Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

নভি মুম্বইতে ইসকনের শ্রী শ্রী রাধা মদনমোহনজী মন্দিরের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী

নভি মুম্বইতে ইসকনের শ্রী শ্রী রাধা মদনমোহনজী মন্দিরের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী


নতুন দিল্লি, ১৫  জানুয়ারী, ২০২৫

 

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ নভি মুম্বইয়ের খরঘরে ইসকনের শ্রী শ্রী রাধা মদনমোহনজী মন্দিরের উদ্বোধন করেছেন। সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ধরনের এক ঐশ্বরিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পেরে তিনি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছেন। ইসকনের সাধুদের গভীর স্নেহ ও আন্তরিকতা এবং শ্রীল প্রভুপাদ স্বামীর আশীর্বাদের কথা স্মরণ করেন তিনি। সাধুদের প্রধানমন্ত্রী তাঁর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানান। শ্রী রাধা মদনমোহনজী মন্দির চত্বরের নকশা ও ভাবনা, আধ্যাত্মিকতা ও জ্ঞানের সামগ্রিক ঐতিহ্যের প্রতিফলন বলে তিনি মন্তব্য করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই মন্দিরে ‘একোহম বহুস্যাম’ –এর ধারণার ওপর ভিত্তি করে দেবতার বিভিন্ন রূপ প্রদর্শন করা হয়েছে। নতুন প্রজন্মের জন্য এখানে রামায়ণ ও মহাভারত নিয়ে একটি সংগ্রহশালা গড়ে তোলা হচ্ছে। এছাড়া বৃন্দাবনের দ্বাদশ বনের থেকে প্রাণিত হয়ে এখানে একটি উদ্যানও তৈরী হচ্ছে। এই পবিত্র মন্দির চত্বর ভারতের চেতনা ও বিশ্বাসকে সমৃদ্ধ করবে বলে মন্তব্য করে তিনি এই উদ্যোগের জন্য ইসকনের সাধু – সন্ন্যাসী – সদস্য এবং মহারাষ্ট্রের মানুষকে অভিনন্দন জানান।

গোপাল কৃষ্ণ গোস্বামী মহারাজের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহারাজের দৃষ্টিভঙ্গী ও আশীর্বাদ, শ্রী কৃষ্ণের প্রতি তাঁর সুগভীর ভক্তি, এই প্রকল্পের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। মহারাজ সশরীরে এখানে উপস্থিত না থাকলেও সবাই তাঁর উপস্থিতি অনুভব করছেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর জীবনে মহারাজের স্নেহলাভের স্মৃতিচারণ করেন। শ্রীল প্রভুপাদজীর ১২৫ তম জন্মবার্ষিকীতে বিশ্বের বৃহত্তম গীতার উন্মোচনে মহারাজ তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। 

শ্রী মোদী বলেন, ভগবান কৃষ্ণের প্রতি তাঁদের ভক্তির সূত্রে বিশ্বজুড়ে ইসকনের অনুগামীরা আবদ্ধ রয়েছেন। এর পাশাপাশি শ্রীল প্রভুপাদ স্বামীর শিক্ষা তাঁদের একসূত্রে বেঁধে রেখেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, শ্রীল প্রভুপাদ স্বামী ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়ে বেদ-বেদান্ত ও গীতার গুরুত্ব প্রচার করেছিলেন, ভক্তিবেদান্তকে সাধারণ মানুষের চেতনার সঙ্গে যুক্ত করেছিলেন। ৭০ বছর বয়সে যখন অধিকাংশ মানুষই তাঁদের কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে মনে করেন, তখন শ্রীল প্রভুপাদ স্বামী ইসকনের সূচনা করেন এবং শ্রী কৃষ্ণের বাণী প্রতিটি প্রান্তে পৌঁছে দিতে সারা বিশ্ব পরিভ্রমণ করেন। শ্রীল প্রভুপাদ স্বামীর এই সক্রিয় উদ্যোগ আজও আমাদের অনুপ্রাণিত করে চলেছে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত শুধুমাত্র ভৌগোলিক সীমায় আবদ্ধ এক টুকরো জমি নয়, ভারত এক প্রাণবন্ত সংস্কৃতির অসাধারণ বিস্ময়কর ভূমি। এই সংস্কৃতির কেন্দ্রে রয়েছে আধ্যাত্মিকতা। ভারতকে বুঝতে হলে প্রথমে এর আধ্যাত্মিকতাকে গ্রহণ করতে হবে। ভারতের পূর্বে বাংলায় চৈতন্য মহাপ্রভুর মতো সাধকের আবির্ভাব হয়েছিল। পশ্চিমে মহারাষ্ট্রে আবির্ভূত হয়েছিলেন নামদেব, তুকারাম, জ্ঞানেশ্বরের মতো সাধকরা। চৈতন্য মহাপ্রভু মহাবাক্যমন্ত্র মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। মহারাষ্ট্রের সাধকরা রামকৃষ্ণ হরি মন্ত্রের মাধ্যমে মানুষকে অমৃতের স্বাদ দিয়েছিলেন। ভগবান কৃষ্ণের সুগভীর জ্ঞানকে সন্ত জ্ঞানেশ্বর, জ্ঞানেশ্বরী গীতার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে এনে দিয়েছিলেন। একইভাবে শ্রীল প্রভুপাদ ইসকনের মাধ্যমে গীতাকে জনপ্রিয় করে তুলেছেন। এর ভাষ্য প্রকাশ করে সাধারণ মানুষের কাছে গীতার সারমর্ম পৌঁছে দিয়েছেন। এই সব সাধকেরা আলাদা জায়গায় আলাদা সময়ে জন্মগ্রহণ করলেও প্রত্যেকেই তাঁদের নিজেদের মতো করে কৃষ্ণ ভক্তির স্রোতকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের আধ্যাত্মিক সংস্কৃতির ভিত্তি হল সেবা। এখানে মানুষের সেবা করাকেই ঈশ্বরের সেবা বলে ভাবা হয়। শ্রী কৃষ্ণের একটি শ্লোক উদ্ধৃত করেন প্রধানমন্ত্রী, যার অর্থ প্রকৃত সেবা নিঃস্বার্থ হয়। তিনি বলেন, প্রতিটি ধর্মগ্রন্থই এই সেবার কথা বলে। ইসকনও এই সেবার মনোভাব নিয়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষার মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করে। কুম্ভমেলাতেও ইসকন প্রশংসনীয় কাজ করছে। 

তাঁর সরকার একই রকম সেবার মনোভাব নিয়ে নাগরিকদের কল্যাণে ক্রমাগত কাজ করে চলেছে বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, প্রতিটি বাড়িতে শৌচাগার নির্মাণ, উজ্জ্বলা যোজনায় দরিদ্র মহিলাদের রান্নার গ্যাসের সংযোগ দেওয়া, প্রতিটি পরিবারে নলবাহিত জল পৌঁছে দেওয়া, প্রতিটি দরিদ্র মানুষকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনামূল্য চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া, সত্তরোর্ধ প্রতিটি মানুষের কাছে প্রতিটি মানুষের জন্য এই সুবিধার সম্প্রসারণ, গৃহহীন প্রতিটি মানুষকে পাকা বাড়ি করে দেওয়া – এই সব উদ্যোগই নেওয়া হয়েছে সেবার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে। সেবার এই চেতনাই প্রকৃত সামাজিক ন্যায় সুনিশ্চিত করে, এটাই প্রকৃত ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতীক।

কৃষ্ণ সার্কিটের মাধ্যমে সরকার দেশজুড়ে বিভিন্ন তীর্থস্থানগুলিকে সংযুক্ত করছে বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গুজরাট, রাজস্থান, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ ও ওড়িশা পর্যন্ত এই সার্কিট বিস্তৃত। স্বদেশ দর্শন এবং প্রসাদ প্রকল্পের আওতায় এই তীর্থস্থানগুলির উন্নয়ন ঘটানো হচ্ছে। ভক্তরা যাতে ভগবান কৃষ্ণের জীবনের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন স্থান ও মন্দির দর্শন করতে পারেন, সেজন্য বিশেষ ট্রেন চালানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই সব স্থানে ভক্তদের নিয়ে আসার ক্ষেত্রে ইসকন সহযোগিতা করতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন। ভক্তদের এইরকম অন্তত ৫ টি স্থান দর্শন করার জন্য উৎসাহিত করতে ইসকনকে অনুরোধ জানান প্রধানমন্ত্রী। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত এক দশকে দেশ উন্নয়ন ও ঐতিহ্য দুই ক্ষেত্রেই অগ্রগতি লাভ করেছে। ঐতিহ্যের মাধ্যমে উন্নয়নের এই মিশনে ইসকনের মতো প্রতিষ্ঠানের উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মন্দির ও তীর্থস্থানগুলি সামাজিক চেতনার কেন্দ্র হয়ে থেকেছে। শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুকুলগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ইসকন তার কর্মসূচির মাধ্যমে যুব সমাজকে আধ্যাত্মিকতাকে জীবনের এক অঙ্গ হিসেবে গ্রহণ করতে অনুপ্রাণিত করেছে। ইসকনের তরুণ অনুগামীরা যেভাবে ঐতিহ্য অনুসরণের সঙ্গে সঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তিকে গ্রহণ করেছেন, তা অন্যদের সামনে আদর্শ হয়ে উঠেছে। ইসকনের নির্দেশনায় তরুণরা সেবা ও নিষ্ঠার মনোভাব নিয়ে জাতীয় স্বার্থে কাজ করবেন বলে প্রধানমন্ত্রী প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। মন্দির চত্বরে প্রতিষ্ঠিত ভক্তিবেদান্ত আয়ুর্বেদিক নিরাময় কেন্দ্র এবং ভক্তি বেদান্ত বৈদিক শিক্ষা কলেজ সমাজ ও সমগ্র দেশের উপকারে আসবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমাজ আধুনিকতার পথে যত অগ্রসর হচ্ছে, ততো বেশি করে সহানুভূতি ও সংবেদনশীলতার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হচ্ছে। ইসকন ভক্তি বেদান্তের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী সংবেদনশীলতা ও মানবিক মূল্যবোধের প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে। ইসকনের নেতারা শ্রীল প্রভুপাদস্বামীর আদর্শকে সমুন্নত রাখবেন বলে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন। 

মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল শ্রী সি পি রাধাকৃষ্ণন, মুখ্যমন্ত্রী শ্রী দেবেন্দ্র ফড়নবীশ প্রমুখ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।      

  

SC/SD/SG