Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

গুয়াহাটিতে দ্বাদশ দক্ষিণ এশীয় ক্রীড়ার উদ্বোধনী সমারোহে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

গুয়াহাটিতে দ্বাদশ দক্ষিণ এশীয় ক্রীড়ার উদ্বোধনী সমারোহে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

গুয়াহাটিতে দ্বাদশ দক্ষিণ এশীয় ক্রীড়ার উদ্বোধনী সমারোহে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

গুয়াহাটিতে দ্বাদশ দক্ষিণ এশীয় ক্রীড়ার উদ্বোধনী সমারোহে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ


আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলির ক্রীড়াবিদদের এবং দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সমিতি, সার্ক-এর দেশগুলির ভাই ও বোনেদের সঙ্গে মিলিত হতে পেরে আমার নিজেকে অত্যন্ত ভাগ্যবান এবং সম্মানিত মনে করছি। আমি আপনাদের ‘অতিথি দেবো ভবঃ’ সংস্কৃতির জন্য পরিচিত দেশ ভারতে তথা আতিথেয়তা ও ক্রীড়া প্রীতির জন্য পরিচিত এই সুন্দর শহর গুয়াহাটিতে সবাইকে স্বাগত জানাই।

ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে এই গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক খেলাধূলার আসরে উত্তেজনা এবং উৎসাহে ভরপুর, আপনাদের মতো মানুষের চমকপ্রদ উপস্থিতি আমাকে আজ দারুণভাবে নাড়া দিচ্ছে। প্রাচীন ভারতের প্রাগজ্যোতিষপুরের সময় থেকে গুয়াহাটি বর্তমানে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে। এটি এখন আধুনিক ও প্রাণচঞ্চল এক শহরে পরিণত হয়েছে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সমস্ত অর্থনৈতিক কাজকর্মের কেন্দ্র হিসেবে এই শহর পরিচিতি পেয়েছে।

উত্তর-পূর্বাঞ্চলের যুবসম্প্রদায়, বিশেষ করে, এই অসমের যুবকেরা ভালো ফুটবল ম্যাচ দেখার কোন সুযোগ ছাড়তে চায় না। এদের এই ক্রীড়া প্রীতির খ্যাতি এতদূর ছড়িয়েছে, যে ২০১৭ সালে, এই প্রথম ভারতে অনুষ্ঠেয় অনুর্ধ্ব ১৭ ফুটবল বিশ্বকাপের জন্য, বিশ্ব ফুটবল সংস্থা ফিফা, গুয়াহাটিকে এর প্রধান অনুষ্ঠানস্থল হিসেবে বেছে নিয়েছে।

এই ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আমার কাছে প্রতিভা, দলগত উদ্যোগ এবং সমবেত প্রচেষ্টার এক তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাঞ্জনা নিয়ে হাজির হয়েছে। আমাদের মধ্যে এখন দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠ যুব ক্রীড়া প্রতিভারা হাজির হয়েছেন। আপনারা প্রত্যেকেই আপনাদের দলের গর্বিত সদস্য – সে দল খেলাধূলারই হোক অথবা যে দেশকে আপনি প্রতিনিধিত্ব করছেন ব্যাপক অর্থে সেই দলেরও সদস্য। একইসঙ্গে এই ক্রীড়া প্রতিযোগিতা সমস্ত দক্ষিণ এশীয় দেশের ঐক্যের এক সমারোহ। আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কা – এগুলির মধ্যে যে দেশেরই মানুষ আপনি হোন না কেন, আমরা সবাই নিজেদেরকে দক্ষিণ এশিয়ার মানুষ বলে ভাবি।

খেলাধূলাকে ব্যক্তি জীবনের এক অত্যন্ত প্রয়োজনীয় অঙ্গ হিসেবে ভাবা দরকার। যেকোন ভালো খেলাধূলা একদিকে যেমন স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী, অন্যদিকে তাতে অংশগ্রহণ করলে মনও ভালো হয়ে যায়। মনুষ্যত্বের সর্বাঙ্গীণ বিকাশের প্রক্রিয়া খেলাধূলা ছাড়া অসম্পূর্ণ থেকে যায় এবং সবচেয়ে যা গুরুত্বপূর্ণ তা হল খেলাধূলা মানুষের মধ্যে খেলোয়াড়োচিত মানসিকতার সঞ্চার করে। সেই অর্থে বলা যায় খেলা ছাড়া, খেলোয়াড়োচিত মানসিকতা তৈরি হওয়া সম্ভব নয়। এই মানসিকতা শুধু যে আপনাকে খেলার মাঠে এগিয়ে নিয়ে যাবে তাই নয়, জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রেও তা আপনার পক্ষে সহায়ক ভূমিকা নেবে। আপনি খেলার মাঠে যা শিখবেন, সারা জীবন ধরে সেই আনন্দময় স্মৃতি আপনার সঙ্গে থাকবে। তাই আমি সবসময়ই বলি –“যো খেলে, ও খিলে”। যে মানুষ খেলাধূলা করে, সেই জীবনে উন্নতি করে।

এই ক্রীড়া প্রতিযোগিতার জন্য নির্বাচিত প্রতীক ‘তিখোর’ হচ্ছে এক গণ্ডার শিশু, যে অত্যন্ত বুদ্ধিমান এবং ক্ষিপ্র। এই প্রতীক খেলাধূলার সঙ্গে জড়িত মানুষ এবং ক্রীড়াপ্রেমীদের মানসিকতার পরিচায়ক।

এই প্রতিযোগিতার জন্য নির্বাচিত ‘থিম সং’ বা মূল গানটি –“এই পৃথিবী এখন ক্রীড়াঙ্গণ, ক্রীড়া হল শান্তির প্রাঙ্গণ” গেয়েছেন কিংবদন্তী গায়ক প্রয়াত ডঃ ভুপেন হাজারিকা। এই গায়কের অসাধারণ কন্ঠ মানুষকে তীব্রভাবে আকর্ষণ করে। তাঁর গানে দক্ষিণ এশীয় ক্রীড়ার মূল সুরটিকে অত্যন্ত সুন্দরভাবে ধরা হয়েছে, যাতে আছে শান্তি, মৈত্রী এবং উন্নয়নের বার্তা। ডঃ ভুপেন হাজারিকার আরেকটি বিখ্যাত গান –“উই আর ইন দ্য সেম বোট ব্রাদার” যা আপনারা কিছুক্ষণের মধ্যে শুনতে পাবেন তাও কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিকে নিয়েই। সত্যিই, এক পরিবার হিসেবে আমাদের একসঙ্গে হাত ধরে এগিয়ে চলা দরকার। আসুন, দক্ষিণ এশীয় ক্রীড়ার এই আসরের মাধ্যমে মৈত্রীর সেই ভাবনাকে জাগরিত করে তুলি।

দক্ষিণ এশিয়ার জন্য আমার ভাবনাচিন্তা, ভারতের জন্য আমার ভাবনার মতোই – সবকা সাথ, সবকা বিকাশ। দক্ষিণ এশিয়ার সবক’টি দেশ উন্নয়নের লক্ষ্যে আমাদের যাত্রাপথের সঙ্গী। আমরা সার্কভুক্ত দেশগুলিতে বসবাস করি। এই দেশগুলির মিলিত জনসংখ্যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ২১ শতাংশের কাছাকাছি এবং বিশ্বের মোট অর্থনৈতিক কাজকর্মের ৯ শতাংশ এই দেশগুলিতে হয়।

দ্বাদশ দক্ষিণ এশীয় ক্রীড়ার এই অনুষ্ঠানের শুরুতে যখন আমরা জমায়েত হয়েছি, তাতে মহিলা এবং পুরুষ – উভয় বিভাগের ২৩টি ইভেন্ট রয়েছে। আমরা সার্কভুক্ত দেশগুলির শ্রেষ্ঠ ক্রীড়াবিদদের আজ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সেই শহরে সমবেত করতে পেরেছি, যা মৈত্রী, বিশ্বাস এবং সমঝদারিত্বের জন্য খ্যাত।

আমি একথা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, খেলাধূলার উদ্যোগ যেমন এগিয়ে যাবে, মৈত্রী, বিশ্বাস এবং সমঝদারিত্বের এই ভাবনা শুধুমাত্র যে খেলাধূলার অঙ্গণেই দেখা যাবে তাই নয়, বাণিজ্য এবং পর্যটনের ক্ষেত্রেও এর প্রভাব পড়বে। খেলাধূলার এই বিখ্যাত আসর যেন, বাণিজ্য, পারস্পরিক সহযোগিতা এবং খেলাধূলার মধ্য দিয়ে এই অঞ্চলে শান্তি এবং বিকাশের এক সূচনাকেন্দ্র হয়ে ওঠে। এই আসর যেন সার্কভুক্ত দেশগুলির মানুষের নিজেদের সম্ভাবনাকে আবিষ্কার করার এক সুযোগ এনে দেয়।

খেলোয়াড়োচিত মানসিকতা আসলে জীবনের এমন এক দর্শন, যা সহ্যশক্তি, মানসিক ক্ষমতার এক সুষম বিকাশ ঘটায়। ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় সাফল্যের চ্যালেঞ্জ, উদ্যোগের আনন্দ, সাফল্যের উচ্ছ্বাস, বন্ধুত্বের মানসিকতা এবং খেলার আসরে সদাচার একটি দেশের সংস্কৃতি, শিক্ষা, নৈতিকতা, মর্যাদা এবং সামাজিক রীতিনীতিরও পরিচয় দেয়। একমাত্র, এই খেলার আসরেই আমরা ভুলে যেতে পারি আমাদের মধ্যেকার বিভেদের প্রাচীরকে এবং খেলোয়াড়োচিত মানসিকতার মাধ্যমেই আমরা একে অপরের সঙ্গে সংযোগ গড়ে তুলতে সক্ষম হই। আমরা আমাদের বৈচিত্র্যে গর্বিত হতে পারি, কিন্তু একইসঙ্গে খেলাধূলার সাধারণ নিয়ম ও সততা এবং সদাচারের মূল্যবোধের ক্ষেত্রে ঐক্যবদ্ধ থাকি। আসুন, আমরা শান্তির জন্য খেলতে নামি। আসুন, আমরা খেলাধূলায় রত হই উন্নয়নের লক্ষ্যে। আসুন, আমরা সর্বশক্তি এবং উৎসাহ নিয়ে খেলতে নামি, যাতে খেলা শেষের পরেও তা আমাদের মনে থাকে। আগামী ১২ দিন ধরে, যে বন্ধুত্ব আপনাদের মধ্যে গড়ে উঠবে সেই সুখস্মৃতি আপনারা সারা জীবন মনে রাখবেন। আমি নিশ্চিত, এই মৈত্রীর আদর্শকে আপনারা মনে রাখবেন এবং আমাদের দেশগুলির মধ্যে শান্তি এবং মৈত্রীর দূত হয়ে উঠবেন।

খেলার এই আসরে যখন খেলোয়াড়রা পদক জয়ের জন্য একে অপরের সঙ্গে কঠিন প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হবেন তার বাইরেও আমি সমস্ত খেলোয়াড় এবং আগত দর্শকদের তাঁদের ব্যস্ত সময়ের মধ্য থেকে কিছু সময় বের করে এই অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র এবং নিকটবর্তী অভয়ারণ্যগুলিকে দেখে আসার জন্য অনুরোধ জানাই।

আরও একবার দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির বন্ধুদের আমি স্বাগত জানাই। গুয়াহাটিতে আগামী দু’সপ্তাহ ধরে ‘গুরুকুল’-এর মানসিকতা যেন বজায় থাকে। ক্রীড়াবিদরা যেন এখান থেকে উষ্ণ বন্ধুত্বের অনুভূতি এবং স্মরণীয় অভিজ্ঞতা সঙ্গে নিয়ে যেতে পারেন। আসুন, এই প্রতিযোগিতাকে প্রকৃত অর্থে খেলোয়াড়োচিত মানসিকতার এক প্রদর্শনী করে তুলি। সবার সেরা খেলোয়াড় যেন জয়লাভ করেন।

আমি দ্বাদশ দক্ষিণ এশীয় ক্রীড়া উদ্বোধন ঘোষণা করছি।

ধন্যবাদ।

PG/PB/DM/