Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সিং-এর মাধ্যমে শ্রী অরবিন্দের সার্ধশততম জন্মবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে ভাষণ দিয়েছেন

প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সিং-এর মাধ্যমে শ্রী অরবিন্দের সার্ধশততম জন্মবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে ভাষণ দিয়েছেন


নয়াদিল্লি, ১৩ ডিসেম্বর ২০২২

 

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’-এর অধীনে পুদুচেরির কম্বন কলাই সঙ্গমে আজ ভিডিও কনফারেন্সিং-এর মাধ্যমে শ্রী অরবিন্দের সার্ধশত জন্মবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে ভাষণ দিয়েছেন। শ্রী অরবিন্দের সম্মানে একটি স্মারক মুদ্রা ও ডাকটিকিটও প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী।

শ্রী অরবিন্দের সার্ধশত জন্মবার্ষিকী অনুষ্ঠান, যা সারা দেশে সারা বছর ধরে পালিত হচ্ছে, তার গুরুত্বের কথা সমাবেশের ভাষণে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। শ্রী মোদী বলেন, দেশ শ্রী অরবিন্দকে সম্মান জানাচ্ছে স্মারক মুদ্রা এবং ডাকটিকিট প্রকাশ করে। তিনি তাঁর বিশ্বাস ব্যক্ত করে বলেন, দেশে এই ধরনের প্রয়াস ভারতের সঙ্কল্পকে নতুন প্রাণশক্তি এবং বল যোগাবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন যে যখন একাধিক বড় ঘটনা একসঙ্গে ঘটে, তখন সেখানে ‘যোগশক্তি’ অর্থাৎ, সামূহিক এবং একত্রিকরণের শক্তি থাকে তার পেছনে। শ্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, মহান মানুষেরা শুধুমাত্র স্বাধীনতা সংগ্রামে অবদান রেখেছিলেন তাই নয়, দেশের আত্মাতেও নতুন প্রাণ এনে দিয়েছিলেন। এঁদের মধ্যে তিন ব্যক্তিত্ব – শ্রী অরবিন্দ, স্বামী বিবেকানন্দ এবং মহাত্মা গান্ধীর জীবনে একই সময়ে অনেক বড় বড় ঘটনা ঘটেছিল। এইসব ঘটনা শুধুমাত্র এই ব্যক্তিদের জীবনে পরিবর্তন এনেছিল তাই নয়, জাতির জীবনেও সুদূরপ্রসারী পরিবর্তন এনেছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৮৯৩ সালে শ্রী অরবিন্দ দেশে ফিরেছিলেন এবং ঐ একই বছরে স্বামী বিবেকানন্দ আমেরিকায় গিয়ে বিশ্ব ধর্ম মহাসম্মেলনে তাঁর ঐতিহাসিক বক্তৃতা দিয়েছিলেন। তিনি আরও বলেন, ঐ একই বছরে গান্ধীজি দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়েছিলেন যা তাঁর ‘মহাত্মা গান্ধী’তে রূপান্তর হওয়ার সূচনা করেছিল। তিনি বলেন, বর্তমান সময়েও ঠিক একই রকম ঘটনার সঙ্গম ঘটছে যখন দেশ স্বাধীনতার ৭৫ বছর পার করছে এবং অমৃতকালের যাত্রা শুরু করছে, সেই সময় আমরা দেখছি শ্রী অরবিন্দের সার্ধশত জন্মবার্ষিকী এবং নেতাজী সুভাষের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী। শ্রী মোদী বলেন, “যখন উদ্দেশ্য এবং কাজ মিলে যায়, তখন আপাত কঠিনও অবধারিতভাবে পূরণ হয়ে যায়। আজ অমৃতকালে দেশের সাফল্য এবং ‘সবকা প্রয়াস’-এর সঙ্কল্প এরই প্রমাণ।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন যে শ্রী অরবিন্দের জীবন ‘এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত’-এর প্রতিফলন কারণ, তিনি জন্মেছিলেন বাংলায়, জানতেন গুজরাটি, বাংলা, মারাঠি, হিন্দি এবং সংস্কৃত সহ অনেক ভাষা। তিনি জীবনের বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছিলেন গুজরাট ও পুদুচেরিতে এবং যেখানেই তিনি গেছেন সেখানেই গভীর দাগ রেখেছেন। শ্রী অরবিন্দের ভাবধারার ওপর আলোকপাত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখন আমরা আমাদের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির বিষয়ে সচেতন হব এবং তারই মধ্য দিয়ে বেঁচে থাকব, তখন সেই মুহূর্তে আমাদের বৈচিত্র্য হয়ে উঠবে আমাদের জীবনের স্বাভাবিক উদযাপন। তিনি বলেন, “এটা ‘আজাদি কা অমৃতকাল’-এর জন্য আমাদের মহান অনুপ্রেরণা। এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারতকে ব্যাখ্যা করার এর থেকে ভালো কিছু হয় না।”

প্রধানমন্ত্রী কাশী তামিল সঙ্গমম-এ অংশ নেওয়ার সুযোগের উল্লেখ করেন এবং বলেন যে ভারত যেভাবে দেশকে তার সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য দিয়ে বেঁধে রেখেছে এই চমৎকার অনুষ্ঠানটি তার বড় উদাহরণ। কাশী তামিল সঙ্গমম দেখিয়েছে যে আজকের যুবারা ভাষা এবং পোশাকের ভিত্তিতে বিভেদকামী রাজনীতিকে পেছনে ফেলে ‘এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত’-এর রাজনীতিকে আকড়ে ধরেছে। আজ আজাদি কা অমৃত মহোৎসব এবং অমৃতকালে আমাদের কাশী তামিল সঙ্গমম-এর আদর্শের প্রসার ঘটাতে হবে।

শ্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন যে শ্রী অরবিন্দ ছিলেন এমন একজন ব্যক্তি যাঁর ছিল আধুনিক বৈজ্ঞানিক মনোভাব, রাজনৈতিক বিদ্রোহ এবং তার পাশাপাশি ঐশ্বরিক চেতনা। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গভঙ্গের সময়ে তাঁর ‘কোনও সমঝোতা নয়’ স্লোগানের উল্লেখ করেন। সেই সময়ে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কাছে তাঁর আদর্শগত স্বচ্ছতা, সাংস্কৃতিক শক্তি এবং দেশাত্মবোধ তাঁকে আদর্শ নায়ক করে তুলেছিল। শ্রী মোদী শ্রী অরবিন্দের ঋষিপ্রতীম বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ করেন যেখানে শ্রী অরবিন্দ একাধারে ছিলেন দার্শনিক ও আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব। তিনি উপনিষদের সঙ্গে যোগ করেছিলেন সমাজ সেবাকে। তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করে বলেন যে আমরা কোনরকম হীনম্মন্যতা ছাড়াই আমাদের উন্নত ভারতের যাত্রায় আমরা সকল দৃষ্টিভঙ্গিকেই আপন করে নিয়েছি। আমরা ‘ভারত প্রথম’ – এই মন্ত্র নিয়ে কাজ করছি এবং সারা বিশ্বের সম্মুখে গর্বের সঙ্গে তুলে ধরছি আমাদের ঐতিহ্যকে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, শ্রী অরবিন্দের জীবন ভারতকে যুগিয়েছে সেই শক্তি যেখানে পাঁচটি সঙ্কল্পের অন্যতম হল ‘দাসত্বের মনোভাব থেকে মুক্তি’। তিনি আরও বলেন, পশ্চিমী দুনিয়ার প্রবল প্রভাব সত্ত্বেও ভারতে ফেরার পর শ্রী অরবিন্দ কারাগারে থাকাকালীন গীতার সংস্পর্শে আসেন এবং তিনিই হয়ে ওঠেন ভারতীয় সংস্কৃতির উচ্চ কন্ঠ। শ্রী মোদী আরও বলেন যে শ্রী অরবিন্দ পুঁথি পাঠ করেছিলেন। রামায়ণ, মহাভারত এবং উপনিষদ থেকে শুরু করে কালিদাস, ভবভূতি, ভর্তৃহরি অনুবাদ করেছিলেন। শ্রী মোদী বলেন, মানুষ শ্রী অরবিন্দের ভাবনায় ভারতকে প্রত্যক্ষ করেছিল। এই সেই একই অরবিন্দ যিনি যৌবনে ভারতীয়ত্ব থেকে দূরে ছিলেন। এটাই ভারত এবং ভারতীয়ত্বের প্রকৃত সত্য।

সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ইতিহাস নিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, “ভারত হল সেই অমর বীজ যাকে প্রতিকূল পরিবেশে কিছুকাল চাপা দিয়ে রাখা যায়, তার হয়তো একটু ক্ষয়ও হয়, কিন্তু সে মরে না। ভারত মানব সভ্যতার সুক্ষ্মতম ধারণা এবং মানবিকতার সবচেয়ে স্বাভাবিক কন্ঠ।” ভারতের সাংস্কৃতিক অমরত্ব সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ভারত মহাঋষি অরবিন্দের সময়েও অমর ছিল এবং আজ আজাদি কা অমৃতকালেও অমর আছে।” প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণের শেষে বর্তমানে বিশ্বের নানা সমস্যা এবং সেই সমস্যা মেটাতে ভারতের গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে বলেন, “সেজন্যই আমাদের মহাঋষি অরবিন্দের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে এবং ‘সবকা প্রয়াস’-এর মাধ্যমে উন্নত ভারত গড়তে হবে।”

প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, শ্রী অরবিন্দ ১৮৭২ সালের ১৫ আগস্ট জন্ম নেন। তিনি ছিলেন দার্শনিক। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে রেখেছিলেন সুদূরপ্রসারী প্রভাব। ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বছরে ভারতের মানুষ সংস্কৃতি এবং সাফল্যের উজ্জ্বল ইতিহাসকে উদযাপন করার প্রয়াসের অঙ্গ হিসেবে শ্রী অরবিন্দের সার্ধশত জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে দেশজুড়ে বর্ষব্যাপী নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

 

PG/AP/DM/