Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ


প্রিয়নাগরিকবৃন্দ,

আশাকরি, বেশআশা ও আনন্দের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে আপনাদের দেওয়ালি উদযাপন। আজ আমি আপনাদের কাছেকিছু জরুরি বিষয় ও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের কথা জানাব। এই দিনটিতে আমার একটিবিশেষ আবেদন রয়েছে আপনাদের কাছে। ২০১৪’র মে মাসে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কথানিশ্চয়ই আপনাদের মনে আছে। ঐ সময়েই এক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব আপনারা সঁপে দিয়েছিলেনআমাদের ওপর। ব্রিক্‌স-এর পরিপ্রেক্ষিতে তখন বলা হত যে, ব্রিক্‌স-এর ‘আই’ অক্ষরটিখুবই নড়বড়ে। তারপর থেকে দুটি বছর আমাদের কেটেছে প্রচন্ড খরার মধ্যে। কিন্তু তাসত্ত্বেও ১২৫ কোটি ভারতবাসীর সহযোগিতা ও সমর্থনের মধ্য দিয়ে গত আড়াই বছরের মধ্যেবিশ্ব অর্থনীতিতে ভারত হয়ে উঠেছে এক ‘উজ্জ্বল কেন্দ্রবিন্দু’। একথা শুধু আমরাইবলছি না, একথা বলছে আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার এবং বিশ্ব ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ।

আমাদের এইউন্নয়ন প্রচেষ্টার মন্ত্রই হল ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’ : সকল নাগরিককে সঙ্গে নিয়ে সকল নাগরিকদের জন্যই এই উন্নয়ন প্রচেষ্টা। বর্তমানসরকার দরিদ্র সাধারণ মানুষের প্রতি দায়বদ্ধ, এবং তা থাকবেও। দারিদ্রের বিরুদ্ধেসংগ্রামে আমাদের প্রধান হাতিয়ারই হল দরিদ্র মানুষের ক্ষমতায়ন। আমরা জোর দিয়েছিতাঁদের অর্থনৈতিক অগ্রগতির সুফলগুলির অংশীদার করে তোলার ওপর।

প্রধানমন্ত্রীজন ধন যোজনা,

জন সুরক্ষাযোজনা,

ক্ষুদ্রশিল্পোদ্যোগীদের জন্য প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনা,

দলিত, আদিবাসীএবং মহিলাদের জন্য স্ট্যান্ড আপ ইন্ডিয়া কর্মসূচি,

দরিদ্র মানুষেরঘরে গ্যাস সংযোগ পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনা,

কৃষকদের আয় ওউপার্জনে সুরক্ষাদানের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনা ও প্রধানমন্ত্রী কৃষিসিচাঁই যোজনা,

কৃষকদেরস্বার্থে কৃষিক্ষেত্রে যথাসম্ভব ভালো উৎপাদন সম্ভব করে তোলার লক্ষ্যে মাটিরস্বাস্থ্য পরীক্ষা কর্মসূচি,

উৎপাদিত পণ্যেরউচিৎ মূল্য কৃষকদের কাছে পৌঁছে দিতে ই-নাম জাতীয় বাজার স্থাপন কর্মসূচি

– এ সমস্ত কিছুই হল আমাদের উদ্যোগ ও প্রচেষ্টার প্রতিফলন মাত্র।

বিগত দশকগুলিতে কালো টাকা ও দুর্নীতির দৌরাত্ম্য অনেক গুণ বেড়ে গেছে।দারিদ্র্য দূর করার প্রচেষ্টাকেও তা দুর্বল করেছে। একদিকে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হারেরদিক থেকে আমরা যখন রয়েছি এক নম্বরে অন্যদিকে তেমনই দু’বছর আগে বিশ্বে দুর্নীতিমূলককাজকর্মের দিক থেকে আমাদের স্থান ছিল প্রায় ১০০’র কাছাকাছি। বহু চেষ্টা চালানোসত্ত্বেও এই বিষয়টিতে আমরা নেমে আসতে পেরেছি মাত্র ৭৬-এ। আমি বলছি না যে,এক্ষেত্রে উন্নতি কিছু হয়নি। আমি শুধু বোঝাতে চেয়েছি যে দুর্নীতি ও কালো টাকাকিভাবে সমস্ত কিছু গ্রাস করতে চাইছিল।

শুধুমাত্র ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে সমাজের কোনও কোনও স্তরেদুর্নীতির কুফল ছড়িয়ে দেওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। দরিদ্র ও প্রান্তিকমানুষের কল্যাণের কথা তারা চিন্তাই করে না। কোনও কোনও ব্যক্তি আবার ব্যক্তিগতলাভের আশায় তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে। আবার অন্যদিকে এমন মানুষও রয়েছেন,যাঁরা সততার সঙ্গে সংগ্রাম চলিয়ে যাচ্ছেন এই সমস্ত কুপ্রবণতার বিরুদ্ধে।নারী-পুরুষ নির্বিশেষে কোটি কোটি সাধারণ মানুষ কিন্তু পরস্পরের সঙ্গে মিলেমিশেথাকতে আগ্রহী। আমরা এমন ঘটনার কথাও শুনেছি যে, একজন দরিদ্র অটো রিক্‌শা চালক তাঁরগাড়িতে ফেলে যাওয়া সোনার অলঙ্কার ফিরিয়ে দিয়েছেন আসল মালিকের কাছে। আমরা শুনেছি এমনট্যাক্সি চালকদের কথাও, যাঁরা তাঁদের ট্যাক্সিতে ফেলে যাওয়া সেলফোন ফিরিয়ে দিতেতার সঠিক মালিকের খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন। আবার এমন সব্জি বিক্রেতার কথাওআমাদের কানে এসেছে, যিনি ক্রেতার ফেলে যাওয়া অতিরিক্ত অর্থ ফিরিয়ে দিয়েছেন তাঁরকাছেই।

যে কোনও দেশের উন্নয়নের ইতিহাসে এমন একটি সময় আসে, যখন কোনও না কোনও কঠিনসিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। বহু বছর ধরেই আমাদের দেশ উপলব্ধি করেছে যেকালো টাকা, দুর্নীতি ও সন্ত্রাস আমাদের সমাজে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে উন্নয়নের দৌড়েআমাদের পিছিয়ে দিতে চাইছে।

সন্ত্রাস হল এক ভয়ঙ্কর হুমকি, যা বহু মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। কিন্তুআপনারা একবারও কি ভেবে দেখেছেন যে, সন্ত্রাসবাদীদের অর্থের আসল উৎস কোথায়?সীমান্তের ওপার থেকে শত্রুপক্ষ জাল নগদ অর্থের সাহায্যে তাদের কাজ চালিয়ে আসছে। এইঘটনা চলে আসছে বছরের পর বছর। অনেক সময়েই নকল ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট সমেত অনেকেই ধরাপড়েছে এবং এই ধরণের বহু নোট আটকও করা হয়েছে।

আমার ভাই ও বোনেরা,

একদিকে যখন সন্ত্রাসবাদের সমস্যার মুখোমুখি আমরা, অন্যদিকে তেমনই আমাদেরসামনে চ্যালেঞ্জ এনে দিয়েছে কালো টাকা ও দুর্নীতির রমরমা। দায়িত্বভার গ্রহণের ঠিকপরেই শীর্ষ আদালতের এক অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে আমরা এক বিশেষ তদন্তকারী দল‘সিট’ গঠন করেছিলাম। তারপর থেকেই

· বিদেশে গচ্ছিতকালো টাকা ঘোষণার জন্য একটি আইন অনুমোদন করা হয় ২০১৫ সালে;

· মার্কিনযুক্তরাষ্ট্র সহ বহু দেশের সঙ্গে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে তথ্য বিনিময়েরলক্ষ্যে চুক্তি সম্পাদন করা হয়;

· দুর্নীতিরমাধ্যমে অর্জিত কালো টাকা বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে বেনামে লেনদেন বন্ধ করতে ২০১৬’রআগস্ট মাসে এক কঠোর আইন বলবৎ করা হয়;

· ভালো রকমপেনাল্টি সহ কালো টাকা ঘোষণার জন্য একটি কর্মসূচিও চালু করা হয়।

আমার প্রিয় দেশবাসী,

গত আড়াই বছর ধরে আমাদের এই সমস্ত প্রচেষ্টার ফলে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিতপ্রায় ১ লক্ষ ২৫ হাজার কোটি টাকার সন্ধান আমরা পেয়েছি। সৎ নাগরিকরা দুর্নীতি, কালোটাকা, বেনামী সম্পত্তি, সন্ত্রাস এবং জাল নোটের বিরুদ্ধে এই লড়াই চালিয়ে যাওয়ারপক্ষে। কিছু কিছু সরকারি আধিকারিকদের বিছানার তলায় কোটি কোটি নগদ টাকা মজুতের খবরেসৎ নাগরিকরা নিশ্চয়ই বিচলিত হবেন না। এমনকি চটের থলিতে বহু নগদ অর্থের সন্ধানমিলেছে একথাতেও আজ আর অবাক হওয়ার কিছু নেই।

এই বিপুল পরিমাণ অর্থ সরাসরিভাবে যুক্ত দুর্নীতির সঙ্গে। অসৎ উপায়ে অর্জিতঅর্থ মুদ্রাস্ফীতিকে আরও বিপজ্জনক করে তুলেছে। আর এ সমস্ত কিছুর ফল ভোগ করতে হচ্ছেদরিদ্র সাধারণ মানুষকে। শুধু তাই নয়, দরিদ্র ও মধ্যবিত্তদের ক্রয় ক্ষমতার ওপরও তারপ্রভাব পড়ছে প্রত্যক্ষভাবে। আপনাদেরই হয়তো অভিজ্ঞতা হয়েছে জমি বা বাড়ি কেনার সময়েযখন চেক ছাড়াও বেশ বড় অঙ্কের টাকা দাবি করা হয় নগদে। এরফলে, সম্পত্তি ক্রয়েরক্ষেত্রে বিপাকে পড়েন সৎ ব্যক্তিরা। অর্থের অপব্যবহার কৃত্রিম উপায়ে দাম বাড়িয়েদিচ্ছে জমি, বাড়ি, উচ্চ শিক্ষা, স্বাস্থ্য সহ বিভিন্ন সম্পদ ও পরিষেবার।

এইভাবে বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থের লেনদেন হওয়ায় ফুলেফেঁপে উঠছে হাওলারকারবারিরা। এই ব্যবসাটি আবার কালো টাকা এবং বেআইনি অস্ত্র সংগ্রহের সঙ্গে সরাসরিযুক্ত। বহু বছর ধরেই নির্বাচনে কালো টাকার ভূমিকা সম্পর্কে তর্ক-বিতর্ক তো চলছেই।

আমার ভাই ও বোনেরা,

দুর্নীতি ও কালো টাকার এই দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে,বর্তমানে চালু ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোটে লেনদেন আজ অর্থাৎ ০৮ নভেম্বর, ২০১৬’রমধ্যরাত্রি থেকেই অবৈধ বলে ঘোষণা করা হবে। এর অর্থ হল, আজ মাঝরাত থেকেই লেনদেনেরক্ষেত্রে এই নোট ব্যবহার করা যাবে না। জতীয়তা বিরোধী এবং সমাজ বিরোধীদের হাতে মজুত৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট এর পর থেকে শুধুমাত্র কিছু কাগজের টুকরোয় পরিণত হবে। কিন্তুসৎ এবং খেটে খাওয়া মানুষের অধিকার ও স্বার্থ পুরোপুরি সুরক্ষিত থাকবে। আমি আপনাদেরএই মর্মে আশ্বাস দিচ্ছি যে, ১০০, ৫০, ২০, ১০, ৫, ২ ও ১ টাকার নোট ও মুদ্রার আইনিবৈধতা বজায় থাকবে এবং তার কোনও ক্ষতি হবে না।

দুর্নীতি, কালো টাকা এবং জাল নোটের দৌরাত্ম্যের বিরুদ্ধে আমাদের এই পদক্ষেপসাধারণ মানুষের হাতকে আরও শক্ত করবে। আগামী দিনগুলিতে নাগরিকদের অসুবিধা দূর করতেকয়েকটি ব্যবস্থা আমরা গ্রহণ করছি।

· যাঁদের কাছে৫০০ ও ১০০০ টাকার পুরনো নোট রয়েছে, তাঁরা ব্যাঙ্ক বা ডাকঘরে তাঁদের অ্যাকাউন্টে তাজমা দিতে পারবেন ১০ নভেম্বর থেকে ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৬ পর্যন্ত।

· সুতরাং, আপনারা৫০ দিন সময় পাচ্ছেন নোট জমা দেওয়ার। সুতরাং আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।

· আপনার টাকাআপনারই থাকবে। এ ব্যাপারে আপনাদের দুশ্চিন্তার কোনও কারণ নেই।

· আপনাদেরঅ্যাকাউন্টে টাকা জমা দেওয়ার পর প্রয়োজনে যখন ইচ্ছা তা আপনারা তুলে নিতে পারেন।

· নতুন নোটেরযোগানের কথা চিন্তা করে প্রথম কয়েকদিন দিনে ১০ হাজার টাকা এবং সপ্তাহে ২০ হাজারটাকার বেশি তোলার অনুমতি দেওয়া হবে না। তবে পরে পর্যায়ক্রমে এই সীমা আরও বাড়ানোহবে।

· ব্যাঙ্কঅ্যাকাউন্টে টাকা জমা দেওয়া ছাড়াও আরেকটি সুযোগেরও সংস্থান রাখা হয়েছে।

· তাৎক্ষণিকপ্রয়োজনে ব্যাঙ্ক, প্রধান ডাকঘর কিংবা উপ-ডাকঘরে গিয়ে এবং আধার কার্ড, ভোটারকার্ড, রেশন কার্ড, পাসপোর্ট, প্যানকার্ড কিংবা অন্য কোনও অনুমোদিত পরিচয়পত্রদেখিয়ে পুরনো ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোটের বিনিময়ে নতুন নোট সংগ্রহ করা যাবে।

· ১০ নভেম্বরথেকে ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত এই বিনিময়ের সীমা হবে ৪০০০ টাকা। পরে, ২৫ নভেম্বর থেকে ৩০ডিসেম্বর পর্যন্ত এই সীমা আরও বাড়ানো হবে।

· অনেকের পক্ষেইহয়তো ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৬ তারিখের মধ্যে তাঁদের পুরনো ৫০০ অথবা ১০০০ টাকার নোটবিনিময় করা সম্ভব নাও হতে পারে।

· তাঁরা রিজার্ভব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া’র নির্দিষ্ট কার্যালয়গুলিতে গিয়ে ৩১ মার্চ, ২০১৭ তারিখ পর্যন্ততাঁদের পুরনো নোট জমা দিতে পারবেন। তবে, এজন্য তাঁদের একটি ঘোষণাপত্র পেশ করতেহবে।

· ০৯ নভেম্বর এবংকোনও কোনও স্থানে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত এটিএম-গুলির কাজকর্ম বন্ধ থাকবে। খোলার পরপ্রতিদিন কার্ড পিছু মাত্র ২০০০ টাকা করে তোলা যাবে।

· পরে, এই মাত্রাবাড়িয়ে ৪০০০ টাকা করা হবে।

· আজ মধ্যরাত্রিথেকে ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোটে লেনদেনের ক্ষেত্রে আইনি বৈধতা থাকছে না। তবে, মানবতারকারণে এবং নাগরিকদের দুর্ভোগ ও হয়রানি কমাতে আগামী ৭২ ঘন্টার জন্য অর্থাৎ ১১নভেম্বর মাঝরাত পর্যন্ত কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যবস্থার সংস্থান রাখা হয়েছে।

· এই সময়কালেসরকারি হাসপাতালগুলিতে অর্থ মিটিয়ে দেওয়ার কাজে ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট ব্যবহার করা যাবে।

· যাঁদেরপরিবারের কোনও সদস্য অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বা পড়বেন, তাঁরা এরফলে উপকৃত হবেন।

· সরকারিহাসপাতালগুলির ওষুধ বিক্রয় কেন্দ্রে চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন সহ ওষুধ কেনারক্ষেত্রে ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোটে লেনদেন গ্রাহ্য হবে।

· আগামী ৭২ ঘন্টাঅর্থাৎ ১১ নভেম্বর, মাঝরাত পর্যন্ত রেলের টিকিট বিক্রয় কাউন্টার, সরকারি বাস ওবিমান পরিবহণের টিকিট কাউন্টার, টিকিটের বিনিময়ে পুরনো নোট গ্রহণ করবে। যাঁরা এইসময়ে সফরে যাচ্ছেন বা যাবেন, তাঁরা উপকৃত হবেন এই ব্যবস্থায়।

· আগামী ৭২ ঘন্টাপর্যন্ত ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট গ্রহণ করা হবে এই সমস্ত স্থানে :

Ø রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলির পেট্রোল, ডিজেল এবং সিএনজি গ্যাস বিক্রয়কেন্দ্র

Ø কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার অনুমোদিত সমবায় ক্রেতা ভাণ্ডার

Ø রাজ্য সরকারের দুধ বিক্রয় কেন্দ্র

Ø শ্মশান ও সমাধি ক্ষেত্র

এই সমস্ত কেন্দ্রে পুরনো নোট সংগ্রহ ও মজুতের যথাযথ রেকর্ডের ব্যবস্থা করাহয়েছে।

· আন্তর্জাতিকবিমানবন্দরগুলিতে আগমন ও প্রস্থানের ক্ষেত্রে যে সমস্ত যাত্রীর কাছে অনধিক ৫০০০টাকা পর্যন্ত ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট থাকবে তাঁরা সেগুলির বিনিময়ে নতুন নোট সংগ্রহকরতে পারেন কিংবা ঐ পুরনো টাকাই ব্যবহার করতে পারেন।

· বিদেশিপর্যটকরা অনধিক ৫০০০ টাকা পর্যন্ত বিদেশি মুদ্রা কিংবা পুরনো নোটে লেনদেন করতেপারবেন।

· এই প্রসঙ্গেআরেকটি বিষয়ের আমি উল্লেখ করতে চাই। আমাদের এই বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে চেক,ডিমান্ড ড্রাফ্‌ট, ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড এবং ইলেক্ট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারেরমাধ্যমে অর্থ প্রদানের ক্ষেত্রে কোনও রকম নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হচ্ছে না।

প্রিয় ভাই ও বোনেরা,

এই সমস্ত ব্যবস্থা গ্রহণ সত্ত্বেও সৎ নাগরিকরা সাময়িকভাবে অসুবিধায় পড়তেপারেন। আমাদের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, সাধারণ নাগরিকরা জাতির স্বার্থে যে কোনও ধরণেরত্যাগ স্বীকার করতে কিংবা অসুবিধা ভোগ করতে সর্বদাই প্রস্তুত। আমি লক্ষ্য করেছি,কিভাবে একজন দরিদ্র বিধবা এলপিজি’র ওপর তাঁর ভর্তুকি ছেড়ে দিয়েছেন। স্বচ্ছ ভারতমিশনে সহায়তার লক্ষ্যে একজন অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক তাঁর পেনশনের টাকা দান করেদিয়েছেন। শৌচাগার নির্মাণে এক দরিদ্র আদিবাসী মা বেচে দিয়েছেন তাঁর গৃহপালিতছাগলটি। নিজের গ্রামকে পরিচ্ছন্ন করে তুলতে একজন সেনাকর্মী দান করেছেন ৫৭ হাজারটাকা। দেশের সমৃদ্ধির লক্ষ্যে একজন সাধারণ নাগরিক যে কোনও কাজই করতে পারেন দৃঢ়সংকল্পের সঙ্গে। এ ঘটনা চাক্ষুষ করেছি আমি।

সুতরাং, দুর্নীতি, কালো টাকা, জাল নোট ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এই লড়াই হলদেশকে শুদ্ধ ও পবিত্র করে তোলার যজ্ঞ। তাই, কিছুদিনের জন্য কষ্ট স্বীকার করতেদেশবাসীরা কি রাজি হবেন না? দেশের প্রত্যেক নাগরিকের ওপর পূর্ণ আস্থা রয়েছে আমার।তাঁরা সকলেই একবাক্যে সামিল হবেন আমাদের এই মহাযজ্ঞে। প্রিয় দেশবাসী, দেওয়ালিউৎসবের পর সমগ্র জাতির সঙ্গে মিলিতভাবে মান ও সম্মান রক্ষার এই উৎসবে আসুন আমরাসকলে সামিল হই। আমি এটিকে সংহতি ও বিশ্বাসযোগ্যতার উদযাপন বলেই মনে করি।

সমস্ত রাজনৈতিক দল ও সরকার, সমাজ সেবার সঙ্গে যুক্ত সংস্থা ও সংগঠন, সংবাদও প্রচার মাধ্যম এবং সমাজের সকল স্তরের মানুষ উৎসাহ ও উদ্দীপনার সঙ্গে এগিয়ে আসবেনআমাদের এই উদযাপনকে সফল করে তুলতে।

আমার প্রিয় দেশবাসী,

এই কাজের জন্য গোপনীয়তা রক্ষা জরুরি ছিল। ঠিক যে সময়ে আমি আপনাদের এইসংবাদটি জানাচ্ছি, ঠিক তখনই ব্যাঙ্ক, ডাকঘর, রেল, হাসপাতাল ও অন্যান্যরাও এই খবরজানতে পারছেন। শীর্ষ ব্যাঙ্ক, বিভিন্ন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ এবং ডাকঘরগুলিকে খুবস্বল্পকালীন নোটিশেই সমস্ত ব্যবস্থা ও আয়োজন সম্পূর্ণ করতে হবে। আমি জানি যে,এজন্য আরও সময় প্রয়োজন। এই কারণে দেশের সমস্ত ব্যাঙ্কে আগামী ০৯ নভেম্বর স্বাভাবিককাজকর্ম বন্ধ থাকবে। তাতে আপনাদের অসুবিধা হবে ঠিক কথা, কিন্তু ব্যাঙ্ক ওডাকঘরগুলির ওপর আমার এই মর্মে পূর্ণ আস্থা রয়েছে যে, গুরুত্বপূর্ণ এই জাতীয়পদক্ষেপকে সাফল্যের সঙ্গেই তারা বাস্তবায়িত করবে। এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় ধৈর্যও সংকল্পের সঙ্গে ব্যাঙ্ক ও ডাকঘরগুলির সঙ্গে সর্বতোভাবে সহায়তা করার জন্য আমিআপনাদের সকলের কাছে আবেদন জানাচ্ছি।

প্রিয় নাগরিকবৃন্দ,

সময়ে সময়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সম্মতিক্রমে শীর্ষ ব্যাঙ্ক উচ্চতর মূল্যেরনতুন নোট চালু করে। ২০১৪ সালে ৫০০০ ও ১০০০০ টাকার নোট চালুর সুপারিশ করেছিল শীর্ষব্যাঙ্ক। কিন্তু সবদিক বিবেচনা করে ঐ সুপারিশ আমরা গ্রহণযোগ্য বলে মনে করিনি।কিন্তু এখন এই বিশেষ মুহূর্তে শীর্ষ ব্যাঙ্কের ২০০০ টাকার নোট চালু করার সুপারিশআমরা গ্রহণ করেছি। ৫০০ ও ২০০০ টাকার নতুন নোটগুলির নক্‌শা হবে সম্পূর্ণ নতুন ধরণের।

প্রত্যেক দেশের ইতিহাসেই এমনকিছু মুহূর্ত আসে যখন প্রত্যেক ব্যক্তি উপলব্ধিকরেন যে, তাঁরও ঐ মুহূর্তের একজন সঙ্গী হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে এবং দেশের অগ্রগতিতেতিনিও কোনও না কোনওভাবে অবদান রাখতে পারেন। এই ধরণের মুহূর্ত সচরাচর সৃষ্টি হয় না।কিন্তু এখন আমাদের কাছে আরেকটি সুযোগ উপস্থিত যখন দুর্নীতি, কালো টাকা ও জাল নোটেরবিরুদ্ধে এই মহাযজ্ঞে দেশের প্রত্যেক নাগরিক সামিল হতে পারেন। এই অভিযানে যতইআপনারা সাহায্যের হাত বড়িয়ে দেবেন, ততই সফল হয়ে উঠবে আমাদের এই বিশেষ প্রচেষ্টা।

দুর্নীতি ও কালো টাকা দৈনন্দিন জীবনযাত্রার অঙ্গ হয়ে ওঠায় উদ্বিগ্ন আমরাসকলেই। উইপোকা যেমন নষ্ট করে ফেলে সবকিছুই, ঠিক সেরকমভাবেই এই ধরণের চিন্তা ক্রমশগ্রাস করছে আমাদের রাজনীতি, প্রশাসন ও সমাজ ব্যবস্থাকে। এই ক্ষয় বা অবক্ষয় থেকেমুক্ত নয় কোনও সরকারি প্রতিষ্ঠানই।

আমি বারংবার লক্ষ্য করেছি যে, নাগরিকদের অধিকাংশকেই যদি বেছে নিতে বলা হয়অসততা ও দুর্ভোগ বা অসুবিধাকে, তাহলে তাঁরা অসুবিধা ভোগ করাকেই শ্রেয় বলে মনেকরেন। কারণ, কোনও অবস্থাতেই তাঁরা অসাধুতার সঙ্গে আপোষ করতে রাজি নন।

ঠিক যেভাবে আপনারা দেওয়ালির সময় আপনাদের বাড়ির চারপাশকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নকরে তোলেন, ঠিক সেইভাবেই এই দেশকে শুদ্ধ করার কাজে আপনারা এগিয়ে আসুন – আমি আরওএকবার এই আবেদন রাখছি আপনাদের কাছে।

সাময়িক দুর্ভোগ ও অসুবিধাকে আসুন আমরা উপেক্ষা করি

সংহতি ও বিশ্বাসযোগ্যতার এই উৎসবে আসুন আমরা সকলে সামিল হই

আগামী প্রজন্ম যাতে মর্যাদার সঙ্গে জীবন ধারণ করতে পারে, আসুন আমরা সেইপরিবেশ সম্ভব করে তুলি

দুর্নীতি ও কালো টাকার বিরুদ্ধে আসুন আমরা আমাদের সংগ্রাম চলিয়ে যাই

জাতীয় সম্পদ যাতে দরিদ্র মানুষের কল্যাণ সম্ভব করে তুলতে পারে, আসুন আমরাতা নিশ্চিত করি

যে সমস্ত নাগরিক আইনের অনুশাসন মেনে চলেন, তাঁরা যাতে তাঁদের ন্যায্যসুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত না হন, আসুন তা আমরা নিশ্চিত করি

ভারতের ১২৫ কোটি নাগরিকের ওপর আস্থা রয়েছে আমার। সুতরাং, দেশ যে সফল হবেই এবিষয়ে আমি আশাবাদী।

আপনাদের ধন্যবাদ। অনেক অনেক ধন্যবাদ।

নমস্কার

ভারতমাতার জয় হোক।

PG/SKD/ SB