Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

চার সদস্যের অবসরগ্রহণ উপলক্ষ্যে রাজ্যসভায় প্রধানমন্ত্রীর মূল ভাষণ


নতুনদিল্লি, ০৯.০২.২০২১

এই সদনের শোভা বৃদ্ধি করেছেন, সদনে প্রাণসঞ্চার  করেছেন এবং সদনের মাধ্যমে জনসেবায় ব্রতীন হয়েছেন, আমাদের এমন চারজন বন্ধু, তাঁদের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ায় নতুন কাজের দিকে এগিয়ে চলেছেন।

শ্রী গোলাম নবী আজাদজি, শ্রী শামসের সিংজি, মীর মহম্মদ ফিয়াজজি, নাদির আহমেদজি; আপনাদের অভিজ্ঞতা, আপনাদের জ্ঞান সদন এবং দেশের উপকারে ব্যবহার করার জন্য এবং আপনাদের অঞ্চলের সমস্যাগুলি সমাধান করার জন্য, আপনাদের সবরকম যোগদানের জন্য আমি সবার আগে আপনাদের ধন্যবাদ জানাতে চাই।

মীর মহম্মদজি এবং নাজির আহমেদজি, এই দু’জন সদস্যকে সম্ভবত খুব কম মানুষই সদনে খেয়াল করেছেন, তবে এরকম একটাও অধিবেশন যায়নি যেখানে এঁদের সঙ্গে আমার চেম্বারে বসে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা শোনার বা বোঝার সুযোগ হয়নি। এমনকি কাশ্মীরের সূক্ষ্ম বিষয়গুলি নিয়েও আলোচনা হত যখন আমি ওঁদের সঙ্গে বসতাম, কখনও কখনও তাঁরা পরিবারের সঙ্গেও আসতেন,  আমার সামনে এমন অনেক দিক তুলে ধরতেন, যাতে আমি বিশেষ উৎসাহ বোধ করতাম। সুতরাং, আমি আমার দুই বন্ধুকে, যাঁদের সঙ্গে আমার সদনের বাইরেও বন্ধুত্ব ছিল এবং আমি তাঁদের থেকে যে জ্ঞানলাভ করেছি, সেজন্য আমি তাঁদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। আমি নিশ্চিত যে তাঁদের সংকল্পের দৃঢ়তা ও দক্ষতা দেশের জন্য এবং বিশেষত জম্মু ও কাশ্মীরের কল্যাণে সহায়ক হবে। আমি নিশ্চিত যে তা দেশের ঐক্য, সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি বাড়াতে সফল হবে।

আমাদের একজন সহকর্মী শামসের সিংজি, এখন তো মনেও পড়ে না আমি কত বছর ধরে তাঁর সঙ্গে কাজ করছি কারণ আমি সংগঠনের  মানুষ। আমি ওই ক্ষেত্রেই কাজ করতাম। বহু বছর আমি জম্মু-কাশ্মীরে কাজ করার সুযোগও পেয়েছি, তাই আমার সহকর্মী হিসেবে তাঁর সঙ্গে এক স্কুটারে ভ্রমণের সুযোগ হয়েছিল। যাঁরা খুব অল্প বয়সে জরুরি অবস্থায় জেলে গিয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে শামসের সিংজি অন্যতম। এবং এই সদনে শামসেরজির উপস্থিতি ৯৬%, যা প্রমাণ করে যে জনগণ তাঁকে যে দায়িত্ব দিয়েছে  তা তিনি পুরোপুরি পালন করার চেষ্টা করেছেন। ইনি মৃদুভাষী ও সরল এবং আমি বিশ্বাস করি যে জম্মু ও কাশ্মীর থেকে অবসর নেওয়া চারজন সম্মানিত সদস্যের জন্য এটাই তাঁদের জীবনের সেরা সময়, কারণ ইতিহাস নতুন মোড় নিয়েছে এবং তাঁরা এর সাক্ষী হয়েছেন, সহযাত্রী হয়েছেন। এটা তাঁদের জীবনের একটা বিশেষ মূহুর্ত।

শ্রী গুলাম নবীজি, আমি উদ্বিগ্ন যে গুলাম নবীজির পরে যিনি এই পদটি সামলাবেন, তাঁর গুলাম নবীজির বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে তাল মেলাতে বেশ সমস্যা হবে। কারণ গুলাম নবীজি তাঁর দল নিয়ে চিন্তিত থাকলেও দেশ ও সদন নিয়েও সমানভাবে উদ্বিগ্ন ছিলেন। এটা কোনও ছোট বিষয় নয়, এটা খুবই বড় ব্যাপার, নাহলে বিরোধী দলের নেতা হিসেবে কর্তৃত্ব বজায় রাখা সহজ, এরকম মোহ সবারই হতে পারে। তবে তিনি সদন থেকে… আমি শরদ পাওয়ারজিকেও এই পর্যায়ে রাখব, তাঁরা অন্যতম সেই নেতা, যারা সদন এবং দেশের চিন্তাকে প্রাধান্য দিয়েছেন… গুলাম নবীজি এই কাজটি ভালভাবে পালন করেছেন।

আমার মনে আছে এই করোনার সময়েই আমি ফ্লোর লিডার্সদের সঙ্গে বৈঠক করছিলাম, সেদিনই আমি গুলাম নবীজির কাছ থেকে ফোন পেলাম – মোদীজি এটা তো ঠিক আছে, আপনি করুন, তবে একটা কাজ করুন, সমস্ত দলের নেতাদের একটি বৈঠক অবশ্যই ডাকুন। আমার ভালো লাগলো যে তিনি আমাকে দলীয় নেতাদের পাশাপাশি, সমস্ত দলের সভাপতিদের সঙ্গেও বসার পরামর্শ দিয়েছিলেন এবং আমি এই বৈঠক করেওছি। সেটা আমি গুলাম নবীজির পরামর্শেই করেছিলাম… এবং আমার এটা বলতে… অর্থাৎ এই ধরণের যোগাযোগ এবং এর মূল কারণ হ’ল ওনার দু-পক্ষেরই অভিজ্ঞতা রয়েছে, ক্ষমতাসীন দল এবং বিরোধী দলের হয়েও। ২৮ বছরের মেয়াদ, এটা নিজের মধ্যেই একটা বড় অভিজ্ঞতা।

অনেক দিন আগের কথা, হয়তো তখন অটলজির সরকার ছিল, আমার মনে নেই, আমি এখানে সদনে কোনও কাজে এসেছিলাম। আমি তখন রাজনীতিতে ছিলাম না, মানে ভোট রাজনীতিতে ছিলাম না, সংগঠনের হয়ে কাজ করতাম। তাই আমি আর গুলাম নবীজি এমনিই লবিতে গল্প করছিলাম। এবং সাংবাদিকরা যেমন হয়, কীভাবে এই দু’জনের মধ্যে ভাব হতে পারে সেদিকে তারা নজর রাখছিলেন। আমরা হেসে হেসে কথা বলছিলাম, বাইরে আসতেই সাংবাদিকরা আমাদের চারপাশে ঘিরে ফেলল। গুলাম নবীজি খুব ভাল উত্তর দিয়েছিলেন। এই উত্তরটি আমাদের জন্য উপযুক্ত ছিল। তিনি বললেন, ভাই, আপনি আমাদের খবরের কাগজে বা টিভি মিডিয়া বা জনসভায় লড়াই করে দেখছেন, কিন্তু বাস্তবে এই ছাদের নীচে আমরা পরিবারের মতো পরিবেশে থাকি। আমাদের এত সখ্যতা, এত সুখ ও দুঃখ আছে। এই স্পিরিট থাকাটাও একটা বড় জিনিস।

সম্ভবত খুব কম লোকই গুলাম নবীজির আরেকটা শখের ব্যাপারে জানে এবং আপনি কখনও তাঁর সঙ্গে বসলে আপনাকেও বলবেন। আমরা যখন সরকারি বাংলোয় থাকি, বাংলোর দেয়াল, সোফাসেট, এর চারপাশেই আমাদের মন ঘুরতে থাকে, কিন্তু গুলাম নবীজি সেই বাংলোয় যা একটি বাগান তৈরি করেছেন, যা আমাদের কাশ্মীর উপত্যকাকে স্মরণ করিয়ে দেবে। এবং তিনি এটা নিয়ে গর্বিতও, উনি সময় দেন, নতুন নতুন জিনিস নিয়ে আসেন এবং প্রতিবার যখন প্রতিযোগিতা হয়, ওনার বাংলোই প্রথম হয়। অর্থাৎ, নিজের সরকারি জায়গাও এত সুন্দর করে রেখেছেন, অর্থাৎ সমস্ত মন দিয়ে এর পরিচর্যা করেছেন।

আপনি যখন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, তখন আমিও একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কাজ করতাম। সেই সময়ে আমাদের মধ্যে খুব ঘনিষ্ঠতা ছিল। আমাদের মধ্যে কোনও সম্পর্ক সেতু ছিল না, এরকম সময় হয়তো খুঁজেই পাওয়া যাবে না। একবার গুজরাট থেকে ভ্রমণকারী একটি দ্ল- কারণ জম্মু ও কাশ্মীরে ঘুরতে যায় গুজরাটে এমন প্রচুর সংখ্যক পর্যটক রয়েছে – এবং সন্ত্রাসবাদীরা তাদের ওপর আক্রমণ করে। সম্ভবত আট জন নিহত হয়েছিল। প্রথমেই, আমার কাছে গুলাম নবীজির ফোন আসে এবং সেই ফোনটি কেবল তথ্য দেওয়ার জন্য নয়। ফোনে তাঁর কান্না থামছিল না। প্রণব মুখার্জি তখন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ছিলেন। আমি তাঁকে ফোন করলাম , আমি বললাম- স্যার, সেনাবাহিনীর বিমান যদি পাওয়া যায়, শব আনার জন্য , তখন গভীর রাত হয়ে গেছে। মুখার্জি সাহেব বলেছিলেন, “চিন্তা করবেন না, আমি ব্যবস্থা করছি।” কিন্তু রাতে গুলাম নবীজি আবার ফোন করেছিলেন – তিনি বিমানবন্দরে ছিলেন। সেই রাতে, তিনি আমাকে বিমানবন্দর থেকে ফোন করেছিলেন এবং তিনি তাঁর পরিবারের সদস্যের মতো উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন…।

পদ, ক্ষমতা জীবনে আসতেই থাকে, তবে তা কীভাবে ব্যবহার করব… সেটা আমার জন্য খুব আবেগময় মুহূর্ত ছিল। পরের দিন সকালে ফোন আসে যে সবাই পৌঁছেছে? অতএব, একজন বন্ধু হিসেবে আমি গুলাম নবীজিকে ঘটনা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে শ্রদ্ধা করি এবং আমি নিশ্চিত যে তাঁর সৌম্যভাব, তাঁর নম্রতা, এই দেশের জন্য কিছু করার আকাঙ্ক্ষা, তাঁকে কখনই শান্তিতে বিশ্রাম নিতে দেবে না। এবং আমি নিশ্চিত, যে কোনও দায়িত্ব, যেখানেই তিনি পরিচালনা করবেন, তিনি অবশ্যই মূল্য সংযোজন করবেন, অবদান রাখবেন, এবং দেশও তাঁর কাছ থেকে উপকৃত হবে, এটা আমি বিশ্বাস করি। আমি আবারও তাঁর অবদানের জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানাই। এবং ব্যক্তিগতভাবে আমি তাঁকে অনুরোধ করব যেন তিনি মন থেকে  না মানেন যে তিনি আর সদনের অংশ নন। আমার দরজা সবসময় আপনার জন্য খোলা। মাননীয় চার সদস্যদের জন্যই উন্মুক্ত। আপনাদের চিন্তাভাবনা, আপনাদের পরামর্শ, কারণ দেশে সবকিছু খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই অভিজ্ঞতা খুব প্রয়োজনীয়। আমি এই প্রত্যাশা রাখব যে আমি তা পাব। আমি আপনাদের ছেড়ে দেব না। আবারও, শুভেচ্ছা।

ধন্যবাদ

***

 

CG/JD