Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

গ্লোবাল মেরিটাইম ইন্ডিয়া সামিট ২০২৩ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের বঙ্গানুবাদ

গ্লোবাল মেরিটাইম ইন্ডিয়া সামিট ২০২৩ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের বঙ্গানুবাদ


নয়াদিল্লী, ১৭ অক্টোবর, ২০২৩

 

নমস্কার, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত সমস্ত অতিথিগণ, আমার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সহযোগীবৃন্দ, মহারাষ্ট্র ও গোয়ার মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী, উপমুখ্যমন্ত্রী, অন্যান্য গণ্যমান্য অতিথিগণ, ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ,

গ্লোবাল মেরিটাইম ইন্ডিয়া সামিট এর তৃতীয় পর্বে আমি আপনাদের সবাইকে অভিনন্দন জানাই। এর আগে যখন আমরা ২০২১ সালে মিলিত হয়েছিলাম, তখন গোটা বিশ্ব করোনা মহামারীর অনিশ্চয়তায় পরিবৃত ছিল। কেউ জানতেন না যে করোনার পর বিশ্ব কেমন হবে। কিন্তু আজ বিশ্বে একটি নতুন “ওয়ার্ল্ড অর্ডার” বা বিশ্বক্রম সাকার হচ্ছে। আর এই পরিবর্তিত বিশ্বক্রমে সমগ্র পৃথিবী ভারতের দিকে নতুন নতুন আকাঙ্খা নিয়ে তাকিয়ে রয়েছে। আর্থিক সংকটে পরিবৃত বিশ্বে ভারতের অর্থনীতি ক্রমাগত শক্তিশালী হচ্ছে। সেই দিন দূরে নেই যখন ভারত বিশ্বের শ্রেষ্ঠ তিনটি অর্থনৈতিক শক্তির অন্যতম হয়ে উঠবে। আমরা সবাই জানি যে বিশ্বের অধিকাংশ বাণিজ্য সমুদ্রপথেই হয়। করোনা পরবর্তী বিশ্বে আজ বিশ্ববাসী একটি বিশ্বস্ত এবং স্থিতিস্থাপক সরবরাহ শৃঙ্খলের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে। সেইজন্যই গ্লোবাল মেরিটাইম ইন্ডিয়া সামিট-এর এই পর্বটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। 

বন্ধুগণ,

ইতিহাস সাক্ষী রয়েছে যে যখনই ভারতের সমুদ্র বাণিজ্য ও সার্বিক সামুদ্রিক ক্ষমতা শক্তিশালী হয়েছে তা দেশ ও বিশ্বের জন্য অত্যন্ত লাভজনক প্রমাণিত হয়েছে। এই ভাবনা নিয়েই বিগত ৯-১০ বছর ধরে আমরা নিজেদের দেশের জন্য এই ক্ষেত্রটিকে আরও মজবুত করে তোলার পরিকল্পনা নিয়ে সময় নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে কাজ করে চলেছি। সম্প্রতি ভারতের উদ্যোগে এমন একটি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে যা একবিংশ শতাব্দীতে সারা পৃথিবীর সমুদ্র নির্ভর শিল্প ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনার সামর্থ রাখে। গত জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের সময় ভারত-মধ্যপ্রাচ্য-ইউরোপ অর্থনৈতিক করিডর নিয়ে একটি ঐতিহাসিক সম্মতিপত্র তৈরি হয়েছে। কয়েক হাজার বছর আগে সিল্ক রুট বা রেশম পথ যেভাবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে গতি প্রদান করেছিল, তেমনি এই পথগুলি বিশ্বের অনেক দেশের উন্নয়নের ভিত্তিও গড়ে তুলেছিল। এখন এই ঐতিহাসিক ভারত-মধ্যপ্রাচ্য-ইউরোপ অর্থনৈতিক করিডরও ক্ষেত্রীয় এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সার্বিক চিত্রকে বদলে দেবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে নেক্সড জেনারেশন মেগা পোর্টস বা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উপযোগী বৃহৎ সমুদ্র বন্দর এবং ইন্টারন্যাশনাল কন্টেইনার ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্ট নির্মাণের মাধ্যমে অসংখ্য সমুদ্র দ্বীপের উন্নয়ন, অন্তর্দেশীয় জলপথগুলি ও মাল্টিমডেল হাবস-এর সম্প্রসারণ এর মতো বেশ কিছু বড় কাজ করা হবে। ভারত-মধ্যপ্রাচ্য-ইউরোপ অর্থনৈতিক করিডর চালু হলে সংশ্লিষ্ট দেশগুলির সমস্ত ব্যবসায়ীদের আমদানি-রপ্তানীর খরচ যেমন কমবে, তেমনি সামগ্রিক বাণিজ্যিক পণ্য পরিবহণের দক্ষতাও বাড়বে, পরিবেশ দূষণ কমবে আর এ থেকে বৃহৎ সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানও হবে। বিনিয়োগকারীদের সামনে এটা একটা বড় সুযোগ। তাঁরা ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়ে এই অভিযানে অংশীদার হয়ে উঠতে পারেন। 

বন্ধুগণ,

আজকের ভারত আগামী ২৫ বছরে উন্নত ভারতে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে চলেছে। আমরা প্রতিটি ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনছি। আমরা সামুদ্রিক পরিবহন পরিকাঠামোর সম্পূর্ণ বাস্তু ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার জন্য ক্রমগত কাজ করে চলেছি। বিগত এক দশকে ভারতের বৃহৎ সমুদ্র বন্দরগুলির ক্ষমতা দ্বিগুণ বাড়ানো হয়েছে। পণ্য পরিবাহী জাহাজগুলির “টার্ন অ্যারাউন্ড টাইম” আজ থেকে ৯-১০ বছর আগে ২০১৪ সালে গড়ে প্রায় ৪২ ঘণ্টা ছিল, যা ২০২৩-এ হ্রাস পেয়ে গড়ে ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ে আনা গেছে। দেশের বিভিন্ন সমুদ্র বন্দরগুলির সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত করতে আমরা কয়েক হাজার কিলোমিটার নতুন উন্নত সড়কপথ নির্মাণ করেছি। সাগরমালা প্রজেক্টের মাধ্যমে আমাদের তটবর্তী এলাকার পরিবহন পরিকাঠামো আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে। এই সমস্ত প্রচেষ্টা দেশে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির হার এবং “ইজ অফ লিভিং”কে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। 

বন্ধুগণ,

“পোর্টস ফর প্রসপারিটি” বা সমৃদ্ধির জন্য বন্দর এবং “পোর্টস ফর প্রগ্রেস” বা উন্নয়নের জন্য বন্দর, আমাদের এই দৃষ্টিকোণ কর্মক্ষেত্রে ক্রমাগত পরিবর্তন আনছে। কিন্তু আমাদের কাজ “পোর্টস ফর প্রোডাকটিভি” বা উৎপাদনের জন্য বন্দর এর মন্ত্রকেও এগিয়ে নেয়ে গেছে। অর্থনীতির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য আমাদের সরকার পণ্য পরিবহন ক্ষেত্রটিকে আরও কার্যকরী এবং দক্ষ করে তুলছে। ভারত তার “কোস্টাল শিপিং মোড” বা তটবর্তী জাহাজ পরিবহণ ব্যবস্থারও আধুনিকীকরণ করছে। 

বন্ধুগণ,

বিগত এক দশকে সমুদ্র তটবর্তী পণ্য পরিবহনকারী জাহাজের যাতায়াত দ্বিগুণ হয়েছে। এর ফলে সংশ্লিষ্ট সকলেরই পণ্য পরিবহনে সাশ্রয় হচ্ছে। ভারতে অন্তর্দেশীয় জলপথ উন্নয়নের ফলেও অনেক বড় পরিবর্তন আসছে। বিগত দশকে অন্তর্দেশীয় জলপথে পণ্য পরিবহণ প্রায় ৪ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের প্রচেষ্টায় গত ৯ বছরে লজিস্টিক্স পারফরমেন্স ইনডেক্সে ভারতের স্থান উন্নত হয়েছে। 

বন্ধুগণ,

জাহাজ নির্মাণ এবং মেরামতির ক্ষেত্রটিকে আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছি। আমাদের স্বদেশী বিমান পরিবহনকারী জাহাজ আইএনএস ভিক্রান্ত ভারতের ক্ষমতা এবং ভারতের সামর্থের প্রমাণ। আগামী দশকগুলিতে ভারত বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ৫টি জাহাজ নির্মাণকারী দেশের অন্যতম হয়ে উঠতে চলেছে। আমাদের মন্ত্র হল “মেক ইন ইন্ডিয়া, মেক ফর ওয়ার্ল্ড মেরিটাইম ক্লাস্টার্স।” আমাদের এই ভারতেই জাহাজ ও যন্ত্রাংশ উৎপাদন ও বিশ্ব সমুদ্র পরিবহণের উপযোগী করে উৎপাদনের মাধ্যমে আমরা জাহাজ নির্মাণ সংশ্লিষ্ট সমস্ত বিভাগকে একসঙ্গে নিয়ে আসার “ইন্টেগ্রেটেড অ্যাপ্রোচ” নিয়ে কাজ করছি। আগামীদিনে আমরা দেশের বিভিন্ন স্থানে জাহাজ নির্মাণ এবং মেরামতি কেন্দ্র গড়ে তুলতে চলেছি। জাহাজ পুনর্নবীকরণ ক্ষেত্রেও ভারত ইতিমধ্যেই বিশ্বের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। আমাদের বৃহৎ সমুদ্র বন্দরগুলিকে কার্বন নিউট্রাল করে তুলতে আমরা সামুদ্রিক পরিবহন ক্ষেত্রে “নেট জিরো স্ট্রাটেজি” অবলম্বন করে কাজ করছি। আমরা এমন একটি ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে চলেছি যেখানে নীল অর্থনীতি বিশ্বকে আরও সবুজ করে তোলার মাধ্যম হয়ে উঠবে।

বন্ধুগণ,

বিশ্বের বড় বড় মেরিটাইম অপারেটররা ভারতে আসুন, ভারত থেকেই আপনাদের বাণিজ্য সঞ্চালনা করুন, আপনাদের জন্য অনুকূল পরিবেশ গড়ে তুলতে ভারত দ্রুত গতিতে কাজ করছে। গুজরাটে আধুনিক “জিআইএফটি সিটি” গড়ে তুলে জাহাজ ভাড়া দেওয়ার বিষয়টিকে একটি প্রধান অর্থনৈতিক পরিষেবা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। “জিআইএফটি আইএফএসসি” এর মাধ্যমে জাহাজ ভাড়া দেওয়া কোম্পানীগুলিতে অনেক ধরনের ছাড় দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে বিশ্বের চারটি বড় জাহাজ ভাড়া দানকারী কোম্পানী “জিআইএফটি আইএফএসসি”-তে নাম নথিভুক্ত করিয়েছে। এই শীর্ষ সম্মেলনে আগত অন্যান্য জাহাজ ভাড়াদানকারী কোম্পানীকেও আমি “জিআইএফটি আইএফএসসি”-এর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।  

বন্ধুগণ,

ভারতে বিশাল তটরেখা রয়েছে। শক্তিশালী অন্তদের্শীয় নদী বাস্তু ব্যবস্থা রয়েছে। আর রয়েছে উন্নত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। এই সব কিছু মিলে আমাদের দেশে মেরিটাইম ট্যুরিজম বা সমুদ্র পর্যটনের নতুন নতুন সম্ভাবনা গড়ে উঠছে। ভারতে প্রায় ৫ হাজার বছর পুরনো লোথাল সমুদ্র বন্দর রয়েছে যা বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্যতম। এক দিক থেকে দেখতে গেলে লোথালকে “ক্র্যাডেল অফ শিপিং” বা সমুদ্র পরিবহনের আঁতুড়ঘর বলা যেতে পারে। এই বিশ্ব ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ করার জন্য লোথালে “ন্যাশনাল মেরিটাইম হেরিটেজ কমপ্লেক্স” ও নির্মাণ করা হচ্ছে। মুম্বাই থেকে লোথাল খুব বেশি দূরে নয়। আপনাদের সকলের প্রতি আমার অনুরোধ যে আপনারা অবশ্যই লোথাল ঘুরে আসুন। 

বন্ধুগণ,

জলপথ পর্যটন উন্নয়নের স্বার্থে আমরা বিশ্বের দীর্ঘতম “রিভার ক্রুজ সার্ভিস” ও চালু করেছি। ভারত তার ভিন্ন ভিন্ন সমুদ্র বন্দরগুলিকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু প্রকল্পও শুরু করেছে। যেমন, মুম্বাইয়ে নতুন “ইন্টারন্যাশনাল ক্রুজ টার্মিনাল” নির্মাণ করা হচ্ছে। এ বছরই আমরা বিশাখাপত্তনম এবং চেন্নাইয়েও এ রকম অত্যাধুনিক আন্তর্জাতিক ক্রুজ টার্মিনাল নির্মাণ করেছি। ভারত তার উন্নতমানের পরিকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে এই দেশকে “গ্লোবাল ক্রুজ হাব” হিসেবে গড়ে তোলার জন্য নানা উদ্যোগ নিচ্ছে। 

বন্ধুগণ,

ভারত সেই হাতে গোনা দেশগুলির অন্যতম যার “ডেভেলপমেন্ট, ডেমোগ্রাফি, ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ডিমান্ড” অর্থাৎ উন্নয়ন, জনসংখ্যাগত সুবিধা, গণতন্ত্র ও চাহিদার মিলিত সুবিধা রয়েছে। এহেন সময়ে যখন ভারত ২০৪৭ সালের মধ্যে উন্নত ভারত হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলেছে তখন, এটা আপনাদের জন্য একটি সোনালী সুযোগ। আমি সারা পৃথিবীর সমস্ত বিনিয়োগকারীদের আর একবার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। আপনারা ভারতে আসুন আর উন্নয়নের পথে মিলেমিশে আমাদের সঙ্গে চলুন। আমরা একসঙ্গে এগিয়ে যাব আর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নতুন ভবিষ্যৎও গড়ে তুলবো। অনেক অনেক ধন্যবাদ।  

PG/SB/NS