Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গুজরাটের লোথালে নির্মীয়মান জাতীয় সামুদ্রিক ঐতিহ্য কমপ্লেক্সের কাজের পর্যালোচনা করেছেন

প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গুজরাটের লোথালে নির্মীয়মান জাতীয় সামুদ্রিক ঐতিহ্য কমপ্লেক্সের কাজের পর্যালোচনা করেছেন


“আমাদের ইতিহাসে অনেক কাহিনী আমরা বিস্মৃত হয়েছি”

“ঐতিহ্যের প্রতি উদাসীনতা দেশের জন্য বড় ক্ষতি করেছে”

“লোথাল, সিন্ধু সভ্যতার একটি বড় বাণিজ্যিক কেন্দ্রই ছিল না, এই জনপদ ছিল ভারতের সামুদ্রিক শক্তি ও সমৃদ্ধির প্রতীক”

“লোথালের ইতিহাসের জন্য আমরা গর্বিত, আগামীদিনে এই শহর পরবর্তী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ গড়বে”

“যখন আমরা আমাদের ঐতিহ্যকে উপভোগ করি তখনই সেই ঐতিহ্যের সঙ্গে থাকা অনুভূতিকে সংরক্ষণ করি”

“গত ৮ বছরে দেশে যে ঐতিহ্য গড়ে তোলা হয়েছে তার মধ্য দিয়ে ভারতের পরম্পরার ব্যাপকতা উপলব্ধি করা যায়”

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গুজরাটের লোথালে নির্মীয়মান জাতীয় সামুদ্রিক ঐতিহ্য কমপ্লেক্সের কাজের পর্যালোচনা করেছেন। ড্রোনের সাহায্যে নির্মাণ কাজের বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য উপস্থাপিত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী এই কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি তাঁর ভাষণে বলেন, স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে নতুন দিল্লির লালকেল্লার প্রাকার থেকে তিনি ‘পঞ্চপ্রাণ’এর কথা বলেছিলেন। সেই ভাষণে প্রধানমন্ত্রী আমাদের ঐতিহ্যের প্রতি গর্ববোধ করার ওপর গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, ভারতের সামুদ্রিক ঐতিহ্যকে নিয়ে গর্ব করার অনেক উপাদান রয়েছে। “আমাদের ইতিহাসে অনেক কাহিনী  আমরা বিস্মৃত হয়েছি। এখন যে ঐতিহ্য আমরা খুঁজে পেয়েছি তাকে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। ইতিহাসের সেই অধ্যায় থেকে আমরা কতটা শিক্ষা নিয়েছি? ভারতের সামুদ্রিক ঐতিহ্য নিয়ে আলোচনার অনেক উপাদান রয়েছে।” শ্রী মোদী বলেন, প্রাচীন যুগে ভারতের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটেছিল। পৃথিবীর বিভিন্ন সভ্যতার সঙ্গে ভারতীয় সভ্যতার যোগ ছিল। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, হাজার বছরের পরাধীনতা সেই ঐতিহ্যকে ধ্বংস করেছে, আর আমরাও সেই ঐতিহ্য এবং আমাদের দক্ষতা সম্পর্কে উদাসীন মনোভাব পোষণ করি।

ভারতের সমৃদ্ধ ও বৈচিত্র্যময় সামুদ্রিক ঐতিহ্যের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী দক্ষিণ ভারতের চোল সম্রাট, চেরাযুগ এবং পান্দ্য যুগের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট সময়ের মানুষরা দেশের সামুদ্রিক সম্পদের শক্তি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন। তাঁরা সেই শক্তিকে কাজে লাগিয়ে এক অপ্রতিরোধ্য উচ্চতায় দেশকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। দেশের নৌবাহিনীকে শক্তিশালী করার মধ্য দিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে ভারতের ব্যবসা-বাণিজ্যকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। শ্রী মোদী ছত্রপতি শিবাজী মহারাজের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন বলেন, শিবাজী মহারাজ শক্তিশালী এক নৌবাহিনী গড়ে তুলেছিলেন,  যারা বিদেশী অনুপ্রবেশকারীদের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখতেন। “ভারতের ইতিহাসের এই গৌরবজ্জ্বল অধ্যায়গুলি নিয়ে চর্চা  অবহেলিত থেকে গিয়েছে।” অতীতে কচ্ছে বড় বড় জাহাজ নির্মাণ করা হত। সেই ঐতিহাসিক গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে আজ সরকার সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের মানোন্নয়ন ঘটাতে অঙ্গীকারবদ্ধ বলে প্রধানমন্ত্রী জানান। “ভারতের তৈরি বড় বড় জাহাজের সারা বিশ্বজুড়ে বাজার ছিল। ঐতিহ্যের প্রতি এই উদাসীন মনোভাব দেশের জন্য বড় ক্ষতি করেছে। এই পরিস্থিতির পরিবর্তন প্রয়োজন।”

শ্রী মোদী ঐতিহাসিক গুরুত্ব সম্বলিত বিভিন্ন স্থান অনুসন্ধানের প্রসঙ্গটি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বর্তমানে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কার্যের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। “ঢোলাভিরা এবং লোথালের মতো ঐতিহাসিক স্থানগুলি ছিল দেশের জন্য গর্বের জায়গা। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি এই অঞ্চলগুলিকে আবার তাদের হৃত গৌরব ফিরিয়ে দেব। আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি সেই লক্ষ্যপূরণে দ্রুত গতিতে কাজ হচ্ছে।” সম্প্রতি বাঢ়নগরের কাছে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কার্যের সময় সিঙ্কোটার মাতা মন্দির খুঁজে পাওয়া যায়। সেখান থেকে এমন কিছু নির্দশন পাওয়া গেছে যার মাধ্যমে প্রাচীন যুগে সমুদ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পর্কে নানা তথ্য উঠে এসেছে। একইভাবে সুরেন্দ্র নগরের ঝিনঝুওয়ারা গ্রামে একটি বাতিঘর বা লাইট হাউসের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, লোথালে খনন কার্য চালিয়ে যে শহর, বন্দর এবং বাজারের নির্দশন পাওয়া গেছে তার থেকে নগর পরিকল্পনা সম্পর্কে অনেক তথ্য পাওয়া যায়। “লোথাল সিন্ধু সভ্যতার একটি বড় বাণিজ্যিক কেন্দ্রই ছিল না, এই জনপদ ছিল ভারতের সামুদ্রিক শক্তি ও সমৃদ্ধির প্রতীক।” প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই অঞ্চলে দেবী লক্ষ্মী এবং দেবী সরস্বতীর আশীর্বাদ বর্ষিত হয়েছিল। একটা সময় ছিল যখন লোথাল বন্দরে ৮৪টি দেশের পতাকা উঠত। একইসঙ্গে বলভিতে ৮০টি দেশের ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনা করতে আসতেন।

প্রধানমন্ত্রী জানান, ভারতের বৈচিত্র্যপূর্ণ সামুদ্রিক ইতিহাস সম্পর্কে ধারনা পেতে লোথালের জাতীয় সামুদ্রিক ঐতিহ্য কমপ্লেক্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এই ঐতিহ্যশালী কমপ্লেক্সটি এমনভাবে গড়ে তোলা হচ্ছে যার সাহায্যে সাধারণ মানুষ খুব সহজেই এই অঞ্চলের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবেন। এ কাজে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই কমপ্লেক্স নির্মাণের মধ্য দিয়ে শুধু যে লোথালের ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনা হবে তাই নয়, গুজরাটের উপকূলবর্তী অঞ্চলে অত্যাধুনিক পরিকাঠামো গড়ে তোলার বেশ কিছু পরিকল্পনা করা হয়েছে। আগামীদিনে এখানে একটি সেমি কন্ডাক্টর উৎপাদনের কারখানা গড়ে তোলা হবে। “হাজার হাজার বছর আগে এই জায়গা যতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল আজ আমাদের সরকার এই অঞ্চলকে আবার আগের মতো গড়ে তুলতে উদ্যোগী হয়েছে। লোথালের ইতিহাসের জন্য আমরা গর্বিত, আগামীদিনে এই শহর পরবর্তী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ গড়বে।”

শ্রী মোদী বলেন, বিভিন্ন সামগ্রী সংরক্ষণ ও নথি প্রদর্শনের মধ্যে একটি যাদুঘর গড়ে তোলার উদ্যোগ সীমাবদ্ধ থাকে না। যখন আমরা আমাদের ঐতিহ্যকে উপভোগ করি তখন সেই ঐতিহ্যের সঙ্গে থাকা অনুভূতিকেও সংরক্ষণ করি। এই প্রসঙ্গে তিনি দেশের আদিবাসী সমাজের ঐতিহ্যের কথা উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশজুড়ে আজ আদিবাসী স্বাধীনতা   সংগ্রামীদের তথ্য সম্বলিত জাদুঘর গড়ে তোলা হচ্ছে। এখানে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান তুলে ধরা হবে। স্বাধীনতা সংগ্রামে এইসব নায়করা তাঁদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। আজ দেশকে রক্ষা করার কাজে ভারতের যেসব সাহসী ছেলেমেয়েরা প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন তাঁদের কথা জাতীয় যুদ্ধ স্মারক এবং জাতীয় পুলিশ সৌধে উল্লেখ করা রয়েছে। দেশের গণতন্ত্রের ক্ষমতার কথা উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন, আমাদের দেশের ৭৫ বছরের যাত্রার এক ঝলক প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহালয়ে দেখা যাবে। তিনি আরো বলেন, কেভাডিয়ার একতা নগরে যে স্ট্যাচু অফ ইউনিটি রয়েছে তার মধ্য দিয়ে ভারতের ঐক্য ও অখন্ডতাকে বজায় রাখার জন্য যে উদ্যোগ ও অধ্যাবসায় নেওয়া হয়েছিল তা আমাদের আবারও মনে করিয়ে দেয়। “গত ৮ বছরে দেশে যে ঐতিহ্য গড়ে তোলা হয়েছে তার মধ্য দিয়ে ভারতের পরম্পরার ব্যপকতা উপলব্ধি করা যায়।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, লোথালে যে জাতীয় সামুদ্রিক সংগ্রহশালা গড়ে তোলা হচ্ছে তার জন্য আগামীদিনে দেশবাসী গর্ব অনুভব করবেন। “আমি নিশ্চিত লোথাল তার পুরনো গৌরবজ্জ্বল ঐতিহ্যকে নিয়ে সারা বিশ্বের সামনে আবারো আত্মপ্রকাশ করবে।”

ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শ্রী মনসুখ মান্ডভিয়া এবং শ্রী সর্বানন্দ সোনোওয়াল ও গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেল উপস্থিত ছিলেন।

প্রেক্ষাপট :

হরপ্পা সভ্যতার অন্যতম শহর ছিল লোথাল। এখানে মানুষের তৈরি পোতাশ্রয়ের নির্দশন পাওয়া গেছে। শহরের ঐতিহাসিক পরম্পরা ও ঐতিহ্যকে সম্মান জানানোর জন্য লোথালে সামুদ্রিক ঐতিহ্য কমপ্লেক্স গড়ে তোলা যথাযথ এক সিদ্ধান্ত।

জাতীয় সামুদ্রিক ঐতিহ্য কমপ্লেক্সটি সামুদ্রিক ঐতিহ্য তুলে ধরার জন্য দেশের মধ্যেএই প্রথম উদ্যোগ। এখানে ভারতের সমৃদ্ধ ও বৈচিত্র্যময় ঐতিহ্য প্রদর্শনের পাশাপাশি আগামীদিনে এই শহর আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাবে।

নতুন কমপ্লেক্সটির নির্মাণ কাজ ২০২২এর মার্চ মাসে শুরু হয়। এ কাজে ব্যয় হবে ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এখানে হরপ্পা যুগের স্থাপত্য ও জীবনযাত্রার নির্দশন প্রদর্শিত হবে। কমপ্লেক্সটিতে চারটি উদ্যান থাকবে। বিশ্বের উচ্চতম বাতিঘর প্রদর্শশালায় তথ্য প্রযুক্তিকে কাজে লাগানো হবে। হরপ্পা যুগ থেকে আজকের সময় পর্যন্ত ভারতের সামুদ্রিক ঐতিহ্য তুলে ধরার জন্য ১৪টি গ্যালারি গড়ে তোলা হচ্ছে। এছাড়াও বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের বৈচিত্র্যময় সামুদ্রিক ঐতিহ্য ও তুলে ধরার জন্য একটি পৃথক প্যাভিলিয়নের ব্যবস্থা করা হবে।