আমার মন্ত্রী পরিষদের সহযোগীবৃন্দ……উপস্থিত সকল শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিবর্গ এবং বন্ধুগণ,
সিভিল সার্ভিসেস দিবস দেশের সকল মানুষের জীবনে এবং বিশেষ করে আপনাদের জীবনে কেমন করে সার্থক হয়ে উঠবে? এটি কি কেবলই একটি সাম্বাৎসরিক দিবস পালনে সীমাবদ্ধ থাকবে? এই দিনে কি আমরা শুধুই ইতিহাসের পাতা উল্টে আমাদের ঐতিহ্যকে স্মরণ করব? শুধু এটুকুই যদি করতে পারি, তা হলে এই দিবস পালন আমাদের প্রেরণার উৎস হয়ে উঠতে পারে, আমাদের যাত্রাপথে চলার উদ্দেশ্য, গন্তব্য, কতটা পথ অতিক্রম করেছি, কতদূর পৌঁছেছি, এমন তো নয় যে, যেখানে যাওয়ার কথা ছিল সেখানে না গিয়ে দূরে কোথাও অন্য কোথাও চলে গিয়েছি! এমন তো নয় যে, গন্তব্যস্থল এখনও অনেক দূরে রয়ে গেছে! এহেন অবসরে আমরা এসব বিষয় নিয়ে আলোচনার প্রেরণা পাই। এই অবসরে আমরা পেছন ফিরে আমাদের কৃতকর্ম এবং কার্যকালকে বিচার-বিশ্লেষণের সুযোগও পাই। পাশাপাশি, এই অবসর নতুন সংকল্প গ্রহণে্র কারণ হয়ে ওঠে। আমরা যাঁরা এখানে বসে আছি শুধু তাঁদের নয়, প্রত্যেকের জীবনেই এই অভিজ্ঞতার অবকাশ আসে।
একজন ছাত্র যখন পরীক্ষা দিয়ে ফিরে আসে, ফলাফলের জন্য অপেক্ষার পাশাপাশি, তার মনে আগামী বছর গোড়া থেকে পড়াশুনা শুরু করার ভাবনা থাকে। সে মনে মনে আর ফাঁকি না দিয়ে কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নিয়মিত পড়াশুনা করার সংকল্প গ্রহণ করে। মনে মনে পড়াশুনার নানা পদ্ধতিগত পরিবর্তনের কথা ভাবে। আর তারপর যখন স্কুল খুলে যায় তখনও এই সংকল্পের কথা সে ভোলে না। কিন্তু কখনও মনে হয় যে, আজ রাতে আর পড়তে ভালো লাগছে না, আগামীকাল ভোরবেলায় উঠে তাড়াতাড়ি পড়তে বসবো। মা’কে বলে, মা ভোরে তাড়াতাড়ি ডেকে দিও। কিন্তু ভোরে উঠে পড়তে বসে ঘুম এসে গেলে তখন ভাবে ভোরে উঠে পড়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়, রাতেই বেশিক্ষণ পড়তে হবে। সেদিন আবার সে মা’কে বলে রাতে এমন কোনও খাবার বানিও, যাতে তাড়াতাড়ি ঘুম না আসে! এরকম নানা পরিকল্পনা ও প্রয়োগ চলতে থাকে। আর দেখতে দেখতে পরবর্তী পরীক্ষার সময় এগিয়ে এলে আবার রাত জেগে পড়াশুনা করতে হয়, সহপাঠীর সঙ্গে নোটস্ দেওয়া-নেওয়া হয়। আর পরদিন কী হবে সেই দুশ্চিন্তা গ্রাস করে। এই অভ্যাস চলতে থাকে। আমরাও কি তেমনই সিভিল সার্ভিসেস দিবস’কে একটি বাৎসরিক দিবস পালনেই সীমাবদ্ধ রাখব? গতানুগতিক পথে শুধু বাধা আসে না, ক্লান্তিও আসে। আর কখনও বাধা থেকে যত না সমস্যা হয়, ক্লান্তি তার থেকে বেশি সংকট ডেকে আনে। সেজন্য ভালোভাবে বাঁচতে হলে ক্লান্তিহীন হতে হবে। যে কোনও বাধাকে সুযোগে পরিবর্তিত করতে হবে। বাধাকে প্রতিস্পর্ধা হিসেবে গ্রহণ করে তাঁর মোকাবিলার মাধ্যমেই জীবনকে অন্য কোথাও নিয়ে যেতে হবে। ক্লান্তি, রোগের থেকেও ভয়ানক। যাঁর জীবনে একবার ক্লান্তি আসে, তাঁর জীবনী শক্তি দ্রুত ফুরোয়। ক্লান্তি দেহের বিষয় নয়, মনের বিষয়। যাঁর জীবনী শক্তি ফুরিয়ে যায়, তিনি স্বপ্ন দেখার সামর্থ্য হারান। ব্যক্তির এই অসম্পূর্ণতা কেবল তাঁর জীবনকেই সীমাবদ্ধ করে তোলে না, তিনি যত বড় পদাধিকারী, তাঁর সীমাবদ্ধতার প্রভাবও ততই ব্যাপক – নেতিবাচক প্রভাব। সেজন্য আমি কিছু ভালো করতে পারলে ভালো, না পারলেও মনে এই সংকল্প থাকা উচিৎ যে আমার জীবনে ক্লান্তিকে কোনও স্থান দেব না। তা না হলে, নিজের অজান্তেই আমরা গোটা ব্যবস্থাকে শক্তিহীন, চেতনাহীন, প্রাণহীন, সংকল্পবিহীন ও গতিবিহীন করে তুলব। সেজন্যই আমাদের জীবনে যত দায়িত্ব বাড়ে, ততই যাপনের শক্তিও বাড়াতে হবে। এই ধরনের দিবস পালনই আমাদের মনে সেই নতুন ইন্ধন যোগায়।
কখনও ভালো চিন্তা যতটা সামর্থ্য যোগায়, তার থেকেও বেশি শক্তি যোগায় একটি সাফল্য ও স্বীকৃতি। যে কোনও রকম সাফল্য আমাদের সাহস বাড়িয়ে দেয়। আজ যাঁরা পুরস্কার পেয়েছেন, তাঁদের কর্মক্ষেত্র এতো বড়, দেশের নিরিখে হয়তো ছোট। এতো বড় দেশে যে সমস্যার পাহাড় রয়েছে, তার মধ্য থেকে দু-একটির সমাধান হয়তো তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে করেছেন। কিন্তু, আজ এখানে সেসব সাফল্যের স্বীকৃতি সবার ভালো লাগছে, অমুক কাজের এই পরিণামও হতে পারে! আচ্ছা, অনন্তনাগেও হতে পারে? আনন্দপুরেও হতে পারে? সকলের মনে যে ভাবনা হিল্লোল তোলে, সেই ভাবনাই একটি সফল গাঁথা রচনা করতে পারে।
আর সেজন্যই সিভিল সার্ভিসেস দিবসে প্রধানমন্ত্রী পুরস্কারের ঐতিহ্যমণ্ডিত পরম্পরায় এবার একটি নতুন মাত্রা যোগ করার চেষ্টা হয়েছে। কোথাও কিছু ভৌগোলিক সমস্যা, আবার অন্যত্র কিছু জনসংখ্যার সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এহেন বৈচিত্র্যময় দেশকে তিনটি ভাগে ভাগ করার চেষ্টা হয়েছে। কেউ হয়তো কল্পনাও করেননি যে, সরকারি কাজে এতো পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনাও হতে পারে! অন্যথা আগে দরখাস্ত আসতো, যাঁরা ভালো রিপোর্ট লিখতে পারেন, তাঁরাই বিচারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেন। কিন্তু এবার বিচারকদের প্রভাবিত করার মতো কোনও সুযোগ ছিল না। কলসেন্টারগুলি থেকে হাজার হাজার ফোন করে প্রতিটি কাজের বিস্তারিত খোঁজ নেওয়া হয়েছে। বিচারকরা শারীরিকভাবে সেসব স্থানে উপস্থিত হয়ে আলাপ-আলোচনা করেছেন, সরেজমিনে দেখেছেন, ভিডিও কনফারেন্সে এখান থেকে সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। এভাবে অনেক চেষ্টা ও যাচাই করে শ্রেষ্ঠতমদের পুরস্কৃত করা হয়েছে। এতো বড় প্রক্রিয়ার পরিণামও সর্বোত্তম হতে বাধ্য। সেজন্য আনন্দ হয়।
কিন্তু আমি ভাবি, দেশে ৬৫০টির বেশি জেলা রয়েছে। এবছর অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক গুণ – প্রায় ৭৪টি সাফল্যগাথা শর্টলিস্ট হয়েছে। কিন্তু, এই সাফল্যই আমাদের সামনে নতুন প্রতিস্পর্ধা হয়ে উঠে চোখে আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছে যে, দেশের মাত্র ১০ শতাংশ জেলাই এবার শর্টলিস্ট করা গেছে। বাকি, ৯০ শতাংশ জেলায় যাঁরা কাজ করেছেন, তাঁদের সামনে এটা চ্যালেঞ্জ, পুরস্কার পান আর না পান, নিজের জেলার নাম শর্টলিস্ট করানোর মতো সাফল্য অর্জন করতে হবে। এই সিভিল সার্ভিস দিবসেই সংকল্প গ্রহণ করুন যে, আগামী বছর আমাদেরও এই মঞ্চ থেকে পুরস্কার অর্জন করে নিয়ে যেতে হবে। দেশের প্রত্যেক জেলার মানুষের মনে এই সংকল্প আত্মবিশ্বাসের সঞ্চার করবে।
আগের তুলনায় ৭৪ অনেক বড় অঙ্ক, অনেক বড় প্রচেষ্টা। কিন্তু আমরা এর থেকেও এগিয়ে যেতে চাই, কারণ, আমরা ক্লান্তির বন্ধনে শৃঙ্খলিত নই। আমি বাধাকে স্বীকার করি না, ভবিষ্যতে আরও কিছু করতে চাই।
এই ভাব, এই সংকল্পভাব, এই টিম ছাড়াও যাঁরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আমাকে শুনছেন, সেই আধিকারিকদের মনেও এই ভাব সঞ্চারিত হবে। তাঁরা নিজের রাজ্যে আলোচনা করবেন, কি ব্যাপার, আমাদের রাজ্যের কাউকে তো দেখা যাচ্ছে না, আমার জেলার নাম তো উজ্জ্বল হল না!
একটি সুস্থ প্রতিযোগিতা, যখনই আমি সুযোগ পাই কো-অপারেটিভ ফেডারেলিজম-এ জোর দিই। পাশাপাশি বলি, প্রতিযোগিতামূলক কো-অপারেটিভ ফেডারেলিজম। রাজ্যগুলির মধ্যে উন্নয়নের প্রতিযোগিতা, সুশাসনের প্রতিযোগিতা, মূল্যবোধের প্রতিযোগিতা, প্রতিবদ্ধতা, জবাবদিহিতা ও দায়িত্ববোধের প্রতিযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ন্যূনতম শাসনের স্বপ্নকে সাকার করার প্রচেষ্টা। এই প্রতিযোগিতার ব্যাপারটা জেলাগুলিতেও যেন অনুভূত হয়। এই সিভিল সার্ভিস দিবসে প্রত্যেকে দু-কদম এগিয়ে যাওয়ার সংকল্প গ্রহণ করুন।
দ্বিতীয়ত, কিছু আধিকারিক বংশ পরম্পরায় সিভিল সার্ভিস-এ আছেন। তিন-চার প্রজন্ম ধরে সিভিল সার্ভিস-এ তাঁদের সেবা একটি পারিবারিক ঐতিহ্যস্বরূপ। আবার অনেকে এই সার্ভিসকে পাইপলাইন ভাবেন। প্রতিযোগিতায় উত্তীর্ণ হয়ে প্রশিক্ষণের পর একবার কাজে যোগদান করার মাধ্যমে তাঁর ঐ পাইপলাইনে ঢুকে পড়েন। তাঁরা ভাবেন, একবার পাইপলাইনে ঢুকে পড়লে অবলীলায় ১৫ বছরে এতটাআর ২০ বছরে এতটা পদোন্নতি তো হবেই! এভাবে ক্ষমতার বৃত্তে থেকে দাপটে চাকরি করে অবসর পাওয়ার পর নিশ্চিত ভবিষ্যৎ। এই ক্ষমতার বৃত্তে থাকার উচ্চাকাঙ্খাকে আমি খারাপ ভাবি না। ১২৫ কোটি জনসাধারণের মধ্যে ক’জন এই পর্যায়ে আসতে পারেন। আপনারা নিজের মেধা ও পরিশ্রমের ফল হিসেবেই এই সাফল্যের মুখ দেখেছেন। তবুও বলবো, ১২৫ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে এই ২-১০-১৫ হাজার মানুষ সৌভাগ্যবান। দেশ আপনাদের হাতে ১২৫ কোটি মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের দায়িত্ব তুলে দিয়েছে। এতো বড় সৌভাগ্য প্রাপ্তির পর কিছু করে দেখানোর প্রবল ইচ্ছাশক্তি না থাকলে আপনারা নিজের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারবেন না।
আমার মনে পরে, ৩৫-৪০ বছর আগের কথা …… আমি অনেক দেরীতে রাজনীতিতে এসেছি। তার আগে দীর্ঘকাল নানা সামাজিক কাজে নিয়োজিত ছিলাম। তখন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের আয়োজনে নানা অনুষ্ঠানে গিয়েছি, আলোচনাসভায় অংশগ্রহণ করেছি। একবার আমি ছাত্রবন্ধুদের জিজ্ঞেস করি, ভবিষ্যতে কী করার কথা ভাবছেন? প্রায় প্রত্যেকেই জবাব দেন, পড়াশুনা শেষ হলে ভাববো! কেউ বলে, পারিবারিক ব্যবসা সামলাবো। কিন্তু একজন যুবক হাত উঠিয়ে বলেন, আমি আই এ এস অফিসার হতে চাই।
আমি জিজ্ঞেস করি, এই চিন্তা আপনার মাথায় কেন এল? ঐ চাকরিতে দাপট আছে বলে?
তিনি জবাব দেন, না আমার মনে হয়, আই এ এস হলে অনেকের জীবনে পরিবর্তন আনতে পারবো, ভালো কিছু করতে পারবো!
আমি বলি, রাজনীতিতে যোগদান করছেন না কেন, তা হলে আরও বেশি করে মানুষের কাজ করতে পারবেন!
তিনি বলেন, না। রাজনীতিতে কাজ করার সুযোগ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ক্ষণস্থায়ী হয়।
তাঁর বক্তব্য স্পষ্ট; তিনি দীর্ঘকাল মানুষের সেবা করতে চান।
আপনারা প্রত্যেকেই তেমনই ক্ষমতাবান মানুষ। আপনারা কী করতে পারেন না, সে সম্পর্কেও আপনারা ভালোভাবেই জানেন। এই নিয়ে আপনাদের কিছু বলার প্রয়োজন নেই। একটা সময়ে পরিস্থিতিও এমনই ছিল। আপনাদের ভূমিকা ছিল নেহাতাই একটি রেগুলেটর-এর মতো। আজ আমরা সেই পরিস্থিতি থেকে বেড়িয়ে এসেছি। আপনাদের ক্ষমতা বেড়েছে, এখন নতুন গতিশীল ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। প্রায় দুই প্রজন্ম ধরে নেহাতই নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালনের পর এখন আপনারা সঠিক অর্থে প্রশাসক এবং অনেকটাই ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠেছেন। এখন সেই প্রশাসক ও নিয়ন্ত্রকের ভূমিকার সঙ্গে ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত দক্ষতা উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তাও দেখা দিয়েছে। কারণ, একসঙ্গে বেশ কয়েকটি ব্যবস্থা সামলাতে হচ্ছে।
আমাদের দায়িত্ব পরিবর্তিত হয়েছে। কিন্তু, একবিংশ শতাব্দীর এই কালখন্ডে আমাদের এই ভূমিকা কি যথাযথ? আমাদের নেহাতই নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা থেকে গণতন্ত্রের চাহিদা অনুসারে পরিবর্তিত হয়ে প্রশাসক থেকে ব্যবস্থাপকের ভূমিকায় যতই উত্তরণ হোক না কেন, একবিংশ শতাব্দী বিশ্ব প্রতিযোগিতার যুগ হওয়ায় ভারতে একটি বড় প্রত্যাশার পরিবেশ গড়ে উঠেছে। সবাই একটা কিছু করে দেখাতে চান, কিছু করে দেখিয়ে এগিয়ে যেতে চান। সবাই কিছু পেতেও চান। কেউ কেউ ভয় পেলেও আমি এই পরিস্থিতিকে বিরাট সুযোগ বলে ভাবি। ১২৫ কোটি মানুষ যখন কিছু করে দেখাতে চান, তখন দেশ নিজে থেকেই এগিয়ে যাবে। বাবা-মা ও পূর্বপুরুষ যেভাবে জীবন কাটিয়েছেন, এখন মানুষ আর সেভাবে জীবন কাটাতে চান না। যাঁদের পৈত্রিক সম্পত্তি আছে, তাঁরা শুধু সেই সম্পত্তি ভোগ করেই সন্তুষ্ট নন, নিজে কিছু করে দেখাতে চান। কারও পূর্বপুরুষ মাঠে গিয়ে প্রাতঃকৃত্য সারতেন, কিন্তু বর্তমান প্রজন্মের অবশ্যই বিজ্ঞানসম্মত শৌচালয় চাই। এই চাহিদাই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সবচেয়ে বড় ইন্ধন। এই সময়ে আমরা নেহাতই প্রশাসক, নিয়ন্ত্রক এবং কর-সংগ্রাহক হলে চলবে না। এখন সময়ের দাবি হল ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেক আধিকারিক ক্ষুদ্র দপ্তর থেকে শুরু করে বড় পদে আসীন আধিকারিকদেরও পরিবর্তনের দূত হয়ে উঠতে হবে। তার আগে, তাঁদের নিজেদের সময়োপযোগী পরিবর্তিত হওয়ার প্রক্রিয়ায় অভ্যস্থ হতে হবে। আজ থেকেই। আগামীকালের জন্য অপেক্ষা করলে চলবে না। পরিবর্তনের দূতের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে আমাদের জনসাধারণের স্বার্থে পরিবর্তনকে সুনিশ্চিত করতে হবে। সেজন্য কাজ করতে হবে।
কখনও একটা ব্যবস্থায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ায় পরীক্ষা-নিরীক্ষাকে আমরা ভয় পেতে শুরু করি। যদি সফল না হয়, তা হলে অনেক ভুল থেকে যাবে! কিন্তু, তাই বলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা থেকে দূরে সরে থাকলে কখনই ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে না। সার্কুলার জারি করে কোনও পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্ভব নয়। আমরা যদি ভাবি, যে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় কোনও ঝুঁকি নেই সেটাকেই শুধু মন থেকে সায় দেব, তা হলে আমাদের সীমাবদ্ধ হয়ে পড়তে হবে। ঝুঁকিহীন কোনও পরীক্ষা-নিরীক্ষাকে আমি পরীক্ষা-নিরীক্ষা বলেই মনে করি না। সেগুলি নিছকই পরিকল্পনা। পরিকল্পনা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে অনেক বড় ব্যবধান রয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার কোনও পরিকল্পনা হয় না। আমি সর্বদা পরীক্ষা-নিরীক্ষাকেই পুরস্কৃত করি। যাঁরা একটু অন্যরকম ভাবেন, আমি নিজেও গতানুগতিকতা থেকে বেড়িয়ে একটু অন্যরকম কিছু করতে ভালোবাসি, পরিতৃপ্তি পাই।
এত বড় দেশকে আমরা ২০-৩০ বছর আগে কিংবা বিংশ শতাব্দীর চিন্তাভাবনা এবং নিয়ম দ্বারা পরিচালিত করতে পারবো না। প্রযুক্তি মানুষের জীবনকে কত বদলে দিয়েছে! কিন্তু, এই পরিবর্তিত জীবনযাত্রা শাসন ব্যবস্থায় প্রতিবিম্বিত না হলে উভয়ের মধ্যে ব্যবধান সৃষ্টি হবে। আর আমাদের অভিজ্ঞতা বলে, যে কোনও সরকারি প্রকল্পের রূপায়ণকারীরা সরকারি ব্যবস্থার পরিধি থেকে বেড়িয়ে জনসাধারণের সঙ্গে যুক্ত হলে তবেই সেই প্রকল্প সফল হয়। তার মানে এই দাড়ায় যে, সিভিল সার্ভেন্টদের সমাজের সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধি করা অত্যন্ত অনিবার্য। নিজের চেম্বারে বসে ফাইলের মাধ্যমে দেশ ও বিশ্বকে পরিচালনা করতে চাইলে জনসহযোগ কম পাওয়া যায়। যাঁদের প্রয়োজন তাঁরা তো এর সুবিধা আদায় করেন নেবেনই। কিন্তু হাতে গোনা কিছু সচেতন মানুষের কল্যাণসাধনে দেশের অগ্রগতি হয় না। সাধারণ মানুষ, যাঁরা নিজেদের অধিকার সম্পর্কে জানেন না, তাঁদেরকে সরকারি প্রকল্পগুলির পরিষেবা পৌঁছে দিতে পারলে, তাঁদের অংশীদারিত্বেই পরিস্থিতি বদলাতে পারে।
আমরাই প্রথম সারা দেশে শৌচালয় নির্মাণের কথা ভাবিনি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে যেকটি সরকার ক্ষমতায় এসেছে, প্রত্যেকেই হয়তো সারা দেশে শৌচালয় নির্মাণের কথা ভেবেছেন। কিছু কিছু কাজও হয়েছে। কিন্তু কোনও আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেননি। আমরা যাঁরা সরকারি দপ্তরগুলিতে বসে কাজ করি, আমাদের দায়িত্ব হল নিজেদের কাজের পরিধিতে সিভিল সোসাইটিকে সংযুক্ত করা। এই পরিধি বিস্তার আমরা কিভাবে করব? পথে নামলেই দেখবেন, পথ খুলে যেতে শুরু করবে। সেপথে আপনারা হয়তো অনেক সহজ পদ্ধতিও আবিষ্কার করে নিতে পারবেন। আর নতুন পদ্ধতিতে সাফল্য এলে সে পদ্ধতিও স্বীকৃত হয়, নীতির অংশ হয়ে ওঠে। সেজন্য আমাদের চেষ্টা করে যেতে হবে।
আপনারা অবশ্যই মনে রাখবেন যে ……… আমাদের সঙ্গে দু’ধরনের মানুষ রয়েছেন। এক ধরনের মানুষকে জিঞ্জেস করলে বলেন যে, আমি ‘জব’ করি। আর অন্যদের জিজ্ঞেস করলে জবাব দেন, আমি ‘সার্ভিস’ করি। প্রত্যেকেই আট ঘন্টা কাজ করেন, প্রত্যেকেই মাসের শেষে বেতন পান। কিন্তু, অনেকে ‘জব’ করেন, আর অন্যরা ‘সার্ভিস’ করেন। এই শব্দের মানে দু’রকম। আপনাদের ভোলা উচিৎ নয় যে, আপনারা কেউই আসলে ‘জব’ করেন না, আপনারা সকলেই ‘সার্ভিস’ করেন। আর এখানে যাঁরা বসে রয়েছেন, তাঁরা সকলেই ‘সিভিল সার্ভিস’ করেন। এই সার্ভিস বা পরিষেবা ‘সিভিল সোসাইটি’র সঙ্গে যুক্ত এবং তা ‘সিভিল সোসাইটি’র অভিন্ন অঙ্গ। আমরা ‘সিভিল সোসাইটি’কে কিছু দেব, আমরা ‘সিভিল সোসাইটি’র জন্য কিছু করবো, এমন নয়! সময় বদলে গেছে, এখন আমরা আর সিভিল সোসাইটি মিলেমিশে এক হয়ে সমাজের জন্য কিছু করবো। এটাই সময়ের দাবি। মনে সেবা ভাব থাকলে কাজ করে সন্তোষ আসে। আমাদের শাস্ত্রে বলা হয়েছে – ‘সেবা পরমো ধর্মঃ’। আমাদের সংস্কৃতির গভীরে এই সেবাকে পরমধর্মের স্থান দেওয়া হয়েছে। আপনারা সরকারি ব্যবস্থার অন্তর্গত হয়ে এই সেবার সৌভাগ্য অর্জন করেছেন। আপনারা সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করুন।
এক দশকেরও বেশি সময় যাবৎ মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে একটি রাজ্যকে সেবা করার সুযোগ আমি পেয়েছিলাম। গত দু’বছর ধরে আপনাদের কাছ থেকেও অনেক কিছু শিখছি। আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে বলতে পারি, আমার কাছে একটি দেবদুর্লভ টিম রয়েছে। সামর্থ্যবান আধিকারিকদের টিম। এঁরা যে কোনও কর্ম সম্পাদনে সামর্থ্য রাখেন, তাঁদেরকে যদি কোনও দায়িত্ব দেওয়া হয়, আমি দেখেছি যে তাঁরা শনি-রবিবারও ভুলে যান। সন্তানের জন্মদিনও ভুলে যান। এই আধিকারিকরা দেশের গর্ব।
একটু আগেই নিতি আয়োগের পক্ষ থেকে একটি প্রেজেন্টেশন ছিল। অনেকেই জানেন না যে, এই স্তরের আধিকারিকরা কিভাবে কাজ করেন। প্রথম দিন আমি প্রেজেন্টেশন দিয়েছিলাম, আর সময় বেঁধে দিয়ে তাঁদেরকে বলেছিলাম, এই আলোকে আপনারা নতুন কিছু বলুন। আজ আমি গর্বের সঙ্গে বলতে পারি যে, তাঁরা করে দেখিয়েছেন। এই কাজের পেছনে কোনও সার্কুলার বা শৃঙ্খলার বন্ধন ছিল না। দেশের মানুষ শুনে অবাক হবেন, এই আধিকারিকরা স্বেচ্ছায় প্রায় ১০ হাজার ঘন্টা কাজ করে এই পরিকল্পনা গড়ে তুলেছেন। কয়েকটি গ্রুপ তো এমনকি রাত ৮টা, ১০টা, ১২ পর্যন্তও কাজ করেছেন। অন্য কয়েকটি গ্রুপ শনি-রবিবারেও কাজ করেছেন। এটা কম কথা নয়। এই সমস্ত আধিকারিকদের ১০ হাজার ঘন্টা মনন, চিন্তন ও আলাপ-আলোচনার ফল এই পরিকল্পনা। আমি সেদিন বলেছিলাম, আর আজও নিতি আয়োগের পক্ষ থেকে ব্যাল হয়েছে যে, একজন মহাজ্ঞানী ব্যক্তি পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করেছেন। কিন্তু, যাঁরা ২৫-৩০ বছর ধরে এই দেশের মাটিতে কাজ করেছেন, তাঁদের সমবেত চিন্তন কতো শক্তিশালী উপহার দিতে পারে, আজকের প্রেজেন্টেশন তার উত্তম উদাহরণ। তাঁরা এখানেই শেষ করেননি, এই চিন্তনের শৃঙ্খলাকে আরেকবার অনুসরণ করতে রিভার্স গিয়ারে নিয়ে গেছেন। আর প্রতিটি বিভাগ নিজের নিজের অ্যাকশন প্ল্যান গড়ে তুলেছে, সেই অ্যাকশন প্ল্যান বাজেটেও প্রতিবিম্বিত হয়েছে। বাজেটের অনেক কথাই এই চিন্তনপ্রসূত। সেগুলি কোনও রাজনৈতিক চিন্তা প্রক্রিয়ায় উদ্ভূত নয়। দেশ ও জাতির পক্ষে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কথা। এত বড় involvement decision making-এ এক নতুন কর্মসংস্কৃতি গড়ে উঠেছে।
আমি আধিকারিকদের নিয়ে কখনও হতাশ হই না। আমার কর্মজীবনে কোনও আধিকারিককে বকাঝকা করার পরিস্থিতি আসেনি। আমি শূন্য অভিজ্ঞতা নিয়ে শাসন ব্যবস্থায় পা রেখেছিলাম। এমনকি, পঞ্চায়েত প্রশাসন সম্পর্কেও আমার কোনও অভিজ্ঞতা ছিল না। প্রথমদিন থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত প্রশাসকদের নিয়ে আমার কোনও তিক্ত অভিজ্ঞতা নেই। আমি তাঁদের সামর্থ্য দেখেছি। কিভাবে? আমি মানি যে, প্রত্যেক ব্যক্তির মধ্যে ঈশ্বর সর্বোত্তম শক্তি দিয়েছেন। ইচ্ছাশক্তি দিয়েছেন, ভালো কিছু করার ইচ্ছা। মানুষ যত খারাপই হন না কেন, তাঁর মন ভালো কিছু করে যেতে চায়। আমাদের কাজ হল প্রত্যেক মানুষের সেই সদ্বিচ্ছাকে উজ্জীবিত করা। এই দৃষ্টিকোণ দেশের কল্যাণকে সুনিশ্চিত করবে বলে আমার বিশ্বাস।
যাঁর কাজে এতো ভালো টিম রয়েছে, যে টিমের সদস্যরা দেশের সকল প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছেন, তাঁর হতাশ হওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই। এই আশা ও বিশ্বাস নিয়ে আমার স্বপ্নগুলিকে সফল করার পথে আমি এগিয়ে চলেছি। আপনারা এতদিন যেভাবে কাজ করেছেন, সেই অভিজ্ঞতার সামর্থ্য দিয়ে কাজে গতি আনুন। output-outlay ‘র কর্মপরিসর থেকে বেড়িয়ে outcome বা পরিণামে মনোনিবেশ করুন।
যাঁরা উঁচু পদে রয়েছেন, তাঁরা পিতার মতো নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে অধীনস্থ আধিকারিকদের পথ দেখান। আপনারা কেন যথোপযোগী পরিবর্তন আনতে পারেননি, সেই ব্যর্থতার অভিজ্ঞতাকেও কাজে লাগিয়ে পরবর্তী প্রজন্মকে ঋদ্ধ করুন। আজ যাঁদের কাঁধে এই ব্যবস্থা, তাঁরা আপনাদের মতো অভিজ্ঞ না হলেও যুগোপযোগী জ্ঞানের নিরিখে তাঁরাও অনেক এগিয়ে রয়েছেন। সেজন্য আপনাদের অভিজ্ঞতার সঙ্গে তাঁদের জ্ঞান ও তারুণ্যের শক্তিকে মিশিয়ে দেশের কল্যাণে কাজ করার পথ খুঁজে নিন। দেখবেন, আপনার কর্মশক্তিতেও নতুন ইন্ধন যোগাচ্ছেন এই নবীন প্রজন্ম। আমাদের সমবেত শক্তি দেশের অগ্রগতিকে জঙ্গম করে তুলেছে।
আজ আপনারা সকলেই কম্পিউটারে কাজ করতে জানেন। কিন্তু, আপনি যতটা জানেন তার তুলনায় আজকের স্কুলের ছাত্রটিও হয়তো বেশি জানে। প্রযুক্তির দুনিয়ায় এতো পরিবর্তন এসেছে যে, এক বাড়িতে তিন প্রজন্মের মানুষের তিন ধরনের অভিজ্ঞতা। এই পরিবর্তিত সত্যকে মেনে নিতে হবে। নবীন প্রজন্ম যা জানে, আমরা তা জানি না – এটা মেনে নিতে হবে। তাদের চিন্তার পদ্ধতি আলাদা, তাদের জানার পথও ভিন্ন। সিভিল সার্ভিস দিবসে উচ্চপদে আসীন আধিকারিকরা সংকল্প গ্রহণ করুন যে, নবীন প্রজন্মের আধিকারিকদের জ্ঞানকে যথসাধ্য আত্মীকরণের মাধ্যমে আপনার বিভাগের কর্মপদ্ধতিকে নবীকরণ করবেন। তা হলেই দেখবেন, বিভাগের কাজে নতুন উৎসাহ আসবে, সকলে উৎসবের মেজাজে কাজ করবেন।
আরেকটি কথা, সকল সমস্যার গোড়ায় রয়েছে বিরুদ্ধ মত এবং সংঘাত। ইচ্ছে করে কেউ সমস্যায় জড়ান না। সহজ শব্দে বলা যায় silo পদ্ধতিতে কাজ করা। কেউ কেউ মনে করেন, এই silo পদ্ধতিতে কাজ করলেই সর্বাধিক কর্মদক্ষতার পরিচয় দেওয়া যাবে। কিন্তু, এ থেকে কোনও পরিণাম পাওয়া যায় না। একার থেকে সকলে মিলে টিম হিসেবে কাজ করলে অনেক ভালো পরিণাম পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, রাষ্ট্র গঠনের স্বার্থে একটি বিভাগের সঙ্গে আরেকটি বিভাগের আধিকারিকদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে। silo না থাকলে আমাদের আদালতগুলিতে এতো মামলা ঝুলে থাকতো না। সরকারের একটি বিভাগের সঙ্গে অন্য বিভাগ সুপ্রিম কোর্টে মামলা লড়ছে, কেন? এক বিভাগ ভাবে যে তারা ঠিক অন্য বিভাগ অন্য রকম ভাবে। এখন সুপ্রিম কোর্ট’কে ঠিক করতে হবে যে কারা ঠিক। এটা ভাববেন না যে, কেউ কাউকে পরাজিত করার ভাবনা নিয়ে মামলা লড়ছেন। এক বিভাগের আধিকারিকদের সঙ্গে বিবাদমান বিভাগের আধিকারিকদের কোনও ব্যক্তিগত ঝগড়াও নেই। এমনকি, অনেক ক্ষেত্রে যাঁরা মামলা শুরু করেছিলেন, সেই আধিকারিকরা সকলেই অবসরে চলে গেছেন। এই পরিস্থিতি থেকে আমরা কিভাবে বেড়িয়ে আসবো। আমি মনে করি, বিবাদমান সকল মামলা সম্পর্কে এখন যাঁরা দায়িত্বপ্রাপ্ত সেই আধিকারিকরা একত্রে বসে ওয়ার্কিং লাঞ্চ কিংবা ডিনারের সমতয়ে আলাপ-আলোচনা করে সমাধান করে নিন। তা হলেই দেখবেন, অনেক মামলা আপনারা সহজেই তুলে নিতে পারছেন। আর দুই বিভাগের আধিকারিকরা মিলেমিশে টিম তৈরি করে অনেক দ্রুত কাজ করতে পারছেন। এক্ষেত্রে আমার অভিজ্ঞতা বলে, এক বিভাগের সঙ্গে আরেকটি বিভাগ যুক্ত হলে তাঁর যোগ ফল দুই না হয়ে এগারো হয়।
কাজে গতি আনতে আমি reform to transform এই মন্ত্র নিয়ে এগিয়ে চলেছি। একথা সত্যি যে reform থেকে সর্বদাই transform হয় না। এর জন্য perform করতে হয়। আমাদের লক্ষ্য ঠিক আছে। গত দু’বছর ধরে এই সরকারের কোনও নীতি ভুল এরকম কোনও আরোপ দেননি। হ্যাঁ, কোনও কোনও ক্ষেত্রে অভিযোগ উঠেছে যে কাজে গতি আসছে না, কাজের প্রভাব দেখা যাচ্ছে না, আবার কেউ অভিযোগ করছেন যে, পরিণাম দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কেউ আমাদের নীতি ভুল একথা বলেননি। আমরাও তাঁদের সমালোচনাকে সাদরে গ্রহণ করে নিষ্ঠার সঙ্গে নিজেদের কাজে গতি আনার সংকল্প নিয়েছি। এভাবেই কাজের মাধ্যমে আমরা সংস্কারকে পরিবর্তনের পর্যায়ে পৌঁছে দেব। আজ সরকার সময়সীমা নির্দিষ্ট করে কাজ করার অভ্যাস তৈরি করে নিয়েছে। প্রতিটি কাজ মোবাইল ফোনের অ্যাপে মনিটর হচ্ছে। এই ভালো দিকগুলি আপনারাই গড়ে তুলেছেন, এগুলি কেউ আপনাদের ওপর চাপিয়ে দেয়নি। এখন প্রতিটি বিভাগ নিজেরাই ঠিক করে, তারা কতদিনের মধ্যে কতটা কাজ করবে। কতটা সময়ের মধ্যে কি পরিমাণ সৌরশক্তি উৎপন্ন হবে, কতগুলি গ্রামের সেচের জল পৌঁছে দেওয়া হবে, বিদ্যুৎ সংযোগ পৌঁছে দেওয়া হবে, ক্তগুলি জন ধন অ্যাকাউন্ট খোলা হবে – সবকিছুর লক্ষ্যমাত্রা আপনারাই ঠিক করেছেন। আপনাদের এই লক্ষ্য নির্দেশ করা কাজ এতই শক্তিশালী, এতই ফলদায়ক যে দেশ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। সেজন্য আমি এই টিমকে দুর্লভ টিম বলে মনে করি। আমি ভাগ্যবান যে, এহেন অভিজ্ঞ নেতৃত্বে একটি গোটা দেশে ছড়িয়ে থাকা সামর্থ্যবান নবীন প্রজন্মের দল সর্বশক্তি দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে। তাঁরা প্রত্যেকেই গ্রামীণ জীবনকে বদলাতে চান।
গত বছর আমি আপনাদের সবাইকে বলেছিলাম যে, আপনারা আগে যেসব অঞ্চলে কাজ করেছেন সেখানে ঘুরে আসুন। আমার আহ্বানে সাড়া দিয়ে আপনারা প্রত্যেকেই তা করেছেন, আর আজ আমি গর্বের সঙ্গে বলতে পারছি এক বছরের মধ্যেই আপনাদের টিম নতুন শক্তি নিয়ে এগিয়ে চলেছে। উন্নয়নের সমস্যাগুলি নিয়ে কাউকে নতুন করে ভাষণ দেওয়ার প্রয়োজন পড়েনি। ২০-৩০ বছর আগে আপনি একটা অঞ্চলের প্রশাসনের দায়িত্ব পেয়ে যে ধরনের উন্নয়ন চেয়েছিলেন কিন্তু এত বছর পরেও তা হয়ে ওঠেনি, কেন হয়ে ওঠেনি – তা আপনার থেকে ভালো করে কেউ অনুভব করতে পারবেন না। আজ আপনার হাতে যখন প্রশাসনের নেতৃত্ব রয়েছে তখন আপনি এই দায়িত্বকে নিজের ব্যক্তিগত স্বপ্ন পূরণের মতো করেই বাস্তবায়িত করবেন, এতে কোনও সন্দেহ নেই। এখন আর কোনও বিভাগকে silo হয়ে থাকতে দেওয়া যায় না, দেশও silo হয়ে থাকতে পারে না। এখন গোটা বিশ্বই পরস্পর নির্ভরশীল। সেজন্য আমাদেরও প্রথমে নিজেদের পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে তা হলেই আমরা পরিবর্তিত পরিস্থিতির প্রতিস্পর্ধাকে স্বীকার করে নিয়ে সেগুলিকেই সুযোগ পরিণত করার সংকল্প গ্রহণ করতে পারবো।
এম জিএন রেগায় এতো টাকা যায়। দেশে এতোগুলি রাজ্যে এখন খরা পরিস্থিতি চলছে, পর্যাপ্ত জল নেই, কিন্তু পরিবেশবিদদের অনুমান যে, আগামী বছর ভালো বর্ষা হবে। এখন বর্ষার আগে যে দুই-আড়াই মাস সময় বাকি রয়েছে, সেই সময়ের মধ্যে এম জি এন রেগার টাকায় সারা দেশে জলসঞ্চয়ের সফল অভিযান গড়ে তুলুন। খাল-বিল-পুকুরগুলির সংস্কার করান, নতুন পুকুর খন করান, যাতে বৃষ্টি এলেই প্রতিটি গ্রামে জলসঞ্চয় ক্ষমতা বাড়ানো যায়। আপনারা টিম হিসেবে কাজ করলে এই কাজে দ্রুত সাফল্য আসবেই।
যে জেলাগুলি সাফল্য পেয়েছে, সেই জেলাগুলির টিম ও প্রশাসনিক দলকে আমি অন্তর থেকে অনেক অনেক অভিনন্দন জানাই। আর দেশের বাকি জেলাগুলির আধিকারিকদের অনুরোধ করবো যে, আপনাদের টিমও যেন এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। আপনাদের জেলার মানুষের স্বপ্ন সফল করতে সেখানকার পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুকূল কোনও কিছু করার সংকল্প নিন – এই আশা নিয়েই আপনাদের সবাইকে সিভিল সার্ভিসেস দিবসে অন্তর থেকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। আপনারা যা করে দেখিয়েছেন, তার জন্য দেশ গর্বিত। আপনারা আরও অনেক কিছু করতে পারবেন। দেশ বুক ফুলিয়ে এগিয়ে যাবে। এই বিশ্বাস নিয়েই সকলকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
PB/SB/SB/S