Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

গ্লাসগো’তে সিওপি-২৬ শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী প্রদত্ত জাতীয় ভাষণ

গ্লাসগো’তে সিওপি-২৬ শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী প্রদত্ত জাতীয় ভাষণ


নয়াদিল্লি, ০১ নভেম্বর, ২০২১

 

বন্ধুগণ,

আজ আমি আপনাদের মধ্যে সেই দেশের প্রতিনিধিত্ব করছি, যে দেশ হাজার হাজার বছর আগে এই মন্ত্র বিশ্বের কাছে দিয়েছিল। 

সম-গচ্ছ-ধ্বম, 

সম-ব-দদবম,

সম-বো-মানসি-জানতম।

আজ একবিংশ শতাব্দীতে এই মন্ত্র আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। 

সম-গচ্ছ-ধ্বম – অর্থাৎ, আমরা একসঙ্গে চলবো, সম-ব-দদবম – অর্থাৎ, আমরা একসঙ্গে মতবিনিময় করবো, সম-বো-মানসি-জানতম – অর্থাৎ, প্রত্যেকের মন এক থাকবে। 

বন্ধুগণ,

আমি যখন প্রথম জলবায়ু সম্মেলনের জন্য প্যারিসে এসেছিলাম, আমার তখন উদ্দেশ্য এটা ছিল না যে, পৃথিবীর অনেক প্রতিশ্রুতির মধ্যে আমি আরও একটি প্রতিশ্রুতি যোগ করবো। আমি এখানে মানবজাতির জন্য একটি উদ্বেগ নিয়ে এসেছিলাম। আমি এমন এক সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করছিলাম, যেখানে বলা হয়েছে, “সর্বে ভবন্তু সুখীনঃ’ অর্থাৎ, সকলে সুখে থাকবেন। 

আর তাই, আমার জন্য প্যারিস একটি সম্মেলন ছিল না, এটি ছিল আবেগ, অঙ্গীকার। ভারত সারা বিশ্বের কাছে কোনও প্রতিশ্রুতি দেয়নি, বরং বলা ভালো, ১২৫ কোটি ভারতবাসী নিজেদের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছিল। 

ভারতের মতো উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের বিষয়ে আজ আমি অত্যন্ত আনন্দিত। ভারতে কোটি কোটি মানুষকে দারিদ্রের নাগপাশ থেকে মুক্ত করার কাজ চলছে, দিনরাত কোটি কোটি মানুষের সহজ জীবনযাত্রা নিশ্চিত করার জন্য কাজ কাজ করা হচ্ছে। পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ১৭ শতাংশ ভারতের নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও বিশ্বের মোট কার্বন নিঃসরণের মাত্র ৫ শতাংশ ভারত থেকে হয়। কিন্তু, ভারত তার অঙ্গীকার পূরণে সবধরনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে। 

আজ সারা বিশ্ব বিশ্বাস করে, ভারত শুধু বৃহৎ অর্থনীতির দেশই নয়, ভারত প্যারিস অঙ্গীকারকে বাস্তবায়নে সক্ষম। আমরা অঙ্গীকার পূরণে কঠোর পরিশ্রম করে চলেছি, যার ফল আজ অনুভূত। 

বন্ধুগণ,

যখন আমি আপনাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছি, তখন স্বাভাবিকভাবেই আমি আপনাদের কাছে ভারতের উদ্যোগের কথা জানাবো। আমার কথাগুলি শুধুমাত্র শব্দের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এর মধ্য দিয়ে আগামী প্রজন্মের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ প্রতিফলিত। আজ ভারত পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ স্থানাধিকারী। ভারতের জীবাশ্ম বিহীন জ্বালানীর ব্যবহার গত সাত বছরে ২৫ শতাংশের বেশি হয়েছে। এখন আমাদের জ্বালানী মিশ্রণের জন্য তা ৪০ শতাংশে পৌঁছেছে। 

বন্ধুগণ,

প্রতি বছর ভারতীয় রেলে যত যাত্রী পরিবহণ করা হয়, তা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার চেয়ে বেশি। এই বৃহৎ রেল ব্যবস্থা ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণকে শুন্যে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা করেছে। এই একটি উদ্যোগের ফলে প্রতি বছর ৬ কোটি টন কার্বন নিঃসরণ কম হবে। একইভাবে, আমাদের এলিডি বাল্বের ব্যাপক প্রচলন বছরে ৪ কোটি কার্বন নিঃসরণ কম হওয়া নিশ্চিত করেছে। আজ ভারত এই ধরনের অনেক উদ্যোগ নিয়ে দৃঢ় মানসিকতার সঙ্গে এগিয়ে চলেছে। 

এর পাশাপাশি, ভারতের আন্তর্জাতিক স্তরে সহযোগিতার জন্য কিছু প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগও রয়েছে। সৌরশক্তির জন্য আমরা আন্তর্জাতিক সৌর জোটের মতো একটি বৈপ্লবিক পদক্ষেপ নিয়েছি। আমরা জলবায়ূ পরিবর্তনের ফলে উদ্ভূত বিপর্যয় প্রতিরোধে আরেকটি জোট তৈড়ি করেছি। এই সংবেদী এবং গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগের মাধ্যমে কোটি কোটি মানুষের জীবন রক্ষা পাচ্ছে। 

বন্ধুগণ,

আমি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আপনাদের সামনে তুলে ধরবো। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে জীবনশৈলীর যোগ রয়েছে, তা আজ সারা বিশ্ব মেনে নিয়েছে। আজ এই অবকাশে আমি আপনাদের কাছে এক শব্দের একটি আন্দোলনের প্রস্তাব করছি। 

এই একটি শব্দ, যা পরিবেশের সঙ্গে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ, তা এক বিশ্ব গড়ে তোলার ভীত হতে পারে। এই শব্দটি হ’ল ‘লাইফ’ – এল আই এফ ই। অর্থাৎ পরিবেশের জন্য জীবনশৈলী, যার জন্য আমরা সবাই আজ একত্রিত হয়েছি। যৌথভাবে অংশগ্রহণ করেছি। লাইফ স্টাইল ফর এনভাইরনমেন্ট বা লাইফ-কে একটি অভিযান হিসাবে আমরা গ্রহণ করবো।

পরিবেশ সচেতন জীবনশৈলীর জন্য এটি একটি গণআন্দোলনের রূপ নেবে। ভাবনাচিন্তা না করে ধ্বংসাত্মক পদ্ধতিতে জিনিস ব্যবহার করার পরিবর্তে আজ সম্পদের ব্যবহার যথোচিতভাবে করা প্রয়োজন। এই আন্দোলনগুলি একযোগে অনেক ক্ষেত্রে বিপ্লব সংগঠিত করবে। যেমন – মৎস্যচাষ, কৃষি, খাদ্যাভাস নির্ধারণ, প্যাকেজিং, আবাসন, আতিথেয়তা, পর্যটন, বস্ত্র শিল্প, জল ব্যবস্থাপনা ও শক্তির মতো বিভিন্ন ক্ষেত্র প্রভাবিত হবে। 

প্রতিদিন এমন কিছু বিষয় আছে, যেগুলি আমাদের সচেতন করে তোলে। বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ প্রতিদিন জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন এবং যোজন দূরত্ব অতিক্রম করছেন।

আমি এটিকে প্রত্যেক স্তরে আন্দোলন হিসাবে মনে করি – অর্থনৈতিক, বিজ্ঞান, বিগত শতাব্দীর বিভিন্ন অভিজ্ঞতা। এমনভাবে উপলব্ধি করতে হবে – যার মাধ্যমে আমরা উপকৃত হবো।

বন্ধুগণ,

জলবায়ূ পরিবর্তনজনিত সমস্যা সমাধানের জন্য আজ এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ভারতের পক্ষ থেকে আমি পঞ্চমামৃত উপস্থাপিত করতে চাই। 

প্রথমত – ভারত ২০৩০ সালের মধ্যে জীবাশ্ম বিহীন জ্বালানী ক্ষমতা ৫০০ গিগাওয়াটে নিয়ে যাবে।

দ্বিতীয়ত – ২০৩০ সালের মধ্যে ভারত তার জ্বালানী চাহিদার ৫০ শতাংশ পুনর্নবনীকরণযোগ্য শক্তির উৎস থেকে সংগ্রহ করবে।

তৃতীয়ত – এখন থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর ভারত মোট কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ ১০০ কোটি টন হ্রাস করবে। 

চতুর্থত – ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতীয় অর্থনীতিতে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ ৪৫ শতাংশ হ্রাস করা হবে।

পঞ্চমত – ২০৭০ সালের মধ্যে ভারতে আর কার্বন নিঃসরণ হবে না। এই পঞ্চমামৃতের মধ্য দিয়ে জলবায়ূ পরিবর্তনে ভারত অভূতপূর্ব অবদান রাখবে। 

বন্ধুগণ,

আমরা সবাই এই সত্য সম্পর্কে অবহিত যে, আজ পর্যন্ত জলবায়ু পরিবর্তনে যে অর্থ বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, তা আসলে অন্তঃসারশূন্য। জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা আরও বৃদ্ধি করেছি, আজ জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধে আর্থিক সহায়তার জন্য বিশ্বের অঙ্গীকার প্যারিস চুক্তির সময়ের সঙ্গে এক রাখলেও চলবে না। 

আজ যখন ভারত নতুন অঙ্গীকার ও নতুন উদ্যমে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেই সময়ে জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধে আর্থিক সহায়তা এবং কম খরচের প্রযুক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ভারত আশা করে, উন্নত রাষ্ট্রগুলি জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধে দ্রুত ১ হাজার কোটি মার্কিন ডলার সাহায্য করবে। আজ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব হ্রাস করতে যে অগ্রগতি হয়েছে, আমাদের সেদিকে নজর রাখা অত্যন্ত জরুরি। আমরা একাজে ব্যবহৃত অর্থেরও খোঁজ রাখবো। 

জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য আর্থিক সহায়তা ক্ষেত্রে যেসব দেশ তাদের অঙ্গীকার বজায় রাখতে পারেনি, তাদের প্রতি যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সঙ্গে, তাদের উপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে। 

বন্ধুগণ,

আজ ভারত জলবায়ূ পরিবর্তনের বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছে এবং অদম্য সাহস ও লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলেছে। ভারত উন্নয়নশীল দেশগুলির সমস্যা উপলব্ধি করতে পারে, সেগুলি সকলের মধ্যে ভাগ করে নিতে পারে এবং তাদের চাহিদা পূরণে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে।

বহু উন্নয়নশীল দেশের কাছে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যাটি তাদের অস্তিত্বের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। বিশ্বকে রক্ষা করতে আমাদের বৃহৎ উদ্যোগ নিতে হবে। এই সময়ের প্রেক্ষিতে যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এই ফোরামে তা প্রাসঙ্গিকও। আমি আশাবাদী, গ্লাসগো’তে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, তা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করবে, তাদের সুরক্ষিত ও সমৃদ্ধ জীবন উপহার দেবে। 

মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, আমি বেশি সময় নিয়ে ফেলেছি, তার জন্য আপনার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। কিন্তু আমি মনে করি, উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের কন্ঠ হিসাবে এই বিষয়গুলি উত্থাপন করা জরুরি। তাই, আমি এগুলির উপর জোর দিয়েছি। আরও একবার আপনাকে ধন্যবাদ জানাই।

(প্রধানমন্ত্রীর মূল ভাষণটি হিন্দিতে ছিল)। 

 

CG/CB/SB