নয়াদিল্লি, ২২ জানুয়ারি , ২০২৫
প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর পৌরোহিত্যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে ২০২১-২২, ২০২২-২৩ এবং ২০২৩-২৪ সালে জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন (এনএইচএম)-এর আওতায় স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে অগ্রগতির বিষয়ে মন্ত্রিসভাকে অবহিত করা হয়। প্রসূতি মৃত্যুর হার, নবজাতক মৃত্যুর হার হ্রাস এবং যক্ষ্মা, ম্যালেরিয়া, কালাজ্বর, ডেঙ্গু, কুষ্ঠ, ভাইরাল হেপাটাইটিসের মতো বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে কর্মসূচির বিষয়ে অগ্রগতি সম্পর্কে বৈঠকে জানানো হয়। একইসঙ্গে জাতীয় সিকল সেল অ্যানিমিয়া রোগ নির্মূল মিশনের মতো নতুন উদ্যোগের কথাও তুলে ধরা হয়।
জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন (এনএইচএম) জনস্বাস্থ্যের উন্নতি সাধনে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। গত ৩ বছরে এনএইচএম প্রসূতি ও শিশুর স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে উন্নতি, রোগ নির্মূল এবং স্বাস্থ্য পরিষেবা পরিকাঠামো সহ একাধিক ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি লাভ করেছে। বিশেষ করে কোভিড-১৯ মহামারী চলাকালীন এই মিশন উচ্চমানের ও সহজলভ্য চিকিৎসা পরিষেবা প্রদানের মাধ্যমে দেশের স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের উন্নতি সাধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
এমএইচএম-এর অন্যতম প্রধান কৃতিত্ব হল, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে মানব সম্পদের বিকাশ ও বৃদ্ধি। ২০২১-২২ অর্থবর্ষে এই মিশনে জেনারেল ডিউটি মেডিক্যাল অফিসার্স, স্পেশালিস্ট, স্টাফ নার্স, এএনএমএস, আয়ুষ চিকিৎসক, সহকারী স্বাস্থ্য সেবাকর্মী এবং জনস্বাস্থ্য ম্যানেজার সহ ২.৬৯ লক্ষ অতিরিক্ত স্বাস্থ্য সেবাকর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। এছাড়া ৯০,৭৪০ কমিউনিটি হেল্থ অফিসার্স নিয়োগ করা হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে ১.২৯ লক্ষ কমিউটিনিটি হেল্থ অফিসার্স সহ ৪.২১ লক্ষ পেশাদার স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে এই স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৫.২৩ লক্ষ। এর মধ্যে ১.৩৮ লক্ষ কমিউনিটি হেল্থ অফিসার্স রয়েছেন। এই উদ্যোগ বিশেষ করে তৃণমূল স্তরে স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে।
জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনাকে শক্তিশালী করে তুলতে বিশেষ করে কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবিলায় এনএইচএম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ২০২১-এর জানুয়ারি থেকে ২০২৪-এর মার্চ পর্যন্ত ২২০ কোটিরও বেশি কোভিড-১৯ টিকার ডোজ দেওয়া হয়েছে।
দেশের স্বাস্থ্য সূচকের উন্নতিসাধনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমকা পালন করেছে এনএইচএম। প্রসূতি মৃত্যু ও নবজাতক মৃত্যুর হার কমেছে উল্লেখযোগ্যভাবে। এনএইচএম বিভিন্ন রোগ নিয়ন্ত্রণ এবং নির্মূলে সাহায্য করেছে। যক্ষ্মা রোগ নিয়ন্ত্রণ করা গেছে এবং এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার ক্রমশই কমেছে। ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে ম্যালেরিয়া রোগ এবং এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার কমেছে যথাক্রমে ১৩.২৮ শতাংশ ও ৩.২২ শতাংশ। এছাড়াও কালাজ্বর নির্মূলের প্রয়াসেও সাফল্য মিলেছে। ইনটেনসিফাইড মিশন ইন্দ্রধনুষ (আইএমআই)৫.০-এর আওতায় ৩৪.৭৭ কোটি শিশুকে টিকা দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী টিবি মুক্ত ভারত অভিযানে ১,৫৬,৫৭২ লক্ষ নিক্ষয় মিত্র স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে নাম নথিভুক্ত করেছেন, যারা ৯.৪০ লক্ষেরও বেশি যক্ষ্মা রোগীকে সাহায্য করে চলেছেন। উল্লেখ্য, এই অভিযানের সূচনা হয় ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। প্রধানমন্ত্রী ন্যাশনাল ডায়ালিসিস প্রোগ্রাম (পিএমএনডিপি) এর সম্প্রসারণ করা হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে ৬২.৩৫ লক্ষের বেশি হিমোডায়ালিসিস সেশন হয়েছে, যার মাধ্যমে ৪.৫৩ লক্ষের বেশি ডায়ালিসিস রোগী উপকৃত হয়েছেন। এমনকি ২০৪৭ সালের মধ্যে সিকল সেল রোগ নির্মূলের লক্ষ্যে ২০২৩ সালে চালু হওয়া জাতীয় সিকল সেল অ্যানিমিয়া রোগ নির্মূল মিশনে আদিবাসী অঞ্চলে ২.৬১ কোটি ব্যক্তির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে।
গর্ভবতী মহিলা, নবজাতক ও শিশুদের সময়মতো টিকাদান সুনিশ্চিত করতে ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে U-WIN প্ল্যাটফর্মের সূচনা করা হয়েছে। স্বাস্থ্য পরিষেবা পরিকাঠামোকে শক্তিশালী করতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে এনএইচএম মিশন। ২০২৪ সালের মার্চ মাসের তথ্য অনুযায়ী দেশে ১২,৩৪৮টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ২৪X৭ হিসেবে কাজ করছে এবং ৩,১৩৩টি ফার্স্ট রেফারেল ইউনিট চালু রয়েছে।
SC/SS/NS