Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

প্রধানমন্ত্রী ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ‘মৈত্রী সেতু’র উদ্বোধন করছেন

প্রধানমন্ত্রী ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ‘মৈত্রী সেতু’র উদ্বোধন করছেন


নয়াদিল্লি, ০৯ মার্চ ২০২১

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ‘মৈত্রী সেতু’র উদ্বোধন করেছেন। তিনি ত্রিপুরায় একাধিক পরিকাঠামো প্রকল্পের সূচনা ও শিলান্যাস করেন। এই উপলক্ষে ত্রিপুরার রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও বার্তাও অনুষ্ঠানে শোনানো হয়। 

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরায় বিগত সরকারগুলির ৩০ বছরের মেয়াদ এবং গত ৩ বছর ক্ষমতায় থাকা দ্বৈত ইঞ্জিনবিশিষ্ট সরকারের কাজকর্মের মধ্যে ফারাক স্পষ্ট প্রতিফলিত হচ্ছে। বিগত বছরগুলিতে দুর্নীতি ও দালালির সংস্কৃতির পরিবর্তে সুফলভোগীদের অ্যাকাউন্টে সুযোগ-সুবিধা এখন সরাসরি পৌঁছে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, রাজ্যের সরকারি কর্মচারীদের প্রাপ্য বেতনের ক্ষেত্রে যে অনিচ্ছা দেখানো হয়েছে, তা এখন সপ্তম বেতন কমিশনের মাধ্যমে মিটিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই প্রথম ন্যূনতম সহায়ক মূল্য ব্যবস্থা ত্রিপুরায় কার্যকর হয়েছে। এর ফলে, যে সমস্ত কৃষক সমস্যার সম্মুখীণ হয়েছিলেন, তাঁরা এখন সহজেই ফসল বিক্রি করতে পারছেন। আগে রাজ্য জুড়ে যে হরতালের সংস্কৃতি ছিল, তার পরিবর্তে এখন অনুকূল ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ গড়ে উঠেছে। নতুন বিনিয়োগের ফলে বন্ধ হয়ে যাওয়া শিল্প ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে। এমনকি, ত্রিপুরা থেকে রপ্তানির পরিমাণ ৫ গুণ বেড়েছে বলেও তিনি জানান। 

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ত্রিপুরার উন্নয়নে কেন্দ্রীয় সরকার গত ৬ বছরে প্রয়োজনীয় সবরকম উদ্যোগ নিয়েছে। রাজ্যের জন্য কেন্দ্রীয় বরাদ্দের পরিমাণ লক্ষ্যণীয় পরিমাণে বাড়ানো হয়েছে। এক পরিসংখ্যান দিয়ে তিনি জানান, ২০০৯-২০১৪ পর্যন্ত সময়ে কেন্দ্রীয় স্তরের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের জন্য ত্রিপুরাকে ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা সহায়তা দেওয়া হয়েছিল। অবশ্য, ২০১৪-২০১৯ পর্যন্ত সময়ে ত্রিপুরাকে ১২ হাজার কোটি টাকারও বেশি দেওয়া হয়েছে।

দ্বৈত ইঞ্জিনবিশিষ্ট সরকারের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখন রাজ্যে দ্বৈত ইঞ্জিনবিশিষ্ট সরকার ছিল না, তখন দরিদ্র মানুষ, কৃষক ও মহিলাদের কল্যাণে পরিচালিত কর্মসূচিগুলির রূপায়ণে গতি ছিল অত্যন্ত মন্থর। তিনি বলেন, দ্বৈত ইঞ্জিনবিশিষ্ট সরকার ত্রিপুরাকে বিদ্যুৎ ঘাটতিপূর্ণ রাজ্য থেকে বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত রাজ্যে পরিণত করেছে। এই সরকারের বিভিন্ন সাফল্যের পরিসংখ্যান তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে ২ লক্ষ গ্রামীণ পরিবারে পাইপবাহিত কলের সংযোগ দেওয়ার কাজ চলছে, নিখরচে ২.৫ লক্ষ রান্নার গ্যাসের সংযোগ দেওয়া হচ্ছে, রাজ্যের প্রতিটি গ্রামকে প্রকাশ্যস্থানে শৌচকর্ম বর্জিত এলাকা হিসাবে গড়ে তোলা হচ্ছে, মাতৃবন্দনা যোজনার মাধ্যমে ৫০ হাজার গর্ভবতী মহিলা সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন, ৪০ হাজার দরিদ্র পরিবার তাঁদের নতুন বাড়ি পেতে চলেছেন। 

শ্রী মোদী আরও বলেন, রাজ্যে যোগাযোগ সম্পর্কিত পরিকাঠামো ক্ষেত্রে গত ৩ বছরে লক্ষ্যণীয় অগ্রগতি হয়েছে। বিমান পরিষেবা, ইন্টারনেট পরিষেবা ও রেল যোগাযোগ ক্ষেত্রেও এই রাজ্যে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা কেবল ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ককেই নিবিড় করছে না, সেই সঙ্গে বাণিজ্যিক লেনদেনের যোগসূত্রকেও আরও সুদৃঢ় করছে। তিনি জানান, সমগ্র উত্তর-পূর্বাঞ্চলকেই উত্তর-পূর্ব ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যিক করিডর হিসাবে গড়ে তোলা হচ্ছে। মৈত্রী সেতু চালু হওয়ার ফলে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে রেল এবং জল সরবরাহ সংক্রান্ত প্রকল্পগুলি বাস্তবায়িত হয়েছে। এই সেতু বাংলাদেশ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সহ ত্রিপুরার সঙ্গে দক্ষিণ আসাম, মিজোরাম ও মণিপুরের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত করবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সেতু বাংলাদেশেও আর্থিক গতি ত্বরান্বিত করবে। মৈত্রী সেতু নির্মাণের কাজ শেষ করতে সহযোগিতার জন্য শ্রী মোদী বাংলাদেশ সরকার ও সেদেশের প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। তিনি স্মরণ করে বলেন, তাঁর বাংলাদেশ সফরের সময় এই সেতু নির্মাণের শিলান্যাস হয়েছে। 

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, মানুষকে এখন উত্তর-পূর্বে যে কোনও ধরনের পণ্যসামগ্রী সরবরাহে আর কেবল সড়ক পরিবহণের ওপর নির্ভর করতে হবে না। এই লক্ষ্যে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে বিকল্প নদীপথে উত্তর-পূর্বের যোগাযোগ গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে। 

ফেনি নদীর ওপর এই সেতু নির্মাণের ফলে আগরতলা আন্তর্জাতিক সমুদ্র বন্দরের নিকটতম শহর হয়ে উঠবে। ইতিমধ্যেই ৮ ও ২০৮ নম্বর জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের কাজ শুরু হয়েছে। এর ফলে, সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে উত্তর-পূর্বের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও মজবুত হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ যে সমস্ত প্রকল্পের সূচনা হয়েছে, তা আগরতলাকে আরও উন্নত শহরে পরিণত করবে। আগরতলা শহরে নবনির্মিত কমান্ড সেন্টারটি যানজট নিয়ন্ত্রণ ও অপরাধের মতো ঘটনা রুখতে সাহায্য করবে। এছাড়াও, মাল্টিলেভেল গাড়ি পার্কিং, কমার্শিয়াল কমপ্লেক্স, বিমানবন্দরের সঙ্গে যুক্ত সড়কটির সম্প্রসারণের ফলে আগরতলায় সাধারণ মানুষের জীবনযাপনের মানোন্নয়ন আরও বাড়বে। 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টার ফলেই কয়েক দশক পুরনো ব্রু উদ্বাস্তু সমস্যার সমাধান হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, ব্রু মানুষের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসতে ঘোষিত ৬০০ কোটি টাকার প্যাকেজ সুদূরপ্রসারী ভূমিকা নেবে। 

রাজ্যের সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগরতলা বিমানবন্দরের নাম পাল্টে মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মাণিক্য করা হয়েছে। ত্রিপুরার উন্নয়নে মহারাজার বিচক্ষণতা ও দূরদৃষ্টিকে সম্মান জানাতেই এই সিদ্ধান্ত। রাজ্যের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও সাহিত্য ক্ষেত্রে যাঁদের অসামান্য অবদান রয়েছে, তাঁদের মধ্যে কয়েকজন – থাং দারলং, সত্যরাম রিয়াং এবং বেনীচন্দ্র জামাতিয়াকে সম্মান জানাতে পেরে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন। শ্রী মোদী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বন ধন যোজনার মাধ্যমে বাঁশ-ভিত্তিক স্থানীয় শিল্পের প্রসারে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে, স্থানীয় আদিবাসী মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে। 

তিন বছর পূর্ণ করার জন্য ত্রিপুরা সরকারকে অভিনন্দন জানিয়ে শ্রী মোদী আশা প্রকাশ করেন এই রাজ্যটি মানুষের সেবায় লাগাতার কাজ করবে। 

***

 

CG/BD/SB