Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

দক্ষিণ আফ্রিকা সফরকালে সংবাদমাধ্যমের কাছে প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি

দক্ষিণ আফ্রিকা সফরকালে সংবাদমাধ্যমের কাছে প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি

দক্ষিণ আফ্রিকা সফরকালে সংবাদমাধ্যমের কাছে প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি


দক্ষিণ আফ্রিকা সাধারণতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট মাননীয় মিঃ জেকব জুমা,

বন্ধুগণ,

মাননীয় প্রেসিডেন্ট, আপনার সাদর স্বাগত সম্ভাষণ এবং উদার আতিথ্যের জন্য ধন্যবাদ জানাই আপনাকে। এই দেশে যদিও আমার এটি প্রথম সফর, এই রামধনুরআপ্যায়নের দেশে খুবই স্বচ্ছ্বন্দ বোধ করছি আমি এবং আমার প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। এজন্য আমরা গভীরভাবে কৃতজ্ঞ মাননীয় প্রেসিডেন্টের কাছে। পৃথিবীর বুকে মহাত্মা গান্ধী ও নেলসন ম্যান্ডেলার মতো যে দুই মানব মহাত্মা পদচারণা করে গেছেন, তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের এক ব্যক্তিগত সুযোগ এনে দিয়েছে আমার এই সফর।

বন্ধুগণ,

বহু শতাব্দী ধরেই ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার জনসাধারণের মধ্যে গড়ে উঠেছে এক নিবিড় শক্তিশালী সম্পর্ক। উপনিবেশবাদ এবং বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধে এক সাধারণ সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছে দুটি দেশই। দক্ষিণ আফ্রিকাতেই মহাত্মা গান্ধী জানিয়েছিলেন সংগ্রামে অবতীর্ণ হওয়ার প্রথম আহ্বান। এক কথায় তিনি ছিলেন ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা – দুটি দেশেরই।

বন্ধুগণ,

মিলিত মূল্যবোধ এবং দুঃখ-কষ্ট ও সংগ্রাম আমাদের কৌশলগত অংশীদারিত্বের এক বলিষ্ঠ ভিত গড়ে তুলেছে। আমাদের সাফল্যের চিহ্ন ছড়িয়ে রয়েছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। আজ এক আলোচনা-বৈঠকে প্রেসিডেন্ট জুমা এবং আমি আমাদের সহযোগিতার পূর্ণ প্রেক্ষাপটটির পর্যালোচনা করেছি। বিগত দুটি দশকে আমাদের পারস্পরিক সম্পর্ক যে বলিষ্ঠ অগ্রগতি ও বিশেষ সাফল্যের এক ইতিহাস তৈরি করেছে সে বিষয়ে একমত আমরা উভয়েই। গত দশ বছরে আমাদের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধি পেয়েছে ৩০০ শতাংশেরও বেশি। দু’দেশের বাণিজ্যিক স্বার্থ পূরণের লক্ষ্যেদক্ষিণ আফ্রিকায় রয়েছে ভারতীয় শিল্প সংস্থাগুলির এক উজ্জ্বল উপস্থিতি। আফ্রিকায় আমাদের মোট বিনিয়োগের প্রায় এক-চতুর্থাংশ স্থান দখল করে রয়েছে এই দেশটি।

আমাদের বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সম্পর্ককে আরও সুদূরপ্রসারী করে তোলার সম্ভাবনা রয়েছে প্রচুর। বিশেষত,

· খনি ও খনিজ পদার্থ;

· ওষুধ ও রাসায়নিক;

· উচ্চ প্রযুক্তির উৎপাদন; এবং

· তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এই সম্ভাবনা বিশাল।

দু’দেশের শিল্প সম্পর্ক যে শুধুমাত্র আমাদের পারস্পরিক সমাজ ব্যবস্থায় অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সূচনা করেছে তাই নয়, আমাদের অংশীদারিত্বকেও তা এক নতুন রূপ ও আকার দান করতে পারে এবং তাকে এক নতুন উচ্চতায় উন্নীত করতে পারে। আর এইভাবেই তা আমাদের দুটি দেশকেই সাহায্য করতে পারে আঞ্চলিক তথা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এক বলিষ্ঠ ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে। আজ কিছুক্ষণ পরেই প্রেসিডেন্ট এবং আমি মিলিত হব দু’দেশের বাণিজ্যিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আমাদের যুক্ত প্রচেষ্টার ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত করার লক্ষ্যে।

বন্ধুগণ,

আমাদের বিকাশশীল অর্থনীতির দাবি ও চাহিদাই হল মানব মূলধনকে আরও উন্নত করে তোলা। বৃত্তি, পেশা ও প্রযুক্তিগত এবং পেশাদারিত্বমূলক শিক্ষাক্ষেত্রে আমাদের চাহিদা ও ক্ষমতা পরস্পরের পরিপূরক এবং তা থেকে লাভবান হতে পারে দু’দেশেরই জনসাধারণ। দক্ষিণ আফ্রিকার ক্ষুদ্র ও মাঝারি বাণিজ্য ক্ষেত্রের প্রসারে ভারত তারদক্ষতাওঅভিজ্ঞতা বিনিময়ে প্রস্তুত। অর্থনৈতিক সম্পর্কের বাইরে এবং ব্যবসা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সীমানা ছাড়িয়ে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও আমরা একে অপরের সহযোগী হয়ে উঠতে পারি। শিল্পের পর্যায়ে এবং সুরক্ষা ও কৌশলগত প্রয়োজনে আমরা আমাদের সহযোগিতার ব্যাপক প্রসার ঘটাতে পারি। ভারতে এই ক্ষেত্রটি এখন এক পূর্ণ রূপান্তরের লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে। প্রতিরক্ষা বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও তা এনে দিয়েছে অফুরন্ত সুযোগ ও সম্ভাবনা। যৌথ সহযোগিতায় প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদন এবং সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে ক্ষমতার বিকাশ ঘটাতে প্রস্তুত আমাদের শিল্প সংস্থাগুলি। কিন্তু শুধুমাত্র প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত চাহিদা পূরণেই নয়, আঞ্চলিক তথা আন্তর্জাতিক প্রয়োজনে সাড়া দিতেও প্রস্তুত আমাদের এই সংস্থাগুলি।

বন্ধুগণ,

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিষয় এবং বিশ্বে উদ্ভূত বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় পরস্পরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার প্রয়োজনীয়তাকেও স্বীকার করে নিয়েছি আমি এবং প্রেসিডেন্ট জুমা। পরমাণু সরবরাহকারী গোষ্ঠীর সদস্যপদে অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে ভারতের আবেদনকে সমর্থন জানানোর জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্টের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। দক্ষিণ আফ্রিকার মতো বন্ধু রাষ্ট্রগুলির সক্রিয় সমর্থনের ওপর আমরা নির্ভর করতে পারি বলেই আমার বিশ্বাস। জলবায়ু পরিবর্তন এবং বিশ্বে তার প্রভাব সম্পর্কে এক সাধারণ উদ্বেগের অংশীদার আমাদের এই দুটি দেশই। এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানি শক্তির উৎপাদনে বড় ধরনের প্রচেষ্টার প্রয়োজন রয়েছে বলে সহমত প্রকাশ করেছিআমরা। এই লক্ষ্যেই প্যারিসে সিওপি-২১ শীর্ষ বৈঠকে আন্তর্জাতিক সৌর সমঝোতা গড়ে তোলার প্রচেষ্টায় নেতৃত্বদানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল ভারত। আমি বিশ্বাস করি যে সৌর জ্বালানির প্রসার ও উৎপাদনে আমাদের এই প্রচেষ্টা গড়ে তুলতে পারে জ্ঞান, প্রযুক্তি ও আর্থিক সহায়তাদানের এক বিশেষ মঞ্চ। এই সমঝোতায় দক্ষিণ আফ্রিকার অংশীদারিত্বের জন্য আমি বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাই প্রেসিডেন্ট জুমাকে। এই মঞ্চ গড়ে তোলার পেছনে সমর্থন রয়েছে বিশ্বের ১২০টিরও বেশি দেশের। সন্ত্রাসের হুমকি হল আমাদের দু’দেশের সাধারণ উদ্বেগের আরেকটি কারণ। আমাদের দু’দেশের জনসাধারণের সুরক্ষা ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এক বড় ধরনের ঝুঁকি এনেদিয়েছে এই বিষয়টি।সমাজের মূল ভিত্তিটিকেই বিনষ্ট করতে চায় সন্ত্রাসবাদ। সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে তথা সমগ্র বিশ্বে সন্ত্রাসের সক্রিয় মোকাবিলায় আমাদের দুটি দেশেরই সতর্ক থাকা এবং একে অপরের সঙ্গে সহযোগিতা করার বিষয়ে সহমত হয়েছি প্রেসিডেন্ট ও আমি।

বন্ধুগণ,

ভারত মহাসাগরের জলরাশি হল আমাদের এক সাধারণ নৌ-সীমানা। ভারত মহাসাগরের মাধ্যমে সংযুক্ত প্রতিবেশী দেশগুলির সহযোগিতার একটি মূল মঞ্চ হিসেবে গড়ে উঠেছে ভারত মহাসাগরীয় রিম অ্যাসোসিয়েশন। ২০১৭-১৯ – এই সময়কালে এই সংগঠনে দক্ষিণ আফ্রিকার নেতৃত্বকে আমি স্বাগত জানাই। আইবিএসএ (ভারত, ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকা) এবং ব্রিক্‌স-এর মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক কার্যসূচির অগ্রাধিকারগুলিকে রূপ ও আকার দিতে একযোগে কাজ করে চলেছে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা। এ বছরের শেষের দিকে আগামী অক্টোবর মাসে, গোয়ায়ব্রিক্‌স শীর্ষ বৈঠকে প্রেসিডেন্ট জুমাকে স্বাগত জানানোর জন্য আমি অপেক্ষা করে রয়েছি।

বন্ধুগণ,

পরিশেষে আমি বলতে চাই যে,

· গান্ধীজির সত্যাগ্রহ থেকে মাদিবার মহানুভবতা;

· গুজরাটের বন্দর থেকে ডারবানের উপকূল;

· আমাদের সাধারণ মূল্যবোধ ও সংগ্রামের সংযুক্তি;

· আমাদের মহাসাগর ও অর্থনীতির বিশাল সুযোগ ও সম্ভাবনা; এবং

· ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’ ও ‘উবুন্তু’র মধ্য দিয়ে

আমাদের এই সম্পর্ক রূপান্তরিত হয়েছে প্রতিজ্ঞা, সংকল্প, ন্যায় এবং মানব উৎকর্ষ সন্ধানের এক বিশেষ কাহিনীতে যা এক কথায় শুধুমাত্র ব্যতিক্রমীই নয়, পৃথিবীতে যা একান্তই বিরল।

ধন্যবাদ,

আপনাদের সকলকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

PG/SKD/DM/