Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

থাইল্যান্ডে সম্বাদ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর বক্তব্য

থাইল্যান্ডে সম্বাদ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর বক্তব্য


নতুন দিল্লি, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত সম্বাদ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ ভিডিও কনফারেন্সিং-এর মাধ্যমে বক্তব্য রেখেছেন। এই অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য ভারত, জাপান ও থাইল্যান্ডের অগ্রণী প্রতিষ্ঠান ও বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতে যোগ দিতে পেরে তিনি নিজেকে সম্মানিত মনে করছেন। অংশগ্রহণকারীদের তিনি শুভেচ্ছা জানান। 

তাঁর বন্ধু শিনজো আবে-কে স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৫ সালে তাঁদের কথোপকথনের সময়েই সম্বাদের ধারণার জন্ম হয়েছিল। তার পর থেকে বিভিন্ন দেশে সম্বাদের আয়োজন করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে বিতর্ক, আলোচনা এবং গভীর বোঝাপড়া গড়ে উঠেছে। 

থাইল্যান্ডকে সমৃদ্ধ সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের দেশ হিসেবে আখ্যা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবারের সম্বাদের আয়োজন থাইল্যান্ডে হওয়ায় তিনি আনন্দিত। থাইল্যান্ড এশিয়ার অভিন্ন দার্শনিক ও আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যের এক চমৎকার নিদর্শন বলে শ্রী মোদী মন্তব্য করেন। 

ভারত ও থাইল্যান্ডের মধ্যে ২ হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রসারিত গভীর সাংস্কৃতিক যোগসূত্রের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রামায়ন ও রামাকিয়েন এবং ভগবান বুদ্ধের প্রতি সুগভীর শ্রদ্ধা দুটি দেশকে সংযুক্ত করেছে। গত বছর ভারত যখন ভগবান বুদ্ধের পবিত্র দেহাবশেষ থাইল্যান্ডে পাঠিয়েছিল তখন লক্ষ লক্ষ ভক্ত তাঁদের শ্রদ্ধা নিবেদন করেছিলেন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারত ও থাইল্যান্ডের মধ্যে প্রাণবন্ত অংশীদারিত্বের উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভারতের ‘পুবে সক্রিয়’ নীতি এবং থাইল্যান্ডের ‘পশ্চিমে সক্রিয়’ নীতি একে অপরের পরিপূরক, পারস্পরিক অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির সহায়ক। এই সম্মেলন দুদেশের বন্ধুত্বের মধ্যে আরও এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। 

সম্বাদের মূল ভাবনা এশিয়ার শতক বিষয়ে বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষজন প্রায়শই এশিয়ার অর্থনৈতিক উত্থান নিয়ে আলোচনা করেন। এই সম্মেলন দেখিয়ে দেয় যে, এশিয়ার শতক বলতে শুধু অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকেই বোঝায় না, সামাজিক মূল্যবোধকেও বোঝায়। ভগবান বুদ্ধের শিক্ষা এক শান্তিপূর্ণ প্রগতিশীল বিশ্ব নির্মাণের দিশা দেখাতে পারে, তাঁর জ্ঞান মানবকেন্দ্রিক ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে চলার ক্ষমতা দেয়। 

সম্বাদের অন্যতম মূল ভাবনা দ্বন্দ্ব এড়ানোর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একমাত্র একটি পথই সঠিক এবং অন্যগুলি ভুল – এই ভাবনা থেকে প্রায়শই দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। এই প্রসঙ্গে ভগবান বুদ্ধের অন্তর্দৃষ্টির উল্লেখ করে তিনি বলেন, কিছু লোক একটি মাত্র দিককেই সত্য বলে ভেবে নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি আঁকড়ে থেকে তর্ক করে। অথচ একই বিষয় নিয়ে নানা ধরণের দৃষ্টিভঙ্গি থাকতেই পারে। ঋকবেদ উদ্ধৃত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সত্যকে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই দেখা যায়, তা যদি আমরা স্বীকার করে নিই, তাহলেই আমরা দ্বন্দ্ব এড়াতে পারি। 

শ্রী মোদী দ্বন্দ্বের আরেকটি কারণের উল্লেখ করে বলেন, অন্যদের নিজেদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ভাবা দ্বন্দ্বের জন্ম দেয়। পার্থক্য থেকে দূরত্বের সৃষ্টি হয় এবং দূরত্ব বিভেদে পরিণত হয়। এই প্রসঙ্গে তিনি ধম্মপদ থেকে একটি শ্লোক উদ্ধৃত করে বলেন, সকলেই যন্ত্রণা ও দুঃখকে ভয় পায়। আমরা যখন অন্যদেরও নিজেদের মতোই ভাবতে পারবো, তখনই হিংসার অবসান হবে। এই আদর্শ অনুসরণ করলে দ্বন্দ্ব এড়ানো সম্ভব। 

শ্রী মোদী বলেন, ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির বদলে চরমপন্থী অবস্থান নেওয়ার জন্যই বিশ্বের বেশিরভাগ সমস্যার জন্ম হয়। চরমপন্থী দৃষ্টিভঙ্গি দ্বন্দ্ব, পরিবেশগত সঙ্কট এমনকি মানসিক চাপজনিত স্বাস্থ্য সমস্যারও কারণ। এইসব সমস্যার সমাধান রয়েছে ভগবান বুদ্ধের শিক্ষায়। তিনি আমাদের চরম পথ পরিহার করে মধ্য পথ অনুসরণ করতে বলেছিলেন। মধ্যপন্থার এই নীতি আজও প্রাসঙ্গিক, বিশ্বের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে দিশা নির্দেশক।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের দিনে দ্বন্দ্বের পরিধি মানুষ এবং দেশকালের সীমা ছাপিয়ে পরিবেশের সঙ্গে মানুষের দ্বন্দ্বে পরিণত হয়েছে। এর ফলে যে পরিবেশগত সঙ্কটের সৃষ্টি হচ্ছে, তাতে এই গ্রহের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে উঠছে। এই সমস্যার সমাধান রয়েছে এশিয়ার অভিন্ন ঐতিহ্যের মধ্যে, ধম্মের নীতিসমূহের মধ্যে। হিন্দু ধর্ম, বৌদ্ধ ধর্ম, শিন্টোবাদ এবং অন্য এশীয় ঐতিহ্যগুলি আমাদের প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাঁচতে শেখায়। আমরা নিজেদের প্রকৃতির থেকে বিচ্ছিন্ন না ভেবে প্রকৃতির অঙ্গীভূত বলে মনে করি। এই প্রসঙ্গে মহাত্মা গান্ধীর বাণী উদ্ধৃত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আজ যখন প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার করছি, তখন এক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রতি আমাদের দায়িত্বের কথাও মনে রাখতে হবে। লোভের বশবর্তী হয়ে নয়, সম্পদের ব্যবহার করতে হবে বিকাশের জন্য। 

শ্রী মোদী বলেন, তাঁর জন্মস্থান পশ্চিম ভারতের এক ছোট্ট শহর ভাদনগর একসময়ে বৌদ্ধ শিক্ষার কেন্দ্র ছিল। সংসদে তিনি বারাণসীর প্রতিনিধিত্ব করেন, এই কেন্দ্রের মধ্যেই রয়েছে সারনাথ, যেখানে ভগবান বুদ্ধ তাঁর প্রথম বক্তৃতা দিয়েছিলেন। তাঁর জীবনে ভগবান বুদ্ধের আশীর্বাদধন্য এই দুই স্থানের সম্মেলনকে তিনি এক চমৎকার কাকতালীয় ঘটনা হিসেবে বর্ণনা করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত সরকারের নীতিসমূহের মধ্য দিয়ে ভগবান বুদ্ধের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রতিফলিত হয়। গুরুত্বপূর্ণ বৌদ্ধস্থানগুলিকে নিয়ে পর্যটন পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। বৌদ্ধ সার্কিটের মধ্যে ভ্রমণের জন্য চালু করা হয়েছে বুদ্ধপূর্ণিমা এক্সপ্রেস। কুশিনগর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর চালু হওয়ায় ভারতে আসা বিদেশী বৌদ্ধ ভক্তদের বিশেষ সুবিধা হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। বৌধ গয়ার উন্নয়নে বিভিন্ন উদ্যোগের ঘোষণা করে তিনি সারা বিশ্বের ভক্ত, গবেষক ও ভিক্ষুদের ভগবান বুদ্ধের মাটি পরিদর্শনের আমন্ত্রণ জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নালন্দা মহাবিহার এক সময়ে বিশ্বের প্রথমসারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলির একটি ছিল। কয়েক শতাব্দী আগে দ্বন্দ্বের কারণে তা ধ্বংস হয়ে যায়। ভারত আজ নতুন করে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলেছে। এই বিশ্ববিদ্যালয় ভগবান বুদ্ধের আশীর্বাদে তাঁর পুরনো গরিমা ফিরে পাবে বলে তিনি আশাপ্রকাশ করেন। যে ভাষায় ভগবান বুদ্ধ তাঁর বাণী দিয়েছিলেন, সেই পালি ভাষার উন্নয়নে একগুচ্ছ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর সমৃদ্ধ ঐতিহ্য সংরক্ষণের লক্ষ্যে পালিকে ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। বৌদ্ধ গবেষকদের সুবিধায় সুপ্রাচীন পান্ডুলিপির সংরক্ষণ এবং তার ডিজিটাইজেশনের জন্য জ্ঞান ভারতম মিশন চালু করা হয়েছে। 

শ্রী মোদী বলেন, গত এক দশকে ভগবান বুদ্ধের শিক্ষার প্রসারে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে একযোগে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি ভারতে প্রথম এশীয় বৌদ্ধ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এর মূল ভাবনা ছিল ‘এশিয়াকে শক্তিশালী করে তুলতে’ বুদ্ধ ধম্ম-র ভূমিকা। এর আগে ভারত প্রথম বিশ্ববৌদ্ধ সম্মেলনেরও আয়োজন করেছে। নেপালের লুম্বিনিতে ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর বুদ্ধিস্ট কালচার অ্যান্ড হেরিটেজের শিলান্যাস করা হয়েছে। মঙ্গোলিয়ার বৌদ্ধ মঠগুলিতে ভগবান বুদ্ধের মঙ্গোলিয়ান কাঞ্জুরের ‘সংক্ষিপ্ত আদেশ’-এর পুনর্মুদ্রণ করে বিতরণ করা হয়েছে। বিভিন্ন দেশে ভগবান বুদ্ধের স্মৃতিজড়িত সৌধ সংরক্ষণে ভারত সাহায্য করছে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবারের সম্বাদে এক ধর্মীয় গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে বিভিন্ন ধর্মমতের নেতারা মুখোমুখি আলোচনায় বসবেন। এই মঞ্চ থেকে যে মূল্যবান অন্তর্দৃষ্টি উঠে আসবে তা সমগ্র বিশ্বের সমন্বয়ে সহায়ক হবে। এই সম্মেলন আয়োজনের জন্য শ্রী মোদী থাইল্যান্ড সরকার ও সেদেশের মানুষের প্রতি তাঁর কৃতজ্ঞতা ব্যক্ত করেন। অংশগ্রহণকারীদের শুভেচ্ছা জানান তিনি। ধম্মের আলো আমাদের শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির এক নতুন যুগে প্রবেশের দিশা নির্দেশক হবে বলে আশাপ্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।

SC/SD/SKD