Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

দিল্লির ২৬ আলিপুর রোডে ডঃ আম্বেদকর জাতীয় স্মারক উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ


আমার মন্ত্রী পরিষদের সহযোগী শ্রী থাবরচন্দ্রজি গেহলট, শ্রী রামবিলাস পাসওয়ানজি, এই অঞ্চলের সাংসদ এবং আমার মন্ত্রী পরিষদের সঙ্গী ডঃ হর্ষবর্ধনজি, শ্রী রামদাস আঠওলেজি, শ্রী বিজয় সাঁপলাজি, এখানে উপস্থিত অন্য সমস্ত মাননীয় ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ,

সবার আগে আমি ১২৫ কোটি দেশবাসীকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই এজন্যে যে, তাঁরা আজ ডঃ আম্বেদকর ন্যাশনাল মেমোরিয়াল রূপে একটি অমূল্য উপহার পেয়েছেন। আজ বাবাসাহেবের স্মৃতিতে নির্মিত এই জাতীয় স্মারকটি দেশের উদ্দেশে সমর্পন করতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান বলে মনে হচ্ছে।

দেশে বৈশাখীর পরবও উদযাপন করা হচ্ছে। বৈশাখী আমাদের অন্নদাতা কৃষকদের পুজো করার দিন। আমি দেশবাসীকে বৈশাখীর অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। আজ জালিয়ানওয়ালাবাগ গণহত্যাকাণ্ড দিবসও। আজ থেকে ৯৯ বছর আগে নিরস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামীদের উপর ব্রিটিশ সরকারের নির্বিচারে গুলীবর্ষণের সেই ঘটনা মানবসভ্যতার ইতিহাসে সর্বাধিক হৃদয়বিদারক ঘটনাগুলির অন্যতম। জালিয়ানওয়ালাবাগ গণহত্যাকাণ্ড-এ শহিদ প্রত্যেক স্বাধীনতা সংগ্রামীকে আমি প্রণাম জানাই।

বন্ধুগণ, স্বাধীনতার পর এত সরকার এসেছে, কত সময় পেরিয়ে গেছে, কিন্তু যে কাজ অনেক আগে হওয়া উচিত ছিল, সেই কাজ অনেক দশক পর আজ হচ্ছে। আর সেজন্যে এখানে আসা, এই কর্মকাণ্ডে সামিল হওয়া, সেই স্থানে এসে দাঁড়ানো যেখানে বাবাসাহেব জীবনের শেষ সময়টা কাটিয়েছেন, এটা আমার জন্য অত্যন্ত হৃদয়স্পর্শী মুহূর্ত। বাবাসাহেবের নামে তাঁর স্মৃতিতে নির্মিত এই জাতীয় স্মৃতিসৌধ, দেশবাসীর পক্ষ থেকে তাঁর প্রতি একটি আন্তরিক শ্রদ্ধাঞ্জলি। আগামীকাল বাবাসাহেবের জন্মজয়ন্তী। তার একদিন আগে এখানে এই সমারোহের আয়োজন। বাবাসাহেবের প্রতি আমাদের সবার অটুট শ্রদ্ধা প্রদর্শন, সরকারের দায়বদ্ধতাকে প্রকাশ করছে।

এই পবিত্র কর্মসম্পাদনের জন্য আমি ন্যায় ও অধিকার মন্ত্রক এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের এই উদ্যোগকে অন্তর থেকে অনেক অনেক সাধুবাদ জানাই। এই স্মৃতিসৌধ নির্মাণের জন্য মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কাজ করতে থাকা প্রত্যেক শ্রমিককে আমার প্রণাম। তাঁদের মধ্যে অধিকাংশ আজ এখানে উপস্থিত নেই। তাঁরা হয়তো এখন দূরে কোথাও অন্য কাজে লেগে পড়েছেন, কিন্তু আমি তাঁদেরকেও কোটি কোটি প্রণাম জানাই।

ভাই ও বোনেরা, আজ থেকে এই স্মারক দিল্লির পর্যটন মানচিত্রে একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন রূপে পরিগণিত হবে। এখানে এসে মানুষ বাবাসাহেবের জীবনের সঙ্গে যুক্ত সমস্ত বিষয়, তাঁর ভাবধারা সম্পর্কে অবগত হতে পারবেন।

এই স্মারক একজন অসামান্য ব্যক্তির অসাধারণ জীবনের প্রতীক। এই স্মৃতিসৌধটি একটি বইয়ের আকৃতিতে গড়ে তোলা হয়েছে। এই বই হ’ল ভারতের সংবিধান – যেটি রচনায় নেতৃত্ব দিয়েছেন ডঃ বাবাসাহেব আম্বেদকর, যা বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতন্ত্রকে রক্ষা করার পথ সুগম করেছে। যখন নতুন প্রজন্মের মানুষ এই স্মৃতিসৌধ দেখতে আসবেন, এখানে এসে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে বাবাসাহেবের জীবন ও কর্মধারা নানা পর্যায় দেখে তাঁর জীবনের বিশালতাকে অনুভব করতে পারবেন।

বন্ধুগণ, আমার সরকারের সৌভাগ্য বাবাসাহেবের জীবনের সঙ্গে যুক্ত পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান, যেগুলিকে আমি সর্বদা পঞ্চতীর্থ রূপে শ্রদ্ধা সহ স্মরণ করি। সেগুলিকে ইতিমধ্যেই একেকটি পর্যটন কেন্দ্র রূপে বিকশিত করার সুযোগ পেয়েছি। শ্রী গেহলটজি এ সম্পর্কে বিস্তারিত বলেছেন। মধ্যপ্রদেশে বাবাসাহেবের জন্মভূমি, লণ্ডনে তাঁর শিক্ষাভূমি, নাগপুরে দীক্ষাভূমি আর মুম্বাইয়ে চৈত্যভূমি (চিন্তন ভূমি) আর দিল্লিতে মহানির্বাণভূমি। এই পুণ্যতীর্থ তাই নিছকই একটি ইঁট-সিমেন্ট দিয়ে নির্মিত সৌধ নয়, এটি একটি জীবন্ত প্রতিষ্ঠান, আচার-বিচারে বড় প্রতিষ্ঠান।

বন্ধুগণ, এই সুরম্য ভবনটি আমাদের সরকারের কর্ম-সংস্কৃতির প্রতীকও। যখন অটল বিহারী বাজপেয়ীজির সরকার ছিল – কত বছর হয়ে গেছে ভাবুন! তখনই এই সৌধ নির্মাণের প্রস্তাব আসে, মঞ্জুর হয়, সরকারি প্রক্রিয়া এগিয়ে চলে। কিন্তু পরবর্তী সরকারের সময় থেকেই এই প্রক্রিয়া ফাইলচাপা পড়ে। ২০১৪ সালে দেশবাসী আমাকে সরকারের নেতৃত্বপ্রদানের দায়িত্ব অর্পন করার পর আমরা এই ফাইল খুঁজে বের করে, দ্রুতগতিতে কাজ শুরু করি।

২০১৬ সালের ২৬ মার্চ এই স্মৃতিসৌধের শিলান্যাসের সময়ই আমি ঘোষণা করেছিলাস্ম যে, ২০১৮ সালে বাবাসাহেবের জন্মজয়ন্তীর আগেই আমি এটি উদ্বোধন করতে চাই! আমি অত্যন্ত বিনম্রভাবে বলতে চাই যে, আমরা এমন একটি কর্মসংস্কৃতি গড়ে তোলার চেষ্টা করছি, আমরা যে যে কাজের শিলান্যাস করব, তার উদ্বোধনও আমরাই করব।

সময়ানুবর্তিতা, নিজের সঙ্গীদের ওপর, টিমের ওপর আস্থা এবং সরকারের ইচ্ছাশক্তি, কেমন পরিবর্তন আনতে পারে, তা আজ নির্দিষ্ট সময়ের আগেই এই সুরম্য স্মৃতিসৌধ উদ্বোধনের মাধ্যমেই প্রতিভাত হয়েছে।

বন্ধুগণ, গণতন্ত্রে জবাবদিহিতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শুধু জনগণকে নয়, নিজেকেও জবাব দিতে হয়। কিন্তু আমাদের দেশে অধিকাংশ সরকারই এক্ষেত্রে উন্নাসিক। বর্তমান সরকার এই ব্যবস্থাকে বদলে দিয়েছে। আপনারা হয়তো দিল্লির ১৫ জনপথ এলাকায় নির্মিত আম্বেদকর ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার দেখতে গিয়েছেন। ১৯৯২ সালে এটি নির্মাণের প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল। কিন্তু তারপর ২২ বছর সেটি ফাইলচাপা ছিল। আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর ২০১৫ সালে শিলান্যাস করি। গত ডিসেম্বর মাসে সেটির উদ্বোধনও করি। এখন সেই ‘স্টেট অফ দ্য আর্ট’ ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারটি দিল্লির অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং গর্বের পর্যটনস্থল।

ভাই ও বোনেরা, তৃণমূল স্তরে গিয়ে ব্যবস্থার ত্রুটিগুলিকে শুধরে নিয়ে কাজ করতে পারলেই এমনই ব্যবস্থার কায়াকল্প সম্ভব। এই দিন তিনেক আগেই আমি চম্পারণে ছিলাম, সেখান থেকে আমি মাধেপুরায় ইলেক্ট্রিক লোকোমোটিভ কারখানার ফেজ-১’রও উদ্বোধন করেছি। এই প্রকল্পের গল্পটিও একই রকম মঞ্জুর হয়েছে ২০০৭ সালে। কিন্তু কাজ শুরু হয়েছে আমরা ২০১৫-তে। এই ৭ বছর ধরে আগের সরকার প্রকল্পটিকে ফাইলচাপা রেখেছিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই যে থামিয়ে রাখা, বিভ্রান্ত করা, ঝুলিয়ে রাখার কর্মসংস্কৃতি গড়ে উঠবে – এটা বাবাসাহেব কখনও কল্পনাই করতে পারেননি। তিনি কখনও ভাবেননি যে স্বাধীন ভারতে সরকারি প্রকল্পগুলি ৩০-৪০ বছরেও সম্পূর্ণ হবে না। এভাবে প্রকল্পগুলিকে অসম্পূর্ণ রেখে দেওয়া দেশের প্রতি একটি বড় অপরাধ।

বন্ধুগণ, বিগত চার বছরে আমরা খুঁজে খুঁজে এরকম বছরের পর বছর ধরে লালফিতের ফাঁসে পড়ে থাকা প্রকল্পগুলিকে বের করে এনে কাজ চালু করেছি। সরাসরি প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের তদারকিতে, নিয়মিত বৈঠকের মাধ্যমে সাড়ে নয় লক্ষ কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগে সেসব অসম্পূর্ণ প্রকল্পের কাজ এখন দ্রূতগতিতে এগিয়ে চলেছে! বিগত চার বছর ধরে আয়োজিত নিয়মিত বৈঠকগুলি এই প্রগতিকে নতুন গতি দিয়েছে।

বন্ধুগণ,  অভাবের কথা বলে কাঁদবো না, আর প্রভাবে বিচলিত হব না! – এই মন্ত্র প্রত্যেকের জন্যে একটি শক্তিতে রূপান্তরিত হয়! বাবাসাহেব আম্বেদকর নিজের জীবন দিয়ে এই শক্তি সঞ্চার করে গেছেন। সেজন্যে বর্তমান সরকারকেও আপনারা কখনও কাঁদতে দেখবেন না! আমরা তো নিজেদের সম্পদ ও সামর্থে ভরসা করে প্রতিনিয়ত অগ্রগতির প্রচেষ্টা চালিয়ে যাই। এই ভাবনাই আমাদের লক্ষ্য নির্ধারণ আর সেগুলি বাস্তবায়ণে নিজেদের সম্পূর্ণ শক্তি নিয়ে ঝাপিয়ে পড়তে শিখিয়েছে।

ভাই ও বোনেরা, আজ থেকে ঠিক এক মাস আগে দিল্লিতে যক্ষ্মা রোগ নিয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সারা পৃথিবীর প্রতিনিধিরা এসেছিলেন। সেই বৈঠকে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সকলে সিদ্ধান্ত নেয় যে, যক্ষ্মাকে ২০৩০ সালের মধ্যে জয় করতে হবে। সেই বৈঠকে ভারত ঘোষণা করেছে যে, ২০২৫ সালের মধ্যেই ভারত থেকে যক্ষ্মা নির্মূল করা হবে। অর্থাৎ আমরা নিজেদের জন্য লক্ষ্য প্রাপ্তির সময়সীমা অন্যান্য দেশের তুলনায় ৫ বছর এগিয়ে এনেছি।

এখন আপনারা ভাবুন, পূর্ববর্তী সরকারগুলি কর্মসম্পাদনের তারিখ কি করে পিছিয়ে দেওয়া যায়, তা নিয়ে মাথা ঘামাতো কিন্তু বর্তমান সরকার কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই তার সম্পাদনে তারিখ স্থির করে ফেলে – এটা কেমন কাজ! বর্তমান সরকার নির্ধারিত সময়ের আগেই কাজ সম্পূর্ণ করায় বিশ্বাস রাখে। আর এই কাজ কেমন? যক্ষ্মার বিরুদ্ধে লড়াই ধনীদের জন্য নয়, যক্ষ্মা তো গরিবদের বাড়িতেই বাসা করে থাকে। দলিত-বঞ্চিত-শোষিত মানুষকে এ ধরণের সমস্যা থেকে মুক্তি দেওয়াই বাবাসাহেব আম্বেদকরের স্বপ্ন ছিল। আমরা সেই স্বপ্ন পূরণের কাজ করছি। দেশের প্রান্তিক অঞ্চলগুলিতে গর্ভবতী মহিলা ও শিশুদের টিকাকরণ থেকে শুরু করে গ্রামগুলিকে গ্রামীণ সড়ক যোজনার মাধ্যমে সুগম করা সকল ক্ষেত্রেই সরকার যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল, এখন তার সম্পাদনের সময়সীমা ২-৩ বছর করে এগিয়ে এনেছে। যে কাজ ২০২২ সালে করার কথা ভেবেছিলাম, এখন মনে হচ্ছে ২০২০-র মধ্যেই সেগুলি করে ফেলতে পারব। তা হলে ২০২৪ সালে যা যা করার কথা সেগুলি ২০২২-এর মধ্যে কেন করতে পারব না।

বন্ধুগণ, বাবাসাহেবের বিচারধারার ভিত্তি হ’ল সাম্যের বিভিন্ন রূপ। সম্মানের সাম্য, আইনে সাম্য, অধিকারে সাম্য, মানবিক গরিমায় সাম্য, সুযোগে সাম্য। এমনই কত না বিষয়ে সাম্য স্থাপনের স্বার্থে বাবাসাহেব জীবনের নতুন ব্যাখ্যায় সেই বিষয়গুলি তুলে ধরতেন। তিনি প্রায়ই আশা প্রকাশ করতেন যে, ভারত সরকার কোনও রকম জাতি-ধর্ম-বর্ণ-বৈষম্যকে না মেনে সংবিধান দর্শিত পথে কাজ করে যাবে।

আজ বর্তমান সরকারের প্রতিটি প্রকল্পে আপনারা সামাজিক ন্যায় এবং কোনও রকম বৈষম্যহীন সাম্যের অধিকার প্রতিষ্ঠা অনুভব করবেন। দশকের পর দশক কাল ধরে আমাদের দেশে যে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়েছে বর্তমান সরকার তা নানাভাবে নিরসনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। যেমন – জন ধন যোজনা, স্বাধীনতার এত বছর পর কোটি কোটি জনগণের নিজস্ব ব্যাঙ্কের খাতা না থাকা অনেক বড় সামাজিক অন্যায়। আমাদের সরকার এই অসাম্য দূর করেছে।

জন ধন যোজনার মাধ্যমে ইতিমধ্যেই দেশে ৩১ কোটিরও বেশি দরিদ্র মানুষ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলেছেন। একই রকমভাবে দেশের কোটি কোটি বাড়িতে শৌচালয় না থাকা, সামাজিক অন্যায়েরই আরেকটি রূপ। ইতিমধ্যেই আমরা স্বচ্ছ ভারত অভিযানের মাধ্যমে দেশে প্রায় ৭ কোটি শৌচালয় নির্মাণ করেছে। এর মধ্যে প্রায় ২ কোটি ২৫ লক্ষ শৌচালয় গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারী আমার দলিত-পীড়িত-বঞ্চিত-শোষিত এবং আদিবাসীদের বাড়িতে তৈরি হয়েছে। বিগত চার বছরে দেশ অনুভব করেছে কিভাবে শৌচালয় নির্মাণের মাধ্যমে পারিবারিক সম্মান বৃদ্ধি হয়, সাম্য সুনিশ্চিত হয়!

ভাই ও বোনেরা, আজকের এই আধুনিক সময়ে কারও বাড়িতে বিদ্যুৎসংযোগ না থাকাটা অনেক বড় সামাজিক অন্যায়! ২০১৪ সালে আমাদের দেশে ১৮হাজার এমন গ্রাম ছিল যেগুলিতে বিদ্যুতের খুঁটিও পৌঁছোয় নি। স্বাধীনতার এত বছর পরেও ১৮ হাজার গ্রাম অষ্টাদশ শতাব্দীর মতো জীবনযাপন করতে বাধ্য ছিলেন। আমি প্রধানমন্ত্রী হয়ে অনেক সাহস করে লালকেল্লার প্রাকার থেকে ঘোষণা করেছিলাম যে, আগামী ১০০০দিনের মধ্যে ঐ গ্রামগুলিতে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেব। আমরা কাজে লেগে পড়ি, আর আজ শেষ যে তথ্য পেয়েছি, তা অনুসারে ২০০ থেকে ২২৫টি গ্রামে এখনও বিদ্যুৎ পৌঁছনোর কাজ বাকি আছে। কিন্তু ইতিমধ্যেই আমরা প্রত্যেক বাড়িতেই বিদ্যুৎ পৌঁছনোর কাজ শুরু করে দিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী সৌভাগ্য যোজনার মাধ্যমে দেশের ৪ কোটি বাড়িতে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। বাড়িতে বাড়িতে আলো থাকলে গোটা সমাজ আলোকিত হবে। স্বরোজগারকে উৎসাহ প্রদানকারী মুদ্রা যোজনাও দশকের পর দশক কাল ধরে চলতে থাকা অন্যায়কে সমাপ্ত করার কাজ করছে। ইতিমধ্যেই মুদ্রা যোজনার মাধ্যমে ১২ কোটিরও বেশি ঋণ মঞ্জুর করা হয়েছে। এর মধ্যে ২ কোটি ১৬ লক্ষেরও বেশি দলিত প্রাপক কোনও রকম গ্যারান্টি ছাড়াই ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ পেয়েছেন। আর তা দিয়ে তাঁরা আজ নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন।

বন্ধুগণ, বর্তমান বাজেটেও সরকার একটি বড় প্রকল্প ঘোষণা করেছে। সারা পৃথিবীতে এই প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এই প্রকল্প সামাজিক ভারসাম্যহীনতা দূরীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এই প্রকল্পের নাম হ’ল ‘আয়ুষ্মান ভারত’। এর মাধ্যমে সরকার দেশের প্রায় ১০-১১ কোটি দরিদ্র পরিবার বা প্রায় ৪৫-৫০ কোটি মানুষকে স্বাস্থ্য বিমার আওতায় আনবেন। ঐ পরিবারগুলির যে কোনও সদস্য অসুস্থ হলে তাঁদের বছরে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচে চিকিৎসা সুনিশ্চিত করা হচ্ছে।

আজ দেশের যে কোনও প্রান্তে গ্রামীণ মহিলারা যে প্রকল্প নিয়ে সবচেয়ে বেশি খুশি, তা হ’ল উজ্জ্বলা যোজনা। আগে যাঁদের রান্নাঘরে গ্যাস কানেকশন আছে, তাঁদের দিকে সবাই সম্মানের চোখে তাকাতেন। যাঁদের ঘরে ছিল না, তাঁরা নিঃসন্দেহে সামাজিক অন্যায়ের শিকার। উজ্জ্বলা যোজনার মাধ্যমে সরকার বিনামূল্যে সাড়ে তিন কোটিরও বেশি মা ও বোনেদের রান্নার গ্যাস সংযোগ দিয়েছে। ইতিমধ্যেই এর লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধি করে ৮ কোটি করে দেওয়া হয়েছে। আমার মনে হয়, বিগত কয়েক দশকে সমস্ত সরকারি প্রকল্পের তুলনায় সামাজিক ন্যায় স্থাপনের ক্ষেত্রে এটি সর্বাধিক জনপ্রিয় প্রকল্প হয়ে উঠেছে।

বন্ধুগণ, আইনের মাধ্যমে সামাজিক ভারসাম্য রক্ষারও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ২০১৫ সালে দলিতদের ওপর অত্যাচার বন্ধ করার জন্য প্রচলিত আইনকে সরকার আরও শক্ত করেছে। দলিতদের ওপর অত্যাচারের তালিকাকে ২২টি ভিন্ন ভিন্ন অপরাধ থেকে বাড়িয়ে আমরা তাকে ৪৭ রকমের অপরাধের শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা করেছি।

* আমাদের সরকার এই আইন সংশোধনের সময়ে অভিযুক্তদের অগ্রিম জামানত না দেওয়ার যে ব্যবস্থা ছিল, তা পরিবর্তন করেনি। পীড়িত ব্যক্তিকে দেয় অর্থ রাশির পরিমাণও সরকার বাড়িয়েছে। এই আইন পালনের জন্য বর্তমান সরকার আগের সরকারের তুলনায় পীড়িতদের জন্য দ্বিগুণ অর্থ প্রদানে ব্যবস্থা করেছে। মাননীয় সুপ্রিম কোর্ট এই অধিনিয়ম সংশ্লিষ্ট রায় দিলে সরকার দ্রুত পুনর্বিচারযাচিকাও দাখিল করেছিল। কিন্তু অনেকেই জানেন না যে, রায়দান আর যাচিকার মাঝে ছ’দিন ছুটি ছিল, সরকারি ছুটি। যাঁরাই আমাকে এই দেরী নিয়ে প্রশ্ন করেছেন, তাঁদেরকে এই ছ-দিন ছুটির কথা বলেছি। তখন তাঁরা দুঃখ প্রকাশ করে চুপ হয়ে যেতেন।

* আমি আজ এই উপলক্ষে দেশকে আশ্বস্ত করতে চাই যে, আমাদের সরকার যে আইনকে শক্ত করেছে, তাকে অপরিবর্তিত রাখার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে। আমি জনগণকে অনুরোধ করব যে, কংগ্রেস সংস্কৃতির সামনে আত্মসমর্পণকারী দলগুলির ফাঁদে পা দেবেন না।

বন্ধুগণ, আমাদের দলিত ভাই-বোন পিছিয়ে পড়া আদিবাসীদের সম্মান ও তাঁদের অধিকার প্রচেষ্টার জন্য সম্পূর্ণ রূপে দায়বদ্ধ। তপশিলি জাতি/উপজাতিদের ওপর অত্যাচার সংক্রান্ত মামলাগুলির দ্রুত শুনানির জন্য বিশেষ আদালতের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সরকার পিছিয়ে পড়া জাতিদের সাব-ক্যাটাগরির জন্য কমিশন গঠনের নির্ণয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকার চায় যে, ওবিসি-দের মধ্যে যাঁরা খুবই পিছিয়ে তাঁরা যাতে সরকার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে যথেষ্ট সংরক্ষণের সুবিধা পান।

বন্ধুগণ, আগে বছরে ৬ লক্ষ টাকা পর্যন্ত রোজগারকারী কর্মচারীদের ক্রিমিলেয়ারের আওতায় আসত। এখন সেই সীমা বাড়িয়ে বছরে ৮ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ এখন আরও বেশি পিছিয়ে পড়া মানুষ ওবিসি সংরক্ষণের দ্বারা উপকৃত হবেন।

আগে সরকার এবং সার্বজনিক ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলিতে কর্মরত কর্মচারীরা ক্রিমিলেয়ারের সুবিধা পেতেন না। বিগত ২৪ বছর ধরে এই ভারসাম্যহীনতা দূর করার দাবি ছিল। বর্তমান সরকার কয়েক মাস আগে এই ভারসাম্যহীনতা দূর করে দিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারে দায়িত্ব গ্রহণের পর আমরা দলিত ও পিছিয়ে থাকা মানুষের জন্য সংরক্ষিত সরকারি পদগুলি অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে পূরণ করেছি।

বন্ধুগণ, ডঃ বাবাসাহেব আম্বেদকরের ১২৫তম জন্মজয়ন্তী দেশে-বিদেশে অত্যন্ত উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে পালন করা হয়েছে। রাষ্ট্রসংঘেও পালিত হয়েছে। বিশ্বের ১৫০টির বেশি দেশে পালন করা হয়েছে। সেই উপলক্ষে বিশেষ ডাকটিকিট ও মুদ্রা জারি করা হয়েছে। এরকম প্রথমবার হ’ল।

প্রজাতন্ত্র দিবসে বাবাসাহেবকে নিয়ে ট্যাবলো সাজানো হয়েছিল। আমেরিকা ও ব্রিটেনে যেখানে যেখানে বাবাসাহেব পড়াশুনা করতেন, সেখানে অনেক ছাত্রছাত্রীদের পাঠানো হয়েছে। আর ২৬ নভেম্বর, যেদিন সংবিধানকে স্বীকার করা হয়েছে, সেই দিনটিকে সংবিধান দিবস ঘোষণা করেছি। আর প্রথমবার সংসদে সংবিধান নিয়ে দু-দিন ধরে আলাপ-আলোচনা করা হয়েছে। কিছুদিন আগে নরেন্দ্র যাদবজির সঙ্গে দেখা হলে তাঁর জীবনের একটি গল্প শুনেছিলাম। আমি যখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন সময়েই সংবিধানের ৬০ বছর পূর্তি হয়েছিল। সেই ৬০ বছর কিভাবে এল আর কিভাবে চলে গেল দেশে কেউ টের পাননি। শুধু আমি গুজরাটে সংবিধানের ৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষে একটি বড় উৎসবের আয়োজন করেছিলাম। সংবিধানকে হাতির পিঠে রূপোর হাওদায় চাপিয়ে শোভাযাত্রা বের করেছিলাম। আর হাতির সামনে আমি পায়ে হেঁটে ঐ পদযাত্রায় অংশগ্রহণ করেছিলাম। হাতির হাওদায় সংবিধানের পেছনে বাবাসাহেব আম্বেদকরের বড় একটি ছবি ছিল। এটাই আমাদের দায়বদ্ধতা আমাদের সমর্থন।

ভাই ও বোনেরা, আমি আজ দেশবাসী স্পষ্ট করে বলতে চাই যে, বাবাসাহেবের সত্যনিষ্ঠা, কর্তব্যনিষ্ঠা আর তাঁর রাষ্ট্রনির্মাণের পবিত্র যজ্ঞে অংশগ্রহণের পরে তিনি ভারতবাসীর হৃদয়ে বাস করেন। কংগ্রেস দল পূর্ণ শক্তি লাগিয়ে দেশের ইতিহাস থেকে তাঁর নাম মিটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। এটাই ইতিহাসে সবচেয়ে কটু সত্য যে, বাবাসাহেবের জীবৎকালেই কংগ্রেস দল তাঁকে অপমানের কোনও প্রচেষ্টা বাকি রাখেনি।

কংগ্রেসের সঙ্গে বাবাসাহেবের সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পূর্ববর্তী ঘটনাবলি নিয়ে যদি বলতে শুরু করি তাহলে কয়েকদিন সময় লেগে যাবে। আর কংগ্রেসের আসল চেহারা উন্মোচন করতে এই ঘটনাগুলি তুলে ধরা উচিতও।

বন্ধুগণ, অনেক মতান্তরের কারণেই বাবাসাহেব পণ্ডিত নেহেরুর মন্ত্রীসভা থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন। আমি তাঁর বয়ানের কয়েকটি পঙক্তি আপনাদের সামনে তুলে ধরতে চাই। পরবর্তী সময়ে দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেছিল যে কংগ্রেস দল, তাঁদের নেতারা দেশের সংবিধান প্রণেতার সঙ্গে কেমন ব্যবহার করেছিল, তা জানার অধিকার বিশেষ করে দেশের দলিত, পিছিয়ে পড়া ও আদিবাসী সমাজের রয়েছে।

বন্ধুগণ, বাবাসাহেব লিখেছিলেন যে, ‘আমাকে ক্যাবিনেটের কোনও কমিটির অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি’ তিনি মন্ত্রী ছিলেন, কিন্তু তাঁকে কোনও কমিটির দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। তিনি লিখেছেন, ‘বৈদেশিক সম্পর্ক কিংবা প্রতিরক্ষা কোনওটিতেই নয়। যখন আর্থিক বিষয় নিয়ে কমিটি রচিত হচ্ছিল, একজন অর্থনীতির ছাত্র ছিলাম বলে আমি ভেবেছিলাম, আমাকে সেই কমিটির অন্তর্ভুক্ত করা হবে কিন্তু সেখানেও আমাকে নেওয়া হয়নি’।

বাবাসাহেব’কে নিয়ে কংগ্রেস কী ভাবতো, এটাই হ’ল ৭০ বছর বছর আগের আসল চিত্র। যে ব্যক্তি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতি ছাত্র ছিলেন, তাঁকে প্রতি মুহূর্তে কংগ্রেস দলের মধ্যে অপমানিত হতে হ’ত। বাবাসাহেব নিজে বলেছেন যে, তাঁকে এমন একটি মন্ত্রক দেওয়া হয়েছিল, যেখানে তেমন একটা কাজ ছিল না। তিনি ভেবেছিলেন, তাঁকে যোজনা কমিশনে রাখা হবে। কারণ, এ ব্যাপারে তাঁর অনেক অভিজ্ঞতা ছিল। কিন্তু সেখান থেকেও তাঁকে দূরে রাখা হয়। এমনকি, মন্ত্রী পরিষদ বিস্তারের সময়ে কোনও মন্ত্রকের অতিরিক্ত দায়িত্বও তাঁকে দেওয়া হয়নি।

বন্ধুগণ, আরেকটি বড় কারণ ছিল, যে জন্য বাবাসাহেব নেহরু মন্ত্রীসভা থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। তা হল, কংগ্রেসের সর্বস্তরে দলিত ও পিছিয়ে পড়া মানুষের প্রতি দুর্ব্যবহার। নিজের কলমে তিনি লিখেছেন, ‘এখন আমি সেই কারণটি বলতে চাই, যা আমার সরকারের প্রতি মোহভঙ্গ করে দিয়েছে। সেটি হ’ল পিছিয়ে পড়া এবং দলিতদের প্রতি অবিচার। আমি দুঃখিত যে, সংবিধানে এই পিছিয়ে পড়া মানুষদের সংরক্ষণের সঠিক ব্যবস্থা নেই। একাজ একটি কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে করতে হ’ত। কিন্তু সংবিধান কার্যকরি হওয়ার পর এক বছর পেরিয়ে গেলেও সরকার এখন পর্যন্ত এহেন কমিশন নিযুক্ত করার ব্যাপারে ভাবেইনি।

বন্ধুগণ, তখন থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত কংগ্রেসের ভাবনায় কোনও পরিবর্তন আসেনি। বিগত ৭০ বছরে পিছিয়ে পড়া মানুষের স্বার্থে কমিশন গঠনের ব্যাপারে কংগ্রেস প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেছে। এখনও তাঁরা সংসদে ওবিসি কমিশনকে সাংবিধানিক মর্যাদা দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। আমরাই ওবিসি কমিশনকে সাংবিধানিক মর্যাদা দেওয়ার বিল এনেছিলাম, যেটি বাস্তবায়িত হলে এই কমিশনকেও তপশিলি জাতি/উপজাতি কমিশনের মতো ক্ষমতাপ্রাপ্ত হবে। কিন্তু কংগ্রেস তা হতে দিচ্ছে না।

বন্ধুগণ, আপনাদেরকে বাবাসাহেবের পদত্যাগের ঘটনাটি এত বিস্তারিতভাবে বলার কারণ হ’ল কংগ্রেস এখন একথা বলে ভ্রম সৃষ্টি করছে যে, তারা বাবাসাহেবকে আইন মন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছিল। কিন্তু আইন মন্ত্রী হওয়ার পর তাঁর সাথে যে দুর্ব্যবহার করা হয়েছিল, সেটা ভারতবাসীর জানা উচিৎ। কারণ, স্বাধীনতার পর কংগ্রেস এমন একটি আবহ গড়ে তুলেছে, যাতে দেশের ইতিহাস শুধুই একটি পরিবারকে ঘিরে সঙ্কুচিত থেকে গেছে। আমরা দায়িত্ব গ্রহণের পরই গিয়ে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল এবং বাবাসাহেব আম্বেদকরের স্মারক গড়ে উঠেছে। তার আগে ঐ একটি পরিবার ছাড়া আর কারও স্মারক দেশে ছিল না। অন্যরা কি কেউ দেশের জন্য আত্মবলিদান দেননি। বাবাসাহেব আম্বেদকর তো আর ভারতীয় জনতা পার্টির সদস্য ছিলেন না। কিন্তু তিনি ভারতের ভবিষ্যৎ নির্মাতা ছিলেন। সমস্ত দেশবাসীর তাঁর কাছে ঋণী থাকা উচিৎ। তিনি কারও চোখ রাঙানির সামনে মাথা নত করেননি। কংগ্রেস দলে যাঁরাই মাথা নত করেননি, তাঁদেরকে টিকতে দেওয়া হয়নি। যত অবদানই থাকুক না কেন, তাঁদের স্থান কোনও ইতিহাস বইতেও হয়নি।

বন্ধুগণ, ১৯৫১ সালে ক্যাবিনেট থেকে পদত্যাগ করার পর বাবাসাহেব ১৯৫২’র লোকসভা নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন। কংগ্রেস শুধু তাঁর বিরুদ্ধে প্রার্থী দিয়েই ক্ষান্ত থাকেনি, পণ্ডিত নেহরু নিজে তাঁর বিরুদ্ধে প্রচারাভিযানে গিয়েছিলেন। পূর্ণ শক্তি দিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে লড়াই করার ফলে বাবাসাহেব হেরে গিয়েছিলেন। ১৯৫৩ সালে ভণ্ডারা আসন থেকে উপ নির্বাচনে প্রার্থী হয়ার পরও একইরকমভাবে কংগ্রেস শুধু তাঁর বিরুদ্ধে প্রার্থী দিয়ে পূর্ণ শক্তি দিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে লড়াই করে বাবাসাহেবকে লোকসভায় পৌঁছুতে দেওয়া হয়নি। সেই নিরন্তর অপমানের বিরুদ্ধে তাঁর পাশে এসে দাঁড়ান ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। তাঁরই প্রচেষ্টায় বাবাসাহেব পরে রাজ্যসভার সদস্য হতে পেরেছিলেন। সেই ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় জনসংঘের জন্মদাতা, যে দলটি আজ ভারতীয় জনতা পার্টিতে পরিণত হয়েছে।

বন্ধুগণ, আজ আমি কংগ্রেসকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছি যে, তাঁরা বাবাসাহেব আম্বেদকরের জন্য করেছেন এমন একটি কাজ বলুন। আমি কংগ্রেসকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছি, তাঁরা বাবাসাহেব আম্বেদকরের সম্মানের জন্য কিছু করে থাকলে বলুন।

ভাই ও বোনেরা, আমি ও আপনারা সবাই জানি যে, কংগ্রেসের কাছে এই চ্যালেঞ্জের কোনও জবাব নেই। জবাবের নামে তারা মিথ্যে কথা বলতে পারে। কিন্তু সত্যি এটাই যে, বাবাসাহেবের মৃত্যুর পর কংগ্রেস রাষ্ট্র নির্মাণে তাঁর অবদানের কথাও মিটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। নেহরু থেকে শুরু করে রাজীব গান্ধী পর্যন্ত কংগ্রেসের সকল নেতাকে ‘ভারতরত্ন’ সম্মানে ভূষিত করা হয়েছে। কিন্তু বাবাসাহেব ‘ভারতরত্ন’ সম্মানের যোগ্যতম অধিকারী ছিলেন।

যখন ভারতীয় জনতা পার্টির সমর্থনে ভিপি সিং সরকার ক্ষমতায় আসে, তখনই অটলজি, আডবাণীজির সুপারিশে বাবাসাহেব আম্বেদকরকে ভারতরত্ন সম্মানে ভূষিত করা হয়। বিজেপি’র প্রচেষ্টাতেই সংসদের সেন্ট্রাল হল-এ বাবাসাহেবের তৈলচিত্র টাঙানো হয়েছে। তার আগে সেই মহাপুরুষের স্থান সংসদের সেন্ট্রাল হলে হয়নি, যিনি দেশের সংবিধান রচনা করেছেন। যে মহাপুরুষ এই সংসদের সেন্ট্রাল হলে বসে সংবিধান রচনা করেছেন, হাজার হাজার ঘন্টা ধরে প্রতিটি বিষয় নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা করেছেন, তাঁর জন্য কংগ্রেস শাসনকালে এই সেন্ট্রাল হলে ২ X ৪ ফুট ছবি লাগানোর জায়গা হয়নি!

ভাই ও বোনেরা, আমি জোর দিয়ে বলতে পারি যে, বিগত শতাব্দীর ৯০ দশকে সারা দেশে পিছিয়ে পড়া এবং দলিত জনগণের অধিকার নিয়ে সারা দেশে আলাপ-আলোচনা এবং আন্দোলন শুরু না হ’ত, তা হলে কংগ্রেস আজও সর্বসমক্ষে আগের মতোই বাবাসাহেবের প্রতি ঘৃণার মনোভাব দেখাত। কিন্তু ভোট ব্যাঙ্কের খাতিরে তাঁরা ঘোল পাল্টে নিয়েছেন। বাধ্য হয়ে তাঁর প্রতি লোক দেখানো দরদ দেখাচ্ছেন। আমি মনে করি, কংগ্রেসের ইতিহাসে বাবাসাহেবের নাম নেওয়া তাঁদের সবচেয়ে বড় অসহায়তার মধ্যে একটি।

কিন্তু বাবাসাহেবের কাজ এতই মহান ছিল যে, তাঁর দেশ সেবা এতই কার্যকরি ছিল যে, কেবলমাত্র একটি পরিবারের পূজকরা, কেবল সেই পরিবারকে দেশের ভাগ্যবিধাতা যাঁরা মানতেন, তাঁরা এখন অসহায়ের মতো বাবাসাহেবের নাম জপ করছেন। দলিত, পিছিয়ে পড়া এবং আদিবাসী সম্পরদায়ের মনে ভ্রম সৃষ্টি করার জন্য তাঁরা ঢং করছেন এবং গুজব রটাচ্ছেন। এ মাসের ২ তারিখে এরকম একটি প্রচেষ্টা হতে দেখেছি। তাঁরা সারা দেশে সংরক্ষণ উঠিয়ে দেওয়ার গুজব রটিয়েছিলেন। প্রত্যেক নির্বাচনের আগে তাঁরা এরকমই করে থাকেন। অটলজির নেতৃত্বাধীন সরকারে সময়েও দেখেছি আর এই চার বছর ধরে আমি প্রধানমন্ত্রী এখনও তাঁরা সেই কাজের পুনরাবৃত্তি করছেন। আমি দীর্ঘকাল গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময়েও দেখেছি, কোথাও তখনও সংরক্ষণ তুলে দেওয়ার বিষয়ে কোনও প্রসঙ্গই ওঠেনি। কিন্তু গুজব রটানোর মাধ্যমে মানুষকে ভ্রমিত করার কাজটা তাঁরা ভালোভাবেই করতে পারেন।

বন্ধুগণ, কংগ্রেস কখনই চায়নি এবং এখনও চায় না যে, পিছিয়ে পড়া কিংবা দলিত মানুষেরা উন্নয়নের মুখ্য ধারায় স্থান পাক। কিন্তু আমাদের সরকার বাবাসাহেবের প্রদর্শিত পথে এগিয়ে গিয়ে সবার সঙ্গে সকলের উন্নয়ন মন্ত্র শিরোধার্য করে সমাজে প্রত্যেক বর্গের উন্নয়ন সুনিশ্চিত করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। যে কোনও রাজনৈতিক দল কিংবা ব্যক্তি সততার সঙ্গে যদি বাবাসাহেবের দর্শনের প্রতি আস্থা রাখেন, তাহলে তাঁরা কখনই কংগ্রেসের সঙ্গ দিতে পারে না।

বন্ধুগণ, আমি যদি গরিব ও পিছিয়ে পড়া পরিবারে জন্মগ্রহণ না করতাম, তা হলে এত সহজভাবে বাবাসাহেবকে বুঝতে পারতাম না। আমি দারিদ্র্য দেখেছি। জাতপাতের শিকার হয়ে অপমানিত হয়েছি, এমনকি আজ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরও এজন্য এখনও ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের শিকার হতে হয়। বিগত দু-দিন ধরে যে বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে, তা কোনও সভ্য সমাজের জন্য লজ্জার বিষয়। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামীরা যে দেশের স্বপ্ন দেখে আত্মবলিদান দিয়েছিলেন, এই বিষয় তাঁদের আত্মবলিদানের অপমান। একটি সমাজ রূপে একটি দেশ রূপে আমরা সবাই এর জন্য লজ্জিত। দেশের যে কোনও রাজ্যে যে কোনও অঞ্চলে এরকম ঘটনা আমাদের মানবিক সংবেদনাকে ছিন্ন ভিন্ন করে দেয়। আমি দেশবাসীকে আশ্বস্ত করতে চাই যে, কোনও অপরাধী বাঁচবে না, বিচার হবেই। ঐ শিশুকন্যাদের ওপর যে অত্যাচার হয়েছে, তার বিচার হবেই। আমাদের সমাজের এই অভ্যন্তরীণ অন্যায়কে সমাপ্ত করার কাজ আমাদের সকলকে একসঙ্গে করতে হবে। আপনাদের হয়তো মনে আছে, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর ২০১৪ সালে লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রদত্ত আমার প্রথম ভাষণে বলেছিলাম, আমরা মেয়েদের পুজো করি কিন্তু দেরীতে বাড়িতে এলে জিজ্ঞেস করি কোথায় গিয়েছিলি? কোথায় ছিলিস? কী করছিলিস?

মেয়েদের যাঁরা এসব প্রশ্ন করেন, সেই মা-বাবাদের উদ্দেশে আমি বলেছিলাম, নিজের ছেলেকেও জিজ্ঞেস করুন, কোথায় গিয়েছিলি? কোথায় ছিলিস? কী করছিলিস? এই যে মা-বোনেদের ওপর অত্যাচার হয়, তা তো কোনও না কোনও মা-বাবার ছেলেরাই করে, সেজন্য আমাদের এই সামাজিক দায়িত্ব বর্তায় আমরা সবাই মিলে এই সামাজিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়তে হবে, অপরাধীদের কঠিন থেকে কঠিনতর সাজা দিতে হবে – এটা আমাদের সকলের দায়িত্ব। আর কেন্দ্রীয় সরকার এই দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে বিন্দুমাত্র পিছিয়ে আসবে না। আমাদের পারিবারিক ব্যবস্থায় সামাজিক মূল্যবোধ থেকে শুরু করে বিচার-ব্যবস্থা পর্যন্ত সবকিছুকে এর বিরুদ্ধে শক্তিশালী করে তুলতে হবে। তবেই আমরা বাবাসাহেবের স্বপ্নের ভারত গড়ে তুলতে পারব। নতুন ভারত গড়ে তুলতে পারব।

বাবাসাহেবের আশীর্বাদ এদেশের ১২৫ কোটি মানুষকে নিরন্তর প্রেরণা যুগিয়ে যাবে এই আশা রেখেই আমি আজ আমার বক্তব্য সম্পূর্ণ করছি।

আরেকবার আপনাদের সবাইকে, দেশবাসীকে ডঃ আম্বেদকর ন্যাশনাল মেমোরিয়ালের জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই,

অনেক অনেক ধন্যবাদ।

জয় ভীম।

CG/SB/SB