Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ


আমার প্রিয় দেশবাসী,

আজ ২৭শে মার্চ, কিছুক্ষণ আগেই ভারত একটি অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। ভারত আজ নিজের নাম মহাকাশে মহাশক্তি – স্পেস পাওয়ার রূপে প্রতিষ্ঠা করেছে।

এতদিন পর্যন্ত বিশ্বের তিনটি দেশ – আমেরিকা, রাশিয়া এবং চিন এই সাফল্য অর্জন করেছিল। এখন ভারত চতুর্থ দেশ হিসেবে এই সাফল্যের অধিকারী হল। প্রত্যেক ভারতবাসীর জন্য এর থেকে বড় গর্বের মুহূর্ত কিছু হতে পারে না।

কিছুক্ষণ আগে আমাদের বৈজ্ঞানিকরা মহাকাশে পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে ৩০০ কিলোমিটার দূরে, ‘লিও’ – অর্থাৎ, লো আর্থ অরবিটে একটি সক্রিয় উপগ্রহকে ধ্বংস করেছে।

‘লিও’ – লো আর্থ অরবিট এই সক্রিয় উপগ্রহটি, যেটি একটি পূর্ব নির্ধারিত লক্ষ্য ছিল, সেটিকে অ্যান্টি-স্যাটেলাইট মিসাইলের মাধ্যমে ধ্বংস করেছে। মাত্র ৩ মিনিটে, সাফল্যের সঙ্গে এই অভিযান সম্পন্ন হয়।

‘মিশন শক্তি’ – এটি অত্যন্ত কঠিন একটি অপারেশন ছিল। এতে অত্যন্ত উন্নত মানের প্রযুক্তিগত ক্ষমতার প্রয়োজন ছিল। বৈজ্ঞানিকরা সমস্ত নির্ধারিত লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্যে সাফল্য পেয়েছে।

আমরা, সমস্ত ভারতীয়দের জন্য এটি গর্বের বিষয়, উন্নতমানের অ্যান্টি-স্যাটেলাইট (এ-স্যাট) মিসাইলের মাধ্যমে ভারতের এই পরাক্রম প্রদর্শন সম্ভব হয়েছে।

সবার আগে আমি এই ‘মিশন শক্তি’র সঙ্গে যুক্ত ডিআরডিও-র সমস্ত বৈজ্ঞানিক, অনুসন্ধানকারী ও সমস্ত সংশ্লিষ্ট কর্মীদের শুভেচ্ছা জানাই। তাঁদের এই অসাধারণ সাফল্য আজ আরেকবার দেশের সম্মান বৃদ্ধি করেছে। আমরা আমাদের বৈজ্ঞানিকদের জন্য গর্বিত।

মহাকাশ আজ আমাদের জীবনশৈলীর একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। আজ আমাদের যথেষ্ট সংখ্যক উপগ্রহ রয়েছে যেগুলি ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, যেমন কৃষি, প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা, বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা, সম্প্রচার, আবহাওয়া, বিমান ও জাহাজের দিক নির্দেশ ও নিয়ন্ত্রণ সহায়তা, শিক্ষা ইত্যাদি।

জীবনের সমস্ত ক্ষেত্রে আজ আমরা উপগ্রহ দ্বারা উপকৃত হচ্ছি। একদিকে কৃষক, মৎস্যজীবী, ছাত্র ও নিরাপত্তা বাহিনীগুলি, আর অন্যদিকে রেল, বিমান, জাহাজ পরিচালন ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে উপগ্রহ ব্যবহার করা হচ্ছে।

বিশ্বে মহাকাশ এবং উপগ্রহের গুরুত্ব ক্রমবর্ধমান। ভবিষ্যতে মহাকাশ বিজ্ঞান ছাড়া মানুষের জীবন অসম্পূর্ণ হয়ে পড়বে। এহেন পরিস্থিতিতে এই সমস্ত উপকরণের নিরাপত্তা সুদৃঢ় করাও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।

আজ অ্যান্টি-স্যাটেলাইট (এ-স্যাট) মিসাইল ভারতের নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ থেকে, ভারতের উন্নয়নের দৃষ্টিকোণ থেকে দেশকে একটি নতুন শক্তি যোগাবে। আমি আজ বিশ্ববাসীকে আশ্বস্ত করতে চাই যে ভারত এই নতুন ক্ষমতা কারোর বিরুদ্ধে প্রয়োগ করবে না। এটি দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলা নতুন ভারতের একটি আত্মরক্ষামূলক উদ্যোগ।

ভারত সর্বদাই মহাকাশে কোন যুদ্ধাস্ত্রের ব্যবহারের বিরুদ্ধে। আর, আজও সেই নীতিতে কোন পরিবর্তন আসেনি। আজকের এই পরীক্ষা কোনরকম আন্তর্জাতিক আইন কিংবা সন্ধি-চুক্তিকে উল্লঙ্ঘন করেনি। আমরা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের ১৩০ কোটি নাগরিকের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত এবং কল্যাণসাধন করতে চাই।

এক্ষেত্রে শান্তি ও সুরক্ষার আবহ গড়ে তোলার জন্য একটি মজবুত ভারত গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আমাদের সামরিক উদ্দেশ্য যুদ্ধের আবহ গড়ে তোলা নয়, শান্তি বজায় রাখা।

প্রিয় দেশবাসী,

ভারত মহাকাশে যে কাজ করেছে তার মূল উদ্দেশ্য ভারতের নিরাপত্তা, ভারতের আর্থিক বিকাশ এবং ভারতের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন। আজকের এই মিশন এসব স্বপ্নকে সুরক্ষিত করতে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ যা এই তিনটি স্তম্ভের নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

আজকের সফলতাকে আগামীদিনে একটি সুরক্ষিত রাষ্ট্র, সমৃদ্ধ রাষ্ট্র এবং শান্তিপ্রিয় রাষ্ট্র হিসেবে ভারতের ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা উচিৎ। ভবিষ্যতে যে কোন প্রতিস্পর্ধার বিরুদ্ধে নিজেদের প্রস্তুত রেখে এগিয়ে যাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ভবিষ্যতের প্রতিস্পর্ধাগুলির মোকাবিলা করতে এবং দেশের জনগণের জীবনযাত্রার মানে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে আধুনিক প্রযুক্তিকে আপন করে নিতেই হবে। আমাদের লক্ষ্য হল, সমগ্র ভারতবাসীকে ভবিষ্যতের যে কোন সমস্যার মোকাবিলার জন্য আত্মবিশ্বাসে ভরপুর করে তোলা এবং সুরক্ষা সুনিশ্চিত করা।

আমাদের নাগরিকরা কর্মঠ ও দায়বদ্ধ, তাঁদের দেশ ভক্তি, সমর্পণ এবং যোগ্যতায় আমার পরিপূর্ণ আস্থা রয়েছে। আমরা নিঃসন্দেহে একজোট হয়ে একটি শক্তিশালী, সমৃদ্ধ এবং সুরক্ষিত ভারত নির্মাণ করতে পারব।

আমি এমন ভারতেরই পরিকল্পনা করি যেটি নিজের সময় থেকে দু’কদম এগিয়ে ভাবতে পারবে এবং এগিয়ে চলার হিম্মত দেখাতে পারবে।

আজকের এই মহান সাফল্যের জন্য সমগ্র দেশবাসীকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা।

ধন্যবাদ।

CG/SB/DM