Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

জাতির উদ্দেশে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর‘মন কি বাত’ (ত্রয়োবিংশ পর্ব) অনুষ্ঠানের বাংলা অনুবাদ


আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার!

কাল, ২৯-শেঅগাস্ট হকির জাদুকর ধ্যানচাঁদের জন্মদিন। এই দিনটি সারা দেশে ‘জাতীয় ক্রীড়া দিবস’হিসেবে পালিত হয়। আমি ধ্যানচাঁদজীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি আর একই সঙ্গে আপনাদেরসবাইকে তাঁর অবদানের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাইছি। তিনি ১৯২৮, ১৯৩২ এবং ১৯৩৬ সালে ভারতেরহয়ে অলিম্পিক হকিতে স্বর্ণপদক জয়ের ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।আমরা সবাই ক্রিকেট-প্রেমী। ব্র্যাডম্যানের নাম জানি। তিনি ধ্যানচাঁদ সম্পর্কেবলেছিলেন, ‘ He scores goals like runs ’। ধ্যানচাঁদজী খেলোয়াড়সুলভ মনোবৃত্তি এবং দেশভক্তির একজীবন্ত মশাল-স্বরূপ ছিলেন। এক বার কলকাতায় এক ম্যাচের সময়, বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়ধ্যানচাঁদজীর মাথায় হকি স্টিক দিয়ে আঘাত করে।

সেসময় ম্যাচ শেষ হতে আর মাত্র ১০মিনিট সময় বাকি। ধ্যানচাঁদজী ওই ১০ মিনিটে তিনটি গোল করেন আর বলেন, আমি আঘাতেরবদলা নিলাম – গোল করে।

আমার প্রিয়দেশবাসী, যখনই ‘মন কি বাত’-এর সময় আসে, তখনই মাই-গভ পোর্টালে বা নরেন্দ্র মোদীঅ্যাপে অনেক অনেক পরামর্শ আসে। নানা রকমের মতামতে তা পরিপূর্ণ থাকে। কিন্তু এবারআমি দেখলাম যে বেশিরভাগ মানুষ আগ্রহ প্রকাশ করেছেন রিও অলিম্পিকস্‌ সম্পর্কে আমারমতামত জানার জন্য। সাধারণ মানুষের রিও অলিম্পিকের প্রতি এই ভালোবাসা, এই সচেতনতাএবং ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই বিষয়ে কিছু বলার জন্য দাবী করা – এসব আমার কাছেঅত্যন্ত উৎসাহব্যঞ্জক মনে হয়েছে। ক্রিকেট ছাড়া অন্যান্য খেলার প্রতিও ভারতবাসীর এতভালোবাসা, এত সচেতনতা, এত জ্ঞান রয়েছে – এটা আমার নিজের কাছে অত্যন্ত প্রেরণাদায়ক।শ্রীমান অজিত সিং ‘নরেন্দ্র মোদী অ্যাপ’-এ লিখেছেন, দয়া করে এবার ‘মন কি বাত’-এমেয়েদের শিক্ষা এবং খেলাধূলায় তাঁদের অংশগ্রহণের বিষয়ে অবশ্যই বলবেন। কারণ রিওঅলিম্পিক্‌সে পদক জয় করে তাঁরা দেশকে গৌরবান্বিত করেছেন। শ্রীমান শচীন লিখেছেনআপনাকে অনুরোধ, এবার ‘মন কি বাত’-এ সিন্ধু, সাক্ষী আর দীপা কর্মকারের কথা অবশ্যইউল্লেখ করবেন। আমরা যা পদক পেয়েছি, তা এনে দিয়েছে মেয়েরাই। আমাদের মেয়েরা আরওএকবার প্রমাণ করে দিল যে তাঁরা কোনওভাবে কারোর চেয়ে কম নয়। এঁদের মধ্যে একজন উত্তরভারতের তো আর একজন দক্ষিণ ভারতের। একজন পূর্ব ভারতের, তো আর একজন ভারতের অন্য কোনঅংশের। মনে হচ্ছে যেন ভারতবর্ষের নাম উজ্জ্বল করার ভার সারা দেশের মেয়েরাই তাঁদেরকাঁধে তুলে নিয়েছেন।

‘মাই-গভ’পোর্টালে শিখা ঠাকুর লিখেছেন, আমরা অলিম্পিক্‌সে আরও ভাল ফল করতে পারতাম। তিনিলিখেছেন, শ্রদ্ধেয় মোদী স্যার, সব থেকে আগে রিওতে দুটি পদক জয়ের জন্য আপনাকেধন্যবাদ জানাই। কিন্তু এইসঙ্গে আমি এবিষয়েও আপনার মনোযোগ আকর্ষণ করতে চাই – আমাদেরঅন্যান্য প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের মান কি ভাল ছিল? এর উত্তর হল – ‘না’। খেলাধুলোরজগতে আমাদের এখনও অনেক পথ এগোতে হবে। আমাদের মা-বাবারা আজও পড়াশোনা এবংশিক্ষাগ্রহণের ওপরই জোর দেন। সমাজে এখনও মনে করা হয়, খেলাধুলো করা মানে সময় নষ্টকরা। এই ধারণা আমাদের বদলানো প্রয়োজন। সমাজকে এই বিষয়ে অনুপ্রেরণা দিতে হবে। আর এইকাজ আপনি ছাড়া আর কেউ ভাল ভাবে করতে পারবে না।

এরকমই শ্রীমানসত্যপ্রকাশ মেহরা ‘নরেন্দ্র মোদী অ্যাপ’-এ লিখেছেন, ‘মন কি বাত’-এ আমাদের অতিরিক্তশিক্ষাগত কার্যক্রমের ওপর জোর দেওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে শিশু ও যুবক-যুবতীদেরখেলাধূলার বিষয়ে। এই একই রকম ভাব প্রকাশ করেছেন হাজারও মানুষ। এটা তো অস্বীকারকরার কোনও উপায় নেই যে আমরা আশানুরূপ ফল প্রদর্শন করতে পারিনি। কিছু ক্ষেত্রে তোএমনও হয়েছে যে আমাদের খেলোয়াড়রা স্বদেশে যে মানে পৌঁছেছিলেন, এখানে খেলাধূলারক্ষেত্রে যে পারঙ্গমতা দেখিয়েছেন, ওখানে গিয়ে সেই মান পর্যন্তও পৌঁছতে পারেন নি।আর পদক তালিকায় আমরা তো শুধুমাত্র দুটি পদকের অধিকারী হয়েছি। কিন্তু এটাও সত্যি যেপদক না পেলেও যদি আমরা ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করি, তো দেখব, বেশ কিছু বিষয়ে ভারতেরখেলোয়াড়রা প্রথমবার অত্যন্ত পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। দেখুন, শ্যুটিং-এ আমাদের অভিনববিন্দ্রা চতুর্থ স্থান অধিকার করেছেন এবং খুব অল্প ব্যবধানের জন্য পদক তাঁরহাতছাড়া হয়ে গেছে। জিমন্যাস্টিক্‌সে দীপা কর্মকারও অত্যন্ত ভালো ক্রীড়া প্রদর্শনকরেছেন এবং চতুর্থ স্থান অধিকার করেছেন। খুব কম ব্যবধানে পদক তাঁর হাতছাড়া হয়।কিন্তু একথা আমরা কীভাবে ভুলব যে তিনি জিমন্যাস্টিক্‌সে প্রথম ভারতীয় মহিলা যিনিঅলিম্পিকসের জন্য এবং অলিম্পিক্সের ফাইনাল পর্বের জন্য যোগ্যতা অর্জন করেছেন।মোটামুটি এরকমই ঘটনা ঘটেছে সানিয়া মির্জা এবং রোহন বোপান্না জুটির ক্ষেত্রেও।অ্যাথলেটিক্‌সে এবার আমরা ভাল ফল প্রদর্শন করেছি। পি.টি.ঊষার পর ৩২ বছর বাদে ললিতাবাবর ট্র্যাক অ্যাণ্ড ফিল্ড ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেন। আপনারা জেনে খুশিহবেন যে ৩৬ বছর বাদে মহিলা হকি টিম অলিম্পিক্‌সে অংশগ্রহণ করেছে। গত ৩৬ বছরে এইপ্রথম পুরুষদের হকি টিম অলিম্পিক্‌সে নক্‌ আউট স্টেজ পর্যন্ত পৌঁছতে সক্ষম হয়েছে।আমাদের হকি দল অত্যন্ত পারদর্শী, আর একটা মজার কথা এই যে স্বর্ণপদক জয়ীআর্জেন্টিনা দল গোটা টুর্ণামেন্টে একটিই ম্যাচ হেরেছে এবং সেটা কাদের কাছে? ভারতেরখেলোয়াড়দের কাছে। আগামী দিনে আমাদের নিশ্চিতভাবে আরও ভাল ফল হবে।

বক্সিং-ওবিকাশ কৃষ্ণ যাদব কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছেছেন। কিন্তু ব্রোঞ্জ পদক লাভ করতেপারেন নি। বেশ কিছু খেলোয়াড়, যেমন বলা যায় অদিতি অশোক, দত্তু ভোকনল, অতনু দাস এমনআরও অনেকে আছেন, যাঁরা বেশ ভাল ক্রীড়া প্রদর্শন করেছেন। কিন্তু আমার প্রিয়দেশবাসী, আমাদের আরও অনেক কিছু করতে হবে। যা আমরা এবার করে এসেছি তাই যদি করতেথাকি, তাহলে হয়ত আমরা আবার নিরাশ হব। আমি একটি কমিটি তৈরির কথা ঘোষণা করেছি।বিশ্বের কোথায় কীভাবে খেলাধূলার অনুশীলন হচ্ছে তা নিয়ে ঘরোয়া ভাবে আমরা গভীরে গিয়েপর্যালোচনা করব। আমরা কীভাবে আরও ভাল করতে পারি, তার এক রোডম্যাপ তৈরি করব। ২০২০,২০২৪, ২০২৮ সাল পর্যন্ত ফলাফলের ভাবনা নিয়ে আমরা পরিকল্পনা তৈরি করেছি। আমি রাজ্যসরকারদেরও অনুরোধ করব, যে আপনারাও এরকম কমিটি তৈরি করুন এবং দেখুন খেলার জগতে আমরাকী করতে পারি। আমাদের এক এক রাজ্য নিজেদের একটা-দুটো খেলা পছন্দ করে সেই খেলারজগতে কতটা ক্ষমতা দেখাতে পারেন তার চেষ্টা করুন।

আমি খেলাধূলারজগতের সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলিকেও অনুরোধ করব যে, আপনারা নিরপেক্ষ ভাবে ‘ব্রেইনস্টর্মিং’ করুন। আর দেশের প্রতিটি নাগরিকের কাছে আমার অনুরোধ যে খেলাধূলারব্যাপারে যাঁরই আগ্রহ আছে, তিনি আমাকে ‘নরেন্দ্র মোদী অ্যাপ’-এ পরামর্শ পাঠান।সরকারকে লিখুন, প্রতিষ্ঠানগুলি পর্যালোচনা করে নিজেদের সিদ্ধান্ত সরকারকে জানাক।রাজ্যসরকারগুলি নিজেরা পর্যালোচনা করে তাদের পরামর্শ পাঠাক। আমাদের পুরোদস্তুরনিজেদের প্রস্তুত করতে হবে আর আমার বিশ্বাস যে আমরা ১২৫ কোটি দেশবাসী, ৬৫ শতাংশযুবপ্রজন্ম, খেলার জগতে অত্যন্ত ভালো ফল লাভ করব – এই লক্ষে প্রতিজ্ঞা নিয়ে নিশ্চিতভাবেএগিয়ে যেতে হবে।

আমার প্রিয়দেশবাসী, ৫-ই সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবস। আমি কয়েক বছর ধরে শিক্ষকদিবসে ছাত্রদেরসঙ্গে কিছু সময় কাটাই এবং এক ছাত্রের মত করেই সময়টা কাটাই। এই সব ছোট ছোট ছেলেদেরকাছ থেকে অনেক কিছু শিখি। আমার কাছে ৫-ই সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবস যেমন, তেমনইশিক্ষাদিবসও বটে। কিন্তু এবার আমাকে G-20summit –এ যেতে হচ্ছে। তাই আমার ইচ্ছে হচ্ছে আজ ‘মন কিবাত’-এ আমি আমার মনের এই অনুভূতিটুকু প্রকাশ করি।

জীবনে মা-রস্থান যতটা, ততটাই শিক্ষকের স্থান। এমন শিক্ষকও আমি দেখেছি যাঁরা তাঁদের শিষ্যদের জন্য, তাঁদের ছাত্র-ছাত্রীদেরজন্য নিজের জীবন বিলিয়ে দেন। এই কদিন রিও অলিম্পিক্‌সের পর, পুল্লেলা গোপীচাঁদেরকথা বার বার আলোচনা হচ্ছে। উনি একজন খেলোয়াড় ঠিকই, কিন্তু উনি কত ভাল প্রশিক্ষকতার প্রমাণ আমরা পেয়েছি। আমি আজ গোপীচাঁদকে এক খেলোয়াড়-এর থেকেও বেশি এক উত্তমপ্রশিক্ষক হিসাবে দেখছি। আর শিক্ষক দিবসে পুল্লেলা গোপীচাঁদকে, তাঁর সাধনা, খেলারপ্রতি তাঁর আত্মদান আর তাঁর শিষ্যের সফলতায় তাঁর নিজস্ব পদ্ধতিতে আনন্দ পাওয়াকেসম্মান জানাই। আমাদের সবার জীবনে শিক্ষকের ভূমিকা সবসময়ই আমরা অনুভব করি। ৫-ইসেপ্টেম্বর, ভারতের প্রাক্তণ রাষ্ট্রপতি ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ-জীর জন্মদিন আরসারা দেশ এই দিনটি ‘শিক্ষক দিবস’ হিসাবে পালন করে। তিনি জীবনে যেখানেই পৌঁছন নাকেন, নিজে সবসময় শিক্ষক হিসাবে দিন কাটানোর চেষ্টা করতেন। শুধু তাই নয়, তিনি সবসময়বলতেন, “ভাল শিক্ষক সেই হয়, যার ভেতরের ছাত্রসত্ত্বা কখনও হারিয়ে না যায়।”রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরেও শিক্ষক হিসাবে দিন কাটানো, নিজের মধ্যের ছাত্রসত্ত্বাকেবাঁচিয়ে রাখা, এই অদ্ভূত জীবনযাপন করে দেখিয়েছেন ড. রাধাকৃষ্ণণজী।

আমি কখনও কখনওভাবি যে আমার তো আমার শিক্ষকের অনেক কথা মনে আছে। কারণ আমাদের ছোট্ট গ্রামে উনিইছিলেন আমাদের আদর্শ। আমি আজ আনন্দের সঙ্গে বলতে পারি যে আমার এক শিক্ষক, যাঁর এখনপ্রায় নব্বই বছর বয়স হয়ে গেছে, আজও প্রতি মাসে তাঁর নিজের হাতে লেখা চিঠি আসে আমারকাছে। সারা মাস ধরে তিনি যে সমস্ত বই পড়েন, তার উল্লেখ, সেখান থেকে উদ্ধৃতি থাকেসে চিঠিতে। সারা মাস ধরে আমি কী করেছি, তাঁর দৃষ্টিতে তা ঠিক কি বেঠিক তারও উল্লেখথাকে। যেন আজও তিনি শ্রেণিকক্ষে আমাকে পড়াচ্ছেন এমনই মনে হয়। তিনি আজও আমাকে একরকমদূর-প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। আর নব্বই বছর বয়সে তাঁর হাতের লেখা দেখে অবাক হয়ে যাইযে এত বয়সেও এত সুন্দর হস্তাক্ষর কীভাবে হয়! আমার নিজের হাতের লেখা অত্যন্ত খারাপ।আর তাই যখনই আমি কারোর সুন্দর হস্তাক্ষর দেখি, আমার মন ভালোলাগায় ভরে ওঠে। আমার যেঅনুভূতি মনে হয় আপনাদেরও সেই অনুভূতি হবে। আপনার শিক্ষকের শিক্ষায় আপনার জীবনে যাকিছু ভাল হয়েছে তা যদি সারা বিশ্বকে জানান, তাহলে শিক্ষকদের প্রতি ব্যবহারেপরিবর্তন আসবে, শিক্ষকদের গৌরব বাড়বে আর সমাজে আমাদের শিক্ষকদের গৌরবান্বিত করাআমাদের সবার দায়িত্ব। আপনাদের শিক্ষকদের সঙ্গে ফটো থাকলে, আপনাদের শিক্ষকদের সঙ্গেকোনও ভাল ঘটনা ঘটে থাকলে, আপনাদের শিক্ষকদের পাঠানো কোনও বার্তা থাকলে অবশ্যইআপনারা ‘নরেন্দ্র মোদী অ্যাপ’-এ তা সবার সঙ্গে ভাগ করে নিন। দেখুন, দেশে শিক্ষকদেরঅবদান শিক্ষার্থীদের দৃষ্টিভঙ্গী থেকে দেখা অত্যন্ত মূল্যবান।

আমার প্রিয়দেশবাসী, কিছুদিন পরেই গণেশ উৎসব পালিত হবে। ভগবান গণেশ সকল বিঘ্ন দূর করেন আরআমরা সকলেই চাই আমাদের দেশ, সমাজ, পরিবার, সকল ব্যক্তি এবং তাঁদের জীবন নির্বিঘ্নথাকুক। আমরা যখনই গণেশ উৎসবের কথা বলি, তখন লোকমান্য তিলকের নাম স্মরণে আসা খুবইস্বাভাবিক। লোকমান্য তিলক-ই গণেশ উৎসবকে সর্বজনীন রূপ প্রদান করেছিলেন। সর্বজনীনগণেশ উৎসবের মাধ্যমে তিনি এই ধর্মীয় উৎসবকে রাষ্ট্রিয় চেতনার উৎসবে পরিণতকরেছিলেন, সমাজ সংস্কারের উৎসব করে তুলেছিলেন। সর্বজনীন গণেশ উৎসবের মাধ্যমে সমাজজীবনকে প্রভাবিত করে এমন সকল বিষয়ের আলোচনা হওয়া উচিত যাতে এই সময়ে আয়োজিতঅনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে সমাজ নতুন শক্তিতে, নতুন বলে বলীয়ান হয়ে ওঠে। তবে একইসঙ্গে লোকমান্য তিলক যে মন্ত্রদিয়েছিলেন – স্বরাজ আমাদের জন্মসিদ্ধ অধিকার– সেটাই হোক সব আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।আজকাল তো কেবলমাত্র মহারাষ্ট্রই নয়, দেশের সর্বত্র গণেশ উৎসব পালিত হয়। বিশেষ করেযুবকরা এই উৎসব পালনের জন্য উৎসাহের সঙ্গে প্রস্তুতি শুরু করেন। কিছু মানুষতো এখনওপর্যন্ত লোকমান্য তিলক যে ভাবনা নিয়ে এই উৎসব শুরু করেছিলেন তা অনুসরণ করতে সচেষ্টথাকেন। বিভিন্ন বিষয়ের উপর আলোচনা সভা, রচনা প্রতিযোগিতা, আল্পনা প্রতিযোগিতারআয়োজন করা হয়। প্রতিমার শোভাযাত্রায় আমাদের সমাজকে প্রভাবিত করে এমন সব বিষয়গুলিকেসুন্দর ভাবে উপস্থাপিত করা হয়। এই সর্বজনীন গণেশ উৎসবে একপ্রকার লোকশিক্ষার প্রচারঅভিযান চালানো হয়। লোকমান্য তিলক ‘স্বরাজ আমাদের জন্মসিদ্ধ অধিকার’ আমাদের এইপ্রেরণাদায়ক মন্ত্রটি দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন আমরা স্বাধীন ভারতে বসবাস করি। এইসর্বজনীন গনেশ উৎসবে এখন আমরা বলব, সু-রাজ আমাদের অধিকার। আমরা সু-রাজের পথে এগিয়েযাবো, সু-রাজ হবে আমদের মূল চাহিদা। এই মন্ত্র-কে সঙ্গে নিয়ে আমরা কি এগিয়ে যেতেপারি না? আসুন, আমি আপনাদের আহ্বান জানাচ্ছি। একথা সত্যি, উৎসব সমাজের শক্তি। উৎসবব্যক্তি এবং সমাজে নতুন প্রাণ সঞ্চার করে। উৎসব বিনা আমাদের জীবন অসম্ভব। কিন্তুসময়ের দাবী অনুযায়ী তার মধ্যে পরিবর্তন আনতে হবে। এবার আমাকে অনেকেই বিশেষ করেগণেশ উৎসব এবং দুর্গাপুজা নিয়ে অনেক কিছু লিখেছেন। তাঁরা বিশেষ করে পরিবেশ বিষয়েখুব চিন্তিত। শঙ্কর নারায়ণ প্রশান্ত নামে এক ব্যক্তি আমাকে বলেছেন- “মোদীজি, আপনিমন কি বাত্‌ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সবাইকে বোঝান যে তারা যেন প্লাষ্টার অফ্‌ প্যারিসদিয়ে নির্মিত গণেশ মূর্তি ব্যবহার না করে গ্রামের পুষ্করিণীর মাটি দিয়ে তৈরি গণেশমূর্তি ব্যবহার করে”। প্লাষ্টার অফ্‌ প্যারিস দিয়ে তৈরি প্রতিমা পরিবেশের অনুকূলনয়। শঙ্কর নারায়ণ ছাড়া আরও অনেকে এ বিষয়ে আমাকে লিখেছেন। আমিও আপনাদের সকলকেঅনুরোধ করছি আমরা কি গণেশ বা দুর্গা মূর্তি নির্মাণে মাটি ব্যবহার করতে পারি না? আমাদেরসেই পুরনো ঐতিহ্য কি ফিরিয়ে আনা যায় না? পরিবেশের সুরক্ষা, নদী এবং পুষ্করিণীসুরক্ষা এবং এর ফলে দূষণ থেকে জলে থাকা ছোট ছোট জীবের সুরক্ষা তো ঈশ্বরের সেবারইনামান্তর। ভগবান গণেশ – বিঘ্নহারী। তাই আমরা এমন ধরণের মূর্তি তৈরি করব না যাবিঘ্ন সৃষ্টি করে। আমি জানি না আপনারা আমার এই কথাগুলি কীভাবে নেবেন। কিন্তুকেবলমাত্র আমি একাই একথা বলছি না, আরও অনেকেই বলছেন। পুনের এক মৃৎশিল্পী শ্রীমানঅভিজিৎ ধোড়ফলে, কোলাপুরের একটি সংস্থা নিসর্গ মিত্র, বিজ্ঞানপ্রবোধিনী, বিদর্ভঅঞ্চলের নিসর্গ কাট্টা, পুনের জ্ঞানপ্রবোধিনী এবং মুম্বইয়ের গিরগাওচা রাজা প্রভৃতিঅনেক সংস্থা এবং ব্যক্তি মাটির নির্মিত গণেশ মূর্তি নির্মাণে অনেক পরিশ্রম করছেনএবং প্রচার চালাচ্ছেন। পরিবেশ-বান্ধব গণেশ উৎসব – এটাও তো একটি সমাজ সেবা।দুর্গাপূজার এখনও কিছু সময় বাকি আছে। এখনই আমাদের স্থির করতে হবে যে আমাদের ওইসবপুরনো পরিবার – যারা মূর্তি বানাতেন, তাঁরা যদি পুষ্করিণীর বা নদীর থেকে আনা মাটিরমূর্তি বানান তাহলে তাঁরা উপার্জনের সুযোগ পাবেন। আর উৎসবের পরে সেগুলি আবার উৎসেচলে যাবে এবং পরিবেশও রক্ষা পাবে। আমি আপনাদের সবাইকে গণেশ চতুর্থীর অনেক অনেকশুভেচ্ছা জানাছি।

আমার প্রিয়দেশবাসী। ভারতরত্ন মাদার টেরেসা-কে আগামী ৪ঠা সেপ্টেম্বর ‘সন্ত’ উপাধিতে ভূষিত করাহবে। মাদার টেরেসা তাঁর পুরো জীবনকাল ভারতের গরীব মানুষের সেবায় নিয়োজিত করেছিলেন।ওঁর জন্ম হয়েছিল আলবেনিয়ায়। ইংরাজি ওঁর ভাষা ছিল না। কিন্তু উনি তাঁর জীবন ধারায়পরিবর্তন এনেছিলেন। নিজেকে গরীবের সেবায় উপযুক্ত করে তোলার জন্য অনেক প্রয়াস করেছেন।এই মাদার টেরেসার ‘সন্ত’ উপাধি পাওয়ায় সকল ভারতবাসীর গর্বিত হওয়া খুবই স্বাভাবিক।৪-ঠা সেপ্টেম্বর যে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে, তাতে অংশগ্রহণের জন্য একশো পঁচিশকোটি ভারতবাসী এবং ভারত সরকারের তরফে আমাদের বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের নেতৃত্বেআধিকারিকদের এক প্রতিনিধি দল সেখানে উপস্থিত থাকবেন। সন্ত, ঋষি, মুনি এবংমহাপুরুষদের কাছ থেকে আমরা সব সময় কিছু শিখতে পারি। আমি আশা করি আমরা নতুন কিছুপাবো, শিখতে থাকবো এবং ভালো কিছু করব।

আমার প্রিয় দেশবাসী। উন্নয়ন যখন জন আন্দোলনের রূপ নেয় তখনএক বিরাট পরিবর্তন এসে যায়। জনশক্তিকে ঈশ্বরের এক রূপ হিসেবে মানা হয়। বিগত দিনেভারত সরকার পাঁচটি রাজ্যসরকারের সঙ্গে সংযুক্ত ভাবে স্বচ্ছ গঙ্গার জন্য গঙ্গাসাফাই অভিযানে সাধারণ লোককে যুক্ত করার এক সফল প্রচেষ্টা করেছে। এ মাসের ২০ তারিখেএলাহাবাদ গঙ্গার তীরবর্তী গ্রামগুলির পুরুষ ও মহিলা প্রধানদের আমন্ত্রন জানানো হয়েছিল।এলাহাবাদে উপস্থিত গ্রামপ্রধানরা মা-গঙ্গাকে সাক্ষী রেখে শপথ নিয়েছেন তাঁরা নিজনিজ গ্রামে উন্মুক্ত স্থানে শৌচকার্য করার প্রচলিত অভ্যাস এখনই বন্ধ করাবেন,শৌচালয় বানানোর অভিযান চালাবেন, গঙ্গাকেনোংরা হতে দেবেন না, গঙ্গা সাফাই অভিযানে সম্পূর্ণরূপে যোগদান করবেন।উত্তরাখন্ড, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খন্ড এবং পশ্চিমবঙ্গ থেকে আগত গ্রামপ্রধানদেরএই সংকল্পের জন্য আমি তাঁদের সকলকে ধন্যবাদ জানাছি। আমি ভারত সরকারের ওই সকলমন্ত্রক এবং মন্ত্রীদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি যাঁরা এই অনুষ্ঠানকে সম্ভব করেছেন। আমিপাঁচ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদেরও ধন্যবাদ জানাচ্ছি, যাঁরা গঙ্গা সাফাই অভিযানে সাধারণজনতাকে সংযুক্ত করে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছেন।

আমার প্রিয় দেশবাসী, কখনও কখনও কিছু বিষয় আমার মনকে খুবইস্পর্শ করে। আর যাঁরা এই বিষয়গুলি ভাবেন তাঁদের আমি বিশেষ সম্মানের চোখে দেখি।১৫-ই জুলাই ছত্তিশগড়ের কবীরধাম জেলার ১৭০০-র অধিক বিদ্যালয়ের প্রায় সওয়া লাখেরথেকে বেশি ছাত্র-ছাত্রী সামগ্রিক ভাবে নিজের নিজের পিতা-মাতাকে চিঠি লিখেছে। কেউ ইংরেজিতে,কেউ হিন্দিতে, কেউ ছত্তিশগড়িতে চিঠি লিখে বলেছে আমাদের বাড়িতে শৌচাগার থাকা উচিত।তাদের চাহিদা শৌচাগার। কেউ কেউ এও লিখেছে যে এবছর আমার জন্মদিন পালন না করলেও চলবেকিন্তু শৌচাগার নিশ্চয়ই বানাও। সাত থেকে সতেরো বছর বয়সী বালক-বালিকারা এই কাজকরেছে। এই চিঠির এমন আবেগপ্রবণ প্রভাব পড়েছে যে সেই চিঠি পাওয়ার পরের দিনই যখনছাত্র-ছাত্রীরা বিদ্যালয়ে এসেছে, তাদের হাতে কিছু পিতা-মাতা স্কুলের শিক্ষকেরউদ্দেশে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, তাঁরা একটা নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে বাড়িতে শৌচাগারবানিয়ে দেবেন। যাঁরা এই বিষয়টি পরিকল্পনা করেছেন, তাঁদের আমি অভিনন্দন জানাচ্ছি।ওইসকল ছাত্র-ছাত্রীদের অভিনন্দন জানাচ্ছি। আমি অভিনন্দন জানাচ্ছি সেইসব পিতা-মাতাদের,যাঁরা বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে শৌচাগার বানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এইগুলি আমাদেরসত্যিই অনুপ্রেরণা যোগায়। কর্ণাটকের কোপ্পাল জেলার ষোল বছর বয়সী একটি মেয়েমল্লম্মা নিজের পরিবারের বিরুদ্ধে সত্যাগ্রহে বসেছে। মল্লম্মা অনশন করছিল – নিজেরজন্য কোন জামা-কাপড় বা মিষ্টান্ন খাওয়ার জন্য নয়, মল্লম্মা জেদ ধরেছিল, বাড়িতেশৌচাগার বানাতে হবে। ওই পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো নয়, কিন্তু মেয়ে জেদছাড়তে প্রস্তুত নয়, সত্যাগ্রহ ছাড়তে প্রস্তুত নয়। গ্রামপ্রধান মহম্মদ শাফি যখনজানতে পারেন যে মল্লম্মা শৌচাগারের জন্য সত্যাগ্রহ করছে তখন তিনি ১৮ হাজার টাকাযোগাড় করে এক সপ্তাহের মধ্যে শৌচাগার বানিয়ে দেন। মল্লম্মার মতো মেয়ের জেদের শক্তিআর মহম্মদ শাফির মতো গ্রামপ্রধান সত্যিই উল্লেখযোগ্য। সমস্যার সমাধানের জন্যকীভাবে রাস্তা তৈরি করা যায় – এটাই তো জনশক্তি।

আমার প্রিয় দেশবাসী, ‘স্বচ্ছ ভারত’ এখন সমস্ত ভারতবাসীরস্বপ্ন হয়ে গেছে। কারও কারও কাছে এটা একটা সংকল্প। আর কিছু ভারতবাসী এটাকেই তাঁদেরউদ্দেশ্য হিসাবে বেছে নিয়েছেন। কিন্তু সবাই-ই কোনও না কোনও ভাবে এই অভিযানের সঙ্গেযুক্ত, সকলেরই যোগদান রয়েছে। প্রত্যেক দিনই খবর আসতে থাকে, কি কি নতুন চেষ্টাচালানো হচ্ছে। ভারত সরকারের পক্ষ থেকে ভাবা হয়েছে এবং সমস্ত লোকেদের জানানো হচ্ছেযে দুই বা তিন মিনিটের জন্য ‘স্বচ্ছ ভারত’ নিয়ে একটা ফিল্ম তৈরি করুন। এই শর্টফিল্ম ভারত সরকারকে পাঠিয়ে দিন। এই সম্বন্ধে বিস্তারিত বিবরণ ওয়েবসাইটে পাওয়াযাবে। এর একটি প্রতিযোগিতা হবে এবং ২-রা অক্টোবর গান্ধী জয়ন্তী-র দিনে যিনি বিজয়ীহবেন, তাঁকে পুরষ্কৃত করা হবে। আমি টিভি চ্যানেলদেরও বলছি, আপনারা এরকম ছবিরপ্রতিযোগিতা করান। সৃজনশীলতাও স্বচ্ছতা অভিযানকে শক্তি যোগাতে পারে, নতুন স্লোগানপাওয়া যাবে, নতুন পদ্ধতি জানা যাবে, নতুন প্রেরণা পাওয়া যাবে। আর এই সবকিছু সাধারণমানুষের দ্বারা, ছোটোখাটো শিল্পীদের মাধ্যমে। এই ফিল্ম বানানোর জন্য বড়ো কোনওস্টুডিও বা বড় ক্যামেরার দরকার নেই, বর্তমানে নিজেদের মোবাইল ফোনের ক্যামেরা দিয়েওআপনারা ফিল্ম বানাতে পারেন। আসুন, এগিয়ে চলুন, আপনাকে আমার আমন্ত্রণ রইল।

আমার প্রিয় দেশবাসী,ভারত সব সময় চেষ্টা করে আসছে যে আমাদের প্রতিবেশীদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক গভীরহোক, সহজ হোক, প্রাণবন্ত হোক। কিছুদিন আগে একটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটলো, আমাদেররাষ্ট্রপতি মাননীয় প্রণব মুখার্জী কলকাতাতে ‘আকাশবাণী মৈত্রী’ চ্যানেলের শুভউদ্বোধন করেছেন। এখন অনেকেই হয়ত ভাববেন রাষ্ট্রপতি কি একটা রেডিও চ্যানেলেরউদ্বোধন করবেন? কিন্তু এটা একটা সাধারণ রেডিও চ্যানেল নয়, এটা একটা অনেক বড়গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আমাদের পড়শি বাংলাদেশ রয়েছে। আমরা জানি, বাংলাদেশ ওপশ্চিমবঙ্গ একই সাংস্কৃতিক পরম্পরাকে আজও এগিয়ে নিয়ে চলছে। তাই একদিকে ‘আকাশবাণীমৈত্রী’ আর অন্যদিকে ‘বাংলাদেশ বেতার’ – এরা নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আদানপ্রদানকরবে, আর দুই দিকের বাংলাভাষী মানুষ আকাশবাণীর অনুষ্ঠান উপভোগ করবেন। মানুষেরসঙ্গে মানুষের যোগাযোগে আকাশবাণী-র এক বড় অবদানরয়েছে। মাননীয় রাষ্ট্রপতি এর উদ্বোধন করেছেন। আমি বাংলাদেশকেও ধন্যবাদ দিতে চাই যেতারাও এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। আমি আকাশবাণীর বন্ধুদেরও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি, তাঁরাওবিদেশ নীতিতে নিজেদের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন।

আমার প্রিয়দেশবাসী, আপনারা আমাকে প্রধানমন্ত্রীর কাজ দিয়েছেন, কিন্তু আমিও আপনাদের মতো এক জনমানুষ। কখনও কখনও কিছু ঘটনা আমাদের মনকে নাড়া দিয়ে যায়। এই রকম ঘটনা নতুন শক্তিরজোগান দেয়, নতুন অনুপ্রেরণা দেয়, আর এটাই দেশবাসীর জন্য কিছু না কিছু করারপ্রেরণার উৎস। কিছুদিন আগে আমি একটা চিঠি পেয়েছিলাম, যেটা আমার মনকে নাড়া দিয়েছিল।প্রায় চুরাশি বছরের এক মা, যিনি অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা, উনি এই চিঠি লিখেছেন। যদিনা, উনি চিঠিতে কখনও নিজের নাম প্রকাশে নিষেধ করতেন, তো আমার খুব ইচ্ছে ছিল ওঁরনাম আপনাদের সবাইকে বলবার। চিঠিতে উনি লিখেছেন, “আপনি যখন গ্যাসের ওপর ভর্তুকিছেড়ে দেওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন, তখন আমি গ্যাসের ভর্তুকি ছেড়ে দিয়েছিলাম। তারপরেতো এটা ভুলেই গিয়েছিলাম। কিন্তু কিছু দিন আগে আপনাদের একজন এসে একটি চিঠি দিয়েযায়। এই ‘ Give it up ’-এর জন্য আমি ধন্যবাদপত্র পাই। আমার কাছে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এই পত্র কোনোপদ্মশ্রী সম্মান থেকে কম নয়।”

দেশবাসী, আপনারাহয়ত জানেন, আমি চেষ্টা করেছিলাম, যাঁরা যাঁরা গ্যাসের ভর্তুকি ছেড়ে দিয়েছেন,তাঁদের একটি চিঠি পাঠাই, আর আমার কোনও প্রতিনিধি স্বয়ং উপস্থিত হয়ে সেই চিঠিপৌঁছাক। এক কোটিরও বেশি চিঠি লেখার জন্য আমি চেষ্টা করছি। এই যোজনার অধীনে আমার এইচিঠি ওই মা-র কাছে পৌঁছায়। উনি আমাকে চিঠি লিখে জানিয়েছেন আপনি ভাল কাজ করছেন,গরীব মায়েদের উনুনের ধোঁয়া থেকে মুক্তি দেওয়ার এটা একটা অভিযান। আমি একজনঅবসর-প্রাপ্ত শিক্ষিকা, আর কয়েক বছরেই আমার বয়স নব্বই বছর হয়ে যাবে। আমি পঞ্চাশহাজার টাকার দান আপনাকে পাঠালাম। এই টাকাটা আপনি এই গরীব মা-বোনেদের উনুনের ধোঁয়াথেকে মুক্ত করার কাজে লাগাবেন। আপনারা কল্পনা করতে পারেন – পেনশনের উপর নির্ভরশীলএকজন সামান্য অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা মা-বোনেদের উনুনের ধোঁয়া থেকে মুক্ত করতে আরতাদের জন্য গ্যাস কানেকশান-এর বন্দোবস্ত করতে পঞ্চাশ হাজার টাকা দান করেছেন। এখানেপঞ্চাশ হাজার টাকাটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, জরুরি হল এই মায়ের আবেগ। উনি আর ওঁর মতোকোটি কোটি মা-বোনেদের আশীর্বাদই আমাদের দেশের ভবিষ্যৎকে গড়তে সাহায্য করে, শক্তিদেয়, ভরসা দেয়। আর উনি আমাকে দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চিঠি লেখেননি, সাদামাটাচিঠিতে সম্বোধন করেছেন মোদী-ভাইয়া বলে। আমি এই মাকে প্রণাম জানাই। আমি ভারতের এইকোটি কোটি মায়েদের প্রণাম জানাই, যাঁরা নিজেরা কষ্ট স্বীকার করেও অন্যদের সাহায্যকরে যাচ্ছেন।

আমার প্রিয়দেশবাসী, গত বছর আমরা খরার জন্য খুব চিন্তাগ্রস্ত ছিলাম। কিন্তু এই অগাস্ট মাসটায়আমরা ক্রমাগত বন্যার সমস্যায় জেরবার। দেশের কিছু জায়গায় একাধিকবার বন্যা হয়েছে।রাজ্য সরকার, কেন্দ্র সরকার, স্থানীয় প্রশাসনিক সংস্থা, সামাজিক সংস্থা ও নাগরিকরাযতটা করা সম্ভব, করেছেন।

কিন্তু এই বন্যারখবরের মধ্যেও এমন কিছু খবর আছে, যা আমাদের মনে রাখা বেশি প্রয়োজন। একতার শক্তিকতখানি, সবাই একজোট হয়ে এগোলে কত বড় সুফল আমরা পেতে পারি, তার নিদর্শন হয়ে রইল এইবছরের অগাস্ট মাসটা। এই অগাস্ট ২০১৬-তে ঘোর রাজনৈতিক বিরোধী দল, একে অন্যকেআক্রমণের কোনও সুযোগ হাতছাড়া না করা দল, পুরো দেশের প্রায় নব্বইটি দল ও সংসদের আরওঅন্যান্যরা মিলে জি-এস-টি বিল পাস্‌ করান। এর কৃতিত্ব সবক’টি দলের প্রাপ্য। আর সবদল মিলে যদি একসাথে চলা যায়, তাহলে কত বড় বড় কাজ করা সম্ভব – এটা তার প্রকৃষ্টউদাহরণ।

এই একই ভাবেকাশ্মীর পরিস্থিতি নিয়ে দেশের সমস্ত রাজনৈতিক দল একজোট। সবাই একই সুরে বার্তাদিয়েছে বিশ্বের সকলকে, বার্তা দিয়েছে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের। এর পাশাপাশি কাশ্মীরেরনাগরিকদের প্রতিও সমবেদনা ব্যক্ত করেছে তারা। কাশ্মীর সম্বন্ধে আমার সমস্ত দলগুলিরসঙ্গে যত আলাপ-আলোচনা হয়েছে, তা থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট। কয়েকটি শব্দে এর নির্যাসবোঝাতে হলে আমি বলব ঐক্য ও মমতা – এই দুটি হল মূল মন্ত্র। আমাদের সকলের মত এই –দেশের একশো পঁচিশ কোটি দেশবাসীর মত এই, গ্রামপ্রধান থেকে আরম্ভ করে প্রধানমন্ত্রীপর্যন্ত সকলের এই মত যে কাশ্মীরে যদি একটিও প্রাণহাণি হয় – তা সে কোনও সাধারণযুবকের হোক বা কোনও নিরাপত্তাকর্মীর – সে ক্ষতি আমাদেরই, আমাদের দেশের। যারা এইছোটো ছোটো ছেলেদের এগিয়ে দিয়ে কাশ্মীরে অশান্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা করছেন, তাদেরকখনও না কখনও অবশ্যই এই নির্দোষ বালকদের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।

আমার প্রিয়দেশবাসী, আমাদের এই দেশ সুবৃহৎ, নানা বিবিধতায় সমৃদ্ধ। এই বিবিধতায় পূর্ণ দেশকেঐক্যের বন্ধনে বেঁধে রাখতে – নাগরিক হিসেবে, সমাজ হিসেবে, সরকার হিসেবে আমাদেরসকলের দায়িত্ব যে আমরা ঐক্যের প্রতি জোর দেব, ঐক্যের উদ্ভাস ঘটাব আর তবেই দেশনিজের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ তৈরি করতে পারবে এবং করবে। আমার একশো পঁচিশকোটি দেশবাসীরক্ষমতার উপর ভরসা আছে। আজ ব্যস্‌ এই পর্যন্তই, অনেক অনেক ধন্যবাদ!

PG / SB