মাননীয় বিশিষ্টজন,
সম্মানিতঅতিথিবৃন্দ এবং
ভদ্রমহিলা ওভদ্রমহোদয়গণ,
আজ মনে হচ্ছে শুধুভাষণের দিন। একটু আগেই আমরা শুনলাম প্রেসিডেন্ট জি এবং প্রধানমন্ত্রী মে-রবক্তব্য। এখন বলতে উঠেছি আমি। আমার ভাষণ হয়তো অতিরিক্ত কিছু বলেই মনে হতে পারে।কিংবা, সারাক্ষণের সংবাদ পরিবেশন চ্যানেলগুলির পক্ষে তা একটি সমস্যাও হয়ে উঠতেপারে।
দ্বিতীয় রাইসিনাসম্মেলনের অধিবেশনের সূচনা পর্বে কিছু বক্তব্য পেশের সুযোগ পেয়েছি আমি। মাননীয়কারজাই, প্রধানমন্ত্রী হারপার, প্রধানমন্ত্রী কেভিন রুড – আপনাদের সকলকে দিল্লিতেউপস্থিত থাকতে দেখে আমি বিশেষভাবে আনন্দিত। সেইসঙ্গে, আমি আন্তরিকভাবে স্বাগতজানাই সমস্ত অতিথিদেরই। পরবর্তী কয়েকটি দিনে আমাদের চারপাশের বহির্বিশ্ব সম্পর্কেঅনেক রকম আলোচনা শোনার সুযোগ হবে আপনাদের। এই পার্থিব জগতের নিশ্চয়তা ও বর্তমানসমস্যা, সংঘাত ও ঝুঁকি, সাফল্য ও সুযোগ, অতীতের আচার-আচরণ এবং ভবিষ্যতের সম্ভাব্যদিক এবং সেইসঙ্গে সম্ভাবনাময় ব্ল্যাক সোয়ানস্ এবং নিউ নরম্যালস্-এর ওপর আলোকপাতকরা হবে নানাভাবে।
বন্ধুগণ,
২০১৪-র মে মাসেভারতের জনসাধারণ এক নিউ নরম্যাল-এর উদ্ভব বা আবির্ভাবের সাক্ষী থেকেছেন । ভারতবাসী একবাক্যে পরিবর্তনের পক্ষে ভোট দিয়েআস্থা স্থাপন করেছেন আমার সরকারের ওপর। এই পরিবর্তন শুধুমাত্র দৃষ্টিভঙ্গিরই নয়,মানসিকতারও। কর্মহীনতা থেকে এক সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে কর্মপ্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ারলক্ষ্যেই এই পরিবর্তন। পরিবর্তন বলিষ্ঠ সিদ্ধান্ত গ্রহণের লক্ষ্যেও। নাগরিকদের এইআস্থা ও বিশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে সংস্কারসাধন প্রচেষ্টাই যথেষ্ট নয় যদি না তাআমাদের অর্থনীতি তথা সমাজ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে এক রূপান্তর সম্ভব করে তোলে। ভারতেরযুবশক্তির আশা-আকাঙ্ক্ষার মধ্যেই সুপ্ত রয়েছে এই রূপান্তরের বীজ। কোটি কোটিমানুষের মধ্যে যে অসীম উৎসাহ ও উদ্যোগ রয়েছে, তার মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে রূপান্তরেরসম্ভাবনা। প্রতিদিনের কাজকর্মে আমি নতুন করে উৎসাহ ও উদ্দীপনা খুঁজে পাই এর মধ্যথেকেই। প্রতিদিনের জন্য আমি যে ‘কাজের তালিকা’ স্থির করি তার লক্ষ্যই হল ভারতেরসংস্কার তথা রূপান্তর, ভারতবাসীর সমৃদ্ধি তথা নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অনলসপ্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া।
বন্ধুগণ,
ভারতের এই রূপান্তরপ্রচেষ্টা যে বহির্বিশ্বের প্রেক্ষিতকে বাদ দিয়ে সফল হতে পারে না সে সম্পর্কে আমিসজাগ। আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রগতি, কৃষকদের কল্যাণ, যুবক-যুবতীদের জন্যকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, মূলধন, প্রযুক্তি, বিপণন তথা সম্পদের যোগান সুনিশ্চিতকরে তোলা – এ সমস্ত কিছুর মধ্য দিয়েই সফলহতে পারে আমাদের এই সংস্কার প্রচেষ্টা। আমাদের জাতির নিরাপত্তা সহ এ সমস্ত কিছুরসঙ্গেই যোগ রয়েছে সমগ্র বিশ্বের উন্নয়ন প্রচেষ্টার । একইভাবে, ভারতের উন্নয়ন প্রচেষ্টা ছাড়া যেবিশ্বের অগ্রগতিও সম্ভব নয়, একথাও সমান সত্য।
ভারত যেমন সমগ্রবিশ্বের বিকাশ তথা উন্নয়নকে সম্ভব করে তুলতে চায়, একইভাবে বহির্বিশ্বও ভারতেরবিকাশ ও অগ্রগতির প্রত্যাশী। দেশের রূপান্তরের লক্ষ্যে আমাদের আগ্রহের সঙ্গে একঅদৃশ্য যোগ রয়েছে বহির্বিশ্বের। দেশে উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমাদের পছন্দের বিষয়গুলিরসঙ্গে এক নিবিড় যোগ রয়েছে আন্তর্জাতিক অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রগুলির। এ সমস্ত কিছুরমিলন ও সমন্বয়ই বাস্তবায়িত করতে পারে আমাদের রূপান্তরের লক্ষ্য ও আদর্শকে।
বন্ধুগণ,
এক অস্থিরতার মধ্যদিয়ে ভারত এগিয়ে চলেছে তার রূপান্তরের লক্ষ্যে। মানবজাতির অগ্রগতি এবং হিংসাদীর্ণএক অস্থির পরিবেশের মধ্য দিয়ে ঘটে চলেছে এই বিশেষ ঘটনাটি। বিভিন্ন কারণে এবংবিভিন্ন পর্যায়ে এক বিরাট পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে ক্রম অগ্রসরমান বর্তমান বিশ্ব।বিশ্বের এক দেশের সঙ্গে অন্য দেশের যোগাযোগ, ডিজিটাল সুযোগ-সুবিধার প্রসার,প্রযুক্তি নির্ভরতা, জ্ঞান ও অনুসন্ধান তথা উদ্ভাবন প্রচেষ্টা চালিত করছে মানবজাতিরএই বিকাশ অভিযান । একইসঙ্গে, বিকাশেরহারে মন্থরতা এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা – এগুলিও কিন্তু উপেক্ষার বিষয় নয়।প্রযুক্তির এই যুগে ভৌগোলিক সীমারেখা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এর মধ্যেইআবার জাতিতে জাতিতে সংঘর্ষের প্রাচীর, বাণিজ্যিক লেনদেন এবং এক দেশ থেকে অন্য দেশেস্থানান্তর সম্পর্কে বিরূপ মনোভাবের ক্রমবর্ধমান রক্ষণশীলতা ও সংকীর্ণতার ঘটনাওঘটে চলেছে বিশ্ব জুড়ে। এর অবশ্যম্ভাবী পরিণতি বিশ্বায়নের প্রচেষ্টাকে এক ঝুঁকিরমুখে এনে দিতে পারে। যার ফলে অর্থনৈতিক সুফল আহরণের প্রচেষ্টাও ব্যর্থ হতে বাধ্য।হিংসা, অস্থিরতা, সন্ত্রাসবাদ, অন্তর্ভুক্তির প্রতি বিদ্বেষ এবং এক জাতির পক্ষথেকে অন্য জাতিকে হুমকি দেওয়ার ঘটনা সমগ্র পরিবেশ ও পরিস্থিতিকে ক্রমশ সঙ্কটজনককরে তুলেছে। রাষ্ট্র বিরোধী বিভিন্ন শক্তি এই সমস্ত চ্যালেঞ্জকে ক্রমাগত মদত দিয়েচলেছে। এক অন্য ধরনের বিশ্ব গড়ে তোলার জন্য যে প্রাতিষ্ঠানিকতা ও কাঠামোর সৃষ্টিকরা হয়েছিল, তা এই কারণে ক্রমশ অচল হয়ে পড়ছে। সকল পক্ষকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে চলারপ্রচেষ্টা তার ফলে এক বাধার সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। ঠান্ডা লড়াইয়ের অবসানের ২৫ বছর পরবিশ্ব যখন নিজেকে নতুনভাবে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে তুলতে চাইছে, তখনও তার ক্ষেত্র রয়েগেছে এক বিশেষ অপ্রস্তুত অবস্থায়। রাজনৈতিক ক্ষমতা তথা সেনাবাহিনীর শক্তির মধ্যেযথেষ্ট পার্থক্য রয়ে গেছে। এর মধ্যেই আবার বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে গড়ে উঠছে সহযোগিতারজোট। আর এইভাবেই সহযোগী দেশগুলিকে নিয়ে গড়ে উঠছে এক নতুন এশিয়া। এই ঘটনাকে আমরাস্বাগত জানাই।
এর কারণ হল, বহুজাতিরই যে ক্রম উত্থান তা বাস্তবতারই এক প্রতিফলন মাত্র । বহু দেশের মতামতকেই সম্মান জানানো হয়েছে তাতে।শুধুমাত্র কয়েকজনের মত ও দৃষ্টিভঙ্গিকে আশ্রয় করে গড়ে ওঠেনি বর্তমান বিশ্বেরকার্যসূচি। সুতরাং, অন্তর্ভুক্তি বিরোধী কোন শক্তি বা প্রবণতা যাতে মাথাচাড়া দিতেনা পারে সে সম্পর্কে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে আমাদের। একথা বিশেষভাবে সত্য এশিয়ারক্ষেত্রে। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আজকের এই সম্মেলন খুবই সময়োচিত। কারণ এর মধ্যেবহু পক্ষ ও বহু জোটের নিজস্ব বক্তব্যও উপস্থাপিত হবে।
বন্ধুগণ,
কৌশলগত দিক থেকেআমরা বর্তমানে রয়েছি এক জটিল পরিবেশের মধ্যে। ইতিহাসের দ্রুত পট পরিবর্তনেরপরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বের বর্তমান পরিস্থিতি তাই নতুন কোন ঘটনা নয়। যে প্রশ্নটিসর্বাপেক্ষা বেশি গুরুত্বপূর্ণ তা হল এই পরিস্থিতিতে বিভিন্ন রাষ্ট্রের করণীয় কিহতে পারে। আমাদের জাতীয় শক্তির ওপরই দাঁড়িয়ে রয়েছে আমাদের পছন্দ-অপছন্দ এবংকর্মসূচি স্থির করার বিষয়গুলি।
কৌশলগত দিক থেকেআমাদের আগ্রহ ও উদ্দেশ্যের মূলে রয়েছে আমাদের সভ্যতার ঐতিহ্যের মূলমন্ত্রগুলি :
· যথার্থবাদ
· সহাবস্থান
· সহযোগিতা, তথা
· অংশীদারিত্ব।
আমাদের জাতীয়স্বার্থের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে এই মূল মন্ত্রগুলি । দেশ-বিদেশে ভারতীয়দের সমৃদ্ধি এবং নাগরিকদেরনিরাপত্তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ দুটি বিষয়। কিন্তু ব্যক্তি স্বার্থ বলে কোন কিছুরঅস্তিত্ব নেই আমাদের সংস্কৃতি বা আচার-আচরণে। আমাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা ওকর্মপ্রচেষ্টা, ক্ষমতা ও মানব মূলধন, গণতন্ত্র ও জনগোষ্ঠী, শক্তি ও সাফল্য আঞ্চলিকতথা বিশ্ব পর্যায়ে সার্বিক অগ্রগতির বিষয়টিকে সমর্থন যুগিয়ে যাবে। অর্থনৈতিক তথারাজনৈতিক পর্যায়ে আমাদের যে উত্থান তা আঞ্চলিক তথা আন্তর্জাতিক দিক থেকে এক বিশেষসুযোগ ও তাৎপর্যকেই চিহ্নিত করে। সামগ্রিকভাবে তা হল শান্তি সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যেএক বিশেষ শক্তি, স্থিতিশীলতার লক্ষ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটক এবং আঞ্চলিক তথাবিশ্ব সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে এক বিশেষ চালিকাশক্তি।
আমার সরকার মনেকরে, এর মূল লক্ষ্য হল আন্তর্জাতিক সমঝোতার পথকে সুপ্রশস্ত করা যার মধ্যেবিশেষভাবে দৃষ্টি দেওয়া হবে এই বিষয়গুলির ওপর :
· সংযোগ ও যোগাযোগের পুনর্বিন্যাস, আমাদের প্রতিবেশীতথা দূরের দেশ ও জনগণের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের সেতুবন্ধন রচনা;
· ভারতের অর্থনৈতিক অগ্রাধিকারগুলির সঙ্গে সাযুজ্যরেখে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সহযোগিতার সম্পর্ক স্থাপন;
· ভারতের মানবসম্পদকে এক বিশেষ শক্তির উৎস রূপে তুলেধরা যাতে আমাদের মেধাবী ও বুদ্ধিদীপ্ত তরুণরা আন্তর্জাতিক চাহিদা মেটানোর পাশাপাশিবিভিন্ন সুযোগেরও সদ্ব্যবহার করতে পারে;
· উন্নয়নের লক্ষ্যে এমন এক অংশীদারিত্বের সম্পর্কগড়ে তোলা যার প্রসার ও বিস্তার ঘটবে ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগর থেকে ক্যারিবিয়ানদ্বীপপুঞ্জ পর্যন্ত এবং অন্যদিকে আফ্রিকা মহাদেশ থেকে আমেরিকা পর্যন্ত।আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জগুলির মোকাবিলা সম্পর্কে ভারতের মত ও চিন্তাভাবনাকে তুলেধরতে হবে আমাদের;
· আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনগুলির পুনর্গঠন ওপুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে উৎসাহ ও উদ্যম সঞ্চারিত করা। যোগ ও আয়ুর্বেদ সহ ভারতীয়সভ্যতার ঐতিহ্য ও তার সুফলগুলি বিশ্বের কল্যাণে কাজে লাগানো। রূপান্তর প্রচেষ্টাতাই শুধুমাত্র দেশের সীমারেখার মধ্যেই আবদ্ধ নয়, তা প্রসারিত বিশ্ব কর্মসূচিরক্ষেত্রেও।
আমার কাছে ‘সব কাসাথ, সব কা বিকাশ’ ভারতের এক দৃষ্টিভঙ্গি মাত্র নয়, সমগ্র বিশ্বের জন্যই এটি একবিশ্বাসের সঞ্চার। কয়েকটি পর্যায়, ভিন্ন ভিন্ন বিষয় এবং বিভিন্ন ভৌগোলিক অবস্থানঘিরে ঘটতে চলেছে তার উজ্জ্বল আত্মপ্রকাশ।
ভৌগোলিক দিক থেকেএবং মিলিত স্বার্থের নিরিখে যাঁরা রয়েছেন আমাদের খুব কাছে, তাঁদের সম্পর্কে এবারকিছু বলা যাক। ‘প্রতিবেশীই প্রথম’ – এই ধারণাটিকে আমাদের সঙ্কল্পবদ্ধ দৃষ্টিভঙ্গিও চিন্তাভাবনার মধ্যে আমরা এক বিশেষ স্থান করে দিয়েছি। দক্ষিণ এশিয়ার জনসাধারণেরসঙ্গে রয়েছে আমাদের রক্তের সম্পর্ক; ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং আশা-আকাঙ্ক্ষার দিক থেকেএক মিলিত ঐতিহাসিক সাক্ষ্য আমরা বহন করে থাকি সেখানকার অধিবাসীদের সঙ্গে। এইঅঞ্চলের তরুণ ও যুবকরা উৎসাহী ও আগ্রহী পরিবর্তন, সুযোগ, প্রগতি ও সমৃদ্ধিসম্পর্কে। প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ স্থাপন আমার এক বিশেষ স্বপ্নবলতে পারেন। গত আড়াই বছরে আমাদের এই অঞ্চলকে পরস্পরের আরও কাছে নিয়ে আসার লক্ষ্যেপ্রায় সবক’টি প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গেই নিবিড় সংযোগ গড়ে তুলেছি আমরা। প্রয়োজনেআমাদের অতীতের যাবতীয় বোঝাকে দূরে নিক্ষেপ করে এই অঞ্চলের ভবিষ্যৎ অগ্রগতিকে আমরানিশ্চিত করে তুলতে চেয়েছি । আমাদের এইপ্রচেষ্টার সুফলগুলি আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন।
দূরত্ব কিংবাযোগাযোগ ব্যবস্থার অপ্রতুলতা কখনই বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি আফগানিস্তানের সঙ্গে আমাদেরসম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে। পুনর্গঠন, ক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি ইত্যাদির ক্ষেত্রেসহযোগিতার প্রসারের মাধ্যমে আমরা নিবিড় করে তুলেছি আমাদের অংশীদারিত্বেরসম্পর্ককে। আমাদের উন্নয়নের লক্ষ্যে অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে যে কোনরকম খাদ নেই তারএক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হল আফগানিস্তানের সংসদ ভবন নির্মাণ এবং ভারত-আফগানিস্তানমৈত্রী বাঁধ – এই দুটি ঘটনা ।
বাংলাদেশের সঙ্গেআমরা গড়ে তুলছি এক গভীর সমন্বয় ও রাজনৈতিক সমঝোতার মৈত্রী বন্ধন। সংযোগ ও যোগাযোগ,পরিকাঠামো প্রকল্প এবং ভূ ও নৌ-সীমানা সম্পর্কে মতৈক্যে উপনীত হয়েছি আমরা।
অন্যদিকে, নেপাল,শ্রীলঙ্কা, ভুটান ও মালদ্বীপের সঙ্গে পরিকাঠামো, যোগাযোগ, জ্বালানি ও উন্নয়নপ্রকল্পে আমাদের সার্বিক কর্মপ্রচেষ্টা সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে অগ্রগতি ও স্থিতিশীলতার একবিশেষ শক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রতিবেশী দেশগুলিরসম্পর্কে আমাদের চিন্তাভাবনা ও দৃষ্টিভঙ্গি সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে শান্তি ওসম্প্রীতি গড়ে তোলার কাজে বিশেষ সাফল্য এনে দিয়েছে। আমাদের এই বিশেষ চিন্তাভাবনাইপাকিস্তান সহ সার্কভুক্ত সবক’টি দেশের নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়ে নিয়ে এসেছে আমারশপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে। এই চিন্তাভাবনাকে সঙ্গে নিয়েই আমি নিজে উপস্থিত থেকেছিলাহোরে। কিন্তু শান্তির পথ নিশ্চিত করা ভারতের একার পক্ষে সম্ভব নয়। পাকিস্তানকেওসেজন্য বাড়িয়ে দিতে হবে সহযোগিতার হাত। ভারতের সঙ্গে আলোচনা-বৈঠকে মিলিত হওয়ারলক্ষ্যে সন্ত্রাসের পথ পরিহার করতে হবে পাকিস্তানকে।
ভদ্রমহিলা ওভদ্রমহোদয়গণ,
দ্বন্দ্ব ওঅনিশ্চয়তা সত্ত্বেও খুব অল্প সময়কালের মধ্যে পাশ্চাত্য দেশগুলির সঙ্গেও সম্পর্কেরপুনর্বিন্যাস ঘটিয়েছি আমরা। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, কাতার এবং ইরান সহপারস্য উপসাগর ও পশ্চিম এশিয়ার সঙ্গে অংশীদারিত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে আমাদের।আগামী সপ্তাহে আবু ধাবির মহামান্য ক্রাউন প্রিন্সকে স্বাগত জানানোর সুযোগ ঘটবেআমার। ভারতের সাধারণতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি রূপে উপস্থিত থাকবেন তিনি।শুধুমাত্র দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তাভাবনার পরিবর্তনের দিকেই আমরা দৃষ্টি দিইনি, আমাদেরপারস্পরিক সম্পর্কের বাস্তবতাকেও আমরা সময়োপযোগী করে তুলতে চেয়েছি।
এর অবশ্যম্ভাবীসুফল হিসেবে একদিকে যেমন আমাদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত স্বার্থগুলি সুরক্ষিত রাখতেপ্রচেষ্টা চালিয়ে গিয়েছি, অন্যদিকে তেমনই নিবিড় অর্থনৈতিক ও জ্বালানি সম্পর্ককেআরও গভীরতায় নিয়ে গিয়েছি আমরা। প্রায় ৮০ কোটি ভারতবাসীর সামাজিক কল্যাণ ও বস্তুগতচাহিদা পূরণের কাজটিকেও অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছি। মিলিত ঐতিহাসিক ওসাংস্কৃতিক সম্পর্কের সূত্র ধরে মধ্য এশিয়াতেও আমাদের নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলারকাজে সফল হয়েছি আমরা। এর ফলে, উন্মোচিত হয়েছে সমৃদ্ধি ও অংশীদারিত্বের নতুন নতুন সুযোগও সম্ভাবনার দ্বার। সাংহাই সহযোগিতা সংগঠনের সদস্য পদে অন্তর্ভুক্তি মধ্য এশিয়াররাষ্ট্রগুলির সঙ্গে কর্মপ্রচেষ্টার এক প্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্ক গড়ে তোলার কাজেবিশেষভাবে সাহায্য করেছে আমাদের । মধ্য এশিয়ারভাই-বোনেদের সকলরকম সমৃদ্ধির লক্ষ্যেও বিনিয়োগ করেছি আমরা।
ঐ অঞ্চলে আমাদেরস্থায়ী সম্পর্কের ভিতটিকে আরও সুদৃঢ় করে তোলার কাজেও আমরা বিশেষ সাফল্য অর্জনকরেছি। প্রাচ্যের কথা বলতে গেলে আমাদের ‘পূবের জন্য কাজ করা’ নীতির মূলে রয়েছেদক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ককে আরও জোরদার করে তোলার কর্মপ্রচেষ্টা। পূর্বএশিয়া শীর্ষ সম্মেলন সহ সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের প্রাতিষ্ঠানিক পরিকাঠামো গড়ে তোলারলক্ষ্যে এক বিশেষ কর্মপ্রচেষ্টা চালিয়েছি আমরা। আসিয়ান রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে আমাদেরঅংশীদারিত্বের সম্পর্ক এই অঞ্চলে প্রযুক্তি, বিনিয়োগ, উন্নয়ন ও নিরাপত্তার মতোবিষয়গুলিতে আমাদের পারস্পরিক সম্পর্কের পুনর্বিন্যাস ঘটিয়েছে। শুধু তাই নয়, এর ফলেসংশ্লিষ্ট অঞ্চলে আমাদের কৌশলগত বিশেষ স্বার্থ ও স্থিতিশীলতার বিষয়টিও অনেক দূরএগিয়ে গেছে। চিনের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের বিশেষ ক্ষেত্রগুলিতে সুযোগ-সুবিধাপ্রসারের মাধ্যমে এক বিশেষ সম্পর্ক আমরা গড়ে তুলেছি। এই কর্মপ্রচেষ্টা চালিয়েযাওয়ার লক্ষ্যে সহমত প্রকাশ করেছি প্রেসিডেন্ট জি এবং আমি উভয়েই। ভারত ও চিনেরবিকাশকে এক নজিরবিহীন সুযোগ বলেই আমি মনে করি। তা শুধুমাত্র আমাদের এই দুটি দেশেরক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়, তার প্রসার ঘটবে সমগ্র বিশ্বেও। তবে, দুটি বড় প্রতিবেশীশক্তির মধ্যে যে কোন মতপার্থক্য থাকবে না তা কখনই বলা চলে না। আমাদের এই সম্পর্কবজায় রাখার লক্ষ্যে এবং সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে শান্তি ও অগ্রগতি সুনিশ্চিত করার কাজেসংবেদনশীল হতে হবে আমাদের এই দুটি দেশকেই। পরস্পরের স্বার্থ ও উদ্বেগগুলিকেশ্রদ্ধা ও সম্মানও জানাতে হবে সেইসঙ্গে।
বন্ধুগণ,
জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাথেকেই আমরা অনুভব করেছি যে বর্তমান শতক হল এশিয়ার শতক। সতত নানা পরিবর্তন ঘটেচলেছে এশিয়া মহাদেশে। একের পর এক বিকাশ, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির উজ্জ্বল দৃষ্টান্তস্থাপিত হচ্ছে সর্বত্র যা এই অঞ্চলের গণ্ডি অতিক্রম করে পরিব্যপ্ত হয়েছেবহির্মহাদেশেও। কিন্তু একইসঙ্গে ক্রমবর্ধমান উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং প্রতিদ্বন্দ্বীশত্রুদের মাথাচাড়া দেওয়ার ঘটনা ক্রমশ আমাদের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে সেনাবল বৃদ্ধি, সম্পদ আহরণ ও ধনসম্পদের ভাণ্ডারতৈরির যে ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে, তা সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের নিরাপত্তার পক্ষেওযথেষ্ট আশঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আঞ্চলিক নিরাপত্তা কাঠামোকেঅবশ্যই স্বচ্ছ, সুষম, সুস্পষ্ট এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক করে তোলা দরকার। আন্তর্জাতিকনিয়ম-নীতি অনুসরণ করে পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিৎ পরস্পরের সঙ্গে আলোচনা ও মতবিনিময়েরউদ্যোগ । একইসঙ্গে, শ্রদ্ধা ও সম্ভ্রম জানাতে হবেবিভিন্ন দেশের সার্বভৌমত্বকেও ।
বন্ধুগণ,
গত আড়াই বছরেমার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, জাপান এবং অন্যান্য প্রধান প্রধান বিশ্বশক্তিরসঙ্গে আমাদের যোগাযোগ ও কর্মব্যস্ততাকে আমরা বহুগুণে বাড়িয়ে তুলেছি। তাদের সঙ্গেশুধুমাত্র সহযোগিতার সম্পর্ক গড়ে তুলতেই আমরা আগ্রহী নই। একইসঙ্গে, বিভিন্নচ্যালেঞ্জের মোকাবিলা এবং সুযোগ-সুবিধার সদ্ব্যবহার সম্পর্কেও আলোচনা ও মতবিনিময়েরমাধ্যমে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলতে আমরা আগ্রহী। ভারতের অর্থনৈতিক অগ্রাধিকার এবংপ্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তাজনিত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে এই অংশীদারিত্বের সম্পর্কগড়ে তোলা একান্ত জরুরি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রেএসেছে গতি, নতুন নতুন বিষয় ও বলিষ্ঠতা । নবনির্বাচিতপ্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আমার আলোচনাকালে আমাদের কৌশলগত অংশীদারিত্বেরএই বিশেষ বিশেষ দিকগুলির ওপর পারস্পরিক সহযোগিতার সম্পর্ককে নিবিড় করে তোলার লক্ষ্যেকাজ করে যাওয়ার প্রশ্নে আমরা উভয়েই সহমত পোষণ করেছি। রাশিয়া হল আমাদের এক অকৃত্রিমবন্ধু রাষ্ট্র। যে সমস্ত চ্যালেঞ্জ বর্তমান বিশ্বকে এক বিশেষ হুমকির মুখে ঠেলেদিয়েছে তার মোকাবিলায় সম্ভাব্য পদক্ষেপ সম্পর্কে আমি দীর্ঘ আলোচনা করেছিপ্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গেও। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষত, প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত বিষয়েআমাদের কৌশলগত অংশীদারিত্ব গভীরতর হয়ে উঠেছে।
বিভিন্ন দেশেরসঙ্গে আমাদের সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এক বিশেষ চালিকাশক্তি হল আমাদের বিনিয়োগপ্রচেষ্টা। জ্বালানি শক্তি, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিকাশের ওপরআমরা ইতিমধ্যেই বিশেষ জোর দিয়েছি এবং এর সুফলও আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। আমাদের একবিশেষ কৌশলগত অংশীদারিত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে জাপানের সঙ্গেও। বস্তুতপক্ষেঅর্থনৈতিক কর্মপ্রচেষ্টার প্রতিটি ক্ষেত্রেই ঐ দেশ আমাদের সঙ্গে সহযোগিতারসম্পর্কে আবদ্ধ হয়েছে। আমাদের এই সহযোগিতাকে আরও নিবিড় করে তোলার সঙ্কল্প গ্রহণকরেছি আমি এবং প্রধানমন্ত্রী আবে। অন্যদিকে, ইউরোপের দেশগুলির সঙ্গে ভারতের বিকাশেবিশেষত, আমাদের জ্ঞান-নির্ভর শিল্প প্রচেষ্টা এবং স্মার্ট নগরী প্রকল্পে এক ঘনিষ্ঠসহযোগিতার সম্পর্ক গড়ে তোলার চিন্তাভাবনা রয়েছে আমাদের।
বন্ধুগণ,
বহু দশক ধরেইবিকাশশীল দেশগুলির সঙ্গে ক্ষমতা, দক্ষতা ও শক্তি বিনিময় কর্মসূচির মাধ্যমে যুক্তরয়েছে ভারত। আফ্রিকার ভাই-বোনদের সঙ্গে বিগত কয়েক বছরে আমাদের সম্পর্ক হয়ে উঠেছেআগের তুলনায় আরও বেশি নিবিড়। আমাদের বহু দশকের ঐতিহ্যগত মৈত্রী সম্পর্ক এবংঐতিহাসিক যোগাযোগকে কাজে লাগিয়ে উন্নয়নের ক্ষেত্রে এক অর্থবহ সহযোগিতার বন্ধন রচনাকরেছি আমরা। আমাদের এই উন্নয়ন ও অংশীদারিত্বের সম্পর্ক আজ ব্যাপ্ত হয়েছে সমগ্রবিশ্বেই ।
ভদ্রমহিলা ওভদ্রমহোদয়গণ,
ইতিহাসের প্রায়সূচনাকাল থেকেই সামুদ্রিক জাতি রূপে পরিচিতি ঘটেছে ভারতের। নৌ-সহযোগিতার ক্ষেত্রেআমাদের স্বার্থ ও প্রকৌশলগুলি যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। ‘সাগর’ অর্থাৎ, ‘সিকিউরিটিঅ্যান্ড গ্রোথ ফর অল ইন দ্য রিজিয়ন’ – আমাদের এই উদ্যোগটি শুধুমাত্র মূল ভূ-খণ্ড ওদ্বীপপুঞ্জগুলিকে সুরক্ষিত রাখার উদ্দেশ্যেই নয়, একইসঙ্গে গভীর অর্থনৈতিক ওনিরাপত্তা সহযোগিতা গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও তা এক বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে। কারণ আমরাজানি যে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্প্রীতি, সহযোগিতা এবং যুক্তভাবে কাজ করার আগ্রহএকদিকে যেমন আমাদের অর্থনৈতিক কর্মপ্রচেষ্টাকে আরও ত্বরান্বিত করবে, অন্যদিকেতেমনই আমাদের এই সমুদ্র অঞ্চলের শান্তিপূর্ণ পরিবেশকেও নিশ্চিত করবে। একইসঙ্গেআমরা বিশ্বাস করি যে ভারত মহাসাগর অঞ্চলে শান্তি, সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তার বাতাবরণগড়ে তোলার প্রাথমিক দায়িত্ব হল আমাদের এবং সেইসঙ্গে এই অঞ্চলে অবস্থিত সবক’টিরাষ্ট্রেরই। কাউকে বাদ দিয়ে আমরা এগিয়ে যেতে চাই না। আন্তর্জাতিক আইন ও নিয়ম-নীতিরপ্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে বিভিন্ন দেশকে পরস্পরের কাছে নিয়ে আসতে চাই আমরা।নৌ-চলাচলের স্বাধীনতা এবং আন্তর্জাতিক নিয়ম-নীতির প্রতি আনুগত্য যে শান্তি ওঅর্থনৈতিক অগ্রগতির এক বিশেষ পূর্ব শর্ত, সে কথা আমরা বিশ্বাস করি মনে-প্রাণে।কারণ ভারত মহাসাগর অঞ্চলের নৌ-সীমানা যা পরস্পরের সঙ্গে সংযোগ ও যোগাযোগকে আরওগভীর করে তুলবে ।
বন্ধুগণ,
শান্তি, সমৃদ্ধিএবং অগ্রগতির জন্য আঞ্চলিক সংযোগ ও যোগাযোগের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি আমরা বিশেষভাবে অনুভবও উপলব্ধি করি। এই কারণে পশ্চিম ও মধ্য এশিয়া এবং এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলের পূর্বদিকে সমস্তরকম বাধা-বিঘ্ন অতিক্রম করে আমরা পৌঁছে যেতে চাই আমাদের বন্ধুত্বের হাতপ্রসারিত করে। ইরান ও আফগানিস্তানের সঙ্গে চাবাহার বন্দর সম্পর্কে ত্রিপাক্ষিকচুক্তি এই ঘটনারই এক বাস্তব প্রতিফলন। উত্তর-দক্ষিণ আন্তর্জাতিক পরিবহণ করিডর গড়েতোলার ক্ষেত্রে আমাদের অঙ্গীকারের মধ্যেও তা যথেষ্ট মাত্রায় পরিষ্ফুট হয়েছে। তবেএক্ষেত্রে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে যে সংযোগ ও যোগাযোগের প্রসারের লক্ষ্যে আমাদেরএই কর্মপ্রচেষ্টা যেন কোন জাতিরই সার্বভৌমত্বের অধিকারকে ক্ষুণ্ণ না করে। সংশ্লিষ্ট দেশগুলির সার্বভৌমত্বের প্রতিশ্রদ্ধাশীল থেকে আঞ্চলিক পর্যায়ে সংযোগ ও যোগাযোগের করিডর গড়ে তোলার প্রচেষ্টা ওপ্রতিশ্রুতি সফল হতে বাধ্য। আর এইভাবেই বিভিন্ন দেশের মধ্যে মতপার্থক্য ও মতভেদেরসুষ্ঠু মীমাংসায় পৌঁছনো সম্ভব।
বন্ধুগণ,
দেশের ঐতিহ্যেরপ্রতি আনুগত্য বজায় রেখে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও আমাদের অঙ্গীকার পূরণে সঙ্কল্পবদ্ধরয়েছি আমরা। এমনকি বিপর্যয়ের মুহূর্তেও ত্রাণ সহায়তা নিয়ে বিভিন্ন অঞ্চলে আমরাপৌঁছে গিয়েছি। নেপালের ভূমিকম্প, ইয়েমেনের সঙ্কট এবং ফিজি ও মালদ্বীপেরসমস্যাগুলিতে মানবতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছি আমরা। আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তারক্ষার ক্ষেত্রেও কখনই আমরা আমাদের দায়িত্বকে এড়িয়ে যাইনি। উপকূলবর্তী অঞ্চলেপ্রহরা ও সতর্কতা, জলদস্যুতা রোধ, চোরাচালান এবং সংগঠিত অপরাধের বিরুদ্ধেসহযোগিতার মাত্রাকে আমরা ক্রমান্বয়ে বাড়িয়ে তুলতে পেরেছি। ধর্ম থেকে সন্ত্রাসকেবিচ্ছিন্ন করার লক্ষ্যে আমরা দৃঢ় অঙ্গীকারবদ্ধ। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যে সমস্তচ্যালেঞ্জ দীর্ঘদিন ধরে আমাদের সামনে নানা সমস্যার সৃষ্টি করে চলেছে, তারমোকাবিলায় বিকল্প পথ ও উপায়ও অন্বেষণ করেছি আমরা। সন্ত্রাসের মধ্যে যে ভালো-মন্দবলে কিছুই নেই, এই ধারণাকেও প্রতিষ্ঠিত করতে প্রচেষ্টা চালিয়েছি আমরা। এর ফলেআমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলির মধ্যে যারা হিংসা, ঘৃণা এবং সন্ত্রাসকে মদত ওসমর্থন যুগিয়ে আসছে, তারা আজ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। আমাদের সামনে আরেকটি বড় সমস্যাহল বিশ্ব উষ্ণায়ন। তার মোকাবিলাতেও আমরা পালন করেছি এক বিশেষ অগ্রণী ভূমিকা।পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানি থেকে ১৭৫ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ আহরণের এক উচ্চাকাঙ্ক্ষামূলককার্যসূচি রয়েছে আমাদের। আপনারা শুনলে খুশি হবেন যে এর শুভ সূচনাও ইতিমধ্যেইবাস্তবায়িত হয়েছে। প্রকৃতির সঙ্গে সম্প্রীতি রক্ষার মধ্য দিয়ে বসবাসের যে ঐতিহ্যরয়েছে আমাদের সভ্যতার ইতিহাসে, তা আমরা বিনিময় করতে আগ্রহী অন্যান্য দেশের সঙ্গেও।আন্তর্জাতিক সৌর সমঝোতা গঠনের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন দেশের সঙ্গেসহযোগিতা গড়ে তুলেছি আমরা। সৌর শক্তিকে মানবকল্যাণে ব্যবহারের উদ্দেশ্যেই আমাদেরএই বিশেষ প্রচেষ্টা। ভারতীয় সভ্যতায় যে সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যরয়েছে তা অন্যান্য দেশের আগ্রহকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। বর্তমান বিশ্বে যোগ, আয়ুর্বেদএবং বৌদ্ধ ধর্ম মানবজাতির এক মূল্যবান ঐতিহ্য বলেই মনে করা হয়। ভারত তার প্রতিটিপদক্ষেপেই এই সাধারণ ঐতিহ্যের ধারাটিকে বহন করে নিয়ে যাবে কারণ, তা বিভিন্ন দেশ ওঅঞ্চলের মধ্যে সম্পর্কের সেতুবন্ধন গড়ে তোলে এবং নিশ্চিত করে সার্বিক ও সামগ্রিককল্যাণ।
ভদ্রমহিলা ওভদ্রমহোদয়গণ,
পরিশেষে, একটি কথারউল্লেখ না করে আমি পারছি না। তাহল, বিভিন্ন প্রাচীন শাস্ত্রই আমাদের চালিত করেছে একসুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে উপনীত হতে।
ঋগ্বেদ-এ কথিত আছে- आ नो भद्रो :क्रत्वो यन्तु विश्वतः – যার অর্থ, “মহান চিন্তাভাবনাকে স্বাগত জানাই সকলসময় এবং সর্বদিক থেকেই।”
সমাজবদ্ধ জীবহিসেবে ব্যক্তি বিশেষের প্রয়োজন নয়, বহু মানুষের চাহিদাকে আমরা সকল সময়েই গুরুত্বদিয়ে এসেছি। মেরুকরণ নয়, বরং সকলকে নিয়ে সহযোগিতার জোটবন্ধন গড়ে তুলতেই আমরাবিশেষভাবে আগ্রহী। আমরা বিশ্বাস করি যে একের সাফল্য অন্যের বিকাশকে ত্বরান্বিতকরে। আমাদের কাজ হল স্বচ্ছ ও সুস্পষ্ট । আমাদের রূপান্তরেরএই যাত্রা শুরু হয়েছে আমাদের নিজেদের দেশ থেকেই। আমাদের এই প্রচেষ্টায় বিশেষ শক্তিযুগিয়েছে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে আমাদের গঠনমূলক সহযোগিতার সম্পর্ক। দেশেবিভিন্ন বিষয়ে যেমন আমরা দৃঢ় পদক্ষেপের মাধ্যমে অগ্রসর হতে পেরেছি, আন্তর্জাতিকক্ষেত্রেও তেমনই আমাদের মিত্র দেশের সংখ্যা একের পর এক বাড়িয়ে তুলতে পেরেছি। আরএইভাবেই আমরা গড়ে তুলতে চাই এমন এক উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ যার সঙ্গে সর্বতোভাবে যুক্তথাকবে কোটি কোটি ভারতবাসীর স্বার্থ। আমাদের এই কর্মপ্রচেষ্টায় আপনারা, অর্থাৎআমাদের মিত্র রাষ্ট্রের প্রতিভূরা প্রত্যক্ষ করবেন শান্তি ও অগ্রগতি, সাফল্য ওসুস্থিতি এবং অন্তর্ভুক্তি ও সহযোগিতার এক উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা।
ধন্যবাদ।
আপনাদের সকলকে অনেকঅনেক ধন্যবাদ।
PG/SKD/DM
Former President of Afghanistan @KarzaiH with PM @narendramodi during the @raisinadialogue in Delhi. pic.twitter.com/o4p17r76nQ
— PMO India (@PMOIndia) January 17, 2017
The Prime Minister addressed the @raisinadialogue, where he talked at length about 'New Normal: Multilateralism with Multi-polarity.' pic.twitter.com/hNWPQeVERQ
— PMO India (@PMOIndia) January 17, 2017
Shared my thoughts on ‘The New Normal: Multilateralism and Multi-polarity' at the @raisinadialogue in Delhi. https://t.co/8R45jNw7Kw
— Narendra Modi (@narendramodi) January 17, 2017
Talked about aspects of India's foreign policy, our relations with our immediate neighbourhood & other nations.
— Narendra Modi (@narendramodi) January 17, 2017
Elaborated on how India's strategic interests are shaped by our civilisational ethos of realism, co-existence, cooperation & partnership.
— Narendra Modi (@narendramodi) January 17, 2017
Self-interest is not India's culture. Our actions, aspirations, democracy, demography will be an anchor for regional & global progress.
— Narendra Modi (@narendramodi) January 17, 2017
For the world, India will remain a beacon of peace & progress, stability & success and access & accommodation.
— Narendra Modi (@narendramodi) January 17, 2017