প্রেসিডেন্ট এরডোগান,
বিশিষ্ট প্রতিনিধিবৃন্দ,
আন্তালিয়ার এই মনোরম পরিবেশে উষ্ণ আতিথেয়তা এবং চমৎকার ব্যবস্থাপনার জন্য তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরডোগান’কে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
জি-২০ ভুক্ত দেশগুলির প্রতিনিধি হিসেবে আজ আমরা এখানে সমবেত হয়েছি ভবিষ্যতে এক সমৃদ্ধ বিশ্ব গড়ে তোলার সংকল্প নিয়ে।
আজ আমরা শোক, ব্যথা ও যন্ত্রণা নিয়ে সন্ত্রাসবাদী আক্রমণের এক করুণ পরিণতি প্রত্যক্ষ করেছি।
এই সপ্তাহে প্যারিসে সংগঠিত বর্বরোচিত আক্রমণের নিন্দায় আমরা ঐক্যবদ্ধ।আঙ্কারা এবং লেবাননে সাম্প্রতিক বোমাবাজির ঘটনারও আমরা নিন্দা করছি।সিনাই’তে দুর্ঘটনা কবলিত বিমানের নিহত যাত্রীদের পরিজনদের সমবেদনা জানাতে আমরা রাশিয়ার সঙ্গেই থাকব।
অন্ধকারের যে কালো বিভীষিকাময় ছায়া আমরা দেখতে পাচ্ছি, তা কোনও নির্দিষ্ট গোষ্ঠী, অঞ্চল বা লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।
আজকের দিনে এটি একটি বড় আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ।এই ধরণের আক্রমণে শুধুমাত্র যে মর্মান্তিক জীবনহানির ঘটনা ঘটে তা নয়, সেইসঙ্গে অর্থনৈতিক ক্ষতি স্বীকার করতে হয় এবং আমাদের জীবনযাত্রা এক অস্তিত্বের সংকটের মুখোমুখী হয়ে পরে।
এর মোকাবিলায় প্রয়োজন এক সুসংবদ্ধ আন্তর্জাতিক তৎপরতা।আর এজন্য এই বিষয়টিকে জি-২০-র অগ্রাধিকারের তালিকায় অবশ্যই রাখা প্রয়োজন।
এই ধরণের একটি চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে আলোচনার লক্ষ্যে এই বৈঠকের প্রস্তুতির জন্য আমি তুরস্ক’কে ধন্যবাদ জানাই।
মাননীয় প্রতিনিধিবৃন্দ, আজ আমরা এখানে আলোচনার এই অধিবেশনে সমবেত হয়েছি আরও দুটি আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে মতবিনিময়ের লক্ষ্যে।এর মধ্যে একটি হল –উন্নয়ন এবং অন্যটি –জলবায়ু পরিবর্তন।
বর্তমান বছরটি এক দিকচিহ্নবিশেষ।রাষ্ট্রসঙ্ঘের ৭০ বছর পূর্ণ হল।রাষ্ট্রসঙ্ঘের বৈঠকে আমরা নিরন্তর উন্নয়নের লক্ষ্য স্থির করে ফেলেছি।বিশ্বের নিরন্তর উন্নয়নের ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার পথে আমরা এগিয়ে গেছি বেশ কিছুটা পথ।
বিশিষ্ট প্রতিনিধিবৃন্দ,
নিরন্তর উন্নয়নের লক্ষ্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক বা লক্ষ্যটি হল –২০৩০ সালের মধ্যে দারিদ্র্য সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করা।এর মধ্যে নিহিত রয়েছে –প্রসার, উন্নয়ন, মানবকল্যাণ এবং পরিবেশের মধ্যে এক সঠিক ভারসাম্য রক্ষার তাগিদ।
জি-২০-র আলাপ-আলোচনা নিরন্তর উন্নয়নের লক্ষ্যকে কেন্দ্র করেই।এই কর্মপ্রচেষ্টায় আমরা অবশ্যই দ্রুত ও প্রসারিত অর্থনৈতিক বিকাশের ওপর লক্ষ্য রাখবো।
বিশিষ্ট ভদ্রমণ্ডলী,
ভারত যে উন্নয়নের লক্ষ্য স্থির করেছে, তার সঙ্গে সাযুজ্য ও সাদৃশ্য রয়েছে নিরন্তর উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রারও।
বিকাশের হার ত্বরান্বিত করতে আমরা সচেষ্ট।যুব সমাজের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে তাদের জন্য দক্ষতা বৃদ্ধির কর্মসূচিতে আমরা অর্থ বিনিয়োগও করেছি।পরিকাঠামো প্রসারের গতি ও গুণমান বৃদ্ধির জন্য আমরা চেষ্টা করে চলেছি।আমরা বিনিয়োগ করছি সমস্ত কিছুকেই আরও ফলপ্রসূ ও উৎপাদনশীল করে তোলার লক্ষ্যে।
বিশ্বের বৃহত্তম আর্থিক অন্তর্ভুক্তির কর্মসূচি গ্রহণ করেছি আমরাই।দেশবাসীর প্রাথমিক চাহিদা পূরণে নির্দিষ্ট দিনক্ষণ বা সময়কাল আমরা স্থির করে দিয়েছি।
বলিষ্ঠ অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক সংস্কারের মধ্য দিয়ে আমরা বৃদ্ধির হারকে ৭.৫ শতাংশে উন্নীত করেছি।অদূর ভবিষ্যতে এই হার আরও বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।
ভবিষ্যতে ভারত আন্তর্জাতিক সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার এক স্তম্ভ হয়ে উঠতে পারে।
মাননীয় বিশিষ্ট অতিথিবৃন্দ, ভারতে আমরা উন্নয়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনকে পরস্পরের প্রতিযোগী হিসেবে দেখি না।প্রকৃতির সঙ্গে মানবাত্মার মিলনেই আমরা বিশ্বাসী।
জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলায় আমরা গ্রহণ করেছি বেশ কয়েকটি উচ্চাকাঙ্খামূলক পরিকল্পনা।
আগামী ২০২২ সালের মধ্যে ১৭৫ গিগাওয়াট অতিরিক্ত পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা আমরা স্থির করেছি।
জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর ভর্তুকি আমরা কমিয়ে এনেছি।কয়লার ওপর কর-ও আমরা হ্রাস করেছি।আমরা গড়ে তুলেছি জাতীয় বিশুদ্ধ জ্বালানি তহবিল, যাতে নির্মল প্রযুক্তিকে উৎসাহদান করা যেতে পারে।
আমাদের এই উচ্চাকাঙ্খামূলক এবং জাতীয় দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গীকার গ্রহণের ফলশ্রুতি হিসেবে ভারত সমানতালে এগিয়ে যাবে বহির্বিশ্বের সঙ্গে।
জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে রাষ্ট্রসঙ্ঘের আলাপ-আলোচনার কাঠামোর মধ্যে থেকে প্যারিসে এক কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণের অপেক্ষায় আমরা রয়েছি।সমষ্টিগত কাজকর্মের মধ্যে সঠিক ভারসাম্য রক্ষার কাঠামো আমরা স্থির করে ফেলেছি।নিজের নিজের সামর্থ্যের মধ্যে থেকে নানা ধরণের দায়িত্বশীলতার কাজ এক সাধারণ ঐক্যের মানসিকতার মধ্য দিয়ে সম্ভব হয়ে উঠবে বলে আমরা আশা করি।
জি-২০ সম্মেলনে সুলভ পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানি উদ্ভাবনে প্রয়োজনীয় গবেষণা ও উন্নয়নের লক্ষ্য পূরণে আমরা এক কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারবো বলে আমি মনে করি।বিশুদ্ধ জ্বালানির আন্তর্জাতিক চাহিদা পূরণে অর্থের যোগান ও প্রযুক্তির প্রয়োগ যাতে অব্যাহত থাকে তাও আমরা নিশ্চিত করবো।
২০২০ সালের মধ্যে আমাদের লক্ষ্যমাত্রার দিকে এগিয়ে যেতে প্রতি বছরই সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য পূরণ আমরা সম্ভব করে তুলবো।
জি-২০ ভুক্ত দেশগুলির উচিত শহরগুলিতে সরকারি পরিবহণের মাত্রায় ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সচেষ্ট হওয়া।
কার্বন নির্গমণ নয়, আমাদের লক্ষ্য সবুজায়ন।
যখনই আমরা লক্ষ্যমাত্রার কথা বলবো, তখনই আমাদের মনে রাখতে হবে যে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে আনাই শেষ কথা নয়, আমাদের জীবনযাত্রার মান তথা জীবনশৈলীও সেইসঙ্গে নিয়ন্ত্রিত হওয়া উচিৎ।
প্রকৃতির সঙ্গে সম্প্রীতি বজায় রেখে উন্নয়নই আমার প্রস্তাবের লক্ষ্য।এ ব্যাপারে আমি একমত ফরাসী প্রেসিডেন্ট হল্যান্ড-এর সঙ্গে।সি ও পি-২১ বৈঠকে সৌরশক্তি সমৃদ্ধ দেশগুলির সঙ্গে আলোচনা আমাদের লক্ষ্য।
মাননীয় প্রতিনিধিবৃন্দ, উন্নয়ন প্রসঙ্গে আর দু-একটি কথা বলেই আমি আমার বক্তব্য শেষ করবো।
আগামী ২০১৮ সালের মধ্যে সমষ্টিগত মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন অতিরিক্ত ২ শতাংশ বৃদ্ধির যে অঙ্গীকার আমরা নিয়েছিলাম, তার থেকে আমরা এখনও কিছুটা পিছিয়ে রয়েছি।
যে সমস্ত দেশের বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে সর্বোচ্চ মাত্রায় তাদের কিভাবে সমর্থন যোগানো যায়, তা জি-২০ বৈঠকে স্থির করার প্রস্তাব আমি রাখছি।এই ব্যবস্থা উদ্ভাবন করা সম্ভব হলে নির্দিষ্ট অন্তরায়গুলি দূর করা সম্ভব হবে এবং সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রগুলির প্রকৌশল অনুযায়ী লক্ষ্যের বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত হবে।
বিশুদ্ধ জ্বালানি এবং পরিবেশ-বান্ধব পরিকাঠামো উন্নয়ন ও জলবায়ু পরিবর্তন এই দুটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার লক্ষ্যে বিশেষভাবে সহায়ক হয়ে উঠবে।
উন্নয়নশীল দেশগুলিতে পরিকাঠামো খাতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বর্তমানে যে ঘাটতি রয়ে গেছে তা পূরণ করা হবে আমাদের একটি অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র।
স্বল্প কৃষিজমির মালিকদের সমস্যা এবং খাদ্যের অপচয় সম্পর্কে কৃষি সম্পর্কিত জি-২০ কার্যসূচিতে যেভাবে আলাপ-আলোচনা হয়েছে তার অগ্রগতিতে আমি সন্তুষ্ট।
উন্নয়নশীল দেশগুলিতে আর্থিক সহায়তা গৃহস্থ পরিবারগুলির উপার্জনের ক্ষেত্রে এক বিশেষ ধরণের সুবিধা এনে দেয়।বিকাশশীল অর্থনীতিতে তা যোগায় সমর্থনও।আর্থিক সহায়তা বা ভর্তুকিদানের পেছনে যে বিপুল অর্থ ব্যয় হয় তা কমিয়ে আনতে নির্দিষ্ট দিনক্ষণ স্থির করার কাজ আমাদের ২০৩০ সালের আগেই শেষ করে ফেলা উচিৎ।
আমাদের আলোচনা আরও ফলপ্রসূ হয়ে উঠবে এবং তার সুফলও আমরা লাভ করবো এই অপেক্ষায় রইলাম।
আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ।
PG/SKD/SB/S
My lead intervention at the @G20Turkey2015 working lunch focussed on aspects of development & climate change. https://t.co/yCqZS2MUn9
— Narendra Modi (@narendramodi) November 15, 2015
Spoke about how India's development goals are aligned with SDGs. Also talked on the importance we are attaching to renewable energy.
— Narendra Modi (@narendramodi) November 15, 2015
G20 nations should build support systems with a focus on nations with high growth potential. Focus on infrastructure should also continue.
— Narendra Modi (@narendramodi) November 15, 2015