বামীনারায়ণ মন্দিরের দ্বি-শতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর গুজরাটের বড়তাল-এ শ্রী স্বামীনারায়ণ মন্দিরের দ্বি-শতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ


নয়াদিল্লি, ১১  নভেম্বর, ২০২৪

 

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ গুজরাটের বড়তাল-এ শ্রী স্বামীনারায়ণ মন্দিরের দ্বি-শতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। এই উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সিং-এর মাধ্যমে ভাষণ দেওয়ার সময় তিনি বলেন, শ্রী স্বামীনারায়ণের আশীর্বাদে আজ েই মন্দিরের দ্বি-শতবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ভক্তদের স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, স্বামীনারায়ণ মন্দিরের ঐতিহ্যই হল মানুষের সেবা করা। ভক্তরা সেই ঐতিহ্যকেই অনুসরণ করে চলেছেন। এই উপলক্ষ্যে আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানের খবর সংবাদ মাধ্যমে দেখতে পাওয়ায় তিনি আনন্দিত।  

শ্রী মোদী বলেন, বড়তাল ধামের দ্বি-শতবার্ষিকী উদযাপন শুধুমাত্র এক ঐতিহাসিক ঘটনায় নয়, এই ধামের প্রতি তিনি সহ অন্যান্য শিষ্যদের যে ভক্তি রয়েছে, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারতীয় সংস্কৃতির শাশ্বত ধারা এর মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হচ্ছে। শ্রী স্বামীনারায়ণের প্রতিষ্ঠিত বড়তাল ধাম ২০০ বছর পরেও অধ্যাত্ম চেতনাকে জাগ্রত করে রেখেছে। তাঁর শিক্ষার প্রভাব আজও অনুভূত হয়। মন্দিরের দ্বি-শতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী সকল সাধু-সন্ত এবং ভক্তকে উষ্ণ অভিনন্দন জানান। কেন্দ্রীয় সরকার এই উপলক্ষ্যে ২০০ টাকার একটি রৌপ্যমূদ্রা এবং স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করায় তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন। এই উদ্যোগ আগামী প্রজন্মকে আজকের অনুষ্ঠান সম্পর্কে বার্তা দেবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বামীনারায়ণের সংস্পর্শে যাঁরা এসেছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই তাঁর দৃঢ় ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে পরিচিত। পাশাপাশি ঐতিহ্যের সঙ্গে যে আধ্যাত্মিক এবং সামাজিক সম্পর্কে তিনি গড়ে তুলেছিলেন, সে বিষয়েও সকলের সম্যক ধারণা রয়েছে। অতীতে যে সাধুদের সৎসঙ্গ লাভ তিনি করেছেন এবং এখনও যাঁদের সংস্পর্শে তিনি আসেন, তাঁদের সকলের কাছ থেকেই দেশের উন্নয়ন সম্পর্কে নানা ধারণা তিনি পান। অন্যকিছু কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে তিনি আজ স্শরীরে এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেননি, তবে বড়তাল ধামে তাঁর মন পড়ে আছে।      

শ্রী মোদী বলেন, বিভিন্ন সময়ে সংকটের মুহূর্তে এদেশে কোনো সাধু বা মহাত্মা আবির্ভূত হয়েছেন। ভারতে পবিত্র সাধুদের এটিই ঐতিহ্য। শত শত বছরের দাসত্বের পর দেশের মানুষের মধ্যে যখন আত্মবিশ্বাসের অভাব দেখা দিয়েছিল, সেই কঠিন সময়ে প্রভু স্বামীনারায়ণ আবির্ভূত  হন। তখন প্রভু স্বামীনারায়ণ সহ অন্যান্য সাধুরা দেশবাসীর মধ্যে শুধু অধ্যাত্ম চেতনাকেই জাগ্রত করেননি, তাঁরা আমাদের আত্মসম্মানকে পুনরুজ্জীবিত করেছেন, আমাদের পরিচিতি সম্পর্কে গর্ববোধ করতে শিখিয়েছেন। এই লক্ষ্যে শিক্ষাপত্রী এবং বচনামৃতের ভূমিকার কথা তিনি উল্লেখ করেন। তাঁদের সেই শিক্ষাকে আত্মস্থ করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। মানবজাতির সেবায় বড়তাল ধাম যেভাবে নিয়োজিত রয়েছে তা অনুপ্রেরণার উৎস। এর মাধ্যমে নতুন যুগের সূচনা হবে। এই বড়তাল ধাম বঞ্চিত, শোষিত সমাজের সাগারামজির মতো শিষ্য পেয়েছে। আজ বড়তালধাম বহু শিশুর জন্য খাদ্য, বাসস্থান এবং শিক্ষার সংস্থান করেছে। এছাড়াও প্রত্যন্ত অঞ্চলে আদিবাসী জনজাতির জন্য বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে মহিলাদের শিক্ষার প্রসার ঘটাতে এই মন্দিরের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। দরিদ্রদের সেবা করা ছাড়াও সময়োপযোগী বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে আধ্যত্মিকতার মিশ্রণ ঘটিয়ে ভারতীয় সংস্কৃতিকে রক্ষা করা হচ্ছে।এই মন্দিরের ভক্ত এবং সাধু-সন্ন্যাসীরা পরিচ্ছন্নতা অভিযানে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করায় তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন। তাঁরা অত্যন্ত আগ্রহের সঙ্গে তাঁদের কর্তব্য পালন করেন। এক পেড় মা কে নাম কর্মসূচির আওতায় স্বামীনারাণের ভক্তরা ১ লক্ষের বেশি গাছ লাগিয়েছেন বলে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে উল্লেখ করেন।  

তাঁর জীবনের লক্ষ্য কী হওয়া উচিত প্রত্যেক মানুষ  সেটি নিজে নিজেই নির্ধারণ করে থাকেন। এক্ষেত্রে আমাদের ভাবনা এবং জীবনের উদ্দেশ্যকে যথাযথভাবে প্রভাবিত করতে পারলে জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আসে। শ্রী মোদী বলেন,  সাধু-সন্ন্যাসীরা যুগে যুগে এই কাজটিই করে আসছেন। যখন সমাজ এবং দেশ কোনো উদ্দেশ্য সাধনে একত্রিত হয় তখন সাফল্য অবশ্যম্ভাবী। এর বহু উদাহরণ রয়েছে। আজ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলি দেশের যুব সমাজকে যথাযথভাবে পথ দেখাতে পারে কারণ, সমগ্র দেশ এক নির্দিষ্ট লক্ষ্যে দিকে এগিয়ে চলেছে, তা হল উন্নত ভারত গড়ে তোলা। তিনি বড়তাল সহ স্বামীনারায়ণ পরিবারের সাধু-সন্তদের উন্নত ভারত গড়ার পবিত্র কর্তব্যে সামিল হতে অনুরোধ জানান। স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা লাভের আকাঙ্খা একদিনে মানুষের মধ্যে জাগ্রত হয়নি। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে তা মানুষের মধ্যে সঞ্চারিত হয়েছিল, ফলস্বরূপ মানুষ স্বাধীনতা লাভের স্বপ্ন দেখে এবং স্বাধীনতা অর্জনের সংকল্প নেয়। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় যে সচেতনতা এবং আকাঙ্খা প্রতি মুহুর্তে অনুভূত হত, আজ ১৪০ কোটি দেশবাসীর মধ্যে উন্নত ভারত গড়ে তোলার সেই মনোভাবই প্রতিফলিত হচ্ছে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ভক্তবৃন্দের প্রতি তাঁর আহ্বান,  তাঁরা যেন ভোকাল ফর লোকালের ভাবনাকে বাস্তবায়নে সহায়তা করে। উন্নত ভারত গড়ে তুলতে হলে ঐক্য ও সংহতির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, অথচ সমাজের স্বার্থান্বেষী মহল এই ঐক্যের ভাবনাকে ধ্বংস করতে উদ্যোগী হয়েছে। এই অপচেষ্টাকে প্রতিহত করতে হবে। 

শ্রী মোদী বলেন, কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে কীভাবে বৃহৎ লক্ষ্য অর্জন করতে হয়, তা প্রভূ শ্রী স্বামীনারায়ণ শিক্ষার মাধ্যমে আমরা জানতে পারি। তরুণ মন দেশ গঠনের কাজে কীভাবে নির্ণায়ক শক্তি হতে পারে, প্রভু শ্রী স্বামীনারায়ণ সে বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা দিয়েছেন। আর তাই শিক্ষিত এক যুব সমাজ গড়ে তোলা অত্যন্ত প্রয়োজন,  যাঁরা যেকোন পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে পারবেন। সমগ্র বিশ্ব ভারতের যুব সম্প্রদায়ের সম্ভাবনার প্রতি আকর্ষণ অনুভব করে, এই দক্ষ যুব সমাজ শুধুমাত্র দেশেরই নয়, সমগ্র বিশ্বের চাহিদা পূরণ করতে প্রস্তুত। বিশ্বে ভারতের দক্ষ মানব সম্পদের যথেষ্ঠ চাহিদা রয়েছে। স্বামীনারায়ণের অনুগামীরা নেশামুক্ত সমাজ গড়ার লক্ষ্যে যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন, সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী তাঁদের যুব সম্প্রদায়কে মাদকের নেশা থেকে মুক্ত করার জন্য সব ধরণের প্রচেষ্টায় সামিল হওয়ার আহ্বান জানান। তাঁদের এই উদ্যোগ শুধুমাত্র ভারতে নয় সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে হবে।  
 
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ঐতিহ্যের প্রতি গর্ববোধ এবং তাকে সংরক্ষণের মধ্য দিয়েই যে কোন দেশ এগিয়ে যেতে পারে, “ভারতের মন্ত্র হল উন্নয়নের পাশাপাশি ঐতিহ্যকে রক্ষা করা”। দেশের হাজার হাজার বছরের ঐতিহ্যকে আবারও পুনরুদ্ধার করা হচ্ছে। অতীতে ভাবা হত এগুলি ধ্বংস হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে তিনি অযোধ্যার প্রসঙ্গটি উল্লেখ করেন। পাশাপাশি কাশী, কেদারনাথ, পাওগড়, মোধেরার সূর্যমন্দির এবং সোমনাথের পুনর্নিমাণের উদাহরণও তিনি তাঁর ভাষণে তুলে ধরেন। আজ দেশ জুড়ে নতুন এক চেতনা জাগ্রত হচ্ছে। এদেশের শতাব্দী প্রাচীন দেবদেবীর বহু মূর্তি অতীতে লুঠ হয়েছে। আজ সেগুলি ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। লোথালের পুনরুন্নয়ন প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাংস্কৃতিক সচেতনতা গড়ে তোলার দায়িত্ব একা সরকারের নয়, যাঁরা এই দেশ, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যকে ভালোবাসেন তাঁদের সকলের। বড়তাল ধামে প্রভু স্বামী নারাণের স্মৃতি বিজড়িত সংগ্রহশালা অক্ষর ভুবন গড়ে তোলার উদ্যোগের প্রশংসা করেন তিনি। এই সুবৃহৎ মন্দির ভারতের শাশ্বত আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যকে রক্ষা করবে।  

শ্রী মোদী বলেন, ১৪০ কোটি ভারতবাসী যখন অভিন্ন এক লক্ষ্যপূরণে ব্রতী হয়েছেন, তখন সেই লক্ষ্য সহজেই অর্জিত হবে। উন্নত ভারত গড়ার এই গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগে আমাদের সাধু-সন্ন্যাসীদের পরামর্শেরও প্রয়োজন। আজকের অনুষ্ঠানে উপস্থিত সাধু-সন্ন্যাসীদের তিনি বিশ্বজুড়ে পূর্ণ কুম্ভের প্রচারাভিযানে সামিল হওয়ার অনুরোধ জানান। প্রতি ১২ বছর অন্তর ভারতের এই ঐতিহ্য পালিত হয়। প্রয়াগরাজে পূর্ণ কুম্ভ সম্পর্কে বিদেশীদের জানানোর জন্য সন্ন্যাসীদের প্রতি তিনি আহ্বান জানান। বিদেশের বিভিন্ন শাখায় যেসব সন্ন্যাসীরা রয়েছেন তাঁরা প্রত্যেকে যদি ন্যূনতম ১০০ জন বিদেশীকে কুম্ভ মেলার মাহাত্ম্য সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করেন তাহলে সারা বিশ্বে পূর্ণ কুম্ভ সম্পর্কে একটি ধারণা তৈরি হবে।    

তাঁর ভাষণের শেষে প্রধানমন্ত্রী আবারও এই অনুষ্ঠানে সশরীরে উপস্থিত না হওয়ায়  ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং স্বামীনারায়ণ মন্দিরের দ্বি-শতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানের জন্য সাধু-সন্ন্যাসী এবং ভক্তদের শুভেচ্ছা জানান।       

 

PG/CB/NS…