Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

প্রধানমন্ত্রী গুজরাটের গান্ধীনগরে অখিল ভারতীয় শিক্ষা সংঘ অধিবেশনে যোগ দিয়েছেন

প্রধানমন্ত্রী গুজরাটের গান্ধীনগরে অখিল ভারতীয় শিক্ষা সংঘ অধিবেশনে যোগ দিয়েছেন


নয়াদিল্লি, ১২ মে, ২০২৩

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী গুজরাটের গান্ধীনগরে অখিল ভারতীয় শিক্ষা সংঘ অধিবেশনে যোগ দিয়েছেন। এটি ছিল নিখিল ভারত প্রাথমিক শিক্ষক ফেডারেশনের ২৯তম দ্বিবার্ষিক সম্মেলন। এই উপলক্ষে আয়োজিত এক প্রদর্শনীটিও শ্রী মোদী ঘুরে দেখেন। এই সম্মেলনের মূল ভাবনা ছিল ‘শিক্ষকরা শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তনের মূল কান্ডারী’।

এই উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অমৃতকালে দেশ যখন বিকশিত ভারতের দিকে এগিয়ে চলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, সেই সময় আমাদের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গুজরাটের প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষিকারা রাজ্যের স্কুলছুট ছাত্রাছাত্রীদের সংখ্যা ৪০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশে নামিয়ে এনেছেন। গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেল তাঁকে এই তথ্য জানিয়েছেন। শ্রী মোদী বলেন, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের  সঙ্গে মতবিনিময়ের ফলে তাঁর অভিজ্ঞতা জাতীয় স্তরে একটি নীতি প্রণয়নে সাহায্য করেছে। এ প্রসঙ্গে তিনি জানান, বিদ্যালয়গুলিতে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ছাত্রীদের জন্য শৌচাগার নির্মাণে যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, তা আসলে এই অভিজ্ঞতারই ফসল। আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলে বিজ্ঞান শিক্ষা শুরু করার বিষয়টির উপর তিনি গুরুত্ব দেন।

শ্রী মোদী বলেন, বিশ্বের অনেক নেতাই শ্রদ্ধার সঙ্গে তাঁদের ভারতীয় শিক্ষকদের কথা স্মরণ করেন। যখন তিনি বিদেশি প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, তখনই এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। ভুটান ও সৌদি আরবের রাজা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহানির্দেশক তাঁদের ভারতীয় শিক্ষকদের কতটা সম্মান করেন, সেই বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী তাঁর আলোচনায় তুলে ধরেন।

নিজেকে একজন শাশ্বত ছাত্র হিসাবে বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমাজে যা যা ঘটে চলেছে, সেগুলি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখার মধ্য দিয়ে তিনি আজও শিখে চলেছেন। একবিংশ শতাব্দীর এই পরিবর্তনের সময় ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থা পরিবর্তিত হচ্ছে। আগে সম্পদ এবং পরিকাঠামোর কারণে শিক্ষা ব্যবস্থায় নানা সমস্যা দেখা দিত। ফলে, ছাত্রছাত্রীরা উদ্ভুত সমস্যাগুলির সমাধান করতে পারতো না। আজ পরিকাঠামো ও সম্পদ সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের কৌতুহলও নানা বিষয় নিয়ে তাদের মনের মধ্যে প্রশ্ন তৈরি করছে। আজকের প্রত্যয়ী এবং অকুতোভয় ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বিভিন্ন বিষয়ে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে, যার মধ্য দিয়ে প্রচলিত পদ্ধতিতে শিক্ষাদান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের এখন সর্বশেষ তথ্য সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকতে হবে। কারণ, ছাত্রছাত্রীরা নানা জায়গা থেকে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করতে পারছে। “আমাদের শিক্ষক-শিক্ষিকারা কিভাবে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে পারছেন, তার উপরই শিক্ষা ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে”। কৌতুহলী ছাত্রছাত্রীরা যে সমস্যাগুলি তুলে ধরছে, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সেগুলি পর্যালোচনা করা উচিৎ, যার মাধ্যমে নতুন কিছু শেখা, ভুলে যাওয়া এবং আবারও শেখার এক সুযোগ তারা নিয়ে আসছে।

প্রধানমন্ত্রী শিক্ষক-শিক্ষিকাদের শিক্ষাদাতা ছাড়াও ছাত্রছাত্রীদের পরামর্শ হয়ে ওঠারও পরামর্শ দেন। কোনও বিষয় সম্পর্কে গভীরভাবে জানার ক্ষেত্রে প্রযুক্তি সম্পূর্ণভাবে শিক্ষাদান করতে পারে না। যখন প্রচুর তথ্যের সমাগম হয়, সেই সময় ছাত্রছাত্রীদের কাছে মূল বিষয় কী, সেটি বোঝা সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যুক্তি দিয়ে কোনও বিষয়কে অনুধাবন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একবিংশ শতাব্দীতে ছাত্রছাত্রীদের জীবনে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ভূমিকা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। অভিভাবকরাও চান যে, শ্রেষ্ঠ শিক্ষক তাঁদের সন্তানকে শিক্ষাদান করুন এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উপরই তাঁরা সম্পূর্ণ নির্ভরশীল।

শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আচার-আচরণ এবং ভাবনাচিন্তা ছাত্রছাত্রীদের যথেষ্ট প্রভাবিত করে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কোনও বিষয়ে শিক্ষালাভের সময় ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সেই বিষয় সম্পর্কে তখনই সম্যক ধারণা গড়ে উঠবে, যখন তাঁরা ধৈর্য্যশীলভাবে, সাহসিকতার সঙ্গে, নিরপেক্ষ হয়ে তাঁদের মতামত প্রকাশ করবে। প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি শিশু তার পরিবারের সদস্য ছাড়া সবচেয়ে বেশি তাঁদের সঙ্গেই সময় কাটান। “একজন শিক্ষকের নিজের পেশাগত দায়বদ্ধতার উপলব্ধির মধ্য দিয়ে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আরও শক্তিশালী করে তোলা যায়”।

নতুন শিক্ষা নীতির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই নীতি প্রণয়নের জন্য লক্ষ লক্ষ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। “আজ ভারত একবিংশ শতাব্দীর চাহিদার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে নতুন ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলছে এবং এই বিষয়টি মাথায় রেখেই নতুন জাতীয় শিক্ষা নীতি তৈরি করা হয়েছে”। নতুন জাতীয় শিক্ষা নীতি পুরনো অপ্রাসঙ্গিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে অপসারিত করেছে। পুরনো ব্যবস্থায় ছাত্রছাত্রীরা শুধুমাত্র পুঁথিগত বিদ্যালাভ করতো। নতুন শিক্ষা ব্যবস্থায় হাতে-কলমে বোঝার উপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এই প্রসঙ্গে শ্রী মোদী তাঁর শৈশবের শিক্ষালাভের অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করে বলেন, শিক্ষক-শিক্ষিকারা আন্তরিকভাবে শিক্ষাদানের কারণেই তার ইতিবাচক সুফল তিনি উপলব্ধি করেছেন।

জাতীয় শিক্ষা নীতিতে মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদানের উপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ২০০ বছরের বেশি বৃটিশ শাসনে থাকা ভারতবর্ষে ইংরেজি ভাষা মুষ্ঠিমেয় নাগরিকদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষিকারা আঞ্চলিক ভাষায় শিক্ষালাভ করতেন। অথচ, তাঁদের ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষাদানের কথা বলা হ’ত। এর ফলে, তাঁরা সমস্যার সম্মুখীন হতেন। বর্তমানে আঞ্চলিক ভাষায় শিক্ষাদানের উপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ফলে, যাঁরা আঞ্চলিক ভাষায় পড়াশুনা করেছেন, তাঁদের পক্ষে শিক্ষক হিসাবে চাকরি পেতে সুবিধা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এমন এক পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে, যেখানে শিক্ষকতা একটি আকর্ষণীয় পেশা হয়ে উঠবে। সকলে শিক্ষক হতে চাইবেন। মনের টানে সকল শিক্ষক তাঁর পেশাকে ভালোবাসবেন।

মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর শ্রী মোদী তাঁর দুটি ব্যক্তিগত ইচ্ছা পূরণের কথা স্মরণ করেন। তিনি তাঁর বিদ্যালয়ের বন্ধুদের মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। সেখানে তাঁর শিক্ষক-শিক্ষিকাদের তিনি সম্মাননা প্রদান করেন। আজও প্রধানমন্ত্রী তাঁদের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন। বর্তমানে শিক্ষকদের সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের মনের টান ক্রমশ কমে যাচ্ছে বলে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন। ছাত্রছাত্রীরা স্কুল শিক্ষা সম্পূর্ণ করার পর বিদ্যালয়ের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক একেবারে ছিন্ন হয়ে যায়। আজ পড়ুয়ারা তো বটেই, প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপকরাও সংস্থার প্রতিষ্ঠা দিবস কবে, তা ভুলে যান। তাই, বিদ্যালয় ও ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে দূরত্ব ঘোচাতে বিদ্যালয়ের জন্মদিন পালন করা উচিৎ।

স্কুলে খাদ্য সরবরাহের গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন, এই উদ্যোগে সমগ্র সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, যাতে কোনও ছাত্রছাত্রী অভুক্ত না থাকে। মিড-ডে-মিল দেওয়ার সময় গ্রামের বয়স্ক মানুষদের আমন্ত্রণ জানানোর পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। এর মধ্য দিয়ে কিভাবে খাবার পরিবেশন করা হয়, সেই বিষয়ে ছাত্রছাত্রীরা ধারণা পাবে।

ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তোলার প্রসঙ্গটি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকার একজন শিক্ষিকার কথা উল্লেখ করেন। ঐ শিক্ষিকা তাঁর পুরনো শাড়ি দিয়ে রুমাল তৈরি করতেন, সেই রুমাল ছাত্রছাত্রীরা ব্যবহার করতো।

পরিশেষে শ্রী মোদী বলেন, শিক্ষকরা সামান্য পরিবর্তন ঘটালে তা সুকুমারমতী ছাত্রছাত্রীদের জীবনে আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসবে। দেশের ঐতিহ্যকে বজায় রেখে শিক্ষক-শিক্ষিকারা শিক্ষাদান করবেন, যার মধ্য দিয়ে বিকশিত ভারতের স্বপ্ন পূরণ হবে এবং সমাজে শিক্ষককে সর্বোচ্চ সম্মান দেওয়ার ভারতীয় রীতি বজায় থাকবে।

অনুষ্ঠানে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেল, সাংসদ শ্রী সি আর পাটিল, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শ্রী পুরুষোত্তম রূপালা, প্রতিমন্ত্রী ডঃ মুঞ্জপারা মহেন্দ্রভাই, নিখিল ভারত প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের সভাপতি শ্রী রামপাল সিং সহ গুজরাট সরকারের মন্ত্রীরা উপস্থিত ছিলেন।

 
PG/CB/SB