Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

গুজরাটের কচ্ছ-এ গুরুদ্বার লাখপত সাহিবে গুরুপরব উদযাপন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

গুজরাটের কচ্ছ-এ গুরুদ্বার লাখপত সাহিবে গুরুপরব উদযাপন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ


নয়াদিল্লি, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২১

 

ওয়াহে গুরুজি কা খালসা, ওয়াহে গুরুজি কী ফতে!

গুরুপরবের এই পবিত্র অনুষ্ঠানে আমার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী ভূপেন্দ্রভাই প্যাটেলজি, গুজরাট বিধানসভার অধ্যক্ষ ভগিনী নীমা আচার্যজি, জাতীয় সংখ্যালঘু আয়োগের অধ্যক্ষ শ্রী ইকবাল সিং-জি, সাংসদ শ্রী ভিনোদভাই ছাবড়াজি, লাখপত গুরুদ্বার প্রবন্ধক কমিটির সভাপতি ‘রাজুভাই’ শ্রী জগতার সিং গিলজি, এখানে উপস্থিত অন্যান্য সকল মাননীয় ব্যক্তিবর্গ, সমস্ত জনপ্রতিনিধিগণ আর সমস্ত শ্রদ্ধাবান বন্ধুগণ। আপনাদের সবাইকে গুরুপরবের আন্তরিক শুভকামনা।

আমার সৌভাগ্য যে আজ এই পবিত্র দিনে আমার লাখপত সাহিব থেকে আশীর্বাদ পাওয়ার সুযোগ হয়েছে। আমি এই কৃপার জন্য গুরু নানক দেবজি এবং সমস্ত গুরুদের চরণে প্রণাম জানাই।

বন্ধুগণ,

গুরুদ্বার লাখপত সাহিব প্রত্যেক সময়ের গতির সাক্ষী ছিল। আজ যখন আমি এই পবিত্র স্থানের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছি, তখন আমার মনে পড়ছে যে অতীতে লাখপত সাহিব কত ধরনের বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে গেছে। একটা সময় এই স্থান অন্যান্য দেশে যাওয়ার জন্য ব্যবসা-বাণিজ্যের একটি প্রমুখ কেন্দ্র ছিল। সেজন্যই তো গুরু নানক দেবজির পায়ের স্পর্শ এই অঞ্চল পেয়েছে। চতুর্থ ‘উদাসী’র সময় গুরু নানক দেবজি কিছুদিনের জন্য সেখানে ছিলেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে প্রকৃতির পরিহাসে এই শহর একরকম মনুষ্যবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। সমুদ্র একে ছেড়ে চলে যায়। সিন্ধু নদও গতি পরিবর্তন করে। ১৯৯৮-এর সামুদ্রিক ঝড়ের সময় এই অঞ্চল এবং গুরুদ্বার লাখপত সাহিবের অনেক লোকসান হয় আর ২০০১-এর ভূমিকম্পকে কে ভুলতে পারে? সেই ভূমিকম্পে গুরুদ্বার লাখপত সাহিবের ২০০ বছর পুরনো ভবনটি ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু তবুও আজ আমাদের গুরুদ্বার লাখপত সাহিব তেমনই গৌরবের সঙ্গে দাঁড়িয়ে আছে।

আমার অনেক অমূল্য স্মৃতি এই গুরুদ্বারের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। ২০০১-এর ভূমিকম্পের পর গুরুর কৃপায় আমি এই পবিত্র স্থানটির সেবার সৌভাগ্য পেয়েছিলাম। আমার মনে আছে, তখন দেশের ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চল থেকে অনেক শিল্পী ও কারিগররা এসেছিলেন, তাঁরা এই স্থানের মৌলিক গৌরবকে সংরক্ষিত করেছিলেন। প্রাচীন লেখনশৈলী অনুসরণ করে এখানকার দেওয়ালগুলিতে আরও একবার গুরুবাণী অঙ্কিত করা হয়েছিল। এই প্রকল্পটিকে তখন ইউনেস্কো সম্মানিতও করেছিল।

বন্ধুগণ,

গুজরাট থেকে এখানে দিল্লিতে আসার পরও আমি ক্রমাগত গুরুদের সেবা করার সুযোগ পেয়েছি। ২০১৬-১৭-তে গুরু গোবিন্দ সিং-জির প্রকাশ উৎসবের ৩৫০ বছর উপলক্ষে পূণ্য বর্ষ ছিল। আমরা দেশ ও বিদেশে সর্বত্র এই উৎসবকে সম্পূর্ণ শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন করেছি। ২০১৯ সালে গুরু নানক দেবজির প্রকাশ পর্বের ৫৫০তম বর্ষ সম্পূর্ণ হওয়ায় কেন্দ্রীয় সরকার উৎসাহ ও উদ্দীপনার সঙ্গে এর আয়োজনে লেগে পড়ে। গুরু নানক দেবজির বার্তা একটি নতুন প্রাণশক্তি নিয়ে যাতে গোটা পৃথিবীতে পৌঁছতে পারে, সেজন্য সমস্ত স্তরে প্রচেষ্টা করা হয়। অনেক দশক ধরে যে কর্তারপুর সাহিব করিডরের প্রতীক্ষা ছিল, ২০১৯-এ আমাদের সরকারই তার নির্মাণ কার্য সম্পূর্ণ করেছে আর এখন ২০২১-এ আমরা গুরু তেগ বাহাদুরজির প্রকাশ উৎসবের ৪০০ বছর পালন করছি।

আপনারা অবশ্যই হয়তো দেখেছেন, সম্প্রতি আমরা আফগানিস্তান থেকে সম্মানের সঙ্গে গুরু গ্রন্থ সাহিবের স্বরূপগুলিকে ভারতে ফিরিয়ে আনতে সফল হয়েছি। গুরু কৃপার এর থেকে বড় অভিজ্ঞতা কারোর জন্য আর কী হতে পারে? এই তো কয়েক মাস আগে যখন আমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলাম, তখন সেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে ১৫০টিরও বেশি ভারতের ঐতিহাসিক সম্পত্তি, যা কেউ না কেউ বিভিন্ন সময়ে চুরি করে নিয়ে গিয়েছিল, এমন ১৫০টিরও বেশি ঐতিহাসিক বস্তু ফিরিয়ে আনতে আমরা সফল হয়েছি। এর মধ্যে একটি ‘পেশকব্জ’ বা ছোট তলোয়ারও রয়েছে যাতে ফার্সি ভাষায় গুরু গোবিন্দ সিং-জির নাম লেখা রয়েছে। এই মহার্ঘ্য স্মারকটি ফিরিয়ে আনার সৌভাগ্য আমাদের সরকারের হয়েছে।

আমার মনে আছে, জামনগরে দু’বছর আগে যে ৭০০ শয্যার আধুনিক হাসপাতাল নির্মিত হয়েছিল, সেটাও এখন গুরু গোবিন্দ সিং-জির নামেই নামকরণ করা হয়েছে, আর এখন আমাদের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্রভাই এই সম্পর্কে বিস্তারিত বলছিলেন। এমনিতে এটি গুজরাটের জন্য সর্বদাই গৌরবের বিষয় যে খালসা পন্থ স্থাপনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী ‘পঞ্জ প্যারোঁ’ বা পাঁচজন প্রধান শিষ্যের চতুর্থজন, ভাই মকহম সিং-জি গুজরাটেরই মানুষ ছিলেন। দেবভূমি দ্বারকায় তাঁর স্মৃতিতে গুরুদ্বার বেট দ্বারকা ভাই মকহম সিং-এর নির্মাণ হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে যে গুজরাট সরকার লাখপত সাহিব গুরুদ্বার এবং গুরুদ্বার বেট দ্বারকা উন্নয়নের কাজে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করছে। আর্থিক সহযোগিতাও করছে।

বন্ধুগণ,

গুরু নানক দেবজি নিজের ‘শবদ’-এ বলেছেন –

“গুর পরসাদি রতনু হরি লাভৈ।

মিটে অগিআন হই পুজিআরা।।”

অর্থাৎ, গুরুর প্রসাদেই হরি লাভ হয়, মানে ঈশ্বরপ্রাপ্তি হয় আর অহঙ্কার নাশ হলেই আলো ছড়িয়ে পড়ে। আমাদের শিখ গুরুরা ভারতীয় সমাজকে সর্বদাই এই আলোয় ঋদ্ধ করার কাজ করে গেছেন। আপনারা কল্পনা করুন, যখন আমাদের দেশে গুরু নানক দেবজি অবতার হয়েছিলেন, সমস্ত বিড়ম্বনা এবং কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন; তখন সময় ও পরিস্থিতি কেমন ছিল? সেই সময় ভিনদেশী হানাদারদের আক্রমণ এবং অত্যাচার ভারতবাসীর মনোবল ক্রমে ভেঙে দিচ্ছিল। যে ভারত সমগ্র বিশ্বকে প্রাকৃতিক এবং আধ্যাত্মিক পথ দেখাত, সেই ভারত নিজেই সঙ্কটে এসে যায়। যখন আমরা এই পরিস্থিতিগুলির দিকে তাকাই, তখন ভাবি যে সেই সময়ে যদি গুরু নানক দেবজি আলোকবর্তিকা হাতে নিয়ে না দাঁড়াতেন, তাহলে কী হত! গুরু নানক দেবজি আর তারপর আমাদের ভিন্ন ভিন্ন গুরুরা তখন ভারতের চেতনাকে যেমন প্রজ্জ্বলিত করেছেন, ভারতকেও সুরক্ষিত রাখার পথ খুঁজেছেন। আপনারা দেখুন, যখন দেশ ঘাত-প্রতিঘাত এবং জাতপাতের মত-মতান্তরের ফলে দুর্বল হয়ে পড়েছিল, তখন গুরু নানক দেবজি কী বলেছিলেন? তিনি বলেছিলেন –

“জাণহু জোতি ন পূছহু জাতি, আগে জাত ন হে।”

অর্থাৎ, সকলের মধ্যেই ঈশ্বরের আলোকে দেখো, তাকে চেনো। কাউকে জাত ও জাতি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করো না, কারণ, জাতির মাধ্যমে কারোর কোনও পরিচয় হয় না, আর পরপারের যাত্রাতেও কারোর কোনও জাতি থাকে না। এভাবে গুরু অর্জন দেবজি গোটা দেশের সাধুদের সৎ বিচারগুলিকে একসঙ্গে গেঁথেছেন আর এভাবে সমগ্র দেশকে ঐক্যসূত্রে জুড়েছেন। গুরু হরকিষাণজি আস্থাকে ভারতের পরিচয়ের সঙ্গে জুড়েছেন। দিল্লির গুরুদ্বার বাংলা সাহিবে তিনি দুঃখী মানুষের রোগ নিবারণ করে মানবতার যে পথ দেখিয়েছিলেন, তা আজও প্রত্যেক শিখ এবং প্রত্যেক ভারতবাসীর জন্য প্রেরণাস্বরূপ। করোনার কঠিন সময়ে আমাদের গুরুদ্বারগুলি যে ধরনের সেবার দায়িত্ব পালন করেছে তা গুরু সাহিবের কৃপা এবং তার আদর্শেরই প্রতীক। অর্থাৎ, একভাবে প্রত্যেক গুরু নিজের নিজের সময়ে দেশের যত ধরনের প্রয়োজন ছিল তেমনই নেতৃত্ব দিয়েছেন। আমাদের বিভিন্ন প্রজন্মের মানুষকে তিনি পথ প্রদর্শন করেছেন।

বন্ধুগণ,

আমাদের গুরুদের অবতার কেবল সমাজ এবং আধ্যাত্মের মধ্যেই সীমিত নয়, তাঁদের অবদান আমাদের দেশ, দেশের ভাবনাচিন্তা, দেশের আস্থা এবং অখণ্ডতার মধ্যে নিহিত। আজ আমরা যেমন সুরক্ষিত তার গোড়াতেও শিখ গুরুদের মহান তপস্যা রয়েছে। গুরু নানক দেবজির সময় থেকে যদি আপনারা দেখেন, যখনই বিদেশি আক্রমণকারীরা তলোয়ারের শক্তিতে ভারতের সত্ত্বা এবং সম্পদ দখল করার চেষ্টা করছিল, তখন গুরু নানক দেবজি বলেছিলেন – “পাপ কী ঝংঝ লৈ কাবলহু ধাইআ, জোরী মংগৈ দানু ওয়ে লালো।”

অর্থাৎ, পাপ এবং জুলুমের তলোয়ার নিয়ে বাবর কাবুল থেকে এসেছে আর জোর-জুলুম দিয়ে ভারতের শাসকের কাছে কন্যাদান চাইছে। এমনই ছিল গুরু নানক দেবজির স্পষ্টতা ও দূরদৃষ্টি। তিনি একথাও বলেছিলেন – “খুরাসান খসমানা কীআ হিনদুসতান ডরাইআ।”

অর্থাৎ, খুরাসান দখল করার পর বাবর ভারতকে ভয় দেখাচ্ছে। তারপর তিনি এটাও বলেন – “এতী মার পঈ করলাণে তৈঁ কী দরদু ন আইআ।”

অর্থাৎ, সেই সময় এত অত্যাচার চলছিল যে মানুষ চিৎকার-চেঁচামেচি করছিল। সেজন্য গুরু নানক দেবজির পর আমাদের শিখ গুরুরা দেশ এবং ধর্মের জন্য প্রাণ বাজি রাখতেও সঙ্কোচ করেননি। এই সময় দেশ গুরু তেগ বাহাদুরজির ৪০০তম প্রকাশ উৎসব পালন করছে। তাঁর গোটা জীবনই ‘রাষ্ট্র সর্বাগ্রে’ – এই সঙ্কল্পের উদাহরণ। যেভাবে গুরু তেগ বাহাদুরজি মানবতার প্রতি তাঁর ভাবনাচিন্তার জন্য সর্বদাই অটল ছিলেন, তেমনই তিনি আমাদের ভারতের আত্মাকে দর্শন করিয়েছিলেন। যেভাবে দেশ তাঁকে ‘হিন্দ কী চাদর’ পদবী দিয়েছিল, তিনিও আমাদের শিখ পরম্পরার প্রতি প্রত্যেক ভারতবাসীর সংলগ্নতাকে দর্শায়। ঔরঙ্গজেবের বিরুদ্ধে গুরু তেগ বাহাদুরজির পরাক্রম এবং তাঁর আত্মবলিদান আমাদের এটা শেখায় যে আতঙ্ক এবং ধর্মীয় কঠোরতার বিরুদ্ধে দেশকে কিভাবে লড়াই করতে হবে!

এভাবে দশম গুরু গুরু গোবিন্দ সিং-এর জীবনও অনেক তপস্যা এবং আত্মবলিদানের একটি জলজ্যান্ত উদাহরণ। দেশের জন্য, দেশের মূল দর্শনের জন্য দশম গুরু তাঁর সর্বস্ব অর্পণ করেছিলেন। তাঁর দুই সাহেবজাদা, জোরাওয়ার সিং এবং ফতেহ সিং-কে আততায়ীরা দেওয়ালের মধ্যে পুড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু গুরু গোবিন্দ সিং-জি দেশের মান, সম্মান এবং সম্পদকে ঝুঁকতে দেননি। চার সাহেবজাদার আত্মবলিদানের স্মৃতিতে আজও আমরা ‘শহীদি সপ্তাহ’ পালন করি আর সেটি এই সময়েও জারি রয়েছে।

বন্ধুগণ,

দশম গুরুর পরও ত্যাগ এবং আত্মবলিদানের এই পরম্পরা থামেনি। বীর বাবা বন্দা সিং বাহাদুর নিজের সময়ের সবচাইতে শক্তিশালী শাসকের সিংহাসন কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন। হাজার হাজার ‘শিখ মিসলোঁ’রা নাদির শাহ এবং আহমেদ শাহ আবদালির আক্রমণকে প্রতিহত করতে আত্মবলিদান দিয়েছিলেন। মহারাজা রঞ্জিত সিং-ও পাঞ্জাব থেকে বেনারস পর্যন্ত যেভাবে দেশের সামর্থ্য এবং ঐতিহ্যকে পুনরুজ্জীবিত করেছিলেন, তাও ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। ইংরেজ শাসনকালেও আমাদের শিখ ভাই-বোনেরা যে বীরত্বের সঙ্গে দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছিলেন, আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে জালিয়ানওয়ালা বাগ-এর সেই মাটি আজও অসংখ্য মানুষের আত্মবলিদানের সাক্ষী। এটা একটা এমন পরম্পরা যা অনেক শতাব্দী আগে আমাদের গুরুরা শুরু করেছিলেন, আজও তা ততটাই জাগ্রত, ততটাই সচেতন।

বন্ধুগণ,

এই সময়টা আমাদের দেশের স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবের সময়। আজ যখন দেশ তার স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে, তার অতীত থেকে প্রেরণা নিচ্ছে, তখন আমাদের গুরুদের আদর্শ আমাদের জন্য আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আজ দেশ যে প্রচেষ্টা করছে, যে সঙ্কল্প নিচ্ছে, সেই সমস্ত সঙ্কল্পে সেই স্বপ্ন রয়েছে যা অনেক শতাব্দী আগেই দেশ সম্পূর্ণ হতে দেখতে চেয়েছিল। যেভাবে গুরু নানক দেবজি আমাদের ‘মানবজাত’-এর পাঠ শিখিয়েছিলেন, তাঁকে অনুসরণ করেই আজ দেশ ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ অউর সবকা বিশ্বাস’-এর মন্ত্র নিয়ে এগিয়ে চলেছে। এই মন্ত্রের পাশাপাশি আজ দেশ ‘সবকা প্রয়াস’কে নিজের শক্তি করে তুলছে। কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত, কচ্ছ থেকে কোহিমা পর্যন্ত গোটা দেশ একসঙ্গে স্বপ্ন দেখছে, একসঙ্গে তার সিদ্ধির জন্য প্রয়াস চালাচ্ছে। আজ দেশের মন্ত্র হল – ‘এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত’।

আজ দেশের লক্ষ্য হল এক নতুন সমর্থ ভারতের পুনরুদয়। আজ দেশের নীতি হল প্রত্যেক দরিদের সেবা, প্রত্যেক বঞ্চিতকে অগ্রাধিকার। আপনারা দেখবেন, করোনার এত মুশকিল সময় এসেছে কিন্তু দেশ চেষ্টা চালিয়ে গেছে যাতে কোনও গরীবকে খালি পেটে না শুতে হয়। আজ দেশের প্রত্যেক প্রচেষ্টার জন্য, প্রত্যেক প্রকল্পের ধাপ দেশের প্রত্যেক অংশে সমানভাবে দেওয়া হচ্ছে। এই প্রচেষ্টার সিদ্ধির উপাদান ভারতেই মজুত। গুরু নানক দেবজি-র শিক্ষাকেই এটি চরিতার্থ করবে।

সেজন্য আজ সকলের দায়িত্ব হল, এমন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে যাতে আমাদের স্বপ্নে এবং ঐক্যবদ্ধতায় কোনও আঁচ না আসে সেটা দেখা। আমাদের গুরু যে স্বপ্নগুলি নিয়ে বেঁচেছিলেন, যে স্বপ্নগুলির জন্য তিনি নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। আমাদের গুরু নানা বিপদ সম্পর্কে দেশকে সতর্ক করতেন, সেই বিপদ আজও রয়েছে। সেজন্য আমাদের সতর্ক থাকতেই হবে আর দেশের সুরক্ষাও করতে হবে।

আমার সম্পূর্ণ বিশ্বাস আছে, গুরু নানক দেবজি-র আশীর্বাদে আমরা নিজেদের এই সঙ্কল্পগুলি অবশ্যই পূরণ করব আর দেশ এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছবে। অবশেষে আমি লাখপত সাহিব দর্শন করে এসেছি, ভক্তদের প্রতি একটি অনুরোধ রাখতে চাই। এই সময় কচ্ছ-এ রান উৎসব চলছে। আপনারাও সময় বের করে অবশ্যই রান উৎসবে যাবেন।

“মুঞ্জা পচ্ছী ভা ভেন কাহাঁসে আয়ে? হাবের টি সি কচ্ছ মেঁ দিল্লি, পাঞ্জাব যাদু পণ্ডা দুধনা? মেঁ খাসোঁ খাস সি মেঁ আঞ্জু অউর আজ কুটুম্বজ খেয়াল রখজা ভলে পান কুছ অউর কাচ্চি মধু মুঞ্জে ঢিল মেঁ বসেটা তনে অউর কেড়া পান বন জিদা পান বেনা কুছকে জঘ কয়ে বগর রহী নাতো সগাজে পান এ আজো আ মোদী কে মুঞ্জা যে যা রাম রাম … জ্ঞান রাখীজা।”

বন্ধুগণ,

রান উৎসবের সময় বিগত এক-দেড় মাসে এক লক্ষেরও বেশি পর্যটক কচ্ছ-এর মনোরম দৃশ্যাবলী, খোলা আকাশের আনন্দ নিতে সেখানে পৌঁছেছেন। যখনই ইচ্ছাশক্তি থাকে, মানুষের চেষ্টা থাকে, তখন কিভাবে ভূমির কায়াকল্প হতে পারে, এটা আমার কচ্ছ-এর পরিশ্রমী মানুষেরা করে দেখিয়েছেন। একটা সময় ছিল যখন কচ্ছ-এর মানুষ রুজিরুটির জন্য সারা পৃথিবীতে যেতেন। আজ বিশ্বের অনেক মানুষ কচ্ছ-এর দিকে আকর্ষিত হতে ছুটে আসছেন। কিছুদিন আগেই ধৌলাবিরাকে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট ঘোষণা করেছে। এর ফলে ওখানকার পর্যটন আরও উৎসাহ পাবে। গুজরাট সরকার এখন সেখানে একটি সুন্দর ‘টেন্ট সিটি’ গড়ে তুলছে। এর ফলে পর্যটকদের সুবিধা আরও বাড়বে। এখন ধোরড়ো থেকে সরাসরি রান-এর মধ্য দিয়ে ধৌলাবিরা যাওয়ার জন্য নতুন সড়কপথের নির্মাণও তীব্র গতিতে এগিয়ে চলেছে। আগামীদিনে ভুজ এবং পশ্চিম কচ্ছ থেকে খড়ীর এবং ধৌলাবিরা আসা-যাওয়া অনেক সহজ হবে। এর দ্বারা কচ্ছ-এর মানুষ উপকৃত হবেন, এখানকার শিল্পোদ্যোগীরা উপকৃত হবেন আর উপকৃত হবেন কচ্ছ বেড়াতে আসা পর্যটকরা। হাবড়াতে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি পার্কের নির্মাণ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। আগে পশ্চিম কচ্ছ এবং ভুজ থেকে ধৌলাবিরা যাওয়ার জন্য ভচাউ-রাপড় হয়ে যেতে হত। এখন সরাসরি হাবড়া থেকে ধৌলাবিরা যেতে পারবেন। পর্যটনকে উৎসাহ যোগানোর জন্য নারায়ণ সরোবর, কোটেশ্বর, মাতাকা মঢ়, হাজীপীরের একটু আগেই ধরড়ো টেন্ট সিটি, এবং ধৌলাবিরা এই নতুন পথ তৈরি হওয়ায় এই সমস্ত এলাকার মধ্যে আসা-যাওয়া সহজ হবে।

বন্ধুগণ,

আজ আমাদের প্রত্যেকের প্রিয় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শ্রদ্ধেয় অটলজির জন্মজয়ন্তীও। অটলজি কচ্ছ-কে বিশেষভাবে ভালোবাসতেন। ভূমিকম্পের পর এখানে হওয়া উন্নয়নের কাজে গুজরাটের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার দাঁড়িয়েছিল। আজ কচ্ছ যে ধরনের প্রগতির পথে এগিয়ে চলেছে তা দেখে অটলজি যেখানেই থাকুন না কেন, অবশ্যই সন্তুষ্ট হবেন, আনন্দে থাকবেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, কচ্ছ নিয়ে আমাদের সমস্ত মহানুভব, সমস্ত শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিদের আশীর্বাদ এমনই যেন বর্তাতে থাকে। আপনাদের সবাইকে আরও একবার হৃদয় থেকে গুরুপরবের শুভেচ্ছা জানাই। অনেক অনেক শুভকামনা।

অনেক অনেক ধন্যবাদ!

 

CG/SB/DM/