Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

জাগরণ ফোরামে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর ভাষণ

জাগরণ ফোরামে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর ভাষণ

জাগরণ ফোরামে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর ভাষণ


শ্রদ্ধেয় শ্রী সঞ্জয় গুপ্ত, শ্রী প্রশান্ত মিশ্র এবং জাগরণ পরিবারে উপস্থিত সকল মাননীয় সদস্য,

কথিত আছে, ‘রাষ্ট্রায়ম জাগ্রয়াম বয়ম’অর্থাৎ, নিরন্তর সতর্কতাই স্বাধীনতার আসল মূল্য।আর, আপনারা তো নিজেরাই দৈনিক জাগরণ প্রক্রিয়ার অংশীদার।কখনও মনে হয়, মানুষ ২৪ ঘন্টার মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়ে, আবার তাঁদের জাগাতে হয়।কিন্তু গণতন্ত্রে প্রথম শর্তই হল, সজাগ থাকা।সতর্কতা যত বাড়বে সমস্যাগুলির সমাধানের পথও তত বেশি স্পষ্ট হয়ে উঠবে।সাধারণ মানুষের অংশীদারিত্ব বাড়বে।আর সাধারণ মানুষের অংশীদারিত্ব যত বাড়ে গণতন্ত্র ততটাই মজবুত হয়।উন্নয়নে গতি আসে, লক্ষ্যপ্রাপ্তি নিশ্চিত হয়।

এই অর্থেই গণতন্ত্রের প্রথম প্রয়োজন হচ্ছে নিরন্তর জাগরণ।কিন্তু, আমাদের দেশে গণতন্ত্রকে সীমিত অর্থে দেখা হয়; নির্বাচন, ভোটদান ও সরকার গঠন।নির্বাচন এলেই মনে হয়, সাধারণ মানুষ যেন আগামী পাঁচ বছরের জন্য কাউকে কন্ট্রাক্ট দেবে।তাঁদের সমস্যার সমাধান না করতে পারলে পাঁচ বছর পর তাঁদেরকে সরিয়ে অন্য কাউকে নিয়ে আসবে।এটাই আমাদের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ আবার সীমাবদ্ধতাও।গণতন্ত্র যদি ভোটদানে এবং সরকার নির্বাচনেই সীমাবদ্ধ থেকে যায়, তা হলে গণতন্ত্র পঙ্গু হয়ে পড়ে।

সাধারণ মানুষের অংশীদারিত্ব বাড়লেই গণতন্ত্র শক্তিশালী হয়।আমাদের দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে অসংখ্য বীর স্বাধীনতা সংগ্রামী আত্মাহুতি দিয়েছেন।দেশ পরধীন হওয়ার পর থেকে প্রায় প্রত্যেক দশকেই কিছু মানুষ বৃটিশের বিরুদ্ধে লড়াই করে ইতিহাসের পাতায় স্থান রেখেছেন।প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে নিরন্তর সংগ্রামের ফসল এই স্বাধীনতা।অবশ্য, গান্ধীজী এই আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি বদলে দিয়েছিলেন স্বাধীনতার স্পৃহাকে সাধারণ মানুষের মনে প্রোথিত করে দিয়ে গণআন্দোলনে রূপান্তরিত করেন।

দু-এক জন বীর শহীদের মোকাবিলা করা ইংরেজদের পক্ষে সহজ ছিল কিন্তু গান্ধীজীর নেতৃত্বে এই গণআন্দোলন যখন আক্রোশে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছিল, ইংরেজরা সেই আন্দোলনকে প্রতিরোধ করতে পারেনি।মহাত্মা গান্ধী এই আন্দোলনকে এত সরল করে দিয়েছিলেন যে, সাধারণ মানুষকে চরকা কেটে সুতো তৈরি করার মন্ত্র দিয়েছিলেন।তিনি বলতেন, আপনারা যদি স্বাধীনতার সিপাহী হতে চান, তা হলে গ্রামের মানুষকে শিক্ষিত করুন।তিনি পরিচ্ছন্নতার আন্দোলনও গড়ে তুলেছিলেন।এভাবে সুতো তৈরি, জনশিক্ষার প্রচার ও প্রসার এবং পরিচ্ছন্নতার আন্দোলনকে রাষ্ট্রের সামাজিক প্রয়োজনের সঙ্গে যুক্ত করে গণআন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন।কেবল সত্যাগ্রহ-ই নয়, সমাজ সংস্কারকেও তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামের একটি পথ হিসেবে গণআন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন।তাঁর এই আন্দোলনের ঢেউ দেশের প্রত্যেক প্রান্তকে আলোড়িত করে তুলেছিল।আজকের কোনও ম্যানেজমেন্ট গুরু কল্পনাও করতে পারবেন না যে, এক মুঠো লবণ কোনও সাম্রাজ্যের পতনের কারণ হতে পারে।এটা কী করে সম্ভব হয়েছে? কারণ, লবণ আন্দোলনটাও ছিল একটি গণআন্দোলন।

স্বাধীনতার পর দেশ যদি তাঁকে অনুসরণ করে সাধারণ মানুষের অংশীদারীত্বের মাধ্যমে দেশের উন্নয়নের মডেল রচনা করতো,সাধারণমানুষেরঅংশীদারিত্বকে অগ্রাধিকার দিত, তাহলে আজ যে ধারনা তৈরি হয়েছে, সব কাজ সরকার করবে, মনে করুন, গ্রামের পথে একটা গর্ত তৈরি হল, ৫০০ টাকা খরচ করে সেটা ঠিক করার পরিবর্তে গ্রামপ্রধান গ্রামের অন্য মুরুব্বিদের সঙ্গে নিয়ে ৭০০ টাকা জিপ গাড়ি ভাড়া করে রাজধানীতে এসে দরবার করেন।

কিন্তু, গান্ধীজীর মডেল ছিল, সবকিছু সাধারণ মানুষ করবে।স্বাধীনতার পর দেশ যদি তাঁকে অনুসরণ করে সাধারণ মানুষের অংশীদারীত্বের মাধ্যমে দেশের উন্নয়নের মডেল রচনা করলে আমরা সরকারের ভরসায় ধীর গতিতে এগোনোর বদলে সাধারণ মানুষের মিলিত উদ্যোগে কয়েকগুণ বেশি গতিতে উন্নয়ন সম্পাদন করতে পারতাম।তার ব্যাপকতা ও গভীরতা হতো অকল্পনীয়।সেজন্য ভারতের উন্নয়নে গণঅংশীদারিত্বের ভূমিকাকে স্বীকার করে নেওয়ার সময় এসেছে।সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তিকে সজাগ করে তুলতে হবে।মাস্টার মশাইদের মনে থাকা উচিত, আমি যখন শ্রেণীকক্ষে পড়াবো, তখন দেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নিয়ে নতুন প্রজন্মকে শিক্ষিত করে তোলার ব্রত নিয়ে পড়াবো।রেল কর্মচারীদের ভাবা উচিত, মানুষকে সঠিক সময়ে সঠিক স্থানে পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে আমি দেশের সেবা করছি।এভাবে ভাবলে দেখবেন, আপনাদের প্রতিদিনের কাজে কত আনন্দ পাবেন।

ইতিমধ্যেই ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’দেশে একটি গণআন্দোলনে পরিণত হয়েছে।এটা এমন এক উদ্যোগ, যা স্পর্শ করাই ছিল বেশ ঝামেলা।কারণ, যতই কাজ করুন না কেন, পরদিন দৈনিক জাগরণের প্রথম পৃষ্ঠায় ছবি ছেপে নীচে লেখা হতে পারে, মোদী বড় বড় কথা বলে কিন্তু এখানে আবর্জনার স্তুপ পড়ে আছে।এটাই বাস্তব, কিন্তু এদেশে কর্মসংস্কৃতি গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা ছিল।তবেই, এখানে যাঁরা বসে আছেন, আপনাদের মতো সাধারণ মানুষের ঘরেও ছোট বাচ্চাটি যখন বলবে, দাদু, মোদীজী মানা করেছেন যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলো না।আপনি তখন পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন করে রাখতে বাধ্য হবেন।এভাবেই গণআন্দোলন গড়ে উঠছে।

একটা সময় ছিল, যখন লালবাহাদুর শাস্ত্রী মহোদয় কিছু বললে দেসের মানুষ সেটা পালন করতেন।কিন্তু, আজ আর সেই পরিস্থিতি নেই।এর জন্য নেতারাই অনেকাংশে দায়ী।সততার মাধ্যমে সমাজকে সচেতন করতে পারলে পরিবর্তন আসতে বাধ্য।আমি যখন আবেদন রাখলাম, সম্পন্ন জনগণ দরিদ্র মানুষের স্বার্থে নিজেদের রান্নার গ্যাস সিলিন্ডারে ভর্তুকি ছেড়ে দিন, আমি জানি, কোনও কিছু ছেড়ে দেওয়া কত কঠিন কাজ।কিন্তু, আমি অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে বলছি সারা দেশের ৫২ লক্ষ মানুষ আমার আবেদনে সাড়া দিয়ে রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি ছেড়ে দিয়েছেন।তাঁদের এই ত্যাগ সমসংখ্যক দরিদ্র পরিবারকে ধোঁয়া থেকে মুক্ত হতে উপকৃত করেছে।ইতিমধ্যেই ৪৬ লক্ষ দরিদ্র পরিবারের কাছে ভর্তুকিযুক্ত গ্যাস সিলিন্ডার পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।শুধু তাই নয়, কার ছেড়ে দেওয়া সিলিন্ডার কোন্‌প্রান্তে কোন্‌দরিদ্র পরিবারে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে, তা জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে।এতটাই স্বচ্ছতার সঙ্গে এই প্রক্রিয়া জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

আমরা এখনও ইংরেজ আমলে তৈরি হওয়া আইন অনুসারে চলি।আমাদের পূর্বজরা পরাধীন ছিলেন, তাঁদের প্রতি শাসকের অবিশ্বাসের ফলশ্রুতি ঐ আইনগুলি দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বদলানো হওয়া উচিত ছিল না কি? দেশের মানুষকে বিশ্বাস করতে হবে।

আমি একথা বলছি না যে, যাঁরা জনপ্রতিনিধি, যাঁরা সরকারে আসীন, এমনকি, সরকারি আধিকারিক কিংবা যাঁরা কেরানি তাঁরা সকলেই সৎ।কিন্তু, জনগণের সঙ্গে প্রশাসনের ব্যবধান দূর করতে আস্থার পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে।একটি উদাহরণ দিই –যে কোনও সরকারি কাজে আবেদন করতে হলে সংশ্লিষ্ট সমস্ত নথি প্রত্যয়িত নকল করিয়ে জমা দিতে হয়।গেজেটেড অফিসারদের শরণাপন্ন হতে হয়।এখন কোন্‌গেজেটেড অফিসারের এতো খতিয়ে দেখার সময় আছে।অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাঁর ঘরের বাইরে যে মানুষটি বসেন তিনি স্ট্যাম্প লাগিয়ে আধিকারিকের কাছে নিয়ে গেলে সই করে দেন।আমরা এই প্রথা তুলে দেওয়ার চেষ্টা করছি।মানুষকে বিশ্বাস করলে, তাঁর সামর্থ্যকে স্বীকার করলে, সাধারণ মানুষের স্বার্থে কাজ করলে তবেই গণতন্ত্র লোকশক্তিতে রূপান্তরিত হতে পারে।

আমাদের দেশে গণতন্তের সামনে দুটো বিপদ রয়েছে।প্রথমটি হল, মন-তন্ত্র আর দ্বিতীয়টি হল, মনি-তন্ত্র।আজকাল দেখা যায়, নেতা এবং উচ্চ পদাধিকারিরা কোনও কাজ করে বলেন, আমার ইচ্ছে, আমার মনে হয়েছে তাই করেছি।কিন্তু, কারও মনে হওয়া দিয়ে কি দেশ চলে? মন-তন্ত্র দিয়ে দেশ চলে না গণতন্ত্র দিয়ে দেশ চলে।সেতারে একটি তার বেশি টান হলে সুর আসে না, আবার কোনও তার ঢিলে হলেও সুর আসে না।সেতারের প্রতিটি তার সমানভাবে টান হলেই সুরের মূর্চ্ছনা জেগে ওঠে।গণতন্ত্রের প্রাথমিক শর্ত হল –আমার মনে যা আসে তার সঙ্গে জনব্যবস্থাকে যুক্ত করে এগোতে হবে।অহংকার নয়, জনতার স্বার্থে কাজ করতে হবে।

দ্বিতীয় বিপদ –মনি-তন্ত্র, গণতন্ত্রের সর্বনাশ ডেকে আনতে পারে।একটা সময় ছিল যখন, সাংবাদিকতা, দেশের সকল খবরের কাগজ, সমাজ সংস্কারও স্বাধীনতা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।রাজা রামমোহন রায় কিংবা বীর নর্মদ-এর মতো মহাপুরুষরা সেই সময়ে সামাজিক অনাচারের বিরুদ্ধে কলম ধরেছিলেন।পরবর্তী সময়ে লোকমান্য তিলক, মহাত্মা গান্ধী, অরবিন্দ ঘোষ, সুভাষ চন্দ্র ঘোষ, লালালাজপত রায়ের কলম স্বাধীনতা সংগ্রামীদের উজ্জীবিত করে তুলেছিল।এঁদের মধ্যে অনেকেই নতুন নতুন খবরের কাগজ চালু করেছিলেন।সেই খবরের কাগজগুলির সম্পদকরা সরকারের অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে কলম ধরে কারাবরণ করেছেন।একবার স্বরাজ পত্রিকায় একটি বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হল, সেখানে লেখা ছিল – “আমাদের একজন সম্পাদক চাই, যাঁর বেতন হবে শুকনো রুটি, এক গ্লাস ঠান্ডা জল আর সম্পাদকীয় ছাপার পর কারাবাস”।এই বাক্যে কত শক্তি রয়েছে দেখুন।এলাহাবাদ থেকে প্রকাশিত এই খবরের কাগজটির সম্পদনার দায়িত্ব যিনিই নিতেন, তাঁকেই জেলে যেতে হতো, তবুও তাঁরা কলমের লড়াই চালিয়ে গেছেন।ভারতের অনেক শ্রদ্ধেয় নেতা ঐ খবরের কাগজের সম্পাদনা করে কারাবরণ করেছেন।কানাডা থেকে প্রকাশিত “গদর” সংবাদপত্র স্বাধীনতা সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।লালা হরদয়ালের নেতৃত্বে তখন উর্দু, গুরুমুখী এবং গুজরাটিতে এই কাগজটি প্রকাশিত হত।ম্যাডাম কামা, শ্যামজী কৃষ্ণ বর্মার মতো মহান সাংবাদিকরা লণ্ডনে বসে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে সমর্থনে কলম ধরে ব্রিটেনে জনমত গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন।সেই সময় ভীমজী খৈরাজ বর্মা সিঙ্গাপুরে বসে সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে কলম ধরেছিলেন।ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের সপক্ষে কলম ধরার ফলে তাঁকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল।আমার বলার তাৎপর্য হল, সংবাদ মাধ্যমকে গণতন্ত্রের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ইতিবাচক ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে।দৈনিক জাগরণের মাধ্যমে আপনারা যে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছেন, তা ‘রাষ্ট্রায়ম জাগ্রয়াম বয়ম’মন্ত্রকে প্রতিনিয়ত বাস্তবে রূপদানের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

আমি প্রায়ই ‘ন্যূনতম প্রশাসন, অধিকতম পরিষেবা’র কথা বলি।একটা সময় ছিল, নিজেদের শাসনকালে কোন্‌সরকার কতগুলি আইন প্রণয়ন করলো, তা নিয়ে গর্ব করতো।কিন্তু, আমাদের ইচ্ছা পাঁচ বছর শাসনকালে কতগুলি আইন নাকচ করতে পারি।আমরা অনেক অপ্রয়োজনীয় আইন চিহ্নিত করেছি।যেগুলি আমাদের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় প্রতি মূহুর্তে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।আমরা ইতিমধ্যেই কয়েকশো এরকম পরস্পর বিরোধি আইন বাতিল করে দিয়েছি।রাজ্যগুলিকেও অনুরোধ করেছি, এমনটি করতে।সাধারণ মানুষের সরকারকে এ ধরণের পরস্পর বিরোধী আইনের কবল থেকে মুক্ত করতে পারলে তবেই উন্নয়নে গতি আসবে।

ন্যূনতম প্রশাসন বলতে আমি বোঝাতে চাই, সাধারণ মানুষকে সরকারের অপেক্ষায় না থেকে আত্মনির্ভর করে গড়ে তোলা।মহাভারতের শান্তিপর্বে বলা হয়েছে–‘নও রাজা ন চ রাজ্যবাসী ন চ দন্ড ন দন্ডিকা সর্বে প্রজা ধর্মানেব রক্ষন্তি স্মঃ পরস্পর’ …… সাধারণ মানুষ যদি নিজ নিজ কর্তব্য পালন করেন, তা হলে সমাজ ব্যবস্থায় ভারসাম্য বজায় থাকবে।রাজ্য কিংবা রাজা, শাস্তি কিংবা শাস্তির বিধানের কোনও প্রয়োজন থাকবে না।

আমাদের দেশে এই গণতন্ত্রের সিদ্ধান্তগুলি যুগ যুগ ধরে স্বীকৃত ‘ওয়াদে ওয়াদে জায়তে তত্ত্ব গোধা’অর্থাৎ, যত ভিন্ন মত হবে গণতন্ত্রের শক্তি ততই মজবুত হবে।আর্থিক উন্নয়নের দৃষ্টি থেকে আমরা শুধু দুটি ক্ষেত্রের কথাই শুনে এসেছি।প্রথমটি ‘প্রাইভেট সেক্টর’আর দ্বিতীয়টি ‘পাবলিক সেক্টর’।আমরা মনে করি, এই দুটি ক্ষেতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থেকে আমাদের ব্যক্তিগত ক্ষেত্রকেও এগিয়ে নিয়ে গেলে দেশের উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত হবে।

এই ব্যক্তিগত ক্ষেত্র কতটা শক্তিশালী তা আমরা বুঝতে পারবো যদি জানতে পারি যে, আমাদের দেশের অর্থনীতিকে কাঁরা পরিচালনা করেন।যে ১২-১৫টি বড় বড় কর্পোরেট হাউস রয়েছে, যেগুলি কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করে, সেগুলি? না মশাই, আমাদের দেশে সর্বাধিক কর্মসংস্থান দেয়, দেশের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।পান ওয়ালা, ভেলপুরী, ফুচকাওয়ালা, ধোপা, নাপিত, রিক্সার মালিক –এরকম ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের নেটওয়ার্ক।এই নিম্ন মধ্যবিত্ত ব্যবসায়ীরাই আমাদের দেশের অর্থনীতিকে সজীব রেখেছেন।আমরা এই ব্যক্তিগত ক্ষেত্রকে ক্ষমতায়নের উপায় খুঁজে বের করেছি।‘প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনা’প্রণয়নের মাধ্যমে নানা আইনের জটিলতা মুক্ত করে, ব্যাঙ্কের মাধ্যমে তাঁদেরকে কম সুদে ঋণদানের মাধ্যমে আমরা অর্থনীতিকে গতিপ্রদান করেছি।

এঁদের মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ তপশিলি জাতি, তপশিলি উপজাতি এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণীর মানুষ, দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া মানুষ।এঁরাই দেশের প্রায় ১২-১৪ কোটি মানুষকে কর্মসংস্থান দেন।কেউ একজনকে কেউ বা দু’জনকে হলেও দেন।তাঁদের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে ১৫-২০ কোটি মানুষকে কর্মসংস্থান সুনিশ্চিত করতে পেরেছি।

‘প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনা’র মাধ্যমে তাদেরকে মাত্র ১০ হাজার, ১৫ হাজার, ২৫ হাজার, ৫০ হাজার টাকা ঋণদানেরমাধ্যমে আমরা নীরবে তাদের ক্ষমতায়নের কাজ করে যাচ্ছি।ইতিমধ্যেই প্রায় ৬২ লক্ষ পরিবারের হাতে প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা পৌঁছে দিতে পেরেছি।এই মানুষেরা এত সাহসী যে, এই টাকাকে সদ্ব্যবহার করে বিনা নোটিশে প্রায় ৯৯ শতাংশ ইতিমধ্যেই ঋণ শোধ করতে শুরু করে দিয়েছেন।
অর্থাৎ, আমরা প্রমাণ করতে পেরেছি, এই ব্যক্তিগত ক্ষেত্রের ক্ষমতায়ন দেশের দরিদ্র জনসাধারণকে দেশের অর্থনীতির অংশগ্রহণে সক্ষম করে তুলেছে।মধ্যবিত্তদের কথাও আমরা ভাবছি।উচ্চ মেধা-সম্পন্ন নবীন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা অধিকাংশ মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসে।তাদের কল্পনাশক্তি রয়েছে, নতুন নতুন উদ্ভাবনের মাধ্যমে দেশকে আধুনিক করে গড়ে তুলতে এদের অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।আন্তর্জাতিক স্তরে প্রতিযোগিতায় এরাই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন।তাঁদের স্বার্থে আমরা ‘স্টার্ট আপ ইন্ডিয়া স্ট্যান্ড আপ ইন্ডিয়া’মন্ত্রকে সামনে রেখে এগিয়ে চলেছি।

আমরা ব্যাঙ্কগুলিকে বলেছি, সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের প্রত্যেক ব্যাঙ্কের প্রতিটি শাখা নিদেনপক্ষে একজন দরিদ্র মানুষ এবং একজন মহিলার ক্ষমতায়নে পাশে দাঁড়াক।আমাদের দেশে সমস্ত ব্যঙ্কের মোট ১ লক্ষ ২৫ হাজার শাখা রয়েছে।প্রতিটি শাখা যদি এরকম দু’জনের পাশে দাঁড়ায়, তা হলে প্রতি বছর প্রায় আড়াই লক্ষ স্বউদ্যোগ গড়ে তুলতে সাহায্য করতে পারে।এই ছোট ছোট সংস্থাগুলি মিলিত প্রভাব দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে তুলবে।নতুন নতুন আবিষ্কার এবং বিশ্ব বাজারে প্রতিস্পর্ধী পণ্য উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।আমার বিশ্বাস, এই নতুন নীতি ভারতের নবীন প্রজন্মকে যে শক্তি প্রদান করবে, তা দেশে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনবে।

এভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রের মানুষদের ক্ষমতায়ন, আইনি সরলীকরণের মাধ্যমে বিশ্ব অর্থনীতিতে দেশকে প্রতিস্পর্ধী করে গড়ে তুলতে যে সহযোগী ব্যবস্থাপনা সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া প্রয়োজন সেগুলিকে আমরা অগ্রাধিকার দিচ্ছি।

সংসদের অধিবেশন প্রতিবন্ধকতায় চলা উচিত।বিরোধী দলগুলির যাই বলার থাকুক না কেন, তা সংসদের বিতর্কে অংশগ্রহণ করে বলা উচিত।আমরা গরিব কর্মচারীদের বোনাস সম্পর্কিত একটি আইন এনেছি।তাঁদের মাসিক রোজগার ৭ হাজার টাকার কম হলে তবেই তাঁরা ৩ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত বোনাস পান।আমাদের আনা নতুন আইনে এক্ষেত্রে ন্যূনতম বেতন ৭ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২১ হাজার করার প্রস্তাব রেখেছি।সেক্ষেত্রে তাঁদের বোনাসও সাড়ে তিন হাজার টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৭ হাজার টাকা হবে।কিন্তু, আমি দুঃখের সঙ্গে বলছি, সংসদে শীতকালীন অধিবেশনে প্রতিবন্ধকতার কারণে সাধারণ মানুষের স্বার্থে রচিত এই আইন আমরা প্রণয়ন করতে পারছি না।

সংসদে কী নিয়ে আলোচনা হয়? পণ্য পরিষেবা কর।এই পণ্য পরিষেবা কর নিয়ে আলোচনা জরুরি।কিন্তু, এর মাধ্যমে গরিব মানুষের কী উপকার হবে, সাধারণ মানুষেরই বা কী উপকার হবে? সেজন্যই আমরা সবাইকে বিনম্র অনুরোধ জানাচ্ছি, অধিবেশন চালু রাখুন, সেখানে বিরোধ-বিতর্ক সব কিছু চলতে পারে।কিন্তু, আমরা গণতন্ত্রের প্রাণভোমরা এই প্রতিষ্ঠানকে অস্বীকার করলে আমাদের দিকেই আঙুল উঠবে।সেজন্যই আমি আজ আপনারা দৈনিক জাগরণের বন্ধুরা যে আদর্শ নিয়ে এগিয়ে চলেছেন, তাকে সম্মান জানাই।সংসদ হল গণতন্ত্রের মন্দির, তার গরিমা এবং সাধারণ মানুষের স্বার্থে দ্রুত আইন প্রণয়ন করতে হবে।আমরা তাকে কিভাবে গতিশীল করবো, কিভাবে শক্তিশালী এবং ফলদায়ক করে গড়ে তুলবো, তা আমাদের ওপরই নির্ভর করছে।আমি সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পগুলি সম্পর্কে অনেক কথা বলতে পারি, কিন্তু আজ সেগুলি নিয়ে আর বলছি না।অনেক হয়েছে।অনেক অনেক ধন্যবাদ।

PG/SB/SB