Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

প্রধানমন্ত্রীর কাতার সফর : ভারত-কাতার যৌথ বিবৃতি

প্রধানমন্ত্রীর কাতার সফর : ভারত-কাতার যৌথ বিবৃতি

প্রধানমন্ত্রীর কাতার সফর : ভারত-কাতার যৌথ বিবৃতি


নয়াদিল্লি, ১০ জুন, ২০১৬

1. কাতার রাষ্ট্রের আমির মহামান্য শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানির আমন্ত্রণে ভারতের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী সরকারিভাবে কাতার সফর করেন গত ৪ ও ৫ জুন।

2. মহামান্য আমির প্রধানমন্ত্রী শ্রী মোদীকে সাদর অভ্যর্থনা জানান গত ৫ জুন আমিরি দেওয়ানে। দু’দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক তথা আন্তর্জাতিক বিষয়ে তাঁদের মধ্যে মতবিনিময় হয়। হৃদ্য ও মৈত্রীপূর্ণ পরিবেশে আলোচনা করেন দুই নেতা।

3. কাতার সফরকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী সাক্ষাৎ করেন মাননীয় শেখ আব্দুল্লা বিন নাসের বিন খলিফা আল-থানির সঙ্গে। কাতারের প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে মতবিনিময় করেন শ্রী নরেন্দ্র মোদী।

4. দু’দেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত সরকারি বৈঠকগুলিতে ভারত ও কাতারের মধ্যে ঐতিহাসিক সম্পর্কের স্মৃতিচারণা করা হয়। বিগত কয়েক প্রজন্ম ধরে দুটি দেশের নাগরিকদের মধ্যে যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, তা আজ সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ বলে সহমত পোষণ করে ভারত ও কাতার দুটি দেশই।

5. দু’দেশের মধ্যে নিয়মিতভাবে উচ্চ পর্যায়ের সফর ও আলোচনার মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নততর হয়ে উঠেছে বলে বৈঠকে সন্তোষ প্রকাশ করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শ্রী মোদীর কাতার সফরকালে বিভিন্ন চুক্তি সম্পাদনের বিষয়টিকে তাঁরা আন্তরিকভাবে স্বাগত জানান। ইতিমধ্যেই দু’দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত যে চুক্তিগুলি রূপায়িত হচ্ছে তার সঙ্গে সম্পাদিত এই চুক্তিগুলি যুক্ত হলে দু’দেশের ঘনিষ্ঠ ও আন্তরিক সহযোগিতার সম্পর্ক আরও জোরদার হয়ে উঠবে বলে মত প্রকাশ করে দু’পক্ষই।

6. বাণিজ্য ও বিনিয়োগ জ্বালানি ও প্রতিরক্ষা এবং শ্রমশক্তি সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাগুলি যেভাবে কাজ করে চলেছে, তা বিশেষ প্রশংসনীয় বলে দাবি করা হয় বিভিন্ন বৈঠকে। এ সম্পর্কে গঠিত যৌথ কার্যনির্বাহী গোষ্ঠীগুলি যদি নিয়মিতভাবে আলোচনা ও মতবিনিময়ে মিলিত হয়, তা হলে দু’দেশের মধ্যে সহযোগিতার সম্পর্ক এক নতুন দিকে মোড় নেবে বলে মনে করেন দু’দেশের নেতারাই।

7. ভারত ও কাতারের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই যে শুভেচ্ছার সম্পর্ক রয়েছে, তাকে স্বীকার করে দু’দেশের নেতারাই এই মর্মে একমত হন যে, দুটি দেশের পারস্পরিক স্বার্থে এই সম্পর্কের আরও প্রসার ও ব্যপ্তি ঘটানো প্রয়োজন। উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক সফর ও বিনিময় কর্মসূচি, নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সম্পর্কিত সহযোগিতা, বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক এবং সর্বোপরি দু’দেশের জনসাধারণের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের বাতাবরণ আরও প্রসারিত করা প্রয়োজন বলেও মনে করেন তাঁরা। সংশ্লিষ্ট অঞ্চল তথা সমগ্র বিশ্বে শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় দু’দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ অংশীদারিত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে তাঁরা বলেন, একবিংশ শতাব্দীতে এই ধরণের সহযোগিতা একান্ত জরুরি।

8. ২০০৮-এর নভেম্বরে স্বাক্ষরিত প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তিটি দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা সম্পর্ককে জোরদার করে তুলতে প্রয়োজনীয় কাঠামো গড়ে তুলেছে। এই সত্যটি স্বীকার করে এই সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন দুই নেতাই। স্থল, নৌ ও আকাশপথে যৌথ মহড়া ও প্রশিক্ষণের কাজকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতেও সম্মত হন তাঁরা। বিশেষত, উপকূল রক্ষার কাজে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও জোরদার করে তোলার পক্ষে মতপ্রকাশ করে দুই পক্ষ। ভারতে প্রতিরক্ষা সাজসরঞ্জাম উৎপাদনের ক্ষেত্রে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ কর্মসূচির মাধ্যমে যে সমস্ত সুযোগ-সুবিধার প্রসার ঘটানো হয়েছে, তাতে বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করে কাতার।

9. এবছর ফেব্রুয়ারি ও মার্চে ভারতে আন্তর্জাতিক নৌ-প্রদর্শনী ও ডিফেক্সপো-তে কাতার অংশগ্রহণ করায় বিশেষ সন্তোষ প্রকাশ করে ভারত। ভারতের নৌ ও উপকূল রক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানে সফর ও পরিদর্শন কর্মসূচি কাতারের পক্ষ থেকে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় ভারত বিশেষ প্রশংসা করে ঐ দেশের। ভারতে প্রতিরক্ষা প্রদর্শনীর উদ্যোগ-আয়োজনের ভূয়সী প্রশংসা করে ভারতীয় নৌ ও উপকূল রক্ষী বাহিনীর নিয়মিতভাবে শুভেচ্ছা সফর আয়োজনের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে কাতার। কাতারের সশস্ত্র বাহিনী ও উপকূল রক্ষী বাহিনীর ভারত ও কাতারে বিশেষ প্রশিক্ষণ ও অনুশীলন কর্মসূচি আয়োজনের যে প্রস্তাব দিয়েছে ভারত তাকে স্বাগত জানানো হয় কাতারের পক্ষ থেকে।

10. ভারত মহাসাগর এবং উপসাগরীয় অঞ্চলে নৌ-নিরাপত্তা সংক্রান্ত সহযোগিতাকে আরও জোরদার করে তোলার সপক্ষে মতপ্রকাশ করেন দুই নেতাই। তাঁরা বলেন, দু’দেশের সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তার স্বার্থে এই সহযোগিতা একান্ত জরুরি।

11. আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসের কঠোর নিন্দার প্রস্তাবে সম্মত হয় দুটি দেশই। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সন্ত্রাস নির্মূল করার লক্ষ্যে পারস্পরিক সহযোগিতাকে আরও বাড়িয়ে তুলতেও সম্মত হন তাঁরা। বলা হয় যে এই ধরনের সন্ত্রাসবাদী তৎপরতা আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার পরিবেশকে বিনষ্ট করতে উদ্যত। তাই, এর কার্যকর মোকাবিলায় জোরদার প্রচেষ্টা চালানো উচিত।

12. দু’দেশের নেতারাই হিংসা, সন্ত্রাস ও উগ্রপন্থার কঠোর নিন্দা করে বলেন, কোন পরিস্থিতিতেই এই ধরনের সন্ত্রাসকে সমর্থন করা যায় না। শুধু তাই নয়, ধর্ম, সভ্যতা কিংবা কোন জাতি-গোষ্ঠীর সঙ্গে সন্ত্রাসকে কোনভাবেই যুক্ত করা উচিত নয়।

13. সন্ত্রাসকে যারা সমর্থন বা কোন না কোনভাবে সহায়তা যুগিয়ে যাচ্ছে তাদের সর্বতোভাবে বিচ্ছিন্ন করার ডাক দেন দু’দেশের নেতারাই।

14. আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসের মোকাবিলায় হিংসা ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য এক সর্বসম্মত দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দেয় দুটি দেশই। এই লক্ষ্যে সন্ত্রাসবাদের যাবতীয় পরিকাঠামোগত ছকনির্মূল করে তোলারও আহ্বান জানান দু’দেশের নেতারা।

15. সাইবার নিরাপত্তা ক্ষেত্রে সহযোগিতা প্রসারের উপায় অন্বেষণের জন্য একজোট হওয়ার আহ্বান জানান তাঁরা। দু’দেশের ধর্মীয় নেতা ও চিন্তাবিদদের সঙ্গে এই লক্ষ্যে পরামর্শ ও মতামত গ্রহণেরও প্রস্তাব দেওয়া হয়। বিভিন্ন সম্মেলন ও আলোচনাচক্রের উদ্যোগ-আয়োজনের মাধ্যমে শান্তি, সহনশীলতা, অন্তর্ভুক্তি এবং কল্যাণের মতো বিষয়গুলিকে তুলে ধরার ওপরও বিশেষ জোর দেওয়া হয়।

16. নিরাপত্তা ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা সম্পর্কিত যে প্রচেষ্টার কাজ শুরু হয়েছে, তার বিশেষ প্রশংসা করে বলা হয় যে সন্ত্রাসের মোকাবিলায় গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় এবং প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা গ্রহণের ওপর বিশেষ জোর দেওয়া প্রয়োজন। সেইসঙ্গে, অর্থ পাচার ও মাদক পাচারের মতো ঘটনাও কঠোরভাবে দমন করা উচিত। এব্যাপারে দু’দেশের মধ্যে সহযোগিতা চুক্তি সম্পাদনের বিষয়গুলিকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানানো হয়।

17. দু’পক্ষই স্বীকার করে যে সন্ত্রাসের মোকাবিলায় বিশ্বশক্তির একজোট হওয়া একান্ত জরুরি।

18. দু’দেশের মধ্যে যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, তার প্রভাব সুদূরপ্রসারী হবে বলে নেতৃবৃন্দের বৈঠকে মতপ্রকাশ করা হয়। বলা হয় যে বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে দুটি দেশই পরস্পরের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও অংশীদার। এই লক্ষ্যে বাণিজ্যিক পণ্য বিনিময়ের বিষয়টিকে আরও প্রসারিত করা প্রয়োজন। একে অপরের বাণিজ্য মেলা ও প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করতেও সম্মতি প্রকাশ করে ভারত ও কাতার। দু’দেশের বাণিজ্য ও বিপণন ক্ষেত্রে ভারতীয় ও কাতারের সংস্থাগুলি যেভাবে অংশগ্রহণের ব্যাপারে উৎসাহ প্রকাশ করছে, তাকে বিশেষ স্বাগত জানিয়ে বলা হয় দু’দেশের বাণিজ্য প্রতিনিধি ও পর্যটকদের ভিসা সংক্রান্ত ছাড়পত্র দেওয়ার কাজটিকে দ্রুততার সঙ্গে সেরে ফেলার পক্ষেও মতপ্রকাশ করে ভারত ও কাতার।

19. ফিফা, ২০২২ বিশ্বকাপের প্রস্তুতি এবং ‘কাতারের জন্য ২০৩০ সালের চিন্তাভাবনা’ সম্পর্কিত কর্মসূচির পরিকল্পনা রচনার ক্ষেত্রে ভারতীয় সংস্থাগুলির পরিকাঠামোগত সহযোগিতা প্রসারের বিষয়টিকে স্বাগত জানায় কাতারের নেতৃবৃন্দ।

20. ভারতে বাণিজ্যিক কাজকর্মকে সহজতর করে তোলার লক্ষ্যে সরকারিভাবে যে সমস্ত উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, সে সম্পর্কে বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেন প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেন, রেল, প্রতিরক্ষা ও বিমাশিল্প ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের নিয়ম-নীতিকে অনেক সরল ও উদার করে তোলা হয়েছে। ভারতে ১০০টি স্মার্ট নগরী স্থাপনের মাধ্যমে বিশ্বমানের পরিকাঠামো গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে শ্রী মোদী উল্লেখ করেন। এছাড়াও, ভারতের ৫০টি শহরে গড়ে তোলা হবে মেট্রো প্রকল্প এবং ৫০০টি শহরে চালু করা হবে অত্যাধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। সুলভ স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং আগামী ২০১৯ সালের মধ্যে ‘সকলের জন্য উন্নত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা’ও চালু করা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এছাড়াও আগামী ২০২২ সালের মধ্যে দেশের প্রতিটি পরিবারের জন্য বাসস্থান নির্মাণের এক উচ্চাকাঙ্ক্ষামূলক কর্মসূচি রূপায়িত হচ্ছে বলে কাতারের নেতৃবৃন্দকে অবহিত করেন শ্রী নরেন্দ্র মোদী। ভারতের এই উন্নয়ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য তিনি আহ্বান ও আমন্ত্রণ জানান কাতারকে।

21. ভারতের উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগ ও কর্মপ্রচেষ্টার বিশেষ প্রশংসা করেন কাতারের নেতৃবৃন্দ। ভারতের এই উন্নয়ন প্রচেষ্টায় বিশেষ আস্থা ও বিশ্বাসের মনোভাব প্রকাশ করেন মহামান্য আমির। ভারতীয় অর্থনীতিকে এক ইতিবাচক পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অফুরন্ত সম্ভাবনার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘স্টার্ট আপ ইন্ডিয়া’, ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’, ‘স্মার্ট সিটি’ এবং ‘ক্লিন ইন্ডিয়া’র মতো যে সমস্ত নতুন উদ্যোগ ও কর্মসূচির কাজ শুরু করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।

22. ভারতে উন্নয়ন ও অগ্রগতির এই সম্ভাবনা ও প্রেক্ষাপটে কাতারের বিনিয়োগ ও অংশগ্রহণ বিশেষভাবে উৎসাহিত হবে বলে বৈঠকে মতপ্রকাশ করা হয়। ভারতে কাতারের বিনিয়োগের মাত্রা কিভাবে বৃদ্ধি করা যেতে পারে সে সম্পর্কে পন্থা-পদ্ধতি খতিয়ে দেখার কাজে মতবিনিময় করে দু’পক্ষই।

23. বিদেশের পরিকাঠামো প্রকল্পগুলিতে পারস্পরিক অংশগ্রহণের প্রস্তাবেও সম্মত হয় দুটি দেশ। কাতার বিনিয়োগ কর্তৃপক্ষ এবং ভারতের জাতীয় পরিকাঠামো ও বিনিয়োগ তহবিল কর্তৃপক্ষের মধ্যে সহযোগিতা প্রসারের সম্ভাবনা সম্পর্কেও মতবিনিময় করেন দু’দেশের নেতারা। কাতারের প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা যাতে ভারতের জাতীয় পরিকাঠামো ও বিনিয়োগ তহবিলে অংশগ্রহণ করতে পারেন সেজন্য কাঠামোগত একটি চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়টিকে স্বাগত জানায় দু’পক্ষই।

24. বিনিয়োগের সুযোগ ও সম্ভাবনা সম্পর্কে নিয়মিতভাবে তথ্য বিনিময়ের ওপরও জোর দেওয়া হয় নেতৃবৃন্দের বৈঠকে। বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে দু’দেশের বিনিয়োগ সংক্রান্ত সংস্থাগুলির সঙ্গে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নিয়মিত বৈঠক আয়োজনের সপক্ষেও মতপ্রকাশ করা হয়।

25. জ্বালানি ক্ষেত্রে দু’দেশের ক্রমবর্ধমান দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক প্রসারের ঘটনায় সন্তোষ প্রকাশ করা হয় দুটি দেশের পক্ষ থেকে। কাতার হল বর্তমানে ভারতে বৃহত্তম এলএনজি ও এলপিজি সরবরাহকারী একটি দেশ। ভারতের শক্তি ও জ্বালানি নিরাপত্তায় কাতারের এই বিশেষ অবদানের সপ্রশংস উল্লেখ করে ভারত।

26. জ্বালানি ক্ষেত্রে সহযোগিতার সম্পর্ককে আরও জোরদার করে তুলতে গবেষণা ও উন্নয়নের ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়। এজন্য মানবসম্পদের বিকাশ ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচি গড়ে তোলার ওপরও বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়।

27. কাতারে বাণিজ্যিক যে সমস্ত সুযোগ-সুবিধা রয়েছে সে বিষয়ে ভারতীয় জ্বালানি সংস্থাগুলির উৎসাহ ও আগ্রহের কথা ব্যক্ত করা হয় আলোচনাকালে। কাতারের পেট্রোলিয়াম সংস্থাগুলির সঙ্গে তেল ও গ্যাসের নতুন নতুন ক্ষেত্র উদ্ভাবনে পারস্পরিক সহযোগিতা প্রসারের সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা হয় দু’দেশের নেতাদের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে।

28. ভারতের নতুন ‘হাইড্রোকার্বন অনুসন্ধান ও ছাড়পত্রদান নীতি’ এবং ‘ক্ষুদ্র তেল ও গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কার সম্পর্কিত নীতি’র সুযোগ গ্রহণের মাধ্যমে তেল ও গ্যাসের নতুন ব্লক অনুসন্ধানে কাতারের সংস্থাগুলির অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয় ভারতের পক্ষ থেকে।

29. ভারতে তেল ও গ্যাসের কৌশলগত মজুতভাণ্ডার গড়ে তোলার লক্ষ্যে দ্বিতীয় পর্যায়ে যে উদ্যোগ গ্রহণের কাজ শুরু করা হয়েছে তাতেও অংশগ্রহণের জন্য ভারত আমন্ত্রণ জানায় কাতারের সংস্থাগুলিকে।

30. ব্যাঙ্ক, বিমা এবং মূলধন বাজার সহ বিভিন্ন আর্থিক ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতাকে আরও জোরদার করে তোলার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন দু’দেশের নেতারা। ভারতের সেবি এবং দুটি দেশের শীর্ষ ব্যাঙ্কগুলির মধ্যে সহযোগিতা প্রসারের ওপরও গুরুত্ব আরোপ করা হয়।

31. প্রতিযোগিতামূলক ব্যয়ে ভারতে বিশ্বমানের চিকিৎসার সুযোগ সম্প্রসারিত হয়েছে। এই সত্যটি স্বীকার করে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা প্রসারের ওপর গুরুত্ব দেন দু’দেশের নেতারা। স্বাস্থ্য পরিষেবা, স্বাস্থ্যকর্মী বিনিময়, স্বাস্থ্য-শিক্ষা এবং ওষুধ উৎপাদন সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই সহযোগিতা সম্প্রসারণের কথা বলা হয়। ভারত ও কাতারের মধ্যে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত চুক্তি সম্পাদনের বিষয়টিকে বিশেষভাবে স্বাগত জানানো হয় আলোচনাকালে।

32. আন্তর্জাতিক সৌর সমঝোতা স্থাপনে প্রধানমন্ত্রী শ্রী মোদীর অগ্রণী ভূমিকার বিশেষ প্রশংসা করেন কাতারের নেতৃবৃন্দ। তাঁরা স্বীকার করেন যে বিশ্বে নতুন সৌর প্রযুক্তির প্রসারে তাঁর এই উদ্যোগ বিশেষ সুফল এনে দেবে।

33. আন্তর্জাতিক যোগ দিবস পালনের আহ্বানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অভাবনীয় সাড়া মিলেছে। সুস্থ ও নিরন্তর ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিশ্ববাসীর সদিচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে এর মধ্যে বলে বৈঠকে মতপ্রকাশ করা হয়। গত বছর ২১ জুন প্রথম আন্তর্জাতিক যোগ দিবস পালনের প্রস্তাবকে কাতার সমর্থন জানানোয় ঐ দেশকে বিশেষ ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী শ্রী মোদী। এই উপলক্ষে কাতারের ডাক দপ্তর একটি স্মারক ডাকটিকিটও প্রকাশ করে।

34. ভারত ও কাতারের জনসাধারণকে পরস্পরের আরও কাছে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক বিনিময় কর্মসূচির একটি বড় ধরনের ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করে ভারত ও কাতার দুটি দেশই। দ্বিপাক্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কর্মসূচিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে দু’দেশের সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী ও ক্রীড়া প্রতিনিধিদের আরও ঘন ঘন বিনিময় সফরসূচির ওপর গুরুত্ব আরোপ করে কাতার ও ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। আগামী ২০১৯ সালে ‘কাতার-ভারত সংস্কৃতি বর্ষ’ উদযাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় কাতারের সংগ্রহশালা কর্তৃপক্ষকে বিশেষ ধন্যবাদ জানান শ্রী নরেন্দ্র মোদী। কাস্টম্‌স ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সাহায্য ও সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়টিকেও স্বাগত জানান তাঁরা। এছাড়াও, দু’দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত যুব ও ক্রীড়া সম্পর্কিত কর্মসূচি এবং পর্যটন সহযোগিতার বিষয়েও সন্তোশ প্রকাশ করা হয়।

35. দু’দেশের জনসাধারণের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সংযোগ বৃদ্ধি করার বিষয়টি ভারত-কাতার সম্পর্ক প্রসারের একটি উল্লেখযোগ্য দিক বলে মনে করেন দু’দেশের নেতারাই। এব্যাপারে কাতারের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে ভারতীয় সম্প্রদায়ের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ও অবদানের ভূয়সী প্রশংসা করেন মহামান্য আমির। কাতারে বসবাসকারী ভারতীয় সম্প্রদায়ের কল্যাণ ও নিরাপত্তার বিষয়টি সুনিশ্চিত করার জন্য কাতারের নেতৃবৃন্দকে ধন্যবাদ জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী। দক্ষতা উন্নয়ন এবং যোগ্যতার স্বীকৃতিদান সম্পর্কিত চুক্তি স্বাক্ষরের মতো বিষয়গুলিকেও স্বাগত জানানো হয় দু’দেশের পক্ষ থেকে।

36. পশ্চিম এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য এবং দক্ষিণ এশিয়ায় নিরাপত্তা পরিস্থিতি সহ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে মতবিনিময় করেন ভারত ও কাতারের নেতৃবৃন্দ। একইসঙ্গে তাঁরা উদ্বেগ প্রকাশ করেন সিরিয়া, ইরাক, লিবিয়া এবং ইয়েমেনের নিরাপত্তা পরিস্থিতি সম্পর্কে। রাজনৈতিক পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা ও মতবিনিময়ের মাধ্যমে এ ধরনের সঙ্কট নিরসনে উদ্যোগ গ্রহণ প্রয়োজন বলে তাঁরা মতপ্রকাশ করেন।

37. রাষ্ট্রসঙ্ঘের সংস্কার প্রসঙ্গে এক বহুপাক্ষিক ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়। রাষ্ট্রসঙ্ঘের সংস্কারের বিষয়টিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে বিশেষত নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপের জন্য একজোট হয়ে কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয় দু’দেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত আলোচনাকালে।

38. কাতারে তাঁকে যেভাবে সাদর অভ্যর্থনা জানানো হয়েছে এবং তাঁর আতিথেয়তার ব্যবস্থা করা হয়েছে সেজন্য মহামান্য আমিরকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী। মহামান্য আমিরকে সরকারিভাবে ভারত সফরের আমন্ত্রণ জানালে তিনি তা সানন্দে গ্রহণ করেন।

PG/SKD/SB/DM