Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

প্রধানমন্ত্রীর সৌদি আরব সফর শেষে যৌথ বিবৃতি

প্রধানমন্ত্রীর সৌদি আরব সফর শেষে যৌথ বিবৃতি


নয়াদিল্লি, ২৩ এপ্রিল, ২০২৫

 

“এক ঐতিহাসিক বন্ধুত্ব; অগ্রগতির লক্ষ্যে অংশীদারিত্ব” 

সৌদি আরবের যুবরাজ এবং প্রধানমন্ত্রী মান্যবর মহম্মদ বিন সলমন বিন আব্দুলাজিজ আল সৌদ-এর আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী ২২ এপ্রিল সৌদি আরবে রাষ্ট্রীয় সফরে যান। এটি ছিল প্রধানমন্ত্রী মোদীর তৃতীয় সৌদি আরব সফর। জেড্ডায় আল সালাম প্রসাদে প্রধানমন্ত্রীকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান যুবরাজ ও প্রধানমন্ত্রী মহম্মদ বিন সলমন। তাঁদের আলোচনায় উঠে আসে দুই দেশের ঐতিহাসিক বন্ধুত্বের কথা। প্রতিরক্ষা, সুরক্ষা, শক্তি, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, প্রযুক্তি, কৃষি, সংস্কৃতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও মানুষে-মানুষে বন্ধন নিয়ে দু’দেশের মধ্যে মজবুত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন দুই নেতা। 

শক্তি, প্রতিরক্ষা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, প্রযুক্তি, সংস্কৃতি এবং দু’দেশের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক বন্ধন নিয়ে দুই নেতার মধ্যে আলোচনা হয়। শক্তি, পেট্রোরসায়ন, পরিকাঠামো, প্রযুক্তি, ফিনটেক, ডিজিটাল পরিকাঠামো, টেলি-যোগাযোগ, ওষুধ, উৎপাদন এবং স্বাস্থ্য সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সৌদি আরব ভারতে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের কথা আগেই ঘোষণা করেছিল। 

ভারত-মধ্যপ্রাচ্য-পূর্ব ইউরোপ আর্থিক করিডর (আইএমইইসি)-এর কাজের অগ্রগতি নিয়ে দুই নেতা মত বিনিময় করেন। এছাড়া, পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে দুই নেতার মধ্যে আলোচনা হয়। দুই নেতাই দুটি মন্ত্রীস্তরীয় কমিটির কাজকর্ম নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। এই কমিটি দুটি হল – (১) রাজনৈতিক, সুরক্ষা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতা (২) আর্থিক ও বিলগ্নি সংক্রান্ত কমিটি।

সৌদি আরবে বসবাসরত প্রায় ২৭ লক্ষ ভারতীয়ের কল্যাণে সে দেশের সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের প্রশংসা করেন শ্রী মোদী। ২০৪৭ সালের মধ্যে উন্নত ভারত গড়ে তোলার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় সরকার যে অঙ্গীকার করেছে, তার প্রশংসা করেন সৌদি যুবরাজ। দুই দেশের মধ্যে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ বিনিয়োগকে আরও মজবুত করার ব্যাপারে সহমত হয়েছে দুই দেশ। সৌদি আরবে ভারতীয় সংস্থাগুলির লগ্নি বৃদ্ধি নিয়েও সন্তোষ প্রকাশ করেন দুই নেতা এবং এক্ষেত্রে বেসরকারি ক্ষেত্রের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথাও উল্লেখ করেন তাঁরা। স্টার্ট-আপ পরিমণ্ডলে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যাপারে তাঁরা একমত হন।

অশোধিত তেল, এলপিজি সহ শক্তির বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দেন দুই নেতা। গ্রিন / ক্লিন হাইড্রোজেনের ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার পাশাপাশি, হাইড্রোজেন পরিবহণ ও মজুত প্রযুক্তির ওপর জোর দেন তাঁরা। তাঁদের আলোচনায় উঠে আসে অচিরাচরিত শক্তির ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার প্রসঙ্গও। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে দুই দেশ রাষ্ট্রসঙ্ঘের ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন মেনে চলার অঙ্গীকার করেছে। ভারতের পক্ষ থেকে “সৌদি গ্রিন ইনিশিয়েটিভ” এবং “মিডল ইস্ট গ্রিন ইনিশিয়েটিভ”-এর প্রশংসা করা হয়। 

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ভারত ও সৌদি আরবের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধি নিয়ে দুই নেতা সন্তোষ প্রকাশ করেন। সৌদি আরবের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার হল ভারত। স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ কাউন্সিলের অধীনে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ক্ষেত্রে মন্ত্রীস্তরীয় কমিটি গঠনকে স্বাগত জানান দুই নেতা। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা ক্রমশ বাড়তে থাকায় তাঁরা সন্তোষ প্রকাশ করেন। প্রতিরক্ষা শিল্পে সহযোগিতা বৃদ্ধি নিয়েও তাঁরা একমত হন। 

জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁও-এ ২২ এপ্রিলের জঙ্গি হামলার নিন্দা এবং নিরীহ মানুষের হত্যার ঘটনায় গভীর শোক ব্যক্ত করেন দুই নেতা। দুই নেতাই সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যৌথ লড়াইয়ের অঙ্গীকার করেন। সীমান্ত সন্ত্রাসের নিন্দা করার পাশাপাশি, সমস্ত রাষ্ট্রের কাছে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে একজোট হওয়ার আবেদন জানান তাঁরা। সন্ত্রাসবাদীদের যে কোন ধরনের পরিকাঠামো ধ্বংস করারও আর্জি জানান তাঁরা। 

স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেও দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির পাশাপাশি আগামীদিনের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একসঙ্গে কাজ করার ব্যাপারে দুই দেশ একমত হয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সাইবার সুরক্ষা, সেমি-কন্ডাক্টর প্রভৃতির মতো ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত সহযোগিতার গুরুত্বের কথা উল্লেখ করেন তাঁরা। এ ব্যাপারে ভারতের টেলিকম নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ এবং সৌদি আরবের যোগাযোগ, মহাকাশ ও প্রযুক্তি কমিশনের মধ্যে মউ স্বাক্ষর নিয়ে তাঁরা সন্তোষ প্রকাশ করেন।

এই চুক্তি উৎক্ষেপণ যান, মহাকাশ যান, মহাকাশ প্রযুক্তির প্রয়োগ, গবেষণা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে সহযোগিতার পথ প্রশস্ত করবে বলে তাঁরা আশা প্রকাশ করেন। এছাড়া সিনেমা, সাহিত্য, শিল্পকলার ক্ষেত্রেও সহযোগিতা নিয়ে তাঁদের মধ্যে আলোচনা হয়। পর্যটনের প্রসারের ওপরও জোর দেন দুই নেতা। সার সহ কৃষি ও খাদ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী, মজবুত সম্পর্কের কথা তুলে ধরেন তাঁরা। 

আলোচনায় উঠে আসে ভারত-মধ্যপ্রাচ্য-ইউরোপ আর্থিক করিডরের প্রসঙ্গও। ২০২৩ সালে সৌদি যুবরাজ মহম্মদ বিন সলমনের ভারত সফরের সময় এ সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। জি-২০, আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার এবং বিশ্বব্যাঙ্ক সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা ও সমন্বয় বৃদ্ধির ওপর জোর দেন তাঁরা। ইয়েমেন-এ মানবিক সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে ভারতের ভূমিকার প্রশংসা করেন সৌদি যুবরাজ। রাষ্ট্রসঙ্ঘের সনদ মেনে জলপথে সুরক্ষা ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ভারত ও সৌদি আরবের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দেন দুই নেতা। 

সফরকালে চারটি মউ স্বাক্ষরিত হয়েছে। এগুলি হল – (১) শান্তিপূর্ণ কাজে মহাকাশের ব্যবহার নিয়ে ভারত ও সৌদি আরবের মহাকাশ সংস্থার মধ্যে মউ; (২) স্বাস্থ্যক্ষেত্রে সহযোগিতা নিয়ে ভারত ও সৌদি আরবের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের মধ্যে মউ; (৩) ভারত ও সৌদি আরবের ডাক বিভাগের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি এবং (৪) ডোপিং-এর মোকাবিলায় ন্যাশনাল অ্যান্টি-ডোপিং এজেন্সি অফ ইন্ডিয়া (নাডা) এবং সৌদি আরবের অ্যান্টি-ডোপিং কমিটি (এসএএডিসি)-র মধ্যে মউ।

পরস্পরের সুবিধামত সময়ে স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ কাউন্সিলের পরবর্তী বৈঠকের আয়োজনের ব্যাপারে দুই দেশ একমত হয়েছে। 

সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী সৌদি যুবরাজ মহম্মদ বিন সলমন-এর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং উষ্ণ অভ্যর্থনা ও আতিথেয়তার জন্য তাঁর প্রশংসা করেন। তিনি সৌদি আরবের মানুষের অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন। প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীকে পালটা শুভেচ্ছা জানান সৌদি যুবরাজ। সেইসঙ্গে, ভারতের মানুষের সুখ ও সমৃদ্ধি কামনা করেন তিনি। 

 

SC/MP/DM..