Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

পশ্চিমবঙ্গের ৩৭টি সহ দেশের মোট ৫০৮টি রেল স্টেশনের পুনরুন্নয়ন প্রকল্পের আজ শিলান্যাস করলেন প্রধানমন্ত্রী

পশ্চিমবঙ্গের ৩৭টি সহ দেশের মোট ৫০৮টি রেল স্টেশনের পুনরুন্নয়ন প্রকল্পের আজ শিলান্যাস করলেন প্রধানমন্ত্রী


নয়াদিল্লি, ০৬ অগাস্ট, ২০২৩

পশ্চিমবঙ্গের ৩৭টি সহ সারা দেশের মোট ৫০৮টি রেল স্টেশনের পুনরুন্নয়ন প্রকল্পের আজ শিলান্যাস করলেন প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী। আজ এখানে এক ভিডিও কনফারেন্সের মঞ্চে ২৪ হাজার ৪৭০ কোটি টাকার এই প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নতুন ভারত ‘বিকশিত ভারত’ – এর লক্ষ্যে উপনীত হওয়ার জন্য বর্তমান অমৃতকালে দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে চলেছে। দেশে এখন নতুন উৎসাহ, উদ্দীপনা এবং নতুন সংকল্প গ্রহণের পরিবেশ ও পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ভারতীয় রেলের ইতিহাসে আজ এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হ’ল। দেশের প্রায় ১ হাজার ৩০০টি প্রধান প্রধান রেল স্টেশনকে এখন আধুনিকতার মিশ্রণে নতুন করে গড়ে তোলা হবে। এগুলির সংজ্ঞা নির্ধারণ হবে ‘অমৃত ভারত স্টেশন’ রূপে, যার মধ্যে নতুন জীবনের স্পর্শ খুঁজে পাওয়া যাবে। এর মধ্যে ৫০৮টি ‘অমৃত ভারত স্টেশন’ – এর শিলান্যাস পর্ব আজ অনুষ্ঠিত হ’ল। 

শ্রী মোদী বিশেষ জোর দিয়ে বলেন, নতুন এই পুনরুন্নয়ন প্রকল্প ভারতের পরিকাঠামো উন্নয়নের দ্যোতক হয়ে থাকবে। রেল স্টেশনের পাশাপাশি, সাধারণ নাগরিকদের জীবনেও এর অনুরণন ঘটবে এবং এর সুফল পৌঁছে যাবে দেশের সবকটি রাজ্যেই। প্রধানমন্ত্রী জানান, উত্তর প্রদেশ ও রাজস্থানের ৫৫টি ‘অমৃত ভারত স্টেশন’ ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে তোলা হবে। অন্যদিকে, ১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন সাজে সজ্জিত হবে মধ্যপ্রদেশের ৩৪টি স্টেশন। আবার, মহারাষ্ট্রের ৪৪টি স্টেশনের আধুনিকীকরণ হবে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে। এছাড়াও, তামিলনাডু, কর্ণাটক এবং কেরলের প্রধান প্রধান স্টেশনগুলিকেও এই পুনরুন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। দেশের অন্যান্য রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভিন্ন রেল স্টেশনের পুনরুন্নয়নও এই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত। রেল মন্ত্রকের এই উদ্যোগ ও প্রচেষ্টার ভুয়সী প্রশংসার পাশাপাশি, দেশের সাধারণ নাগরিকদেরও এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী থাকার জন্য অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী। 

বর্তমান বিশ্বে ভারতের ভাবমূর্তি যেভাবে দিন দিন উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে, তার একটি চিত্র তুলে ধরে শ্রী মোদী বলেন, ভারত সম্পর্কে অন্যান্য রাষ্ট্রের আগ্রহ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। এই সাফল্যের জন্য দুটি বিষয়কে চিহ্নিত করেন তিনি। প্রথমত, দেশের সাধারণ নাগরিক দ্বারা নির্বাচিত সংখ্যাগরিষ্ঠ এক স্থায়ী সরকার এবং দ্বিতীয়ত, বর্তমান সরকারের নিরন্তর উন্নয়ন প্রচেষ্টা ও উচ্চাকাঙ্খামূলক কর্মসূচি রূপায়ণের লক্ষ্যে দ্রুততার সঙ্গে গৃহীত সিদ্ধান্ত। ভারতীয় রেলেও উন্নয়নের এই প্রতিফলন আজ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। গত ৯ বছরে ভারতে অন্যান্য দেশের তুলনায় রেল পথের সম্প্রসারণ ঘটেছে অনেক গুণ বেশি। শুধুমাত্র গত বছরেই দক্ষিণ কোরিয়া, নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার সম্মিলিত রেলপথের তুলনায় ভারতীয় রেলের প্রসার ঘটেছে বহুগুণ। রেল যাত্রাকে মনোরম ও স্বচ্ছন্দ করে তুলতে সরকারি প্রচেষ্টার কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ট্রেনের যাত্রাপথ থেকে শুরু করে স্টেশন পর্যন্ত পৌঁছনো অবধি শ্রেষ্ঠ অভিজ্ঞতা সকলের মধ্যে ভাগ করে নেওয়ার জন্য সর্বতোভাবে প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। 

ভারতীয় রেলকে দেশের জীবনরেখা বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনও কোনও শহরের পরিচিতি রেল স্টেশনগুলির সঙ্গেও যুক্ত রয়েছে। সময়ের সাথে সাথে তা হয়ে উঠেছে দেশের শহরগুলির হৃদস্পন্দনও। এই কারণেই রেল স্টেশনগুলিকে আধুনিক করে তোলার তাগিদ আমরা অনুভব করেছি। এতগুলি স্টেশনে আধুনিকীকরণ উন্নয়নের এক নতুন বাতাবরণ গড়ে তুলবে। উন্নতমানের স্টেশনগুলিতে পর্যটন আকর্ষণই শুধুমাত্র বৃদ্ধি পাবে না, একই সঙ্গে তা অর্থনৈতিক কর্মপ্রচেষ্টাকেও উৎসাহ যোগাবে। ‘একটি স্টেশন, একটি পণ্য’ এই কর্মসূচির মাধ্যমে দেশের শিল্পী ও কারিগররা তাঁদের শিল্প নিদর্শন স্টেশনগুলিতে প্রদর্শন করার সুযোগ পাবেন। 

শ্রী মোদী বলেন, অমৃত স্টেশনগুলির মাধ্যমে ভারতের সাংস্কৃতিক, আঞ্চলিক তথা স্থানীয় ঐতিহ্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটবে। প্রতিটি আধুনিক স্টেশনেই সুপ্রাচীন ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিক যুগের আশা-আকাঙ্খার প্রতীকী ব্যঞ্জনা ফুটে উঠবে। 

দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে রেলের ক্রমবর্ধমান ভূমিকার প্রসঙ্গটি উত্থাপন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রেলে এ পর্যন্ত বিনিয়োগের পরিমাণ এক রেকর্ড-বিশেষ বলা যেতে পারে। এ বছর ২.৫ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি বাজেট সংস্থান রয়েছে ভারতীয় রেলের, যা কিনা ২০১৪’র বাজেট বরাদ্দের তুলনায় প্রায় ৫ গুণ। এক সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলেছে দেশের রেল ব্যবস্থা। গত ৯ বছরে রেল ইঞ্জিনের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৯ গুণ। অন্যদিকে, এইচএলবি কোচের উৎপাদনও বৃদ্ধি পেয়েছে পূর্বের তুলনায় ১৩ গুণ বেশি। 

দেশের উত্তর – পূর্বাঞ্চলে রেলপথ সম্প্রসারণের কথা তুলে ধরে শ্রী মোদী বলেন, এই অঞ্চলের সার্বিক প্রসার ও উন্নয়নে রেলের গেজ রূপান্তর, বৈদ্যুতিকরণ এবং নতুন নতুন রুটের সম্প্রসারণ ঘটছে। খুব শীঘ্রই উত্তর – পূর্ব ভারতের সবকটি রাজ্যের রাজধানী যুক্ত হবে রেল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে। শুধু তাই নয়, বিগত ৯ বছরে ২ হাজার ২০০ কিলোমিটারেরও বেশি পণ্য পরিবহণ করিডর দেশে গড়ে তোলা হয়েছে। এর ফলে, পণ্যবাহী ট্রেনগুলির যাতায়াতের সময়ও অনেকটাই কমে এসেছে। ২০১৪ সালের আগে দেশে রেল সেতুর সংখ্যা ছিল ৬ হাজারেরও কম। তুলনায়, বর্তমানে এই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজারেরও বেশি। প্রহরাবিহীন লেভেল ক্রসিং – এর সংখ্যাও বর্তমানে শূন্য। বয়স্ক নাগরিক এবং দিব্যাঙ্গজন যাতে ভালোভাবে রেল ভ্রমণ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করার উপরও আমরা বিশেষ জোর দিয়েছি।

আধুনিকতার পাশাপাশি, রেলের পরিবেশ ও পরিস্থিতিকে পরিবেশ-বান্ধব করে তোলার উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের রেল নেটওয়ার্কে দূষণের মাত্রা পুরোপুরি শূন্যে নামিয়ে আনা হবে বলে ঘোষণা করেন তিনি। এই প্রচেষ্টার পাশাপাশি, ভারতীয় রেল তথা সরকারি কর্মকান্ডের প্রতিটি ক্ষেত্রে দুর্নীতি, বংশানুক্রমিক শাসন ব্যবস্থা এবং তোষণ নীতির অবসান ঘটানো হবে বলে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। 

দেশের যে ৫০৮টি স্টেশনের পুনরুন্নয়ন প্রকল্পের আজ শিলান্যাস হ’ল, তাতে উপকৃত হবে দেশের ২৭টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। উত্তর প্রদেশ ও রাজস্থানের ৫৫টি করে, বিহারের ৪৯টি, মহারাষ্ট্রের ৪৪টি, পশ্চিমবঙ্গের ৩৭টি, মধ্যপ্রদেশের ৩৪টি, আসামের ৩২টি, ওডিশার ২৫টি, পাঞ্জাবের ২২টি, গুজরাট ও তেলেঙ্গানার ২১টি করে, ঝাড়খন্ডের ২০টি, অন্ধ্রপ্রদেশ ও তামিলনাডুর ১৮টি করে, হরিয়ানার ১৫টি এবং কর্ণাটকের ১৩টি স্টেশনের পুনরুন্নয়ন এই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত। 

রেল স্টেশনগুলির পুনরুন্নয়ন ও আধুনিকীকরণের ফলে যাত্রা স্বাচ্ছন্দ্য বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে বলে জানানো হয়েছে রেলের পক্ষ থেকে। 

AC/SKD/SB