Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

নতুন সংসদ ভবনে লোকসভায় প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ


নতুন দিল্লি,   ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

 

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ নতুন সংসদ ভবনে লোকসভায় বক্তব্য রেখেছেন। 

নতুন সংসদ ভবনের প্রথম অধিবেশনকে ঐতিহাসিক আখ্যা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী এই উপলক্ষে সকলকে শুভেচ্ছা জানান। নতুন সংসদ ভবনের প্রথম দিনেই সংসদের বিশেষ অধিবেশনে তাঁকে বলার সুযোগ দেওয়ায় লোকসভার অধ্যক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সদস্যদের স্বাগত জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অমৃতকালের প্রত্যুষে নতুন সংসদ ভবনে দৃঢ় সংকল্প নিয়ে ভারত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে চলেছে। সাম্প্রতিক সাফল্য হিসেবে চন্দ্রযান তিনের চাঁদে অবতরণ এবং জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন ও বিশ্ব মঞ্চে তার প্রভাবের উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ভারতের সামনে এক অনন্য সুযোগ এসে উপস্থিত হয়েছে এবং সেই আলোতেই নতুন সংসদ ভবনে আজ সংসদীয় কাজকর্ম শুরু হল। গণেশ চতুর্থীর শুভ লগ্নের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গণেশ হলেন সমৃদ্ধি, মঙ্গল, যুক্তি ও জ্ঞানের দেবতা। সংকল্প সম্পাদনের এবং নতুন উদ্যম ও শক্তির সঙ্গে নতুন যাত্রা শুরু করার এটাই শুভ মুহূর্ত। লোকমান্য তিলকের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়ে তিলক এই গণেশ চতুর্থীকে সমগ্র দেশে স্বরাজের শিখা প্রজ্জ্বলিত করার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। সেই একই অনুপ্রেরণা নিয়ে আমরা আজ এগিয়ে চলেছি। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের দিনটি সমবাৎসরী পর্বও বটে, যা ক্ষমার উৎসব হিসেবে উদযাপিত হয়। এই উৎসবে ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত কোন কাজের জন্য কেউ আহত হয়ে থাকলে তার কাছে ক্ষমা চাওয়া হয়। এই উৎসবের সুরে সুর মিলিয়ে প্রধানমন্ত্রী সবাইকে মিচ্ছামি দুক্কাদম বলেন এবং অতীতের সব তিক্ততাকে পিছনে ফেলে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। 

সভায় পবিত্র সেঙ্গলের উপস্থিতির উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই দন্ড পুরানো ও নতুনের মধ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ যোগসূত্র এবং স্বাধীনতার প্রথম আলোর সাক্ষী। দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পন্ডিত জওহরলাল নেহরু এই দন্ড স্পর্শ করেছিলেন। অতীতের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশের সঙ্গে আমাদের যোগসূত্র স্থাপন করে এই সেঙ্গল। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নতুন ভবনের জাঁকজমক অমৃতকালকে অভিষিক্ত করছে। এই প্রসঙ্গে তিনি শ্রমিক ও ইঞ্জিনিয়ারদের কঠোর পরিশ্রমের কথা স্মরণ করেন, যাঁরা অতিমারির সময়েও নিজেদের কাজ করে গিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সমগ্র সভা এই শ্রমিক ও ইঞ্জিনিয়ারদের অভিনন্দন জানায়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ভবন নির্মাণে ৩০ হাজারেরও বেশি শ্রমিকের অবদান রয়েছে। প্রত্যেকের কাজের সম্পূর্ণ বিবরণ সংরক্ষিত রয়েছে একটি ডিজিটাল বইতে।

আমাদের কাজের ওপর আমাদের আবেগ ও অনুভবের প্রভাব সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের অনুভূতি আমাদের আচরণের পথনির্দেশক হবে। তিনি বলেন, “ভবন বদলেছে, ভাবনারও বদল হওয়া দরকার” । 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংসদ কোন রাজনৈতিক দলের সুবিধার জন্য নয়, দেশের উন্নয়নের জন্য। সংসদ দেশের সেবা করার সর্বোচ্চ স্থান। এর সদস্য হিসেবে আমাদের উচিত কথায়, ভাবনায় ও কাজে সংবিধানের চেতনাকে তুলে ধরা। প্রতিটি সদস্য সভার প্রত্যাশা ও আকাঙ্খা মেনে চলবেন এবং তাঁর নির্দেশনায় কাজ করবেন বলে প্রধানমন্ত্রী সভার অধ্যক্ষকে প্রতিশ্রুতি দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সভার সমস্ত কাজ সাধারণ মানুষের চোখের সামনে হচ্ছে। সদস্যরা কে কেমন আচরণ করছেন, তাও সাধারণ মানুষ দেখতে পাচ্ছেন। কোন সদস্য শাসক বা বিরোধী কোন আসনে বসবেন, তার অন্যতম নির্ণায়ক হল তাঁদের আচরণ।

সাধারণ মানুষের কল্যাণে প্রধানমন্ত্রী সম্মিলিত প্রয়াস ও অভিন্ন লক্ষ্যের ওপর জোর দিয়ে বলেন, “আমাদের সকলেরই সংসদীয় ঐতিহ্যের লক্ষণরেখা মেনে চলা উচিত” । 

সমাজের কার্যকর রূপান্তর সাধনে রাজনীতির ভূমিকার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহাকাশ থেকে খেলাধুলো সব ক্ষেত্রেই ভারতের মহিলাদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। জি-২০-তে মহিলা নেতৃত্বাধীন উন্নয়নের ধারণাকে সারা বিশ্ব কিভাবে স্বাগত জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী তারও উল্লেখ করেন। তিনি জানান, জনধন যোজনার ৫০ কোটি সুবিধাভোগীর মধ্যে অধিকাংশই মহিলা। মুদ্রা যোজনা, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার মত প্রকল্পগুলি থেকেও মহিলারা প্রভূত উপকার পাচ্ছেন। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি জাতির উন্নয়ন যাত্রায় এমন এক মোড় আসে, যখন ইতিহাসের সৃষ্টি হয়। আজ ভারতও তেমন এক সন্ধিক্ষণের মুখোমুখি। মহিলা সংরক্ষণ নিয়ে সংসদে আলোচনার ওপর আলোকপাত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই নিয়ে প্রথমবার ১৯৯৬ সালে সংসদে বিল পেশ করা হয়েছিল। এরপর অটলবিহারী বাজপেয়ীর প্রধানমন্ত্রিত্বের সময়েও কয়েকবার এই বিলটি পেশ করা হয়, কিন্তু কোনবারই এটি প্রয়োজনীয় সমর্থন জোগাড় করতে পারেনি, তাই মহিলাদের স্বপ্নও বাস্তবে পরিণত হয়নি। এই কাজ সম্পন্ন করতে ঈশ্বর তাঁকেই বেছে নিয়েছেন বলে প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেন। তিনি জানান, “কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা সংসদে মহিলাদের সংরক্ষণ সংক্রান্ত বিলে অনুমোদন দিয়েছে। ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩-এর এই ঐতিহাসিক দিনটি ভারতের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে”। প্রতিটি ক্ষেত্রে মহিলাদের ক্রমবর্ধমান অবদানের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নীতি প্রণয়নেও আরও বেশি করে মহিলাদের অংশগ্রহণ থাকা জরুরী। মহিলাদের সামনে সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করে দিতে সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মহিলা নেতৃত্বাধীন উন্নয়নের সংকল্পকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে আমাদের সরকার আজ এক গুরুত্বপূর্ণ সংবিধান সংশোধনী বিল পেশ করছে। এই বিলের লক্ষ্য হল লোকসভা ও বিধানসভাগুলিতে মহিলাদের অংশগ্রহণ আরও বাড়ানো। নারীশক্তি বন্ধন অধিনিয়ম আমাদের গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করবে। নারীশক্তি বন্ধন অধিনিয়মের জন্য আমি দেশের প্রত্যেক মা, বোন ও মেয়েকে অভিনন্দন জানাই। আমি তাঁদের আশ্বস্ত করছি যে, এই বিলকে আইনে পরিণত করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই সভার শুভ সূচনার মুহূর্তে আমরা যদি সর্বসম্মতিক্রমে এই বিলকে আইনে পরিণত করতে পারি, তাহলে সভার শক্তি বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। তাই সংসদের উভয় সভায় এই বিলটি সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদন করতে আমি আমার সব সহকর্মীর কাছে অনুরোধ জানাই।”

AC/SD/AS/