Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

জাতির উদ্দেশে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘মন কি বাত’ (চল্লিশতম পর্ব) অনুষ্ঠানের বাংলা অনুবাদ


আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার! ২০১৮-র এটি প্রথম ‘মন কি বাত’। দু’দিন আগেই আমরা প্রচুর উৎসাহের সঙ্গে সাধারণতন্ত্রের উৎসব উদ্‌যাপন করেছি। ১০টি দেশের প্রধান এই সমারোহে উপস্থিত ছিলেন। ইতিহাসে এমনটা এই প্রথম ঘটল।

প্রিয় দেশবাসী, শ্রীমান প্রকাশ ত্রিপাঠী ‘নরেন্দ্র মোদী অ্যাপ’-এ একটি লম্বা চিঠি লিখেছেন এবং আমাকে বিশেষভাবে অনুরোধ করেছেন যেন তাঁর চিঠির বিষয়গুলি আমি ছুঁয়ে যাই। উনি লিখেছেন, পয়লা ফেব্রুয়ারি দিনটি মহাকাশ অভিযাত্রী কল্পনা চাওলার পুণ্যতিথি। কলম্বিয়া মহাকাশযান দুর্ঘটনায় তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন বটে, কিন্তু সেই সঙ্গে দুনিয়ার লক্ষ যুবককে প্রেরণা দিয়ে গেছেন। আমি প্রকাশ ভাইয়ের কাছে কৃতজ্ঞ যে তিনি তাঁর লম্বা চিঠিখানি শুরু করেছেন কল্পনা চাওলার বিদায়ের প্রসঙ্গ দিয়ে। কল্পনা চাওলা-কে আমরা যে এত অল্প বয়সে হারালাম, এটা যদিও সকলের জন্য খুবই দুঃখের কথা, কিন্তু নিজের জীবন দিয়ে তিনি তামাম বিশ্বের, বিশেষতঃ ভারতের কয়েক সহস্র নারীর কাছে এই সংবাদ পৌঁছে দিলেন যে, নারীশক্তির জন্য কোনও সীমারেখা নেই। ইচ্ছা আর দৃঢ় সংকল্প থাকলে, কিছু করে দেখাবার থাকলে, কোনও কিছুই অসম্ভব নয়। এটা দেখে খুব আনন্দ হয় যে, ভারতে আজ মহিলারা সর্বক্ষেত্রেই অত্যন্ত দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছেন এবং দেশের গৌরব বৃদ্ধি করছেন।

প্রাচীন কাল থেকে আমাদের দেশে মহিলাদের সম্মান, সমাজে তাঁদের স্থান এবং অংশগ্রহণ সারা দুনিয়াকে অবাক করেছে। ভারতীয় বিদূষী নারীদের দীর্ঘ এক পরম্পরা রয়েছে। বেদের যুগ থেকেই ভারতের বহু বিদূষী মহিলার অবদান রয়েছে। লোপামুদ্রা, গার্গী, মৈত্রেয়ী – কত না নাম তাঁদের। আজ আমরা ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’-এর কথা বলছি, কিন্তু কয়েক যুগ আগে আমাদের শাস্ত্রে, স্কন্দ পুরাণে বলা হয়েছে –

দশপুত্র সমাকন্যা, দশপুত্রাম প্রবর্ধয়ন্‌।

যৎ ফলং লভতেমর্ত্য, তৎ লভ্যং কন্যক্কৈকয়া।।

অর্থাৎ, একটি কন্যা দশটি পুত্রের সমান। দশটি পুত্রসন্তান থেকে যতটা পুণ্য লাভ হবে, একটি কন্যা সন্তান থেকেও ততখানি পুণ্যই মিলবে। এটি আমাদের সমাজে নারীর মহত্ত্ব নিরূপণ করে। আর সেইজন্যেই তো আমাদের সমাজে নারীকে শক্তির প্রতীক বলে মানা হয়েছে। এই নারীশক্তি সারা দেশকে, গোটা সমাজ এবং পরিবারকে একতার সূত্রে বাঁধে। বৈদিক যুগের বিদূষী লোপামুদ্রা, গার্গী বা মৈত্রেয়ীর বিদ্যাবত্তাই হোক, বা আক্কা মহাদেবী আর মীরা বাঈয়ের জ্ঞান, ভক্তি, অহল্যাবাঈ হোলকারের শাসনব্যবস্থা হোক, কিংবা রানী লক্ষ্মীবাঈয়ের বীরত্ব — নারীশক্তি আমাদের সর্বদাই প্রেরণা দিয়ে এসেছে। দেশের মান-সম্মান বাড়িয়ে এসেছে।

শ্রীমান প্রকাশ ত্রিপাঠী এরপর আরও বেশকিছু উদাহরণ দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, আমাদের সাহসী প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারামণের যুদ্ধবিমান ‘সুখোই-30’-র উড়ান তাঁকে প্রেরণা দেবে। বর্তিকা যোশীর নেতৃত্বে ভারতীয় নৌসেনার মহিলা ক্রু মেম্বররা INSV Tarini–তে যে বিশ্বপরিক্রমা করছেন, প্রকাশ তারও উল্লেখ করেছেন। তিন বাহাদুর মহিলা – ভাবনা কণ্ঠ, মোহনা সিং এবং অবনী চতুর্বেদী ফাইটার পাইলট হয়েছেন এবং ‘সুখোই-30’-এ প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। ক্ষমতা বাজপেয়ীর নেতৃত্বে all women crue এয়ার ইণ্ডিয়ার বোয়িং জেটে দিল্লি থেকে আমেরিকার সান ফ্রান্সিসকো হয়ে আবার দিল্লিতে ফিরে এলেন। এঁদের প্রত্যেকেই মহিলা। প্রকাশ, আপনি একদম ঠিক বলেছেন, আজ নারী শুধু যে প্রতিটি ক্ষেত্রে এগিয়ে চলেছে, তা-ই নয়, নেতৃত্বও দিচ্ছে। আজ এমন বেশ কিছু ক্ষেত্র আছে যেখানে সবার আগে আমাদের নারীশক্তি কিছু করে দেখাচ্ছেন। মাইল ফলক স্থাপন করছেন। কিছুদিন আগে মাননীয় রাষ্ট্রপতি মহোদয় এক নতুন উদ্যোগ নিয়েছেন।

মাননীয় রাষ্ট্রপতি সেইসব অসাধারণ মহিলাদের একটি দলের সঙ্গে দেখা করেন, যাঁরা নিজের নিজের ক্ষেত্রে সবার আগে কিছু করে দেখিয়েছেন। দেশে এইসব কীর্তিমান মহিলা – মার্চেন্ট নেভির প্রথম মহিলা ক্যাপ্টেন, প্যাসেঞ্জার ট্রেনের প্রথম মহিলা ড্রাইভার, প্রথম মহিলা দমকলকর্মী, প্রথম মহিলা বাস ড্রাইভার, অ্যাণ্টার্টিকা বিজয়ী প্রথম মহিলা, মহিলাদের মধ্যে যিনি প্রথম এভারেস্ট শিখরে পৌঁছান – এইরকম প্রতি ক্ষেত্রের ‘ফার্স্ট লেডি’রা। আমাদের এই নারীশক্তি সমাজের রক্ষণশীলতাকে ভেঙে এক অসামান্য কীর্তি অর্জন করেছে। তাঁরা দেখিয়ে দিয়েছেন যে কঠোর পরিশ্রম, নিষ্ঠা এবং দৃঢ় সংকল্পের শক্তিতে সব বাধাবিঘ্ন পেরিয়ে নতুন রাস্তা তৈরি করা যায়। সে এমনই এক পথ যা শুধু সমকালীন মানুষদেরই নয়, আগামী প্রজন্মকেও প্রেরণা যোগাবে। তাদের নতুন এক শক্তি, নতুন উৎসাহে পূর্ণ করে দেবে। এইসমস্ত কীর্তিমান মহিলা, first lady-দের বিষয়ে একটি পুস্তকও তৈরি হয়েছে, যাতে পুরো দেশ
তাঁদের বিষয়ে জানতে পারে, তাঁদের জীবন ও কাজ থেকে উৎসাহ পায়। এটি ‘নরেন্দ্র মোদী ওয়েবসাইট’-এও ই-বুক হিসেবে পাওয়া যাচ্ছে।

আজ দেশ ও সমাজে যত ইতিবাচক পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে, তাতে দেশের নারীশক্তির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। আজ যখন আমরা মহিলাদের ক্ষমতায়ন নিয়ে আলোচনা করছি, তখন আমি একটি রেলস্টেশনের উল্লেখ করতে চাই। একটি রেলস্টেশন এবং নারীর ক্ষমতায়ন — আপনারা হয়ত ভাবছেন এ-দুটির মধ্যে কী যোগাযোগ থাকতে পারে! মুম্বইয়ের মাটুঙ্গা স্টেশন হল ভারতের প্রথম রেলস্টেশন যেখানে সব কর্মচারীই মহিলা। সব বিভাগেই মহিলা কর্মী — কমার্শিয়াল ডিপার্টমেন্ট হোক, রেলওয়ে পুলিশ হোক, টিকিট চেকিং, অ্যানাউন্সিং, পয়েণ্ট পার্সন —চল্লিশেরও বেশি কর্মীর সকলেই মহিলা। এবার অনেকেই সাধারণতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজ দেখার পর ট্যুইটার বা অন্য কোনও সোস্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন যে, এবারের কুচকাওয়াজে মুখ্য বিষয় ছিল BSF Biker Contingent, যেখানে অংশগ্রহণকারীরা সকলেই মহিলা। তাঁদের এই সাহসিকতার প্রদর্শনী বিদেশ থেকে আসা অতিথিদেরও আশ্চর্য করেছে। নারীর ক্ষমতায়ন
এবং আত্মনির্ভরতার এ-ও এক রূপ। আজ আমাদের নারীশক্তি নেতৃত্ব দিচ্ছে, আত্মনির্ভর হয়ে উঠছে। আমার মনে পড়ে গেল, ছত্তিশগড়ে আমাদের আদিবাসী মহিলারাও এক নতুন উদাহরণ তুলে ধরেছেন। আদিবাসী মহিলাদের কথা বললে সকলের মনেই একটি পরিচিত ছবি ফুটে
ওঠে — তাতে জঙ্গল আছে, পাকদণ্ডী আছে, যার ওপর দিয়ে কাঠের বোঝা মাথায় নিয়ে চলেছেন মহিলারা। কিন্তু ছত্তিশগড়ের আমাদের এই আদিবাসী নারীরা দেশের সামনে এক নতুন ছবি তুলে ধরেছেন। ছত্তিশগড়ের মাওবাদী প্রভাবিত দান্তেওয়াড়া এলাকা, যেখানে হিংসা, অত্যাচার, বোমা, বন্দুক, পিস্তল নিয়ে মাওবাদীরা এক ভয়ানক বাতাবরণ তৈরি করে রেখেছে — এমনই এক
বিপজ্জনক জায়গাতেও আদিবাসী মহিলারা ই-রিক্সা চালিয়ে স্বনির্ভর হয়ে উঠছেন।
খুব অল্প সময়েই সেখানকার অনেক মহিলা এই প্রচেষ্টায় নিজেদের যুক্ত করেছেন। এর ফলে লাভ হচ্ছে তিনটি — একদিকে স্বরোজগার, যা তাঁদের স্বনির্ভর করছে এবং যার ফলে মাওবাদী প্রভাবিত অঞ্চলের চেনা ছবিও বদলে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে পরিবেশ-সংরক্ষণের কাজও জোরদার হচ্ছে। এখানে জেলা প্রশাসনেরও প্রশংসা করা দরকার। অনুদান পাওয়া থেকে প্রশিক্ষণ দেওয়া পর্যন্ত এই নারীশক্তির সাফল্যের পিছনে জেলা প্রশাসন এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে।

আমরা প্রায়শই শুনেছি যে লোকেরা বলেন কিছু বিষয় এমন আছে যে আমাদের অস্তিত্ব মুছে ফেলা যায় না। বিষয়টি কি? বিষয়টি হচ্ছে, flexibility transformation, যা অপ্রয়োজনীয় হয়ে পরেছে তাকে ত্যাগ করা। যা প্রয়োজনীয়, তার সংশোধন স্বীকার করা দরকার।
আত্ম-সংশোধনের নিরন্তর প্রচেষ্টা আমাদের সমাজের বৈশিষ্ট্য। Self correction ভারতীয় ঐতিহ্য। এটিই আমাদের সংস্কৃতি, যা আমরা পূর্বসূরিদের কাছ থেকে পেয়েছি। যে কোন চলমান সমাজের পরিচয় তার স্ব-সংশোধনকারী প্রক্রিয়া। সামাজিক কু-রীতি এবং কু-সংস্কারের বিরুদ্ধে শত শত বছর যাবৎ আমাদের দেশে ব্যক্তিগত এবং সামাজিক স্তরে ক্রমান্বয়ে সফল প্রয়াস চলেছে। এই কিছু দিন আগে বিহার রাজ্য একটি অভিনব প্রয়াস করেছে। রাজ্যের সামাজিক কু-রীতিগুলিকে সমূলে উৎপাটনের লক্ষ্যে বিশ্বের সব থেকে বড়, ১৩০০০ কিলোমিটাররও বেশি লম্বা মানব শৃঙ্খল বানানো হয়েছিল। এই অভিযানের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে বাল্যবিবাহ এবং পণ প্রথার মত সামাজিক কুপ্রথার বিরুদ্ধে সচেতন করা হয়। সমস্ত রাজ্য একসঙ্গে এইসব কু-প্রথার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার সংকল্প গ্রহণ করে। শিশু, বৃদ্ধ, উৎসাহে ভরপুর যুব সম্প্রদায়, মা, বোনেরা সকলে এই লড়াইয়ে নিজেদের যুক্ত করেছিলেন। পাটনার ঐতিহাসিক গান্ধী ময়দান থেকে শুরু করে এই মানবশৃঙ্খল রাজ্যের সীমা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। উন্নয়নের সুফল যাতে সমাজের সকল মানুষ ঠিকমতো উপভোগ করতে পারেন সেই জন্য সমাজকে এই সকল কুপ্রথা থেকে মুক্ত করা একান্ত প্রয়োজন। আসুন, আমরা সকলে মিলিত ভাবে সমাজ থেকে এই সকল কু-প্রথা শেষ করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই এবং এক New India – নূতন, শক্তিশালী, সমর্থ ভারত নির্মাণ করি। সমাজের কল্যাণে তাঁরা যে বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছেন, সেই কারণে আমি বিহারের সাধারণ মানুষ, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, সেখানকার প্রশাসন এবং মানব-শৃঙ্খলে অংশগ্রহণকারী সকলের প্রশংসা করছি।

আমার প্রিয় দেশবাসী, কর্ণাটকের মহীশূর থেকে শ্রীমান দর্শন ‘মাই গভ’-এ লিখেছেন যে, তাঁর পিতার চিকিৎসার ওষুধের জন্য মাসে ছয় হাজার টাকা খরচ হত। প্রধানমন্ত্রী জন-ঔষধী প্রকল্প বিষয়ে উনি কিছু জানতেন না। ‘জন ঔষধী’ কেন্দ্র সম্পর্কে বিশদে জানার পর তিনি সেখান থেকে ওষুধ কেনেন এবং তাতে প্রায় ৭৫ শতাংশ খরচ কমে গেছে। উনি আগ্রহ জানিয়েছেন যে, ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে আমি যেন এই বিষয়ে আলোচনা করি, যাতে অধিক সংখ্যক মানুষ বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত হন এবং লাভান্বিত হন। গত বেশ কিছুদিন যাবৎ অনেক মানুষ আমাকে এই বিষয়ে লিখছেন এবং বলছেন। আমি সোশ্যাল মিডিয়াতেও অনেক মানুষের ভিডিও দেখেছি, যাঁরা এই প্রকল্পে উপকৃত হয়েছেন। এই ধরনের খবর পেলে খুশি হই। গভীর সন্তুষ্টি পাওয়া যায়। আমার এটা খুব ভালো লেগেছে যে শ্রীযুক্ত দর্শনজী এটা ভেবেছেন। উনি যেমন উপকৃত হয়েছেন, অন্য আরও অনেকে যেন উপকৃত হন। এই প্রকল্পর উদ্দেশ্য হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবাকে affordable করা এবং সহজ, সরল জীবনযাপনকে উৎসাহ দেওয়া। জন-ঔষধী কেন্দ্রতে যে সব ঔষধ পাওয়া যায়, সেগুলির দাম বাজারে উপলব্ধ ব্র্যান্ডেড ওষুধের তুলনায় ৫০ শতাংশ থেকে ৯০ শতাংশ সস্তা। এর থেকে জনসাধারণের, বিশেষ করে প্রতিদিন ঔষধ সেবন করেন এরকম বয়স্ক নাগরিকদের আর্থিক সহায়তা হয়, অনেক সাশ্রয় হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দ্বারা নির্দিষ্ট standard–এর হিসাবে এই জন-ঔষধী কেন্দ্রে generic medicine বিক্রয় হয়। এই কারণেই উৎকৃষ্ট quality-র ওষুধ কম দামে পাওয়া যায়। সারা দেশে এখন পর্যন্ত তিন হাজারেরও বেশি ‘জন-ঔষধী কেন্দ্র’ স্থাপন করা হয়েছে। এতে কেবল সস্তায় ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে তা নয়, উপরন্তু নিজ-উদ্যমীদের জন্য রোজগারের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী ভারতীয় জন-ঔষধী কেন্দ্র এবং হাসপাতালের অমৃত স্টোরে সস্তায় ওষুধ পাওয়া যায়। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য একটাই – যাতে, দেশের দরিদ্র থেকে দরিদ্রতম ব্যক্তিকে quality এবং affordable স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়া যায়। যাতে সুস্থ এবং সমৃদ্ধ ভারত নির্মাণ করা যায়।

প্রিয় দেশবাসী, মহারাষ্ট্র থেকে শ্রীমান মঙ্গেশ ‘নরেন্দ্র মোদী মোবাইল অ্যাপ’-এ একটি
ছবি শেয়ার করেছেন। এই ছবিটা এমনই যে আমি তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ি। ঐ ছবিতে
এক নাতি তার দাদুর সঙ্গে ‘Clean Morna River’ স্বচ্ছতা অভিযানে অংশ নিয়েছে। আমি জানতে পারলাম যে, আকোলার নাগরিকরা স্বচ্ছ ভারত অভিযানের অঙ্গ হিসেবে মোরনা নদীকে পরিষ্কার করার জন্য স্বচ্ছতা অভিযানের আয়োজন করেছিল। মোরনা নদীতে আগে সারা বছর জল থাকত, কিন্তু এখন সেটি মরশুমী হয়ে গেছে। দুঃখের বিষয় যে, নদীটি পুরোপুরি জংলি ঘাস এবং কচুরিপানাতে ভরে গেছে। নদীতে এবং নদীর ধারে প্রচুর নোংরা ফেলা হচ্ছিল। একটি অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করে প্রথম ধাপে মকর সংক্রান্তির একদিন আগে অর্থাৎ ১৩-ই জানুয়ারি, ‘মিশন ক্লিয়ার মোরনা’ অভিযানে চার কিলোমিটার এলাকার ১৪-টি জায়গায় মোরনা নদীর দুই তীর পরিষ্কার করা হয়। ‘Mission Clean Morna’-র এই ভালো কাজে অকোলার ছয় হাজারের বেশি নাগরিক, শতাধিক এন-জি-ও, কলেজ, ছাত্র-ছাত্রী, শিশু, বৃদ্ধ, মা-বোনেরা এতে অংশ গ্রহণ করেছিল। ২০-শে জানুয়ারি, ২০১৮-তেও এই স্বচ্ছতা অভিযান চলেছে। মোরনা নদী পুরোপুরি পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত প্রতি শনিবার সকালে এই অভিযান চালানো হবে বলে আমাকে জানানো হয়েছে। এর থেকে বোঝা যায় যে মানুষ যদি কিছু করবে বলে কৃতসংকল্প হয়, তাহলে কোনও কিছুই অসম্ভব নয়। জন আন্দোলনের মাধ্যমে বড় বড় পরিবর্তন আনা সম্ভব। আকোলার জনগণকে, ওখানকার জেলা এবং করপোরেশন-এর প্রশাসনকে এবং এই জন আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সব নাগরিককে, আপনাদের এই প্রচেষ্টার জন্য আমি অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি, আপনাদের এই প্রচেষ্টা দেশের অন্যান্যদেরও উৎসাহিত করবে।

আমার প্রিয় দেশবাসী, ‘পদ্ম’ পুরস্কারের বিষয়ে আপনারাও নিশ্চয় আজকাল অনেক আলোচনা শুনছেন। খবরের কাগজে, টেলিভিশনেও এই বিষয়ে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষিত হচ্ছে। কিন্তু আপনি যদি একটু মনোযোগ দিয়ে দেখেন তো গর্বিত হবেন। গর্ব এই জন্য হবে যে, আমাদের মধ্যে কেমন ধরনের মহান ব্যক্তিরা রয়েছেন, আর এটাও গর্ব হওয়া স্বাভাবিক যে কোনও রকমের সুপারিশ ছাড়াই কোনও সামান্য ব্যক্তিও কীভাবে ওই উচ্চতায় পৌঁছে যায়! পরম্পরাগতভাবে প্রতিবছর ‘পদ্ম’ পুরস্কার দেওয়া হয়। কিন্তু গত তিন বছরে এই ব্যবস্থার মধ্যে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এখন যে কোনও নাগরিক যে কোনও ব্যক্তিকে মনোনীত করতে পারেন। অনলাইন হয়ে যাওয়ার ফলে পুরো ব্যবস্থার মধ্যে স্বচ্ছতা এসেছে। এই পুরস্কারের
নির্বাচন পদ্ধতিতে একপ্রকার আমূল পরিবর্তন এসেছে। আপনারাও নিশ্চয় লক্ষ করেছেন যে অনেক সাধারণ মানুষও ‘পদ্ম’ পুরস্কার পাচ্ছেন। এমন মানুষকেও ‘পদ্ম’ পুরষ্কার দেওয়া হচ্ছে, যাঁরা বড় বড় শহরে, টি.ভি.-তে, উৎসবে নজরে আসেন না। পুরষ্কার দেওয়ার জন্য এখন ব্যক্তির পরিচয় নয়, তাদের কাজকেই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। শ্রী অরবিন্দ গুপ্তাজী-র কথা আপনারা শুনেছেন? আপনারা আনন্দিত হবেন যে কানপুর আই-আই-টি’র ছাত্র অরবিন্দজী শিশুদের জন্য খেলনা বানাতে নিজের সারা জীবন ব্যয় করেছেন। বিজ্ঞানের প্রতি শিশুদের অনুসন্ধিৎসু করতে উনি গত চার দশক ধরে আবর্জনা থেকে খেলনা তৈরি করেন। শিশুরা যাতে অপ্রয়োজনীয় জিনিসকে বৈজ্ঞানিক ভাবে ব্যবহার করতে শেখে, তার জন্য সারা দেশে তিন হাজার বিদ্যালয়ে গিয়ে ১৮টি ভাষাতে তৈরি ফিল্ম দেখিয়ে তাদের উৎসাহিত করছেন। কী অদ্ভুত জীবন – কী অদ্ভুত উৎসর্গ! কর্ণাটকের সিতাবা জোদত্তির গল্পও এইরকমই আকর্ষক! তাঁকে ‘মহিলা ক্ষমতায়নের দেবী’ এমনি এমনি বলা হয় না, বিগত তিন দশক ধরে বেলাগাবীতে ইনি অগণিত মহিলাদের জীবনযাত্রা পরিবর্তনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। ইনি সাত বছর বয়সেই নিজেকে দেবদাসী রূপে সমর্পণ করেছিলেন। দেবদাসীদের কল্যাণের জন্য নিজের সমগ্র জীবন উৎসর্গ করেছেন। কেবল এতটুকু নয়, দলিত মহিলাদেরও কল্যাণের জন্য ওঁর অভূতপূর্ব অবদান রয়েছে। আপনি হয়তো মধ্যপ্রদেশের ভজ্জু শ্যামের নাম শুনেছেন, শ্রী ভজ্জু শ্যামের জন্ম একেবারেই দরিদ্র পরিবারে, এক আদিবাসী পরিবারে হয়েছিল । জীবনযাপনের জন্য উনি সাধারণ চাকরি করতেন কিন্তু ওঁর প্রথাগত আদিবাসী Painting তৈরি করার শখ ছিল। আজ এই শখের জন্য  উনি কেবল ভারতবর্ষে নয় সমগ্র পৃথিবীতে সম্মানিত হয়েছেন। Netharlands, Germany, England, Italy-র মত বিভিন্ন দেশে ওঁর Paintingপ্রদর্শিত হয়েছে। বিদেশে ভারতের নাম উজ্জ্বল করা ভজ্জু শ্যামজীর প্রতিভাকে স্বীকৃত দিয়ে তাঁকে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করা হয়েছে।

কেরলের আদিবাসী মহিলা লক্ষ্মী কুট্টীর কথা শুনলে আপনি অবাক হয়ে যাবেন।
লক্ষ্মী কুট্টী কল্লারের এক শিক্ষিকা, আর এখনও ঘন জঙ্গলে আদিবাসী এলাকাতে তালপাতা
দিয়ে তৈরি ঝুপড়িতে বসবাস করেন। উনি নিজের স্মরণশক্তির উপর নির্ভর করে পাঁচশ’ ভেষজ
ওষুধ তৈরি করেছেন। শেকড়-বাকড় দিয়ে ওষুধ বানিয়েছেন। সাপ কামড়ানোর পর চিকিৎসার করার জন্য ওষুধ তৈরিতে সাফল্য অর্জন করেছেন। লক্ষ্মীজী ভেষজ ওষুধ তৈরির জ্ঞানের মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে সমাজের সেবা করে আসছেন। এই অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে খুঁজে সমাজে তাঁর অবদানের জন্য, তাঁকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়েছে। আমার আজ আরও একজনের নামও বলতে ইচ্ছে হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের ৭৫ বছরের সুভাষিনী মিস্ত্রী। উনিও পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। সুভাষিনী মিস্ত্রী এরকম এক মহিলা যিনি হাসপাতাল তৈরি করতে অন্যের ঘরে বাসন মেজেছেন, সব্জী বিক্রি করেছেন। ওঁর যখন ২৩ বছর বয়স তখন বিনা চিকিৎসায় ওঁর স্বামী মারা যান এবং এই ঘটনাই ওঁকে গরীবদের জন্য হাসপাতাল তৈরি করতে উৎসাহ জুগিয়েছে। আজ ওঁর কঠোর পরিশ্রমে তৈরি হাসপাতালে হাজার হাজার গরীবের বিনা পয়সায় চিকিৎসা করা হয়। আমার পুরো বিশ্বাস, আমাদের এই বহুরত্ন বসুন্ধরায় এরকম অনেক মহান নর-নারী আছেন যাঁদের কেউ জানে না, চেনে না। এ রকম মানুষদের খুঁজে না বের করলে সমাজেরও ক্ষতি হয়ে যায়। পদ্ম-পুরষ্কার হলো একটি মাধ্যম, কিন্তু আমি দেশবাসীকে বলবো আমাদের আশেপাশে যাঁরা সমাজের জন্য  বাঁচেন, সমাজের জন্য যারা মাথা ঘামান, সমাজের কোনো না কোনো বিশেষ কাজে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন, এরকম লক্ষাধিক মানুষ আছেন। কোনো না কোনো সময় এঁদের সমাজের মধ্যে নিয়ে আসা উচিৎ। এঁরা মান সম্মানের জন্য কাজ করেন না কিন্তু এঁদের কাজে আমরা অনুপ্রাণিত হই। স্কুল বা কলেজে ডেকে এঁদের অভিজ্ঞতার কথা শোনা দরকার। পুরস্কার প্রদানের আগে, সামাজিক স্তরেও এই বিষয়ে প্রচেষ্টা থাকা উচিত।

আমার প্রিয় দেশবাসী, প্রত্যেক বছর ৯-ই জানুয়ারী আমরা ‘প্রবাসী ভারতীয় দিবস’ পালন করি। এই ৯ই জানুয়ারীতে পূজনীয় মহাত্মা গান্ধী দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ভারতে ফিরে আসেন।  এই দিন আমরা ভারত এবং পৃথিবীর অন্যান্য প্রান্তে বসবাসকারী ভারতীয়দের মধ্যে যে অটুট বন্ধন রয়েছে তার আনন্দ উপলব্ধি করি। এবছর ‘প্রবাসী ভারতীয় দিবস’-এ আমরা এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলাম, যেখানে বিশ্বের নানা প্রান্তে থাকা ভারতীয় বংশোদ্ভূত সমস্ত সাংসদ এবং মেয়রদের আমন্ত্রণ করা হয়েছিল। আপনারা জেনে আনন্দিত হবেন, এই অনুষ্ঠানে Malaysia, New Zealand, Switzerland, Portugal, Mauritius, Fiji, Tanzania, Kenya, Canada, Britain, Surinam, দক্ষিণ আফ্রিকা, America এবং অন্যান্য অনেক দেশ থেকে যেখানকার মেয়র বা সাংসদ ভারতীয় বংশোদ্ভূত, তাঁরা সবাই অংশগ্রহণ করেছিলেন।
আমি খুশি হয়েছি, বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই সব লোকেরা ওই সব দেশের সেবা তো করছেনই, সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা ভারতের সাথেও মজবুত সম্বন্ধ বানিয়ে রেখেছেন। এবার ইউরোপীয় সঙ্ঘ — ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন আমাকে ক্যলেন্ডার পাঠিয়েছে, যেখানে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী ভারতীয়দের নানান ক্ষেত্রে যোগদানের একটি সুন্দর বর্ণনা রয়েছে। আমাদের ভারতীয় বংশোদ্ভূত লোক যারা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রয়েছেন, তাঁরা কেউ Cyber Security-তে কাজ করছেন, তো কেউ আয়ুর্বেদ নিয়ে নিজেকে সমর্পিত করেছেন, আবার কেউ সঙ্গীতের দ্বারা, আবার কেউ কবিতার মাধ্যমে সমাজকে মোহিত করেছেন। কেউ জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে গবেষণা করছেন, তো কেউ ভারতীয় গ্রন্থ নিয়ে কাজ করছেন। কেউ ট্রাক চালিয়ে গুরুদোয়ারা গড়েছেন তো কেউ মসজিদ তৈরি করেছেন।  অর্থাৎ ওখানেও আমাদের লোক রয়েছেন, ওঁরা কিছু না কিছু ভাবে ওই দেশের মাটিকে সুসজ্জিত করেছেন। আমি ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের এই অতুলনীয় কাজের জন্য ধন্যবাদ দিচ্ছি, ভারতীয় বংশোদ্ভূত মানুষদের স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য, আর ওঁদের মাধ্যমে পৃথিবী জুড়ে লোকেদের মধ্যে এটা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য।

৩০শে জানুয়ারী পূজনীয় বাপুর পুণ্য-তিথি, যিনি আমাদের সবাইকে এক নতুন রাস্তা দেখিয়েছেন। ওই দিন ‘শহীদ দিবস’ পালন করা হয়। ওই দিন আমাদের দেশের রক্ষার জন্য নিজেদের প্রাণ বলিদান দেওয়া শহীদদের প্রতি ১১-টার সময় শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হয়। শান্তি আর অহিংসার রাস্তা হলো বাপুর রাস্তা। ভারত হোক বা বিশ্ব, ব্যক্তি হোক বা পরিবার বা সমাজ, পূজ্য বাপু যেসব আদর্শকে নিয়ে বেঁচেছিলেন, পূজ্য বাপু যে বাণী আমাদের দিয়ে গেছেন, তা আজও অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। এগুলো কেবলমাত্র অহেতুক সিদ্ধান্ত ছিল না, বর্তমান সময়েও আমরা প্রতিটি ক্ষেত্রে  দেখতে পাই বাপুর কথা কতটা সঠিক ছিল। যদি আমরা সঙ্কল্প করি যে বাপুর দেখানো পথে চলব, যতটা পারি, চলি – এর থেকে বড় শ্রদ্ধাঞ্জলি আর কি হতে পারে?

আমার প্রিয় দেশবাসী, আপনাদের সবাইকে ২০১৮-র শুভকামনা জানিয়ে আমার বক্তব্য শেষ করছি। অনেক অনেক ধন্যবাদ!

নমস্কার।