Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

চতুর্থ বিমস্টেক শীর্ষ বৈঠকের ঘোষণাপত্র, কাঠমান্ডু, নেপাল (৩০-৩১ আগস্ট, ২০১৮)

চতুর্থ বিমস্টেক শীর্ষ বৈঠকের ঘোষণাপত্র, কাঠমান্ডু, নেপাল (৩০-৩১ আগস্ট, ২০১৮)


 

আমরা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, ভুটান রাজের প্রধান উপদেষ্টা, ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী, মায়ানমার প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি, নেপালের প্রধানমন্ত্রী, শ্রীলঙ্কার গণতান্ত্রিক সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি, থাইল্যান্ড রাজের প্রধানমন্ত্রীরা, ২০১৮-র ৩০-৩১শে আগস্ট কাঠমান্ডুতে চতুর্থ বিমস্টেক শীর্ষ বৈঠকে মিলিত হয়েছিলাম।

 

আমরা ১৯৯৭-এর ব্যাঙ্কক ঘোষণাপত্রে উল্লিখিত বিমস্টেকের নীতি ও উদ্দেশ্যের প্রতি পুনরায় আমাদের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে, নে পি ট’তে গৃহীত (২০১৪-র ৪ঠা মার্চ) তৃতীয় বিমস্টেক ঘোষণাপত্র ও গোয়ায় (২০১৬-র ১৬ই অক্টোবর) বিমস্টেক নেতৃবৃন্দের আলোচনা সংক্রান্ত নথির কথা স্মরণ করে বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলকে শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ ও সুষমভাবে গড়ে তুলতে অভিন্ন শক্তি ও সমষ্টিগত উদ্যোগের বিষয়ে একমত হয়েছি।

 

আমাদের দেশগুলির ভৌগোলিক নৈকট্য, পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক ও মানবসম্পদ, সমৃদ্ধ ঐতিহাসিক যোগাযোগ এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, এই অঞ্চলের চিহ্নিত প্রধান ক্ষেত্রগুলিতে সহযোগিতাকে গভীরতর করে তোলার বিরাট সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। আমরা আমাদের উন্নয়নের লক্ষ্য পূরণে দারিদ্র্য দূরীকরণকে আঞ্চলিক পর্যায়ের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসাবে স্বীকার করেছি। এছাড়া, সুষম উন্নয়ন বিষয়ে ‘২০৩০-এর কর্মসূচি’ রূপায়ণে একযোগে কাজ করার বিষয়ে দৃঢ় অঙ্গীকার গ্রহণ করেছি। বিমস্টেক সদস্য রাষ্ট্রগুলির অর্থনীতি ও সামাজিক পর্যায়ে বর্ধিত আন্তর্যোগাযোগ এবং আন্তর্নির্ভরশীলতা, আঞ্চলিক পর্যায়ে সহযোগিতা বৃদ্ধির আরও সুযোগ এনে দিয়েছে। আমাদের সকলের সমৃদ্ধির জন্য অর্থনৈতিক অখণ্ডতা গড়ে তুলতে বহুমাতৃক যোগাযোগের ওপর আমরা গুরুত্ব দিয়েছি।

 

এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নকে লালন করতে, বাণিজ্য ও বিনিয়োগকে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হিসেবে আমরা বিবেচনা করি। এই অঞ্চলের কম উন্নত ও ভূমিবদ্ধ উন্নয়নশীল দেশগুলির বিশেষ পরিস্থিতি ও প্রয়োজনকে স্বীকৃতি দিয়ে সংশ্লিষ্ট দেশগুলির উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় অর্থবহ সহায়তা প্রদানের প্রয়োজনীয়তার ওপর আমরা জোর দিয়েছি।

 

বিমস্টেক রাষ্ট্রগুলি সহ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে শান্তি ও নিরাপত্তার বড় বিপদ হিসাবে সন্ত্রাসবাদ ও আন্তর্দেশীয় সংগঠিত অপরাধকে চিহ্নিত করে, ক্রমাগত উদ্যোগ ও সহযোগিতার মাধ্যমে ও সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গিতে সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা গড়ে তোলার ওপর আমরা গুরুত্ব দিয়েছি।

 

অর্থবহ সহযোগিতা ও গভীর অখণ্ডতার মাধ্যমে সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ এবং সুষম বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চল গড়ে তোলার কাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে বিমস্টেক গোষ্ঠীকে এক গতিশীল, দক্ষ এবং ফলাফলমুখী আঞ্চলিক সংগঠন হিসাবে তৈরি করার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছি। আমরা একটি ন্যায্য, আইন-ভিত্তিক, সমতা-ভিত্তিক, স্বচ্ছ আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার প্রয়োজনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছি। আমরা রাষ্ট্রসঙ্ঘ-কেন্দ্রিক বহুপাক্ষিকতা ও আইন-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক ব্যবস্থার ওপর আমাদের দৃঢ় আস্থা ব্যক্ত করেছি। বিমস্টেকের আওতায় আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার গুরুত্বের ওপর আমরা জোর দিয়েছি।

 

ভুটানের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার অংশগ্রহণ ও মতামতকে এবং শীর্ষ বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলি যে সে দেশের পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের অনুমোদনসাপেক্ষ সে বিষয়ে আমরা ওয়াকিবহাল।

 

1.      আমরা ১৯৯৭ সালের ব্যাঙ্কক ঘোষণাপত্রে নিহিত নীতিগুলি স্মরণ করে বিমস্টেকের মধ্যে সহযোগিতার বিষয়টিকে জোর দিই। এই সহযোগিতা সার্বভৌম সমতা, ভৌগোলিক অখণ্ডতা, রাজনৈতিক স্বাধীনতা, অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ না করা, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং পারস্পরিক সুবিধার ভিত্তিতে গড়ে উঠবে।

 

2.      আমরা ১৯৯৭ সালের ব্যাঙ্কক ঘোষণাপত্রে উল্লিখিত বিমস্টেকের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণে আমাদের উদ্যোগকে আরও জোরদার করার বিষয়ে একমত হয়েছি এবং বিমস্টেককে একটি শক্তিশালী, আরও দক্ষ এবং ফলাফলমুখী সংগঠন হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সমষ্টিগতভাবে কাজ করার জন্য পুনরায় শপথ নিয়েছি। বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলকে শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ এবং সুষম হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

 

3.      আমরা বিমস্টেকের অনন্য অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে সেতুবন্ধ গঠন করে এই অঞ্চলে অর্থনৈতিক এবং সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে বর্ধিত সহযোগিতার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। এছাড়া, আমাদের এই সংগঠনকে শান্তি, সমৃদ্ধি ও সুষমতার লক্ষ্যে এক কার্যকর সংগঠন হিসাবে গড়ে তোলার জন্য সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে সহযোগিতাকে আরও গভীর ও সুসংহত করে তোলার প্রতি আমাদের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছি।

 

4.      আমরা বিমস্টেকভুক্ত দেশগুলি সহ বিশ্বের সমস্ত স্থানে সন্ত্রাসবাদী হামলার নিন্দা করি এবং সমস্ত ধরণের সন্ত্রাসবাদকে, তা সে যে কারণেই সংঘটিত হোক না কেন, তার নিন্দা করি এবং জোরের সঙ্গে বলতে চাই যে কোন কারণেই সন্ত্রাসমূলক তৎপরতাকে যুক্তিগ্রাহ্য বলে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। আমরা জোরের সঙ্গে বলতে চাই যে, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কেবলমাত্র সন্ত্রাসবাদী, সন্ত্রাসবাদী সংগঠন বা নেটওয়ার্কগুলিকে লক্ষ্য করলেই চলবে না, তাদের মদতদাতা রাষ্ট্রীয় কিংবা অন্য কোন সংগঠনই হোক না কেন, তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কারণ, এই ধরণের সংগঠন সন্ত্রাসবাদের আর্থিক সহায়তা দেয়, সন্ত্রাসবাদীদের আশ্রয় দেয় এবং তাদের হয়ে প্রচার চালায়। আমরা সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় আমাদের দৃঢ় প্রত্যয় জ্ঞাপন করি এবং এই কাজে সমস্ত দেশকে একজোট হয়ে একটি সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গিতে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানাই। এই কাজগুলির মধ্যে রয়েছে সন্ত্রাসবাদীদের আর্থিক সহায়তাপ্রদান বন্ধ করা, কোন দেশের ভৌগোলিক এলাকার মধ্যে সন্ত্রাসবাদীদের কাজ করতে না দেওয়া, সীমান্ত পেরিয়ে সন্ত্রাসবাদীদের যাতায়াত বন্ধ করা, সন্ত্রাসবাদী আদর্শে যুবকদের প্ররোচনা দেওয়া বন্ধ করা, সন্ত্রাসবাদীদের কাজের লক্ষ্যে ইন্টারনেটের অপব্যবহার বন্ধ করা এবং সন্ত্রাসবাদীদের স্বর্গরাজ্য হিসেবে পরিচিত স্থানগুলিকে ভেঙে ফেলা।

 

5.      আমরা রাষ্ট্রসঙ্ঘের সনদের নীতি এবং উদ্দেশ্যের প্রতি আমাদের বিশ্বাস ব্যক্ত করি এবং এই বহুপাক্ষিক সংস্থাকে সংস্কারের মাধ্যমে আরও জোরদার করে তোলা এবং এটিকে সমসাময়িক বিশ্ব পরিস্থিতির সঙ্গে প্রাসঙ্গিক করে তোলার লক্ষ্যে কাজ করে যাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছি। কারণ আমরা মনে করি, এই বিশ্ব সংস্থাকে জোরদার করার মাধ্যমেই বিশ্বের চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবিলা করা সম্ভব এবং আমাদের সমষ্টিগত স্বার্থ সুরক্ষিত করা সম্ভব।

 

প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার

 

6.      আমরা বিমস্টেক সংগঠনের একটি সনদের প্রাথমিক খসড়া প্রস্তুত করার জন্য এর সচিবালয়কে নির্দেশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ১৯৯৭-এর ব্যাঙ্কক ঘোষণাপত্রের ভিত্তিতে এই সংগঠনের একটি দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গি এবং সহযোগিতা বিষয়ে অগ্রাধিকার নিয়ে এই খসড়ায় একটি রূপরেখা থাকবে। এছাড়া, এই রাষ্ট্রজোটের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াসম্বলিত এই খসড়াটি বিমস্টেকের স্থায়ী কার্যকরী কমিটি ও অন্যান্য উচ্চতর সংস্থার বিবেচনার পর বিমস্টেকের পঞ্চম শীর্ষ বৈঠকে অনুমোদনের কথা ভাবা হয়েছে। অন্যদিকে, বিমস্টেকের একটি নিজস্ব কার্যপদ্ধতি প্রণয়নের বিষয়েও আমরা একমত হয়েছি।

 

7.      আমরা বিমস্টেকের জন্য একটি স্থায়ী কার্যকরী কমিটি প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এই সমিতি প্রশাসনিক এবং আর্থিক বিষয়ে কাজ করবে। এছাড়া, রাষ্ট্রজোটের বিভিন্ন ধরণের বৈঠকের সময়সূচি এবং জোটের কাজকর্মের অগ্রাধিকার নির্ধারণ করবে।

 

8.      একটি বিমস্টেক উন্নয়ন তহবিল প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে আমরা সদস্য রাষ্ট্রগুলির সংশ্লিষ্ট মন্ত্রক / জাতীয় সংস্থাগুলিকে নির্দেশ দিয়েছি। সদস্য রাষ্ট্রগুলির কাছ থেকে স্বেচ্ছায় অর্থদানের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে এই তহবিল গড়ে তোলা হবে। বিমস্টেকের গবেষণা এবং পরিকল্পনার কাজে এবং বিভিন্ন ধরণের প্রকল্প ও কর্মসূচি রূপায়ণে এই অর্থ ব্যবহার করা হবে।

 

9.      আমরা বিমস্টেক সচিবালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি, আর্থিক ক্ষমতা ও মানবসম্পদ বৃদ্ধি করে, বিমস্টেকের বিভিন্ন ধরণের কাজকর্ম এবং কর্মসূচি রূপায়ণ, সমন্বয় এবং নজরদারির সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এছাড়া, সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে মতৈক্যের ভিত্তিতে গৃহীত বিভিন্ন প্রকল্প রূপায়ণ, ন্যস্ত দায়িত্ব পালন এবং প্রত্যেক সদস্য রাষ্ট্র থেকে একজন করে প্রতিনিধি নিয়ে অধিকর্তার সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

 

10.  আন্তর্জাতিক মঞ্চে বিমস্টেকের পরিচিতি এবং মর্যাদা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সদস্য রাষ্ট্রগুলির অভিন্ন স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে এক অবস্থান গ্রহণ করা এবং বহুপাক্ষিক বিভিন্ন সংগঠনে ও তাদের কর্মপ্রক্রিয়ায় গোষ্ঠীগত স্বীকৃতি আদায় করার উদ্যোগ নেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

 

11.  বিমস্টেকের সহযোগিতার প্রধান প্রধান ক্ষেত্রগুলিতে কাজের অগ্রগতির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া, পর্যালোচনা, কাঠামোগত সংস্কার এবং বিমস্টেক সহযোগিতার প্রচলিত ক্ষেত্রগুলিতে যৌক্তিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার বিষয়েও আমরা একমত হয়েছি। অন্যদিকে, বিমস্টেকের বিভিন্ন ধরণের প্রকল্প ও কর্মসূচি রূপায়ণের মাধ্যমে যথাযথ সুফল নিশ্চিত করার জন্য কাজের উন্নতি ঘটানোর কথাও ভাবা হয়েছে। বিমস্টেকের সহযোগিতার মূল স্তম্ভগুলির অগ্রাধিকার পরিবর্তন বিষয়ে থাইল্যান্ড যে ধারণাপত্র পেশ করেছে, তা নিয়ে বিমস্টেকের স্থায়ী কার্যকরী সমিতিতে আরও আলোচনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

 

12.  যে সমস্ত আইনগত নথি এবং ব্যবস্থা অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে অনুমোদনের জন্য বকেয়া রয়েছে, সেগুলি দ্রুততার সঙ্গে চূড়ান্ত করা এবং অনুমোদনেরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

 

13.  আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে সব দেশ কাজের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ঘটিয়েছে, তাদের প্রশংসা করেছি এবং আরও অগ্রগতির জন্য তাদের উৎসাহিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

 

14.  বিমস্টেকের পূর্বতন মহাসচিব মিঃ সুমিথ নাকান্ডলা এই রাষ্ট্রজোটের কাজের অগ্রগতির ক্ষেত্রে যে অবদান রেখে গেছেন তার জন্য তাঁর কাজের প্রশংসা করা হয়েছে এবং বাংলাদেশের মিঃ এম শাহিদুল ইসলামকে বিমস্টেকের মহাসচিব পদে স্বাগত জানানো হয়েছে।

 

15.  ২০১৪-র মার্চ মাস থেকে বিমস্টেকের নেতৃত্বদানের জন্য নেপালের প্রতি প্রশংসা এবং রাষ্ট্রজোটের নতুন চেয়ারম্যান পদে শ্রীলঙ্কাকে স্বাগত জানানো হয়েছে।

 

16.  নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শীর্ষ বৈঠক আয়োজনের সিদ্ধান্তের প্রতি পুনরায় দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে। এছাড়া, আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রক্রিয়াকে আরও জোরদার করতে বিমস্টেকের আওতায় অন্যান্য সভা ও সম্মেলন আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

 

17.  এই ঘোষণাপত্রের সংযুক্ত অংশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান বিষয়ে নীতি-নির্দেশিকা, অঙ্গীকার এবং বিবৃতি যুক্ত করার বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি।

 

18.  বিমস্টেকের বর্তমান শীর্ষ সম্মেলন আয়োজনের ক্ষেত্রে নেপাল সরকার যে উষ্ণ আতিথেয়তা দেখিয়েছে এবং অসাধারণ সম্মেলন আয়োজনের ব্যবস্থা নিয়েছে তার স্বীকৃতিতে আমরা তাদের প্রতি প্রশংসা ব্যক্ত করেছি।

 

ক্ষেত্রীয় পর্যালোচনা :

দারিদ্র্য দূরীকরণ

1.      আমরা ২০৩০-এর সুষম উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ২০৩০-এর মধ্যে বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলে দারিদ্র্য দূরীকরণের অঙ্গীকার পুনরায় ব্যক্ত করছি। আমরা এই লক্ষ্য অর্জনে যথাযথভাবে দারিদ্র্য দূরীকরণ বিষয়ে বিমস্টেকের কর্মপরিকল্পনা রূপায়ণের আহ্বান জানাই। সবক’টি ক্ষেত্রের কাজকে এই লক্ষ্য অর্জনে জোরদার করার আহ্বান রাখতে চাই।

 

2.      আমরা আমাদের জাতীয় অর্থনীতির উৎপাদনশীল ও পরিষেবা ক্ষেত্রে বর্ধিত বিনিয়োগের মাধ্যমে আমাদের কর্মীদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করি।

 

পরিবহণ ও যোগাযোগ

 

3.      আমরা এই অঞ্চলে মহাসড়ক, রেল, জলপথ, সমুদ্রপথ, বিমান যোগাযগ গড়ে তোলা, প্রসার এবং আধুনিকীকরণের মাধ্যমে বহু ধরণের পরিবহণ সংযুক্তি এবং সুসমন্বিত ও সরলীকৃত যোগাযোগের সুবিধা গড়ে তোলার বিষয়ে আমাদের অঙ্গীকারের ওপর পুনরায় জোর দিতে চাই। আমরা সদস্য রাষ্ট্রগুলির বিশেষ পরিস্থিতি ও প্রয়োজন বিবেচনা করে উপকূল যোগাযোগ সংক্রান্ত বিমস্টেক চুক্তি এবং বিমস্টেক মোটরযান চুক্তি সম্পাদনের কাজ চূড়ান্ত করার উদ্যোগ নিতে নিজ নিজ কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিতে চাই।

 

4.      আমরা পরিবহণ সংযোগ বিষয়ে বিমস্টেক মাস্টার প্ল্যান প্রণয়নের কাজে সন্তোষ ব্যক্ত করতে চাই। যতো দ্রুত সম্ভব এই মাস্টার প্ল্যান রূপায়ণের আহ্বান জানাই। এটি প্রণয়নে সহায়তা করার জন্য এশীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্ককে ধন্যবাদ জানাই। এই মাস্টার প্ল্যান রূপায়ণের জন্য বিমস্টেক পরিবহণ সংযোগ সংক্রান্ত কর্মীগোষ্ঠীকে নীতি-পদ্ধতি ঠিক করার দায়িত্ব দিতে চাই। তবে এক্ষেত্রে সদস্য রাষ্ট্রগুলির বিশেষ পরিস্থিতি ও প্রয়োজনের কথা মাথায় রাখা দরকার। আমরা এ বিষয়ে একমত হয়েছি যে, এই অঞ্চলে বর্ধিত সংযোগ সুবিধা অর্জনে এবং সুষম উন্নয়নের লক্ষ্যে এই মাস্টার প্ল্যানটি কৌশলগত নথি হিসাবে এবং কাজের নীতি-নির্দেশিকা হিসাবে আদর্শ হয়ে উঠবে। এছাড়া “সংযোগ বিষয়ক ২০২৫ সালের জন্য মাস্টার প্ল্যান” এবং দ্য আয়েয়াওয়াদি “চাও ফ্রায়া মেকং অর্থনৈতিক সহযোগিতা সংক্রান্ত রণকৌশল”-এর মতো যোগাযোগ কাঠামোর মধ্যে সমন্বয়সাধন করবে।

 

5.      আমরা এই অঞ্চলের মানুষের জন্য সুলভে উচ্চগতির ইন্টারনেট সংযোগ ও মোবাইল যোগাযোগের ব্যবস্থা করতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সংক্রান্ত বিষয়ে একটি কর্মীগোষ্ঠী গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এই প্রসঙ্গে ২০১৮-র ২৫ থেকে ২৭শে অক্টোবর নতুন দিল্লীর ইন্ডিয়া মোবাইল কংগ্রেসের পাশাপাশি ঐ সময়ে বিমস্টেকের মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনের আয়োজন বিষয়ে ভারত সরকারের প্রস্তাবকে আমরা স্বাগত জানাই। “নতুন ডিজিটাল দিগন্ত : যোগাযোগ, সৃষ্টি, উদ্ভাবন” শীর্ষক এই মূল সুরে আয়োজিত এই সম্মেলনে সকল সদস্য রাষ্ট্রকে অংশগ্রহণের জন্য আহ্বান জানাই।

 

বাণিজ্য ও বিনিয়োগ

 

6.      আমরা বিমস্টেকের মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল সংক্রান্ত আলোচনার দ্রুত নিষ্পত্তি বিষয়ে পুনরায় অঙ্গীকার ব্যক্ত করি এবং যত দ্রুত সম্ভব বিমস্টেক মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল চুক্তি ও অন্যান্য চুক্তি সম্পাদনে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য বিমস্টেক বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রী পর্যায়ের সভাকে নির্দেশ দিতে চাই। আমরা পণ্য বাণিজ্য ও সীমাশুল্ক সহযোগিতা চুক্তির জন্য আলোচনার অগ্রগতিতে সন্তোষ ব্যক্ত করতে চাই এবং আমাদের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রক / এজেন্সিগুলিকে বাণিজ্যিক বিষয়ের আলোচনা সংক্রান্ত কমিটির বৈঠকে নিয়মিত যোগ দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিতে চাই।

 

7.      আমরা বিমস্টেক ব্যবসায়িক মঞ্চ ও অর্থনৈতিক মঞ্চের কাজকে জোরদার করে বাণিজ্য ও বিনিয়োগে উৎসাহ দিতে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের মধ্যে সহযোগিতাকে শক্তিশালী করতে চাই। এছাড়া, ভিসা সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ গোষ্ঠীকে এ সংক্রান্ত ভিসা সুবিধা চুক্তির নীতি-পদ্ধতি চূড়ান্ত করতে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব দিতে চাই।

 

8.      আমরা ২০১৮-র ডিসেম্বর মাসে একটি স্টার্ট-আপ সম্মেলন আয়োজনের বিষয়ে ভারত সরকারের প্রস্তাবকে স্বাগত জানাই এবং এতে সদস্য রাষ্ট্রগুলিকে অংশগ্রহণের জন্য আহ্বান জানাই।

 

সন্ত্রাসবাদ ও সীমান্তপারের অপরাধ প্রতিরোধ

 

9.      সন্ত্রাসবাদ যে আমাদের অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে গভীর সমস্যার সৃষ্টি করছে, এ বিষয়ে আমরা আমাদের অবস্থানের প্রতি পুনর্অঙ্গীকার ব্যক্ত করি এবং সব ধরণের সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণে একমত হয়েছি।

 

10.  আমরা অপরাধ সংক্রান্ত বিষয়ে পারস্পরিক আইনি সহায়তার জন্য বিমস্টেক চুক্তি স্বাক্ষরের অপেক্ষায় আছি এবং সমস্ত সদস্য রাষ্ট্রগুলিকে এই চুক্তি অনুমোদনের আহ্বান জানাই। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ, অপরাধ ও মাদকপাচার মোকাবিলায় সহযোগিতা চুক্তিটি অনেকগুলি সদস্য রাষ্ট্র অনুমোদন করায় সন্তোষ ব্যক্ত করতে চাই এবং বাকি রাষ্ট্রগুলিকেও চুক্তি অনুমোদনের জন্য অনুরোধ জানাই।

 

11.  আমরা সন্ত্রাসবাদ ও বহুজাতিক অপরাধ মোকাবিলায় সমন্বয় ও সহযোগিতা বৃদ্ধির অঙ্গ হিসাবে বিমস্টেকের জাতীয় নিরাপত্তা প্রধানদের বৈঠক চালিয়ে যেতে চাই এবং আইন রূপায়ণ, গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় এবং নিরাপত্তা সংস্থাগুলির মধ্যে সহযোগিতা বিষয়ে বিমস্টেকের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠক আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

 

12.  ২০১৯-এর মার্চ মাসে বিমস্টেকের দেশগুলির জাতীয় নিরাপত্তা প্রধানদের তৃতীয় বৈঠক আয়োজনের জন্য থাইল্যান্ডের প্রস্তাবকে স্বাগত জানাই।

 

পরিবেশ ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়

 

13.  বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলে প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলায় প্রস্তুতির উন্নতি ও সমন্বয়সাধনের লক্ষ্যে এক আন্তঃসরকারি বিশেষজ্ঞ গোষ্ঠী গঠন করে একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এছাড়া তথ্য বিনিময়, আগাম সতর্কতার ব্যবস্থা, প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ, পুনর্বাসন এবং সক্ষমতা বৃদ্ধি করে বিপর্যয় পরিচালনের ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়েও আমরা একমত হয়েছি।

 

জলবায়ু পরিবর্তন

 

14.  আমরা হিমালয় ও পার্বত্য পরিবেশ ব্যবস্থায় ক্ষতি ও বাস্তুতন্ত্রের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের খারাপ প্রভাব এবং বঙ্গোপসাগরীয় ও ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে তার প্রভাব বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করি। আমরা এই সমস্যা মোকাবিলায় পরিবেশকে সুরক্ষিত রাখতে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে মানুষের জীবন ও জীবিকার ওপর প্রভাব মোকাবিলায় সহযোগিতাকে জোরদার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এই অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যা মোকাবিলায় যৌথ উদ্যোগের জন্য একটি আন্তঃসরকারি বিশেষজ্ঞ গোষ্ঠী গঠন ও একটি কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা যায় কি না তার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে একমত হয়েছি। এছাড়া, আমরা জাতীয় পরিস্থিতি ও দায়বদ্ধতার কথা মাথায় রেখে অভিন্ন নীতি ও পৃথক দায়িত্বের ভিত্তিতে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি কার্যকর করার বিষয়ে আমাদের অঙ্গীকার ব্যক্ত করি।

 

শক্তি

 

15.  এই অঞ্চলে শক্তিসম্পদের সম্ভাবনাকে স্বীকৃতি দিয়ে পুনর্নবীকরণযোগ্য ও পরিচ্ছন্ন শক্তি বিষয়ে একে অপরের সঙ্গে একযোগে কাজ করা ও শক্তি সহযোগিতা বিষয়ে একটি সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়নের বিষয়ে একমত হয়েছি। এছাড়া, জলবিদ্যুৎ ও অন্যান্য পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি আন্তঃসরকারি বিশেষজ্ঞ গোষ্ঠী গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

 

16.  শক্তি বাণিজ্য সহ, আমাদের নাগরিকদের জন্য নিরবচ্ছিন্ন ও সুলভ বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা করতে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বিমস্টেকের বিদ্যুৎ গ্রিড সংযোগ সংক্রান্ত সমঝোতা স্বাক্ষরকে আমরা স্বাগত জানাই। এই সমঝোতা রূপায়ণের জন্য প্রতিবন্ধকতাগুলি দূর করতে এবং সত্ত্বর বিদ্যুতের বিমস্টেক গ্রিড স্থাপন নিশ্চিত করতে আমাদের দেশের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলিকে নির্দেশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এছাড়া এই অঞ্চলে শক্তি সহযোগিতাকে আরও জোরদার করতে বিমস্টেক শক্তি কেন্দ্রটিকে সত্ত্বর কার্যকর করার জন্যও আমরা আহ্বান জানাতে চাই।

 

প্রযুক্তি

 

17.  আমরা এই অঞ্চলের সমস্ত ক্ষেত্রে সুষম উন্নয়নের লক্ষ্যে বিশেষ করে ক্ষুদ্র, মাঝারি ও অতিক্ষুদ্র সংস্থাগুলির জন্য সুলভে প্রযুক্তির ব্যবস্থা করতে সহযোগিতা বাড়াতে রাজি হয়েছি। আমরা শ্রীলঙ্কায় বিমস্টেক প্রযুক্তি হস্তান্তর সুবিধা গড়ে তুলতে সদস্য রাষ্ট্রগুলির সমঝোতা স্মারকপত্রে স্বাক্ষরদানকে স্বাগত জানাই।

 

18.  এছাড়া, অত্যাধুনিক প্রযুক্তির পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলার কথা মাথায় রেখে এই অঞ্চলে মানবসম্পদ বিকাশ ও শিক্ষার উন্নয়নে সহযোগিতার দিকে নজর দিতে রাজি হয়েছি।

 

কৃষি

 

19.  আমরা কৃষি ও সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে, বিশেষ করে ফসল, প্রাণীসম্পদ, উদ্যানপালন, কৃষি যন্ত্রপাতি, ফসল তোলার কাজকে উন্নত করে সুষমভাবে উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর লক্ষ্যে সহযোগিতাকে গভীরতর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এছাড়া খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা অর্জনের লক্ষ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য সদস্য রাষ্ট্রগুলির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব দিয়েছি। অন্যদিকে, চিরাচরিত কৃষি পদ্ধতির অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানকে সংরক্ষণ করা, প্রচলিত কৃষি ও আধুনিক কৃষির মধ্যে সামঞ্জস্য আনা, চাষের ব্যয় হ্রাস করা, আয় বৃদ্ধি করা এবং কৃষক সমাজের জীবিকার ঝুঁকি হ্রাস করা বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এই উদ্যোগের লক্ষ্য হচ্ছে এই অঞ্চলের দেশগুলির মধ্যে কৃষিভিত্তিক বাণিজ্যিক লেনদেন বাড়ানো এবং তার ফলশ্রুতিতে দারিদ্র্য দূরীকরণ, কর্মসৃজন এবং আমাদের দেশগুলির সাধারণ মানুষের জীবনমানের উন্নতি করা।

 

20.  আমরা ২০১৯-এর মধ্যে কৃষি সংক্রান্ত প্রথম বিমস্টেক মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক আয়োজন বিষয়ে মায়ানমারের এবং ২০১৯-এ জলবায়ুর উপযুক্ত কৃষি ব্যবস্থা সংক্রান্ত বিমস্টেক সেমিনার আয়োজনের জন্য ভারতের প্রস্তাবকে স্বাগত জানাই।

 

মৎস্যচাষ

 

21.  আমরা এই অঞ্চলের সামুদ্রিক সম্পদের সংরক্ষণ, পরিচালন এবং সুষম ব্যবহারের ক্ষেত্রে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার ওপর জোর দিয়েছি। আমরা মৎস্যচাষের ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়িয়ে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং আমাদের সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকার উন্নয়নের লক্ষ্যে মৎস্যচাষের ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতে একমত হয়েছি। অন্যদিকে, সুষমভাবে সামুদ্রিক মৎস্য আহরণের ক্ষেত্রে অর্থবহ সহযোগিতার সম্ভাবনা খুঁজে বের করতে সংশ্লিষ্ট জাতীয় সংস্থাগুলিকে দায়িত্ব দিতে চাই। ভূমিবদ্ধ সদস্য রাষ্ট্রগুলির ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ মৎস্যচাষের উন্নয়নের সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছি।

 

জনস্বাস্থ্য

 

22.  বিমস্টেক-এর ভৌগোলিক এলাকার মধ্যে সংক্রমণযোগ্য নয় এই ধরনের রোগ-ব্যাধি ও সব দেশের জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যাগুলি মোকাবিলায় সহযোগিতা প্রসারিত করতে একমত হয়েছি। আমরা মনে করি এই অঞ্চলের দেশগুলিতে এইচআইভি / এড্‌স, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, টিবি ও বিভিন্ন ধরণের ইনফ্লুয়েঞ্জা এই অঞ্চলের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকে বিঘ্নিত করতে পারে। আমরা এই অঞ্চলের দেশগুলিতে চিরাচরিত চিকিৎসা ও চিরাচরিত ঔষধি ব্যবস্থার ক্ষেত্রে সহযোগিতা চালিয়ে যাওয়ার জন্য তথ্য ও অভিজ্ঞতা বিনিময় ও কর্মী প্রশিক্ষণের মতো বিষয়ে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। চিরাচরিত ঔষধি ব্যবস্থার ক্ষেত্রে সহযোগিতার উদ্যোগ গ্রহণের জন্য আমরা থাইল্যান্ডের প্রচেষ্টার প্রশংসা করি।

 

জনসংযোগ

 

23.  আমরা সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ে মানুষে মানুষে যোগাযোগকে উৎসাহিত করতে আস্থা ও সমঝোতা গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিমস্টেক বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিমস্টেকের নীতি সংক্রান্ত চিন্তাগোষ্ঠীর কাজে আমরা সন্তোষ ব্যক্ত করতে চাই এবং এই চিন্তাগোষ্ঠীর কর্মপদ্ধতি নির্ধারণের জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলিকে নির্দেশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

 

24.  আমরা বিমস্টেক দেশগুলির সাংসদ, বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষা ও গবেষণা সংস্থা, সাংস্কৃতিক সংস্থা এবং গণমাধ্যমের মধ্যে মানুষে-মানুষে যোগাযোগ আরও বাড়িয়ে তোলার লক্ষ্যে উপযুক্ত মঞ্চ গড়ে তোলার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে একমত হয়েছি।

 

সাংস্কৃতিক সহযোগিতা

 

25.  আমরা সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় বৃদ্ধি করে আমাদের দেশের মানুষের মধ্যেকার ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক যোগাযোগকে আরও শক্তিশালী করতে চাই। আমাদের নাগরিকদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের জন্য সহমর্মিতা গড়ে তুলতে বৌদ্ধ ধর্মাদর্শকে সংযোগসূত্র হিসাবে বিশেষ গুরুত্ব দিতে চাই এবং এই লক্ষ্যে একটি বৌদ্ধ সার্কিট বা সাংস্কৃতিক যাত্রাপথ গড়ে তোলার জন্য অঙ্গীকার ব্যক্ত করি।

 

26.  আমরা বিমস্টেক গোষ্ঠীর সংস্কৃতি মন্ত্রীদের বৈঠক এবং নিয়মিতভাবে বিমস্টেক সাংস্কৃতিক উৎসব আয়োজনের বিষয়ে একমত হয়েছে। আমরা এক্ষেত্রে দ্বিতীয় বিমস্টেক মন্ত্রী পর্যায়ের সংস্কৃতি সংক্রান্ত বৈঠক এবং বিমস্টেক সাংস্কৃতিক উৎসব আয়োজনের যে প্রস্তাব বাংলাদেশ দিয়েছে তাকে স্বাগত জানাতে চাই এবং এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে আমাদের সংস্কৃতি মন্ত্রীদের অংশগ্রহণের জন্য জোরালো সুপারিশ করতে চাই।

 

পর্যটন

 

27.  আমরা বিমস্টেক দেশগুলির অভ্যন্তরে পর্যটন উন্নয়নে নির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণে একমত হয়েছি। ২০০৫-এ কলকাতায় বিমস্টেক অঞ্চলে পর্যটন উন্নয়নের যে কর্মপরিকল্পনা গৃহীত হয়েছিল তা রূপায়ণের লক্ষ্যে কৌশল উদ্ভাবনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব দিতে চায়। ২০০৬-এ কাঠমান্ডুতে বিমস্টেক গোষ্ঠীর পর্যটন মন্ত্রীদের যে গোলটেবিল ও কর্মশালায় এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল তার ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণে একমত হয়েছি। আমরা এই অঞ্চলের দেশগুলিতে পর্যটকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করে যোগাযোগের সুব্যবস্থা করে, পর্যটন উন্নয়নের উদ্যোগ নিতে চাই। আমরা বৌদ্ধ পর্যটন সার্কিট, মন্দির পর্যটন সার্কিট, প্রাচীন শহরগুলির জন্য পর্যটন ব্যবস্থা, পরিবেশ পর্যটন এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত পর্যটনের উন্নয়নে পুনরায় আমাদের অঙ্গীকার ব্যক্ত করতে চাই। ২০২০ সালে নেপাল সফর বর্ষ উদযাপনের পাশাপাশি, সেখানে বিমস্টেক-এর পর্যটন সম্মেলন আয়োজনে নেপালের প্রস্তাবকে আমরা স্বাগত জানাই।

 

পার্বত্য অর্থনীতি

 

28.  আমরা আমাদের দেশগুলির পার্বত্য অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্র ও জীববৈচিত্র্যকে সংরক্ষণের জন্য সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি। বিমস্টেক দেশগুলির পার্বত্য অর্থনীতি উন্নয়নে নেপাল সরকার যে ধারণাপত্র পেশ করেছে আমরা তাকে স্বাগত জানাই এবং এ বিষয়ে একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতে একটি আন্তঃসরকারি বিশেষজ্ঞ গোষ্ঠী তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

 

নীল অর্থনীতি

 

29.  আমরা নীল অর্থনীতির গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে এই অঞ্চলের সুষম উন্নয়নের লক্ষ্যে এই ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতে একমত হয়েছি। নীল অর্থনীতি সংক্রান্ত একটি কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য একটি আন্তঃসরকার বিশেষজ্ঞ গোষ্ঠী গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে এক্ষেত্রে ভূমিবদ্ধ সদস্য রাষ্ট্রগুলির বিশেষ পরিস্থিতি ও প্রয়োজনের কথা মাথায় রাখতে হবে।

 

30.  ২০১৭-য় বাংলাদেশে যে আন্তর্জাতিক নীল অর্থনীতি সম্মেলন হয়েছিল সে বিষয়ে আমরা সন্তোষ ব্যক্ত করতে চাই।

 

 

 

CG/PB/DM/