Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর : সংবাদমাধ্যমের কাছে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর বিবৃতি (১৭ জুন, ২০১৬)

থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর : সংবাদমাধ্যমের কাছে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর বিবৃতি

(১৭ জুন, ২০১৬)

থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর : সংবাদমাধ্যমের কাছে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর বিবৃতি

(১৭ জুন, ২০১৬)


মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জেনারেল প্রায়ুৎ চান-ও-চা, ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ,

ভারতে আপনাদের স্বাগত জানাতে পেরে আমরা আনন্দিত।

দু’দেশের শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক বিনিময় কর্মসূচিতে আপনাদের এই সফর আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

আপনারা এসেছেন এমন একটি দেশ থেকে যা আমাদের কাছে খুবই পরিচিত।

কিংবদন্তী পুরুষ রাম থেকে জ্ঞানী বুদ্ধের সময়কালে আমাদের দুটি দেশের মধ্যেই গড়ে উঠেছে এক মিলিত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। দু’দেশের জনসাধারণের মধ্যে ঐতিহাসিক সম্পর্ক আমাদের অংশীদারিত্বের ভিতকে আরও মজবুত করে তুলেছে।

থাইল্যান্ড হল আমাদের এক বিশ্বস্ত এবং সম্মানিত মিত্র রাষ্ট্র। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এই দেশ হল আমাদের ঘনিষ্ঠতম সহযোগী।

বন্ধুগণ,

আজ প্রধানমন্ত্রী এবং আমি দু’জনেই পূর্ণাঙ্গ পর্যালোচনা করলাম আমাদের দ্বিপাক্ষিক কর্মসূচিগুলির –

সংস্কৃতি থেকে বাণিজ্য;

দু’দেশের জনগণের মধ্যে ঘনিষ্ঠতর যোগাযোগ থেকে দৃঢ় সংযোগ ও যোগাযোগ, এবং

সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলা থেকে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা।

আমরা উভয়েই অবগত যে সন্ত্রাসবাদের দ্রুত প্রসার এবং চরমপন্থী মতবাদ আমাদের দু’দেশের সমাজকেই এক সাধারণ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি এনে দিয়েছে।

নিরাপত্তা ক্ষেত্রে আমাদের ঘনিষ্ঠ অংশীদারিত্ব যে এই সমস্ত হুমকির ঘটনা থেকে আমাদের দু’দেশের জনগণকে সুরক্ষিত রাখতে পারবে সে কথাও আমরা স্বীকার করেছি।

এই চ্যালেঞ্জগুলির মোকাবিলার লক্ষ্যে আমরা যে কর্মসূচি স্থির করেছি, তাতে সাহায্য ও সহযোগিতার জন্য ভারত বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ থাইল্যান্ডের কাছে।

সন্ত্রাসবাদের বাইরেও সাইবার নিরাপত্তা, মাদকচালান রোধ, অর্থনৈতিক অপরাধ সংক্রান্ত ঘটনার মোকাবিলা এবং মানবপাচার রোধে আমাদের নিরাপত্তা সহযোগিতাকে আরও জোরদার করে তুলতে সম্মত হয়েছি আমরা।

বন্ধুগণ,

আমাদের দু’দেশের স্থল সীমান্ত কিন্তু একে অপরের থেকে খুব বেশি দূরে নয়।

সমুদ্রপথেও আমরা আবার পরস্পরের প্রতিবেশী।

তাই, আমি এবং প্রধানমন্ত্রী ঘনিষ্ঠ প্রতিরক্ষা ও নৌ-সহযোগিতার প্রসারেও সহমত প্রকাশ করেছি।

আমাদের এই অংশীদারিত্ব দুটি দেশের স্বার্থে; আমাদের এই সহযোগিতা দু’দেশের সাধারণ লক্ষ্যপূরণে।

আমরা গড়ে তুলতে চাই এমন এক অংশীদারিত্ব যার মূলে থাকবে,

বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ও অভিজ্ঞতা বিনিময়;

কর্মীদের আরও বেশি করে বিনিময় সফরসূচি ও কাজকর্ম;

সমুদ্রপথে জলদস্যুতা রোধে পারস্পরিক সহযোগিতা;

জোরদার নৌ-প্রহরা, এবং

প্রতিরক্ষা সম্পর্কে গবেষণা, উন্নয়ন ও সাজসরঞ্জাম উৎপাদনের ক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠতর সহযোগিতা।

বন্ধুগণ,

বর্তমান বিশ্বে সবক’টি রাষ্ট্রই একে অপরের ওপর নির্ভরশীল, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রবাহ তাদের কাছে এক গুরুত্বপূর্ণ জীবনরেখা।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং আমি দু’জনেই মনে করি যে আমাদের এই দুটি দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ককে আরও বৈচিত্র্যময় করে তুলতে পারলে তা শুধু আমাদের দু’দেশের অর্থনীতিকেই সমৃদ্ধ করবে না, তা থেকে লাভবান হবে আঞ্চলিক অর্থনীতিও।

এই পরিস্থিতিতে আজ এখানে কিছুক্ষণ বাদে ভারত-থাইল্যান্ড যৌথ বাণিজ্যিক ফোরামের যে প্রথম বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হতে চলেছে, তাকে আমরা স্বাগত জানিয়েছি। তাকে আমরা উৎসাহিত করেছি। আমরা উৎসাহদান করেছি বাণিজ্যিক ক্ষেত্রের অংশীদারদের যাতে নতুন নতুন বাণিজ্যিক সুযোগগুলিকে দু’দেশের স্বার্থেই ব্যবহারের জন্য তাঁরা এগিয়ে আসেন।

ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি নির্মাণ, উৎপাদন এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রচুর পথ ও উপায় রয়েছে আমাদের এই দুটি দেশের সামনে।

পর্যটন পরিকাঠামো সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে থাইল্যান্ডের শক্তির সঙ্গে ভারতের অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রগুলি যুক্ত হওয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনা আমরা লক্ষ্য করেছি।

তথ্যপ্রযুক্তি, ওষুধ উৎপাদন, গাড়ির যন্ত্রাংশ নির্মাণ এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতি উৎপাদনের ক্ষেত্রেও আমাদের সহযোগিতার সম্ভাবনা যথেষ্ট প্রতিশ্রুতিময়।

আমাদের এই দুটি দেশের মধ্যে সুসংহত অর্থনৈতিক ও সহযোগিতা সম্পর্কিত চুক্তি সম্পাদনের কাজ ইতিপূর্বেই সম্পূর্ণ হয়েছে।

বন্ধুগণ,

আমাদের দু’দেশের অর্থনীতিতে পণ্য, পরিষেবা, মূলধন এবং মানবসম্পদের যোগান যাতে অব্যাহত রাখা যায় সেই লক্ষ্যে জল, স্থল এবং আকাশপথে যোগাযোগের একটি ভালো নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কেও সম্পূর্ণভাবে অবহিত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং আমি।

এই লক্ষ্যে ভারত-মায়নামার-থাইল্যান্ড – এই ত্রিদেশীয় মহাসড়ক নির্মাণের কাজ অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সম্পূর্ণ করার ওপর আমরা জোর দিয়েছি; আমরা গুরুত্ব আরোপ করেছি এই তিন দেশের মধ্যে যান চলাচল সম্পর্কিত চুক্তি স্বাক্ষরের ওপরও।

ভারতের বিকাশ ও উন্নয়নের লক্ষ্যে সংযোগ ও যোগাযোগ আরেকটি অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র।

আমাদের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলি থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় যাতায়াত ব্যবস্থাকে উন্নত করে তুললে উপকৃত হবেন দু’দেশের মানুষই।

বন্ধুগণ,

বলিষ্ঠ যোগাযোগের প্রয়োজন শুধুমাত্র দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক প্রসারের স্বার্থেই নয়। এর মাধ্যমে দু’দেশের জনসাধারণ পরস্পরের আরও কাছে আসার সুযোগ পাবেন এবং এই ব্যবস্থায় প্রসার লাভ করবে বিজ্ঞান, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও পর্যটন সংক্রান্ত সহযোগিতাও।

আগামী বছর আমাদের দুটি দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৭০ বছর পূর্তি উপলক্ষে থাইল্যান্ডে আমরা আয়োজন করব ভারতোৎসব-এর এবং থাইল্যান্ড উৎসব আয়োজিত হবে ভারতে।

বর্তমান বছরটিতে ভারতীয় সংবিধানের স্থপতি ডঃ বি আর আম্বেদকরের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী পালিত হচ্ছে আমাদের দেশে।

আমি একথা ঘোষণা করতে পেরে খুবই আনন্দিত যে ভারতীয় সংবিধান শীঘ্রই থাই ভাষায় অনূদিত হতে চলেছে।

আমি আরও আনন্দিত এই কারণে যে থাইল্যান্ড থেকে আরও বেশি সংখ্যক পর্যটককে আমরা স্বাগত জানাতে পারব ভারতে। ভারতে বৌদ্ধ স্থানগুলি যাতে তাঁরা ভালোভাবে পরিদর্শন করতে পারেন সে ব্যবস্থাও করব আমরা। এই লক্ষ্যে থাইল্যান্ডের নাগরিকদের জন্য পর্যটন ভিসা সংক্রান্ত সুযোগ-সুবিধাকে আমরা অতি শীঘ্রই দ্বিগুণ করতে চলেছি।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,

ভারতের জন্য থাইল্যান্ডের রাজ পরিবারের যে উষ্ণ আন্তরিকতা রয়েছে আমরা বরাবরই তার গভীর প্রশংসা করে এসেছি।

মাননীয়া যুবরানী মহা চক্রী সিরিনধর্ন ভারত সফরকরেন নিয়মিতভাবে। তাঁকে আমরা এই দেশে বিশেষভাবে স্বাগত জানাই।

এ বছর আবার কোন এক সময় তাঁকে ভারতে স্বাগত জানানোর জন্য আমরা প্রস্তুত।

মাননীয় যুবরাজ ভাজিরালংকর্ন-কে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এ দেশে স্বাগত জানাতে পারব বলে আমরা আশাবাদী।

পরিশেষে, থাইল্যান্ডের ‘পশ্চিমে তাকাও’ এবং ভারতের ‘পূবে তাকাও’ নীতি দুটির সমন্বয়ে আমাদের পারস্পরিক অংশীদারিত্বের পথ আরও উজ্জ্বল আলোয় আলোকিত হয়ে উঠবে এই আশা ও অপেক্ষায় রইলাম আমরা।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আরও একবার আপনাকে এবং আপনার প্রতিনিধিদের স্বাগত জানাই ভারতে।

ধন্যবাদ।

PG/SKD/DM/