Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

প্রধানমন্ত্রী গুজরাটের গুরুদোয়ারা লখপত সাহিবে গুরু নানক দেবজির গুরুপুরব অনুষ্ঠানে বক্তব্য রেখেছেন

প্রধানমন্ত্রী গুজরাটের গুরুদোয়ারা লখপত সাহিবে গুরু নানক দেবজির গুরুপুরব অনুষ্ঠানে বক্তব্য রেখেছেন


নতুন দিল্লি, ২৫ই ডিসেম্বর, ২০২১

 

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ গুজরাটের গুরুদোয়ারা লখপত সাহিবে গুরু নানক দেবজির গুরুপূরব উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রেখেছেন।   

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গুরুদোয়ারা লখপত সাহিব বিভিন্ন সময়ের সাক্ষী থেকেছে। অতীতে লখপত সাহিব একটি গুরুত্বপূর্ণ  স্থান ছিল। এখান থেকে বিভিন্ন দেশে ব্যবসা বাণিজ্য করা হত। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০১ সালের ভূমিকম্পের পর গুরুর কৃপায় এই পবিত্র স্থানের সেবা করার সৌভাগ্য তার হয়েছিল। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিল্পীরা এই স্থানে এসে এখানকার হৃত গৌরব উদ্ধারের জন্য কাজ  করেছেন। পুরোনো লেখন শৈলিতে গুরুদোয়ারার দেওয়ালে গুরুবাণী খোদাই করা হয়েছে। সেই সময়ে এই প্রকল্পটি ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পেয়েছিল।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মহান গুরু সাহিবের কৃপায় সরকার, গুরু গোবিন্দ সিংজির ৩৫০তম বর্ষ, গুরু নানক দেবজির প্রকাশ পর্বের ৫৫০তম বর্ষের প্রকাশ উৎসবে মতো পবিত্র অনুষ্ঠানগুলি উদযাপন করার সৌভাগ্য অর্জন করেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে গুরু নানক দেবজির বার্তা সারা বিশ্বে নতুন উদ্য়মে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। দীর্ঘ দিনের প্রতীক্ষার পর সরকার, ২০১৯ সালে কর্তারপুর সাহিব করিডরের কাজ শেষ করে। বর্তমানে গুরু তেগবাগাদুর জির ৪০০তম বর্ষের প্রকাশ উৎসব উদযাপিত হচ্ছে।    

শ্রী মোদী বলেন, সম্প্রতি আমরা আফগানিস্তান থেকে সসম্মানে গুরু গ্রন্থ সাহেবের ‘স্বরূপ’–কে ভারতে আনতে সফল হয়েছি। গুরুর কৃপা ছাড়া এই মহৎ কাজ কিভাবে সম্ভব হতে পারে বলে প্রধানমন্ত্রী বিস্ময় প্রকাশ করেন। তিনি জানান, মাস কয়েক আগে যখন তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর করছিলেন, সেই সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে দেড়শোটির বেশি ঐতিহাসিক সামগ্রী ফিরিয়ে দিয়েছে। এর মধ্যে একটি পেশকবজ বা ছোট্ট তলোয়ার ছিল। যেখানে পার্সি ভাষায় গুরু হরগোবিন্দজির নাম লেখা আছে। ‘এগুলি ফেরৎ আনার সৌভাগ্যও আমাদের সরকারের হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালসা পন্থের স্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের গৌরব গুজরাটের রয়েছে। পঞ্চপেয়ারীর মধ্যে চতুর্থ গুরশিখ ভাই মোকহম সিংজি গুজরাটের মানুষ ছিলেন। দেবভূমি দ্বারকার বিষয়টি মনে রেখে গুরুদোয়ারা বেট দ্বারকা ভাই মোকহম সিং নির্মাণ করেছিলেন।   

প্রধানমন্ত্রী ভারতীয় সমাজে পরাধীনতা এবং বিদেশী হানাদারদের আক্রমণের থেকে মানুষকে রক্ষা করার মত উদ্যোগে  মহান গুরুদের অবদানের কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, যখন সমাজ নানা ভাগে বিভক্ত ছিল, তখন গুরু নানক দেবজি  ভ্রাতৃত্বের বার্তা নিয়ে এসছিলেন। একইভাবে সারা দেশের সন্তদের কন্ঠ ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন গুরু অর্জুন দেবজি। গুরু হরকিষাণজির মানব জাতির প্রতি সেবার উদ্যোগ আজও শিখ এবং সমগ্র মানব জাতিকে পথ দেখায়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গুরু নানক দেবজি এবং তাঁর পরে আমাদের আলাদা আলাদা গুরুরা ভারতের চেতনাকে শুধু মাত্রই প্রজ্জ্বলিত করেন নি, তাঁরা দেশকে কিভাবে সুরক্ষিত রাখা যায়, সে পথও দেখিয়েছেন। আমাদের গুরুদের অবদান শুধুমাত্র সমাজ ও আধ্যাত্মিকতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং আমাদের দেশ, দেশের প্রতি ভাবনা, দেশের প্রতি আস্থা ও অখন্ডতা আজ যে সুরক্ষিত রয়েছে, তা আসলে শিখ গুরুদের মহান তপস্যার ফল। বাইরে থেকে বাবরের ভারতে আক্রমণের বিপদ গুরু নানক দেবজি স্পষ্টতই উপলদ্ধি করেছিলেন বলেন প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।  

প্রধানমন্ত্রী জানান, গুরু তেগ বাহাদুরজির পুরো জীবনই ‘রাষ্ট্রই প্রথম’  ভাবনার ফসল। গুরু তেগ বাহাদুরজি মানবজাতির কল্যাণের কথা সর্বদা বিবেচনা করতেন। তিনি ভারতের আত্মার বিষয়ে একটি ধারণা আমাদের দিয়ে গেছেন। যে ভাবে দেশ তাঁকে ‘হিন্দ কি চাদর’ উপাধিতে ভূষিত করেছে, তার মধ্য দিয়ে শিখ ঐতিহ্যের  সঙ্গে প্রত্যেক ভারতবাসীর একাত্মতা প্রমাণিত। আওরঙ্গজেবের বিরুদ্ধে গুরু তেগবাহাদুরের শৌর্য ও আত্মবলিদান আমাদের শিখিয়েছে কিভাবে সন্ত্রাস ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে দেশকে লড়াই করতে হয়। একইভাবে দশম গুরু গোবিন্দ সিং সাহেব ছিলেন প্রতিটি পদক্ষেপে দৃঢ়তা ও ত্যাগের জ্বলন্ত উদাহরণ।  

বৃটিশ রাজত্বে দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে আমাদের শিখ ভাই ও বোনেরা যে শৌর্য দেখিয়েছেন, জালিয়ানওয়ালা বাগের ভূমিতে তাদের আত্মবলিদান যার সাক্ষ্য বহন করে – প্রধানমন্ত্রী তার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, সেই ঐতিহ্য আজও বর্তমান। অমৃত মহোৎসবের সময়কালে আমরা যখন আমাদের অতীতের কথা স্মরণ করি এবং সেই সময়ের নানা ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত হই, তখন এগুলির গুরুত্ব আমরা উপলদ্ধি করতে পারি।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কাশ্মীর থেকে কন্য়াকুমারী, কচ্ছ থেকে কোহিমা – গোটা দেশ একসঙ্গে স্বপ্ন দেখে, এক সঙ্গে বিভিন্ন লক্ষ্য পূরণে কাজ করে চলেছে। শ্রী মোদী বলেন, আজ দেশের মন্ত্রই হল – এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত। আজ দেশের লক্ষ্য হল – একটি নতুন শক্তিশালী ভারতের পুনরুত্থান। আজ দেশের নীতি হল – প্রত্যেক দরিদ্র মানুষকে সেবা করা এবং বঞ্চিতদের অগ্রাধিকার দেওয়া।

প্রধানমন্ত্রী ভক্তদের অনুরোধ করেন, তাঁরা যখন অনুষ্ঠান থেকে ফিরে যাবেন, সেই  সময় যেন কচ্ছের রণের উৎসবটি দেখে যান। তিনি বলেন, কচ্ছের মানুষের কঠোর পরিশ্রমের সুফল আজ পাওয়া যাচ্ছে। শ্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর জন্মদিনে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শ্রী বাজপেয়ীর কচ্ছের প্রতি বিশেষ ভালোবাসা ছিল। শ্রী মোদী জানান, “ভূমিকম্পের ফলে এই অঞ্চলের উন্নয়নমূলক কাজে অটলজি এবং তাঁর সরকার কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছে।”  

প্রতি বছর ২৩ থেকে ২৫শে ডিসেম্বর পর্যন্ত গুজরাটের শিখ সঙ্গত, গুরুদোয়ারা লখপত সাহিবে গুরু নানক দেবজির গুরুপুরব উদযাপন করে। গুরু নানক দেবজি তাঁর ভ্রমণকালে লখপতে ছিলেন। গুরুদোয়ারা লখপত সাহেবে কাঠের পাদুকা এবং পালখি (দোলনা) –র পাশাপাশি গুরুমুখি পাণ্ডুলিপি এবং খোদাই করা হস্তলিপির ধ্বংসাবশেষ রয়েছে।

২০০১ সালের ভূমিকম্পে গুরুদোয়ারাটি যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্থ হয়। সেই ক্ষতির মেরামতি করতে তদানিন্তন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এর মধ্য দিয়ে শিখ ধর্মের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক শ্রদ্ধা প্রদর্শিত হয়, গুরু নানক দেবজির ৫৫০তম প্রকাশ পর্ব, গুরু গোবিন্দ সিং জির ৩৫০তম প্রকাশ পর্ব এবং গুরু তেগবাহাদুর জির ৪০০তম প্রকাশ পর্ব উপলক্ষ্যে আয়োজিত বিভিন্ন উদ্যোগের মধ্য দিয়ে যার প্রতিফলন ঘটে।  

CG/CB/SFS