নতুন দিল্লি, ১৫ নভেম্বর ২০২৪
প্রথম বোড়োল্যান্ড মহোৎসবের আজ সূচনা করলেন প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী। ২ দিনের এই উৎসবে বোড়ো সমাজের ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হবে। বোড়ো সমাজে শান্তি অক্ষুণ্ন রাখতে এবং সমাজ ব্যবস্থাকে আরও উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত করে তুলতে এই উৎসব এক সদর্থক ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।
মহোৎসবের সমাবেশে ভাষণদান কালে কার্তিক পূর্ণিমা ও দেব দীপাবলির পুণ্য মুহূর্তে দেশের সকল নাগরিককে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী। আবার শ্রী গুরু নানক দেবজীর ৫৫৫তম প্রকাশ পর্ব উপলক্ষে সমস্ত শিখ ভাই-বোনদেরও অভিনন্দন জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, ভগবান বিরসা মুন্ডার সার্ধশত জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দেশব্যাপী উদযাপিত হচ্ছে জনজাতীয় গৌরব দিবস। এই আবহে প্রথম বোড়োল্যান্ড মহোৎসবের সূচনা করতে পেরে তিনি বিশেষ আনন্দিত। শ্রী মোদী বলেন, এই মুহূর্তটির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এক আবেগ অনুভূতিও। কারণ, দীর্ঘ ৫০ বছরের হিংসা ও সংঘাতের পথ পরিহার করে বোড়ো সমাজ আজ ঐক্যের এক মহোৎসবে সামিল হয়েছে। রণচন্ডী নৃত্য বোড়োল্যান্ডের শক্তিরই এক বহিঃপ্রকাশ। দীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাসের পর এক নতুন ইতিহাস রচিত হয়েছে বোড়ো ভূমিতে।
প্রসঙ্গত ২০২০ সালে সম্পাদিত বোড়ো শান্তি চুক্তির পর প্রধানমন্ত্রী তাঁর কোকরাঝাড় সফরের স্মৃতিও রোমন্থন করেন। বোড়ো সমাজের কাছ থেকে তিনি যে ভালোবাসা ও আন্তরিকতা লাভ করেছিলেন তাতে তিনি আপ্লুত। চার বছর পর আবেগ ও ভালোবাসার সেই উষ্ণতা আজও অটুট রয়েছে দেখে তিনি অভিভূত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শান্তি চুক্তির পর উন্নয়নের এক নতুন জোয়ার এসেছে বোড়োল্যান্ডে। ঐ চুক্তির সুফল এখন তিনি প্রত্যক্ষ করতে পারছেন জনসাধারণের জীবনযাপনের মধ্যে। বোড়ো শান্তি চুক্তির পথ অনুসরণ করে অন্যান্য সমঝোতার পথও আজ উন্মুক্ত হয়েছে। আসামের ১০ হাজারেরও বেশি যুবক অস্ত্র ত্যাগ করে এবং হিংসার পথ পরিহার করে উন্নয়নের মূল স্রোতে ফিরে এসেছেন শান্তি চুক্তির পথ ধরে। কার্বি অ্যাংলং চুক্তি, ব্রু-রিয়াং চুক্তি এবং এনএলএফটি-ত্রিপুরা চুক্তি যে একদিন বাস্তবায়িত হবে অনেকেই তা কল্পনা করতে পারেননি। সরকার ও জনসাধারণের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসকে সকলেই মর্যাদা দিয়েছেন। বোড়োল্যান্ড এবং বোড়ো সমাজের উন্নয়নে কেন্দ্র ও রাজ্য মিলিত ভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে।
শ্রী মোদী জানান, বোড়োল্যান্ডের উন্নয়নে ১৫০০ কোটি টাকার এক বিশেষ প্যাকেজ অনুমোদন করা হয় কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকেও মঞ্জুরি দেওয়া হয় এক বিশেষ উন্নয়ন প্যাকেজের জন্য। বোড়ো সমাজে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সংস্কৃতির উন্নয়নে ৭০০ কোটি টাকারও বেশি ব্যয় করা হয়েছে। হিংসার পথ পরিহার করে যাঁরা সমাজের মূল স্রোতে ফিরে এসেছেন, বিশেষ সংবেদনশীলতার দৃষ্টিভঙ্গী নিয়েই সরকার তাঁদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। বোড়োল্যান্ডের জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের ক্যাডার হিসেবে একদা যাঁরা কাজ করেছেন তাঁদের পুনর্বাসন প্রকল্পেও সরকার আর্থিক দিক থেকে সহায়তা করেছেন। আন্দোলনের সময় বহু যুবকই আসাম পুলিশের চাকরি ছেড়ে সংঘাত ও সংঘর্ষের পথে চলে গিয়েছিলেন। ঐ সময়কালে ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেকটি পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে আসাম সরকার। বোড়োল্যান্ডে উন্নয়নে রাজ্য সরকার প্রতি বছর ৮০০ কোটি টাকারও বেশি অর্থ বিনিয়োগ করছে। এই অঞ্চলের উন্নয়নে নারী ও যুবকদের দক্ষতা বিকাশের জন্য সকল রকম প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। এই লক্ষ্যে শুরু হয়েছে সীড মিশনের কাজও।
শ্রী মোদী আনন্দ প্রকাশ করে বলেন, অতীতে যাঁরা অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলেন তারাই এখন উন্নয়নের স্রোতে সামিল হয়ে ক্রীড়ার আঙিনাতেও তাঁদের দক্ষতা ও নৈপুণ্যের প্রতিফলন ঘটাচ্ছেন। কোঁকড়াঝাড়ে অনুষ্ঠিত দুটি ডুরান্ড কাপের খেলায় এবং বাংলাদেশ, নেপাল ও ভূটানের টিমগুলির সঙ্গে তাঁদের প্রতিযোগিতা ও নৈপুণ্য প্রদর্শন এককথায় ঐতিহাসিক। শান্তি চুক্তির পর গত ৩ বছর ধরে কোকরাঝাড়ে আয়োজিত হচ্ছে বোড়োল্যান্ড সাহিত্য উৎসব। বোড়ো সাহিত্যকে সকলের সামনে তুলে ধরাই হল এর উদ্দেশ্য। বোড়ো সাহিত্য সভার ৭৩তম প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে বোড়োল্যান্ডবাসীদের অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এ হল বোড়ো ভাষা ও সাহিত্যের এক বিশেষ উদযাপন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের পর্যটন ক্ষেত্রে আসাম একটি পরিচিত নাম। আবার বোড়োল্যান্ড হল আসাম পর্যটনের এক বিশেষ শক্তি। মানস জাতীয় উদ্যানের গভীর অরণ্য, রাইমোনা ন্যাশনাল পার্ক এবং শিখনা ঝালাও ন্যাশনাল পার্ক পর্যটকদের মনে প্রভূত আনন্দ ও রোমাঞ্চ এনে দেয়। বোড়োল্যান্ডে ক্রমপ্রসারমান পর্যটন পরিকাঠামো সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের তরুণ ও যুবক ছেলে-মেয়েদের কাছে নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ এনে দিচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী এদিন শ্রী বোড়োফা উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্ম এবং গুরুদেব কালীচরণ ব্রহ্মের অবদানের কথা স্মরণ করে বলেন যে, ভারতের সংহতি রক্ষাকল্পে বোড়োফা সর্বদাই গণতান্ত্রিক মত ও পথের ওপর জোর দিয়ে এসেছেন। বোড়ো জনসাধারণের সাংবিধানিক অধিকারের কথাও উচ্চারিত হতো তাঁর কন্ঠে। অন্যদিকে, অহিংসা ও আধ্যাত্মিকতার পথ অনুসরণ করে গুরুদেব কালীচরণ ব্রহ্ম সমাজকে এক সূত্রে বাঁধার চেষ্টা করে গেছেন। বোড়ো মা ও বোনেদের স্বপ্ন ছিল তাঁদের সন্তানদের এক উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা। এই স্বপ্নকে গুরুদেব কালীচরণ সর্বদাই লালন ও উৎসাহ দান করেছেন।
শ্রী মোদী বলেন, ভূতপূর্ব মুখ্য নির্বাচন কমিশনার শ্রী হরিশঙ্কর ব্রহ্ম, মেঘালয়ের প্রাক্তন রাজ্যপাল শ্রী রঞ্জিত শেখর মুশাহরির মতো বিশিষ্টরাও কাজ করেছেন ভারতের জাতীয় জীবনে। বোড়ো সমাজের মুখ উজ্জ্বল করার পাশাপাশি তার মর্যাদাকেও তুলে ধরার চেষ্টা করে গেছেন তাঁরা।
শ্রী মোদী উল্লেখ করেন যে আসাম সহ সমগ্র উত্তর পূর্বাঞ্চল হল ভারতের অষ্টলক্ষ্মী এবং উন্নয়নের ঊষাকালের উদয় ঘটবে পূর্ব ভারত থেকেই, যা এক উন্নত ভারত গড়ে তোলার সংকল্পকে আরও জোরদার করে তোলার শক্তি যুগিয়ে যাবে। এই কারণে সরকার উত্তর পূর্ব ভারতে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। গত দশকে শুরু হয়েছে আসাম সহ সমগ্র উত্তর পূর্বাঞ্চলের উন্নয়ন যজ্ঞ। তাই, ভারতের এই অঞ্চল এখন এক স্বর্ণযুগের মধ্য দিয়ে চলেছে। গত ১০ বছরে সরকারি নীতির সঠিক বাস্তবায়নে ২৫ কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার বাইরে বেরিয়ে আসতে পেরেছেন। আসামের লক্ষ লক্ষ মানুষ পরাভূত করেছেন দারিদ্র্যকে। এই অঞ্চলের সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যের বিকাশে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে। গত দেড় বছরে চারটি বড় বড় হাসপাতাল তৈরি হয়েছে আসামে। কোকরাঝাড়, নলবাড়ি ও নগাঁওতে মেডিকেল কলেজ ছাড়াও গুয়াহাটিতে স্থাপিত হয়েছে এইমস। আসামের ক্যান্সার হাসপাতালটির উদ্বোধন উত্তর পূর্ব ভারতের ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসায় একটি উল্লেখযোগ্য অবদান। ২০১৪-র আগে আসামে মেডিকেল কলেজের সংখ্যা ছিল মাত্র ৬টি। কিন্তু বর্তমানে সেই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১২টিতে। এই রাজ্যে আরও ১২টি নতুন মেডিকেল কলেজ স্থাপনের কাজ চলছে।
পরিশেষে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বোড়ো শান্তি চুক্তি সমগ্র উত্তর পূর্ব ভারতকে সমৃদ্ধির পথ দেখিয়েছে। বোড়োল্যান্ড শতাব্দী প্রাচীন সমৃদ্ধ সংস্কৃতির এক পীঠভূমি। এই ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে রক্ষা করতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আজকের অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আসামের রাজ্যপাল শ্রী লক্ষ্মণ প্রসাদ আচার্য, বোড়োল্যান্ড টেরিটোরিয়াল রিজিয়নের প্রধান শ্রী প্রমোদ বোড়ো, অল বোড়ো স্টুডেন্টস ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট শ্রী দীপেন বোড়ো, বোড়ো সাহিত্যসভার প্রেসিডেন্ট ডঃ সুরথ নারজারি সহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। আসামের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন ভিডিও কনফারেন্সের মঞ্চে।
PG/SKD/AS
Speaking at the inauguration of the Bodoland Mohotsov. Our Government is committed to ensuring progress and prosperity for the vibrant Bodo community.https://t.co/dqr7XctkmC
— Narendra Modi (@narendramodi) November 15, 2024
बोडो लोगों के उज्ज्वल भविष्य की मजबूत नींव तैयार हो चुकी है: PM @narendramodi pic.twitter.com/QAiZQaXHbN
— PMO India (@PMOIndia) November 15, 2024
पूरा नॉर्थ ईस्ट, भारत की अष्टलक्ष्मी है: PM @narendramodi pic.twitter.com/EfQhPzA726
— PMO India (@PMOIndia) November 15, 2024
Today, the women of the Bodo community are not burdened by tears or sadness. They are working towards a better future for them and the community. pic.twitter.com/Gdqrdx3CuH
— Narendra Modi (@narendramodi) November 15, 2024
Coming to the Bodoland Mohotsov is a very emotional moment for me. The affection from the Bodo community is something I greatly cherish. This community has faced many challenges but they have shown immense resilience and commitment to peace. They have also shown violence can… pic.twitter.com/jtzx0NN2Jx
— Narendra Modi (@narendramodi) November 15, 2024