নয়াদিল্লি, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২২
জয় স্বামীনারায়ণ !
জয় স্বামীনারায়ণ !
পরম পূজনীয় মহন্ত স্বামীজি, পূজনীয় সন্ন্যাসীগণ, গুজরাটের মাননীয় রাজ্যপাল মহোদয়, মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মহোদয় এবং এখানে উপস্থিত সমস্ত সৎসঙ্গী পরিবারের সদস্যরা, এটা আমার সৌভাগ্য যে আজকের এই ঐতিহাসিক কর্মসূচীর সাক্ষী হতে পেরেছি এবং আপনাদের সঙ্গে থেকে সৎসঙ্গী হয়েছি। আমি মনে করি, এত বৃহৎ স্তরে আর একমাস ব্যাপী এই কর্মসূচি শুধুই সংখ্যার হিসেবে বড় নয়, সময়ের হিসেবেও অনেক দীর্ঘকালীন। কিন্তু এখানে যতটা সময় কাটিয়েছি, আমার মনে হয়েছে যে এখানে একটা দিব্যতার অনুভূতি আমাকে সমৃদ্ধ করেছে। এখানে অনেক সংকল্পের সৌন্দর্য্য আমাকে অভিভূত করেছে। এখানে শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলের জন্য আমাদের ভারতীয় সংস্কৃতি কেমন, আমাদের ঐতিহ্য কী কী, আমাদের আস্থা কেমন, আমাদের অধ্যাত্ম কী, আমাদের পরম্পরা কেমন, আমাদের সংস্কৃতি কেমন, আমাদের প্রকৃতি কী – এই সব প্রশ্নের উত্তর এই পরিসরে সম্পৃক্ত রয়েছে। এখানে ভারতের প্রতিটি রঙ দেখা যায়। আমি এই উপলক্ষে সকল পূজনীয় সন্ন্যাসীদের আশীর্বাদে এই আয়োজনের জন্য, এই কল্পনার সামর্থের জন্য, আর এই কল্পনাকে চরিতার্থ করার জন্য যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, তাঁদের সবার চরণ বন্দনা করি, হৃদয় থেকে শুভেচ্ছা জানাই। পূজনীয় মহন্ত স্বামীজির আশীর্বাদে এতো বড় সুন্দর আয়োজন যা দেশ ও বিশ্বকে শুধু আকর্ষিত করবে না, প্রভাবিতও করবে। পাশাপাশি এই আয়োজন আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মগুলিকেও প্রেরণা যোগাবে।
আগামী ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত গোটা বিশ্বের লক্ষ লক্ষ মানুষ আমার পিতাতুল্য পূজনীয় প্রমুখ স্বামীজির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতে এখানে আসবেন। আপনাদের মধ্যে হয়তো অনেকেই জানেন যে রাষ্ট্রসংঘেও আমাদের প্রমুখ স্বামীজির জন্ম শতবর্ষ সমারোহ পালন করা হয়েছে। আর এর মাধ্যমেই প্রমাণিত হয় যে তাঁর দর্শন কতটা শাশ্বত, কতটা সার্বভৌমিক। আমাদের যে মহান পরম্পরাকে বৈদিক সন্ন্যাসীদের থেকে শুরু করে বিবেকানন্দ পর্যন্ত যে সর্বজনীন ধারাকে প্রমুখ স্বামীর মতো মহান সন্ন্যাসীরা এগিয়ে নিয়ে গেছেন, সেই ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’-এর ভাবনা আজ এখানে শতাব্দী সমারোহেও অনুভূত হচ্ছে। এখানে এই উৎসব উপলক্ষে যে নগর তৈরি করা হয়েছে, সেখানে আমাদের কয়েক হাজার বছরের মহান সন্ন্যাসী পরম্পরা, সমৃদ্ধ সন্ন্যাসী পরম্পরার দর্শন একসঙ্গে অনুভূত হচ্ছে। আমাদের সন্ন্যাসী পরম্পরা অসংখ্য মত, পথ, পন্থা, আচার-বিচার এর প্রচারেই সীমাবদ্ধ ছিল না। আমাদের সন্ন্যাসীরা ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’-এর শাশ্বত ভাবনাকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে গোটা বিশ্বকে একসূত্রে গাঁথার চেষ্টা করে গেছে। আমার সৌভাগ্য যে একটু আগেই ব্রহ্ম বিহারী স্বামীজি কিছু গুপ্ত জ্ঞান, কিছু গুহ্য কথাও আমাকে বলেছেন। বাল্যকাল থেকেই আমার মনে এই অধ্যাত্মের প্রতি এ রকমই আকর্ষণ ছিল। আমি দূর থেকে প্রমুখ স্বামীজিকেও দর্শন করতাম। কখনও কল্পনা করিনি যে তাঁর কাছে পৌঁছাতে পারবো। কিন্তু ভালো লাগতো। দূর থেকেও যদি তাঁর সাক্ষাৎ পেতাম তাহলে ভালো লাগতো। তখন আমার বয়স খুব কম ছিল। কিন্তু জিজ্ঞাসা ছিল অপার ও ক্রমবর্ধমান। অনেক বছর পর সম্ভবত ১৯৮১ সালে প্রথমবার একা তাঁর সঙ্গে সৎসঙ্গে মিলিত হওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে, যা আমার জন্য ছিল একটি আশ্চর্যজনক ঘটনা। আমার সঙ্গে দেখা হওয়ার আগেই তিনি আমার সম্পর্কে অল্পবিস্তর জেনেছিলেন। কিন্তু আমি তার আগে কোনো ধর্মচর্চা, কোনো ঈশ্বর ভাবনা নিয়ে আলাপ-আলোচনা বা অধ্যাত্মচর্চা করিনি, যা করেছি তা হল সম্পূর্ণরূপে সেবার কাজ নিয়ে আলোচনা – মানব সেবার কাজ! আর এই বিষয়গুলি নিয়েই আমি তাঁর সঙ্গে প্রথম কথা বলেছি। সেটাই ছিল আমাদের দুজনের প্রথম সাক্ষাৎ। সেই সময় তিনি আমাকে যা বলেছিলেন, তার প্রতিটি শব্দ আমার হৃদয়পটে অঙ্কিত হয়ে গেছিল। তাঁর একটা বার্তা ছিল যে সেবাই যেন জীবনের সর্বোচ্চ লক্ষ্য হয়। অন্তিম শ্বাস নেওয়া পর্যন্ত আমি যেন সেবার কাজেই যুক্ত থাকি। আমাদের শাস্ত্রে বলা হয়, নর সেবাই নারায়ণ সেবা, জীবের মধ্যেই শিব রয়েছেন। তিনি অনেক বড় বড় আধ্যাত্মিক চর্চাকে অত্যন্ত সরল শব্দমালায় সাজিয়ে উপহার দিতেন। যেমন ব্যক্তি তেমনভাবেই পরিবেশন করতেন, যে যেভাবে হজম করতে পারে, যে যতটা নিতে পারেন ততটাই দিতেন। এতো বড় বৈজ্ঞানিক হওয়া সত্বেও আমাদের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এপিজে আব্দুল কালামজি তাঁর সঙ্গে মিলিত হয়ে উপকৃত হয়েছেন এবং খুবই আনন্দ পেতেন বলে জানিয়েছেন, আর আমার মতো একজন সাধারণ সমাজ সেবকও যখন যেতাম তখন আমিও তাঁর কাছ থেকে অনেক কিছু পেতাম। সন্তুষ্ট হতাম। এটা তাঁর ব্যক্তিত্বের বিশালতা, ব্যাপকতা ও গভীরতার ফলেই সম্ভব হত। একজন আধ্যাত্মিক সন্ন্যাসী হিসেবে তিনি অনেক কিছু বলতে পারতেন, জানতেও পারতেন। কিন্তু আমার সবসময়ই মনে হয়েছে যে তিনি প্রকৃত অর্থেই একজন সমাজ সংস্কারক ছিলেন। আমরা প্রত্যেকেই যখন তাঁকে নিজের মতো করে স্মরণ করি, তখন তাঁর সঙ্গে একটি যোগসূত্র অনুভব করি। সম্ভবত সেই মালায় ভিন্ন ভিন্ন ধরণের পুঁতি আমরা দেখতে পাই, মুক্তো দেখতে পাই। কিন্তু এর ভিতরে যে সূত্রটি রয়েছে তা একপ্রকার মানুষ কেমন হবে, ভবিষ্যৎ কেমন হবে, বিভিন্ন ব্যবস্থায় পরিবর্তনশীলতা কেন থাকবে এবং বিভিন্ন আদর্শের সঙ্গে কীভাবে যুক্ত থাকবে আধুনিকতার স্বপ্নগুলি, আধুনিকতার প্রতিটি উপাদানকে কীভাবে স্বীকার করে নেবেন; একটি অদ্ভুত সংযোগ, একটি অদ্ভুত সঙ্গম, তার পদ্ধতিও বড়ই আশ্চর্য রকম! তিনি সর্বদাই মানুষের মনের ভিতরের ভালো দিকটিকে উৎসাহ যুগিয়েছেন। কখনও এ কথা বলেননি যে, হ্যাঁ ভাই, তুমি এমনটা করো, ঈশ্বরের নাম জপো তাহলে সব ঠিক হয়ে যাবে! না, তিনি কখনও এ রকম বলেননি। আমাদের মধ্যে যতো ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে, যতো সমস্যা আছে, সেগুলিতো থাকবেই, কিন্তু সেগুলি থেকে মুক্তি পেতে হলে প্রত্যেকের নিজের ভিতরে যে সু-দিকটি রয়েছে সেদিকেই মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে হবে। এভাবেই নিজের ভিতরের শক্তিকে জাগিয়ে তুলতে হবে, সার ও জল দিতে হবে। নিজের ভিতরের ভালো দিকগুলি যদি বেশি করে অঙ্কুরিত হতে পারে, তাহলে সেগুলি অঙ্কুরিত হতে থাকা খারাপ দিকগুলিকে সমূলে বিনাশ করে দেবে – এমনই উচ্চ ভাবনা তিনি অত্যন্ত সহজ শব্দাবলীর মাধ্যমে আমাদের সামনে তুলে ধরতেন। আর এই মাধ্যমকেই তিনি মানুষকে শুধরানোর, শিষ্টাচারে দীক্ষিত করার, মানুষের স্বভাবে পরিবর্তন আনার মাধ্যম করে তুলেছিলেন। অনেক শতাব্দী প্রাচীন কুসংস্কার আমাদের সমাজ জীবনে উচুঁ-নিচু ভেদাভেদ ও বৈষম্য তৈরি করেছিল, তিনি সেগুলিকে নস্যাৎ করেন। তাঁর ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও স্পর্শেই তিনি এই অসম্ভবকে সম্ভব করতে পেরেছিলেন। সবাইকে সাহায্য করা, সবার কথা ভাবা, যত কম সময়ের মধ্যেই হোক না কেন সমস্যা যত বড় কিংবা ছোট হোক না কেন, পূজনীয় প্রমুখ স্বামীজি মহারাজ প্রতিনিয়ত সমাজের ভালোর জন্য সবাইকে প্রেরণা জুগিয়ে গেছেন। নিজে এগিয়ে এসে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে তিনি সমাজ সেবায় অবদান রেখেছেন। তখন মোরবিতে প্রথমবার মচ্ছু বাঁধ নিয়ে সমস্যা হয়, তখন আমি সেখানে স্বেচ্ছাসেবক রূপে কাজ করছিলাম। আমাদের প্রমুখ স্বামী মহারাজজি তখন কয়েকজন সন্ন্যাসী ও তাঁদের সঙ্গে অনেক সৎসঙ্গীকে সেখানে পাঠিয়েছিলেন। আর তাঁরাও আমাদের সঙ্গে মাটি কাটা ও বাঁধে মাটি ফেলার কাজ করেছেন। অনেক মৃতদেহের অগ্নি সংস্কার করার কাজেও তাঁরা সাহায্য করেছেন। আমার মনে আছে, ২০১২ সালে মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ গ্রহণের পর আমি প্রমুখ স্বামী মহারাজজির কাছে গিয়েছিলাম। আমার জীবনে চলার পথে যত গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় এসেছে, প্রত্যেকবারই আমি প্রমুখ স্বামীজির কাছে গিয়েছি। অনেক কম লোকই হয়তো জানেন যে ২০০২ সালে আমি যখন নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলাম, জীবনে প্রথমবার নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলাম, প্রথমবার যখন প্রার্থী পদের জন্য নাম নথিভুক্ত করতে রাজকোটে গেছিলাম তখন আমার আগেই সেখানে দু’জন সন্ন্যাসীও উপস্থিত ছিলেন। আমি যখনই সেখানে গেলাম, তখন সেই দুই সন্ন্যাসী আমাকে একটি কৌটো দেন। আমি খুলে দেখি তার ভিতরে একটি কলম রয়েছে। সন্ন্যাসীরা বলেন যে প্রমুখ স্বামীজি এই কলম পাঠিয়েছেন। আপনি যখন নিজের প্রার্থী পদ নথিভুক্ত করার জন্য ফর্ম ভরবেন তখন এই কলম দিয়ে নিজের নাম সই করবেন। তখন থেকে শুরু করে গত কাশীর নির্বাচন পর্যন্ত সমস্ত জায়গাতেই পূজনীয় প্রমুখ স্বামীজির পক্ষ থেকে কেউ না কেউ আমার জন্য কলম নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। যখন কাশীতে গেলাম তখন তো আমার জন্য সারপ্রাইজ ছিল প্রমুখ স্বামীজির পাঠানো কলমের রঙ। সেটি ছিল বিজেপি-র পতাকার রঙের। এর ঢাকনাটি ছিল সবুজ রঙের আর নিচের অংশটি ছিল গেরুয়া রঙের। তার মানে তিনি অনেক আগে থেকেই হয়তো মনে করে এই কলমটি কিনে সংগ্রহ করে রেখেছিলেন যে, পরেরবার নির্বাচনের মনোনয়নপত্র ভরার সময় মোদীকে এটা পাঠাবো! অর্থাৎ, ব্যক্তিগত রূপে এমন কোনো ক্ষেত্র ছিল না যে তিনি আমার জন্য ভাবতেন না। খুব ‘কেয়ার’ করতেন। হয়তো অনেকেই শুনে আশ্চর্য হবেন যে, বিগত ৪০ বছরের মধ্যে সম্ভবত এক বছরও এমন যায়নি যখন প্রমুখ স্বামীজি আমার জন্য পায়জামা-পাঞ্জাবীর কাপড় পাঠাননি। আমরা জানি যে আমাদের সমাজে ছেলে যত বড়ই হোক না কেন, যত মহানই হোক না কেন, কিন্তু মা-বাবার জন্য তো সে বাচ্চাই থাকে। দেশবাসী আমাকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়ে দিয়েছে। কিন্তু যে পরম্পরা প্রমুখ স্বামীজি চালিয়ে গেছেন তার অবর্তমানেও সেই পরম্পরা জারি রয়েছে। এখনও আমি স্বামীজির প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতি বছর পায়জামা-পাঞ্জাবীর কাপড় পাই। এই আপনত্বকে আমি কোনো সংস্থাগত জনসংযোগের কাজের পরিণাম বলে মনে করি না। প্রমুখ স্বামীজির সঙ্গে আমার একটা অধ্যাত্মিক সম্পর্ক ছিল। এক পুত্রের প্রতি পিতার মতো ভালোবাসা ছিল। একটা অটুট বন্ধন ছিল। আর আজও তিনি যেখানে আছেন, সেখান থেকেই হয়তো প্রতিটি মুহূর্তে আমাকে দেখছেন। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে আমার সব কাজ, সমস্ত পদক্ষেপকেই দেখছেন। তিনি আমাকে শিখিয়েছেন, বুঝিয়েছেন; আমি কি তার প্রদর্শিত পথ অনুসরণ করে চলছি, না কি চলছি না- সেটা নিশ্চয় তিনি দেখছেন! কচ্ছে ভয়ানক ভূমিকম্পের সময় যখন আমি স্বেচ্ছাসেবক রূপে কাজ করতাম, তখন আমার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার কোনও সম্ভাবনাই ছিল না। কিন্তু সেখানে সমস্ত সন্ন্যাসীদের সঙ্গে যখন আমার দেখা হয়, তাঁরা আমার খাওয়া-দাওয়ার কী ব্যবস্থা হয়েছে সে বিষয়ে খোঁজ-খবর করেছেন। আমি তাঁদেরকে বলি যে, আমাদের কর্মকর্তাদের কাছে পৌঁছে যাব। সন্ন্যাসীরা বলেন, যে তোমাকে কোথাও যেতে হবে না, তুমি আমাদের সঙ্গেই খেতে পারো। রাতে যদি দেরিতে আসো তাহলেও এখানেই খাবে। অর্থাৎ আমি যতদিন ভুজ-এ ত্রাণ ও পুনর্বাসনের কাজ করছিলাম ততদিন প্রমুখ স্বামীজির অনুগামী সন্ন্যাসীরাই আমার খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। অর্থাৎ, এতো ভালোবাসা, আর আমি যত কথা বললাম এগুলি তো আর অধ্যাত্মিক কথা নয়! আমি আপনাদের সঙ্গে একটি সহজ সামান্য ব্যবহারের কথাই বলছি, যা আধ্যাত্মিক সম্পর্কের কারনেই হয়তো প্রমুখ স্বামী মহারাজজি ও তাঁর অনুগামীদের কাছ থেকে পেয়েছি।
জীবনের অনেক কঠিন মুহূর্তে আমি যখন কোনো না কোনো সমস্যার সম্মুখীন তখনই দেখেছি প্রমুখ স্বামীজি আমাকে নিজে থেকে ডেকে পাঠিয়েছেন কিংবা আমার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। একটা কথা আমার মনে আছে, একটু আগেই যে ভিডিও দেখানো হচ্ছিল সেখানেও আপনারা দেখেছেন যে আমি উল্লেখ করেছি; ১৯৯১-৯২ সালে শ্রীনগরের লালচকে ভারতের ত্রিবর্ণ রঞ্জিত পতাকা উত্তোলনের জন্য আমার দলের পক্ষ থেকে একতা যাত্রার পরিকল্পনা হয়েছিল। ডঃ মুরলী মনোহর জোশীর নেতৃত্বে সেই একতা যাত্রা শুরু হয়েছিল, আর আমি তার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলাম। সেই একতা যাত্রায় যাওয়ার আগে আমি প্রমুখ স্বামীজির আশীর্বাদ নিয়ে গেছিলাম। সেজন্য তিনি জানতেন যে আমি কোথায় যাচ্ছি, কী করছি। আমরা পাঞ্জাব থেকে যাচ্ছিলাম। আমাদের যাত্রার পাশাপাশি সেখানে সন্ত্রাসবাদীদেরও ভিড় হয়েছিল। আমাদের কিছু সঙ্গী মারাও গেছিলেন। গোটা দেশে অত্যন্ত চিন্তার বিষয় হয়ে উঠেছিল। অনেক জায়গায় গুলি চলে। অনেক লোক মারা যায়। আমরা শ্রীনগরের লালচকে ভারতের ত্রিবর্ণ রঞ্জিত জাতীয় পতাকা উত্তোলন করি, তারপর আমরা সেখান থেকে জম্মু পৌঁছোই। জম্মুতে বিমান বন্দরে অবতরণের পর আমি প্রথম ফোন করেছিলাম প্রমুখ স্বামীজিকে যে, আমি ভালো আছি। তিনি বলেছিলেন, ঠিক আছে, ঈশ্বর তোমাকে আশীর্বাদ করবেন। এখানে আসো তারপর দেখা হবে। তোমার মুখে শুনবো কী কী হয়েছে!
কত সহজ-সরল কথাবার্তা। আমি মুখ্যমন্ত্রী হলাম। অক্ষরধামের সামনেই ২০ মিটার দূরত্বে মুখ্যমন্ত্রী নিবাসে আমি থাকতাম। প্রত্যেকবারই আসা-যাওয়ার পথে বিশেষ করে ঘর থেকে বেড়িয়ে আগে অক্ষরধাম শিখর দর্শন করেই আমি সামনে পা বাড়াতাম। এতো সহজ নিত্যনৈমিত্তিক সম্পর্ক ছিল। কিন্তু সেই অক্ষরধামেই সন্ত্রাসবাদীরা আক্রমন করলো, আমি প্রমুখ স্বামীজিকে ফোন করলাম। এত বড় আক্রমন, আমি অবাক হয়ে গেছি! অক্ষরধামে আক্রমন হয়েছে। সন্ন্যাসীরা কেমন আছেন, গুলি চলেছে কি চলেনি- সমস্ত বিষয় নিয়ে অনেক দুশ্চিন্তা ছিল। সব কিছু অস্পষ্ট ছিল। এহেন সংকটের সময় এত বড় সন্ত্রাসবাদী আক্রমন, এত মানুষ মারা গেছে, প্রমুখ স্বামীজি আমাকে কী বলেছেন?
তিনি বলেন, আরে ভাই তোমার বাড়িটা তো সামনে, তোমার কোনো সমস্যা হয়নি তো?
আমি বলি, বাপা এতো বড় সংকটের সময়ে আপনি এত শান্ত কন্ঠে আমার কুশল জিগ্যেস করছেন!
তিনি বলেন, দেখো ভাই ঈশ্বরের ওপর ভরসা রাখো, সব কিছু ভালো হবে। ঈশ্বর সত্যের সঙ্গে থাকেন! অর্থাৎ যেকোন মানুষ এ রকম পরিস্থিতিতে মানসিক ভারসাম্য না হারিয়ে শান্তভাবে গভীর আধ্যাত্মিক শক্তি না থাকলে এটা সম্ভব নয়, যা প্রমুখ স্বামীজি তাঁর গুরুজনদের কাছ থেকে এবং নিজের তপস্যার মাধ্যমে অর্জন করেছেন। আর একটি কথা আমার সব সময় মনে থাকে আমার কাছে তিনি সব সময়ই আমার বাবার মতো ছিলেন। আপনারা হয়তো ভাবেন যে তিনি আমার গুরু ছিলেন। এই মুহূর্তে আর একটি স্মৃতি আমার মনে পড়ছে যখন দিল্লিতে অক্ষরধাম গড়ে ওঠে তখন সেখানেও আমি একথা বলেছিলাম। কারণ আমাকে কেউ বলেছিলেন যে যোগীজি মহারাজের ইচ্ছা ছিল যে যমুনার তটে অক্ষরধাম মন্দির থাকা উচিত। তাঁদের সঙ্গে কথায় কথায় হয়তো যোগীজি মহারাজের মুখ থেকে তাঁর এই ইচ্ছার কথা প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু তাঁর সেই শিষ্যরা গুরুর মুখ নিসৃত শব্দগুলিকে বাস্তবায়নের ইচ্ছা নিয়ে বেঁচেছিলেন। যোগীজি তো প্রয়াত হয়েছেন। কিন্তু যোগীজির সেই শব্দগুলি বেঁচে ছিল। কারণ যোগীজি যখন তাঁর সেই ইচ্ছার কথা প্রকাশ করেছিলেন, তখন সামনে তাঁর যে শিষ্যরা ছিলেন তার মধ্যে প্রমুখ স্বামী ছিলেন অন্যতম। আমরা সবাই গুরু রূপে প্রমুখ স্বামীজির শক্তিকে দেখেছি। কিন্তু আমি একজন শিষ্য রূপে তাঁর শক্তিকেও দেখেছি। তাঁর গুরুর মুখ নিঃসৃত সেই ইচ্ছার কথা তিনি নিজের জীবনে ধারণ করে দেখিয়েছেন। আর যমুনার তটে অক্ষরধাম নির্মাণ করেছেন। আজ গোটা বিশ্ব থেকে পর্যটকরা এখানে আসেন, তীর্থযাত্রীরা আসেন। আর অক্ষরধামের মাধ্যমে ভারতের মহান ঐতিহ্যকে বোঝার চেষ্টা করেন। এটা অনেক যুগের উপযোগী একটি কাজ। এটা অনেক যুগকে প্রেরণা যোগানোর কাজ। আজ বিশ্বের যেখানেই যান না কেন মন্দির পাবেন। আমাদের দেশে মন্দির কোনো নতুন ব্যাপার নয়। কয়েক হাজার বছর ধরে অনেক মন্দির তৈরি হয়েছে। কিন্তু আমাদের এই মন্দির পরম্পরাকে আধুনিক করে তোলা মন্দির ব্যবস্থায় আধ্যাত্মিকতা আর আধুনিকতার মিলন ঘটানো কম কথা নয়। আমি মনে করি এক্ষেত্রে প্রমুখ স্বামীজির নেতৃত্বে একটি অসাধারণ পরম্পরা স্থাপিত হয়েছে। অনেক মানুষ মনে করেন যে আমাদের সন্ন্যাসী পরম্পরা নতুন প্রজন্মের মানুষদের মনে না জানি কী কী শেখায়। আগেকার দিনে বলা হত যে, সৎসঙ্গীরা আমাকে মাফ করো, সাধু হতে হলে সন্ন্যাসী স্বামী নারায়ণের মতো হও, তাহলে লাড্ডু খেতে পারবে। হ্যাঁ, একথাই চলতো। সাধু হতে হলে সন্ন্যাসী স্বামী নারায়ণের মতো হও, তাহলে আনন্দে থাকবে। কিন্তু প্রমুখ স্বামীজি এই সন্ন্যাসী পরম্পরাকে যেভাবে সম্পূর্ণ রূপে বদলে দিয়েছেন, যে রকম স্বামী বিবেকানন্দজি রামকৃষ্ণ মিশনের মাধ্যমে সন্ন্যাসী জীবনকে সেবা কার্যে যুক্ত করার জন্য একটি অনেক বড় বিস্তার দিয়েছেন, প্রমুখ স্বামীজিও তেমনি সন্ন্যাসীদের শুধুই ‘স্ব’ এর আত্মিক উন্নতি নয়, শুধুই নিজের কল্যাণ নয়, শুধুই সন্ন্যাসী সমাজের কল্যাণ নয়, তিনি প্রত্যেক সন্ন্যাসীকে এমনভাবে তৈরি করেছেন, যাতে তাঁরা সমাজের সেবায় কাজে লাগেন। এখানে যত সন্ন্যাসী বসে আছেন তাঁরা প্রত্যেকেই কোনো না কোনো সামাজিক কাজের দায়িত্ব নির্বাহ করতে করতে এখানে এসেছেন এবং আজও তাঁদের কাঁধে অনেক সামাজিক কাজের দায়িত্ব রয়েছে। শুধু আশীর্বাদ দেওয়া আর মোক্ষের পথ দেখানো নয়। এই সন্ন্যাসীরা নিয়মিত অরণ্যে যান, জনজাতির মানুষদের মধ্যে থেকে তাঁদের কল্যাণে কাজ করেন। কোথাও কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয় এলে তাঁরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করেন। এই পরম্পরা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে পূজনীয় প্রমুখ স্বামী মহারাজজির অনেক বড় অবদান রয়েছে। তিনি যতটা সম্ভব সময়, শক্তি এবং প্রেরণা জুগিয়ে গেছেন। আমাদের মন্দিরগুলির মাধ্যমে যেন বিশ্বে আমাদের পরিচয় গড়ে ওঠে তা সুনিশ্চিত করতে তিনি সন্ন্যাসীদের আত্মিক উন্নতির জন্য সামর্থ গড়ে তোলার জন্য অনেক পদক্ষেপ নিয়েছেন। প্রমুখ স্বামী মহারাজজি চাইলে গান্ধীনগরে থাকতে পারতেন, আমেদাবাদে থাকতে পারতেন কিংবা দেশের যে কোন বড় শহরে থাকতে পারতেন। কিন্তু তিনি তাঁর জীবনের অধিকাংশ সময় সাহারানপুরে কাটিয়েছেন। এখান থেকে ৮০-৯০ কিলোমিটার দূরে তিনি একটি অসাধারণ কর্মযজ্ঞ শুরু করেন। তিনি সন্ন্যাসীদের জন্য একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। আজ-কাল আমার সঙ্গে যেকোন আখড়ার সন্ন্যাসীদের দেখা হলে আমি তাঁদেরকে বলি যে আপনারা দু’দিনের জন্য সাহারানপুরে যান। সন্ন্যাসীদের প্রশিক্ষণ কীভাবে হওয়া উচিত, আমাদের মহাত্মারা কেমন মানুষ হয়ে উঠবেন, সাধু মহাত্মাদের কেমন হওয়া উচিত- এটা দেখে আসুন। যাঁরা আমার কথা শোনেন, তাঁরা সেখান যান আর দেখে আসেন। অর্থাৎ, আধ্যাত্মিকতার সঙ্গে আধুনিকতার সফল মিশ্রণ!
সেখানে ভাষা শেখানো হয়, ইংরাজি শেখানো হয়, সংস্কৃত শেখানো হয়, বিজ্ঞানও শেখানো হয়। এর পাশাপাশি আমাদের আধ্যাত্মিক পরম্পরাগুলি সম্পর্কেও জ্ঞান দেওয়া হয়। অর্থাৎ ব্যক্তির সম্পূর্ণ বিকাশের আয়োজনের মাধ্যমে সমাজের জন্য সন্ন্যাসীদের গড়ে তোলা। সন্ন্যাসীরা যেন সমাজ কল্যাণে বড় বড় কাজ করার মতো সামর্থবান হন। শুধু ত্যাগী হওয়া যথেষ্ট নয়। সন্ন্যাসী জীবনে ত্যাগ তো থাকবেই। কিন্তু সমাজের জন্য কাজ করার সামর্থও থাকতে হবে। এই দৃষ্টিকোণ থেকেই তিনি একটি সমৃদ্ধ সন্ন্যাসী পরম্পরা গড়ে তুলেছেন। যেভাবে তিনি অক্ষরধাম মন্দিরগুলির মাধ্যমে গোটা বিশ্বে আমাদের ভারতের মহান পরম্পরাগুলিকে পরিচিত করানোর একটি মাধ্যম গড়ে তুলেছেন, তেমনি উন্নত সন্ন্যাসী পরম্পরা গড়ে তোলার মাধ্যমে পূজনীয় প্রমুখ স্বামী মহারাজজি একটি প্রাতিষ্ঠানিক পদ্ধতি গড়ে তুলেছেন। তিনি ব্যক্তিগত ব্যবস্থার মতো করে নয়, প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই এই ব্যবস্থা গড়ে তুলেছেন। সেজন্য অনেক শতাব্দী ধরে ব্যক্তি আসবে-যাবে, সন্ন্যাসীরা আসবেন-যাবেন, কিন্তু এই ব্যবস্থা এমন গড়ে উঠেছে যে একটি নতুন পরম্পরার প্রজন্ম একের পর এক গড়ে উঠবে। এটা আমি নিজের চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি। আর আমার অভিজ্ঞতা থেকে জানি যে দেবভক্তি আর দেশভক্তির মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। আপনারা দেবভক্তির জন্য বাঁচেন, দেশভক্তির জন্যও বাঁচেন। এই দুই ভক্তির মিলনেই যে সন্ন্যাসী, তাঁদেরকে আমি সৎসঙ্গী বলে জানি। যাঁরা দেবভক্তির জন্য বাঁচেন তাঁরা সৎসঙ্গী, যাঁরা দেশভক্তির জন্য বাঁচেন তাঁরাও সৎসঙ্গী। আজ প্রমুখ স্বামীজির জন্ম শতবর্ষ সমারোহ আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্য প্রেরণার উৎস হয়ে উঠবে। প্রত্যেকের মনে নতুন নতুন জিজ্ঞাসা জেগে উঠবে আজকের যুগেও…
আপনারা প্রমুখ স্বামীজির সম্পর্কে যদি বিস্তারিতভাবে জানতে পারেন- অনেক বড় বড় সমস্যার মোকাবিলায় তিনি অনেক সরল উপদেশ দিয়েছেন। সহজ জীবন-যাপনের উপযোগী অনেক কথা বলেছেন। আর এতো বড় সন্ন্যাসী সম্প্রদায় গড়ে তুলেছেন! আমাকে বলা হয়েছে যে আপনাদের ৮০ হাজারের ওপর স্বেচ্ছাসেবক রয়েছেন।
আমরা যখন আসছিলাম তখন আমাদের ব্রহ্মজি আমাকে বলছিলেন যে এতো স্বেচ্ছাসেবী রয়েছেন। তাঁরা প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে এসেছেন। আমি বললাম যে, আপনি আশ্চর্য মানুষ। একথা কী ভুলে গেছেন যে আমিও একজন স্বেচ্ছাসেবক! তাঁরা যেমন স্বেচ্ছাসেবক, আমিও তেমনি স্বেচ্ছাসেবক। আমরা পরস্পরের হাত ধরে চলবো। আপনাদের এই ৮০ হাজারের সঙ্গে আর একজনকে জুড়ে নিয়ে গুনবেন!
অনেক কিছুই বলার ছিল, অনেক পুরনো স্মৃতি আজ মনকে ছুঁয়ে যাচ্ছে, কিন্তু আমি সবসময় প্রমুখ স্বামী মহারাজজির অভাব অনুভব করি। আমি কখনও তাঁর কাছে জ্ঞান লাভের জন্য যাইনি। কোনো বড় কিছু পেতে যাইনি। এমনিই ভালো লাগতো। তাঁর কাছে গিয়ে বসতে ভালো লাগতো। যেমন পরিশ্রান্ত পথিক কোনো গাছের নীচে বসে। গাছের নীচে বসলে যেমন ক্লান্তি দূর হয়, ভালো লাগে। গাছ তো তখন আমাদের কোনো ভাষণ দেয় না। আমি যখন প্রমুখ স্বামী মহারাজজির কাছে গিয়ে বসতাম এমনই মনে হতো। আমি যেন একটি বট গাছের ছায়ায় বসেছি। একটি জ্ঞান ভান্ডারের পদতলে বসেছি। কে জানে আমি কখনও এইসব অনুভূতি ও অভিজ্ঞতার কথা লিখে যেতে পারবো কি না! কিন্তু আমার অন্তরমনের যে যাত্রা, সেই যাত্রার বন্ধন এমনই সব সন্ন্যাসী পরম্পরার সঙ্গে রয়েছে, এমনই সব আধ্যাত্মিক পরম্পরার সঙ্গে রয়েছে। আর এই যাত্রাপথে পূজনীয় যোগীজি মহারাজ, পূজনীয় প্রমুখ স্বামী মহারাজজি এবং পূজনীয় মহন্ত স্বামী মহারাজজির সংস্পর্শ পেয়ে আমি নিজেকে অনেক বড় সৌভাগ্যবান বলে মনে করি। আমার জীবনে আমি এ রকম সাত্ত্বিক আবহ পেয়েছিলাম বলেই এই তামসিক জগতে নিজেকে বাঁচিয়ে কাজ করার শক্তি পাই। তাঁদেরই প্রভাবে নিরন্তর কাজ করে যেতে থাকি। তাঁদেরই প্রভাবে আমার মধ্যে কোনো রাজসিক ভাব জন্ম নেয়নি, কোনো তামসিক ভাবও জন্ম নেয়নি। সাত্ত্বিক পথে এগিয়ে যাচ্ছি। আর এই পথেই চিরদিন এগিয়ে যেতে চাই। আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভ কামনা।
জয় স্বামীনারায়ণ !
PG/SB/NS
Pujya Pramukh Swami Maharaj touched countless lives all over the world with his impeccable service, humility and wisdom. @BAPS https://t.co/rZgqMnOURR
— Narendra Modi (@narendramodi) December 14, 2022
In this programme, I can see every aspect of India's vibrancy and diversity. I want to appreciate the saints and seers for thinking of a programme of this nature and at such a scale. People from all over the world are coming to pay homage to HH Pramukh Swami Maharaj Ji: PM Modi pic.twitter.com/fVeJCfTxad
— PMO India (@PMOIndia) December 14, 2022
I have been drawn to the ideals of HH Pramukh Swami Maharaj Ji from my childhood. I never thought that sometime in my life, I would get to meet him. It was perhaps back in 1981 that I met him during a Satsang. He only spoke of Seva: PM @narendramodi pic.twitter.com/Ey7r6cLNdv
— PMO India (@PMOIndia) December 14, 2022
HH Pramukh Swami Maharaj Ji was a reformist. He was special because he saw good in every person and encouraged them to focus on these strengths. He helped every individual who came in contact with him. I can never forget his efforts during the Machchhu dam disaster in Morbi: PM pic.twitter.com/Q8J64kSfPF
— PMO India (@PMOIndia) December 14, 2022
In 2002 during the election campaign when I was a candidate from Rajkot I got a pen from two saints saying that Pramukh Swami Maharaj Ji has requested you sign your papers using this pen. From there till Kashi, this practice has continued: PM @narendramodi pic.twitter.com/LfgjNDlYrJ
— PMO India (@PMOIndia) December 14, 2022
During the Ekta Yatra under Dr. MM Joshi's leadership we faced a hostile situation on the way to Jammu. The moment I reached Jammu the first call I got was from Pramukh Swami Maharaj Ji, who asked about my wellbeing: PM @narendramodi
— PMO India (@PMOIndia) December 14, 2022
हमारे संतों ने पूरे विश्व को जोड़ने- वसुधैव कुटुंबकम के शाश्वत भाव को सशक्त किया। pic.twitter.com/cnzhsta9oQ
— PMO India (@PMOIndia) December 14, 2022
Go to any part of the world, you will see the outcome of Pramukh Swami Maharaj Ji's vision. He ensured our Temples are modern and they highlight our traditions. Greats like him and the Ramakrishna Mission redefined the Sant Parampara: PM @narendramodi pic.twitter.com/mNOiLUkB0p
— PMO India (@PMOIndia) December 14, 2022
Pramukh Swami Maharaj Ji believed in Dev Bhakti and Desh Bhakti: PM @narendramodi pic.twitter.com/8Txcs3Jjae
— PMO India (@PMOIndia) December 14, 2022
पूज्य प्रमुख स्वामी जी ने, समाज के हित के लिए, सबको प्रेरित किया। pic.twitter.com/qrXGF39Dhi
— PMO India (@PMOIndia) December 14, 2022
I am honoured to have attended the Shatabdi Mahotsav of Pujya Pramukh Swami Maharaj. I consider myself blessed to have interacted with him so closely. Shared my memories with him and recalled his outstanding service to humanity. pic.twitter.com/4Dri746KUe
— Narendra Modi (@narendramodi) December 14, 2022
प्रमुख स्वामी महाराज ने समाज सुधार के लिए अमूल्य योगदान दिया। उन्होंने हमेशा इस बात पर जोर दिया कि जीवन का सर्वोच्च लक्ष्य सेवा ही होना चाहिए। pic.twitter.com/y5q83zsGa9
— Narendra Modi (@narendramodi) December 15, 2022
सामान्य समय रहा हो या फिर चुनौती का काल रहा हो, स्वामी जी ने हमेशा समाज के हित में आगे बढ़कर योगदान दिया। pic.twitter.com/b1Hbt729J4
— Narendra Modi (@narendramodi) December 15, 2022
संकट कितना भी बड़ा हो, विपत्ति कितनी भी बड़ी हो, स्वामी जी के लिए मानवीय संवेदनाएं हमेशा सर्वोच्च रहीं।
— Narendra Modi (@narendramodi) December 15, 2022
अक्षरधाम पर आतंकी हमले के बाद जब मैंने स्वामी जी को फोन किया तो उनकी बात सुनकर आश्चर्य में पड़ गया… pic.twitter.com/bG8qQfsYt6
Here are highlights from the Pramukh Swami Maharaj Shatabdi Mahotsav, a memorable programme which took place in Ahmedabad. pic.twitter.com/ttE3ZThH3B
— Narendra Modi (@narendramodi) December 15, 2022