Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

নতুন দিল্লির প্রগতি ময়দানের ভারত মণ্ডপম-এ অনুষ্ঠিত অখিল ভারতীয় শিক্ষা সমাগম-এ প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

নতুন দিল্লির প্রগতি ময়দানের ভারত মণ্ডপম-এ অনুষ্ঠিত অখিল ভারতীয় শিক্ষা সমাগম-এ প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ


মন্ত্রিসভায় আমার সহকর্মী শ্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানজি, অন্নপূর্ণা দেবীজি, রাজকুমার রঞ্জনজি, সুভাষ সরকারজি, দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা শিক্ষক-শিক্ষিকারা, সম্মানিত বিদগ্ধজনেরা এবং আমার প্রিয় ছাত্রবন্ধুরা!

দেশকে সফল করে তুলতে এবং দেশের অভিমুখ বদল করার ক্ষেত্রে শিক্ষার শক্তি সবথেকে বেশি। একবিংশ শতাব্দীর ভারতে লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আপনারা এই শিক্ষা ব্যবস্থার কাণ্ডারি। তাই, অখিল ভারতীয় শিক্ষা সমাগম-এ যোগ দিতে পেরে আমি দারুণ এক সুযোগ পেয়েছি।

আমি মনে করি, জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে আলোচনা, আর শিক্ষার জন্য মতবিনিময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি অত্যন্ত আনন্দের যে অখিল ভারতীয় শিক্ষা সমাগম-এর এই অধিবেশনে আমরা আলোচনা ও মতবিনিময়ের ঐতিহ্যকে বহন করছি। এর আগে এ ধরনের অনুষ্ঠান কাশীতে নবনির্মিত রুদ্রাক্ষ প্রেক্ষাগৃহে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবার দিল্লিতে নবনির্মিত ভারত মণ্ডপম-এ এই সমাগমের আয়োজন করা হয়েছে। ভারত মণ্ডপম-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর এটিই প্রথম অনুষ্ঠান। শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত একটি অনুষ্ঠান এখানে আয়োজিত হওয়ায় আমি অত্যন্ত আনন্দিত।

বন্ধুগণ,

কাশীর রুদ্রাক্ষ থেকে অত্যাধুনিক ভারত মণ্ডপম-এ অখিল ভারতীয় শিক্ষা সমাগম-এর এই যাত্রা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে একটি বার্তা সকলের কাছে পৌঁছয়। এই সমাগম প্রাচীন এবং আধুনিকতার মেলবন্ধন ঘটাচ্ছে। একদিকে যেমন আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা ভারতের প্রাচীন ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ করছে, অন্যদিকে আধুনিক যুগের বিজ্ঞান এবং উন্নত প্রযুক্তিতেও আমরা এগিয়ে চলেছি। এই উপলক্ষে এ ধরনের একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করায় আপনাদের সকলকে আমি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। শিক্ষাব্যবস্থায় আপনাদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আজ আমাদের জাতীয় শিক্ষানীতির তৃতীয় বর্ষপূর্তি। এটি এক অদ্ভুত সমাপতন। শিক্ষাবিদ, বিদ্বজ্জন এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্তের শিক্ষক-শিক্ষিকারা এই নীতি বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন এবং এই শিক্ষানীতির লক্ষ্যগুলিকে পূরণ করার ক্ষেত্রে তাঁরা সক্রিয়। আজ এই অনুষ্ঠানে আমি তাঁদের সবাইকে কৃতজ্ঞতা এবং আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।

এখানে আসার আগে সামনের প্যাভেলিয়নে যে প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে, আমি সেখানে গিয়েছিলাম। এই প্রদর্শনী আমাদের দক্ষতা ও শিক্ষার শক্তি এবং তার সাফল্য অর্জনকে তুলে ধরেছে। নতুন উদ্ভাবনমূলক নানা পদ্ধতি এখানে দেখানো হচ্ছে। শিশুদের জন্য নির্ধারিত ‘বাল বাটিকা’য় ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ আমার হয়েছে। খেলাধূলার মাধ্যমে কিভাবে বাচ্চারা বিভিন্ন জিনিস শিখছে তা দেখে খুব ভালো লেগেছে। এখানে শিক্ষা এবং স্কুলে পঠনপাঠনের পরিবর্তনের দিকটিও সহজেই বোঝা যায়। আপনাদের সকলকে অনুরোধ করব, ঐ জায়গাটিতে গিয়ে শিক্ষা সংক্রান্ত যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সেগুলি প্রত্যক্ষ করুন।

বন্ধুগণ,

যখন কোনও যুগের পরিবর্তন আসে, তখন সেই পরিবর্তন সময়সাপেক্ষ হয়। তিন বছর আগে আমরা যখন জাতীয় শিক্ষানীতির ঘোষণা করেছিলাম তখন আমাদের সামনে অনেক কিছু করার সুযোগ তৈরি হয়েছিল। কিন্তু আপনারা সকলে নতুন এইসব ধারণা এবং পরীক্ষানিরীক্ষাকে গ্রহণ করার মাধ্যমে দায়িত্ববোধ, অধ্যবসায়, অঙ্গীকার এবং মুক্ত চিন্তার প্রতীক হয়ে উঠেছেন। এটি সত্যিই এক ধরনের আস্থার সঞ্চার করে।

আপনারা এই নীতিকে বাস্তবায়ন করার বিষয়টিকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কাজ করছেন। জাতীয় শিক্ষানীতি প্রচলিত জ্ঞানচর্চার ব্যবস্থাপনা এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তিকে ব্যবহার করার মধ্যে সমতাবিধান করছে। প্রাথমিক শিক্ষায় নতুন পাঠক্রম তৈরি করা, আঞ্চলিক ভাষায় বই প্রকাশ, দেশজুড়ে গবেষণাধর্মী বিভিন্ন কাজকর্ম করার জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য শিক্ষা জগতের সঙ্গে যুক্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বরা অধ্যবসায়ের সঙ্গে কাজ করে চলেছেন। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেও এই উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে।

দেশের সাধারণ মানুষ এবং আমাদের ছাত্রছাত্রীরা নতুন এই ব্যবস্থা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হয়ে উঠেছেন। ১০+২ শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তে বর্তমানে ৫+৩+৩+৪ ব্যবস্থাকে এখন কার্যকর করা হয়েছে। এখন তিন বছর বয়সী শিশুদের পঠনপাঠন শুরু করতে হবে। দেশজুড়ে এই একই নিয়ম চালু করা হবে।

সম্প্রতি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা সংসদে ন্যাশনাল রিসার্চ ফাউন্ডেশন বিল পেশ করার অনুমোদন দিয়েছে। জাতীয় শিক্ষানীতি অনুযায়ী, জাতীয় পাঠ্যক্রম ফ্রেমওয়ার্ককেও কার্যকর করতে হবে। আমাকে বলা হয়েছে, প্রাথমিক স্তরের শিশুদের জন্য ফ্রেমওয়ার্কটি ইতোমধ্যেই তৈরি হয়েছে। ৩ থেকে ৮ বছর বয়সী শিশুদের জন্য এটি কার্যকর হবে। অন্যান্য পর্যায়ের পাঠক্রমও খুব শীঘ্রই তৈরি করা হবে। এখন দেশজুড়ে সিবিএসই স্কুলগুলিতে অভিন্ন পাঠক্রমে পড়াশোনা করা হবে। এনসিইআরটি এর জন্য নতুন নতুন পাঠ্যপুস্তক রচনা করছে। তৃতীয় থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত ১৩০টি বিষয়ে নতুন নতুন বই আনা হবে। এই বইগুলি ২২টি ভারতীয় ভাষায় পাওয়া যাবে। এর মাধ্যমে আঞ্চলিক ভাষায় পাঠদানের সুযোগ তৈরি হওয়ায় আমি অত্যন্ত আনন্দিত।

বন্ধুগণ,

যুব সম্প্রদায়ের প্রতিভার বিচার তাঁদের ভাষার মাধ্যমে করলে তাঁদের প্রতি অবিচারই করা হয়। এখন মাতৃভাষায় শিক্ষাদান শুরু হওয়ায় ভারতের প্রতিভাবান যুব সম্প্রদায় সুবিচার পাবেন। সামাজিক ন্যায় নিশ্চিত করার ক্ষেত্রেও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। বিশ্বে শত শত ভাষা রয়েছে। প্রত্যেকটি ভাষাই গুরুত্বপূর্ণ। নিজেদের ভাষার প্রসার ঘটানোর ফলে উন্নত রাষ্ট্রগুলির উন্নতি নিশ্চিত হয়েছে। আমরা যদি ইউরোপের দিকে তাকাই তাহলে দেখব, সেখানকার বেশিরভাগ দেশই নিজেদের ভাষা ব্যবহার করে। অথচ, আমাদের নিজেদের দেশের ভাষার বৈচিত্র্য থাকা সত্ত্বেও আমাদের ভাষাগুলি অবহেলার শিকার। এর থেকে দুর্ভাগ্যের কি হতে পারে? কেউ যদি ঠিকঠাক ইংরেজি না বলতে পারেন তাহলে তিনি যতই প্রতিভাবান হোন না কেন, তাঁর যতই উদ্ভাবনী ক্ষমতা থাকুক না কেন, তাঁর সেই প্রতিভাকে কখনই স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। আমাদের গ্রামাঞ্চলের ছেলে-মেয়েরা এই পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন সবথেকে বেশি। স্বাধীনতার অমৃতকালে আমাদের দেশ জাতীয় শিক্ষানীতির মাধ্যমে এই ধরনের হীনমন্যতা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আমি রাষ্ট্রসঙ্ঘে ভারতীয় ভাষায় গর্বের সঙ্গে কথা বলি। শ্রোতারাও আমার বক্তৃতা শুনে অনেক সময়েই করতালি দেন।

বন্ধুগণ,

এখন সোশ্যাল সায়েন্স থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং – প্রতিটি বিষয়ই ভারতীয় ভাষায় পড়া যাবে। যখন নিজেদের ভাষার ওপর তরুণ সম্প্রদায়ের দখল থাকবে, তখন তাঁদের দক্ষতা এবং প্রতিভা স্বভাবতই বিকশিত হবে। দেশের জন্য এক্ষেত্রে আরও একটি সুযোগ তৈরি হবে। যারা ভাষাকে রাজনৈতিক কারণে ব্যবহার করে বিদ্বেষ ছড়ায়, তাদের সেই রাস্তা বন্ধ হবে। জাতীয় শিক্ষানীতির সাহায্যে দেশের প্রতিটি ভাষা প্রাপ্য সম্মান পাবে এবং নিজের ভাষা ব্যবহারের উৎসাহ বাড়বে।

বন্ধুগণ,

স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবের আগামী ২৫টি বছর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ২৫ বছরে আমাদের মুক্তমনা, প্রাণশক্তিতে ভরপুর তরুণ প্রজন্মকে গড়ে তুলতে হবে, যে প্রজন্ম দাসত্বের মানসিকতা থেকে মুক্ত থাকবে, যে প্রজন্ম নতুন নতুন জিনিস উদ্ভাবনে উৎসাহী হবে, বিজ্ঞান থেকে খেলাধূলা – প্রতিটি ক্ষেত্রে যে প্রজন্ম ভারতের নাম উজ্জ্বল করবে। এই প্রজন্ম তাদের দক্ষতার বিকাশ ঘটাবে, একবিংশ শতাব্দীর ভারতের চাহিদাগুলি বুঝতে পারবে, এই প্রজন্ম হবে কর্তব্যবোধ ও দায়িত্বের প্রতি সচেতন। এই প্রজন্মের চিন্তাধারাকে নির্দিষ্ট রূপ দিতে এই জাতীয় শিক্ষানীতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

বন্ধুগণ,

উন্নতমানের শিক্ষার ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি বিষয়কে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু আমরা যখন ভারতের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে কথা বলছি, তখন আমাদের মূল লক্ষ্যই থাকে তার গুণমান। দেশের প্রতিটি তরুণ যাতে শিক্ষার সমান অধিকার পান, জাতীয় শিক্ষানীতি সেই বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। তবে, সকলের জন্য শিক্ষার সুযোগ করে দেওয়ার অর্থ নতুন নতুন স্কুল খোলা নয়। এর অর্থ, শিক্ষাদানের পাশাপাশি সকলে যাতে সমানভাবে সেই সম্পদকে কাজে লাগাতে পারে। সকলের জন্য শিক্ষার অর্থ, প্রতিটি শিশু তার পছন্দ অনুযায়ী নির্দিষ্ট বিষয়ে শিক্ষালাভ করতে পারে। কোন জায়গায় সে থাকে, সে কোন সম্প্রদায়ের মানুষ বা কোন অঞ্চলের বাসিন্দা তার ওপর ভিত্তি করে যেন কোনও শিশু শিক্ষালাভের সুযোগ থেকে বঞ্চিত না হয়।

জাতীয় শিক্ষানীতির এটিই মূল লক্ষ্য। অর্থাৎ, গ্রাম এবং শহর, দরিদ্র অথবা ধনী – সমাজের প্রত্যেক অংশের মানুষ যাতে শিক্ষালাভের সমান সুযোগ পান, সেটিকে নিশ্চিত করা হয়েছে। আপনাদের সকলেরই মনে আছে, প্রত্যন্ত অঞ্চলে ভালো স্কুল না থাকায় বহু ছেলে-মেয়ে যথাযথ শিক্ষার সুযোগ পায়নি। কিন্তু আজ দেশজুড়ে হাজার হাজার স্কুলকে ‘পিএম-শ্রী’ স্কুলে উন্নীত করা হচ্ছে। ৫জি-র যুগে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি-নির্ভর এই স্কুলগুলিতে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে লেখাপড়া করার সুযোগ ভারতীয় ছাত্রদের থাকবে।

আজ আমরা আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলে একলব্য আদর্শ আবাসিক বিদ্যালয় গড়ে তুলছি। দেশের প্রত্যেকটি গ্রামে ইন্টারনেট পরিষেবা পৌঁছে গেছে। ‘দীক্ষা’, ‘স্বয়ম’ এবং ‘স্বয়মপ্রভা’র মতো মঞ্চগুলি ব্যবহারের সুযোগ প্রত্যন্ত অঞ্চলের ছেলে-মেয়েরা পাচ্ছে। উন্নত পাঠ্যপুস্তক, শিক্ষাদানের বিভিন্ন সৃজনশীল পদ্ধতি, এক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তিকে কাজে লাগানোর মাধ্যমে নতুন নতুন সুযোগ ভারতের প্রতিটি গ্রামে তৈরি হচ্ছে। এককথায়, শিক্ষাক্ষেত্রে ভারতে সম্পদের যে ঘাটতি ছিল তা দ্রুত মিটে যাচ্ছে।

বন্ধুগণ,

আপনারা কি জানেন, জাতীয় শিক্ষানীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল শিক্ষাকে এখন আর পাঠ্যপুস্তকের মধ্যে আবদ্ধ করে রাখা হচ্ছে না। এখন হাতে-কলমে শিক্ষাদানকেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কারিগরি শিক্ষাকে সাধারণ শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে গ্রামাঞ্চলের পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর পরিবারের শিশুরা উপকৃত হবে।

এই শিশুরা পাঠ্যপুস্তক থেকে জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে নানা সমস্যার সম্মুখীন হত। কিন্তু, নতুন শিক্ষানীতি অনুসারে এখন নতুন নতুন পন্থাপদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষাদান করা হবে। শিক্ষাকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে মতবিনিময় করতে হবে। অতীতে খুব কম স্কুলেই পরীক্ষাগার এবং হাতে-কলমে শেখার সুযোগ ছিল। তবে, এখন অটল টিঙ্কারিং ল্যাব-এ ৭৫ লক্ষেরও বেশি ছাত্রছাত্রী বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনা করতে পারছেন। এখন  সকলেই বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন। তরুণ এই বিজ্ঞানীরা ভবিষ্যতে দেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলিতে নেতৃত্ব দেবেন এবং ভারতকে আন্তর্জাতিক গবেষণার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলবেন।

বন্ধুগণ,

যে কোনও সংস্কারসাধনের ক্ষেত্রে সাহসের প্রয়োজন। যখন সেই সাহস থাকে তখন নতুন নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়। আর তাই, আজ সারা বিশ্বের কাছে ভারত নতুন সুযোগের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আজ সফটওয়্যার প্রযুক্তির প্রসঙ্গ যখন ওঠে তখন সারা বিশ্ব জানে ভবিষ্যৎ ভারতেরই। সারা বিশ্ব জানে মহাকাশ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ভারতের দক্ষতা অতুলনীয়। সারা বিশ্ব জানে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে গবেষণার বিষয়ে ভারতের তৈরি স্বল্পমূল্যের উন্নতমানের মডেলগুলি সবথেকে কার্যকর। সারা বিশ্বের আমাদের প্রতি যে আস্থা রয়েছে সেটিকে আমরা নষ্ট হতে দেব না।

সাম্প্রতিককালে ভারতের শিল্পক্ষেত্রের দ্রুত বিকাশ হচ্ছে। আমাদের স্টার্ট-আপ সংস্থাগুলির সংখ্যা বাড়ছে। বিশ্বজুড়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্রমতালিকায় ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলির সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন ক্রমতালিকায় ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ছে। বিভিন্ন ক্রমতালিকায় তা ক্রমশ আরও ওপরে উঠে আসছে। আজ আমাদের আইআইটি-গুলি জাঞ্জিবার এবং আবু ধাবিতে ক্যাম্পাস খুলছে। বিভিন্ন দেশ আইআইটি-র ক্যাম্পাস খুলবার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছে। সারা বিশ্বজুড়ে এই চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় এই ইতিবাচক পরিবর্তনগুলির কারণে বহু বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় ভারতে ক্যাম্পাস খুলতে চাইছে। গুজরাটের গিফট সিটিতে অস্ট্রেলিয়ার দুটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস খুলতে চলেছে। এই সাফল্যের মধ্যেও আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ বজায় রাখতে হবে। এই প্রতিষ্ঠানগুলি যাতে ভবিষ্যতের চাহিদা পূরণ করতে পারে তার জন্য আমাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল ও কলেজকে এই বিপ্লবের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র গঠনের জন্য কর্মোপযোগী যুব সম্প্রদায় গড়ে তোলার অর্থ অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছনো নিশ্চিত করা। এই যুব সম্প্রদায়কে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তাঁদের বাবা-মা এবং শিক্ষক-শিক্ষিকারা মূল কাজটি করে থাকেন। তাই, আমি সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং মা-বাবাকে অনুরোধ করব ছেলে-মেয়েদের অবাধে বিচরণের সুযোগ করে দিন। তাদের মধ্যে আত্মপ্রত্যয় গড়ে তুলতে হবে যাতে নতুন কোনও কিছু শেখার ক্ষেত্রে তারা সবসময়ই এগিয়ে আসবে। ভবিষ্যতের কথা ভেবে আমাদের যথাযথ পরিকল্পনা করতে হবে। ছেলে-মেয়েদের পাঠ্যপুস্তকের চাপ থেকে মুক্ত করার প্রয়োজন রয়েছে।

আজ আমরা কৃত্রিম মেধার মতো প্রযুক্তির কথা শুনছি। এক সময় যেগুলি ছিল কল্পবিজ্ঞানের কাহিনী আজ তা আমাদের জীবনযাত্রার অঙ্গ হয়ে উঠছে। রোবোটিক্স এবং ড্রোন প্রযুক্তি ইতোমধ্যেই আমাদের দরজায় কড়া নাড়ছে। আমাদের পুরনো চিন্তাভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে নতুন দিগন্তের পথে অগ্রসর হতে হবে। আমাদের ছেলে-মেয়েদের তাই প্রস্তুত করতে হবে। আমি চাইব, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আমাদের স্কুলগুলিতে মতবিনিময়ের বিশেষ সুযোগ গড়ে তোলা হোক। বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু পরিবর্তন অথবা পরিবেশ-বান্ধব জ্বালানি – প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের নতুন প্রজন্ম যাতে ওয়াকিবহাল থাকে তার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে যাতে যুব সম্প্রদায়ের এই বিষয়গুলি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকে এবং তাঁরা এ ব্যাপারে আগ্রহী হন।

বন্ধুগণ,

ভারত ক্রমশ শক্তিশালী হচ্ছে, আর তাই সারা বিশ্বে ভারতের পরিচিতি এবং ঐতিহ্য সম্পর্কে আগ্রহ ক্রমশ বাড়ছে। পৃথিবীর এই চাহিদাকে আমাদের বিবেচনা করতে হবে। যোগ, আয়ুর্বেদ, শিল্পকলা, সঙ্গীত, সাহিত্য এবং সংস্কৃতির ভবিষ্যতে যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের নতুন প্রজন্মকে এই বিষয়গুলি সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল করতে হবে। অখিল ভারতীয় শিক্ষা সমাগমে এই বিষয়গুলিকে গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে আমি মনে করি।

নতুন এক ভারত গড়ে তুলতে আপনাদের উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আমি বিশ্বাস করি, ২০৪৭ সালে দেশ যখন স্বাধীনতার শতবার্ষিকী উদযাপন করবে তখন ভারতকে উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার যে স্বপ্ন ও সঙ্কল্প আমরা নিয়েছি তা বাস্তবায়িত হবে। এই সময়কালে আমাদের যে যুব সম্প্রদায় এই দায়িত্ব পালন করবে তাদেরকে আপনারা আজ প্রশিক্ষণ দেবেন। যাঁদেরকে আপনারা তৈরি করবেন, তারা আগামীদিনে দেশ গড়বে। আপনাদের প্রত্যেককে শুভকামনা জানাই। এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য যুব সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে যাতে যে সঙ্কল্প আমরা নিয়েছি তা বাস্তবায়িত হয় এবং সাফল্য আমরা অর্জন করতে পারি।

আপনাদের সকলকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। অনেক অনেক ধন্যবাদ!

প্রধানমন্ত্রী মূল ভাষণটি হিন্দিতে দিয়েছিলেন