Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

প্রধানমন্ত্রী গুজরাটের একতা নগরে আইনমন্ত্রী এবং আইন সচিবদের সর্বভারতীয় সম্মেলনে উদ্বোধনী অধিবেশনে ভিডিওর মাধ্যমে ভাষণ দিয়েছেন

প্রধানমন্ত্রী গুজরাটের একতা নগরে আইনমন্ত্রী এবং আইন সচিবদের সর্বভারতীয় সম্মেলনে উদ্বোধনী অধিবেশনে ভিডিওর মাধ্যমে ভাষণ দিয়েছেন


নয়াদিল্লি, ১৫  অক্টোবর, ২০২২

 

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী গুজরাটের একতা নগরে আইনমন্ত্রী এবং আইন সচিবদের সর্বভারতীয় সম্মেলনে উদ্বোধনী অধিবেশনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভাষণ দিয়েছেন। 

প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বলেন, স্ট্যাচু অফ ইউনিটির সান্নিধ্যে দেশের সব রাজ্যের আইনমন্ত্রী ও আইন সচিবদের এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সর্দার প্যাটেলের অনুপ্রেরণায় আমরা স্বাধীনতার অমৃৎ মহোৎসবের এই সময়কালে আমাদের লক্ষ্য অর্জনে সঠিক দিকে এগিয়ে যাবো। 

ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে একটি সুস্থ ও আত্মপ্রত্যয়ী সমাজের জন্য দ্রুত এবং নির্ভরযোগ্য বিচার ব্যবস্থার প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সময়ের চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রত্যেক সমাজের বিভিন্ন রীতি-নীতি এবং বিচার ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। “যখন ন্যায় বিচার পাওয়া যায়, তখন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলির প্রতি দেশবাসীর আস্থা বৃদ্ধি হয়”। তিনি আরো বলেন, দেশের আইন-শৃঙ্খলার উন্নতির জন্য এই ধরনের সম্মেলন আয়োজন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।   

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, হাজার হাজার বছর ধরে ভারতীয় সমাজের উন্নয়ন যাত্রা অব্যাহত। বিভিন্ন সময়ে প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও আমরা এগিয়ে চলেছি। “উন্নয়ন যাত্রা অব্যাহত রেখে সমাজের অভ্যন্তরে বিভিন্ন ব্যবস্থার মানোন্নয়ন ঘটানোই ভারতীয় সমাজের সব থেকে বড় দিক।” তিনি বলেন, প্রত্যেক ব্যবস্থাপনা যাতে সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয় সেই বিষয়টি নিশ্চিত করা উচিত। “অপ্রাসঙ্গিত আইন এবং যেসব রীতি-নীতিগুলি সঠিক নয় সেগুলি আমাদের সমাজ বাতিল করে। যখন কোনো রীতি-নীতি কঠোর হয় তখন তা সমাজের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায়।” প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, “দেশের মানুষের যেমন  সরকারের অভাব বোধ হওয়া উচিত নয় একইভাবে সরকারি পদক্ষেপের কারনে তারা পীড়িত হচ্ছেন এই অনুভূতিও সঠিক নয়”।

দেশের নাগরিকদের ওপর সরকারের বিভিন্ন নিয়ম-কানুনের বোঝা কমানোর প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ৮ বছরে ভারতে দেড় হাজারের বেশি পুরনো এবং অপ্রাসঙ্গিক আইন বাতিল হয়েছে এবং ৩২ হাজার নিয়ম-কানুন প্রত্যাহার করা হয়েছে। “এর মধ্যে অনেক আইনই পরাধীনতার সময়কাল থেকে চলে আসছিল।” শ্রী মোদী বলেন, বেশ কিছু রাজ্যে পরাধীন থাকার সময়ের কিছু আইন এখনও বলবৎ রয়েছে। তিনি সম্মেলনে উপস্থিত সকলের উদ্দেশে সেই আইনগুলি প্রত্যাহার কিভাবে করা যায় তা নিয়ে ভাবনা-চিন্তার আহ্বান জানান। “স্বাধীনতার অমৃতকালে পরাধীনতার সময়ে থাকা আইনের পরিবর্তে নতুন আইন প্রণয়ন করা জরুরি। তিনি বর্তমান আইনগুলির পর্যালোচনা করে সহজ জীবনযাত্রা এবং সহজ ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান।”   

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ন্যায়-বিচার প্রাপ্তি বিলম্বিত হওয়া সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ। এই সমস্যার কিভাবে সমাধান করা যায় তা নিয়ে বিচার-ব্যবস্থাকে আলোচনা করতে হবে। এই প্রসঙ্গে তিনি গ্রামাঞ্চলে বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের কথা উল্লেখ করেন। “রাজ্যগুলির স্থানীয় পর্যায়ে আইনী কাঠামোর মধ্যে বিবাদ নিষ্পত্তির বিকল্প ব্যবস্থাপনা কিভাবে গড়ে তোলা যায় আমাদের তা বুঝতে হবে”।

গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় শ্রী মোদী তাঁর গৃহীত একটি পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন। তিনি জানান, সেই সময় সান্ধ্য আদালত শুরু হয়েছিল। এইসব আদালতে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির নিষ্পত্তি হত। ফলস্বরূপ সাম্প্রতিক বছরগুলিতে গুজরাটে ৯ লক্ষের বেশি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। এই প্রসঙ্গে তিনি লোক আদালতের কথাও উল্লেখ করেন। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে বিভিন্ন রাজ্যে লক্ষ লক্ষ মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে এবং আদালতগুলির ওপর মামলার বোঝা কমেছে। “এই ব্যবস্থা থেকে গ্রামের জনসাধারণ যথেষ্ট উপকৃত হয়েছেন।”

সংসদে আইন প্রণয়নের সময় মন্ত্রীদের দায়িত্বের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো আইনের মধ্যে যদি বিভ্রান্তি থাকে তাহলে সেই আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয় কারন, সাধারণ মানুষ তার সুফল পান না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ন্যায়-বিচার পেতে সাধারণ নাগরিকদের প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হয়। এক দরজা থেকে আর এক দরজায় যেতে হয়। “যখন সাধারণ মানুষ আইন সম্পর্কে বুঝতে পারেন তখন তার সুদূরপ্রসারী ফল  পারা যায়।”

অন্যান্য দেশের উদাহরণ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংসদে বা বিধানসভায় কোনো আইন যখন তৈরি করা হয় তখন সেই আইনের বিষয়ে বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়। এই আইনের খসড়া তৈরির সময় তা যাতে সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে সেই দিকটি বিবেচনা করে সহজ-সরল ভাষায় তা লিখতে হবে। আইন প্রয়োগের সময় নতুন পরিস্থিতিতে সেই আইন কতটা কার্যকর হচ্ছে সেই দিকটিও পর্যালোচনা করতে হবে। “সহজে বিচার পাওয়ার জন্য আইনী ব্যবস্থায় স্থানীয় ভাষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। যুব সম্প্রদায়ের জন্য মাতৃভাষায় শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করতে হবে। আইনের পাঠক্রমগুলি যাতে মাতৃভাষায় পড়া যায় সে বিষয়ে উদ্যোগী হতে হবে। আমাদের আইন তৈরির সময় সেটি যাতে সহজ ভাষায় লেখা হয় এবং সুপ্রিম কোর্ট ও হাই কোর্টগুলির গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায় যাতে ডিজিটাল লাইব্রেরীতে স্থানীয় ভাষায় লিখিত আকারে স্থান পায় প্রধানমন্ত্রী সেই বিষয়টি উল্লেখ করেন।”

শ্রী মোদী আরো বলেন, “সমাজের বিকাশের সঙ্গে যখন আইনী ব্যবস্থাও বেড়ে ওঠে তখন স্বাভাবিকভাবেই আধুনিক দিকগুলিকে সেখানে যুক্ত করা হয়। ফল হিসেবে সমাজে যে পরিবর্তন হয় তা আইনী ব্যবস্থাও উপলব্ধি করা যায়।” বিচার ব্যবস্থায় প্রযুক্তির ব্যবহার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে ই-কোর্ট, ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে শুনানী এবং বৈদ্যুতিন প্রক্রিয়ায় মামলা দাখিল করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। দেশে এখন ফাইভ-জি প্রযুক্তি এসেছে। ফলে এই ব্যবস্থার আরো উন্নতি হবে। “প্রত্যেক রাজ্যের বিচার ব্যবস্থায় আধুনিকীকরণের প্রয়োজন। আইনের পাঠক্রমেও প্রযুক্তির প্রয়োগ সম্পর্কে ধারনা দিতে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।” 

হাই কোর্টগুলির প্রধান বিচারপতিদের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাতের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই সময় বিচারাধীন বন্দীদের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই ধরণের মামলার যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয় তিনি  তার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলেন। রাজ্য সরকারগুলিকে বিচারাধীন বন্দীদের বিষয়ে মানবিক দৃষ্টিকোন নিয়ে কাজ করতে হবে যাতে আইনী প্রক্রিয়া মানবিক আদর্শের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। “একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র এবং সমাজের সম্প্রীতির জন্য সংবেদনশীল বিচার-ব্যবস্থা জরুরি”। 

সংবিধানের আধিপত্যের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিচার বিভাগ, আইনসভা এবং নির্বাহী বিভাগকে নিয়ে আমাদের সংবিধান তৈরি হয়েছে। “সরকার, সংসদ, আমাদের আদালত ౼ এই তিনটিই এক অর্থে একই মায়ের সন্তান। আমরা যদি সংবিধানের ভাবনার কথা বিচার করি তাহলে দেখবো বিচার ব্যবস্থা, আইনসভা এবং আদালতের মধ্যে কাজের ধারার পার্থক্য থাকলেও সংঘাত বা প্রতিযোগিতার কোনো স্থান নেই। একই মায়ের সন্তান হিসেবে এই তিনটি শাখায় ভারত মাতার জন্য কাজ করে। একবিংশ শতাব্দীতে দেশকে এরাই একযোগে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেবে।”  

অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় আইন ও বিচার মন্ত্রী শ্রী কিরেন রিজিজু, আইন ও বিচার প্রতিমন্ত্রী শ্রী এস পি সিং বাঘেল সহ বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত ছিলেন।  

প্রেক্ষাপট

গুজরাটের একতা নগরে আইন ও বিচার মন্ত্রক দু’দিনের সম্মেলন আয়োজন করেছে। ভারতীয় আইন ও বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে সংপৃক্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নীতি-নির্ধারকদের মধ্যে সম্মেলনে আলোচনা হবে। এখানে রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলি তাদের গৃহীত বিভিন্ন প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করবে এবং পারস্পরিক সহযোগিতা কিভাবে আরো বাড়ানো যায় তা নিয়ে আলোচনা করবে। 

সম্মেলনে বিভিন্ন বিবাদ নিষ্পত্তির বিকল্প ব্যবস্থা, ব্যয় সাশ্রয়ী পন্থায় বিচার প্রার্থীদের ন্যয়-বিচার সুনিশ্চিত করা, পুরনো আইন বাতিল, মামলার বোঝা কমানো, দ্রুত মামলার নিষ্পত্তি এবং রাজ্যগুলির গৃহীত বিলে সমতা বজায় রাখা নিয়ে আলোচনা হবে। এ ছাড়াও কেন্দ্র-রাজ্য সহযোগিতা এবং রাজ্যস্তরে আইনী পরিকাঠামোকে শক্তিশালী করার বিষয় নিয়েও মত-বিনিময় হবে।

PG/CB/ NS