সততা ও সংহতি হল দরিদ্র মানুষের সবচেয়ে বড় মূলধন : বললেন প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী মুদ্রা ও সততার সংযোগই হবে ক্ষুদ্র শিল্প প্রচেষ্টার সাফল্যের চাবিকাঠি : প্রধানমন্ত্রী নয়াদিল্লি, ০৮ এপ্রিল, ২০১৫ ভারতীয় অর্থনীতির সমৃদ্ধি ও অগ্রগতির সবচেয়ে বড় উপায় হল ক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোগীদের সমস্ত রকমভাবে সাহায্য করা। আজ রাজধানীতে প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনার আনুষ্ঠানিক সূচনাকালে এই মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী। দেশের অর্থনীতিতে ক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোগীদের অবদানের গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বিশেষভাবে আশা প্রকাশ করেন যে, আগামী এক বছরের মধ্যে দেশের বড় বড় ব্যাঙ্কগুলি মুদ্রা মডেল অনুসরণ করবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে মানুষের চিন্তাভাবনা ও বাস্তবের মধ্যে অনেক সময়েই বিস্তর ব্যবধান থেকে যায়। এই প্রসঙ্গে তিনি দৃষ্টান্ত তুলে ধরে বলেন, বড় বড় শিল্প সংস্থাগুলি আরও বেশি করে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে। এই চিন্তাভাবনা বা আশা-আকাঙ্খা অনেকের মধ্যেই থাকে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, এই সমস্ত বড় বড় শিল্পোদ্যোগে মাত্র ১ কোটি ২৫ লক্ষ লোকেরই কর্মসংস্থান হয়। অন্যদিকে, ক্ষুদ্র শিল্প সংস্থাগুলিতে প্রায় ১২ কোটি মানুষের রুজি-রোজগারের ব্যবস্থা সম্ভব। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বড় বড় শিল্প সংস্থাগুলিকে নানা ধরণের সুযোগসুবিধা দেওয়া হয়। আমাদের এখন দৃষ্টি ফেরাতে হবে ৫ কোটি ৭৫ লক্ষ স্বনির্ভর তথা স্বনিযুক্ত মানুষের দিকে, যাদের বিনিয়োগ তহবিলের পরিমাণ ১১ লক্ষ কোটি টাকা। অথচ, এই সমস্ত ক্ষুদ্র শিল্প সংস্থায় কাজ করে চলেছেন ১২ কোটি ভারতীয়। এই সমস্ত কথা চিন্তাভাবনা করেই মুদ্রা ব্যাঙ্কের ধারণাটি গড়ে উঠেছে বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন তাঁর অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঐ সময় তিনি ঘুড়ি তৈরির মতো একটি পরিবেশ-বান্ধব কুটির শিল্পের দিকে বিশেষভাবে নজর দিয়েছিলেন। কারণ, ঐ শিল্পে লক্ষ লক্ষ দরিদ্র মুসলিম জনসাধারণের অন্ন সংস্থান হয়। চেন্নাই এর এক সমীক্ষা ও গবেষণা সংস্থাকে কাজে লাগিয়ে তিনি উপলব্ধি করেছিলেন যে, শিল্পে দক্ষতা উন্নয়নের বিষয়টি খুবই জরুরি। ঘুড়ি তৈরির ঐ শিল্প গুজরাটে ৩৫ কোটি টাকার ব্যবসাকে ৫০০ কোটিতে উন্নীত করেছিল বলে প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করে জানান। প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী অন্যান্য ক্ষুদ্র শিল্প সংস্থার ব্যবসার বিষয়টিও তুলে ধরেন। এই সমস্ত শিল্প সংস্থার বহুগুণে বেড়ে ওঠার যে উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে সেকথাও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, দরিদ্র মানুষের সবচেয়ে বড় সম্পদ হল, তাঁর আত্মসম্ভ্রম, সততা ও সংহতি। তাঁদের এই সততা ও সংহতির সঙ্গে ‘মুদ্রা’ তথা মূলধনের সমন্বয়ে আসতে পারে চূড়ান্ত সাফল্য। মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য এই সমস্ত মহিলারা যে সততা ও আত্মসম্ভ্রমের নজির রেখেছেন, তা অন্যত্র খুঁজে পাওয়া বিরল। জন ধন যোজনার সাফল্যের পেছনে ব্যাঙ্কগুলির নিরলস প্রচেষ্টার বিশেষ প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আগামী এক বছরের মধ্যে ‘মুদ্রা যোজনা’র আওতায় আবেদনকারীদের ঋণ দেওয়ার জন্য ব্যাঙ্কগুলি আরও বেশি করে এগিয়ে আসবে। ভারতীয় ক্ষুদ্র শিল্প উন্নয়ন ব্যাঙ্কের (এস.আই.ডি.বি.আই.) প্রতিষ্ঠার রজত জয়ন্তী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী ঐ ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে বিশেষভাবে অভিনন্দন জানান। বিগত ২৫ বছরে এই ব্যাঙ্কটি ভারতের ক্ষুদ্রায়তন শিল্প ক্ষেত্রকে যেভাবে সাহায্য ও সমর্থন জুগিয়ে এসেছে, তার ভূয়সী প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য করার মতো পুঁজির সুযোগ থেকে যাঁরা বঞ্চিত, তাঁদের কাছে আর্থিক সহায়তার সুযোগ পৌঁছে দিতেই ‘মুদ্রা যোজনাটি’ গড়ে উঠেছে। ভারতের ক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোগীরা প্রায়ই মহাজনদের শোষণের শিকার হয়ে পড়েন। কিন্তু ‘মুদ্রা যোজনাটি’ চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের মধ্যে এই আত্মবিশ্বাসের জন্ম হবে যে, জাতি গঠনের কাজে তাঁদের যে নিরলস প্রচেষ্টা ও অবদান রয়েছে তাতে সমর্থন জুগিয়ে যেতে দেশ ও দেশের সরকার এখন সর্বতোভাবেই প্রস্তুত। দেশের কৃষি ক্ষেত্রে মূল্য সংযোজনের সম্ভাবনা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের কৃষি ব্যবস্থায় মূল্য সংযোজনের কাজের সঙ্গে দেশের কৃষকরা যুক্ত রয়েছেন। তাই তাদের সকলকে নিয়ে আমাদের একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে হবে। উৎপাদনের একটি নিজস্ব ব্র্যান্ড তৈরি করা, বিজ্ঞাপন, বিপণন ও আর্থিক সহায়তা দানের মাধ্যমে ক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোগীদের আমরা আরও শক্তিশালী করে তুলতে পারি। আর এইভাবেই ভারতীয় অর্থনীতি হয়ে উঠবে আরও জোরদার ও মজবুত। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সমস্ত কাজ করতে আমাদের কাঠামোর মধ্যে ব্যাপক কোনও পরিবর্তন আনতে হবে না, বরং যা প্রয়োজন তা হল সহানুভূতি ও সহমর্মিতা, পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং কাজ করার নিষ্ঠা ও উদ্যোগ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নতুন নতুন কর্মসূচি চালু করলেই দেশ এগিয়ে যাবে না। সাফল্যের জন্য প্রয়োজন বাস্তব ক্ষেত্রে কাজের ধারার পরিবর্তন। ‘জন ধন যোজনা’ এবং ‘পহল’ -এর ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যেই ভালো ফল পাওয়া গেছে এবং তা আমাদের এই উদ্যোগের ক্ষেত্রে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। দেশের প্রতিষ্ঠিত আর্থিক ব্যবস্থায় খুব শীঘ্রই মুদ্রা মডেল অনুসরণ করে কাজকর্ম চালু হবে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান। এর অর্থ ন্যূনতম তহবিলের যোগানের মাধ্যমে এক বিরাট সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে যে সমস্ত ক্ষুদ্র শিল্প সংস্থা কাজ করে চলেছে তাদের সমস্ত রকমভাবে সাহায্য ও সমর্থন জুগিয়ে যাওয়া। অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী শ্রী অরুণ জেটলি, অর্থ প্রতিমন্ত্রী শ্রী জয়ন্ত সিনহা এবং ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর শ্রী রঘুরাম রাজনও উপস্থিত ছিলেন।