প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী গুজরাট হাই কোর্টের হীরক জয়ন্তী বর্ষ পুর্তি উপলক্ষে আজ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রারম্ভিক ভাষণ দেন। এই হাইকোর্টের ৬০ বছর পূর্তিতে তিনি একটি স্মারক ডাকটিকিটও প্রকাশ করেন। ওই অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় আইন ও বিচার মন্ত্রী ছাড়াও সুপ্রিমকোর্ট এবং গুজরাট হাই কোর্টের বিচারপতিরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে, বিগত ৬০ বছর ধরে ভারতের গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে বিচারব্যবস্থার সক্রিয় অবদানের জন্য গুজরাট হাইকোর্টের বেঞ্চ এবং বার- এর প্রশংসা করেন।
প্রধানমন্ত্রীর জোরের সঙ্গে বলেন যে, বিচার বিভাগ সংবিধানের জীবন শক্তি হিসেবে তার দায়িত্ব পালন করছে। বিচার বিভাগ সর্বদা সৃজনশীলতার মাধ্যমে এবং ইতিবাচকভাবে ব্যাখ্যা দিয়ে সংবিধানকে শক্তিশালী করেছে। এটি নাগরিকদের অধিকার ও স্বাধীনতার ক্ষেত্রে নিজ ভূমিকা পালন করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইন সম্পর্কে আমাদের ধারণা হচ্ছে আমাদের সভ্যতা ও সামাজিক ভিত্তি। আর এটাই হচ্ছে সুশাসনের বনিয়াদ।
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এটি নৈতিক সাহসকে উদ্রেক করেছে এবং সংবিধান নির্মাতারা সর্বদাই বিচার ব্যবস্থাকে প্রাধান্য দিয়ে এসেছেন। বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে মৌলিক অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে বারের ভূমিকারও প্রধানমন্ত্রী ভূয়শী প্রশংসা করেন। সময়মতো বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন।
অতিমারি পরিস্থিতিতে বিচারব্যবস্থার সক্রিয় অবদানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, অতিমারি পরিস্থিতির সময়ে গুজরাট হাইকোর্ট ভিডিও কনফারেন্স, এসএমএস কল আউট, ই- ফাইলিং এবং ইমেইল মাই কেস স্ট্যাটাস- প্রভৃতির মাধ্যমে বিচার ব্যবস্থাকে সক্রিয় রেখেছিলেন। এমনকি তাদের পক্ষ থেকে ইউটিউব এবং ওয়েবসাইটের মাধ্যমে মামলার রায় গুলি যথাসময়ে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই গুজরাট হাইকোর্ট দেশের প্রথম হাইকোর্ট, যারা আদালতের কাজকর্ম সরাসরিভাবে স্ট্রিমিং এর ব্যবস্থা করে।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে উল্লেখ করেন যে, ডিজিটাল পরিকাঠামোর ক্ষেত্রে আইন মন্ত্রকের ই-কোর্টস ইন্টিগ্রেটেড মিশন মোড প্রকল্পটি আদালত গুলি দ্রুততার সঙ্গে গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, দেশে আজ পর্যন্ত প্রায় ১৮ হাজার আদালত কক্ষে কম্পিউটারাইজড ব্যবস্থা এবং ই- প্রসিডিংসের ব্যবস্থা রয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট টেলিকনফারেন্সিং এবং ভিডিও কনফারেন্সিং- এর জন্য আইনত বৈধতা দেওয়ায় তা সম্ভব হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা অত্যন্ত গর্বের বিষয় যে, ‘আমাদের সুপ্রিম কোর্ট বিশ্বের সকল সুপ্রিম কোর্টের চেয়ে ভিডিও কনফারেন্সিং-এর মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি মামলার শুনানি গ্রহণ করেছে।’
বিচার ব্যবস্থায় সহজতার জন্য ই-ফাইলিং, ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন কোড এবং কিউআর কোড মামলার ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা পেয়েছে। যার ফলে জাতীয় জুডিশিয়াল ডেটা গ্রিড স্থাপন করা হয়েছে। এই গ্রিড আইনজীবী এবং মামলাকারীদের তাঁদের মামলা সম্পর্কে জানতে সহায়তা করবে। ন্যায়বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে সহজতা কেবল জীবনযাত্রার স্বাচ্ছন্দ নয়, ব্যাবসায়িক স্বাচ্ছন্দকেও বাড়িয়ে তুলছে, কেননা বিদেশি বিনিয়োগকারীরা তাদের বিচার বিভাগীয় অধিকার গুলির সুরক্ষার বিষয়ে আরও আত্মবিশ্বাসী বোধ করছেন। এমনকি বিশ্ব ব্যাংকও জাতীয় জুডিশিয়াল ডেটা গ্রিডের প্রশংসা করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে, ভবিষ্যতের প্রয়োজনে বিভিন্ন পদ্ধতিগুলির জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রকাশের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হচ্ছে। এর ফলে বিচার বিভাগের দক্ষতা এবং গতি দুটোই বাড়বে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিচার ব্যবস্থায় আধুনিকীকরণের ক্ষেত্রে আত্মনির্ভর ভারত অভিযান একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। এর মাধ্যমে ভারত তার নিজস্ব ভিডিও কনফারেন্স প্লাটফর্ম- এর মাধ্যমে প্রচার করছে। হাইকোর্ট এবং জেলা আদালত গুলিতে ই-সেবা কেন্দ্র সহায়তা করছে।
ই- লোক আদালতের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, ৩০ থেকে ৪০ বছর আগে জুনাগড়ে প্রথম ই-আদালত হয়েছিল। বর্তমানে এই ই-আদালতের মাধ্যমে ২৪ টি রাজ্যে লক্ষাধিক মামলার শুনানি হচ্ছে। ন্যায় বিচারের ক্ষেত্রে এই সময় উপযোগী এবং সুবিধাজনক ব্যবস্থা গতি এবং আস্থা দুয়েরই দাবি করে বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।