Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

থাইল্যান্ডে সম্বাদ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য

থাইল্যান্ডে সম্বাদ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য


নয়াদিল্লি, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ 

নমো বুদ্ধায়ঃ!

থাইল্যান্ডে সম্বাদ – এর এই পর্বে আপনাদের সঙ্গে যোগ দিতে পারে আমি গর্বিত। অনেক স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান এবং ভারত, জাপান ও থাইল্যান্ডের ব্যক্তিবর্গ এই কর্মসূচিকে সফল করে তুলতে কাজ করছেন। তাঁদের এই প্রয়াসকে আমি স্বাগত জানাই। সেইসঙ্গে, অংশগ্রহণকারী সকলকে আমার শুভেচ্ছা। 

বন্ধুগণ,

এই উপলক্ষে আমি আমার বন্ধু শিনজো আবের কথা উল্লেখ করতে চাই। ২০১৫’তে তাঁর সঙ্গে আমার আলোচনাকালীন সম্বাদ – এর এই ধারণার সূত্রপাত। এরপর থেকে এই সংবাদ অনুষ্ঠান নানা দেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিতর্ক, আলোচনা এবং আরও গভীর বোঝাপড়ার ক্ষেত্রবিন্যাস ঘটিয়েছে। 

বন্ধুগণ,

ভারত ও থাইল্যান্ড ২ হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে সাংস্কৃতিক সম্পর্কে যুক্ত। রামায়ণ ও রামাকিয়েন আমাদের এই সম্পর্কসূত্রে যুক্ত করেছে। ভগবান বুদ্ধের প্রতি শ্রদ্ধা আমাদের মধ্যে ঐক্যসূত্রকে আরও নিবিড় করেছে। গত বছর আমরা ভগবান বুদ্ধের পবিত্র স্মৃতিচিহ্ন থাইল্যান্ডে পাঠানোর পর লক্ষ লক্ষ ভক্ত শ্রদ্ধা জানাতে ভিড় করেন। আমাদের উভয় রাষ্ট্রের নানা ক্ষেত্রে উজ্জীবিত সম্পর্ক সূত্র রয়েছে। ভারতের ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতি এবং থাইল্যান্ডের ‘অ্যাক্ট ওয়েস্ট’ নীতি একে-অন্যের পরিপূরক, তা পারস্পরিক অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির সমর্থক। আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের আরেকটি সফল পর্ব হ’ল – এই সম্মেলন। 

বন্ধুগণ,

সম্বাদ – এর ভাবধারা এশীয় শতকের কথা বলে। জনসাধারণ এর ব্যবহারে, এশিয়ার আর্থিক উত্থানের  উল্লেখ করেন। যদিও এই সম্মেলন যা তুলে ধরতে চায় তা হলো, এশীয় শতাব্দী কেবল আর্থিক মূল্যে সীমিত নয়, তা সামাজিক মূল্যেরও দ্যোতক। ভগবান বুদ্ধের শিক্ষা শান্তি ও অগ্রগতির পর্ব গড়ে তুলতে বিশ্বকে পথ দেখাতে পারে। তাঁর প্রজ্ঞার মধ্যে এমন শক্তি নিহিত, যা মানব-কেন্দ্রিক পথের দিশাদর্শী।

বন্ধুগণ,

সম্বাদ – এর একটি অন্যতম মূল ভাবধারা হ’ল বিভেদকে এড়িয়ে চলা। কেবল আমার পথই সঠিক, অন্যেরটা নয় – অনেক সময় এই বিশ্বাস থেকেই বিভেদের সূত্রপাত। ভগবান বুদ্ধ এই ক্ষেত্রে এক গভীর অন্তর্দিশা দিয়েছেন।
इमेसु किर सज्जन्ति, एके समणब्राह्मणा |
विग्गय्ह नं विवदन्ति,
जना एकंगदस्सिनो ||

এর অর্থ হ’ল – কিছু মানুষ সবসময়েই নিজস্ব যুক্তি-তর্ক ও বোধ-বুদ্ধিমুখী হয়ে থাকেন। এতে তাঁদের সত্যের একটি মাত্র দিকের দর্শন পান। কিন্তু, একই জিনিসের নানা প্রেক্ষাপট রয়েছে। এই কারণেই ঋগ্বেদে বলে – एकं सद्विप्रा बहु॒धा वदन्ति|  

সত্যকে নানাভাবে প্রত্যক্ষ করা সম্ভব – এই কথা স্বীকার করে নিলে বিভেদের পথ এড়ানো যায়।

বন্ধুগণ,

বিভেদের আরেকটি দিক হ’ল – অন্যকে নিজের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ভাবা। এই অনৈক্যই বিভাজনের সৃষ্টি করে এবং তা থেকেই বিভেদের সূত্রপাত হয়। এই পথকে এড়াতে ধম্মপদে একটি স্তোত্রে বলা হয় –
सब्बे तसन्ति दण्डस्स, सब्बे भायन्ति मच्चुनो |
अत्तानं उपमं कत्वा, न हनेय्य न घातये ||

এর অর্থ হ’ল – প্রত্যেকেই কষ্ট ও মৃত্যুকে ভয় পান। এক্ষেত্রে নিজেদের অনুভবকে অন্যের সঙ্গে মিলিয়ে নিতে পারলে আমরা নিশ্চিতভাবেই হিংসাজনিত পথকে পরিহার করতে পারি। এই শব্দগুচ্ছকে অনুসরণ করলে বিভেদের পথ পরিহার করা যায়।

বন্ধুগণ,

বিশ্বের নানা বিরোধ সমতার পথ ছেড়ে চরমপন্থা গ্রহণের ফলে সৃষ্টি। এই চরমপন্থাজনীত বিভেদের পথ পরিবেশগত সঙ্কট, এবং মানসিক অস্থিরতা থেকে শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি করে। এই সমস্ত চ্যালেঞ্জের সমাধানসূত্র লুকিয়ে রয়েছে ভগবান বুদ্ধের শিক্ষায়। তিনি চরমপন্থা ছেড়ে আমাদের মধ্যপন্থা অনুসরণ করতে বলেছিলেন। এই মধ্যপন্থার সূত্র আজও প্রাসঙ্গিক এবং বৈশ্বিক নানা চ্যালেঞ্জের সমধানসূত্রের পথ দেখাচ্ছে। 

বন্ধুগণ,

এই বিভেদ এখন মানুষকে ছেড়ে রাষ্ট্রের মানবতাকে ছেড়ে প্রকৃতির সঙ্গে বিরোধে ব্যাপৃত হয়েছে। এরফলে, পরিবেশগত সঙ্কট, যা পৃথ্বীর অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। এই চ্যালেঞ্জের উত্তর লুকিয়ে রয়েছে এশিয়ার প্রথাগত বিশ্বাস ও ভাবধারার মধ্যে, যা ধম্মের গভীর ঐক্যসূত্রে নিবিড়। হিন্দুধর্ম, বৌদ্ধধর্ম, শিন্টোধর্ম এবং অন্যান্য এশীয় ধারা আমাদেরকে প্রকৃতির সঙ্গে ঐক্যের সহাবস্থানের শিক্ষা দেয়। আমরা নিজেদের প্রকৃতি থেকে আলাদা করে দেখি না, বরং নিজেদেরকে প্রকৃতির অঙ্গ বলে মনে করি। মহাত্মা গান্ধী নির্দেশিত বিশ্বাসের পথকেই আমরা মেনে চলি। প্রাকৃতিক সম্পদকে আজ অগ্রগতির মাধ্যম হিসেবে যখন ব্যবহার করা হচ্ছে, তখন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতার দিকটির ব্যাপারেও আমাদের সচেতন হতে হবে। এই বিশ্বাসবোধের থেকে আমরা মনে করি, সম্পদ লোভ চরিতার্থ করতে নয়, প্রয়োজন মেটাতে। 

বন্ধুগণ,

আমার জন্ম পশ্চিম ভারতের এক ছোট শহর ভাদনগরে। একসময় এটি বুদ্ধের শিক্ষার এক মহান পীঠ ছিল। ভারতের সংসদে আমি বারাণসীর সাংসদ। এর সঙ্গে যুক্ত সারনাথ। সারনাথই হ’ল, সেই পবিত্র স্থান, যেখানে বুদ্ধ তাঁর প্রথম বাণী শোনান। এ এক অসাধারণ সংযোগ, কারণ এইসব ক্ষেত্রগুলি ভগবান বুদ্ধের সঙ্গে জড়িত এবং আমার যাত্রাপথের বিন্যাস ঘটিয়েছে। 

বন্ধুগণ,

ভগবান বুদ্ধের প্রতি আমাদের ভক্তি আমাদের সরকারি নীতিতেও প্রতিফলিত। আমরা পর্যটন পরিকাঠামো গড়ে তুলেছি। সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ বৌদ্ধিক এলাকাগুলিকে যুক্ত করা হয়েছে বৌদ্ধ সার্কিটের হিসেবে। বুদ্ধ পূর্ণিমা এক্সপ্রেস একটি বিশেষ ট্রেন, যা এই সার্কিটে যাতায়াতে  চালু করা হয়েছে। কুশীনগর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দের উদ্বোধন এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ, যা আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ তীর্থযাত্রীদের নানা উপকারে লাগে। সম্প্রতি আমরা বুদ্ধগয়ার পরিকাঠামোর উন্নয়ন ঘটিয়ে, তাকে ঘিরে নানা উন্নয়নমূলক কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। আমি বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে তীর্থযাত্রী, পণ্ডিত এবং সন্ন্যাসীদের সবিনয়ে আবেদন জানাচ্ছি যে, ভগবান বুদ্ধের স্থান ভারত সফরের জন্য। 

বন্ধুগণ,

নালন্দা মহাবিহার ইতিহাসে এক অন্যতম বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয়। শত শত বছর আগে ঘাতকরা একে ধ্বংস করেছিল। কিন্তু, আমরা এই শিক্ষা কেন্দ্রকে পরম নিষ্ঠার সঙ্গে আবার গড়ে তুলেছি। ভগবান বুদ্ধের আশীর্বাদে আমি স্থির নিশ্চিত যে, নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় তার অতীত গৌরব আবার ফিরে পাবে। এক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হিসেবে পালি ভাষা প্রসারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ভগবান বুদ্ধ এই ভাষাকে তাঁর শিক্ষাদানের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতেন। আমাদের সরকার পালিকে ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা দিয়ে সে সংক্রান্ত সাহিত্যের সংরক্ষণে উদ্যোগ নিয়েছে। এছাড়াও, জ্ঞান বার্তায়ম মিশন – এর সূচনা করা হয়েছে প্রাচীন পুঁথিকে চিহ্নিত করে ক্যাটালগ করার জন্য। এরফলে, এর ডিজিটাইজেশন ও নথিকরণের মাধ্যমে বৌদ্ধ পণ্ডিতরা উপকৃত হবেন।

বন্ধুগণ,

বিগত দশক ধরে বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে ভগবান বুদ্ধের শিক্ষা প্রসারে আমরা সমন্বয় গড়ে তুলেছি। সম্প্রতি প্রথম এশীয় বৌদ্ধ শিখর সম্মেলন ভারতে অনুষ্ঠিত হয়। এর আলোচ্য বিষয় ছিল – এশিয়াকে শক্তিশালী করতে বৌদ্ধ ধর্মের ভূমিকা। অতীতে ভারত প্রথম বিশ্ব বৌদ্ধ শিখর সম্মেলনের আয়োজন হয়েছে। আমার সৌভাগ্য হয়েছে যে, নেপালের লুম্বিনিতে বৌদ্ধ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার – এর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের। ভারত লুম্বিনি সংগ্রহালয় নির্মাণেও সহায়তা করেছে। এছাড়াও, ভগবান বুদ্ধের নির্দেশিত পথ ১০৮টি ভলিউমের মোঙ্গলিয়ান কাঞ্জুর ভারতে পুনর্মুদ্রণ হয়েছে এবং মোঙ্গলিয়ার নানা মঠে সেগুলি বিতরণ করা হয়েছে। বিভিন্ন শতকের স্মৃতিসৌধ সংরক্ষণে আমাদের উদ্যোগ ভগবান বুদ্ধের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা ও নিষ্ঠাকে আরও সুদৃঢ় করেছে।

বন্ধুগণ,

এই পর্ব অত্যন্ত আকর্ষণীয়। এর কারণ, এবার ধর্মীয় গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন হচ্ছে। এতে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ যুক্ত হবেন। আমার স্থির বিশ্বাস, এই মঞ্চ থেকে এক মূল্যবান অন্তর্দৃষ্টি ফুটে উঠবে, যা আরও সমন্বিত বিশ্ব গড়ে তোলার পথ দেখাবে। আরও একবার এই সম্মেলন আয়োজনের জন্য থাইল্যান্ডের সরকার ও এখানকার মানুষকে আমি আমার কৃতজ্ঞতা জানাই। মহান লক্ষ্যসাধনের পথকে প্রশস্ত করতে এখানে সমবেত অংশগ্রহণকারীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা। ধম্মের আলোকবর্তিকা আমাদের চিরদিন পথ-প্রদর্শক হোক এবং তা শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির পথে আমাদের এগিয়ে নিয়ে যাক।

SC/AB/SB