প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ দক্ষিণ কোরিয়ায় বসবাসকারী ভারতীয় সম্প্রদায়ের উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন।
সিওলে বসবাসকারী ভারতীয়রা তাঁকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী তাঁদের ধন্যবাদ দেন।
তিনি বলেন, ভারত ও কোরিয়ার সম্পর্ক কেবল বাণিজ্যিক যোগাযোগের ভিত্তিতেই দাঁড়িয়ে নেই, বরং এই সম্পর্ক দু’দেশের মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগের ওপর গড়ে উঠেছে।
ভারত ও কোরিয়ার মধ্যে শতাব্দী প্রাচীন যোগসূত্রের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী অযোধ্যার রানী সূর্যরত্নের প্রসঙ্গ তুলে বলেন, অযোধ্যা থেকে কয়েক হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে তিনি কোরিয়ার রাজার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। দীপাবলি উদযাপন অনুষ্ঠানে কোরিয়ার ফার্স্ট লেডি কিম জুং সুক – এর অযোধ্যা সফরের কথাও শ্রী মোদী স্মরণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, দু’দেশের মধ্যে মৈত্রীর বন্ধনকে বৌদ্ধ ধর্ম আরও মজবুত করেছে।
শ্রী মোদী বলেন, ভারতীয় সম্প্রদায়ের মানুষ কোরিয়ার সার্বিক উন্নয়ন, উদ্ভাবন ও গবেষণায় বিপুল অবদান রাখছেন জেনে তিনি অত্যন্ত আনন্দিত।
প্রধানমন্ত্রী কোরিয়ায় যোগচর্চা ও ভারতীয় উৎসবগুলির জনপ্রিয়তার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন। ভারতীয় রন্ধনশৈলী দ্রুত সেদেশে জনপ্রিয় হচ্ছে বলে শ্রী মোদী জানান। সদ্য সমাপ্ত এশিয়ান গেম্স – এ কোরিয়ার কাবাডি খেলোয়াড়দের অসাধারণ সাফল্যেরও তিনি প্রশংসা করেন।
সারা বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে থাকা ভারতীয় সম্প্রদায়ের মানুষকে ভারতের দূত হিসাবে বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এদের কঠোর পরিশ্রম ও শৃঙ্খলার জন্য সারা বিশ্বে ভারতের মর্যাদা বেড়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, ভারত এ বছর মহাত্মা গান্ধীর সার্ধ শতবার্ষিকী উদযাপন করছে। বাপুর ব্যাপারে সমগ্র বিশ্বে আরও অনেক কিছু জানার রয়েছে। ‘বাপুর বিষয়ে বিশ্বকে অবগত করার এই দায়িত্বও আমাদের’ বলে শ্রী মোদী অভিমত প্রকাশ করেন।
দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ক্রমশ মজবুত হচ্ছে বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উভয় দেশই এই অঞ্চলের শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে একজোট হয়ে কাজ করছে। ভারতীয় সংস্থার পণ্যগুলি ধীরে ধীরে কোরিয়ায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। একইভাবে, কোরিয়ার পণ্য সামগ্রীগুলি ইতিমধ্যে ভারতের পারিবারিক ব্র্যান্ড হয়ে উঠেছে।
প্রধানমন্ত্রী ভারতের আর্থিক অগ্রগতির কথা বিশদে ব্যাখ্যা করে এই ক্ষেত্রে যে সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, সেকথাও উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ভারত শীঘ্রই ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি হয়ে উঠবে।
সহজে ব্যবসা-বাণিজ্য করার অনুকূল পরিবেশ এবং জীবনযাপনের মানোন্নয়নে বিপুল অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে শ্রী মোদী জিএসটি এবং নগদবিহীন অর্থনীতিতে ব্যাপক সংস্কারের কথা তুলে ধরেন।
সমগ্র বিশ্ব ভারতে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণের লক্ষ্যে এক বৈপ্লবিক অভিযান প্রত্যক্ষ করছে বলে মন্তব্য করে শ্রী মোদী নতুন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা, বিমার সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি এবং মুদ্রা যোজনায় ঋণ সহায়তাদানের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসাধারণ সাফল্যের দরুণ ভারতের মর্যাদা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে তিনি দরিদ্র মানুষের স্বার্থে বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা, বিশ্বের সুউচ্চ মূর্তি ‘একতার মূর্তি’ এবং ডিজিটাল ভারত উদ্যোগের কথাও উল্লেখ করেন।
দূষণমুক্ত ও পরিবেশ-বান্ধব শক্তি উৎপাদনের ক্ষেত্রে ভারতের সাফল্যের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক সৌরজোট প্রসঙ্গের অবতারণা করেন।
শ্রী মোদী বলেন, ভারতে এখন এক নতুন উৎসাহ ও উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে। আগামীকাল তিনি ভারতবাসী ও প্রবাসী ভারতীয়দের পক্ষ থেকে সিওল শান্তি পুরস্কার গ্রহণ করবেন বলে জানান।
প্রয়াগরাজে অনুষ্ঠিত কুম্ভমেলার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন, এবারের কুম্ভমেলায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে যে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, সমগ্র বিশ্ব তার প্রশংসা করছে। ভারতে পর্যটনের প্রসারে সেদেশে বসবাসকারী ভারতীয় সম্প্রদায়ের মানুষের সমবেত ও ব্যক্তিগত প্রচেষ্টার ভুয়সী প্রশংসাও করেন শ্রী মোদী।
CG/BD/SB