নতুন দিল্লি, ২১ জুলাই, ২০২৩
মাননীয় ব্যক্তিবর্গ, ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ, নমস্কার!
ঐতিহাসিক ও প্রাণবন্ত শহর ইন্দোরে আমি আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাই। এই শহর তার সমৃদ্ধ রন্ধন ঐতিহ্যের জন্য প্রসিদ্ধ। বর্ণে, স্বাদে পরিপূর্ণ এই শহরে আপনারা চমৎকার সময় কাটাবেন বলে আমার ধারণা।
বন্ধুরা,
আপনারা সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ও সামাজিক উপাদানগুলির একটি – কর্মসংস্থান নিয়ে আলোচনা করছেন। আমরা এখন কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বিপুল এক পরিবর্তনের দ্বারপ্রান্তে এসে উপস্থিত হয়েছি। দ্রুত পরিবর্তনশীল এই প্রেক্ষাপটের উপযোগী কার্যকর কৌশল আমাদের প্রণয়ন করতে হবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের এই যুগে কর্মসংস্থানের মূল চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছে প্রযুক্তি এবং এই প্রবণতা বজায় থাকবে। এটা সৌভাগ্যের বিষয় যে, এই বৈঠক এমন একটি দেশে হচ্ছে, যেখানে সর্বশেষ প্রযুক্তিনির্ভর রূপান্তরের সময়ে প্রযুক্তিক্ষেত্রে বিপুল কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এই বৈঠকের আয়োজনস্থল ইন্দোর এমন বহু স্টার্টআপের ধাত্রীভূমি, যারা রূপান্তরের এই নতুন ঢেউয়ের নেতৃত্ব দিচ্ছে।
বন্ধুরা,
উন্নত প্রযুক্তি ও প্রক্রিয়ার ব্যবহারে আমাদের শ্রমশক্তিকে দক্ষ করে তুলতে হবে। দক্ষতা অর্জন, সেই দক্ষতার ঘষামাজা এবং দক্ষতার উন্নয়নই হবে ভবিষ্যতের শ্রমশক্তির মন্ত্র। এই বাস্তবতার সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের লক্ষ্যেই ভারতে ‘দক্ষ ভারত মিশন’ কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। ‘প্রধানমন্ত্রী কৌশল বিকাশ যোজনা’র আওতায় এপর্যন্ত ১ কোটি ২৫ লক্ষেরও বেশি যুবক যুবতীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে কৃত্রিম মেধা, রোবটিক্স, ইন্টারনেট অফ থিংস, ড্রোন-এর মতো শিল্পের ‘ফোর পয়েন্ট জিরো’ ক্ষেত্রগুলির উপর।
বন্ধুরা,
কোভিড অতিমারির সময় ভারতে সামনের সারির স্বাস্থ্যকর্মী ও অন্য কর্মীরা যে অসাধারণ কাজ করেছেন, তা থেকে তাদের দক্ষতা ও নিষ্ঠার পরিচয় পাওয়া গেছে। এর মধ্য দিয়ে আমাদের সেবা ও সহানুভূতির সংস্কৃতিও প্রতিফলিত হয়েছে। সত্যি বলতে কী, বিশ্বের দক্ষ শ্রমশক্তির বৃহত্তম উৎস হয়ে ওঠার যাবতীয় সম্ভাবনা ভারতের রয়েছে। অদূর ভবিষ্যতেই বিশ্বজুড়ে শ্রমের অবাধ চলাচল শুরু হবে। উন্নয়ন ও দক্ষতার আদানপ্রদানের মাধ্যমে তা প্রকৃত অর্থেই বিশ্বব্যাপী করে তোলার এটাই সঠিক সময়। জি২০–কে এই ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিতে হবে। দক্ষতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক স্তরে পেশা সংক্রান্ত সুপারিশের যে প্রয়াস আপনারা শুরু করেছেন, আমি তার প্রশংসা করি। এর জন্য আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা, সমন্বয়, অভিবাসন ও গতিশীলতা সংক্রান্ত অংশীদারিত্বের নতুন মডেল প্রয়োজন। নিয়োগকর্তা ও কর্মীদের বিষয়ে পরিসংখ্যান এবং তথ্যের আদানপ্রদানের মাধ্যমেই এটা শুরু করা যেতে পারে। এর ফলে বিশ্বজুড়ে দেশগুলির ক্ষমতায়ন হবে। তারা দক্ষতা উন্নয়ন, শ্রমশক্তি পরিকল্পনা এবং লাভজনক কর্মসংস্থানের যুক্তিনিষ্ঠ নীতি প্রণয়ন করতে পারবে।
বন্ধুরা,
আরেকটি রূপান্তরমূলক পরিবর্তন হল অস্থায়ী এবং সোপানধর্মী অর্থনীতিতে নতুন শ্রেণীর কর্মীদের আবির্ভাব। অতিমারির সময় এর কার্যকারিতা বিশেষভাবে অনুভূত হয়েছিল। এতে কাজের শর্তগুলি নমনীয় থাকে, পরিপুরক আয়ের উৎস তৈরি হয়। বিশেষ করে যুবসমাজের জন্য লাভজনক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির ক্ষেত্রে এর ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। মহিলাদের আর্থসামাজিক ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রেও এটি একধরণের রূপান্তরমূলক হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে। এর সম্ভাবনার পূর্ণ সদ্ব্যবহারের লক্ষ্যে নতুন যুগের কর্মীদের জন্য আমাদের নতুন ধরণের নীতি ও ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। নিয়মিত ও যথেষ্ট কাজের সুযোগ যাতে সৃষ্টি হয়, তার সুস্থিত উপায় বের করা প্রয়োজন। তাদের নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য এবং সামাজিক সুরক্ষার জন্য নতুন মডেল গড়ে তুলতে হবে। ভারতে আমরা এইসব কর্মীদের জন্য ‘ই-শ্রম পোর্টাল’ তৈরি করেছি। মাত্র ১ বছরের মধ্যেই প্রায় ২৮ কোটি কর্মী এই পোর্টালে নিজেদের নাম নথিভুক্ত করেছেন। কাজের প্রকৃতি এখন যেহেতু বহুজাতিক হয়ে উঠেছে, তাই প্রতিটি দেশকেই এই ধরণের পদক্ষেপ করার কথা ভাবতে হবে। এক্ষেত্রে আমাদের সহায়তা কেউ চাইলে আমরা অবশ্যই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবো।
বন্ধুরা,
২০৩০ কর্মসূচির একটি প্রধান বিষয় হল মানুষকে সামাজিক সুরক্ষা প্রদান। কিন্তু বর্তমানে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি যে কাঠামোয় কাজ করে তাতে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট সংকীর্ণ উপায়ে কর্মীদের সুবিধা দেওয়া যায়। অন্যভাবে দেওয়া বহু সুবিধা এই কাঠামোর আওতায় আসেনা। আমরা সর্বজনীন জনস্বাস্থ্য, খাদ্য সুরক্ষা, বীমা এবং পেনশন কর্মসূচির ব্যবস্থা করেছি। কিন্তু তার কোনো হিসেব রাখা হয়না। এই সামাজিক সুরক্ষা কবচের সঠিক চিত্র যাতে পাওয়া যায়, তার ব্যবস্থা অবশ্যই করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রতিটি দেশের অনন্য অর্থনৈতিক সক্ষমতা, শক্তি এবং চ্যালেঞ্জের বিবেচনা করা দরকার। সবার জন্য ঢালাওভাবে কোনো একটি দষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করলে চলবে না। বিভিন্ন দেশ এক্ষেত্রে যেসব প্রয়াস চালাচ্ছে তার নিখুঁত প্রতিচ্ছবি পাওয়ার মতো কোনো একটি পদ্ধতি আপনারা ভাবনা চিন্তা করে বের করতে পারবেন বলে আমি আশা রাখি।
সম্মাননীয়গণ,
এই ক্ষেত্রের অত্যন্ত জরুরি কিছু সমস্যার সমাধানে আপনারা যে প্রয়াস চালাচ্ছেন, আমি তার প্রশংসা করি। বিশ্বজুড়ে শ্রমিকদের কল্যাণে আপনারা জোরালো বার্তা পাঠাবেন বলে আমি স্থিরনিশ্চিত। আমি আপনাদের এই বৈঠকের সাফল্য কামনা করি।
আপনাদের সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ!
CG/SD/SKD/
Sharing my remarks at the G20 Labour and Employment Ministers' Meeting. @g20org https://t.co/lyCVUY5lwz
— Narendra Modi (@narendramodi) July 21, 2023