Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

দিল্লির রাজপথে ‘জাতীয় ঐক্য দিবস’ উপলক্ষে একতার জন্য দৌড় অনুষ্ঠানের প্রারম্ভে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর ভাষণ


উপস্থিত শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিবর্গ,

আজ ৩১ অক্টোবর সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের ১৪০তম জন্মজয়ন্তী। আজকের দিনে আমরা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকেও স্মরণ করি যিনি দেশের জন্য শহীদ হয়েছেন। আজ আমরা সর্দার প্যাটেলের জন্মজয়ন্তী পালন করছি, মহাপুরুষদের জীবনশৈলী সবসময়েই ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নতুন শক্তি প্রদান করে, উজ্জীবিত করে। এই মহান ঐতিহ্য বিস্মৃত করে দেওয়ার অধিকার আমাদের দেশে কারও নেই। যাঁরা দেশের জন্য আত্মবলিদান দিয়েছেন তাঁদের চিন্তাধারার মূল্যাঙ্কন করার দায়িত্ব আমাদের নয়। তাঁদের মহান ত্যাগের কথা স্মরণে রেখে, তাঁদের কাজ থেকে শিক্ষাগ্রহণ করা, তাঁদের অনুসৃত পথে এগিয়ে যাওয়ার সংকল্প গ্রহণই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের দায়িত্ব। ভারতকে ঐক্যবদ্ধ করতে যে মহাপুরুষের অবদান সবচেয়ে বেশি – তিনি হলেন সর্দার প্যাটেল। খবরের কাগজে তাঁকে ‘লৌহপুরুষ’ আখ্যা দিয়ে সংবাদ বা নিবন্ধ লেখা হত বলে তিনি কোনও কাগুজে বাঘ ছিলেন না। নিছক কারও শংসাপত্র পড়ে আমরা তাঁকে ‘লৌহপুরুষ’ হিসেবে জানি না। তিনি তাঁর জীবনের প্রতিটি রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অনেক ভাবনা-চিন্তা করে, অনেক অধ্যাবসায়ের ফলস্বরূপ। তাঁর চারিত্রিক দৃঢ়তাই তাঁকে ভারতের জনমানসে ‘লৌহপুরুষ’ নামে অমর করে রাখে।

বিশ্বে এরকম অনেক কম মানুষ রয়েছেন, যাঁদের একাধিক উপাধি সর্বজন স্বীকৃত। ভারতের মানুষ তাঁকে সর্দার প্যাটেলের নামে জানেন আবার ‘লৌহপুরুষ’ নামেও জানেন। দু’টি নামেই তিনি সমান জনপ্রিয়। এটি বিরল ঘটনা।

ভারতের একতার জন্য সর্দার প্যাটেলের অবদান খাটো করে দেখা সম্ভব নয়। ইংরেজরা স্বপ্ন দেখতেন, তাঁরা ছেড়ে যাওয়ার পর এই দেশ টুকরো টুকরো হয়ে যাবে। সদ্য স্বাধীন হওয়া ভারতের সঙ্গে বিভিন্ন দেশীয় রাজাদের বিবাদ এবং তাঁদের মধ্যে পারস্পরিক বিরোধ যাতে চলতেই থাকে সেরকম বিভাজনকারী সকল ব্যবস্থা তাঁরা করে গিয়েছিলেন। কিন্তু সর্দার প্যাটেল তাঁদের স্বপ্নকে নস্যাৎ করে ভারতকে একসূত্রে বাঁধতে পেরেছিলেন। অনেক কম সময়ের মধ্যেই তিনি তা সম্পন্ন করে কূটনৈতিক দক্ষতার সাক্ষর রাখেন। ভারতীয় সমাজে রাজা-মহারাজাদের যে স্থান ছিল, তাঁদেরকে ভারতীয় গণতন্ত্রে যোগদানের অনুকূলে রাজি করানো কঠিন কাজ ছিল। সর্দার প্যাটেল অত্যন্ত সীমিত সময়ের মধ্যে তা করে দেখিয়েছেন। ভারতের ইতিহাসের দিকে যদি তাকাই তা হলে দেখব সেই মৌর্য সম্রাট চন্দ্রগুপ্তের মন্ত্রী চাণক্য এই দেশকে একসূত্রে বাঁধার ভগীরথ প্রয়াস করেছিলেন। তারপর, এত শতাব্দীকাল পর, তার উত্তর দায়িত্ব পালন করেন এই মহামানব। তাঁর দৌলতেই আজ কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী সবাই সমস্বরে ভারতমাতার জয়গান গাইতে পারি। সেই মায়ের সম্পূর্ণ রূপ বাস্তবে গড়ে তুলতে তাঁর ভূমিকা অগ্রগণ্য। এখন সেই ভারতকে সর্বক্ষেত্রে সর্বশ্রেষ্ঠ করে গড়ে তোলা আমাদের দায়িত্ব। এই সামূহিক কর্তব্য সম্পাদনে ১২৫ কোটি ভারতবাসীর সমবেত সদিচ্ছা চাই। পায়ে পা মিলিয়ে নির্ধারিত লক্ষ্যের দিকে চলতে হবে। সময়ের চাহিদা অনুসারে গতি বাড়াতে হবে। এই প্রেরণা আমরা সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের জীবন থেকে পাই।

মহাত্মা গান্ধীর ভারত প্রত্যাবর্তনের পর ১৯১৫ সালের ডিসেম্বর মাস নাগাদ সর্দার প্যাটেল প্রথম রাজনৈতিক জীবনে প্রবেশ করেন। এই ডিসেম্বর মাসে তাঁর রাজনৈতিক জীবনে পদার্পণের শতবর্ষ শুরু হবে। তাঁর জীবন আমাদের চলার পথে প্রেরণাস্বরূপ। তাঁর কাজের কিছু বিশেষত্ব ছিল। গোড়ার দিকে আমেদাবাদে পৌর সংস্থার মেয়র পদে নির্বাচিত হওয়ার পর বল্লভভাই তাঁর শাসনকালের প্রথম ২২২ দিন ঐ শহরে ব্যাপক পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালান। বিগত শতাব্দীর বিশের দশকের গোড়ায় এতদিন ধরে পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালানো কম কথা নয়। মহাত্মা গান্ধীও এই পরিচ্ছন্নতা অভিযান-এর বড় প্রশংসক ছিলেন। তিনিও পরিচ্ছন্নতা ভালবাসতেন। তিনি বলেন, ‘বল্লভভাই যদি সাফাই অভিযানেও সর্দারের কাজ করেন তা হলে আমার আর পরিচ্ছন্নতা নিয়ে চিন্তা করার কোনও প্রয়োজন নেই’। গান্ধীজির বক্তব্যে যথার্থতা ছিল।

মহারানী ভিক্টোরিয়ার স্মৃতি রক্ষার্থে আমেদাবাদ শহরে একটি ভিক্টোরিয়া স্মারক উদ্যান রয়েছে। সর্দার প্যাটেল মেয়র হয়ে সেই আমলেই ঐ উদ্যানের মাঝে লোকমান্য তিলকের মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন। মহাত্মা গান্ধীকে আমন্ত্রণ জানিয়ে সেই মূর্তির আবরণ উন্মোচন করান। সেদিন গান্ধীজি লিখেছিলেন, ‘সর্দার সাহেব আমেদাবাদ পৌর সংস্থার নেতা নির্বাচিত হওয়ায় একটি নতুন হিম্মত জন্ম নিয়েছে’। সর্দার সাহেব’কে গান্ধীজি কোন্‌ নজরে দেখতেন, তা এই বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

আমরা আজকাল নারী ক্ষমতায়নের কথা বলি। মহিলাদের জন্য সংরক্ষন ব্যবস্থা কে বা কাঁরা শুরু করেছেন, তা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক-বিবাদ শুরু চলতে থাকে। কিন্তু, খুব কম মানুষ-ই জানেন, সেই ইংরেজ আমলে আমেদাবাদ পৌর সংস্থায় সর্দার প্যাটেল মহিলাদের জন্য ৫০ শতাংশ সংরক্ষণের প্রস্তাব রেখেছিলেন। এটা ১৯৩০ সালের আগের কথা বলছি। আজ পরিবারতন্ত্র, ভাই-ভাইপোতন্ত্র ভারতের রাজনীতিকে দূষিত করে তুলেছে। কিন্তু, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল-এর পরিবারের কোনও সদস্যকে আমরা রাজনীতির ধারে কাছে ঘেঁষতে দেখিনি। এই সংযম লক্ষ্যনীয়।

সর্দার প্যাটেলের জীবন ছিল দেশের একতার প্রতি উৎসর্গীকৃত। আমার মতে, আজও দেশকে উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে দিতে হলে কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত ভাষা যাই হোক, পরিধান যাই হোক ধার্মিক কিংবা রাজনৈতিক বিশ্বাস যাই থাকুক না কেন, উন্নয়নের প্রাথমিক শর্ত হল – একতা-শান্তি-সদ্ভাবনা। এই মন্ত্র নিয়েই ১২৫ কোটি ভারতবাসীকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একসঙ্গে চলতে হবে। তা হলে, এক কদম এগিয়ে গেলে ১২৫ কোটি পা একসঙ্গে এগিয়ে যাবে। সেজন্যই এই ঐক্যমন্ত্র এত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের জন্য নিজেদের উৎসর্গ করতে পারে এই দেশের মানুষ। সর্দার সাহেব আমাদের এই জাতীয় ঐক্যের চেতনা দিয়ে গেছেন।

আগামী দিনগুলিতে কেন্দ্র-রাজ্য সহযোগিতার পথ প্রশস্ত করতে আমরা কিছু পরিকল্পনার কথা ভাবছি। আমি একটি ছোট কমিটি গঠন করেছি। সেই কমিটি এই ‘এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত’ নামক পরিকল্পনার প্রাথমিক রূপ নির্মাণ করছে। পরিকল্পনাটি এরকম, প্রতি বছর প্রত্যেক রাজ্য অন্য একটি দূরবর্তী রাজ্যের সঙ্গে যুক্ত হবে। মনে করুন, হরিয়ানা ঠিক করল যে ২০১৬-য় তাঁরা তামিলনাডুর সঙ্গে যুক্ত হবে। সেক্ষেত্রে হরিয়ানার প্রত্যেক স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের সবাইকে ১০০টি করে তামিল বাক্য শেখানো হবে। তাঁদেরকে তামিল গান শেখানো হবে। হরিয়ানায় তামিল ফিল্ম ফেসটিভ্যাল ও নাট্য উৎসব হবে, তামিল খাদ্যোৎসব হবে, হরিয়ানার মানুষ দল বেঁধে তামিলনাড়ু’তে ঘুরতে যাবেন। তামিলনাড়ুর মানুষ-ও একইভাবে হরিয়ানার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবেন। এভাবে এক বছর ধরে তামিলনাড়ু’তে হরিয়ানা আর হরিয়ানায় তামিলনাড়ু উৎসব চলতে থাকলে পরস্পরের ভাষা ও সংস্কৃতিকে জানার একটি সহজ উপায় তৈরি হবে।

২০১৭-য় হরিয়ানা আরেকটি রাজ্যকে বেছে নিল। ২০১৮-য় অন্য আরেকটি রাজ্যকে বেছে নিল। এভাবেই প্রত্যেক রাজ্য প্রতি বছর দূরবর্তী কোনও রাজ্যকে এক বছরের জন্য বেছে নিয়ে তাঁদের ভাষা ও সংস্কৃতিকে জানতে থাকলে প্রত্যেক নাগরিক দেশে বিবিধের মাঝে মহান মিলনের সূত্রটি চিনতে পারবেন, বুঝতে পারবেন।

এ পি জে আব্দুল কালাম সাহেব একটি সুন্দর কথা বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি যখন প্রথমবার রামেশ্বরম থেকে রেলে চড়ে দিল্লি আসছিলাম, লক্ষ্য করছিলাম যে, কয়েক ঘন্টা পর পর-ই নতুন নতুন ভাষা, নতুন খাদ্য পানীয়। আমাদের দেশ এত বৈচিত্র্যময় – তা দেখে অবাক হয়েছিলাম। যে কথা আমি অনেক বই পড়ে জানতে পারিনি তা আমি রামেশ্বরম থেকে দিল্লি রেল যাত্রায় অনুভব করি – এটাই ভারতের বিশেষত্ব। এই বিশেষত্ব নিয়ে গর্ব করা, এই বিশেষত্বকে সু্যোগ হিসেবে গ্রহণ করে বাঁচার চেষ্টা করলে এই বিবিধের মাঝে ঐক্য আমাদের নতুন শক্তি জোগাবে’। সেই নতুন শক্তির প্রতীক সর্দার সাহেবের জন্মজয়ন্তী আমাদের প্রেরণা জোগাবে। সেজন্য আমি অন্তর থেকে সর্দার প্যাটেল’কে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করি, তাঁকে প্রণাম জানাই। আমি বিশ্বাস করি, তাঁর আশীর্বাদ, দেশের জন্য ত্যাগ ও তপস্যা করেছেন যে লক্ষাধিক মহাপুরুষ – তাঁদের সকলের আশীর্বাদ আমাদের দেশের একতা-অখন্ডতা সুনিশ্চিত করে দেশকে উন্নতির নতুন শিখরে পৌঁছে দেওয়ার শক্তি জোগাবে।

এখানে একটি সংকল্প পুনরুচ্চারণ করবো। আপনাদের সবাইকে অনুরোধ, আসুন সবাই মিলে এই সংকল্প পুনরুচ্চারণ করি। সবাইকে নিজের জায়গায় উঠে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানাই। এই সংকল্পের মাধ্যমেই আজ আমরা এই মহাপুরুষদের স্মরণ করবো, তাঁদের প্রণাম জানাবো, অন্তর থেকে ভারতমাতাকে প্রণাম জানাবো। আজ সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের জন্মজয়ন্তীতে বিশেষ করে তাঁকে স্মরণ করবো। আপনারা সবাই আমার সঙ্গে বলুন, ‘আমি সত্য নিষ্ঠার সঙ্গে শপথ নিচ্ছি যে, আমি জাতীয় ঐক্য, অখণ্ডতা এবং নিরাপত্তা বজায় রাখতে নিজেকে সমর্পণ করবো, দেশের প্রতিটি নাগরিকের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করবো। দেশের ঐক্যের স্বার্থে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের দূরদর্শিতা এবং কর্মপদ্ধতি থেকে শিক্ষাগ্রহণ করে সেই শিক্ষাকে বাস্তবায়িত করার শপথ নিচ্ছি। আমি দেশের আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার কাজে আত্মনিয়োগের সংকল্প গ্রহণ করছি।

ভারতমাতার জয়। ভারতমাতার জয়। ভারতমাতার জয়।

অনেক অনেক ধন্যবাদ।

PG/SB/SB/S