নয়াদিল্লি, ৩১ অক্টোবর, ২০২২
প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ গুজরাটের বনসকান্থার থারাডে ৮ হাজার কোটি টাকারও বেশি একগুচ্ছ প্রকল্পের শিলান্যাস করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গতকাল মোরবিতে যে দুর্ঘটনা ঘটে তাতে বহু প্রাণহানি হয়েছে। দেশ শোকস্তব্ধ। শোকের এই আবহে স্বজনহারা পরিবারগুলির সঙ্গে আমরা সকলেই রয়েছি। শ্রী মোদী জানান, মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর দলের সদস্যরা জোরকদমে উদ্ধার কাজ চালাচ্ছেন। “ভূপেন্দ্রভাই গতরাতেই কেভাডিয়া থেকে সরাসরি মোরবিতে পৌঁছান এবং উদ্ধার কাজের তদারকি শুরু করেন। যেসব আধিকারিকরা উদ্ধার কাজের সঙ্গে যুক্ত — তাঁদের ও ভূপেন্দ্রভাইয়ের সঙ্গে আমি প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রেখে চলেছি। এনডিআরএফ এবং সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে গেছেন। উদ্ধার কাজে কোনও ত্রুটি থাকবে না, আমি অম্বাজীর এই পুণ্যভূমি থেকে গুজরাটবাসীকে সেই আশ্বাস দিচ্ছি”।
প্রধানমন্ত্রী জানান, আজকের এই অনুষ্ঠানটির বিষয়ে তিনি খুবই দোলাচলের মধ্যে ছিলেন। কিন্তু, বনসকান্থার জল প্রকল্পের তাৎপর্যের বিষয়ে জানতে পেরে, বিশেষত স্থানীয় মানুষের ভালোবাসার টানে এই কর্মসূচিতে যোগ দিতে তিনি এসেছেন। এই প্রকল্পগুলি বনসকান্থা, পাটন এবং মেহসানা সহ ৬টিরও বেশি জেলায় সেচ ব্যবস্থাকে উন্নত করবে। অতীতের সঙ্কটময় পরিস্থিতির কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গুজরাটের মানুষ অকুতোভয়। সম্পদ যাই থাকুক না কেন, যে কোনও প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও তা মোকাবিলা করার শক্তি তাঁদের রয়েছে। “বনসকান্থা এর আদর্শ উদাহরণ। এই জেলায় বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কথা প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন”।
তিনি বলেন, একটা সময়ে উত্তর গুজরাটের বিভিন্ন জেলায় হাজার হাজার মানুষ ফ্লোরাইড দূষিত জলের সমস্যায় নাজেহাল ছিলেন। এই অঞ্চলের কৃষি কাজেও এর উপর বিরূপ প্রভাব পড়েছিল। কেউ যদি তাঁর জমি বিক্রি করতে চাইতেন, তা হলে অন্য কেউ সেই জমি কিনতে আগ্রহ দেখাতেন না। শ্রী মোদী বলেন, “এই অঞ্চলের সেবকের দায়িত্ব পাওয়ার পর আমাদের সরকারই প্রথমে সমস্যাগুলিকে চিহ্নিত করে, এরপর সেগুলি সমাধানের জন্য একনিষ্ঠভাবে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়। জলসংরক্ষণের জন্য আমরা চেক ড্যাম ও পুকুর খনন শুরু করি”। এ প্রসঙ্গে তিনি ‘সুজলাং সুফলাম যোজনা’, ‘ওয়াসমো যোজনা’ এবং ‘জল সমিতি’র উদাহরণ তুলে ধরেন। আজ ড্রিপ ইরিগেশন এবং প্রতি ফোটা জলে অধিক ফলন – এর মতো কর্মসূচির মাধ্যমে কচ্ছ সহ সমগ্র উত্তর গুজরাটে পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে। এই কাজে মহিলাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই অঞ্চলে কৃষি, উদ্যান পালন এবং পর্যটনের মতো ক্ষেত্র বিকশিত হচ্ছে। “একদিকে আমাদের বনস ডেয়ারী রয়েছে, অন্যদিকে ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সৌরশক্তি উৎপাদন কেন্দ্রও রয়েছে। এই অঞ্চলে প্রত্যেক বাড়িতে নলবাহিত জল সংযোগের লক্ষ্যমাত্রা আমরা পূরণ করেছি”। ড্রিপ ইরিগেশন এবং মাইক্রো ইরিগেশন – এর মাধ্যমে বনসকান্থায় যে সাফল্য অর্জিত হয়েছে, তা সারা দেশের কাছে আদর্শ-স্বরূপ। আন্তর্জাতিক স্তরেও এর স্বীকৃতি মিলেছে। “আজ বনসকান্থায় উন্নয়নের ইতিহাসের নতুন অধ্যায় রচিত হচ্ছে”। তিনি জানান, এই অঞ্চলের ৪ লক্ষ হেক্টর জমিতে ড্রিপ ও মাইক্রো ইরিগেশন ব্যবহার করায় সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের জলস্তর একই জায়গায় রয়েছে। “এর ফলে, শুধুমাত্র আপনারাই উপকৃত হচ্ছেন না, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থও সুরক্ষিত হবে। সুজলাং সুফলাম প্রকল্পের সাফল্যের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই অঞ্চলের মানুষ নিষ্ঠাভরে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন করেছেন। ফলে, যাঁরা এই প্রকল্প সম্পর্কে নানা সমালোচনা করতেন, তাঁদের মুখ বন্ধ হয়ে গেছে।
গত ১৯-২০ বছর ধরে এই প্রকল্পটির খতিয়ান তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দীর্ঘ সেচখালগুলির জলের যোগান দিতে নানা ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর ফলে, গ্রামগুলির পুকুরে জলের যোগান বেড়েছে এবং জলস্তরও বৃদ্ধি পেয়েছে। ১ হাজারেরও বেশি গ্রামের পুকুরে জলের যোগান বাড়াতে দুটি পাইপ লাইন বসানোর পরিকল্পনার কথা প্রধানমন্ত্রী উল্লখ করেন। তিনি বলেন, এই পাইপ লাইনগুলি মুক্তেশ্বর জলাধার এবং কর্মবৎ পুষ্করিণী পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হবে। উঁচু জায়গায় বৈদ্যুতিক পাম্পের সাহায্যে জল তোলার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। নর্মদার প্রধান খাল থেকে ছোট ছোট খাল কাটা হবে। থোরাড, ভাব এবং সুইগাঁও তালুকের বহু গ্রাম এর ফলে উপকৃত হবে। “কাসরা – দান্তিওয়াড়া পাইপ লাইনের মাধ্যমে পাটন ও বনসকান্থার ৬টি তালুকের বহু গ্রাম উপকৃত হবে। আগামী দিনে মুক্তেশ্বর জলাধার ও কর্মাবৎ পুষ্করিণীতে নর্মদার জল পৌঁছে যাবে। বনসকান্থার বাদগাম, পাটনের সিদ্ধাপুর এবং মেহসানার খেলারু তালুক এর সুফল পাবে”।
শ্রী মোদী বলেন, “কাউকে জলদান করা অত্যন্ত পুণ্যের কাজ। যিনি জল পেলেন তিনি অমৃতবাহক এবং সেই অমৃত তাঁকে অমর করে তোলে। সকলে সেই মানুষটিকে আশীর্বাদ করেন। আমাদের জীবনে জলের এতটাই মাহাত্ম্য”। এর ফলে, কৃষি কাজ ও পশুপালনে নতুন নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে। জমি থেকে বেশি ফসল পাওয়া গেলে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের প্রসার ঘটবে। এ প্রসঙ্গে তিনি মাস কয়েক আগে একটি আলু প্রক্রিয়াকরণ কারখানার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের কথা উল্লেখ করেন। “খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের সম্ভাবনা বাড়াতে কেন্দ্র নানা উদ্যোগ নিয়েছে। এই ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত উৎপাদক সংস্থার ইউনিয়ন এবং সখী মন্ডলগুলির সঙ্গে কৃষকরা যুক্ত হচ্ছেন”। হিমঘর বা খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের জন্য সরকার এই সংস্থাগুলিকে কোটি কোটি টাকা সহায়তা দিয়ে থাকে। আজ আমরা এমন এক লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলেছি, যেখানে কৃষকরা শুধুমাত্র ডালিম গাছের মালিক হয়েই থাকবেন না, তাঁরা ডালিমের রস উৎপাদক কারখানার অংশীদারও হবেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে সখী মন্ডলগুলি ফল ও সব্জি থেকে আচার, মোরব্বা এবং চাটনি তৈরি করছে। তাঁদের কাজের প্রশংসা করে তিনি বলেন, সখী মন্ডলের সদস্যরা যাতে ব্যাঙ্ক থেকে আরও বেশি ঋণ পেতে পারেন, তার জন্য সরকার তাঁদের জন্য ধার্য ঋণের পরিমাণ দ্বিগুণ করেছে। “আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলে বন ধন কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এর ফলে, বনজসম্পদ থেকে সখী মন্ডলের আদিবাসী মহিলারা উন্নতমানের পণ্য উৎপাদন করছেন”।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ কৃষকরা পিএম কিষাণ সম্মান নিধি থেকে যে উপকৃত হচ্ছেন, তা প্রমাণিত। দেশ জুড়ে সারের জন্য অভিন্ন ‘ভারত ব্র্যান্ড’ – এর সূচনা করা হয়েছে। এর ফলে, কৃষকদের মধ্যে বিভ্রান্তি দূর হবে। সরকার কৃষকদের কাছে ২৬০ টাকার বিনিময়ে এক ব্যাগ ইউরিয়া পৌঁছে দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে এর দাম ২ হাজার টাকারও বেশি। আজ উত্তর প্রদেশ, হরিয়ানা, রাজস্থান, ওডিশা, অন্ধ্রপ্রদেশ ও ঝাড়খন্ডেও বনস ডেয়ারি পৌঁছে যাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেন। গোবর্ধন ও জৈব জ্বালানীর মতো প্রকল্পগুলি গৃহপালিত পশুর গুরুত্ব বাড়াচ্ছে। “সরকার দুগ্ধ শিল্পকে শক্তিশালী করতে প্রতিনিয়ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছে”।
শ্রী মোদী বলেন, দেশের নিরাপত্তার জন্য বনসকান্থার মতো অঞ্চলের গুরুত্ব বাড়ছে। দিশায় সেনাবাহিনীর জন্য বিমানবন্দর এবং নাদাবেতে ‘সীমা-দর্শন’ সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ঘটাচ্ছে। সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে এনসিসি-র প্রসার ঘটানো হচ্ছে। ভাইব্রেন্ট বর্ডার ভিলেজ প্রোগ্রাম কর্মসূচির আওতায় সীমান্ত অঞ্চলের গ্রামগুলিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বনস ডেয়ারি কর্তৃপক্ষ সহ সকলকে স্মৃতিবন ঘুরে আসার জন্য পর্যটকদের উৎসাহিত করার পরামর্শ দেন। কচ্ছের ভূমিকম্পে যাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদের স্মৃতি রক্ষার্থে স্মৃতিবন গড়ে তোলা হয়েছে। “এ ধরনের প্রতিটি কাজ শুধু দেশের নয়, গুজরাটের অহং বৃদ্ধি করছে। ডবল ইঞ্জিন সরকারের এটাই অঙ্গীকার। সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিসওয়াস ও সবকা প্রয়াস – এর মধ্যে আমাদের শক্তি নিহিত”।
অনুষ্ঠানে সাংসদ শ্রী প্রভাতভাই প্যাটেল, শ্রী ভরত সিং ধাবি এবং শ্রী দীনেশভাই আনাভাইদিয়া, রাজ্যের মন্ত্রী শ্রী রুশিকেশ প্যাটেল, শ্রী জিতুভাই চৌধরী, শ্রী কিরিটসিং বাঘেলা এবং শ্রী গজেন্দ্রসিং পারমার সহ বিশিষ্ট জনেরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রেক্ষাপট:
প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী বনসকান্থার থারাড সফরে ৮ হাজার কোটি টাকারও বেশি বিভিন্ন প্রকল্পের শিলান্যাস করেছেন। যেসব প্রকল্পগুলির শিলান্যাস করা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে – নর্মদার প্রধান খাল থেকে ১ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে কাসরা থেকে দান্তিওয়াড়া পর্যন্ত পাইপলাইন বসানো। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে জল সরবরাহ বাড়বে ও কৃষকরাও উপকৃত হবেন। প্রধানমন্ত্রী সুজালাং সুফলাম খাল সংস্কারের মাধ্যমে ক্ষমতা বৃদ্ধি, মোধেরা – মোতি দাউ পাইপ লাইনের মুক্তেশ্বর জলাধার – কর্মাবৎ পুষ্করিণী পর্যন্ত সম্প্রসারণ এবং সন্তালপুর তালুকের ১১টি গ্রামে লিফট ইরিগেশন জলসেচ প্রকল্প সহ একাধিক প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেন।
PG/CB/SB