নয়াদিল্লি, ১৪ নভেম্বর, ২০২০
বন্ধুগণ,
জয়সলমীর এয়ারবেসে আমার অনেকবার আসার সুযোগ হয়েছে কিন্তু কর্মসূচির শৃঙ্খলা এমনই ছিল যে কখনই দু’দণ্ড দাঁড়িয়ে কারোর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়নি। কিন্তু আজ আমার সৌভাগ্য যে আজ শুধু আপনাদের সবার মাঝে আসার এবং দীপাবলি উৎসব পালনের সুযোগ হয়েছে। আপনাকে এবং আপনার পরিবারের প্রত্যেক সদস্যকে দীপাবলির অনেক অনেক শুভকামনা।
বন্ধুগণ,
দীপাবলির দিন বাড়ির দরজা কিংবা গেটের সামনে ‘শুভ – লাভ’ কিংবা ‘ঋদ্ধি – সিদ্ধি’-এর মতো রঙ্গোলি রচনার পরম্পরা রয়েছে। এর পেছনে ভাবনা এটাই যে দীপাবলি আমাদের বাড়িতে সমৃদ্ধি আনবে। এখন বাড়িগুলির যেরকম দরজা হয়, তেমনই সীমান্ত হল দেশের জন্য এক ধরনের দরজা। সেজন্য দেশের সমৃদ্ধি আপনাদের দিয়ে শুরু হয়, ‘শুভ – লাভ’ আপনাদের দিয়ে শুরু হয়, ‘ঋদ্ধি – সিদ্ধি’ও আপনাদের দিয়ে এবং আপনাদের পরাক্রম দিয়ে শুরু হয়। সেজন্য আজ দেশের প্রত্যেক বাড়িতে বাড়িতে মানুষকে আমরা আপনাদের গৌরবগাঁথা গেয়ে প্রদীপ জ্বালাতে দেখছি। সেজন্যে এবারের দীপাবলি আপনাদের পরাক্রমের ঔজ্জ্বল্যে দেদীপ্যমান। দীপাবলির এই প্রদীপ আপনাদের সম্মানে ভারতের প্রত্যেক প্রান্তে, প্রত্যেক পরিবারে প্রোজ্জ্বলিত হয়েছে। এই ভাবনা নিয়েই আজ আমি আপনাদের মাঝে এসেছি। আপনাদের, আপনাদের দেশভক্তির, আপনাদের অনুশাসনের, দেশের জন্য বেঁচে থাকা ও প্রয়োজনে আত্মবলিদানের উদ্দীপনাকে আজ আমি প্রণাম জানাতে এসেছি।
বন্ধুগণ,
আজ ভারত আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অর্থনীতি, সংস্কৃতি, সৈন্যশক্তি – প্রতিটি ক্ষেত্রে তার শক্তিশালী প্রভাব ফেলছে। আজ বিশ্বময় ভারতীয় বংশোদ্ভূত মানুষদের পরাক্রম বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভারতের নবীন প্রতিভাদের সম্মানও বিশ্বে ক্রমবর্ধমান। আর, দেশের কথা যদি বলি, এই সীমান্তবর্তী এলাকায় এই তিনটিরই ঔজ্জ্বল্য স্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিগত কয়েক বছরে যে গতি এবং পরিমাপে আপনাদের ক্ষমতায়িত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা আমাদের অর্থনৈতিক শক্তির নিদর্শনস্বরূপ। আপনারা সবাই ভিন্ন ভিন্ন রাজ্যের ভাষা ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্য সঙ্গে নিয়ে এখানে ঐক্যবদ্ধভাবে বিশ্বের সর্ববৃহৎ সৈন্যবাহিনীগুলির অন্যতম হয়ে উঠেছেন। যখনই কেউ কুনজর নিয়ে আমাদের দিকে তাকায়, তখন তাদের সেই ভাষায় জবাব দেওয়ার উদ্দীপনা আপনাদের মনে জাগে। এই উদ্দীপনাই বিশ্ববাসীর নজরে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে আরও বেশি বিশ্বস্ত করে তোলে। আজ ভারতের সেনাবাহিনী বিশ্বের বড় বড় দেশগুলির সঙ্গে সম্মিলিত যুদ্ধের মহড়া করছে। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমরা তাঁদের সঙ্গে রণকৌশল বিনিময় করছি। আজ ভারতীয় সেনাবাহিনী যে সন্ত্রাসবাদীদের ঠিকানায় যে কোনও সময়, যে কোনও ধরণের হামলা করতে সক্ষম, তা তারা বাস্তবে করে দেখিয়েছে। এসব কারণেও বিশ্বের সর্বত্র শান্তিরক্ষা অভিযানে রাষ্ট্রসঙ্ঘ ভারতীয় সেনাবাহিনীকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করার দায়িত্ব দেয়। ভারতীয় সেনা সেখানে যেমন শত্রুদের হৃদকম্প সৃষ্টি করতে সক্ষম, তেমনই যে কোনও বিপর্যয়ে প্রদীপের মতো নিজেদের প্রোজ্জ্বলিত করে হলেও অন্যদের জীবনকে তাঁরা আলোয় ভরিয়ে দেয়।
বন্ধুগণ,
করোনা মহামারী প্রভাবিত ভারতীয় নাগরিকদের বিদেশ থেকে সুরক্ষিত ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে আমাদের বিমানবাহিনী এবং আমাদের নৌ-বাহিনীর ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয় ছিল। করোনা সংক্রমণের সময় চিনের উহান থেকে আমাদের নাগরিকদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনার চ্যালেঞ্জও ভারতীয় বিমানবাহিনী নিয়েছিল। তখন সংক্রমণের শুরু দিকে এই অভিযান অত্যন্ত ভীতিপ্রদ ছিল, কিন্তু ভারতীয় বিমানবাহিনী উহান সহ বিশ্বের যেখানেই ভারতীয়রা আটকে পড়েছিলেন, তাঁদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনার অভিযানকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। এরকম অনেক দেশ ছিল যারা তাদের নাগরিকদের উহানে ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিয়েছিল, কিন্তু ভারতীয় বিমানবাহিনীর জওয়ানরা বিদেশে করোনা আক্রান্ত প্রতিটি অঞ্চল থেকে আমাদের নাগরিকদের উদ্ধার করার ক্ষেত্রে সরকারকে সাহায্য করেছে। ‘অপারেশন সমুদ্র সেতু’র মাধ্যমেও বিদেশ থেকে এরকম হাজার হাজার ভারতবাসীকে নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে এনেছে আমাদের নৌ-বাহিনী। শুধু আমাদের দেশবাসী নয়, মালদ্বীপ, মরিশাস, আফগানিস্তান, কুয়েত, কঙ্গো এবং সাউথ সুদান সহ অনেক মিত্র দেশের আটকে থাকা জনগণকেও ভারতীয় বিমানবাহিনী ও নৌ-বাহিনী উদ্ধার করেছে। বায়ুসেনার সহযোগিতাতেই সঙ্কটের সময়ে হাজার হাজার টন ত্রাণসামগ্রী দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
করোনার সঙ্কটকালে আপনাদের সকলের এই প্রচেষ্টার কথা খুব একটা সংবাদমাধ্যমে আলোচিত হয়নি। কিন্তু আজ আমি বিশেষ করে, দেশবাসীর নজর এদিকে আকর্ষণ করছি। ডিআরডিও থেকে শুরু করে আমাদের তিনটি সেনাবাহিনী, বিএসএফ সহ আমাদের সমস্ত আধা-সামরিক বাহিনী, কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম থেকে শুরু করে কোয়ারিন্টিনে চিকিৎসার সরঞ্জাম উৎপাদন ও পরিবহণে যেভাবে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ করছে, তা অভূতপূর্ব। যখন শুরুর দিকে স্যানিটাইজার এবং ফেসমাস্ক থেকে শুরু করে পিপিই পর্যন্ত সুরক্ষা সরঞ্জাম দেশে উৎপাদিত হত না, তখন এইসব কিছুর অভাব পূরণে আপনারা দিন-রাত পরিশ্রম করেছেন। সুরক্ষা কিট থেকে শুরু করে ভেন্টিলেটর পরিষেবা এবং মেডিকেল অক্সিজেন পরিষেবা, হাসপাতাল – এই প্রত্যেক ক্ষেত্রে আপনারা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। শুধু তাই নয়, এই করোনার সঙ্কটকালে গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো দেশের অনেক অংশে ভীষণ ঘূর্নিঝড় এলে, সেক্ষেত্রেও আপনারা আটকে পড়া নাগরিকদের ত্রাণ ও উদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছেন। আপনাদের ত্যাগ ও তপস্যায় সমুজ্জ্বল আপনাদের জীবন থেকে এই কর্মতৎপরতার প্রেরণা গ্রহণ করে আজ প্রত্যেক ভারতবাসী দীপাবলির প্রদীপ জ্বালাচ্ছেন এবং এই প্রদীপ প্রোজ্জ্বলনের মাধ্যমে আপনাদের গৌরবগাঁথা গাইছেন।
বন্ধুগণ,
করোনার সঙ্কটকালে ভ্যাক্সিন আবিষ্কারের জন্য সচেষ্ট গবেষণারত বৈজ্ঞানিকদের পাশাপাশি আমাদের মিসাইল নির্মাণকারী বৈজ্ঞানিকরাও দেশের আকর্ষণের বিষয় হয়েছেন। এই সময়ে নিরন্তর খবর আসছিল যে আজ অমুক মিসাইলের উৎক্ষেপণ পরীক্ষা করা হয়েছে, আজ তমুক মিসাইলকে আধুনিক প্রযুক্তিতে উন্নীত করা হয়েছে। আপনারা কল্পনা করতে পারেন যে বিগত কয়েক মাসে দেশের সামরিক শক্তি কতগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে! বিগত দু’মাসের মধ্যেই দেশে বেশ কিছু মিসাইলের সফল পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ হয়েছে। এক সেকেন্ডে ২ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রমকারী হাইপারসনিক ডেমন্সট্রেটর ভেহিকেলের সফল পরীক্ষণের মাধ্যমে ভারত বিশ্বের ৩-৪টি প্রধান দেশের তালিকায় অগ্রণী স্থান অধিকার করেছে। জল, স্থল, আকাশ – প্রতিটি ক্ষেত্রে আক্রমণে সক্ষম দীর্ঘ এবং সংক্ষিপ্ত দূরত্বের অনেক মিসাইল বিগত দিনগুলিতে ভারতের আকাশে নিরাপত্তার অভেদ্য প্রাচীর তৈরি করে দিয়েছে। এই করোনার সময়েই আমাদের বৈজ্ঞানিকরা ভারতকে ফায়ার পাওয়ারের ক্ষেত্রে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ শক্তিগুলির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে।
বন্ধুগণ,
আধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জামের পাশাপাশি, দেশের নানা সীমান্তে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থাসম্পন্ন বিশাল বিশাল পরিকাঠামো প্রকল্প এই সময়ে সম্পূর্ণ হয়েছে। আজ লাদাখে যোগাযোগ ব্যবস্থা আগের তুলনায় অনেক বেশি সুগম হয়েছে অটল সুড়ঙ্গের মাধ্যমে। আমাদের উত্তর এবং পশ্চিম সীমান্তে কয়েক ডজন সেতু এবং দীর্ঘ সড়কপথ এই সময়ের মধ্যেই সম্পূর্ণ করা হয়েছে। যখন গোটা বিশ্বে করোনার ভয়ে হারকম্প শুরু হয়েছে, প্রত্যেকেই নিজের জীবন নিয়ে ভীতসন্ত্রস্ত, সেই পরিস্থিতিতে আমাদের সেনাবাহিনী দেশের নিরাপত্তায় নিরন্তর অতন্দ্র প্রহরায় নিজেদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। এভাবে অতন্দ্র প্রহরায় থেকে আপনারা আরেকবার দেশের মানুষের হৃদয় জয় করে নিয়েছেন।
বন্ধুগণ,
আপনাদের সবার এই দায়বদ্ধতা দেশের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমস্ত বিষয়কে শক্তিশালী করে তুলেছে। আজ দেশের একদিকে যেখানে আধুনিক প্রযুক্তি, আধুনিক সমরসজ্জাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে, তেমনই প্রতিরক্ষা সংস্কারের ক্ষেত্রেও ততটাই গুরুত্ব দিয়ে কাজ করা হচ্ছে। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরতার পেছনে এই লক্ষ্য ছিল। আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র এবং প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিদেশ থেকে আমদানির ওপর যেন নির্ভরতা কমানো যায়। এই দৃষ্টিকোণ থেকে আমাদের তিনটি সেনাবাহিনী ঐক্যবদ্ধভাবে একটি প্রশংসনীয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে এখন থেকে নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত ১০০টিরও বেশি যুদ্ধ সরঞ্জাম আর বিদেশ থেকে আমদানি করা হবে না, আমাদের দেশেই উৎপাদন করা হবে। আমাদের দেশে উৎপন্ন শ্রেষ্ঠ যুদ্ধ সরঞ্জামই আমাদের সেনাবাহিনীগুলি ব্যবহার করবে। এতদিন পর্যন্ত যত ধরনের যন্ত্রাংশ বিদেশ থেকে আমদানি করা হত, সেগুলিকেও দেশের মধ্যেই উৎপাদনের চেষ্টা করা হচ্ছে। আমাদের সেনাবাহিনীর এই ইচ্ছাশক্তি দেশের অন্যান্য মানুষদেরও লোকালের জন্য ভোকাল করার প্রেরণা জোগাচ্ছে।
বন্ধুগণ,
ভারতে অস্ত্রশস্ত্র নির্মাণকারী অধিকাংশ কোম্পানি যাতে তাদের কারখানার শাখা খুলতে পারে, সেদিকে লক্ষ্য রেখে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের সীমা বাড়িয়ে ৭৪ শতাংশ করে দেওয়া হয়েছে। যে কোম্পানিগুলি ভারতে আসতে চায়, তারা যাতে উন্নত পরিষেবা পায় সেদিকে লক্ষ্য রেখে উত্তরপ্রদেশ ও তামিলনাড়ুতে দুটি বড় ডিফেন্স করিডর গড়ে তোলার কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিয়ে চলেছে।
বন্ধুগণ,
সেনাবাহিনীর আধুনিকীকরণে এবং সৈন্যদের যুদ্ধ সরঞ্জামের ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরতায় সব থেকে বড় প্রতিবন্ধকতা ছিল পূর্ববর্তী জমানার বিভিন্ন প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়াগুলিকে সরলীকরণের জন্য লাগাতার কাজ করা হচ্ছে। সম্প্রতি আরও কয়েকটি বড় সংস্কার আনা হয়েছে। যেমন ট্রায়াল এবং টেস্টিং-এর প্রক্রিয়া আগে অনেক জটিল ছিল, এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে অনেক সময় লাগত। এর ফলে, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামগুলির অন্তর্ভুক্তিতে অনেক সময় লাগত। এখন এই প্রক্রিয়াকে একদম সরল করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের তিনটি সেনাবাহিনীর মধ্যে সমন্বয়ের জন্য, দ্রুতগতিতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আমরা যে চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ (সিডিএস)-এর পদ সৃষ্টি করেছি সেটি অত্যন্ত কার্যকরী হয়েছে। এত কম সময়ের মধ্যেই এই নতুন ব্যবস্থার গুরুত্ব দেশবাসী অনুভব করছেন। এত কম সময়ের মধ্যেই এই নতুন ব্যবস্থা আমাদের স্থলসেনা, বায়ুসেনা এবং নৌ-সেনার দায়বদ্ধতার মাধ্যমেই শক্তিশালী হতে পেরেছে। আর সেজন্য আমাদের তিনটি সেনাবাহিনী অভিনন্দনযোগ্য। আমাদের সেনাদের সামগ্রিক সঙ্কল্প সিডিএস-এর সাফল্যকে সুনিশ্চিত করেছে।
বন্ধুগণ,
আপনাদের থেকে ভালো করে আর কে বলতে পারবে যে সীমান্তবর্তী অঞ্চলের চ্যালেঞ্জগুলি কেমন হয়। এখানে কত সমস্যা থাকে। কত নতুন নতুন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এই সমস্যাগুলির সমাধানের জন্য বর্ডার এরিয়া ডেভেলপমেন্টের পাশাপাশি সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলিতে বসবাসকারী পরিবারগুলির যুবক-যুবতীদের বিশেষ প্রশিক্ষণও ততটাই জরুরি। ১৫ আগস্টে লালকেল্লার প্রাকার থেকে আমি একথাও বলেছিলাম, দেশের ১০০টিরও বেশি সীমান্তবর্তী জেলার নবীন প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদের এনসিসি-তে ভর্তি করানোর জন্য বিশেষ অভিযান শুরু করা হবে। সীমান্তবর্তী এবং সমুদ্র তটবর্তী – এই এলাকাগুলির প্রায় ১ লক্ষ যুবক-যুবতীকে ইতিমধ্যেই এভাবে প্রশিক্ষিত করা হচ্ছে। বিশেষ করে, এই যুবক-যুবতীদের ভারতীয় স্থলবাহিনী, নৌ-বাহিনী এবং বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষকরা তাঁদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। অর্থাৎ, যেখানেই সেনাবাহিনীর বেস রয়েছে, সেখানেই তাঁরা প্রশিক্ষিত হবে। যেখানে বিমানবাহিনীর বেস রয়েছে কিংবা নৌ-বাহিনীর বেস রয়েছে, সেখানে তাঁরা বিমানবাহিনী বা নৌ-বাহিনীর প্রশিক্ষকদের দ্বারা প্রশিক্ষিত হবেন।
বন্ধুগণ,
এদের মধ্যে বড় সংখ্যায় গার্লস ক্যাডেটদের প্রশিক্ষিত করার দিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এই সকল প্রচেষ্টার মাধ্যমে দেশের আত্মনির্ভরতা এবং আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির ক্ষেত্রে মেয়েদের ভূমিকাকে বিস্তৃত করা হচ্ছে। আজ যেভাবে অন্যান্য ক্ষেত্রে মহিলাদের এগিয়ে আসার জন্য উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে, সেভাবেই আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় নারীশক্তির ভূমিকাকে আরও ব্যাপক করা হচ্ছে। আজ বায়ুসেনা এবং নৌ-সেনার মহিলাদের কমপেটেন্ট রোল দেওয়া হচ্ছে। মিলিটারি পুলিশেও মেয়েদের নিয়োগ করা হচ্ছে। বিএসএফ তো সেই অগ্রণী সংস্থাগুলির অন্যতম যেখানে সীমান্ত সুরক্ষায় মহিলাদের ভূমিকা লাগাতার ক্রমবর্ধমান। এভাবেই অনেক প্রচেষ্টা আমাদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করছে, দেশের বিশ্বাস বাড়াচ্ছে।
বন্ধুগণ,
দীপাবলিতে আপনারা সবাই একটা জিনিস হয়তো লক্ষ্য করেছেন। যখন আমরা প্রদীপ জ্বালাই, তখন প্রায়ই একটি প্রদীপের মাধ্যমে অন্যান্য প্রদীপগুলি জ্বালাই। একটি প্রদীপের মাধ্যমে যেমন হাজারটি প্রদীপ জ্বলে, তেমনই আপনাদের মতো এক একজন প্রদীপ গোটা দেশকে উজ্জ্বল করেন, গোটা দেশে প্রাণশক্তি সঞ্চার করেন। সীমান্তে আপনারা যেমন উদ্দীপ্ত থাকেন, তেমনই প্রত্যেক সৈনিকের শৌর্য দিয়ে দেশবাসীর রাষ্ট্রভক্তির উদ্দীপনা তুঙ্গে পৌঁছয়। আপনাদের থেকে প্রেরণা নিয়ে প্রত্যেক দেশবাসী নিজের মতো করে রাষ্ট্রহিতে কাজ করার জন্য এগিয়ে আসছেন। কেউ পরিচ্ছন্নতার সঙ্কল্পের সঙ্গে যুক্ত হন, কেউবা দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযানকে এগিয়ে নিয়ে যান, আবার কেউ প্রত্যেক বাড়িতে নলের মাধ্যমে জল পৌঁছে দেওয়ার অভিযানে সামিল হন। অন্যরা যক্ষ্মামুক্ত ভারত গড়ে তোলার কাজ করেন, আবার কেউ অপুষ্টির বিরুদ্ধে অভিযানকে শক্তিশালী করে তোলেন কিংবা আরেক দল সাধারণ দেশবাসীকে ডিজিটাল লেনদেন শিখিয়ে নিজেদের দায়িত্ব পালন করেন।
বন্ধুগণ,
এখন তো আত্মনির্ভর ভারত অভিযানকে দেশের প্রায় প্রতিটি মানুষ নিজেদের অভিযানে পরিণত করেছে। ‘ভোকাল ফর লোকাল’ আজ প্রত্যেক ভারতবাসীর মিশনে পরিণত হয়েছে। আজ ‘ইন্ডিয়া ফার্স্ট, ইন্ডিয়ান ফার্স্ট’-এর আত্মবিশ্বাস চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। এই সমস্ত কিছু সম্ভব হচ্ছে কারণ এগুলির পেছনে আপনাদের শক্তি রয়েছে। আপনাদের ওপর প্রত্যেক দেশবাসীর ভরসা রয়েছে। যখন দেশের বিশ্বাস বাড়ে, তখন বিশ্ববাসী দ্রুতগতিতে সেই দেশকে এগিয়ে যেতে দেখে। আসুন, এই বিশ্বাসের, এই আত্মবিশ্বাসের সঙ্কল্পকে বাস্তবায়িত করার জন্য আমরা সবাই এগিয়ে যাই। দীপাবলির এই পবিত্র উৎসবে নতুন নতুন সঙ্কল্প নিয়ে, নতুন উদ্দীপনা নিয়ে আমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে, পায়ে পা মিলিয়ে ‘ওয়ান লাইফ ওয়ান মিশন’-এর মনোভাব নিয়ে লক্ষ্য প্রাপ্তির জন্য দৃষ্টান্তমূলক পরিশ্রম করি। আসুন, ১৩০ কোটির দেশে আমরা সবাই মিলে এগিয়ে যাই এবং ভারতমাতাকে আমরা যেভাবে সামর্থ্যবান এবং সমৃদ্ধ করে তুলতে চাই, আমাদের সেই স্বপ্ন যাতে বাস্তবায়িত করতে পারি এই একটি ভাবনা নিয়ে আপনারা সবাই আমার সঙ্গে স্বর মিলিয়ে, মুষ্টিবদ্ধ হাত ওপরে তুলে জয়জয়কার করুন, ভারতমাতা কি জয়, ভারতমাতা কি জয়, ভারতমাতা কি জয়। আরেকবার আপনাদের সবাইকে এই দীপাবলির উৎসবের জন্য অনেক অনেক শুভকামনা। ধন্যবাদ।
***
CG/SB/DM