নয়াদিল্লি, ২৩ জানুয়ারি, ২০২১
জয় হিন্দ, জয় হিন্দ, জয় হিন্দ!
মঞ্চে উপস্থিত পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল শ্রী জগদীপ ধনকরজি, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ভগিনী মমতা ব্যানার্জীজি, আমার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সহযোগী শ্রী প্রহ্লাদ প্যাটেলজি, শ্রী বাবুল সুপ্রিয়জি, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বোসের নিকট আত্মীয়-স্বজন, ভারতের গৌরব বৃদ্ধিকারী আজাদ হিন্দ ফৌজের পরাক্রমী সদস্যরা, তাঁদের পরিবার-পরিজন, এখানে উপস্থিত কলা এবং সাহিত্য জগতের দিগগজ ব্যক্তিবর্গ আর পশ্চিমবঙ্গের এই মহান ভূমির ভাই ও বোনেরা,
আজ কলকাতায় আসা আমার জীবনে একটি অত্যন্ত আবেগপূর্ণ সফর। ছোটবেলায় যখনই নাম শুনতাম, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস, তখন যে কোনও পরিস্থিতিতে সেই নাম কানে ঢুকলে একটি নতুন প্রাণশক্তিতে আমার মন ভরে উঠত। এত বড় ব্যক্তিত্ব, তাঁর ব্যাখ্যা দিতে শব্দ কম পড়ে যাবে। এত দূরদৃষ্টি বুঝতে হলে অনেক জন্ম নিতে হবে। কঠিন থেকে কঠিনতম পরিস্থিতিতেও এত সাহস, এত উদ্যম বিশ্বের অনেক বড় চ্যালেঞ্জও তাঁকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। আমি আজ নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোসের পদতলে আমার মাথা ঠেকাই। তাঁকে প্রণাম জানাই। আমি প্রণাম জানাই সেই মা-কে, প্রভা দেবীজিকে যিনি নেতাজীর জন্ম দিয়েছেন। আজ সেই পবিত্র দিনটির ১২৫ বছর পূর্ণ হল। ১২৫ বছর আগে আজকের দিনেই ভারতমাতার কোল আলো করে এই বীর সুপুত্র জন্মগ্রহণ করেছিলেন যিনি স্বাধীন ভারতের স্বপ্নকে একটি নতুন মাত্রা দিয়েছিলেন। আজকের দিনেই দাসত্বের অন্ধকারে সেই চেতনা প্রস্ফুটিত হয়েছিল যা বিশ্বের সর্ববৃহৎ ক্ষমতার বিরুদ্ধে দৃপ্ত হুঙ্কার দিয়ে বলেছিল, “আমি তোমাদের কাছ থেকে স্বাধীনতা চাইব না, স্বাধীনতা ছিনিয়ে নেব”। আজকের দিনে শুধুই নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর জন্ম হয়নি। আজকের দিনে ভারতের নতুন আত্মগৌরবের জন্ম হয়েছিল। ভারতের নতুন সৈন্য-কৌশলের জন্ম হয়েছিল। আমি আজ নেতাজীর ১২৫তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে কৃতজ্ঞ রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এই মহাপুরুষকে কোটি কোটি প্রণাম জানাই, তাঁকে স্যালুট জানাই।
বন্ধুগণ,
আমি আজ বালক সুভাষ থেকে নেতাজী হয়ে ওঠা, তাঁর জীবনের তপস্যা, ত্যাগ এবং তিতিক্ষা দিয়ে গড়ে তোলা বাংলার এই পূণ্যভূমিকেও সাদর প্রণাম জানাই। গুরুদেব শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মত মহাপুরুষদের এই পূণ্যভূমি সব সময় দেশভক্তির ভাবনায় ভরপুর। স্বামী রামকৃষ্ণ পরমহংস, চৈতন্য মহাপ্রভু, শ্রী অরবিন্দ, মা সারদা, মা আনন্দময়ী, স্বামী বিবেকানন্দ, শ্রীশ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র-এর মতো সাধুরা এই পূণ্যভূমিকে বৈরাগ্য, সেবা এবং আধ্যাত্মের মাধ্যমে অলৌকিক করে তুলেছেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, রাজা রামমোহন রায়, গুরুচাঁদ ঠাকুর, হরিচাঁদ ঠাকুরের মতো অনেক সমাজ সংস্কারক, সমাজ সংস্কারের অগ্রদূতেরা এই পূণ্যভূমি থেকে দেশে নতুন সংস্কারের ভিত্তি গড়ে তুলেছেন। জগদীশ চন্দ্র বসু, পি সি রায়, এস এন বোস এবং মেঘনাদ সাহার মতো অগণিত বৈজ্ঞানিক এই পূণ্যভূমিকে জ্ঞান-বিজ্ঞানের মাধ্যমে সিঞ্চন করেছেন। এই পূণ্যভূমি থেকেই দেশ তার জাতীয় সঙ্গীত পেয়েছে, জাতীয় স্তোত্রও পেয়েছে। এই মাটিই আমাদের দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস, ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী এবং আমাদের সকলের প্রিয় ভারতরত্ন প্রণব মুখার্জীর সঙ্গে সাক্ষাৎকার করিয়েছে। আমি এই ভূমির এমন লক্ষ লক্ষ মহান ব্যক্তিত্বের চরণেও আজ এই পবিত্র দিনে প্রণাম জানাই।
বন্ধুগণ,
এখানে আসার একটু আগে আমি ন্যাশনাল লাইব্রেরী গিয়েছিলাম। নেতাজীর ঐতিহ্য নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন এবং আর্টিস্ট ক্যাম্পের আয়োজনে অংশগ্রহণ করেছি। আমি অনুভব করেছি, নেতাজীর নাম শুনলেই প্রত্যেকে কতটা প্রাণশক্তিতে ভরপুর হয়ে ওঠেন। নেতাজীর জীবনের এই প্রাণশক্তি যেন তাঁর অন্তর্মনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়, তাঁর এই প্রাণশক্তি, এই আদর্শ, এই তপস্যা, এই ত্যাগ দেশের প্রত্যেক যুবদের জন্য অনেক বড় প্রেরণা। আজ যখন ভারত নেতাজীর প্রেরণা নিয়ে এগিয়ে চলেছে, তখন আমাদের সকলের কর্তব্য যে তাঁর অবদানকে বারবার স্মরণ করি। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে তাঁকে স্মরণ করি। সেজন্য দেশবাসী এটা ঠিক করেছে যে নেতাজীর এই ১২৫তম জন্মজয়ন্তী বছরটিকে ঐতিহাসিক এবং অভূতপূর্ব অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে সারা বছর ধরে পালন করা হবে। আজ সকাল থেকেই সারা দেশের প্রত্যেক প্রান্তে নেতাজী জন্ম দিবস সংক্রান্ত এই কর্মসূচি শুরু হয়েছে। আজ এই ক্রম অনুসারে নেতাজীর স্মৃতিতে একটি স্মারক মুদ্রা এবং ডাক টিকিটও প্রকাশ করা হয়েছে। নেতাজীর চিঠিগুলির একটি সঙ্কলন পুস্তকও উদ্বোধন করা হয়েছে। কলকাতা তথা বাংলা, যেখানে তাঁর কর্মভূমি ছিল, সেখানে নেতাজীর জীবন নিয়ে একটি বড় প্রদর্শনী এবং প্রোজেকশন ম্যাপিং শো আজ থেকে শুরু হচ্ছে। হাওড়া থেকে যাত্রা শুরু করা হাওড়া-কালকা মেলের নামও আজ থেকে বদলে নেতাজী এক্সপ্রেস করে দেওয়া হয়েছে। দেশ এটাও স্থির করেছে যে এখন প্রত্যেক বছর আমরা নেতাজী জয়ন্তী, অর্থাৎ ২৩শে জানুয়ারিকে ‘পরাক্রম দিবস’ হিসেবে পালন করবে। আমাদের নেতাজী ভারতের পরাক্রমের প্রতিমূর্তিও আবার প্রেরণাও। আজ যখন এ বছর দেশ তার স্বাধীনতার ৭৫ বছরে প্রবেশ করতে চলেছে, যখন দেশ আত্মনির্ভর ভারতের সঙ্কল্প নিয়ে এগিয়ে চলেছে, তখন নেতাজীর জীবন, তাঁর প্রতিটি কাজ, তাঁর প্রতিটি সিদ্ধান্ত আমাদের সকলের জন্য অনেক বড় প্রেরণা। তাঁর মতো বিশাল ইচ্ছাশক্তি সম্পন্ন ব্যক্তিত্বের জন্য কোনকিছুই অসম্ভব ছিল না। তিনি বিদেশে গিয়ে ভারতের বাইরে বসবাসকারী ভারতীয়দের চেতনাকে জাগিয়ে তুলেছিলেন। তিনি স্বাধীনতার জন্য আজাদ হিন্দ ফৌজকে শক্তিশালী করেছেন। তিনি গোটা দেশ থেকে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রত্যেক ইচ্ছুক ব্যক্তিকে সৈনিকের মর্যাদা দিয়েছেন। সেই সময় যখন মহিলারা তাঁদের সাধারণ অধিকার নিয়ে আলোচনা করতেন, নেতাজী তাঁর সেনাবাহিনীতে রানি ঝাঁসি রেজিমেন্ট তৈরি করে মহিলাদের তার সঙ্গে যুক্ত করেছিলেন। তিনি সেনাবাহিনীকে আধুনিক যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। তাদের দেশের জন্য লড়াই করার উদ্দীপনা দিয়েছেন। দেশের জন্য মৃত্যু বরণের লক্ষ্য রেখেছেন। নেতাজী বলেছিলেন, “ভারত ডাকছে, রক্ত ডাক দিয়েছে রক্তকে, ওঠো, দাঁড়াও, আমাদের নষ্ট করার মতো সময় নেই”।
বন্ধুগণ,
এরকম সাহসী উদ্দীপ্ত হুঙ্কার শুধু এবং শুধু নেতাজীই দিতে পারতেন। আর অবশেষে তিনি এটা করেও দেখিয়েছেন, যে ব্রিটিশ শাসনের সূর্য কখনও অস্ত যেত না,ভারতের বীর সুপুত্ররা রণভূমিতে তাদেরকেও পরাহুত করতে পারে। তিনি সঙ্কল্প নিয়েছিলেন ভারতের মাটিতে স্বাধীন ভারতের, স্বাধীন সরকারের ভিত্তি রচনা করবেন। নেতাজী তাঁর প্রতিশ্রুতি পূরণ করে দেখিয়েছেন। তিনি আন্দামানে তাঁর সৈনিকদের সঙ্গে নিয়ে ভারতের ত্রিবর্ণ রঞ্জিত পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। যে স্থানে ইংরেজরা দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের অত্যাচার করত, কালাপানির সাজা দিত, সেই জায়গায় গিয়ে তিনি সেই স্বাধীনতা সংগ্রামীদের শ্রদ্ধাঞ্জলি দিয়েছিলেন। সেই সরকার অখণ্ড ভারতের প্রথম স্বাধীন সরকার ছিল। নেতাজী অখণ্ড ভারতের আজাদ হিন্দ সরকারের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। আর এটা আমার সৌভাগ্য যে স্বাধীনতার সেই প্রথম ঝলককে সুরক্ষিত রাখার জন্য, ২০১৮ সালে আমরা আন্দামানের সেই দ্বীপটির নাম বদলে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস দ্বীপ রেখেছি। দেশের ভাবনা বুঝে নেতাজী সংক্রান্ত ফাইলগুলিও আমাদের সরকারই সর্বসমক্ষে এনেছে। এটা আমাদের সরকারের সৌভাগ্য যে ২৬শে জানুয়ারির প্যারেডের সময় আজাদ হিন্দ ফৌজের প্রাক্তনীরা প্যারেডে সামিল হয়েছেন। আজ এখানে এই কর্মসূচিতেও আজাদ হিন্দ ফৌজের সদস্য, দেশের বীর পুত্র ও কন্যারা উপস্থিত হয়েছেন। আমি আপনাদের আরেকবার প্রণাম জানাই ,এবং প্রণাম জানিয়ে একথা বলতে চাই, দেশ সদা সর্বদা আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে।
বন্ধুগণ,
২০১৮ সালেই দেশ মহাসমারোহে আজাদ হিন্দ সরকারের ৭৫ বছর পূর্তি পালন করেছে। দেশ সেই বছরই বিপর্যয় মোকাবিলার ক্ষেত্রে ‘সুভাষ চন্দ্র বোস আপদা প্রবন্ধন পুরস্কার’ চালু করেছে। নেতাজী “দিল্লি দূরে নেই” স্লোগান দিয়ে লালকেল্লায় ত্রিবর্ণ রঞ্জিত পতাকা উত্তোলনের স্বপ্ন দেখেছিলেন। দেশবাসী সেই জাতীয় পতাকা লালকেল্লায় উত্তোলন করে তাঁর স্বপ্ন পূরণ করেছে।
ভাই ও বোনেরা,
যখন আজাদ হিন্দ ফৌজের ক্যাপ পড়ে আমি লালকেল্লায় সেবার পতাকা উত্তোলন করেছিলাম, সেই পতাকাটিকে আমি কপালে ঠেকিয়ে নিয়েছিলাম। সেই সময় আমার মন ও মস্তিষ্কে অনেক কিছু চলছিল, অনেক প্রশ্ন জেগে উঠছিল। কী যে হচ্ছিল, তা একটা অন্যরকম অনুভূতি! আমি নেতাজী সম্পর্কে ভাবছিলাম, দেশবাসী সম্পর্কে ভাবছিলাম। তিনি কাদের জন্য সারা জীবন এত ঝুঁকি নিয়েছিলেন এর একমাত্র উত্তর হল আমাদের জন্য, আপনাদের জন্য। তিনি দীর্ঘকাল কাদের আমরণ অনশনে কষ্ট পেয়েছেন? আপনাদের জন্য এবং আমাদের জন্য। তিনি মাসের পর মাস কাদের জন্য কারান্তরালে কষ্ট পেয়েছেন? আপনাদের জন্য এবং আমাদের জন্য। আর কোন স্বাধীনতা সংগ্রামী এমন আছেন যার পেছনে এতবড় ব্রিটিশ শাসন পড়েছিল? কিন্তু তিনি জীবন হাতে নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন। সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে কাবুলের পথে নিজের জীবন বিপন্ন করে এক বিদেশি দূতাবাস থেকে অন্য বিদেশি দূতাবাসে আশ্রয় ভিক্ষা করে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন কাদের জন্য? আপনাদের এবং আমাদের জন্য। বিশ্বযুদ্ধের সেই আবহে বিভিন্ন দেশের মধ্যে ক্রম-পরিবর্তনশীল সম্পর্কের ফলে তাঁকে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়েছিল। তবুও তিনি প্রত্যেক দেশের কাছে গিয়ে ভারতের জন্য সমর্থন চাইছিলেন যাতে ভারত স্বাধীন হতে পারে, আমরা এবং আপনারা স্বাধীন ভারতে নিঃশ্বাস নিতে পারি। ভারতের প্রত্যেক ব্যক্তি নেতাজী সুভাষবাবুর কাছে ঋণী। ১৩০ কোটিরও বেশি ভারতীয়দের শরীরে প্রবাহমান প্রতিটি রক্তবিন্দু নেতাজী সুভাষবাবুর কাছে ঋণী। এই ঋণ আমরা কিভাবে পরিশোধ করব? এই ঋণ কি আমরা কোনদিন পরিশোধ করতে পারবো?
বন্ধুগণ,
যখন নেতাজী সুভাষ বোস কলকাতায় নিজের ৩৮/২ এলগিন রোডের বাসভবনে গৃহবন্দি ছিলেন, যখন তিনি ভারত থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তখন তিনি তাঁর ভ্রাতষ্পুত্র শিশিরকে ডেকে বলেছিলেন, “আমার একটা কাজ করতে পারবে?” এরপর শিশিরজি তাই করেছিলেন যা ভারতের স্বাধীনতার সব থেকে কারণগুলির মধ্যে একটিতে পরিণত হয়েছিল। নেতাজী এটা দেখছিলেন যে বিশ্বযুদ্ধের আবহে যদি ব্রিটিশ সরকারকে বাইরে থেকে আঘাত করা যায় তাহলে তারা সব থেকে বেশি আঘাত পাবে। তিনি দূরদ্রষ্টা ছিলেন। ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছিলেন। যেভাবে যেভাবে বিশ্বযুদ্ধ এগিয়ে যাবে সেভাবে ইংরেজদের শক্তি হ্রাস পেতে থাকবে। ভারতের ওপর তাদের কর্তৃত্ব কমতে থাকবে। এটাই ছিল তাঁর দূরদৃষ্টি। আমি কোথাও পড়েছিলাম যে সেই সময় তাঁর ভ্রাতষ্পুত্রী ইলাকে দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে পাঠিয়েছিলেন মায়ের আশীর্বাদ নিয়ে আসার জন্যে। তিনি দেশ থেকে দ্রুত বেড়িয়ে পড়তে চাইছিলেন। দেশের বাইরে ভারতের যত যত সমর্থক শক্তিগুলি আছে সেগুলিকে একত্রিত করতে চেয়েছিলেন। সেজন্য নবীন যুবক শিশিরকে বলেছিলেন “আমার একটা কাজ করতে পারবে”?
বন্ধুগণ,
আজ প্রত্যেক ভারতীয় তাঁদের হৃদয়ে হাত রেখে নেতাজী সুভাষ চন্দ্রকে যদি অনুভব করেন তাহলে আরেকবার সেই প্রশ্ন শুনতে পাবেন – “আমার একটা কাজ করতে পারবে?” এই কাজ, এই লক্ষ্য আজ ভারতকে আত্মনির্ভর করে তোলার কাজ। দেশের প্রতিটি মানুষ, দেশের প্রত্যেক ক্ষেত্র, দেশের প্রত্যেক ব্যক্তি এর সঙ্গে যুক্ত। নেতাজী বলেছিলেন, পুরুষ, অর্থ এবং উপকরণ নিজেরাই বিজয় বা স্বাধীনতা আনতে পারে না। আমাদের অবশ্যই সেই উদ্দেশ্য শক্তি থাকতে হবে যা আমাদের সাহসী কাজ এবং বীরত্বপূর্ণ শাসনে উদ্বুদ্ধ করবে। আজ আমাদের কাছে উদ্দেশ্য আছে, শক্তি আছে। আমাদের আত্মনির্ভর ভারতের লক্ষ্য আমাদের আত্মশক্তি, আমাদের আত্মসঙ্কল্প দিয়ে সম্পূর্ণ হবে। নেতাজী বলেছিলেন, “আজ আমাদের কেবল একটি ইচ্ছা থাকা উচিৎ, যাতে আমাদের ভারত বাঁচতে পারে, ভারত এগিয়ে যায়।” আমাদেরও একটাই লক্ষ্য, নিজেদের রক্ত-ঘাম ঝরিয়ে দেশের জন্য বাঁচা, নিজেদের পরিশ্রম দিয়ে নিজেদের উদ্ভাবনের মাধ্যমে দেশকে আত্মনির্ভর করে তোলা। নেতাজী বলতেন, “নিজের প্রতি সৎ হলে সারা বিশ্বের প্রতি কেউ অসৎ হতে পারবে না।” আমাদের বিশ্বের জন্য উন্নতমানের পণ্য উৎপাদন করতে হবে। কোনরকম নিকৃষ্ট মানের সঙ্গে আপোস করা চলবে না। ‘জিরো ডিফেক্ট, জিরো এফেক্ট’ সম্পন্ন পণ্য। নেতাজী আমাদের বলেছিলেন, “স্বাধীন ভারতের স্বপ্নে কোনদিন আস্থা হারিয়ো না। বিশ্বে এমন কোনও শক্তি নেই যে ভারতকে পরাধীনতার শৃঙ্খলায় বেঁধে রাখতে সমর্থ হবে।” সত্যিই বিশ্বে আজ এমন কোনও শক্তি নেই যারা ১৩০ কোটি ভারতবাসীকে, আমাদের ভারতকে আত্মনির্ভর ভারত গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বাধা দিতে পারে।
বন্ধুগণ,
নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু দারিদ্র্য, অশিক্ষা, অসুস্থতাকে দেশের সবচাইতে বড় সমস্যা বলে মনে করতেন। তিনি বলতেন, “আমাদের সবচাইতে বড় জাতীয় সমস্যা হল দারিদ্র্য, অশিক্ষা ও রোগ। বৈজ্ঞানিক উপায়ে এই সমস্যার সমাধান হবে। কেবলমাত্র সামাজিক ভাবনাচিন্তা দ্বারা।” আমাদের সবাইকে মিলে-মিশে চেষ্টা করতে হবে। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে আজ দেশ পীড়িত, শোষিত, বঞ্চিত, আমাদের কৃষক ও দেশের মহিলাদের ক্ষমতায়নের জন্য দিন-রাত এক করে কাজ করছে। আজ প্রত্যেক গরীবকে বিনামূল্যে চিকিৎসার সুবিধা দেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য পরিষেবা চালু করা হয়েছে। দেশের কৃষকদের ‘বীজ থেকে বাজার’ পর্যন্ত সমস্ত রকম আধুনিক পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে। চাষের ক্ষেত্রে তাঁদের সমস্ত রকম খরচ হ্রাস করার চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রত্যেক নবীন ব্যক্তি যেন আধুনিক এবং উৎকৃষ্ট শিক্ষা পান, সেজন্য দেশের শিক্ষা পরিকাঠামোকে আধুনিক করে তোলা হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অনেক এইমস, আইআইটি এবং আইআইএম-এর মতো বড় প্রতিষ্ঠান খোলা হয়েছে। আজ দেশ একবিংশ শতাব্দীর প্রয়োজনের হিসেবে নতুন জাতীয় শিক্ষানীতিও চালু করছে।
বন্ধুগণ,
আমি অনেকবার ভেবেছি যে আজ দেশে যেসব পরিবর্তন আসছে যেগুলির মাধ্যমে নতুন ভারত মূর্ত হয়ে উঠছে, সেগুলি নিজের চোখে দেখতে পেলে নেতাজী কতটা সন্তুষ্ট হতেন। তাঁর কেমন লাগত? যখন তিনি বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তিগুলির মাধ্যমে নিজেদের দেশকে আত্মনির্ভর হয়ে উঠতে দেখতেন, তখন তাঁর কেমন লাগত? যখন তিনি গোটা বিশ্বের বড় বড় কোম্পানিতে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যক্ষেত্রে ভারতীয়দের উত্থান দেখতে পেতেন, তখন তাঁর কেমন লাগত? আজ ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে রাফায়েলের মতো আধুনিক বিমান রয়েছে আর তেজসের মতো অত্যাধুনিক বিমান ভারত নিজেই তৈরি করছে। যখন তিনি দেখতেন যে আজ তাঁর দেশের সেনাবাহিনী এত শক্তিশালী, তিনি যেমন চাইতেন তেমন আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সুসজ্জিত, তখন তাঁর কেমন লাগত? আজ যদি নেতাজী দেখতেন যে তাঁর ভারত এত বড় অতিমারীর বিরুদ্ধে কেমন প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে, আজ তাঁর ভারত টিকার মতো আধুনিক বৈজ্ঞানিক সমাধান নিজে তৈরি করেছে তখন তাঁর কেমন লাগত? যখন তিনি দেখতেন যে ভারত টিকা দিয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশকেও সাহায্য করছে, তখন তিনি কত না গর্বিত হতেন! নেতাজী এখন যে স্বরূপেই আমাদের দেখছেন, তিনি নিশ্চয়ই আমাদের আশীর্বাদ করছেন, আমাদের ভালোবাসা দিচ্ছেন। যে শক্তিশালী ভারতের কল্পনা তিনি করেছিলেন, আজ এলএসি থেকে শুরু করে এলওসি পর্যন্ত ভারতের সেই শক্তিশালী চেহারা বিশ্ববাসী দেখতে পাচ্ছে। যেখানেই কেউ ভারতের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতাকে চ্যালেঞ্জ করার চেষ্টা করেছে, ভারত তার যোগ্য জবাব দিয়েছে।
বন্ধুগণ,
নেতাজী সম্পর্কে বলার জন্য এতকিছু রয়েছে যে বলতে বলতে রাতের পর রাত পেরিয়ে যাবে। নেতাজীর মতো মহান ব্যক্তিদের জীবন থেকে আমরা সবাই বিশেষ করে, নবীন প্রজন্ম অনেক শিখতে পারি। কিন্তু আরেকটি কথা যা আমাকে অত্যন্ত প্রভাবিত করেছে তা হল নিজের লক্ষ্যসাধনের জন্য অনবরত প্রচেষ্টা। বিশ্বযুদ্ধের সময়ে যখন সহযোগী দেশ পরাজয়ের সম্মুখীন, আত্মসমর্পণ করছে, তখন নেতাজী তাঁর বাহিনীর সহযোগীদের সঙ্গে যে কথা বলেছিলেন তার মূল ভাব এটাই ছিল যে “সহযোগী দেশগুলি হয়তো আত্মসমর্পণ করেছে কিন্তু আমরা করিনি। আমাদের সঙ্কল্প থেকে সিদ্ধিলাভের ক্ষমতা অদ্বিতীয়।” তিনি নিজের সঙ্গে ভগবদ্গীতা রাখতেন, তা থেকে প্রেরণা পেতেন। তিনি যদি কোনও কাজের জন্য একবার সিদ্ধান্ত নিতেন, তখন সেটি বাস্তবায়িত করার জন্য তিনি যে কোনও সীমা পর্যন্ত যেতে পারতেন। তিনি আমাদের একথা শিখিয়েছেন যদি কোনও ভাবনা অত্যন্ত সরল না থাকে, সাধারণ না থাকে, তার মধ্যে যদি কোনও জটিলতা থাকে, তাহলেও নতুন কিছু করতে ভয় পেলে চলবে না। আপনারা যদি কোনও জিনিসে আস্থা রাখেন, তাহলে আপনাদের সেটিই শুরু করার সাহস দেখাতে হবে। একবার কিম্বা বারবার মনে হতে পারে যে আপনারা স্রোতের বিপরীতে সাঁতার কাটছেন, কিন্তু যদি আপনাদের লক্ষ্য পবিত্র হয়, তাহলে সেক্ষেত্রে কোনও দ্বিধা থাকলে চলবে না। তিনি এটা করে দেখিয়েছেন যে যদি আপনারা দূরগামী কোনও লক্ষ্যের প্রতি সমর্পিত হন, তাহলে আপনাদের সাফল্য আসবেই।
বন্ধুগণ,
আত্মনির্ভর ভারতের স্বপ্নের পাশাপাশি নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস আমাদের ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও সবচাইতে বড় প্রেরণা। দেশের স্বাধীনতার জন্য নেতাজী যে ভূমিকা পালন করেছেন, আজ আপনাদের পশ্চিমবঙ্গকে আত্মনির্ভর ভারত অভিযানে সামিল করার মাধ্যমে সেই ভূমিকা পালন করতে হবে। আত্মনির্ভর ভারত অভিযানের সেই নেতৃত্ব আজ ‘আত্মনির্ভর বাংলা’ এবং ‘সোনার বাংলা’কে করতে হবে। বাংলা আবার এগিয়ে যাক, তার গৌরব বৃদ্ধি করুক, দেশের গৌরবও বৃদ্ধি করুক। নেতাজীর মতোই আমাদেরও নিজেদের সঙ্কল্পগুলি বাস্তবায়ন পর্যন্ত থেমে থাকলে চলবে না। আপনাদের সবাই নিজেদের প্রচেষ্টায় প্রতিটি সঙ্কল্পে সফল হয়ে উঠুন – এই শুভকামনা নিয়ে, আজকের এই পবিত্র দিবসে, এই পবিত্র মাটিতে এসে আপনাদের সকলের আশীর্বাদ নিয়ে আমরা যেন নেতাজীর স্বপ্নগুলি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সঙ্কল্প নিয়ে এগোই। এই একটি ভাবনা নিয়ে আমি আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই।
জয় হিন্দ, জয় হিন্দ, জয় হিন্দ!
অনেক অনেক ধন্যবাদ!
***
CG/SB/DM
India marks #ParakramDivas and pays homage to Netaji Subhas Chandra Bose. https://t.co/5mQh5GuAuk
— Narendra Modi (@narendramodi) January 23, 2021
His bravery and ideals inspire every Indian. His contribution to India is indelible.
— PMO India (@PMOIndia) January 23, 2021
India bows to the great Netaji Subhas Chandra Bose.
PM @narendramodi began his Kolkata visit and #ParakramDivas programmes by paying homage to Netaji Bose at Netaji Bhawan. pic.twitter.com/2DG49aB4vW
At Kolkata’s National Library, a unique tribute is being paid to Netaji Subhas Bose on #ParakramDivas, through beautiful art. pic.twitter.com/Mytasoq2n6
— PMO India (@PMOIndia) January 23, 2021
आज के ही दिन माँ भारती की गोद में उस वीर सपूत ने जन्म लिया था, जिसने आज़ाद भारत के सपने को नई दिशा दी थी।
— PMO India (@PMOIndia) January 23, 2021
आज के ही दिन ग़ुलामी के अंधेरे में वो चेतना फूटी थी, जिसने दुनिया की सबसे बड़ी सत्ता के सामने खड़े होकर कहा था, मैं तुमसे आज़ादी मांगूंगा नहीं, छीन लूँगा: PM
देश ने ये तय किया है कि अब हर साल हम नेताजी की जयंती, यानी 23 जनवरी को ‘पराक्रम दिवस’ के रूप में मनाया करेंगे।
— PMO India (@PMOIndia) January 23, 2021
हमारे नेताजी भारत के पराक्रम की प्रतिमूर्ति भी हैं और प्रेरणा भी हैं: PM
ये मेरा सौभाग्य है कि 2018 में हमने अंडमान के द्वीप का नाम नेताजी सुभाष चंद्र बोस द्वीप रखा।
— PMO India (@PMOIndia) January 23, 2021
देश की भावना को समझते हुए, नेताजी से जुड़ी फाइलें भी हमारी ही सरकार ने सार्वजनिक कीं।
ये हमारी ही सरकार का सौभाग्य रहा जो 26 जनवरी की परेड के दौरान INA Veterans परेड में शामिल हुए: PM
आज हर भारतीय अपने दिल पर हाथ रखे, नेताजी सुभाष को महसूस करे, तो उसे फिर ये सवाल सुनाई देगा:
— PMO India (@PMOIndia) January 23, 2021
क्या मेरा एक काम कर सकते हो?
ये काम, ये काज, ये लक्ष्य आज भारत को आत्मनिर्भर बनाने का है।
देश का जन-जन, देश का हर क्षेत्र, देश का हर व्यक्ति इससे जुड़ा है: PM
नेताजी सुभाष चंद्र बोस, गरीबी को, अशिक्षा को, बीमारी को, देश की सबसे बड़ी समस्याओं में गिनते थे।
— PMO India (@PMOIndia) January 23, 2021
हमारी सबसे बड़ी समस्या गरीबी, अशिक्षा, बीमारी और वैज्ञानिक उत्पादन की कमी है।
इन समस्याओं के समाधान के लिए समाज को मिलकर जुटना होगा, मिलकर प्रयास करना होगा: PM
नेताजी सुभाष, आत्मनिर्भर भारत के सपने के साथ ही सोनार बांग्ला की भी सबसे बड़ी प्रेरणा हैं।
— PMO India (@PMOIndia) January 23, 2021
जो भूमिका नेताजी ने देश की आज़ादी में निभाई थी, वही भूमिका पश्चिम बंगाल को आत्मनिर्भर भारत में निभानी है।
आत्मनिर्भर भारत का नेतृत्व आत्मनिर्भर बंगाल और सोनार बांग्ला को भी करना है: PM
Went to Netaji Bhawan in Kolkata to pay tributes to the brave Subhas Bose.
— Narendra Modi (@narendramodi) January 23, 2021
He undertook numerous measures for the development of Kolkata. #ParakramDivas pic.twitter.com/XdChQG36nk
A spectacular Projection Mapping show underway at the Victoria Memorial. This show traces the exemplary life of Netaji Subhas Bose. #ParakramDivas pic.twitter.com/YLnCDcV8YY
— PMO India (@PMOIndia) January 23, 2021
Creating an Aatmanirbhar Bharat is an ideal tribute to Netaji Bose, who always dreamt of a strong and prosperous India. #ParakramDivas pic.twitter.com/laYP6braCt
— Narendra Modi (@narendramodi) January 23, 2021
Whatever Netaji Subhas Chandra Bose did, he did for India...he did for us.
— Narendra Modi (@narendramodi) January 23, 2021
India will always remain indebted to him. #ParakramDivas pic.twitter.com/Iy96plu8TQ
Netaji rightly believed that there is nothing that constrain India’s growth.
— Narendra Modi (@narendramodi) January 23, 2021
He was always thoughtful towards the poor and put great emphasis on education. #ParakramDivas pic.twitter.com/Pqmb5UvhzL
The positive changes taking place in India today would make Netaji Subhas Bose extremely proud. #ParakramDivas pic.twitter.com/mdemUH4tey
— Narendra Modi (@narendramodi) January 23, 2021
I bow to the great land of West Bengal. pic.twitter.com/fSPjnTsqSU
— Narendra Modi (@narendramodi) January 23, 2021
The National Library is one of Kolkata’s iconic landmarks. At the National Library, I interacted with artists, researchers and other delegates as a part of #ParakramDivas.
— Narendra Modi (@narendramodi) January 23, 2021
The 125th Jayanti celebrations of Netaji Bose have captured the imagination of our entire nation. pic.twitter.com/r3xVdTKFXf
Some glimpses from the programme at Victoria Memorial. #ParakramDivas pic.twitter.com/rBmhawJAwA
— Narendra Modi (@narendramodi) January 23, 2021