Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

প্রধানমন্ত্রী গান্ধীনগরে আন্তর্জাতিক আয়ুষ বিনিয়োগ ও উদ্ভাবন সম্মেলনের উদ্বোধন করেছেন

প্রধানমন্ত্রী গান্ধীনগরে আন্তর্জাতিক আয়ুষ বিনিয়োগ ও উদ্ভাবন সম্মেলনের উদ্বোধন করেছেন


নয়াদিল্লি, ২০ এপ্রিল, ২০২২

 

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ গুজরাটের গান্ধীনগরে মহাত্মা মন্দিরে আন্তর্জাতিক আয়ুষ বিনিয়োগ ও উদ্ভাবন সম্মেলনের উদ্বোধন করেছেন। অনুষ্ঠানে মরিশাসের প্রধানমন্ত্রী শ্রী প্রবীন্দ কুমার জুগনাউথ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহানির্দেশক ডাঃ টেড্রোস ঘেব্রেইসুস উপস্থিত ছিলেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ডাঃ মনসুখ মান্ডভিয়া, শ্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল, শ্রী মঞ্জুপারা মহেন্দ্রভাই এবং গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী ভূপেন্দ্রভাই প্যাটেলও এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তিন দিনের সম্মেলনে ৫টি পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন, ৮টি গোলটেবিল বৈঠক, ৬টি কর্মশালা এবং ২টি সিম্পোজিয়াম অনুষ্ঠিত হবে। প্রায় ৯০ জন বিশিষ্ট বক্তা ও ১০০ জন প্রদর্শক এই অনুষ্ঠানগুলিতে উপস্থিত থাকবেন। সম্মেলনে আয়ুষ ক্ষেত্রে বিনিয়োগের সম্ভাবনার বিষয়গুলি আলোচিত হবে।  এছাড়াও, সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের উদ্ভাবন, গবেষণা, স্টার্টআপ ব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসা পরিষেবা ক্ষেত্রে সম্মেলনের আলোচনাগুলি সহায়ক হবে।  

মহাত্মা গান্ধীর দেশ ও রাজ্যে উপস্থিত হতে পেরে ডাঃ টেড্রোস ঘেব্রেইসুস সন্তোষ প্রকাশ করেন। এই অঞ্চলকে তিনি বিশ্বের গর্বের স্থান বলে উল্লেখ করেন। ডাঃ ঘেব্রেইসুস  বলেন, জামনগরে গতকাল  বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আন্তর্জাতিক ঐতিহ্যশালী ওষুধ কেন্দ্রের শিলান্যাস হয়। এর  মূল চালিকাশক্তি হ’ল – ভারতের ‘বসুধৈব কুটুম্বকম্’ দর্শন। এই কেন্দ্র গড়ে তোলার সিদ্ধান্তটি ঐতিহাসিক এবং এর মাধ্যমে চিকিৎসা ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন আসবে। আয়ুষ চিকিৎসা পদ্ধতির প্রামাণ্য তথ্য, স্থিতিশীলতা এবং ঐতিহ্যশালী ওষুধের সর্বোচ্চ ব্যবহারের মধ্য দিয়ে এই কেন্দ্র উদ্ভাবনের চালিকাশক্তি হয়ে উঠবে। জনস্বাস্থ্যে উদ্ভাবনের ক্ষমতাকে প্রয়োগ করার জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী ও ভারত সরকারের প্রশংসা করেন। ভারতের হাসপাতালগুলিতে তথ্যের ব্যবহার ও সুসংহত তথ্যের আদান-প্রদানের ব্যবস্থাপনার তিনি প্রশংসা করেন। ঐতিহ্যশালী বা চিরায়ত ওষুধের গবেষণার জন্য তথ্য সংগ্রাহক হিসাবে আয়ুষ মন্ত্রকের ভূমিকার কথাও তিনি উল্লেখ করেন। বিশ্ব জুড়ে আয়ুষ পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি এবং এই খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মহানির্দেশক বলেন, সারা বিশ্ব এখন ভারতের কাছে  আসছে এবং ভারতের নামও সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ছে। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বিশেষত, ঐতিহ্যশালী চিকিৎসা  ব্যবস্থাপনায় উদ্ভাবন পরিবেশ গড়ে তুলতে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের উপরও তিনি গুরুত্ব দেন।  বিনিয়োগকারী, শিল্প সংস্থা এবং সরকারকে স্থিতিশীল পরিবেশে ঐতিহ্যশালী ওষুধ উৎপাদনের পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি, মহানির্দেশক বলেন, যাঁরা এই ওষুধ উৎপাদন করবেন, তাঁদের স্বার্থ রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা যাতে উদ্ভাবনের সুফল পেতে পারেন, তার জন্য মেধাসত্ত্ব সকলের মধ্যে ভাগ করে নিতে হবে। মিঃ ঘেব্রেইসুস তাঁর ভাষণের শেষে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। “এই গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আমি বিশ্বাস করি, শুধুমাত্র এই কেন্দ্রটিই নয়, আপনার উদ্যোগও ঐতিহ্যশালী ওষুধ প্রয়োগের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনবে”। চিরায়ত ওষুধের প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতার জন্য মহানির্দেশক মরিশাসের প্রধানমন্ত্রীরও প্রশংসা করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভারতের স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবকালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৭৫ বছর পূর্তি এক আনন্দের সমাপতন।  

শ্রী জুগনাউথ ঐতিহ্যশালী ওষুধের ক্ষেত্রে গুজরাট সহ সারা ভারতের অবদানের প্রশংসা করেন। ভারতের সঙ্গে তাঁদের প্রাচীনকাল থেকে যোগাযোগের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মরিশাসের প্রধানমন্ত্রী তাঁর দেশেও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় গুরুত্ব দেওয়ার কথা জানান। মরিশাসে আয়ুর্বেদিক হাসপাতাল গড়ে তোলা হচ্ছে। প্রথম লকডাউনের সময় সাহায্য করতে ভারত মরিশাসে ঐতিহ্যশালী ওষুধ পাঠিয়েছিল। “বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারত মরিশাসের প্রতি যে একাত্মতা প্রদর্শন করে, এটি তার উদাহরণ। এর জন্য আমরা ভারত সরকার, বিশেষত প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীজীর কাছে কৃতজ্ঞ”।   

প্রধানমন্ত্রী এই অনুষ্ঠানে বলেন, মহামারীর সময়কালে যখন মানুষের মধ্যে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে আয়ুষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, সেই সময় আন্তর্জাতিক আয়ুষ বিনিয়োগ ও উদ্ভাবনের সম্মেলনের বিষয়টি নিয়ে তিনি ভাবনাচিন্তা শুরু করেন। তখন  আয়ুষ পণ্যের প্রতি মানুষের আগ্রহ ও চাহিদা দুই-ই যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছিল। মহামারী সময়কালে ভারতের উদ্যোগের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আধুনিক ওষুধ সংস্থাগুলিতে যথাযথ সময়ে বিনিয়োগ করলে তারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে দক্ষতার প্রমাণ দিতে পারবে,  টিকা তৈরির সময় যা আমরা দেখেছি। “কে ভেবেছিলেন যে, আমরা এত তাড়াতাড়ি করোনার টিকা তৈরি করতে পারবো?”

আয়ুষ ক্ষেত্রের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা ইতিমধ্যেই আয়ুষ চিকিৎসা ব্যবস্থার ওষুধ, পরিপূরক পণ্য সামগ্রী এবং প্রসাধনী দ্রব্য উৎপাদনে অভূতপূর্ব বৃদ্ধি দেখেছি। আয়ুষ ক্ষেত্রের ২০১৪ সালে বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৩০০ কোটি ডলারেরও কম, যা এখন বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১৮০০ কোটি ডলারেরও বেশি”। চিরায়ত ওষুধের ক্ষেত্রে নতুন শিল্পোদ্যোগের জন্য  প্রয়োজনীয় পরিবেশ গড়ে তুলতে  আয়ুষ মন্ত্রক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে বলেও তিনি জানান। কয়েকদিন আগে অল ইন্ডিয়া ইন্সটিটিউট অফ আয়ুর্বেদে একটি ইনক্যুবেশন সেন্টার গড়ে তোলা হয়েছে। বর্তমান যুগকে ইউনিকর্নের সময় বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জানান, ২০২২ সালে এর মধ্যেই ভারতের ১৪টি স্টার্টআপ সংস্থা ইউনিকর্ন ক্লাবে যোগদান করেছে। “আমি নিশ্চিত যে, আমাদের আয়ুষ স্টার্টআপসেও খুব শীঘ্রই ইউনিকর্নের বিকাশ হবে”। ঔষধি গাছের মাধ্যমে কৃষকের আয় বৃদ্ধি পাবে এবং নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে বলেও শ্রী মোদী উল্লেখ করেন। ঔষধি গাছের চাষের মাধ্যমে কৃষকরা ভেষজ পণ্যের বাজারের সঙ্গে সহজেই যুক্ত হতে পারবেন। আর তাই, সরকার এ ক্ষেত্রে আধুনিকীকরণের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। আয়ুষ ই-মার্কেট প্লেসের সম্প্রসারণ ঘটানো হচ্ছে। ভারত ঔষধি গাছের রত্ন ভান্ডার, যা আমাদের ‘হরিৎ স্বর্ণ।

প্রধানমন্ত্রী গত কয়েক বছর ধরে আয়ুষ পণ্যের রপ্তানির ক্ষেত্রে বিভিন্ন উদ্যোগের কথা জানান। আয়ুষ ওষুধগুলি যাতে অন্য দেশেও স্বীকৃতি পায়, তার উপরও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ৫০টিরও বেশি সমঝোতাপত্র স্বাক্ষরিত হয়েছে। “আমাদের আয়ুষ বিশেষজ্ঞরা ব্যুরো অফ ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ডের সহযোগিতায় আইএসও-র মান নির্ধারণ করেছেন। এর ফলে, ১৫০টিরও বেশি দেশে আয়ুষ পণ্য রপ্তানির জন্য বিরাট বাজার তৈরি হবে”।

শ্রী মোদী বলেন, গত সপ্তাহে এফএসএসএআই ‘আয়ুষ আধার’ নামে একটি নতুন বিভাগ শুরু করেছে। এর ফলে, এই বিভাগ ভেষজ পুষ্টির পরিপূরক উৎপাদকদের জন্য সহায়ক হবে। একইভাবে, ভারত বিশেষ আয়ুষ মার্কের ব্যবস্থা করছে। এই মার্ক ভারতে উৎপাদিত আয়ুষ পণ্যের সর্বোচ্চ গুণমানের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হবে – যা আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে নির্ধারিত হবে। “আয়ুষ পণ্যের গুণমান সম্পর্কে বিশেষ আয়ুষ মার্ক বিশ্বের সর্বত্র আস্থা যোগাবে”।

প্রধানমন্ত্রী জানান, আয়ুষ পণ্য প্রচার, গবেষণা ও উৎপাদনকে উৎসাহ দিতে দেশ জুড়ে সরকার আয়ুষ পার্কের নেটওয়ার্ক গড়ে তুলবে। এই আয়ুষ পার্কগুলি ভারতে আয়ুষ পণ্য উৎপাদনে নতুন দিশা দেখাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

ঐতিহ্যশালী ওষুধের সম্ভাবনার দিকটি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেরলে চিরায়ত ওষুধের জন্য পর্যটন শিল্পের প্রসার ঘটছে। “এই সম্ভাবনা ভারতের প্রতিটি কোণায় রয়েছে। ‘ভারতে এসে সুস্থ হন’ এই দশকের বড় ব্র্যান্ড হয়ে উঠতে পারে”। আয়ুর্বেদ, ইউনানি, সিদ্ধা সহ বিভিন্ন পদ্ধতির চিকিৎসা কেন্দ্রগুলি জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারে। এগুলির বিষয়ে প্রচার চালাতে সরকার বিদেশে আরো উদ্যোগ নেবে। যাঁরা আয়ুষ থেরাপির সুবিধা গ্রহণ করতে চান, তাঁদের কথা বিবেচনা করেই এই প্রচার চালানো হবে। “আয়ুষ থেরাপি নিতে যাঁরা ভারতে আসতে আগ্রহী, তাঁদের জন্য ভারত বিশেষ আয়ুষ ভিসা ক্যাটাগরির সূচনা করবে। এর ফলে, যাঁরা আয়ুষ থেরাপির জন্য ভারতে আসবেন, তাঁদের সুবিধা হবে”।   

প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে কেনিয়ার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রায়েলা ওডিঙ্গার কন্যা রোজমেরির চিকিৎসার তথ্য তুলে ধরেন। আয়ুষ চিকিৎসার পর, তিনি তাঁর চোখের দৃষ্টি ফিরে পেয়েছেন। দর্শকাসনে থাকা রোজমেরির সঙ্গে সকলের যখন পরিচয় শ্রী মোদী করিয়ে দেন, সেই সময় সভায় উপস্থিত শ্রোতা-দর্শকরা হর্ষধ্বনি দিয়ে ওঠেন। শ্রী মোদী বলেন, একবিংশ শতাব্দীর ভারত তার সমস্ত অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানকে সারা বিশ্বের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চায়। “সমগ্র মানবজাতির জন্য ভাবনাচিন্তা করাই আমাদের ঐতিহ্য”। তিনি বলেন, আয়ুর্বেদের সমৃদ্ধির মূল কারণ এর সহজলভ্যতা। তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রের সঙ্গে তুলনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সকলের মধ্যে অর্জিত বিদ্যাকে ভাগ করে নেওয়ার শক্তি আয়ুর্বেদ ঐতিহ্যে রয়েছে, যা আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের থেকে লাভ করেছি। তিনি আশা করেন, অমৃত কালের আগামী ২৫ বছর ঐতিহ্যশালী ওষুধের জন্য স্বর্ণ যুগ হিসাবে বিবেচিত হবে।

তাঁর বক্তব্যের শেষে প্রধানমন্ত্রী একটি একান্ত ব্যক্তিগত ভাবনা তুলে ধরেন। ডাঃ টেড্রোস ঘেব্রেইসুসের ভারত প্রেম, তাঁর ভারতীয় শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধা এবং গুজরাটের প্রতি ভালোবাসার কথা উল্লেখ করে শ্রী মোদী তাঁর একটি গুজরাটি নাম দেন – তুলসী ভাই। তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত শ্রোতা-দর্শকদের ভারতীয় সংস্কৃতিতে তুলসীর পবিত্রতা ও মহিমার কথা ব্যাখ্যা করেন। অনুষ্ঠানে মরিশাসের প্রধানমন্ত্রী ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহানির্দেশকের উপস্থিতির জন্য তিনি তাঁদের ধন্যবাদ জানান।

 

CG/CB/SB