Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

প্যারিসে ভারতীয়দের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

প্যারিসে ভারতীয়দের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ


ভারত মাতা কি জয়, ভারত মাতা কি জয়,
নমস্কার, হ্যালো
কেম আছো!

এই দৃশ্য সত্যিই বিস্ময়কর। এ এক অভূতপূর্ব উন্মাদনা। আপনাদের সীমাহীন ভালোবাসা আমার মন ছুঁয়ে যাচ্ছে। এই আতিথেয়তা সত্যিই মুগ্ধকর। আমি যখন দেশ থেকে দূরে থাকি, তখন আমি  “ভারত মাতা কি জয়”, এই  ডাক শুনতে পাই, অথবা কেউ নমস্কার বললে, তখন আমার মনে হয়, আমি যেন বাড়িতেই আছি। আমরা ভারতীয়রা যখনই কোথায় যাই, আমরা সব সময় সেখানে ছোট ভারত গড়ে তুলি। আমি জানতে পেরেছি,  অনেকে ১১ বা ১২ ঘন্টা ভ্রমণ করে এখানে এসেছেন। সত্যিই এর চেয়ে বড় ভালোবাসা আর হতে পারে না!

আমরা জানি, এটা প্রযুক্তির যুগ। বাড়িতে বসে মোবাইল ফোনে সরাসরি এই সম্প্রচার দেখা খুব একটা কঠিন কাজ নয়। তা সত্ত্বেও বহু দূর থেকে অনেক মানুষ সময় বার করে এখানে এসেছেন। আমি আপনাদের সবার প্রতি অন্তরের গভীর কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

বন্ধুগণ,
এর আগেও বেশ কয়েকবার আমি ফ্রান্সে এসেছি। তবে, আমার কাছে এবারের সফরের একটা বিশেষত্ব রয়েছে। আগামীকাল ফ্রান্সের জাতীয় দিবস। আমি ফ্রান্সের মানুষকে অভিনন্দন জানাচ্ছি এবং এই গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে আমাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য ফ্রান্সের মানুষের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী এলিসাবেথ বোর্ন বিমানবন্দরে আমাকে স্বাগত জানিয়েছেন। আগামীকাল জাতীয় দিবসের কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে আমার বন্ধু প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর সঙ্গে আমিও থাকবো। এই বন্ধুত্ব শুধুমাত্র দুটি দেশের নেতাদের মধ্যে নয়, এটি হল ভারত ও ফ্রান্সের অবিচ্ছেদ্য বন্ধুত্বের প্রতিফলন। ভারতের স্থল, নৌ এবং বায়ুসেনার সদস্যরা আগামীকালের কুচকাওয়াজে অংশ নেবেন। এটি হল ঐক্য। ভারত ও ফ্রান্সের মধ্যে ২৫ বছরের বেশি কৌশলগত বোঝাপড়া উদযাপনের জন্য এর চেয়ে ভালো দিন আর কী হতে পারে।

বন্ধুগণ,
আজকের বিশ্ব ব্যবস্থা দ্রুত গতিতে বদলাচ্ছে। ভারতের শক্তি  এবং ভূমিকাও দ্রুত গতিতে বদলাচ্ছে। ভারত এখন জি২০ -র সভাপতি। জি২০ গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলি ভারতের ক্ষমতা এবং ভূমিকা দেখে বিস্মিত হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন, আন্তর্জাতিক সরবরাহ ব্যবস্থা, সন্ত্রাসবাদ বা উগ্রপন্থা, প্রতিটি চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় ভারতের ভূমিকায় উপকৃত হচ্ছে গোটা বিশ্ব।
ভারতের মন্ত্র হল “বসুধৈব কুটুম্বকম”, যার অর্থ হল গোটা বিশ্ব আমার পরিবার। এই অনুভূতি নিয়ে আমরা আরও ভালো সমাজ, আরও ভালো বিশ্ব গড়ে তুলতে পারি।

বর্তমানে ভারত ও ফ্রান্সের মধ্যে কৌশলগত বোঝাপড়া অনেক বেড়েছে। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কে এই নতুন মাত্রা কে এনেছেন? এটা মোদী করেননি, করেছেন আপনারা। দুই দেশের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস ও আস্থাই এই শক্তিশালী ভিত্তি গড়ে তুলেছে।

ঐতিহ্য বা ইতিহাস, শিল্প, হস্তশিল্প বা সৃজনশীলতা, সংস্কৃতি, ফ্যাশন বা সিনেমা, এই সব কিছুই আমাদের একসূত্রে বেঁধেছে।

বন্ধুগণ,
ফ্রান্সের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক দীর্ঘ দিনের এবং আমি তা  কখনও ভুলবো না। প্রায় ৪০ বছর আগে গুজরাতের আমেদাবাদে ফ্রান্সের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র অ্যালিয়াঁ ফ্রাঁসোয়া তৈরি হয়েছিল এবং সেই সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের প্রথম সদস্য ছিলাম আমি, যাকে আপনারা এখানে দেখতে পাচ্ছেন। ভারত ও ফ্রান্সের ঐতিহাসিক সম্পর্কের ভিত্তি রয়েছে। ২০১৫তে ফ্রান্স সফরের সময় আমি ন্যুভে শাপেলে  গিয়েছিলাম। সেখানে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নিহত হাজার হাজার ভারতীয় সেনা শায়িত রয়েছেন। এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ১০০ বছরের এক আবেগঘন সম্পর্ক। যে কোনও ভারতীয়ের কাছে এটা কি গর্বের নয়।

বন্ধুগণ,
ফ্রান্স আমাদের কাছে স্বাধীনতা, সাম্য এবং সৌভ্রাতৃত্বের প্রতীক। ভারতে ১০০র বেশি ভাষা রয়েছে এবং হাজারের বেশি আঞ্চলিক ভাষা রয়েছে। প্রতিদিন ১০০টির বেশি ভাষায় ৩২,০০০ এর বেশি বিভিন্ন ধরনের সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়ে থাকে। বর্তমানে ১০০টির বেশি ভাষায় ৯০০টির বেশি খবরের চ্যানেল ও টেলিভিশন চ্যানেল রয়েছে। এছাড়া ১০০টির বেশি ভাষায় প্রায় ৪০০টি রেডিও চ্যানেল রয়েছে। ভারতে বিভিন্ন অঞ্চলের স্কুলগুলিতে প্রায় ১০০টি ভাষায় শিক্ষা দেওয়া হয়। অনেকেই হয়তো জানেন না যে, তামিল হল বিশ্বের প্রাচীনতম ভাষা।

বন্ধুগণ,
এখন গোটা বিশ্ব ভারতে ভাষার বৈচিত্র্য উপভোগ করছে। কয়েকদিন আগে আপনারা হয়তো দেখেছেন, টেনিস কিংবদন্তী রজার ফেডারারকে উইম্বলডনে “থ্যালাইভা” নামে ডাকা হচ্ছে। এই বৈচিত্র্যই আমাদের গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় শক্তি। এই শক্তিকেই পুঁজি করেই প্রত্যেক ভারতীয় তাঁর স্বপ্ন পূরণ করছেন এবং দেশ ও বিশ্বকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।  গত ১০ বছরের মধ্যে ভারত দশম থেকে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম আর্থিক শক্তির দেশ হয়ে উঠেছে। গোটা বিশ্ব এখন বিশ্বাস করতে শুরু করেছে যে, ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে পৌঁছতে ভারতের আর দীর্ঘ সময় লাগবে না। রাষ্ট্রসংঘের রিপোর্টে আপনারা দেখেছেন, ১০-১৫ বছরের মধ্যে ৪১৫ মিলিয়ন বা  প্রায় ৪২ কোটি ভারতবাসীকে দারিদ্রসীমার উপরে উঠে এসেছেন। ৪১৫ মিলিয়ন, গোটা ইউরোপের জনসংখ্যার চেয়ে বেশি। এমনকী আমেরিকার চেয়েও বেশি।

বন্ধুগণ,
আজকের যুগ হল প্রযুক্তির যুগ। ২১ শতকের প্রয়োজনীয়তার কথা বিবেচনা করে আমরা নতুন শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছি। একুশ শতক হবে প্রযুক্তি ও মেধার। সে দিকে লক্ষ্য রেখেই ভারত ও ফ্রান্স মজবুত অংশীদারিত্ব গড়ে তুলছে।  আমরা দুই দেশ মিলে মহাকাশের ক্ষেত্রে বেশ কিছু কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। মহাকাশ ছাড়াও অন্যান্য বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে ভারত ও ফ্রান্স একজোট হয়েছে, যা বিশ্বকে নতুন দিশা দেখাতে পারে। বর্তমানে বিশ্বের ডিজিটাল লেনদেনের ৪৬ শতাংশ ভারতে হয়ে থাকে।

বন্ধুগণ,
আপনারাই ভারতের দূত। আমি জানি, ভারতীয়রা সর্বত্রই ছড়িয়ে রয়েছে। কিন্তু তাদের হৃদয় সবসময় ভারতেই পড়ে থাকে। আমি আপনাদের কাছে ভারতে লগ্নির জন্য আবেদন জানাচ্ছি। আগামী ২৫ বছরের মধ্যে ভারত উন্নত দেশে পরিণত হবে। আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করে চলেছি। সেক্ষেত্রে আপনার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারতে বর্তমানে লগ্নির অভূতপূর্ব সম্ভাবনা রয়েছে। আমি বলছি, এটাই লগ্নির সঠিক সময়। ফ্রান্সের মতো ভারতের বহু বন্ধু দেশ রয়েছে, যারা শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে আমাদের সঙ্গে যুক্ত। ফ্রান্সে কোনও ভারতীয় ছাত্র স্নাতকোত্তর স্তরে পড়াশোনা করলে, তাঁকে ৫ বছরের জন্য ভিসা দেওয়া হবে।

বন্ধুগণ,
ভারত হল বৈচিত্র্যে ভরা এক বিশাল দেশ। পাহাড়, সমুদ্র, নদী, মরুভূমি সবকিছুই এখানে রয়েছে। ফ্রান্সের ভারতীয়দের কাছে আমার অনুরোধ, আপনারা বন্ধুদের নিয়ে ভারতে আসুন। আপনারা যখন ভারতে আসবেন, তখন শুধু এর ঐতিহ্য নয়,
ভারতের উন্নয়নের গতিও প্রত্যক্ষ করবেন।

বন্ধুগণ,
আসুন, আমাদের পূর্ণ শক্তি, আমাদের অভিজ্ঞতা, আমাদের যোগাযোগ এবং আমাদের সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে  আমরা ফ্রান্সের নাগরিকদের ভারতের সঙ্গে যুক্ত করার অঙ্গীকার করি। আপনি যখন দেশে আসবেন, তাঁদেরও সঙ্গে করে ভারতে নিয়ে আসুন। ভারতকে জানার জন্য তাঁদের উৎসাহিত করুন। মানুষে মানুষে যোগাযোগ বাড়লে পর্যটনও বিকশিত হবে। আমি বিশ্বাস করি, আমার এই উদ্যোগে আপনারাও পিছিয়ে থাকবেন না। আপনারা এখানে বিপুল সংখ্যায় এসেছেন এবং আমি আপনাদের সঙ্গে মিলিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছি। আমি আপনাদের প্রতি অন্তরের কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ। আমার সঙ্গে বলুন,
ভারত মাতা কি জয়,
ভারত মাতা কি জয়,
ধন্যবাদ।

প্রধানমন্ত্রী মূল ভাষণটি দিয়েছেন হিন্দিতে।