Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

প্যারিসে সি ও পি ২১-এ উদ্ভাবন সংক্রান্ত শীর্ষ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

প্যারিসে সি ও পি ২১-এ উদ্ভাবন সংক্রান্ত শীর্ষ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

প্যারিসে সি ও পি ২১-এ উদ্ভাবন সংক্রান্ত শীর্ষ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

প্যারিসে সি ও পি ২১-এ উদ্ভাবন সংক্রান্ত শীর্ষ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

প্যারিসে সি ও পি ২১-এ উদ্ভাবন সংক্রান্ত শীর্ষ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ


মাননীয় প্রেসিডেন্ট হল্যান্ড ও প্রেসিডেন্ট ওবামা, মাননীয় মিঃ বিল গেট্‌স এবং অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ,

প্রথমেই প্রেসিডেন্ট হল্যান্ড এবং ফ্রান্সের জনসাধারণকে অভিবাদন জানাই তাঁদের সাহস ও সংকল্পের জন্য। সেইসঙ্গে, ধন্যবাদ জানাই বিশ্বের অন্যান্য নেতৃবৃন্দকে ফ্রান্স ও প্যারিসে একত্রে মিলিত হওয়ার জন্য।

বৈঠকের এই সুন্দর উদ্যোগ আয়োজনের মধ্যেই প্রতিফলিত হয়েছে এই মহান জাতির চরিত্র। সমগ্র বিশ্ব আজ প্যারিসে সমবেত হয়েছে আমাদের গ্রহকে এক নির্দিষ্ট ও নিরন্তর লক্ষ্যে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সংকল্প নিয়ে।

কার্বন নির্গমনের ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা যেভাবে বেড়ে চলেছে তার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের লক্ষ্য ও লক্ষ্যমাত্রার বিষয়ে অবশ্যই কথাবার্তা বলতে হবে। কিন্তু, একইসঙ্গে আমাদের স্থির করতে হবে কিভাবে এগোলে বিশ্বে স্বাভাবিক প্রাকৃতিক পরিবেশ সহজ ও অক্ষুন্ন থাকবে।

সূর্যাস্তের পর বহু সংখ্যক দরিদ্র মানুষ অন্ধকারের মধ্যে বাস করেন। তাঁদের প্রয়োজন জ্বালানি শক্তি, যাতে তাঁরা তাঁদের গৃহকোণকে আলোকিত করে তুলতে পারেন এবং ভবিষ্যৎ-কেও করে তুলতে পারেন মজবুত ও শক্তিশালী।

এই শিল্পায়নের যুগে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের পরিণতিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন তাঁরাই।

সুলভ জ্বালানি শক্তি এবং উন্নততর জীবনশৈলীর আকাঙ্খা সার্বজনীন। একইভাবে, দূষণমুক্ত পরিবেশ এবং স্বাস্থ্যসম্মত বাসস্থানের প্রয়োজনও রয়েছে সকলের।

এমন একটি গ্রহে আমরা বাস করি যেখানে বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্রই সমৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে। কার্বন নির্গমনের উপযুক্ত স্থানের এখানে বড়ই অভাব। তাই, আমাদের এদিকে নজর দিতে হবে।

জলবায়ুর প্রতি যদি ন্যায়-বিচার করতে হয় তা হলে আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের জীবনযাত্রার ফলে বহু মানুষের সমৃদ্ধির পথ যেন রুদ্ধ না হয়ে যায়। কারণ, বহু সংখ্যক মানুষই এখন বাস করেন উন্নয়নের নীচের সারিতে।

উন্নত দেশগুলির উচিৎ উন্নয়নশীল দেশগুলির বিকাশের পথ সুগম করে তোলা। আমাদের উন্নয়নের পথে কার্বন নির্গমন যাতে একটি বড় অন্তরায় না হয়ে দাঁড়ায় তা নিশ্চিত করতে হবে আমাদেরই।

এই লক্ষ্যেই, আমাদের সকলের উচিৎ পারস্পরিক অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার মাধ্যমে বিশুদ্ধ জ্বালানি উদ্ভাবনের চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া, যাতে তা পৌঁছে দেওয়া যায় সকলের নাগালের মধ্যে।

জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলায় এবং জলবায়ুর প্রতি ন্যায়-বিচার নিশ্চিত করতে উদ্ভাবনের বিষয়টি তাই খুবই জরুরি।

আর এই কারণেই উদ্ভাবন সংক্রান্ত এই শীর্ষ বৈঠকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটি সাধারণ উদ্দেশ্যকে কেন্দ্র করে আমরা সকলে এই লক্ষ্যেই মিলিত হয়েছি এখানে।

পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানিকে আরও সস্তা ও নির্ভরযোগ্য করে তুলতে আমাদের প্রয়োজন গবেষণা ও উদ্ভাবনমূলক কাজকর্মের। একইসঙ্গে, এই জ্বালানি শক্তিকে যাতে সহজেই সংবহন গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত করা যায় তার উপায়ও খুঁজে বের করতে হবে আমাদের।

চিরাচরিত ও প্রচলিত জ্বালানি শক্তিকে আমরা আরও বিশুদ্ধ জ্বালানিতে রূপান্তরিত করতে পারি। পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানির নতুন নতুন উৎসও আমরা খুঁজে বের করতে পারি।

আমাদের সকলের ভবিষ্যৎ-এর লক্ষ্যে এই দায়িত্ব নিতে হবে বিশ্বের সবকটি রাষ্ট্রকেই।

উদ্ভাবনী কাজে আমাদের চালিকাশক্তি হবে সাধারণ মানুষের অভিন্ন স্বার্থ; বিপণনের সুযোগ-সুবিধা নয়। সেইসঙ্গে, মেধা-সম্পদের ব্যবহার সম্ভব করে তুলতে হবে।

উন্নয়নশীল দেশগুলিতে যাঁরা এর সুফল পৌঁছে দেবেন তাঁদের অবশ্যই অঙ্গীকারবদ্ধ থাকতে হবে সাধারণ মানুষের কল্যাণের লক্ষ্যে।

আর এইভাবেই বিশুদ্ধ জ্বালানি প্রযুক্তির খোঁজ পাওয়া যাবে এবং তাকে পৌঁছে দেওয়া যাবে সকলের নাগালের মধ্যে।

এই সহযোগিতার মধ্যে একদিকে যেমন থাকবে বিভিন্ন দেশের সরকারের দায়িত্বশীলতা অন্যদিকে তেমনই তার সঙ্গে যুক্ত হবে বেসরকারি ক্ষেত্রের উদ্ভাবনী ক্ষমতা। আর, এইভাবেই আমাদের সহযোগিতা হয়ে উঠবে নিবিড়তর।

আগামী ১০ বছরে পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানির লক্ষ্যে ৩০-৪০টি বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণাগার নিয়ে আমাদের গড়ে তুলতে হবে এক আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক।

উদ্ভাবিত জ্বালানি যাতে সকলের জন্য সুলভ করে তোলা যায় এবং তার ব্যবহারে সকলেই উৎসাহিত হন সেই চেষ্টাও চালিয়ে যেতে হবে আমাদের।

আজ এখানে উপস্থিত অনেকগুলি দেশের সঙ্গেই সরকারি-বেসরকারি সফল অংশীদারিত্বের মডেল আমরা গড়ে তুলতে পেরেছি। ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্র সহ পৃথিবীর উন্নয়নশীল দেশগুলিতে পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানির উৎপাদনবৃদ্ধির কাজে ভারত সহযোগিতা করে আসছে।

বিশুদ্ধ জ্বালানি প্রযুক্তি অন্বেষণের কাজ সাফল্যের সঙ্গেই এগিয়ে গেছে। আশাব্যঞ্জকভাবে তা ব্যয়সাশ্রয়ী করে তোলাও সম্ভব হয়েছে। আমাদের প্রচেষ্টাকে যদি আমরা আরও জোরদার করে তুলতে পারি, তা হলে বিশ্বের রূপান্তর অবশ্যম্ভাবী।

সীমিত কার্বন নির্গমনের যুগে পৌঁছে যাওয়ার লক্ষ্যে এক নতুন অর্থনীতির সূচনা করতে পারি আমরা সকলেই।

পরিবেশ ও অর্থনীতি এবং আমাদের উত্তরাধিকার ও দায়বদ্ধতার মধ্যে ভারসাম্য পুনরুদ্ধারের কাজ করতে হবে আমাদেরই। গান্ধিজীর আহ্ববানে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমাদেরই গড়ে তুলতে হবে সেই অনাগত ভবিষ্যৎ।
ধন্যবাদ।

PG/SKD/SB