Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

প্যারিসে চুক্তি স্বাক্ষরের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস বিবৃতি


নয়াদিল্লি, ১১ এপ্রিল, ২০১৫ রাষ্ট্রপতি অল্যান্দ এবং উপস্থিত সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিবৃন্দ, ফ্রান্সে এসে আমি খুব খুশি হয়েছি। রাষ্ট্রপতি অল্যান্দ এবং ফ্রান্সের জনসাধারণ আমাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানোয় আমি তাঁদের আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। এটি ইউরোপে আমার প্রথম সফর। এই সফর আমি ফ্রান্স থেকে শুরু করলাম। এটা ভারত ও ফ্রান্সের মধ্যে সুগভীর সম্পর্কের প্রতীক এবং এই সম্পর্ক কতো প্রাচীন ও কতো গুরুত্বপূর্ণ তার প্রতীক আর আগামীদিনে এই সম্পর্ক কতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে তারও ইঙ্গিত দিচ্ছে। ভারতের সব থেকে ঘনিষ্ঠ ও আস্থাভাজন মিত্র রাষ্ট্রগুলির মধ্যে অন্যতম হল ফ্রান্স। রাষ্ট্রপতি অল্যান্দ যেমন বলেছেন, আমরা বেশ কিছু বিষয়ে সুদীর্ঘ ঐতিহ্য সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে চলেছি। ভাল সময়ে যেমন, ঠিক তেমনই খারাপ সময়েও ফ্রান্স ভারত’কে সমর্থন জানিয়ে এসেছে আর সঙ্গে থেকেছে। দুটি দেশই গণতন্ত্রের দুই বড় নজির। আমাদের মূল্যবোধ একে-অপরের মতো এবং বেশ কিছু ক্ষেত্রে একে-অপরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ও একে-অপরের পরিপূরকও বটে। আমাদের দুই দেশের সম্পর্ক ব্যাপক, ভূমি থেকে আকাশ, সাগর থেকে অন্তরীক্ষ আর এখন সাইবার ক্ষেত্র পর্যন্তও আমাদের সহযোগিতা চালু রয়েছে। এমন কোনও বিষয় নেই যেখানে ফ্রান্স ও ভারতের মধ্যে অংশীদারিত্ব নেই। আজ আমার এবং রাষ্ট্রপতি অল্যান্দের মধ্যে খুব ভালো আলোচনা হয়েছে। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আমাদের সম্পর্ক যেমন প্রাচীন তেমনই গভীর। প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে ফ্রান্স সবসময়েই এক আস্থাভাজন সরবরাহকারী। ফাইটার জেট বিমান থেকে সাবমেরিন সব ক্ষেত্রেই আমাদের সুন্দর সহযোগিতা রয়েছে। ভারতে যুদ্ধ বিমানের প্রয়োজনীয় আশু চাহিদার দিকে লক্ষ্য রেখে আমি ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতির কাছে দু’দেশের সরকারের মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে যত শীঘ্র সম্ভব ৩৬টি রাফায়েল জেট ফ্লাই অ্যাওয়ে কন্ডিশনে ক্রয়ের কথা বলেছি। আমরা দু’জনে এও ঠিক করেছি যে, ভারতের জন্য এই ক্রয়ের শর্তাবলী উপযুক্তভাবে সংশোধিত হবে। এই সঙ্গেই রাষ্ট্রপতি অল্যান্দ প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে মেক ইন ইন্ডিয়া কর্মসূচিকে পূর্ণ সমর্থন যুগিয়েছেন আর বলেছেন, মেক ইন ইন্ডিয়া কেবল প্রকল্প মাত্রই নয় বরং একে উচ্চাকাঙ্খার এক প্রতিরূপ বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে। ভারত এবং ফ্রান্সের সংস্থাগুলি একসঙ্গে মিলে ভারতের প্রতিরক্ষা উপকরণ বাড়াবে আর তারই সঙ্গে প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিরও বিকাশ ঘটাবে। এই প্রসঙ্গে আজ ফ্রান্সের প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলির সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আজ আমি ভারত ও ফ্রান্সের প্রতিরক্ষা অংশীদারিত্বকে এক নতুন স্তরে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছি। পরমাণু শক্তি ক্ষেত্রে ফ্রান্স ভারতের প্রধান অংশীদারগুলির মধ্যে অন্যতম। জৈতাপুরে ৬টি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বানানোর ব্যাপারে আমরা যথেষ্ট অগ্রগতি লাভ করেছি। বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ কম করার ব্যাপারে আরও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা ও সমীক্ষার জন্য আজ দু’পক্ষের মধ্যে সমঝোতা রয়েছে। বিশেষ করে, আজ আরেভা এবং এল অ্যান্ড টি.’র মধ্যে ভারতের উপকরণ নির্মাণে সমঝোতা হয়েছে যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি মেক ইন ইন্ডিয়ার এক উৎকৃষ্ট নজির হয়ে থাকবে এবং উন্নত প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ভারতের নতুন অবস্থান লাভে সাহায্য করবে। আন্তর্জাতিক রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার সদস্যপদ লাভের জন্য ফ্রান্সের সমর্থন পাওয়ায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী জানান, ভারত ও ফ্রান্সের মধ্যে মহাকাশ সংক্রান্ত সহযোগিতার মেয়াদ পঞ্চাশ বছর পূর্ণ হয়েছে। অল্যান্দ ও প্রধানমন্ত্রী আজ এই উপলক্ষে ভারত ও ফ্রান্সের এক যৌথ ডাকটিকিট প্রকাশ করেছেন। দুটি দেশ একসঙ্গে কৃত্রিম উপগ্রহ নির্মাণ ও উৎক্ষেপণের সহযোগিতা বাড়িয়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভারতের মঙ্গলযান মিশনের পর আমরা এবার দু’জনে মিলে গ্রহ অনুসন্ধানের পথেও পা বাড়াব। পৃথিবীতে এখন সব থেকে দ্রুতগতিতে আর্থিক বিকাশ হচ্ছে ভারতে। ভারতের এই বিকাশে ফ্রান্সের আরও বড় ভূমিকা থাকতে পারে এবং এই ক্ষেত্রেও তার আর্থিক লাভ হবে। আজ সকালে পরিকাঠামো ক্ষেত্রে ফ্রান্সের শিল্পপতিদের সঙ্গে আমার আলোচনা হয়। রাষ্ট্রপতি অল্যান্দ এবং প্রতিরক্ষা শিল্প ফোরামের সব সি.ই.ও.দের সঙ্গেও আমার বৈঠক হয়। ফ্রান্সের সংস্থাগুলি ভারতে বিনিয়োগ বাড়াবে বলে আমার বিশ্বাস। ভারতে রেল পরিকাঠামোর পুনর্নবীকরণেও তারা সহযোগিতা করবে বলে মনে হচ্ছে। আমার সরকারের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ যেমন কর্মমুখী, দক্ষতা বৃদ্ধি, পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তি, শক্তি দক্ষতা, স্মার্ট সিটিজ, ডিজিটাল ইন্ডিয়া প্রভৃতি ক্ষেত্রেও আমরা ফ্রান্সের সঙ্গে মিলে এগিয়ে যাব। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি আমাদের দু’দেশের সম্পর্কের প্রধান স্তম্ভ। আজ দুটি গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতা হয়েছে। মহাসাগরীয় অর্থনীতির ধারাবাহিক বিকাশ অর্থাৎ ব্লু রেভেলিউশনের ওপর আমি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকি। এই সঙ্গেই সামুদ্রিক জীববিদ্যা ক্ষেত্রে দু’দেশের সমঝোতাকে অত্যন্ত স্বাগত জানাই। ফ্রান্স আমাদের সঙ্গে নাগরিক উত্তরাধিকার এবং পর্যটন উন্নয়নে সহযোগিতা করায় আমি অত্যন্ত আনন্দিত। কারণ, এইসব ক্ষেত্রে ফ্রান্সের সক্ষমতার ব্যাপারে সকলেরই জানা আছে। রাষ্ট্রপতি অল্যান্দকে একথা জানাতে পেরে আমি অত্যন্ত সন্তুষ্ট হয়েছি যে, ফরাসি নাগরিকদের বৈদ্যুতিন ভ্রমণ বৈধতা প্রদানের মাধ্যমে সহজে ভারত সফরের সুবিধা দেওয়া হবে। এই ব্যবস্থা দু’দেশের সম্পর্ককে যেমন ঘনিষ্ঠ করে, ঠিক তেমনই পর্যটন ক্ষেত্রেও আনে সরলতা। আজ আমরা যেসব সমঝোতা করেছি তার ফলে দুটি দেশেই লেখাপড়ার পর আমাদের ছাত্ররা আরও কিছুদিন থেকে পেশাদারী প্রশিক্ষণ নিতে পারবে আর এতে তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে। আজ বিশ্ব এক সঙ্কটপূর্ণ পরিস্থিতির সম্মুখীন। বেশ কিছু ক্ষেত্রে চলছে উথাল-পাথাল আর সব দেশই এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পরিবর্তনশীল এই বিশ্বে স্থিতিশীলতা নিয়ে নানা অনিশ্চিত প্রশ্ন দেখা দেয়। সমুদ্র সংক্রান্ত, সাইবার এবং মহাকাশ সুরক্ষা নিয়ে সবারই যথেষ্ট উদ্বেগের কারণ রয়েছে। এইসব ক্ষেত্রে একদিকে সন্ত্রাস বাড়ছে আর অন্যদিকে নতুন নতুন আশঙ্কার সৃষ্টি হচ্ছে। বিশ্বের অনেক দেশ এইসব সঙ্কটের মুখে পড়েছে। প্যারিসই হোক কিংবা মুম্বাই, ভারত আর ফ্রান্স একে অপরের দুঃখ উপলব্ধি করেছে এবং একসঙ্গে তা সয়েছে। বিশ্ব জোড়া এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় এক ব্যাপক আবিশ্ব কৌশল গ্রহণের আবশ্যকতা রয়েছে। প্রত্যেকটি দেশেরই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে পূর্ণ সমর্থন দেওয়ার দায়িত্ব ও কর্তব্য যেমন আছে, তেমনই সন্ত্রাসবাদীদের যথা শীঘ্র সম্ভব শাস্তি দেওয়ারও কর্তব্য রয়েছে। ভারত ও ফ্রান্স উভয়েই এইসব সমস্যাকে একই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দেখে আর সেই কারণেই আমরা আমাদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত সহযোগিতাকে আরও ঘনিষ্ঠ করে তুলব। এই প্রসঙ্গে আমরা ভারত মহাসাগরের বিষয়ে মতামত আদান-প্রদান করব। রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কারসাধন আমাদের দু’দেশেরই যৌথ দায়িত্ব। নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যপদ লাভে ভারতের দাবীকে ফ্রান্সের সমর্থনের জন্য আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। চলতি বছরের শেষে প্যারিসে আয়োজিত কপ-২১ সম্মেলনে ফ্রান্সের নেতৃত্বে বিশ্বের জন্য এক নতুন পথ মানচিত্র তৈরি হবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। জলবায়ু পরিবর্তন এবং শক্তি ক্ষেত্রে ভারত ও ফ্রান্স একসঙ্গে নিজেদের সহযোগিতাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। পরিশেষে আমি আবার ফরাসি রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ জানাই। আমাদের কৌশলগত অংশীদারিত্ব আজ এমন এক উচ্চতায় পৌঁছে গেছে, যা দু’দেশের নাগরিকদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ উপহার দেওয়া এবং বিশ্বে শান্তি, সুরক্ষা ও সমৃদ্ধি সুনিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। অনেক অনেক ধন্যবাদ।