Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

প্যারিসে এআই অ্যাকশন সামিট – এ প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর উদ্বোধনী ভাষণ

প্যারিসে এআই অ্যাকশন সামিট – এ প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর উদ্বোধনী ভাষণ


নয়াদিল্লি, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

 

মাননীয় ব্যক্তিবর্গ,

বন্ধুগণ,

একটা সহজ পরীক্ষা দিয়ে আমার কথা শুরু করি।

আপনি যদি আপনার মেডিকেল রিপোর্ট কোনো একটি এআই অ্যাপ – এ আপলোড করেন, তা হলে সেখানে চিকিৎসা বিষয়ক জটিল শব্দবন্ধ ছাড়াই সহজ ভাষায় বলে দেওয়া হবে যে, আপনার স্বাস্থ্য নিয়ে ওই রিপোর্টে কী বলা হয়েছে। কিন্তু, আপনি যদি ওই একই অ্যাপ – এ এমন কারও ছবি আঁকতে বলেন, যিনি বাম হাত দিয়ে লেখেন, তা হলে খুব সম্ভবত, অ্যাপ – এ এমন একজনের ছবি আঁকা হবে, যিনি ডান হাতে লেখেন। এর কারণ হ’ল – সেখানে যে ডেটা রয়েছে, তা এই রকমই নির্দেশ দেয়।

এর থেকে বোঝা যায় যে, এআই – এর ইতিবাচক সম্ভাবনা অসামান্য হলেও এমন অনেক ক্ষেত্র রয়েছে, যেগুলি নিয়ে আমাদের সাবধানতার সঙ্গে এগোতে হবে। সেজন্যই এই সামিট আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়ায় এবং এতে আমাকে সহ-পৌরহিত্য করার অনুরোধ জানানোয় আমি আমার বন্ধু প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রঁর কাছে কৃতজ্ঞ।

বন্ধুগণ,

এআই ইতিমধ্যেই আমাদের রাজনীতি, অর্থনীতি, সুরক্ষা, এমনকি সমাজকেও নতুন চেহারা দিচ্ছে। এআই এই শতাব্দীতে মানবতার নতুন বিধি লিখছে। মানবসভ্যতার ইতিহাসে প্রযুক্তির অন্য যেসব মাইলফলক এসেছে, তার থেকে এটি একেবারেই আলাদা।

অভূতপূর্ব মাত্রা ও গতিতে এআই – এর বিকাশ হচ্ছে। এর গ্রহণ ও নিয়োগ হচ্ছে আরও দ্রুতগতিতে। সীমান্ত ছাপিয়ে এই নিয়ে সুগভীর পারস্পরিক নির্ভরতাও রয়েছে। তাই, এআই – এর পরিচালনা ও মান প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্বব্যাপী সম্মিলিত প্রয়াসের প্রয়োজন। এমন এক মান স্থির করা দরকার, যা আমাদের অভিন্ন মূল্যবোধকে গুরুত্ব দেবে, ঝুঁকিসমূহের মোকাবিলা করবে এবং আস্থা স্থাপনে সহায়ক হবে।

পরিচালনা বলতে কিন্তু শুধু ঝুঁকি ও রেষারেষির মোকাবিলাকেই বোঝায় না। উদ্ভাবনকে উৎসাহ দেওয়া এবং বিশ্বকল্যাণে তা কাজে লাগানোও এর অন্তর্ভুক্ত। তাই, উদ্ভাবন এবং পরিচালন ব্যবস্থা নিয়ে আমাদের গভীরভাবে ভাবতে ও আলোচনা করতেই হবে।

পরিচালনার আরেকটি ক্ষেত্র হ’ল – এর সুফল সবার কাছে, বিশেষত উন্নয়নশীল দেশগুলির কাছে পৌঁছে দেবে। কারণ, সেইসব দেশে গণনার ক্ষমতা, প্রতিভা, ডেটা, আর্থিক সম্পদ সবকিছুরই অভাব রয়েছে।

বন্ধুগণ,

স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের উন্নয়ন ঘটিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনকে বদলে দেওয়ার ক্ষেত্রে এআই বড় ভূমিকা নিতে পারে। এআই এমন এক বিশ্ব তৈরি করতে পারে, যেখানে সুস্থিত উন্নয়ন লক্ষ্যের দিকে যাত্রা অনেক দ্রুত ও সহজ হয়ে উঠবে।

এটা করতে হলে আমাদের সম্পদ ও প্রতিভাকে কাজে লাগাতে হবে। আমাদের এমন এক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যাতে আস্থা ও স্বচ্ছতা বাড়ে। পক্ষপাতিত্ব ছাড়া উন্নতমানের ডেটাসেট গড়ে তুলতে হবে। আমাদের প্রযুক্তির গণতান্ত্রিকীকরণ ঘটাতে হবে, এর প্রয়োগ করতে হবে নাগরিক-কেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে। সাইবার সুরক্ষা, ভুয়ো তথ্য ও ডীপফেক নিয়ে উদ্বেগের মোকাবিলা করতে হবে। প্রযুক্তিকে কার্যকর ও ব্যবহার উপযোগী করে তুলতে তা যাতে স্থানীয় পরিমণ্ডলের মধ্যে শিকড় গেড়ে বসতে পারে, তা আমাদের সুনিশ্চিত করতে হবে।

বন্ধুগণ,

এআই নিয়ে সবচেয়ে বড় ভয় হ’ল, এর ফলে অনেক মানুষ কাজ হারাবেন। কিন্তু, ইতিহাস বারংবার সাক্ষ্য দিয়েছে যে, প্রযুক্তির জন্য কাজ চলে যায় না। কাজের প্রকৃতি বদলায়, নতুন ধরনের কাজ সৃষ্টি হয়। এআই চালিত ভবিষ্যতের জন্য আমাদের মানুষজনকে দক্ষতাসম্পন্ন করে তুলতে বিনিয়োগ করতে হবে।

বন্ধুগণ,

এআই – এর জন্য যে ব্যাপক শক্তির প্রয়োজন, তা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। ভবিষ্যতের জন্য আমাদের দূষণমুক্ত শক্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

সৌরশক্তিকে সহজভাবে কাজে লাগাতে ভারত ও ফ্রান্স বেশ কিছু বছর ধরে আন্তর্জাতিক সৌর জোটের মতো বিভিন্ন উদ্যোগে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করছে। আজ যখন আমাদের এই অংশীদারিত্ব এআই – এর ক্ষেত্র প্রসারিত হচ্ছে, তখন তা এক স্বাভাবিক অগ্রগতি। একটি স্মার্ট ও দায়িত্বশীল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে আমরা সুস্থিতি থেকে উদ্ভাবনের দিকে অগ্রসর হচ্ছি।

একইসঙ্গে, সুস্থিত এআই বলতে শুধু দূষণমুক্ত শক্তির ব্যবহারকেই বোঝায় না। এআই মডেলগুলিকে আকার, ডেটার চাহিদা এবং সম্পদের প্রয়োজনীয়তার সঙ্গে যথাযথ হয়ে উঠতে হবে। দেখুন, মানুষের মস্তিষ্ক কবিতাও লেখে আবার মহাকাশযানের নক্‌শাও তৈরি করে। অথচ, তার জন্য একটা বাল্ব জ্বালাতে যতটা শক্তির প্রয়োজন, তারচেয়ে কম শক্তি লাগে।

বন্ধুগণ,

ভারত খুব অল্প খরচে এক ডিজিটাল গণপরিকাঠামো গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। এক মুক্ত এবং সবার নাগালের মধ্যে থাকা নেটওয়ার্ককে ঘিরে এই পরিকাঠামো গড়ে উঠেছে। এখানকার বিধিনিয়ম ও প্রয়োগ আমাদের অর্থনীতির আধুনিকীকরণ ঘটাচ্ছে, শাসন ব্যবস্থার সংস্কারসাধন করছে এবং আমাদের মানুষজনের জীবন বদলে দিচ্ছে।

আমাদের ডেটা ক্ষমতায়ন ও সুরক্ষা স্থাপত্যের মাধ্যমে আমরা ডেটার ক্ষমতার প্রয়োগ ঘটাচ্ছি। ডিজিটাল বাণিজ্যকে আমরা সবার নাগালের মধ্যে এনে এর গণতান্ত্রিকীকরণ সম্ভব করেছি। এই দৃষ্টিভঙ্গীই হ’ল ভারতের ভারতের জাতীয় এআই মিশনের মূল ভিত্তি।

সেজন্যই আমাদের জি-২০ সভাপতিত্বের সময়ে আমরা এআই – এর ব্যবহার দায়িত্বশীলতার সঙ্গে সকলের কল্যাণের জন্য করার বিষয়ে ঐকমত্য গড়ে তুলেছিলাম। ভারত আজ এআই – এর প্রয়োগ এবং ডেটা সুরক্ষার ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত ও আইনি সমাধানের বিষয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছে।

আমরা মানুষের কল্যাণের জন্য এআই – এর প্রয়োগ ঘটাচ্ছি। বিশ্বের বৃহত্তম এআই বিষয়ক প্রতিভা আমাদেরই রয়েছে। আমাদের বৈচিত্র্যের দিকে লক্ষ্য রেখে আমরা আমাদের নিজস্ব বৃহৎ ভাষা মডেল তৈরি করছি। গণন ক্ষমতার মতো বিভিন্ন সম্পদের জন্য আমরা এক অনন্য সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব মডেল তৈরি করেছি। আমাদের স্টার্টআপ ও গবেষকরা সুলভে এর সুবিধা পাচ্ছেন। সবাই যাতে এআই – এর সুফল ভোগ করতে পারেন, সেজন্য ভারত তার অভিজ্ঞতা ও বিশেষ জ্ঞান বিশ্বের সঙ্গে ভাগ করে নিতে প্রস্তুত।

বন্ধুগণ,

আমরা এআই যুগের ভোরে দাঁড়িয়ে রয়েছি। এ এমন এক যুগ, যা মানবতার গতিপথ বদলে দেবে। কেউ কেউ ভয় পাচ্ছেন যে, যন্ত্র হয়তো মানুষের চেয়ে বেশি বুদ্ধিমান হয়ে উঠবে। কিন্তু মনে রাখবেন যে, আমাদের সম্মিলিত ভবিষ্যতের চাবিকাঠি এবং অভিন্ন গন্তব্য আমাদেরই হাতে রয়েছে।

দায়িত্বশীলতার এই বোধ যেন আমাদের পথ দেখায়।

ধন্যবাদ।

 

SC/SD/SB